মায়াডোর-১৯,২০

0
253

মায়াডোর-১৯,২০

(১৯ পর্ব)
.
ইতি ঘটনাটা জানতে পারে কলেজ থেকে আসার পর। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এখন পড়ে সে। শরীরে-মননে তুমুল পরিবর্তনের সময়। ইতিরও হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু মানসপটে কল্পকে নিয়ে যে ভালোবাসার রঙিন জগত তৈরি করে রেখেছিল৷ সেটা একই রকম আছে৷ ধূলো জমেনি একটুও। এখনও রঙিন প্রজাপতি উড়ে সেখানে। এখনও সেই রাজ্যের রাজা কল্প নামের মানুষটাই। রোজই ইতি ঘুমোতে যায় কল্পকে একদিন সে পাবে এই আশা নিয়ে। আবার ঘুম থেকে উঠেছে এই বিশ্বাস নিয়েই৷ আজ সে কি দেখছে এসব? ইতি নিচের কাঁপা কাঁপা ঠোঁট কামড়ে ধরে চিলেকোঠার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে৷ আসমান ডাকছে৷ চিলেকোঠার চালে ঘোর লাগা শব্দ হচ্ছে। নাকে আসছে এক অদ্ভুত, অলিক, অচেনা ঘ্রাণ। কল্প তাকে অনেক লম্বা মেসেজ পাঠিয়েছে। কিছুদিন আগে তার চাচা এসেছেন বলে বাড়িতে গিয়েছিল৷ স্বাভাবিক ব্যাপার। যেতেই পারে৷ কিন্তু এরকম কিছু হতে পারে ইতি ভাবেনি কখনও। অবিশ্বাস্য লাগছে সবকিছু। ঝাপসা চোখে পুনরায় মেসেজ পড়ে,

