এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_১১

0
1652

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#মাসুরা_খাতুন

বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীন আর ছোঁয়া। ভেতরে থাকা মানুষটির যেন কোন যায়ই আসে না এতে।প্রায় দশ মিনিট ডাকাডাকির পর অবশেষে দরজা খুলল নিহা।নিজে থেকেই ভালোভাবে দরজা খুলে ফোলা ফোলা চোখেই একটা হাসি দিলো।ছোঁয়া আর স্বাধীন দু জনেই অবাক,এদিকে ওরা কতো চিন্তায় ছিলো,আর নিহা হাসছে? যদিও অনেকক্ষণ যাবত মেয়েটা কেঁদেছে তা বোঝাই যায়। ছোঁয়ার খানিকটা খারাপ লাগে,আজ ওর জন্য স্বাধীন নিহাকে প্রত্যাক্ষাণ করলো।ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা টা ছোঁয়া বোঝে।ও জানে প্রিয় মানুষটির কাছে অবহেলা পেলে কলিজা কেমন ক্ষ*ত বিক্ষ* ত হয়।তায়তো নিহার ফোলা ফোলা চোখ দুটো দেখে ছোঁয়ার ও কষ্ট লাগে,মনে মনে বলে,”বিশ্বাস করো নিহা আপু,আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে আমি তোমাদের মাঝে বোঝা হয়ে আছি,যদি থাকতো,তাহলে ঠিক এতোদিনে চলে যেতাম।স্বাধীন ভাইয়াকে এতোটা বিরক্ত করে কিছুতেই থাকতাম না।”

খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিহা কথা বলে।কিছুক্ষণ আগেই যেই নিহা রেগেমেগে রুমে এসেছিল, সে যেন সম্পুর্ন বদলে গেছে।তার চোখমুখে এখন আর রাগের প্রতিচ্ছবি ও দেখা যায় না। স্বাধীন কিছুটা অবাক ও হয় নিহা কে এমন দেখে।

“কি হলো স্বাধীন? আমাকে এভাবে ডাকছিলে কেন? একটু ঘুমিয়েছিলাম।”

“নিহা দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, ছোঁয়া অনেক রান্না করেছে, এখন আমরা সবাই যদি না খেয়ে এভাবে বসে থাকি তাহলে ওর কেমন লাগে বলতো? আর তাছাড়া ও খেতেও তো হবে,খুব ক্ষুধা লেগেছে। এসো খাবো।”

“হ্যাঁ নিহা আপু।আমি তোমার জন্য তেল মশলা কম করে দিয়ে রান্না করেছি,তুমি প্লিজ চলো খাবে।আর তুমি না খেলে আমরা কেউ খাবোনা।”

স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে নিহা উত্তর দেয়,
“আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা যাও,আমি আসছি।”

“তাড়াতাড়ি এসো নিহা”
বলেই স্বাধীন চলে গেলো।আর ছোঁয়া গিয়ে খাবার গুলো আবারও গরম করে নিলো, স্বাধীন ঠান্ডা খাবার কিছুতেই খেতে পারে না।

টেবিলে একে একে সব খাবার সাজালো ছোঁয়া। স্বাধীন ও বসে গেছে, এর মাঝে নিহা ও এসে গেলো,

“বাব্বা ছোঁয়া, অনেক খাবার রান্না করেছো তো? তুমি একা এতোগুলো রান্না করলে?”

“হ্যাঁ আপু,আমি একায় করেছি,আর বড়মা ও আমায় হাতে ধরিয়ে সবরকম রান্না শিখিয়েছে।আপনি খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।আর আমি আপনার জন্য সবজিও করেছি।”
নিহার দিকে খাবার এগিয়ে দিতে দিতে বলল ছোঁয়া।

“অহ্ সরি গো,আমি এসব কিছুই খাবোনা।আমি শুধু কিছু ফ্রুটস আর এই একটু সবজি খাবো।থ্যাংস তোমায়,আমার জন্য এতো চিন্তা করায়।”

বলেই নিহা একটা আপেল নিয়ে খেতে লাগলো।স্বাধীন অলরেডি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

“খুব ভালো রান্না করেছিস ছোঁয়া। আর এই নিহা,একটু খেয়ে দেখো খুব ভালো লাগবে।আর দুপুরেতো তুমি ভাত খাও,তায়তো আমি ছোঁয়া কে এতো রান্না করতে বললাম।”

