এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_৮,০৯

0
1520

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৮,০৯
#মাসুরা_খাতুন
০৮

দরজা খুলেই ছোঁয়া স্বাধীন কে দেখতে পেলো।ছোঁয়া কে দেখেই স্বাধীনের কেমন জানি ঘোর লেগে গেল।এই রাতের বেলা মেয়েটি চুল খোলা রেখেছে কেন? এই ঝড় বাতাসে ওর খোলা চুল গুলো যে কেমন করে টানছে তা কি সে জানে? সম্মো* হনীর মতো তাকিয়ে থাকে স্বাধীন। মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে যায় “অসম্ভব সুন্দর। “রাতের এতো প্রহরে এই নির্জন জায়গায় এমন এক মায়াবীনিকে একাকী পেয়ে কোন ব্রম্মপুরষ পারবে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে? চিরকাল এই নারী সৌন্দর্য নিয়ে হাজারো কবি কবিতা রচনা করে গেছেন।নারীর সৌন্দর্যের উপমায় বিমোহিত হয়ে সন্যাস ত্যাগ করেছেন কতো সন্যাসী,আর এই নির্জন রাত্রি প্রহরে এ আবেদন কে উপেক্ষা করার সাধ্য স্বাধীনের নেই।সে তো ক্লান্ত, অনেক তৃষ্ণার্ত।তার এই আটাশ বছরের জীবনের প্রতিটি রাত্র কাটে এক আবেদনময়ী নারী সঙ্গীর অভাবে।যেখানে বোধ হওয়ার ও আগে থেকেই পৃথিবীর সবথেকে আবেদনময়ী,আকর্ষণীয় নারী ওর জন্য হালাল হয়ে আছে।সেই প্রেমময়ী ও যে নিজের প্রানপুরুষটার জন্য প্রতিটি রাত অপেক্ষা করে থাকে তা হয়তো স্বাধীনের অগোচরেই।
একপা দু- পা করে সামনে এগোয় স্বাধীন। ওকে দেখতে আজ উন্মা*দের মতো লাগছে।দু-চোখ শুধু সামনে দাঁড়ানো লাস্যময়ীর রূপ গিলছে।ছোঁয়া নিজেও স্বাধীনের ওই দৃষ্টিতে খু* ন হওয়ার জোগাড়। কি আছে ঐ মানুষটার মাঝে জানেনা ছোঁয়া। শুধু জানে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি অন্য সবার থেকে আলাদা।তার একটা আলাদা শক্তি আছে সবাই কে বিমোহিত করার।তার একটু স্পর্শ পেতে তৃষ্ণায় ম* রে যায় ছোঁয়া।

“তুই এতো সুন্দর কেন ছোঁয়া? কেন বারবার তোর ঐ রূপ ঘা* য়েল করে আমায়? “দু হাতের মাঝে ছোঁয়ার দু গাল নিয়ে বলে স্বাধীন।
”তোমার আমায় ভালো লাগে স্বাধীন ভাই? পছন্দ করো আমায়?চোখে চোখ রেখে বলল ছোঁয়া। ”

“হু,খুউব! খুব পছন্দ করি তোকে?মনে হয় সবসময় এই বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ করে রাখি।খুব খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখি তোকে।”ছোঁয়ার দিকে আরো মাথা আগিয়ে বলে স্বাধীন।
দুজনের মাঝে হয়তো আর কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান।স্বাধীনের গরম নিশ্বাস নিজের চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে তা টের পাচ্ছে ছোঁয়া।

“প্রতিটি রাত আমি অপেক্ষা করি তোর। আমার একাকী রাতের শয্যা সঙ্গী হিসেবে কতোদিন তোর অভাব অনুভব করেছি তা গণনা বিহীন । তোর এলোমেলো চুলে হারিয়ে যেতে চেয়েছি বারংবার। তোর ওই নিষ্পাপ মুখশ্রী তে ইচ্ছে মতো ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে ছটফট করে আমার বেহায়া মন।”
ছোয়ার কানের কাছে মুখ এগিয়ে বলে স্বাধীন। ওর কণ্ঠে যেন মধুর সরোবর। ছোঁয়া প্রতিবার কেঁপে ওঠে ওর বলা প্রতিটা কথায়।