“ইতি তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য মেসেজ দিয়েছি। আমার ধারণা না বললেও কোনো সমস্যা নেই৷ কারণ আমাদের মধ্যে কিন্তু প্রণয়ের সেরকম কোনো স্লোগান আদান-প্রদান হয়নি৷ এটা ভেবে ভীষণ হালকা লাগছে আমার। যদি সেই দিনগুলোতে আমি তোমার পাগলামিতে সাড়া দিতাম, তাহলে আজ কি হতো বলো তো? বিষয়টা ভাবতে গিয়ে আমার গা বারবার শিউরে উঠে। তবে একটা কথা আমি স্বীকার করছি। তোমাকেও আমার ভালো লাগে। তোমাকেও আমি পছন্দ করি। তবে আমাদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনের সকল ঘটনা ঘটে না। সেটাই প্রমাণ পেলাম আবার। ইতি আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ গোষ্ঠী সুদ্ধা সেই বিয়েতে রাজি, খুশি। সুপ্তি আপু তো কেঁদে ফেলেছে গলা জড়িয়ে। প্রিয় মানুষরা তো আমাদের নিশ্চিত-সুন্দর একটা জীবন চায়৷ মামার অবস্থা হয়েছে দেখার মতো। আমার নিজেকে কেমন মেয়ে-মেয়ে লাগছে। কারণ মেয়েদের এরকম ভালো জায়গায় বিয়ে ঠিক হলে অভিভাবকরা বাচ্চামো শুরু করে। আরেকটা ঘটনা ঘটেছে ইতি। তোমার সঙ্গে কথা হয় না বলে বলিনি। আমার বোন শ্রেয়া আছে না? ওইযে মরিয়ম ফুপুর বাসায় দেখেছিলে। সারাক্ষণ ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদেছিল মিষ্টি একটা মেয়ে। সে এরপর থেকে প্রায়ই আমাকে কল দিতো। ভাইয়া ভাইয়া করে কত গল্প যে করে। সে এবার পড়ে নাইনে। মা কিন্তু আমাকে সেরকম কল দিয়ে কথা বলতেন না৷ এবার কথা বলেছেন। এই বিয়ে ঠিক হওয়ায় তিনি প্রচণ্ড খুশি। আমাকে কত উপদেশ দিলেন। যেন চাচাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলি। বিদেশি মেয়ে। তাদের কালচারই আলাদা। একটুতে তাদের ঘ্যা*ড়ত্যা*ড়া হয়ে যায়। যেন খুবই সাবধানে চলাফেরা করি। এখন নিয়মিত তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমার সৎ বাবাও না-কি একটু নরম হয়েছেন আমার প্রতি। তুমি ভাবতে পারছো ব্যাপারটা? আশপাশের মানুষ, পরিবেশ, সমাজ আমাকে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো ঘটনা বিলেতি স্ত্রী পাওয়া। তোমার কি মনে হয় এটা যৌক্তিক ইতি? আমি পাব্লিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া থেকে কি এটা বড়ো ঘটনা? আমি বুঝতে পারছি না বিষয়টা৷ তবে আনন্দ-দুঃখ এগুলো সংক্রামিত হয়। এখন সবার আনন্দ দেখে আমারও আনন্দ হচ্ছে। আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ৷ আমার দ্বারা আপনজন সবাই খুশি হচ্ছে। এটা তো আমার অনেক বড়ো পাওয়া। ইতি আমি তোমাকে আর ছোট করতে চাই না৷ বলতে চাই না আমাকে ভুলে যেও। আমি বিশ্বাস করি আমার মতো কাপুরুষকে তুমি ইতোমধ্যে ভুলে গিয়েছো। আমি এখন আরেকটা স্বপ্ন দেখি ইতি। ছোটবেলা থেকেও দেখতাম। একদিন আমি অনেক বড়ো হব, যতটুকু বড়ো হলে আমার মা এসে আমার কাছে থাকবেন৷ আমার আলাদা একটা বাড়ি হবে। সেখানে আমার সংসার হবে৷ সেই সংসারে আমার মা থাকবেন। কেউ মা’কে আঁটকে রাখতে পারবে না৷ কারণ উনার একটা আশ্রয় আছে। তার ছেলে আছে। এখন শ্রেয়াকে নিয়েও ভাবি। সে তো আমারই বোন। মায়ের পেটের বোন। আমি ওর বড়ো ভাই৷ ওর প্রতি আমার কত দায়িত্ব আছে তাই না? মরিয়ম ফুপুর বাসায় দেখা হওয়ার পর থেকে এই অচেনা অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে আমার। আমার একটা বোনও আছে এটা ভাবলেই অন্য রকম লাগে। এখন মাঝে মাঝে ভাবি আমরা সবাই যদি একসঙ্গে থাকতে পারতাম…।