“না স্বাধীন আমার খেতে ইচ্ছা করছেনা। প্লিজ কিছু মনে করো না,তোমরা খাও।”

“আর এই ছোঁয়া, তুই বসে আছিস কেন? তুই ও খাওয়া শুরু কর।”
ছোঁয়া কে বলল স্বাধীন।

অবশেষে তিনজনে যে যার মতো খেয়ে ওঠে গেল। শেষে পায়েস টা পেয়ে স্বাধীন খুব খুশিই হলো।

নিহাকে কিছু টা স্বাভাবিক দেখে স্বাধীনের ও অনেক টা হালকা লাগছে।ভালোই হয়েছে নিহা ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে।

বিকেল অনেক টায় গড়িয়ে গিয়েছে, স্বাধীন বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। নিহা খাওয়ার পর নিজের রুমে গেছে।এমন সময় ছোঁয়া স্বাধীনের দরজায় নক করে,

“ভাইয়া,আসবো? ”

“হ্যাঁ আয়।কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।ভাইয়া,বলছিলাম যে নিহা আপু কে ওভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে,তুমি তো ছোটবেলা থেকেই আমায় পছন্দ করোনা।এখন তোমার আর নিহা আপুর মাঝে আমি যদি বাঁধা হয়ে থাকি,আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার জন্যই যদি তুমি নিহা আপু কে ওগুলো বলে থাকো,তাহলে আমি বলছি ভাইয়া,তুমি নিহা আপুকে মেনে নাও।আমি নিজে বড়মাকে মানাবো।আর তোমাদের মাঝে আমি বাধা হতে চায়না।”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল ছোঁয়া। মনে হচ্ছিল অনেক বার পড়ে মুখস্থ করে নিয়েছে কথাগুলো।

স্বাধীন ও বলার সুযোগ দিলো,সেও দেখতে চায় কি কি বলতে চায় এই মেয়ে। কতোটা সাহস এর।ছোট বেলা থেকে জ্বালিয়ে এসে এখন আসছে মহান হতে? এই বিরক্তিকর মেয়েটার জন্যই এই এতো বয়সে একটা মেয়ের ও সাথে প্রেম করতে পারিনি, এতো মেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে তাও সাড়া দিতে পারিনি, আর এখম এসেছে দয়া করতে? থাপড়িয়ে গালগুলো লাল করে দিতে হয়।

“তোর বক্তব্য শেষ হয়েছে? কতোবার এই বক্তব্য টা লিখেছিস,পড়েছিস?”
তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল স্বাধীন।

এই মেয়েটার দিকে আজকাল তাকাতেই পারেনা ও।তাকালেই মনে হয়, এই ছোট ছোট করে কথা বলা মেয়ে টাকে টেনে একেবারে বুকের ভেতরে নিয়ে পিষে ফেলতে।অগোছালো ভাবে এলোমেলো আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ওর মুখ চোখ, গাল।অনেক অভদ্র হতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু জড়তায় কোথায় আটকে যায় স্বাধীন। মনের ভেতরের অবাধ্য ইচ্ছে গুলোকে নিজে নিজেই শাসন করে শান্ত রাখতে হয়।

“ভাইয়া আমি সত্যিই বলছি।আমি তোমাদের মাঝে বাধা হতে চায়না।
মাথা নিচু রেখেই বলল ছোঁয়া।

একহাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের একদম কাছে এগিয়ে নিয়ে এলো ছোঁয়া কে স্বাধীন একদম কাছাকাছি এনে হাতদুটো পেছনে বেঁকিয়ে ধরে বলল,

“তোকে এতোটা ভাবতে কেউ বলেনি।আমার যা ইচ্ছা হবে আমি তায় করবো।তোর কাছ থেকে শিখতে হবেনা।আর কে বলেছে তুই আমাদের মাঝে বাঁধা? আরে আমি তো নিহাকে বন্ধুর বেশি ভাবিই না,যদি ভাবতাম,তাহলে তুই মাঝখানে আছিস বলে সরে আসতাম না।ওকে? ”
শাসানোর সুরে বলল স্বাধীন।

“কিন্তু ভাইয়া,নিহা আপু যে খুব কষ্ট পাচ্ছে। ”

