গল্প অবেলায়_তুমি লেখা:–আয়শা সিদ্দিকা(টিপ) পর্বঃ০১+০২

0
3833

গল্প অবেলায়_তুমি
লেখা:–আয়শা সিদ্দিকা(টিপ)
পর্বঃ০১+০২

সজোরে থাপ্পর খেয়ে মাটিতে বসে পরে টিপ, এতটাই শব্দ হয় সবাই চুপ হয়ে যায় ঘটনার আকষ্মিকতায়।

শাড়ির আঁচল কতখানি ছিড়ে গেছে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে টিপ, এতগুলো লোকের ভিরে তার সম্মান আজ মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে, দু-চোখ বেয়ে পানি পরছে তার, কি করে আটকাবে এই সম্মানহানি থেকে নিজেকে। আঁচল টেনে আবার মাথায় দিয়ে দেয়ার সাথে সাথে শাড়ির ব্লাউজের ফুল হাতার কাঁধের ঠিক নিচ থেকে টেনে ছিড়ে ফেলে সাহিল মাহমুদ অর্নব, টিপ কাঁধে হাত দিয়ে ঢেকে ছলছল চোখে তাকায় সাহিলের দিকে।
সাহিল একটা মুচকি হাসি দিয়ে অপর পাশের হাত থেকেও কিছুটা ছিড়ে ফেলে টেনে। টিপ সাহিলের পায়ের কাছে বসে পরে, আপনি এই এতগুলো মানুষের মাঝে এভাবে আমার ক্ষতি করবেন না আমি আমি আপনার পায়ে পরি প্লিজ। (কেঁদে কেঁদে পা জরিয়ে ধরে টিপ)।
,
সাহিল টিপের চুল মুঠি করে ধরে উঠিয়ে দাড়া করায় ওকে,
—আমার কথা না শোনার ফল দেখলি তো কি হলো। মনে রাখিস আজকের কথা। (সাহিল)।(রেগে+চিল্লিয়ে)
—টিপের দু-চোখ বেয়ে পানি পরছে, সবাই পার্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে আর মজা নিচ্ছে, এক একজন কেমন অদ্ভুত হাতা ছেড়া, ওরনা ছাড়া ড্রেস পরে আছে, কারো কারো বুকের কিছু অংশ দেখাও যাচ্ছে।
এসব নাকি এখনকার ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
,
নারী হলো সম্মানী, তাকে দেখে মানুষ সম্মান করবে কিন্তু তা না, নারীর দোষেই নারী পদে পদে অসম্মানিত হয়।
,
নারীর শরীর হলো ঝিনুকের মুক্তোর মত, খোলসের আবরনে তাকে সযত্নে আগলে রাখা হয়।
,
টিপ লজ্জায় মরে যাচ্ছে, বিয়ের দ্বিতীয় দিনই ওর এমন কিছু দেখতে হবে তা কল্পনাও করতে পারেনি টিপ।
সাহিল রেগে চলে যায়, আর অনেক অনেক ড্রিংকস করতে থাকে।
অপর পাশে একজন এই দৃশ্য দেখে হাত মুঠো করে চুপচাপ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
পার্টির সবাই যেখানে মজা লুটতে ব্যস্ত, তিনি সেখানের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে মেনে নিতে না পেরে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টায়।
,
টিপ নিজের আঁচল দিয়ে লজ্জা ঢাকার চেষ্টায় বিভোর ঠিক তখন পাশ থেকে একটা ছেলে এসে টিপের আঁচল টেনে সরিয়ে নেয়।
