শুরুটা_অন্যরকম #পর্ব_২৫,২৬

0
367

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৫,২৬
#অধির_রায়
২৫

নির্বণ নিয়তির পথ আটকিয়ে দাঁড়ায় একটা ছোট মেয়ে। নির্বণ অতি যত্নে মেয়েটার গালে হাত রাখে।

— নির্বণ হাঁটু গেড়ে বসে, ” এনি প্রবলেম।”

— মেয়েটি বলে উঠে, ” আপনারা কি বাঙালি? আমি বাংলায় কথা বলতে পারি। আর সুইজারল্যান্ডের ভাষায় কথা বলতে পারি না, না পারি ইংরেজিতে কথা বলতে৷ অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে পারি না৷”

— নিয়তিও হাঁটু গেড়ে বসে, ” আচ্চা তুমি কান্না করছো কেন? কি হয়েছে তোমার?” তোমার মা বাবা কোথায়?

— মেয়েটা কান্না করে বলে উঠে, ” প্লিজ আমার একটা হ্যাল্প করেন। আমিও ইন্ডিয়ান৷ এখানে ঘুরতে এসে হারিয়ে ফেলেছি আমার মা বাবাকে। কিন্তু এখানে এসে আমার একটা ভিক্ষুকের সাথে আমার দেখা হয়৷”

— “ভিক্ষুকের সাথে দেখা হয়েছে! ” অবাক হয়ে বলে উঠে নির্বণ।
তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে।

— স্যার আসলে আমি যখন মা বাবার জন্য কান্না করছিলাম তখন এক ভিক্ষুক আমাকে তার সাথে নিয়ে যান৷ তিনিও অসহায়, তারও কেউ নেই৷ সকাল থেকে আমরা দু’জনে না খেয়ে আছি। আর উনার মুখ থেকে সকাল থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে৷

— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে, ” এখন উনি কোথায়? আর উনি কেমন আছে? আমাকে নিয়ে চল উনার কাছে।”

মেয়েটি চোখের জল মুছে নির্বণের হাত ধরে ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা একটা মধ্যবয়স্ক মহিলার কাছে নিয়ে যায়৷ নিয়তি অতি যত্নে মহিলাটিকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বাচ্চা মেয়েটি কান্না করে যাচ্ছে।

নির্বণ মহিলাকে দেখে এক পা পিছিয়ে যায়৷ মহিলাটি আর কেউ নয়৷ মহিলাটি হলো ছোঁয়া। নির্বণের চোখ থেকে জল ঝড়ে যাচ্ছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বণ কি বলবে বুঝতে পারছে না?

নিয়তি নির্বণকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বণের কোন সাড়া শব্দ নেই৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। নিয়তি নির্বণকে টার্চ করলেই নির্বণের ঘোর কাটে৷

— আপনি এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন? কি হলো আপনার? আপনি কেন ভেঙে পড়ছেন? চোখের জল মুছে ফেলেন?

— হাত দিয়ে ইশারা করে ভাঙা গলায় আমতা আমতা করে বলে উঠে, ” ছোঁয়া..।”

— নিয়তি চকিত হয়ে, ” কি! ছোঁয়া এখানে আসবে কোথা থেকে৷ উনি সুইজারল্যান্ডে আসলেন কিভাবে?”

— হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি ওই মেয়েটা আর কেউ না৷ ওই মেয়েটাই হলো ছোঁয়া।
নিয়তির কাছে হাতজোড় করে, প্লিজ নিয়তি তুমি ছোঁয়াকে ঠিক করে দাও।”

_______

হসপিটালের করিডরে বসে অপেক্ষা করছে নিয়তি, নির্বণ, আর ওই বাচ্চা মেয়েটা৷ নির্বণ পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। তার মাথায় কিছু কাজ করছে না৷ এখনও চোখ থেকে অনবরত বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

ভালোবাসা এতটাই পবিত্র যে, ” কখনো কাউকে আলাদা করতে চায় না৷ কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এই ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে। আজ পবিত্র ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে বেছে নিচ্ছে৷ যার ফলে ঝড়ে যাচ্ছে বহু যুব সমাজ।

ডাক্তার ছোঁয়াকে দেখার পর বেরিয়ে আসে৷ নিয়তি ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে যায়৷

— নিয়তির ডাক্তারের দিকে ক্ষীর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ডক্টর ছোঁয়ার কি হয়েছে? ”

— ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” ছোঁয়ার ক্যান্সার ধরা দিয়েছে। উনার আয়ুষ্কাল আর বেশিদিন নেই৷ ”

— নিয়তি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠে, ” ওকে ডক্টর। আমাদের কি রাতে এখানে থাকতে হবে?”