“আমিও যে তোমাকে চায় স্বাধীন ভাই,খুব করে চায়।আমার সব কিছু তে, সকল প্রার্থনায় যে শুধু তুমি থাকো।তোমার ওই তীক্ষ্ণ চোখের চাহনিতে আমি ম*রতে চায় হাজার বার।”

“তুই আমার সব রে পাগলি।এই সাহারিয়ার স্বাধীন শুধু মাত্র একটা নারী সঙ্গের জন্যই হাজার বছরের অপেক্ষা করে আছে তা হলো আমার ছোঁয়া।”
বলেই স্বাধীন ওর ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে যায় প্রিয়তমার অধর ছুঁইয়ে দিতে।
“স্বাধীন ভাই,তাহলে নিহা আপু কে? ও কেন এসেছে আমাদের বাসায়?তুৃমি নাকি ওকে ভালোবাসো?”
হটাৎ ছোঁয়ার কথায় ঘোর কাটে স্বাধীনের।নিজেকে ছোঁয়ার একদম কাছে আবিষ্কার করে। ওর মনে পড়ে ও কেন এসেছিল ছোঁয়ার কাছে। যখন এসেছিল তখনও তো একরাশ রাগ নিয়ে এসেছিল,তাহলে হটাৎ কি হয়ে গেলো ওর।নিজের রাগের কথা মনে পড়ে স্বাধীনের।সাথে মনে পড়ে দুপুরে ছোঁয়ার বিরক্তিকর কাজের কথা। মুহূর্তেই পূর্বের রাগ জেগে ওঠে স্বাধীনের মধ্যে। এক ঝটকায় ঠেলে দেয় ছোঁয়া কে।চট করে নিজেও দূরে সরে আসে।চোখে সেই আবারও আগের হিং স্রতা।
হটাৎ স্বাধীনের এমন পরিবর্তনে থমকে যায় ছোঁয়া। বুঝতে পারে না হটাৎ স্বাধীন ভাই এমন হলো কেন।
স্বাধীন ওর গালদুটো শক্ত করে চেপে ধরে।
“নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। তোর সাহস কি করে হয় আমার কাছাকাছি আসার? এই সাহারিয়ার স্বাধীন কে ছোঁয়ার?নিজের কোন আত্মসম্মান নেই। ”
ধমকে ওঠে স্বাধীন। সাথে ছোঁয়ার হাতদুটো পেছনের দিকে ভাজ করে ধরে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে।

প্রচন্ড ব্যথা কুঁকড়ে যায় ছোঁয়া। হটাৎ করে স্বাধীনের কি হলো বুঝতে পারে না, একটু আগেই তো ভালো ছিলো।তাহলে কি এতোক্ষণ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখেছিলো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে ছোঁয়া। হাতে খুব ব্যথা লাগছে। মনে হচ্ছে কব্জির কাছে মনে হয়ে গুড়োগুড়ো হয়ে গেলো।

“ভাইয়া প্লিজ ছেড়ে দাও খুব ব্যথা পাচ্ছি তো।হাতটা মনে হয় ভেঙেই যাবে আমার। “চোখভরা নোনা পানি নিয়ে বলে ছোঁয়া।

“তোর হাতটা ভেঙেই ফেলবো,যাতে তুই আর কারো জুতো পরিষ্কার করার সুযোগ না পাস।”

“নিহা আপু আমাকে বললে আমি কি করে না করবো? উনি তো তোমার,,”

“কি? কি আমার? যায় হোকনা কেন,তায় বলে তুই তার জুতো পরিষ্কার করে দিবি? এতোটুকু সেলফ রেসপেক্ট নেই,বেয়াদব মেয়ে।সত্যিই তুই আমার যোগ্য নয়।তোকে একেবারেই যায় না আমার সাথে।এইজন্যই তো তোকে আমি সহ্য করতে পারিনা।”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল স্বাধীন।

“আমি ভেবেছিলাম, নিহা আপুর জুতো পরিষ্কার করে না দিলে তুমি রেগে যাবে আমার ওপর,তায়তো,”ব্যথায় নীল হয়ে যাওয়া মুখে বলল ছোঁয়া।

“চুপ কর!একদম চুপ।আমি তোকে বলেছি, নিহার জুতো পরিষ্কার করতে? আমি তোকে বলেছি ওর কিছু প্রয়োজন হলে সেটা দিতে।তোকে দোহাই দিয়েছিলাম,ওর সব কাজ করে দিতে?”