,
টিপ ভয় পেয়ে তাকায়…
,
—ভাবিজী এই স্টাইলেও তোমায় দারুণ লাগছে, আঁচল তুলে কি হবে সাহিলের চয়েজ আছে বলতে হবে, কিন্তু ও তোমার যত্নআত্তি করতে পারবেনা, চলো আমার সাথে আমি তোমায় সুখ দেবো। কোন কষ্ট পাবে না(সাহিলের বন্ধু)।(সবাই হেসে ফেলে ওর কথায়)
,
—টিপ চারিদিকে তাকায়, কোথাও সাহিলকে দেখতে পাচ্ছে না।
ও জোর করে নিজের আঁচল ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে ছেলেটা ড্রিংকস এনে টিপকে জোর কর খাইয়ে দিতে নিলে,,
,
টিপ জোরে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে আসে বাহিরে।
,
আর জোরে জোরে কাঁদতে থাকে ,
এটাই বুঝি তার কঁপালে লিখা ছিলো। বিধাতা তুমি কেন এমন ভাগ্য আমায় দিলে।
বিয়ের পরেও কঁপালে সুখ লিখোনি, ছোট থেকেই তো কষ্ট পেয়ে এসেছি।
,
হঠাৎ কেউ একজন টিপের দিকে টিস্যু এগিয়ে দেয়।
,
টিপ চমকে ওঠে, ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শাড়ি দিয়ে ঢেকে নেয়।
,
—ভয় পাবেন না আমি আপনার কোন ক্ষতি করবোনা (সিগারেট খেতে খেতে বলে লোকটা)
টিপ মাথা তুলে তাকায়, তারপর আবার চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিলে লোকটা পেছন থেকে ডাক দেয়।
,
—এখানে আপনি নিরাপদ নন, যদি বিশ্বাস করেন তাহলে আপনাকে পৌছে দিতে পারি।
,
—টিপ সামনে তাকিয়ে দেখে সাহিল দাঁড়িয়ে আছে, টিপ ভয় পেয়ে সাহিলের কাছে যায়।
,
সাহিল রাগি চোখে তাকায় টিপের দিকে, তারপর জোর করে টিপের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে গাড়ীর কাছে।
টিপ হাতে ব্যাথায় কুকরে ওঠে, কিন্তু সাহিলের তা বুঝতে বড্ড কষ্ট হয়, সাহিল টেনে টেনে টিপকে জোরে গাড়ীর মধ্যে ফেলে লক করে দেয় গাড়ীর গ্লাস।
,
টিপ কঁপালে চোট পেয়ে বসে পরে।
,
দূর থেকে তাকিয়ে থাকে হিমান্ত, কিছু করার অধিকার তার নেই, চোখের সামনে সব দেখেও চুপ থাকতে হচ্ছে তাকে।
অন্যকেউ হলে এতক্ষণে তাকে মেরে হাসপাতালে পাঠাতো কিন্তু সাহিল তার ছোটবেলার বন্ধু, তার বিবাহিত বউ কে কিছু বলার রাইট তার নেই।
,
হাত মুঠো করে দেয়ালে সজোরে আঘাত করে হিমান্ত।
হ্যাঁ এতক্ষণের এই ব্যতিক্রমী ছেলেটার নাম হিমান্ত।
তবে কেন যেন কোন নারীর উপর হওয়া অত্যাচার দেখলেই তার মাথায় খুন চাঁপে।
মনে হয় পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস করে দেই এক নিমিষেই।
,
,
,
চলবে….
,
“Mr&Mrs”(আমার মিসেস)
#Aysha_Siddika(Tip)