— সরি ম্যাম। আমরা কাউকে রোগীর সাথে এলাউ করি না৷ আমরা কিছুতেই আমাদের নিয়ম ভঙ্গ করতে পারব না৷



নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রাখাতে নির্বণ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। নিয়তি আভয় বানী দিয়ে বলে উঠে, ” আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ ছোঁয়া একদম ঠিক হয়ে যাবে।

_______

নিয়তি, নির্বণ, আর বাচ্চা মেয়েটি এক সাথে বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷

— নিয়তি নির্বণের দিকে একবার তাকিয়ে বাচ্চাটির গালে আলতো করে হাত রেখে বলে উঠে, ” আচ্চা তোমার নাম কি?”

— মিষ্টি হেঁসে বলে উঠে, ” আমার নাম মিহু। আমি ইন্ডিয়ায় থাকি। প্লিজ আমাকে আমার মা বাবার কাছে পৌঁছে দিবে।”

— আচ্চা তোমার মা বাবা কোন হোটেলে উঠেছিল? তুমি কি কিছু জানো?

— হ্যাঁ আমি জানি৷ তারা এই হোটেলেই উঠেছে। কিন্তু আমি এই হোটেলে সেদিন রাতে এসেছিলাম কিন্তু গেইট লক ছিল।

— তুমি কি জানো, তোমার মা বাবা কত তলায় থাকে?

— জানি না৷ তবে আমার বাবার নাম তূর্জয়।

— ওকে সমস্যা নেই৷ তুমি আমার সাথে কাউন্টারে চল৷ তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি কিনা৷

নিয়তি মিহুকে নিয়ে কাউন্টারে আসে৷ কাউন্টারে আসতেই মিহু নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। আসলে তারা এখনই বের হচ্ছিল।

তারা মেয়েকে ফিরে পেয়ে মিহুর মুখে একের পর এক ভালোবাসার পরশ একে দিতে থাকে। ফ্লাইডের সময় হয়ে যাছে সে কারণে নিয়তির সাথে তেমন কোন কথা হলো না৷ নিয়তিকে বিদায় জানিয়ে তারা চলে যায়।

_______

নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে৷ ঠিক তখনই নিয়তি রুমে প্রবেশ করে৷ নির্বণ গায়ে জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো চকচক করছে৷ নিয়তি নির্বণের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নির্বণ নিয়তির কাছে এসে টুপ করে নিয়তির কপোলে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়৷ নিয়তি নির্বণের এমন ব্যবহারে খুব শকট। একটু আগে যে মানুষ কথা বলতে পারছিল না৷ এখন কি না সেই মানুষ এতটা পরিবর্তন।

— নিয়তি চোখ বড় করে, ” আপনি কি ঠিক আছেন? নাকি আপনি পাগল হয়ে গেলেন?”

— হোয়াট৷ তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি কেন পাগল হতে যাব? আই অ্যাম ফাইন৷

— আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছে না ছোঁয়ার জন্য৷

— ও হ্যালো। আমি অতীতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই না৷ আর যে ছোঁয়ার আমাকে প্রাণে মারার জন্য দু’বার ভাবেনি৷ আমি তার জন্য ভাববো। খারাপ লেগেছিল তাকে দেখে। কিন্তু এখন খারাপ লাগছে না৷

— ভুতের মুখে রাম রাম। আমি কি সত্যি বেঁচে আছি নাকি আমি কোমায় চলে গিয়েছি৷

নির্বণ নিয়তির ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত দরজার সাথে চেপে ধরে৷ নিয়তি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ দুই মিনিট পর নিয়তির ঠোঁট ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে হাঁপাতে থাকে। মনে মনে নির্বণের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছে৷

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন? এভাবে কেউ কাউকে কিস করে। আর একটু হলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত।”

— তার মানে তুমি কোমায় নয়৷ তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমাকে দাঁড়া কিছু হবে না৷ ভালো করে কিসও করতে পারে না৷