“আসলে ভাইয়া উনি আমাদের মেহমান।”
আর বাকীটুকু বলতে পারে না ছোঁয়া। তার আগেই স্বাধীন ওর হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে একহাত দিয়ে ছোঁয়া কে নিজের দিকে টেনে নিলো,আরেক হাতে ওর গালদুটো আগের মতো করে শক্ত করে ধরে নিজের মুখ একেবারে ছোঁয়ার মুখমন্ডলের কাছে নিয়ে বলল,

“যতদিন না সেলফ রেসপেক্ট শিখবি,নিজেকে দাম দিতে শিখবি ততদিন এইরকম অবহেলায় পাবি আমার কাছে। আমি তোকে ঘৃণা করি ছোঁয়া। আই হেইট ইউ।তুই আমার যোগ্য না।আমি সহ্য করতে পারিনা তোকে।

বলেই ওমন ভাবেই ধরে রাখলো ছোঁয়া কে।ছোঁয়ার পানিভরা চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকলো স্বাধীন কিছুক্ষণ। তারপর হুট করেই ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের ঘরে।
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো ছোঁয়া। একদিকে প্রচন্ড হাতের ব্যথা,অন্য দিকে কিছু উত্তর না জানা প্রশ্ন। আজ অন্য এক স্বাধীনকে দেখেছে ছোঁয়া। অন্য দিনের কঠোরতার চেয়ে আজকের কঠোরতা ছিল ভিন্নরূপ।ও নিহার জুতো পরিষ্কার করায় রেগে গেলো স্বাধীন ভাইয়া। আর রেগে যাওয়ার আগেই যে কথা গুলো বলল সেগুলো কি ছিলো।কোনটা সত্যি? কোনটা বিশ্বাস করবে ছোঁয়া? আগের বলা কথা গুলো? নাকি পরের গুলো?
আগের বলা “তুই আমার সব রে পাগলি” এই টা? নাকি পরের “আমি তোকে ঘৃণা করি, তুই আমার যোগ্য নস”এই কথা গুলো? কিন্তু ঘরে ঢুকেই স্বাধীনের ছোঁয়া গুলোতে তো কোন অভিনয় দেখেনি ছোঁয়া। প্রচন্ড মায়া খুঁজে পেয়েছিলো সে,অনেক ভালোবাসার স্পর্শ অনুভব করেছিল সে।নিজেই হতভম্ব হয়ে বসে পড়ে ছোঁয়া। হাতদুটোতে রাজ্যের ব্যথা। হাতদুটো কালচে হয়ে গেছে।লাইট গুলো জ্বালিয়ে রেখেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া। আজও ঘুমের মাঝে বরাবরের মতোই সেই অনূভুতি। হাতের কালো হয়ে যাওয়া জায়গায় খুব যত্ন করে কে যেন ছুঁয়ে দিচ্ছে যেন এতোটুকু ব্যথা ও না লাগে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আজও হাতে পেইন কিলারের গন্ধ পেলো।আর ব্যথাটাও অনেক টা কম।কোন কল্পনা করেনা ছোঁয়া, কারণ ও কল্পনা করলেই তা মিছে হয়ে যায়। তারচেয়ে কে রাতে ওকে ব্যথা পাওয়া জায়গায় মলম লাগিয়ে দিয়ে যায় তা না জানায় থাক।