সেই স্বপ্ন বোধহয় এখন পূরণ হবে। আমি ইংল্যান্ড গিয়ে দুইহাতে টাকা কামাবো৷ জানো তো ইংল্যান্ড রেস্টুরেন্টে হাড়ি-পাতিল মাজলেও মাস শেষে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম৷ তখন মা’কে আর শ্রেয়াকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাব। শ্রেয়া স্টুডেন্ট ভালো। তাকে স্টুডেন্ট ভিসায় নেয়া যাবে। এই দেখো কত অগ্রীম ভাবনা আমি শুরু করেছি। আমার এই এক সমস্যা। অগ্রিম ভাবি৷ অবশ্য এটা ভাবনা না, স্বপ্নও বলতে পারো। মানুষ মাত্রই স্বপ্নবিলাসী। ইতি আমার ভীষণ ইচ্ছা করছে তোমাকে সান্ত্বনা দেই কিছু একটা বলে৷ কিন্তু এগুলো বলে তোমাকে ছোট করা হবে। বিশ্বাস করো তোমাকেও আমি পছন্দ করি। তুমি আমার জীবনে এক আক্ষেপের নাম হয়ে থাকবে। তোমার ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠেছে তাই না? ভাবছো এত পছন্দ করলে কেন পিছিয়ে গেলাম? চাইলেই যেখানে পেতাম তোমাকে। মোটেও এটা ভেবো না। পৃথিবীতে সব মানুষ সূদুর প্রসারী চিন্তা করতে পারে না৷ বেশিরভাগ মানুষ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারে৷ কেউ কেউ শুধু আগে বুঝতে পারে। তারা যে ওলী-আউলিয়া লেভেলের মানুষ তা কিন্তু না। আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বোধহয় সুদূর প্রসারী চিন্তা করতে পারতেন। তাই তিনি এভাবে কবিতা লিখেছিলেন ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে….।’
আমারও বোধহয় কিঞ্চিৎ সুদূর প্রসারী চিন্তা করার ক্ষমতা আছে। এখন যদি আমি এই বিয়ে করতে না চাই। আমার মামা, মা, চাচা সকলেই প্রচণ্ড বিস্মিত হবেন। এরপর রেগে যাবেন। পরিস্থিতি খুবই জটিল হবে৷ এরপর ভাবো তোমার পরিবারের ব্যাপারটা। এগুলো ভাবলে তুমিও বুঝতে পারবে যতটা সহজ ভাবছো, সেরকম সহজ না৷ ভাগ্য ভালো আমরা আগেই সতর্ক ছিলাম৷ নিজেদের সামলে নিয়ে চলাফেরা করেছি। না হলে এতদিনে দু’জন মায়াডোরে বাঁধা পড়ে যেতাম। এই বাঁধন খুবই জটিল ইতি। এই জটিল পৃথিবীকেও তোমার কাছে তখন তুচ্ছ মনে হবে। সব নিয়ম-কানুন লা’ত্থি মেরে ভেঙে ফেলার স্পর্ধা হয়ে যাবে। পরিবারের মুখে চুনকালি লাগাতে দ্বিতীয়বার ভাববে না। আমরা ভাগ্যিস সেদিকে যাওয়ার আগেই সাবধান হয়ে গিয়েছিলাম। ইতি তুমি পড়ালেখা করো। খুবই ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে করো৷ আমার এখন শুধু বিয়ের কথা পাকা হবে। হয়তো এনগেজমেন্টও হয়ে যাবে। সবকিছু এখনও ঠিক জানি না। বিয়ে হলেও আমি এখনই ইংল্যান্ড যাচ্ছি না। ওরা চলে যাবে। আমি পড়ালেখাই করবো। এর ভেতরে প্রসেসিং হবে আমাকে ইউরোপ নেয়ার। যদি চলেও যাই। তোমার বিয়ের আগে আমি আসবো। দেখবে তুমি রাজপুত্রের মতো বর পাবে৷ তুমি কি যে মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি জানো না। তোমার জন্য অবশ্যই মিষ্টি একটা জীবন অপেক্ষা করছে৷ তুমি শুধু ঠিকঠাক মতো পড়ালেখায় মনযোগ দাও। এতদিন তো দেখেছি, খেয়াল করেছি, তুমি বেশ সামলে নিয়েছো নিজেকে। তাই একটু সাহস পাচ্ছি৷ হয়তো তুমি তেমন কষ্ট পাবে না। দেখবে বয়স যত বাড়বে। এসব ভুলে যাবে তুমি। এরপর এই ঘটনাগুলো স্বরণ হলে নিজেই হাসবে। এটাই জীবন। অনেক বেশি বকবক করছি তাই না? নিজেই বুঝতে পারছি না। অনর্গল কথা বলার স্বভাব আবার আমার কবে থেকে হলো। মেসেজ যেন শেষই করতে পারছি না৷ যাইহোক তুমি ভালো থেকো। ওরা ইংল্যান্ড চলে যাওয়ার পর আর আমি তোমাদের ওখানে আসবো। কতদিন থাকবেন তারা কে জানে! মাস কয়েকও থাকতে পারেন। তুমি কিন্তু একটুও কষ্ট পেও না ইতি। আমিও পাচ্ছি না৷ আমি সেই এতটুকু বয়সে মা’কে ছাড়া থেকেছি। আমি জানি আমার মা আছেন৷ কিন্তু বড়দের কিসব জটিল নিয়ম-কানুন আর বাঁধার কারণে যেতে পারছি না। মায়ের সঙ্গে ঘুমোতে পারছি না৷ সে যে কি ছটফটানির বিষাদময় দিন ছিল তুমি বুঝবে না ইতি। আমি শিশুকালে মায়ের বিরহ ব্যথা সহ্য করেছি। সে তুলনায় তুমি কিছুই না৷ শুধু ভাবছি তোমার কথা, তুমি কষ্ট পাবে কি-না। তুমি এতদিন যেভাবে থেকেছো। সেভাবে থাকবে। ভালো থেকো।”