— আমি তো আপনার মতো গরিলা নয়৷ যে কিসের ক্ষেত্রে পারদর্শী হবো৷

— আমি গরিলা৷

— হ্যাঁ আপনি গরিলা৷

— আমি গরিলা হলে তুমি প্রেত্নী৷

— আমি প্রেত্নী নয়৷ আমি হলাম মায়া পরী৷

— নির্বণ মুচকি হেঁসে, ” আসছে আমার মায়া পরী৷ দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র কারো বাসা থেকে চুরি করে আসল। না না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কাজের মেয়ে সকিনা।

— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আমি কাজের মেয়ে সকিনা৷ দাঁড়ান আমি আপনাকে দেখোচ্ছে৷

নিয়তি নির্বণের দৌড়ানি দেয়৷ নির্বণ বেডের চারদিকে রাউন্ড করতে থাকে। হঠাৎ করেই নিয়তি পড়ে যেতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত ধরে বেড়ে পড়ে যায়৷

কারো মুখে কোন কথা নেই৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জনেই নেশার ঘোরে আছে। নির্বণের ঠান্ডা স্পর্শ নিয়তিকে কাছে টানছে। নির্বণও নিয়তির মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_২৬
#অধির_রায়

নিয়তি নির্বণের উপর থেকে উঠে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে টান দেয়৷ নিজের বুকের সাথে নিয়তিকে মিশিয়ে নেয়৷

— নিয়তি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে, ” আপনি কি করতে চাইছেন? ছাড়েন আমাকে।”

— নিয়তিকে বিছানার সাথে চেপে ধরে, ” আমি কাছে আসলে তোমার এত লজ্জা কেন? আমাকে এত ভয় পাও কেন? আমি বাঘ নাকি সিংহ।”

— আমি জানি কে আপনি? আপনি একটা এনাকন্ডা। সরেন আমার উপর থেকে৷ আমার ভালো লাগছে না৷

নিয়তি দুই হাত দিয়ে নির্বণের বুকে ধাক্কা দিতে দিতেই নির্বণ নিয়তির দুই হাত চেপে ধরে নিয়তির গলায় মুখ লুকায়৷

ব্যাস নিয়তির জন্য এইটুকুতেই যথেষ্ট। নিয়তির মুখে আর কোন কথা নেই৷ নির্বণের নেশা নিয়তিকে পাগল করে দিচ্ছে৷

— নির্বণ নিয়তির ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই৷ তোমার অভিমত কি?”

নিয়তি লজ্জা পেয়ে যায়৷ নিয়তি মুখ থেকে কোন কথাই বের হচ্ছে না৷ নির্বণ নিয়তির উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে৷ নির্বণ মুখ গোমড়া করে চলে আসতে নিলেই নিয়তি নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে৷

নির্বণ তার উত্তর পেয়ে যায়, তবু্ও অসহায়ের মতো নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে। নিয়তি বুঝতে পারে তাকেই কিছু করতে হবে৷ নিয়তিই আজ নিজ থেকে নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে দেয়৷

দুটি অসমাপ্ত প্রেমকাহিনী আজ পরিপূর্ণ পায়৷ তারা একে অপরের হয়ে যায়৷

এখন আসার বাকি ছোট সোনা৷ [লেখাঃ অধির রায় ]
___________

সোনালী রোদ্দুরের তীব্র জ্যোতি ছড়িয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূবের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে সোনালী রোদ্দুর। নিয়তি মুখে রোদের জ্যােতি পড়তেই নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷

নিয়তি আঁখি মেলে তাকিয়ে দেখে নির্বণের লোমহীন বুকের মাঝে শুয়ে আছে৷ রাতের কথা মনে পড়তেই নিয়তি লজ্জায় লাল হয়ে যায়৷ নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণের হালকা গোলাপি ঠোঁট নিয়তিকে টানছে৷ নিয়তি নির্বণের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মেলাতে নিবে ঠিক তখনই নির্বণ আঁখি মেলে তাকায়। নিয়তি লজ্জা পেয়ে সরে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

— কি লুকিয়ে লুকিয়ে কিস করা হচ্ছে? তুমি দিনে দিনে লুচু টাইপের মেয়ে হয়ে যাচ্ছো৷ বাট রাতের কিসটা খুব মিষ্টি ছিল।

— একদম না৷ আমি লুকিয়ে কিস করতে যাব কেন? আপনি জেগে ছিলেন তাহলে আমাকে ডাক দিননি কেন?