“কে কষ্ট পেলো আর না পেলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।আমার নিজের ও কিছু চাওয়া পাওয়া আছে।আমি কাকে চাইবো না চাইবো,আমি কাকে ভালোবাসবো আর না বাসবো সেটা আমিই ভাবতে জানি।তোর ঐ অতুটুকু মাথায় এতো ভাবতে হবেনা।বেয়াদব। ”

দুজনের কারোই হয়তো খেয়াল নেই মনের ভুলেই ওরা কতোটা কাছাকাছি চলে এসেছে। ছোঁয়ার নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে স্বাধীনের বুকে।এতোক্ষণে বুঝতে পারে স্বাধীন,আর যখন বুঝতে পারে তখন নিজেকে থামিয়ে রাখাই কষ্টের।যেকোন পুরুষের পক্ষেই এমন মুহুর্তকে প্রত্যাক্ষান করা সত্যিই কষ্টের।আর সেখানে তো ছোঁয়া স্বাধীনের বৈধ স্ত্রী।

স্বাধীন কেবলই একটু একটু করে নিজের মুখটা নিয়ে যাচ্ছিল ছোঁয়ার অধর ছুঁইয়ে দিতে।ছোঁয়া নিজেও চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়েছে স্বাধীনের স্পর্শে। এমন সময় হটাতই ঘরে ঢোকে নিহা।সেও বাইরে যাবে তায় স্বাধীন কে ডাকতে আসছিল।
“স্বাধীন,বলছিলাম যে তুমি,,,,,”
ঘরে ঢুকেই ওদের এতোটা কাছে এমন অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো সে।এদিকে ছোঁয়া আর স্বাধীন দুজনেই ভিষণ অপ্রস্তুত। দুজন দুদিকে সরে গিয়ে দাঁড়ায়। ছোঁয়া লজ্জায় একেক একাকার।মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো পরিস্থিতি ওর নেই। মাথা নুইয়ে অন্য দিকে হয়ে দাঁড়ায়।

“সরি সরি,আমি মনে হয় ভুল সময় এসে পড়েছি।আমার বোঝা উচিত ছিলো তোমরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ।আমি চলে যাচ্ছি। “বলেই নিহা চলে যাচ্ছিল।

“এই নিহা দাঁড়াও।আসলে তোমার উচিত ছিলো নক করে আসা।যাক বাদ দাও,তুমি কি বেরোবে?”
চুলে হাত দিয়ে নাড়া দিতে দিতে বলল স্বাধীন।

স্বাধীনের দিকে একবার আড়চোখে তাকায় ছোঁয়া। আর নিহা নিজেও অবাক হয়ে তাকায়। এ কেমন স্বাধীন কে দেখছে ও? একদম মেয়েদের এড়িয়ে চলা স্বাধীন এভাবে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এমন পরিস্থিতিতে কি করে আসতে পারে? কোনদিকে কম আছে ও ছোঁয়ার থেকে ?অথচ স্বাধীন পারলো এই মেয়েটার এতো কাছে যেতে,অথচ এতোদিন কতো ভাবেই না চেষ্টা করেছে ও স্বাধীনের কাছাকাছি যেতে।কিন্তু কিছুতেই পারেনি এই পুরুষটার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।রাগ,অপমানে কালো হয়ে আসে নিহার মুখ।

“আমি সরি বলছি স্বাধীন। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি তায় তোমাকে বলতে এসেছিলাম।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। চলো আমিও বাইরে যাচ্ছি। একসাথেই যায়। তুৃমি কোথায় যাবে, আমি নামিয়ে দেবো।”

বলেই একসাথে বের হয়ে যায় স্বাধীন আর নিহা। পেছনে ছোঁয়া অবাক ভাবে স্বাধীনের কর্মকাণ্ড। কি চায় এই ছেলেটা? সেকি ছোঁয়া কে চায়ছে? তাহলে এমন জড়তা না করে বলে দিলেইতো পারে।ছোঁয়া নিজেও যে ওই রাগী মানুষটার প্রেমে বিভোর।

“ছি স্বাধীন! একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে এমন আগ্রহ তোমার আসে কেমন করে? আমি তো ভাবতেই পারছিনা।”
গাড়িতে বসে বলে নিহা।

তির্যক চোখে তাকিয়ে একটু হেসে স্বাধীন বলে,

“সে আমার স্ত্রী নিহা।বউ হয় ও আমার।তায় আমি ওর সাথে যা ইচ্ছা করতে পারি,এতে লজ্জার কি আছে?”

“তাহলে এমন দূরে রেখেছো কেন?”,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here