ইতির পুরো শরীর কাঁপছে। চোখ ফেটে যেন পানি আসছে। সে নিজেকে ধোঁকা দেয়ার জন্য চিলেকোঠার চার দেয়ালের দিকে তাকালো। দরজার কাছে গিয়ে বৃষ্টি দেখার চেষ্টা করলো। না, শরীর ক্রমশই অবশ হয়ে আসছে। চোখ ভরে আছে জলে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। দুইহাতে মুখ ঢেকে নিল ইতি। কেঁপে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিতে হবে। গলা দিয়ে একটু শব্দ হলেই মা রান্নাঘর থেকে এসে উঁকি দিয়ে বলবেন ‘এই এখানে কাঁদে কে?’
বিশ্রী হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ইতি মোবাইলটা দেয়ালের পাশে রাখলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। মাথার রগগুলো ‘দপদপ’ করছে। কল্প কেন ভাবে তাকে ভুলে যাবে ইতি? কেন ভাবে বয়স বাড়লেই সে এগুলো নিয়ে হাসবে। তার আবেগ-ভালোবাসাকে কেন সে এত যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে। কি করবে এখন ইতি? বুক ফেটে যাচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি ছাদে বের হয়ে আসে। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে একটা বৃষ্টিভেজা শালিক উড়ে গেল পিলার থেকে। ঝিরিঝিরি জলের ফোঁটা অনবরত মাথায় পড়ছে ইতির৷ এবার মনখুলে চোখের পানি ফেলা যায়। বৃষ্টির সঙ্গে মিশে যাক তার কান্না। কেউ বুঝবে না, কেউ জানবে না। বিশাল আকাশের জলের সঙ্গে অতি ক্ষুদ্র এক প্রণয়িনীর বিষাদমাখা চোখের অশ্রু মিশে যাচ্ছে আজ। ইতি এতটা দিন কেবল নিজের প্রকাশের লাগাম টেনে ধরেছিল। নিজের অনুভূতি, ইচ্ছা আকাঙ্খা গোপন রেখেছিল। ভুলে যায়নি সে, কল্পকে ভুলে যেতেও পারবে না কোনোদিন। রোজ রাতেই সে কল্পের ছবিগুলো দেখতো ফেইসবুকে গিয়ে। হাতে-গোনা এই ছবিগুলো কত সহস্রবার যে দেখেছে। কল্প কেন বুঝে না তার ভালোবাসা কম-বয়সের কোনো মোহ না। তার ভালোবাসার গভীরতা মাপার মতো ফিতা এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডে নেই। এই ক’দিন সে শুধু নিজেকে আড়াল করে রেখেছিল। অথচ কল্প উঠোন দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় দু’টি চোখ নিরাপদ দূরত্ব থেকে চেয়ে থাকতো। খাওয়ার টেবিলে চোরা চাহনিতে দেখতো। বারবার মনে হতো মানুষটাকে যদি নিজ হাতে কোনোদিন খাইয়ে দিতে পারতাম। ঘুমোতে গেলে কোলবালিশটা বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মনে হতো যদি বালিশটা হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেত। যদি কল্প হয়ে যেত? নিজে নিজেই লজ্জা পেত ভীষণ। তবুও সামনে যায়নি৷ পাগলামি করেনি৷ নিজেকে সামলে রাখতে পেরেছে। কারণ সে বিশ্বাস করতো মানুষটা তো তারই। কেবল সময়ের ব্যাপার। কল্প তো নিজেই বলেছিল সেও ভালোবাসে। তাকে ভালো না বেসে পারা যায় না। তবে হঠাৎ এ কি ঘটে গেল তার জীবনে। এই মানুষটাকে ছাড়া সে এই দীর্ঘ জীবন একা একা কাটাবে কি করে? ইতির কান্নার তোড় আরও বেড়ে যায়। নিজের চুল খামচে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদে সে। হাঁটু অবশ হয়ে আসে। বসে যায় মেঝেতে। খোলা আকাশ আর বৃষ্টি তাকে রক্ষা করতে পারেনি৷ কান্নার শব্দে ঠিকই ছাদে চলে আসেন হুস্না বেগম। দৌড়ে এসে ধরেন মেয়েকে। বিস্মিত হয়ে টেনে তুলে বলেন ‘আরে তোর কি হয়েছে? বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদছিস কেন?’
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম

মায়াডোর (২০ পর্ব)
.
কল্প ড্রাইভারের পাশে বসেছে৷ গাড়িতে মৃদুস্বরে বিদেশি গান বাজছে৷ আরবি না-কি অন্য কোনো ভাষার গান সে ঠিক বুঝতে পারছে না। পেছনে তার চাচা-চাচি সঙ্গে নিহা আর নিপা আছে। নামগুলোতে বাঙালি ছাপ স্পষ্ট। বড়ো হয়ে এরা হয়তো নিজেদের আরও কত নাম রেখেছে। সেসব নামে বিদেশি বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে পরিচিত। নিহা ইংলিশ উচ্চারণে অদ্ভুত বাংলায় বললো, ‘কল্প ভাইয়া ড্রিংক লাগবে।’

কল্প মাথা নেড়ে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, কুদ্দুস ভাই তুমি গাড়িটা একপাশে রাখো।’

ড্রাইভার গাড়ি থামায়৷ সে ড্রিংক নিয়ে আসে। দুজনের মাঝে নিহা ছোট। নিপা বড়ো। নিপার সঙ্গেই তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। মেয়েটাকে চুপচাপ দেখা যায়। চোখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যায় সে এতটাও শান্ত নয়৷ চোখ ঠিকরে ওর সজাগ মন বের হয়ে আসছে। দেশে নিয়ে আসার আগে হয়তো মা-বাবা বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে বুঝিয়ে শিখিয়ে এনেছেন। পোশাক-আশাকেও যথেষ্ট শালিন দেখা যাচ্ছে। শুধু যা দেখে ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি তোলার স্বভাবটা বিদেশ রেখে আসতে পারেনি৷ বাড়িতে ওইদিন মাছ নিয়ে একজন দোকানদার এলো। কাঁধে শার্ট। শরীরে সাদা লোম। বুকে কেঁচোর মতো হাড়। প্রথমে দু’বোন গিয়ে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে মাছের ছবি তুলেছে। এরপর নিহা মাছওয়ালাকে বললো, ‘এক্সকিউজ মি, আপনার কি একটা ছবি তুলতে পারি?’

লোকটা সুপারির নি*র্যাতনে লাল হয়ে যাওয়া দাঁত বের করে হেঁসে ‘তুলেন মা’
বলে আগ্রহ নিয়ে গুটানো লুঙ্গি ছেড়ে দিয়ে দাঁড়াল। নিপা পলকে কয়েকটি ক্লিক মেরে ছবি তুলে নিল। এভাবেই তাদের খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মাতামাতি করে দিন যাচ্ছে। কল্পের সঙ্গে নিপা তেমন কথা বলে না৷ অবশ্য সেও যে বলার জন্য মুখিয়ে আছে তাও না৷ তার দিনকাল যাচ্ছে একরম ঘোরের ভেতর দিয়ে। সেটা আবার আশেপাশের মানুষও কিভাবে যেন বুঝে যাচ্ছে। গতকাল বাড়ির পুকুর ঘাটে ঘণ্টা দুয়েক সিঁড়িতে বসে রইল সে। পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ সে বসে আছে নিজেই যেন বুঝতে পারেনি। চাচি এলেন তার কাছে। ফরসা স্বাস্থবতী নারী। হাতে, গলায় সোনার চুড়ি, হার চিকচিক করছে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। কয়েক হাত দূর থেকেও নাকে ঘ্রাণ আসে। সেই মানুষটি অনেক্ষণ তার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল সে টেরই পায়নি৷ হঠাৎ তিনি কাঁধে হাত দিতেই সে কেঁপে উঠলো। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘একা একা বসে কি এতো ভাবছো বাবা?’

এরকম ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তার। কিছুতেই সে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না৷ খানিক পর পর ইতির ইনবক্সে যায়৷ সে ওই মেসেজ পেয়ে কিছু বললো কি-না দেখে। ইতি কিছুই বলে না৷ মেসেজ সিন করে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি সে। কল্প জানে এটাই তার জন্য ভালো। তবুও বুকের ভেতর কেন এত ‘খচখচ’ করে তার? ইতিকে ওই মেসেজ পাঠানোর পর থেকে কেন তার অদ্ভুত অসহ্য এক অনুভুতি হচ্ছে। গতকাল বাজারে একটা সেলুনের দোকানের বেঞ্চে বসে আছে। বাস এসে থামে কিছুটা দূরে। আশ্চর্য, বারবার বাস এলে তার কেন যেন মনে হয় ইতি আসতে পারে ওই বাসে। সে সত্যিই খানিক এগিয়ে গিয়ে দেখে আসে। না ইতি আসে না। আসার কথাও নয়। ওইদিন চাঁদনি রাত। নিহা আর নিপা বললো তারা বিলের পাড়ে যাবে। বাবাকে বলে এসেছে৷ বিলে চাঁদ দেখবে তারা। কল্প তাদের নিয়ে গেল। বাড়ির উত্তর দিকে এই বিশাল বিল। টলটলে জলে চাঁদের আলো পড়েছে। বেশ অপূর্ব দৃশ্য। বিলের একপাশে অনেকটা জায়গাজুড়ে গোড়ালি অবধি সাদা ধবধবে ধূলো। চাঁদের আলোয় অন্যরকম লাগছে। চিকচিক করছে ধুলো-বালি আর বিলের জল। নিহা বললো, ‘কল্প ভাইয়া আমরা এদিকে হাঁটবো। তুমি গিয়ে মা’কে বলবে না।’