কিচেনে সবার জন্য পরোটা ভাজছিল ছোঁয়া।আজ ও কলেজে যাবে না,গতকাল স্বাধীনের গালে জোরে ধরায় দাগ হয়ে আছে। লাল টকটক করছে দু গালের তিন চার আঙুলের দাগ।
এমন সময় নিহা বাড়িতে ঢুকলো। প্রতিদিন ব্যায়াম করার অভ্যাস ওর, তায়তো সকাল সকাল স্বাধীন কে ডেকে নিয়ে জগিংয়ে গিয়েছিল। স্বাধীন ও প্রতিদিনই হাঁটতে বেরোয়, কিন্তু আজ যাবেনা বললেও নিহার জোরাজোরিতে আর না করতে পারেনি,কয়দিনের জন্যই এসেছে মেয়ে টা।অন্তত খারাপ ব্যবহার করা উচিত না।
“গুড মরনিং ছোঁয়া,”কিচেনে উঁকি দিয়ে বলল নিহা।

“গুড মরনিং আপু।কোন সমস্যা হয়নি তো।”

“আরে না।স্বাধীন থাকতে আবার কিসের সমস্যা। “স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে বলল নিহা।
স্বাধীন ততক্ষণে ওপরে ওর নিজের রুমে যাচ্ছিল।ফ্রেশ হয়ে আসতে।

“এই ছোঁয়া, আমার জন্য ফ্রুট সালাদ,আর কিছু কাজু দিও।”অর্ডার করে সোফায় গিয়ে বসল নিহা।

স্বাধীন ও ফ্রেশ হয়ে আসছিল নাস্তা করতে।

“ছি! ইয়াক! কি বানিয়েছ এইটা?”বলেই সালাদের পিরিচ টা জোরে ছোঁয়ার দিকে ঠেলে দিলো নিহা।

“কেন আপু,আপনি না বললেন,ফ্রুট সালাদ খাবেন? তায়তো আমি বানালাম।

“এই সালাদে তুমি মিষ্টি দই দিয়েছো কেন?তুমি জানোনা? মিষ্টি দইয়ে সুগার আছে, আর সুগার আমার ওয়েট বাড়িয়ে দেবে।একটা কাজ ও ঠিক মতো করতে পারো না।”

“আসলে আপু,আমাদের বাসায় বড়মা আর বড় আব্বু যখন ফ্রুট সালাদ খেতে চায় তখন আমি বানিয়ে দেওয়ার সময় একটু খানি মিষ্টি দই দিই।উনারা খুব পছন্দ করেন।তাইতো আপনার টাতেও টক দই না দিয়ে সামান্য মিষ্টি দই দিয়েছিলাম।”

“”উহ্! স্টপ ইট ননসেন্স। তোমাকে এতো কে ভাবতে বলেছে? যাও এক্ষুনি নতুন করে বানিয়ে নিয়ে আসো।””

ওপর থেকে সবটায় দেখে স্বাধীন। ছোঁয়া আবারও কিচেনে ঢুকে পড়ার আগেই নীচে আসে ও।এই মেয়েকে কোন ভাবে বলেই লাভ হবেনা।এ শোধরাবার নয়,এ এমনই থেকে যাবে,বোকা টাইপের।

“কি ব্যাপার কি হয়েছে? এতো চিৎকার চেঁচামেচি কিসের। “টেবিলে নিজের দিকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বলল স্বাধীন।

“দেখো না বেইবি,একটা সালাদ বানাতে বললাম, তাও ঠিকঠাক বানাতে পারলো না এই মেয়ে টা।”
ন্যাকা সুরে বলল নিহা।

“কিরে নিহা, যেটা পারিস না সেটা কেন করতে যাস তুই? কি শিখেছিস এতোদিন ধরে।এটায় জানিস না যে যেই কাজটা পারবি না সেটা করতে যেতে নেই। আগে শিখে নিবি।না হলে বলবি আমি পারবো না।এতো অসভ্য মেয়ে তুই।”,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৯
#মাসুরা_খাতুন

“যেই কাজ টা তুই পারিস না সেটা কেন করতে যাস তুই? ”

“কি বলছো বেইবি? আমি সকালের নাস্তায় এগুলোই খাই।ও না করে দিলে আমি খাবো কি?”