— তোমাকে ডাক দিলে তাহলে তো বুঝতে পারতাম না আমার বউ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কিস করে।

— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” ছাড়েন আমাকে আমি ওয়াসরুমে যাব৷ আপনি আপনার মতো গরিলা নয় আমি, চুরি করে কিস করতে যাব৷”

নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে নিয়তি ওয়াসরুমে চলে যায়৷ নির্বণ নিয়তির দিকে ফ্লাইং কিস পাঠিয়ে দেয়৷ নিয়তি জিহ্ব বের করে ওয়াসরুমের দ্বার বন্ধ করে দেয়৷

________

সকালে খাওয়ার পর একে অপরকে দিকে শুরু তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷ নিয়তি এক পর্যায়ে চোখাচোখি বন্ধ করে বলে উঠে,” আমি বইয়ে পড়েছিলাম এখানে জলন্ত পুতুল রয়েছে। যার জন্য সুইজারল্যান্ডের ক্লক টাওয়ার বিখ্যাত পৃথিবীর বুকে৷ চলেন না আমরা আজ সেই ক্লক টাওয়ারে ঘুরে আসি৷

— একদম রাইট৷ ক্লক টাওয়ারের জলন্ত পুতুল রয়েছে। ক্লক টাওয়ারের জলন্ত পুতুলকে বলা হয় Zytglogge। Zytglogge দর্শন করার জন্য প্রতিবছর এখানে ভীড় জমায়৷

— সবই বুঝলাম এখান আমি জলন্ত পুতুল দেখতে চাই৷ তাহলে আমরা কখন বের হচ্ছি জলন্ত পুতুল দেখতে?

— এখনই বের হবো৷ রেডি হয়ে নাও৷

— জাস্ট অ্যা মিনিট।

নিয়তি লাগেজ থেকে নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে দৌড়ে চলে যায়৷ নিয়তি ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নির্বণ হাঁ করে নিয়তির দিকে তাকিয়ে থাকে।

— নির্বণের কাছে এসে, “মুখটা বন্ধ করেন৷ মশা ঢুকবে তো।”

— নির্বণ অবাক হয়ে, ” তুমি জিন্স, ট্রি শার্ট পড়ে যাবে!”

— হ্যাঁ, এখানে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো আগেও অফিসে পড়েছি৷

— নিয়তিকে কাছে টেনে নেশা ভরা কন্ঠে, ” তোমাকে অনেক কিউট এন্ড হট লাগছে৷ তুমি যে ড্রেসই পড়না কেন? তোমাকে আমার চোখে সব থেকে সুন্দর লাগে। ”

— এভার যাওয়া যাক। এখানেই কি সময় পার করে দিবেন৷

— আমি তো চাই সময় এখানেই থেমে যায়৷ যেন তোমাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে পারি৷ মনের সব ইচ্ছা পূরণ করতে পারি৷

নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ক্লক টাওয়ারের নিচের দিকে নিয়ে যায়৷ উপরে থেকে ক্লক টাওয়ার নিচের দিকে আরও সুন্দর করে লাইটিং করা। ক্লক টাওয়ারের উপরের অংশ সন্ধ্যায় দিকে জ্বলছে উঠে৷ তখন ক্লক টাওয়ার নিজের সৌন্দর্য চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়৷

— এই মোমের পুতুলটির নামই জলন্ত পুতুল। চারিপাশে আগুনের শিখা দিয়ে ঘেরা৷ যার জন্য একে জলন্ত পুতুল বলে।

— মোমের তৈরি জলন্ত পুতুল দেখে নিয়তি হেঁসে বলে উঠে, “আমাকে পাগল মনে হয় আপনাপপর? এটা যদি মোম হতো তাহলে গলে পড়ে যেত৷ ”

— এটা গলে না তাই এর নাম জলন্ত পুতুল। এটা ১৬ শতকে তৈরি করা হয়েছে৷ তখনকার লোকেরা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপায়ে মোম তৈরি করে এই পুতুল সৃষ্টি করে৷ যা এখানকার লোকের পক্ষে বানানো সম্ভব নয়৷ গলে না বিদায় এর নাম রাখা হয়েছে জলন্ত পুতুল।

— এখন কিছুটা বুঝতে পারলাম৷ তবুও সব কিছু মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।

তারা দুইজনে কিছু পিক তুলে নেয়। নিয়তির হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নির্বণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে৷ নিয়তি আবার বলে উঠে, ” আমি আর মাত্র একটা কথা বলতে চাই।”

— নির্বণ বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” কি কথা! তোমার কথা এখনো শেষ হয়নি৷ তুমি কি কথা বলা ছাড়া থাকতে পারো না?”