কল্প মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়ে একটা গাছের গোড়ায়। চোখের সামনে একটা লাটিম গাছ। আনমনে সে তাকিয়ে রইল সেদিকে। ক্ষীণ সময় পর আচমকা গাছটিকে সে স্পষ্ট দেখতে পেল ইতির অবয়ব। খিলখিল করে হাসছে ইতি। মুহূর্তেই আবার ঠিক হয়ে গেল সে। ওরা দুই-বোন হাসতে হাসতে ফিরে এসেছে।
রাতে সে ঘুমোতে পারে না। ঘুমের ভেতর ইতিকে নিয়ে নানান স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে৷ অন্ধকার রুমে প্রায়ই ইতির ঘ্রাণ পায়। স্পষ্ট সেই চেনা ঘ্রাণ। এটা ইতির শরীরের মৌলিক গন্ধ। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয়, ইতি নিশ্চয় কোনো মেসেজ দিয়েছে। তাড়াতাড়ি চ্যাক করে সে। না ইতির কোনো মেসেজ আসে না৷ এরকম তো তার কখনও হয়নি। ইতিকে কত উপেক্ষা করেছে৷ তাছাড়া প্রায় এক বছর ইতিও কোনো বাড়াবাড়ি করেনি। সে তাতে খুশিও হয়েছে। তাহলে এখন তার এমন লাগছে কেন? ইতিটার জন্য বুকের ভেতর এত তোলপাড় হয় কেন? মস্তিষ্কটা কেন সে দখল করে নিয়েছে? কেন তাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না কল্প? এতদিন ইতি যতসব পাগলামি করেছিল সবকিছু ছবির মতো চোখে ভেসে বেড়ায়। বাসে একসঙ্গে ঢাকা যাওয়া-আসা৷ ওকে পড়ানোর দিনগুলো। ওর জোর করে জড়িয়ে ধরা…।
সব, সবকিছু ভীষণ মনে পড়ে কল্পের। মাঝে মাঝে গান শুনে। তখনও আরও বেশি ইতির কথা মনে পড়ে। স্পষ্ট শুনে ওর খিলখিল হাসি। স্পষ্ট দেখে ওর অভিমানী মুখ। এতদিন তো এমন হয়নি। তাহলে কি তার অবচেতন মন তখন বিশ্বাস করতো ইতি তো তার আছেই। এখন হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে বলে মন বিদ্রোহ করে বসেছে?
কল্প ড্রিংক নিয়ে এলো। বাড়িয়ে দিল নিহার দিকে। গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। তারা জাফলং বেড়াতে গিয়েছিল৷ এখন সিলেট শহরে ফিরছে। হোটেলে থাকা হবে আজ। আগামীকাল অন্য কোথাও যাওয়া হবে। কল্প ভাবছে শহরে যেহেতু আছে ইতিদের বাসায় যাবে সে। ইতি কি করছে, কি ভাবছে বড়ো জানতে ইচ্ছা করে। ওর কি একটুও খারাপ লাগেনি? কিছুই বলবে না সে? তাকে তো ভালোবাসতো মেয়েটা। তাহলে এত শান্ত থাকবে কেন? সবকিছু কল্পের অসহ্য লাগছে। পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। হোটেলে ফিরে রাতটা ছটফট করে কাটিয়ে নিল সে। ভোর পাঁচটায় দুঃস্বপ্ন দেখে ভেঙে গেল ঘুম। সে দেখতে পেল একটা সবুজ খোলা মাঠ, একপাল সাদা হাসের পিছু পিছু যাচ্ছে ইতি। হাসগুলো গিয়ে একটা বিলে নেমে গেল। ইতিও হাসের সঙ্গে নেমে গেছে বিলে। সে ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উঠার কোনো চেষ্টা করছে না৷ সাঁতার কাটছে না৷ সে লাফ দিয়ে উঠে গেল ঘুম থেকে। এই স্বপ্নের কোনো মানে হয়? সে সাঁতার জানে। গিয়ে ইতিকে উদ্ধার করতে পারে৷ ইতি নিজেও সাঁতার জানে৷ তবুও তলিয়ে যাবে কেন? এরকম অযুক্তিক স্বপ্নের মানে কি? তবুও তার ভীষণ মন খারাপ হয়ে রইল।
সবাই যার যার রুমে তখনও ঘুমোচ্ছে৷ সে কাউকে কিছু না বলে অদ্ভুত এক অদৃশ্য হেঁচকা টানে যেন ঘোরগ্রস্ত হয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লো। রিকশা একটা নিয়ে উপস্থিত হলো ইতিদের বাড়িতে। এই বাড়িটা যেন কত আপন তার। আশপাশের গাছ, প্রতিটি পাখি, প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি দোকানই যেন তার বড়ো আপন। বারান্দার গ্রিলের দরজা খুলে বারান্দায় গেল। দাদাভাই করুণ সুরে ‘গুনগুন’ করে দোয়া-দরুদ পড়ছেন। করিডরে ঝাড়ু হাতে লতিফা। কল্প বিব্রত চেহারায় হাসি হাসি মুখ করে বললো ‘কি খবর লতিফা আপু, বাড়ির সবাই ভালো তো?’