“ও যেহেতু ভালো ভাবে সালাদ বানাতেই পারেনা,তাহলে কেন শুধু শুধু ওকে দিয়ে বাজে সালাদ বানিয়ে নিয়ে তুমি খাবে বলতো নিহা।তারচেয়ে বরং তুমি কেমন সালাদ খাবে, তেমনই নিজের ইচ্ছে মতো বানিয়ে নাও না।অযথা তুমি না খেয়ে থাকবে কেন বলতো?”

“কি বলছো টা কি তুমি? আমি কিচেনে যাবো? আমি ফ্রুটস কা*টতে পারিনা,যদি আমার আঙুল কেটে যায়? আর ও পারবেনা কেন? ”

“আহা! সামান্য কয়টা ফ্রুটস কা*টতে তোমার হাত কা*টবে কেন বলতো? আর তাছাড়া ছোঁয়া যেহেতু পারেনা,তায় এটা ছাড়া তো আর উপায় নেই বেইবি।”
দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল স্বাধীন।

নিহার এবার নাজেহাল অবস্থা। স্বাধীন এমনভাবে বলছে যে ওর মুখে ও কিছু বলতে পারছেনা,আবার ছোঁয়া কেও কিছু বলতে পারছে না।

নিহার রাগে ফুলিয়ে থাকা মুখ দেখে মিটিমিটি হাসে ছোঁয়া।

ফোন আসে সাহানা বেগমের। ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির আবেশ ফুটে ওঠে।

“হ্যালো বড়মা! কেমন আছো তুমি?”

“এইতো রে মা,খুব ভালো আছি।তোরা কেমন আছিস?”

“ভালো আছি বড়মা।বড়আব্বু কি করছে?”

“তোর বড়আব্বু তো একেবারে বাচ্চা হয়ে গেছে এখানে এসে।খালি ছুটাছুটি করছে, চা বাগানের শান্ত পরিবেশে যেন উনার বয়স কলেজের ছাত্রদের সমান হয়ে গেছে। হাহা।”
ছোঁয়া ও হেসে ওঠে বড়মার সাথে।পাশে দাঁড়িয়ে স্বাধীন কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল, নিহা নিজের রুমে।সেও বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। আজ দুপুরে কি রান্না করতে হবে তায় শুনতে ছোঁয়া স্বাধীনের রুমে গিয়েছিল, এরই মাঝে ফোন আসে সাহানা বেগমের। ছোঁয়ার ফোনের স্পিকার অন করা ছিল,তায়তো অনায়াসে স্বাধীন ওদের দুজনের কথা শুনতে পাচ্ছিল।
হাহা করে হেসে ওঠায় আড়চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকায় স্বাধীন । তারপর আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে চুলে চিরুনি চালাতে ব্যস্ত হলো।

“হ্যাঁ রে ছোঁয়া, ওই বাঁদর টা আবার তোকে ঝামেলা করছেনা তো? একদম চুপ করে থাকবি না,মুখে ঝামা ঘষে দিবি।”ফোনের ওপার থেকে বললেন সাহানা বেগম।

এদিকে চুলে চিরুনী করা লোকটার মুখ কেমন যেন হয়ে গেলো। আড় চোখে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ না শোনার ভান করলো।

“না না বড়মা, স্বাধীন ভাইয়া আমাকে কিচ্ছু বলেনি।কোন ঝামেলায় করেনি।”
ঠোঁটে হাসি চেপে বলল ছোঁয়া।

“তোর ও দোষ আছে রে ছোঁয়া। আরে বাবা ও তো তোর স্বামী। বললেই হলো স্ত্রী হিসেবে মানিনা?এখন তো আমরা বাসায় নেই, একদিন ওর ঘরে ঢুকে আচ্ছা মতো ধোলাই দিতে পারিস না?পুরুষ মানুষ মেয়ে মানুষের রাগকে ভয় পায়,যত ছেড়ে দিয়ে রাখবি ততো সুযোগ নেবে। এবার অন্তত রশিটা টান ”

ফোনের ওপারের কথাগুলো এপারের দুটো মানুষই খুব ভালো করেই শুনতে পাচ্ছে। দুজনেরই চোখ দুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।ছোঁয়া পড়েছে ঘোর বিপদে, বলতেও পারছেনা যে ওর কাছেই সেই খচ্চর ব্যক্তিটি অবস্থান করছে। এদিকে স্বাধীন অবাকের চরম সীমায়,ওর চোখ গুলো যেন ছোট হচ্ছেই না।এসব কথায় হয় তাহলে এদের মধ্যে।