#অবেলায়_তুমি
#পর্ব:-০২

টিপের সমস্ত শরীরে কেউ যেন হাতের স্পর্শে ছুয়ে যাচ্ছে, টিপের গলায়, নাকে মুখে গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে।
টিপ চেয়েও তাকে ছাড়াতে পারছে না, ক্রমশ হাত দুটো টিপের কোমরে নেমে আসে, আর টিপের শরীরে অদ্ভুত একটা শিহরন বয়ে যায়। পুরো শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে।
টিপের চোখ বেয়ে পানি পরছে, কিন্তু কি করবে সে, তার যে কোন শক্তিই এখন নেই মনে হচ্ছে, চিৎকার করেও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
,
হাত দুটি টিপের বুকে গলায় যেকোন জায়গায় গভীর ভাবে স্পর্শ করছে আর বড্ড শিতল মনে হচ্ছে।
টিপ সামনে তাকিয়েই জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে বসে।
,
নিরব রাত্রি ঘড়ির কাটায় টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন রাত চারটা বাজে।
,
টিপের সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার।
,
পাশেই সাহিল বেঘোরে ঘুমুচ্ছে, আর টিপ বুঝতে পারছেনা কিছুই, চারিদিকের নিস্তব্ধতা আর ঘড়ির টিকটিক শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই।
তাহলে নিশ্চিত কোন দুঃস্বপ্ন, যেটা সে প্রায়ই দেখে, কিন্তু কখনও কালো আবছায়া অন্ধকার আবার কখনও কোন হাসির ঝলকানি শুনতে পায় টিপ।
আচ্ছা কেন আমার সাথেই এমন হয়, বুঝতে পারেনা টিপ, কিছু সময় স্তব্দ হয়ে বসে থাকে।
,
পাশেই রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পুরোটা একঢোকে খেয়ে ফেলে।
,
ভোরের আলো ফোঁটার সময় হয়ে গেছে, আজান দিচ্ছে, আজানের শব্দটা মনটাকে শান্ত করে ফেলেছে।
,
নামাজ পড়তে হবে, সাহিলকে ঠেলে উঠাতে চেয়েও পারছেনা ভয় পাচ্ছে টিপ।
যদি আবার গায়ে হাত তোলে, টিপ বড় হলেও ছোট থেকেই মার কে অনেক ভয় পায়।
,
তবুও নামাজ পড়তে হবে, দুটি মানুষ তার অতীত জীবনে কি করেছে তা ভুলে যখন চারহাত এক হয়, আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে বিয়ে করা হয় তখন দুজনের এক আত্মায় পরিনত হয়।
আল্লাহ কুদরতি ভাবে দুজনের মনে এমন একটা মায়ার সৃষ্টি করেন যার কারনে একদিনের পরিচয় হলেও মনে হয় যুগ যুগ ধরে চেনে।
,
সেখানে দুজনের সুখ দুঃখ দুজন মিলে ভাগ করে নেয়া, সকাল বিকাল ঝগড়া করা আবার ভালোবাসার খুনশুটি শেষে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলা বড্ড ভালোবাসি, গতকালের থেকেও বেশি।
,
টিপ সাহিলকে ডাক দিতে গেলে সাহিল ওপাশ ফিরে শুয়ে পরে।
আবার টিপ আস্তে করে ডাক দেয়, ঘুমন্ত মানুষ নাকি মরা মানুষের মত ঘুমনোর পর তাদের রুহ নাকি আকাশে উরাউরি করে, ছোটবেলা থেকে দাদুর কাছে শুনতাম, তাই আস্তে করে সাহিলকে ডাক দিলাম।
,
তারপর হাত দিয়ে আস্তে ধাক্কা দিতেই সাহিল আমার হাত টেনে উল্টো করে আমাকে নিচে ফেলে আমার উপরে উঠে চেঁপে ধরে।

,
—-ক কি ক রছেন আপনি(টিপ ভয়ে ভয়ে বললো)
—-এতবড় সাহস কোথায় পেলে আমাকে জাগানোর(রেগে দাতে দাত চেঁপে বললো)
—টিপ ভয় পয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
—উত্তর দাও, তোমাকে কে বলেছে আমাকে এত সকালে ডাকতে, আমি এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠি না জানো না(ধমক দিয়ে)
,
টিপের হাত শক্ত করে চেঁপে ধরায় টিপ প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে, চোখ থেকে পানি পরছে একফোঁটা।
,
সাহিল টিপের হাত ছেড়ে দিয়ে মুখে বিরক্তি আর চোখে আগুন নিয়ে উঠে বসে।
,
—-ন না মা জ পড়বেন না(টিপ)
—সাহিল পেছনে তাকায় টিপের কথা শুনে, মনে হলো নামাজ কি জিনিস তা সে জানেই না, কোনদিন শোনেই নি।
,
টিপ তবুও ভয় পেলেও হাল ছাড়ে না,