লতিফা চারদিকে তাকিয়ে কাছে এসে ফিসফিস করে বললো, ‘ইয়াল্লা ভাইজান আপনে আইছেন। বাড়ির যে কি অবস্থা ভাইজান জানেন না। গেল রবিবারে কলেজ থাইকা ইতিরে ভূ*তে ধরছে। বাড়িতে আইসা হঠাৎ কইরা ছাদে গিয়া বৃষ্টিতে ভিইজা কান্নাকাটি করে নাজেহাল৷ বুঝেন অবস্থাটা ভাইজান। চাচি গিয়া পরে টেনে আনলেন। কেন কান্দে জিগাইলে কিচ্ছু কয় না। কলেজে যায় না। বিছানায় আন্দার ঘরে বইসা থাকে। হঠাৎ কান্দে হঠাৎ কইরা হাসে বুঝেন অবস্থা। আর সারাক্ষণ গায়ে জ্বর থাকে৷ আগুনপোড়া শরীর। এত গরম। দাদাভাই মসজিদের হুজুর আনছিলেন। ডেইলি হুজুর আইসা ফুঁ দিয়া যান। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হয় না ভাইজান।’

কল্প বিস্মিত হয়ে বললো, ‘কি বলো এসব?’

তাদের কথাবার্তা শুনে ফরিদ সাহেব হাঁক ছেড়ে বললেন ‘কে কথা কয়? কে আইছেরে লতিফা?’

– ‘কল্প ভাইয়া আইছে দাদাজান।’

তিনি রুম থেকে বের হয়ে এলেন।

– ‘কল্প তুমি এসেছো? আহা তুমি নাই তাই ভোরে আর বের হওয়া হয় না। তোমার খবর শুনলাম। বিদেশি মাইয়া না-কি বিয়ে করতেছো?’

– ‘হ্যাঁ নানাভাই।’

– ‘ভালো, খুব ভালো। তা আসো আমার রুমে। গল্প-টল্প করি৷ অনেকদিন পর আসছো।’

– ‘আচ্ছা আসছি। আগে ইতিকে দেখে আসি। ও না-কি অসুস্থ।’

– ‘ও কিছু না। ওই কলেজের টয়লেট মনে হয় দোষী। ভূ*ত-পে*ত্নী লগ নিয়েছে। হুজুরের ঝাড়ফুঁক চলছে। কয়েকদিন পর সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’

কথাটা বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। কল্প এসে লতিফার সঙ্গে ঢুকলো নীলার রুমে। নীলা রান্নাঘরে৷ লতিফা বাতি জ্বালিয়ে দিল রুমের। পাতলা নীল কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে ইতি। রান্নাঘর থেকে ডাক পড়ায় লতিফা সেদিকে ছুটে চলে গেল। কল্প এক অদ্ভুত ঘোর লাগা অবস্থায় গিয়ে বিছানায় বসে। তারপর কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে রাখে ইতির কপালে। প্রচণ্ড গরম শরীর। তার বুকে ‘চিনচিনে’ এক ব্যথা ক্রমশই তীব্র হতে শুরু করে। তার ইতিটার এ কেমন অবস্থা হয়েছে? চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। কলেজে যাচ্ছে না৷ অসুখ ছাড়ছে না৷ গত রোববারে বৃষ্টিতে ভিজে কেঁদেছে ইতি৷ সেদিনই তো সে মেসেজ পাঠিয়েছিল। তারমানে তার জন্য এই অবস্থা মেয়েটার। এত কষ্ট পেয়েছে ইতি? এত কষ্ট! এই কষ্ট সে কিভাবে দূর করবে? সে আনমনেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। নীলা এসে ঢুকলো, ‘কল্প এসেছো?’