“বড়মা,বড়মা বলছি যে এসব কথা বাদ দাও না গো।তোমরা আসছো কবে তায় বলো?”প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল ছোঁয়া।
“আরে আমরা তো যাবোই।এতো মনোরম পরিবেশ যেতেই ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে ঢাকায় সবকিছু বিক্রি করে এসে এখানে একটা ছোট্ট বাড়ি বানাই।আমাদের চার জনের সংসার একেবারে পূর্ণ হয়ে যাবে।এই ছোঁয়া মা শুন না,তোর আর ঐ বাঁদর টার সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে, তোদের হানিমুনে এখানে পাঠাবো।একমাস ধরে থেকে যাবি তোরা,আর বাড়ি ফিরেই আমাদের দাদু দাদিমা হওয়ার সুখবর দিবি।”

লজ্জায় ছোঁয়া একাকার। স্বাধীনের দিকে তাকানোর জো ওর নেয়।বড়মা যে হুট করেই এসব কথা বলবে তা বুঝতেই পারেনি ছোঁয়া। সাহানা বেগমের ওখানে নেটওয়ার্কের অনেক সমস্যা হচ্ছিল তায় স্পিকার অফ থাকলে ভালো করে কথা বুঝতে পারছিলোনা ছোঁয়া, তায়তো স্পিকার অন করে।আর স্বাধীন ভাইয়ের সামনে এমন কথা শুনতে হবে ভাবতেই পারেনি ছোঁয়া।
অন্যদিকে স্বাধীন এখনো হা করে তাকিয়েই আছে।ভাবতেই পারছেনা,মা এসব কি বলছে? তার মানে কি এসব কারণেই বাড়ি ফাঁকা করে দিয়ে গেছে? ছোঁয়ার বাচ্চা তোর হচ্ছে আজ।এই স্বাধীন কে কাবু করতে তোরা মা মেয়ে মিলে প্ল্যান বানিয়েছিস? মনে মনেই এক শাসিয়ে নেয় স্বাধীন। হানিমুন? নাতি নাতনি?

“ঠিক আছে বড় মা রাখলাম এখন,পরে কথা বলবো।”
কোন রকমে বলে ছোঁয়া।

“হা হা, মেয়েটা আমার লজ্জা পেয়েছে। ঠিক আছে মা।রাখ তাহলে।”

টুপ করে ফোন কেটে দেয় ছোঁয়া। এবার ও স্বাধীনের দিকে তাকাবে কি করে।এমনিই রাতের ঘটনায় ও লজ্জায় একাকার। ভাগ্যিস, স্বাধীন ভাইয়ার তখন বোধহয় হুঁশ ছিলো না,নয়লে কম লজ্জায় পড়তো ও? ছোট ছোট চোখ করে তাকালো স্বাধীনের দিকো ছোঁয়া। লজ্জায় মেয়ে টা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে, নীচ দিকে চোখ করেই প্রশ্ন করলো,

“দুপুরে কি রান্না হবে ভাইয়া?”

হকচকিয়ে ওঠে স্বাধীন। এতোক্ষণ ও এক লজ্জাপরীকে দেখছিল।লজ্জা পেলেও মেয়েদের সুন্দর দেখায় তা স্বাধীন শুনেছে, কিন্তু এই মেয়েটাকে যে ভয়ং*কর সুন্দর লাগছে।মুখ চোখ কেমন লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। ইস একটু খানি ছুঁয়ে দিতে পারলে কতোই না ভালো লাগতো।
ছোঁয়ার কথায় ঘোর কাটে স্বাধীনের।

“হানিমুন, হানিমুন রান্না করবি।”

“এ্যা? কি বলছো ভাইয়া?”

“ওহ! হ্যাঁ বলছিলাম যে হালিম, হালিম রান্না করবি।”

“ভাইয়া,দুপুরের লাঞ্চ তৈরী করার কথা বলছি।কি খাবে তোমরা লাঞ্চে?”