— আমাদের দেশে টাওয়ার বানানো হয় শুধু ফোনের নেটওয়ার্কের জন্য৷ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের টাওয়ারে হোটেল, শপিং মল সব কিছু কেন আছে?

— কারণ সুইজারল্যান্ড অনেক উন্নত দেশ৷ এখানে সব কিছু সম্ভব। তারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে৷ আর হ্যাঁ আমাদের দেশেও এমন বড় বড় ক্লক টাওয়ার হতে পারে। তার জন্য আমাদের দেশে দুর্নীতি দমন করতে হবে৷ বাঙালি কাজে নয় কথাই পারদর্শী।

— তাহলে আমাদের দেশে এমন টাওয়ার বানাই না কেন? আর বাঙালিদের নিজে কিছু বলবেন না৷ আপনি ব্রিটিশিয়ান৷

নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্লক টাওয়ারের অন্যান্য জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যায়৷

________

ক্যাফেতে বসে কফির খাচ্ছে৷ একে অপরের প্রশংসা করছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে৷

— নিয়তি কফির কাপে চুমু দিয়ে, ” আচ্ছা আমরা এখন ছোঁয়ার জন্য কি করতে পারি৷ তাকে তো আমরা এভাবে ফেলে যেতে পারি না৷”

— নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” তোমার খাওয়া শেষ হলে আসতে পারো৷ আমার খাওয়া শেষ৷”

— কোমল কন্ঠে, ” কি হলো? এভাবে রেগে গেলেন কেন? আমাদের তো তার উপর একটা কর্তব্য আছে৷”

— ছোঁয়ার প্রতি দায়িত্ব থাকতে পারে৷ আমার কোন দায়িত্ব নেই৷ যে টাকার জন্য কারো জীবন নিতে দু’বার ভাবে না, সেরকম মেয়েদের আমি দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করে ভুল করব না৷

— আপনি কি জানেন ছোঁয়া কেন….?

— নিয়তিকে থামিয়ে দিয়ে, “ব্যাস আমি ছোঁয়াকে নিয়ে কোন কথা শুনতে চাইনা৷ আর তাকে নিয়ে তোমায় কোন কিছু ভাবতে হবে না৷ এখানে গরিবদের চিকিৎসার ভার বহন করে সরকার। সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না৷

নিয়তি বুঝতে পারে নির্বণের মনে নিয়তির জন্য কোন ভালোবাসা নেই৷ যতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল আজ তা ঘৃণার পরিণত হয়েছে। নিয়তি সেই নিয়ে আর কোন কথা বাড়াল না৷


সন্ধ্যায় দিকে একে অপরের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে হোটেলে আসছে। যে দিকে চোখ যাচ্ছে সেই দিকে বাহারি রকমের চকলেট দেখা যায়।

— নির্বণ নিয়তিকে কোমল স্বরে বলে উঠে, ” আচ্ছা নিয়তি তোমার ফেবারিট খাবার কি?”

— আনন্দের সাথে মুখে এক ঝাঁক হাসি নিয়ে বলে উঠে, ” আমার প্রিয় খাবার কি? আমি তেমন জানি না। তবে এখন আমার ফেবারিট খাবার চকলেট।”

— তো দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিনে নাও এক ঝুঁড়ি চকলেট। এগুলো অন্যান্য চকলেটের থেকে স্বাদ ভিন্ন।

নিয়তি প্রায় এক থলি ভরপুর করে চকলেট কিনে৷ প্রায় সব রকমের চকলেট নিয়ে নেয়৷

— নির্বণ চকিত হয়ে, ” তুমি এতগুলো চকলেট দিয়ে কি করবে!”

— চকলেট কি করে আমি সবগুলো চকলেট বসে বসে খাবো। আপনার কোন সমস্যা।

— না আমার কোন সমস্যা নেই৷ তবে এতগুলো চকলেট এক সাথে খেলে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না৷

— রাখেন আপনার আজাইরা কথা৷

_______

নির্বণ নিয়তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি একের পর একটা করে চকলেট খেয়েই যাচ্ছে। নিয়তিকে দেখে মনে হচ্ছে নিয়তি কোন চিড়িয়াখানা থেকে এই মাত্র বের হয়েছে খাওয়ার জন্য।

— নির্বণের দিকে চকলেট ছুঁড়ে দিয়ে, ” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার পেটের সমস্যা হবে তো৷ আপনি এত লোভী কেন?”