কল্প হঠাৎ করে কেঁপে উঠলো, ‘হ্যাঁ আন্টি।’

– ‘তোমার বিয়ে কবে তারিখ কি পড়েছে?’

– ‘কথাবার্তা হচ্ছে। মা ও আসবেন। নিজের মাঝে তো তাই এত চিন্তা করছেন না৷ হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে।’

– ‘এত ভোরে কোত্থেকে এলে?’

– ‘টাউনেই ছিলাম। চাচা-চাচিদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। একটা হোটেলে উঠেছি। ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম দেখে যাই আপনাদের।’

– ‘আচ্ছা বসো, তোমার জন্য নাশতা আনি। দেখো ইতির কি অবস্থা হয়েছে। তাকে নিয়ে সবাই কত টেনশনে। কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলে না কি হয়েছে।’

কল্প কোনো জবাব দিল না। নীলা চলে গেল। তাদের কথাবার্তা শুনে ইতির ঘুম ভেঙে গেছে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কল্পের পিঠে। নীলা চলে যেতেই কল্প ওর দিকে ফিরে তাকায়। চোখাচোখি হয় তাদের। ইতি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় পলকেই। কল্প পুনরায় ওর কপালে হাত দিয়ে বলে, ‘এ কি অবস্থা তোমার ইতি? কি হয়েছে?’

ইতি কোনো জবাব দিল না। কল্প পুনরায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘জ্বর তো এতদিনে কমার কথা, তুমি ওষুধ খাচ্ছ তো ঠিকঠাক।’

ইতি তবুও জবাব দিল না। কল্প ভেজা গলায় বললো, ‘তুমি আমার দিকে তাকাবে না?’

ইতি মুখ ফিরিয়ে এনে ছলছল চোখে বললো, ‘তাকানোর কি আছে?’

– ‘জবাব দিচ্ছ না কেন ইতি? তোমার এই অবস্থা কেন? ওষুধ-টষুধ খাচ্ছ তো ঠিকমতো?’

‘তা দিয়ে আপনি কি করবেন?’ কথাটি বলে ইতি পুনরায় মুখ ফিরিয়ে নিল। নীলা তারজন্য নাশতা নিয়ে এলো। কল্পের সামনে ট্রে রেখে ইতিকে বললো, ‘ইতি চলো হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করবে।’

ইতি কাশতে কাশতে বললো, ‘আমার কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না আন্টি।’

– ‘কি শুরু করেছো তুমি ইতি? তোমার যন্ত্রণায় বাড়ির সবাই শেষ। এভাবে না খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে না-কি।’

ইতি তবুও চুপচাপ শুয়ে রইল। কল্পের গলা দিয়ে কিছুই গেল না আর। কিছু না খেয়ে চলে যেতেও পারছে না। গরম গরম চা টেনে খেয়ে উঠে গেল৷ ফরিদ সাহেবকে গিয়ে মিথ্যে বললো, ‘বসে গল্প করার ইচ্ছা ছিল নানাভাই৷ কিন্তু চাচা কল দিয়েছেন এখনই যেতে হবে।’

কথাটি বলেই আর দাঁড়ায় না। হাঁটা শুরু করে। তার বুকে চাপা একটা কষ্ট হচ্ছে৷ ওদের সামনে হঠাৎ চোখে পানি চলে এলে কি ভাববে ওরা? তাই তাড়াতাড়ি চলে এলো সে। ইতি কি শুরু করেছে এসব? কেন এমন করছে? এখন তারই বা কি করার আছে? একটা রিকশা ডাকলো সে। রিকশাওয়ালা বললো, ‘কোথায় যাইবেন ভাইসাব?’

কল্প জবাব না দিয়ে উঠে বসে বললো, ‘যেদিকে ইচ্ছা যান।’

___চলবে……
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here