,
—-চলেন দুজনে একসাথে নামাজ পড়ে নি(টিপ)
,
সাহিলের রাগ কিছুটা শান্ত হলেও নামাজ পড়ার মুড নাই এখন, বিয়ে করে বড্ড বিপাকে পরেছে মনে হচ্ছে।
,
হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় এসে বসে পরে।
,
টিপ হা করে তাকিয়ে আছে, আর কি বলবে ওর জানা নাই।
,
সাহিল সোফায় চুপটি করে ঘুমিয়ে পরে।
,
অন্যদিকে কোন একজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে আর একটার পর একটা সিগারেটের ধোয়ায় নিজের হৃদয় পোড়া গন্ধ শুকছে..
,
রাত তো শেষের পথে ঘুমাবি না?
,
অনুর কথায় ফিরে তাকায় হিমান্ত।
,
—তুই এখনও জেগে কেন?
,
—যার ভাই রাত বিরাতে প্রেমিকার বিরহে একটার পর একটা সিগারেটের নেশায় ডুবে থাকে তার বোনের কি রাতে ঘুম হয়?(অনু)
,
—অনু আজকে আমি ওকে আবার দেখেছিলাম।
সেই কৃষ্ণকলি লাল টুকটুক শাড়ি, মাথায় আঁচল ফেলে ছলছল মায়াবী চোখে তার চাওনি।
,
আর..
,
—আর..?(অনু)
,
—আর চোখ ভরা জ্বল বলেই উঠে বারান্দায় চলে যায়।
,
হিমান্তদা তার সাথে কথা বলেছিলি?(অনু ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি রেখে)।
,
—উহু, পাখি যে আগেই অন্যের খাঁচায় বন্দী হয়ে গেছে, আমি তাকে হারিয়েছি শত শত শালিকের ভিরে, আমি তাকে সাদা ধদধবে বকের ন্যায় খুঁজিয়াছি ছোট্ট সে বিলের ধারে।
বসে ছিলাম আমি একমনে তাকিয়ে কখন সে দেয় উঁকি।
কিন্তু সে যে আমার ভাগ্যে নেই।
মনে থাকলেও কঁপালে নেই,
,
অনু জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাড়ায়।
,
এই একটা মানুষ তার ভাইটা, কত কষ্ট পাচ্ছে সেটাতো সে নিজেই বুঝতে পারছে।
,
ভাইয়ের জন্য সারাদিন চিন্তিত থাকতে হয়, কখন কি করে বসে।
,
ছেলেটা বড্ড জেদী আর একরোগা, মনে যেটা ধরে সেটা হারাতে দেয় না।
,

আজকে তাহসানের গানটার সাথে মিলে যাচ্ছে সব,
বড় অবেলায় পেলাম তোমায় কেন এখনই যাবে হারিয়ে…
,
,
টিপ কিছুক্ষণ থ মেরে বসে থাকার পর নাক ফুলিয়ে শাড়ি কোমরে গুজে পুরাই ঘরের বউএর মত ভিলেন স্টাইলে সাহিলের কাছে যায়, গিয়ে আস্তে আস্তে পা টিপে সাহিলের চোখের উপরে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে জেগে নাকি ঘুমিয়ে।
,
হঠাৎ বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয় টিপ।
ভয়ে বুকটা ধুকপুক করতেছে, মনে অনেক সাহস যুগিয়ে যখনই সাহিলকে এক নজর দেখেই আবার ডায়নিং এর কাছে গিয়ে গ্লাসে করে পানি নিয়ে আসে।
,
এসে যখনই পানি সাহিলের মুখে দিতে যাবে তাকিয়ে দেখে সাহিল ওর দিকে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে, আর মুচকি হাসছে।
,
সাহিলকে সজাগ দেখেই টিপের হাত থরথর করে কাঁপে ভয়ে,
পানির গ্লাসটা মনে হচ্ছে পরে যাবে, সাহিল উঠে টিপের হাত থেকে গ্লাস নেয়ার আগেই ভয়ে টিপ গ্লাসটা ছেড়ে দেয়।
আর কি হবে যা হবার তা ই হয়
?
গ্লাসের সব পানি সাহিলের গায়ে।
,
সাহিল ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে,
কি করছো কি টিপপপপ(ধমক দিয়ে)
,
টিপ ভয়ে উঠেই এক দৌড়,,,
সাহিল রাগবে নাকি হাসবে বুঝতে পারছে না।
,
টিপ রুমে এসেই দরজা লক করে দেয়, বাব্বাহ একটা রাক্ষস বর, কি ভয়ানক।
,
,
চলবে…
,
গল্পের নামটা পাল্টে দিলাম, এক নামে দুই গল্প ভালো লাগবে না।
,
গল্প #অবেলায়_তুমি(Mr&Mrs বাদ দিয়ে এটা দিলাম)
লেখা:–আয়শা সিদ্দিকা(টিপ)
পর্ব:-০২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here