— নির্বণ চোখ ছোট করে, ” আমি লোভী। আমি কোন জায়গায় লোভ করলাম।”

— লোভী নয় তো কি? আপনাকে দুই দুইটা চকলেট খেতে দিয়েছি৷ এখনও আমার কাছে চকলেট চাচ্ছেন৷

— চকিত হয়ে, ” আমি তোমার কাছে কখন চকলেট চাইলাম! তোমার মাথা পুরোটায় গেছে।”

— তাহলে এভাবে রাক্ষসের মতো তাকিয়ে আছেন কেন? যান অন্যদিকে তাকান।

নির্বণ কিছু না বলে বেলকনিতে চলে আসে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খালি গায়ের পিক তুলছে৷ নির্বণ তার একটা পিক নিউজফিডে আপলোড দেয়৷

নিয়তি চকলেট রেখে নিউজফিডে ঢুকে৷ নিউজফিডে ঢুকতেই নির্বণের খালি গায়ের পিক দেখতে পায়৷ পাঁচ মিনিটেই অনেক কমেন্ট৷ নিয়তি কমেন্ট গুলো পড়তে শুরু করে..

প্রথম কমেন্টঃ ওয়াও সেক্সি বডি৷
দ্বিতীয় কমেন্টঃ সো হ্যান্ডসাম৷ বেবি আই লাভ ইউ
তৃতীয় কমেন্টঃ ইউ আর হট।
চতুর্থ কমেন্টঃ হ্যাঁ, হ্যান্ডসাম৷ তোমাকে আমার প্রয়োজন। তোমার সেই উম্মুক্ত বুকে আমাকে জায়গা দিবে৷ সারা জীবনের জন্য তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই৷

নিয়তি আর পারল না কমেন্ট পড়তে৷ নিয়তি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে৷ নিয়তি দ্রুত গতিতে বেলকনিতে চলে যায়৷ নির্বণের হাত থেকে ছুঁ দিয়ে ফোনটা নিয়ে নেয়৷

— রসে গোল্লার মতো চোখ করে,” তুমি আমার হাত থেকে ফোন নিচ্ছো কেন? কি হয়েছে?”

— অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” কোন কথা বলবেন না৷ কোন কথা বললে আপনাকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব৷

নিয়তি নির্বণের ফোন নিয়ে প্রথমে পিকটা অনলি মি করে৷ তার পর যে শাঁকচুন্নি কেমন্ট করেছিল তাদের উগান্ডায় পাঠিয়ে দেয় বিনা টিকেটে।

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনার সাহস কিভাবে হলো খালি গায়ে পিক আপলোড দেওয়া৷”

— তো সমস্যা কি? খালি গায়ে পিক আপলোড দেওয়া বর্তমানের ফ্যাশন।

— ওকে ফাইন আমিও খালি দিয়ে পিক আপলোড দিচ্ছি৷

— নির্বণ ক্ষেপে উঠে, ” একদম না৷ যদি নিউজফিডে পিক দেখি তাহলে.. ”

— “আপনিও কোন পিক আপলোড দিবেন না৷ মেয়েদের কাছ থেকে ওয়াও সেক্সি বডি, বুকের মাঝে জায়গা হবে, আমি তোমার বুকে থাকতে চাই। এসব শুনতে ভালো লাগে। যদি কোনদিন দেখি। তাহলে পুঁতে রেখে দিব৷ ” ক্ষেপে বলে উঠে।

— নিয়তিকে কাছে টেনে, ” সুইটহার্ট তুমি গুন্ডী কবে হলে? আমাকে মেরে ফেলতে চাও৷”

— হয়েছে আমায় ভুলাতে পারবেন না৷ রাতের অন্ধকারে এভাবে পিক না দিলেই হতো৷ আমার জামাইয়ের বডি আমি দেখবো। অন্য মেয়ে দেখবে কেন?

নির্বণ মুচকি হেঁসে নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়৷ নিয়তিকে পাঁজা কোলা করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে৷

______

জেনেভা শহরটি জেনেভা লেকের জন্য বিখ্যাত। জেনেভার বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে জেনেভা লেক।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here