কিছুটা লজ্জা বোধ হয় পায় স্বাধীন । নিজের করা বোকামির জন্য। তায় ঢাকতে মিছে রাগ ঝাড়ে ছোঁয়ার ওপর।

“কি রান্না করবি তা কি আমার বলে দিতে হবে? বাড়িতে মেহমান এসেছে, ভালো কিছু রান্না কর।মাছ, মাংস যা আছে তায় রান্না কর।”

“ঠিক আছে ভাইয়া।”বলেই ছোঁয়া চলে যাচ্ছিল,এমন সময় হাজির হয় নিহা।

“কিই স্বাধীন? তোমার হলো? আমার থেকেও যে বেশি সময় নিচ্ছ তুমি। আর ছোঁয়া তুমি এখানে? এখানে কি করছো?”
তীর্যক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে নিহা।

“কিছু না আপু,এইতো একটু ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম।”

“এই ছোঁয়া? তোমার গালে কি হয়েছে? আর তুমি কলেজে যাবেনা?”

ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে নিহা। এতোক্ষণে স্বাধীন ও এসে পড়েছে ওদের কাছে।

“ও হ্যাঁ,ছোঁয়া তোর ও তো কলেজ যেতে হবে।আর রান্না করবো, রান্না করবো বলে লাফাচ্ছিস।যা তৈরি হ,কলেজ যা।”ধমকে ওঠে ছোঁয়া।

“না ভাইয়া, আজ আমি কলেজ যাবো না।”

“এই ছোঁয়া, তোমার গালে কি হয়েছে? এমন লাল হয়ে গেছে কেন?”
পাশ থেকেই বলে ওঠে নিহা।

সাথে সাথেই ওড়না দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করে ছোঁয়া। ওপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি এতোক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও দাগটা কেবলই খেয়াল করলো।আর সাথে সাথেই নিজেও অপ্রস্তুত বোধ করলো।

“আসলে আপু,আমার একটু এলার্জি আছে তো,তায় এমন লাল হয়েছে।”
গালে হাত দিয়ে আর একটু ঢাকার চেষ্টা করে বলল ছোঁয়া।

“ওওও তায় বলো।তায় বলে এলার্জির জন্য শুধু গালে এমন লাল হয়? মেডিসিন নাও নি।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আপু। মেডিসিন নিয়েছি।আপনি চিন্তা করবেন না ঠিক সেরে যাবে।”
স্বাধীনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল ছোঁয়া।

বেচারা নাজেহাল দশা।আজ কার মুখ দেখে ওঠেছিল কে জানে।বারবার লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। ছোঁয়ার গালের দাগের জন্য দায়ী পুরুষ টা যে ও নিজেই তা তো অস্বীকার করা যায় না।
অগত্যা তাড়া দিয়ে বিষয় টা এড়াতে চায় স্বাধীন।

“কি ব্যাপার নিহা? তুমি কি আমার যাবে? নাকি না? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”
বলেই বেরিয়ে যায় স্বাধীন। ছোঁয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর চলে যাওয়ার দিকে।নিহা ও যায় ওর পিছু পিছু।

এতোক্ষণের ঘটে যাওয়া কথা গুলো মনে করে পেটফাটা হাসি পায় ছোঁয়ার। হাসতে হাসতে বসে পড়ে স্বাধীনের বিছানায়। স্বাধীনের বালিশটা জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। ওগুলো তে যে ওর স্বাধীনের গন্ধ লেগে আছে।প্রায় ছোঁয়া স্বাধীনের ব্যবহার করা জিনিসগুলোকে বুকের ভেতর নিয়ে মন জুরায়।নাকে ধরে ঘ্রাণ নেয়।এগুলোর সাথেই যে মিশে আছে স্বাধীনের স্পর্শ। প্রতিটি জিনিসে লেগে আছে স্বাধীনের গায়ের গন্ধ। যা বারবার খুব কাছে ডাকে ছোঁয়া কে।প্রতিটি সুবাস কেঁপে তোলে ছোঁয়ার মনকে,,,,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here