এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_৩৫,৩৬

0
999

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৫,৩৬
#মাসুরা_খাতুন
৩৫

বউয়ের সাজে বসে আছে ছোঁয়া। পাশেই স্বাধীন বসা।স্বাধীন ও ছোঁয়ার সাথে ম্যাচিং শেরওয়ানি পড়েছে।ক্লিন সেভ গালে ধবধবে ফর্সা ছেলেটিকে কোন রাজপুত্র থেকে কম লাগছেনা।লম্বা চওড়া দেহটির সাথে সাদা গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি টা যথাযথ মানিয়েছে।হাতে সিলভার কালারের ব্রান্ডেড ঘড়ি,চোখে বরাবরের মতো কালো ফ্রেমের চশমা। যেকোন মেয়ে কে পাগল করতে ওর গম্ভীর ফর্সা মুখে বাঁকা এক চিলতে হাসিই প্রয়োজন। কলেজে কতো মেয়ে রাও এই রাগী মেজাজি টিচারটার চক্ষু নজরে আসার জন্য কতো রকম বাহানা করে,কিন্তু এই চাপা স্বভাবের গম্ভীর ছেলেটার মন যে সেই কবে তার বালিকা বধূর প্রতি মজে আছে তা তো সকলের অজানা।

একমনে ফোনে ছোঁয়ার পিক গুলো দেখছিলো স্বাধীন। একটা ছবি তো ছোঁয়ার কাঁধের কালো তিল টা দেখা যাচ্ছে, জুম করে এনে বারবার পর্যবেক্ষণ করে তিলটি।তারপর ওখানেই ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“জান তোর এই তিলটা তো আমার অজানা ছিলো।কি রোমাঞ্চকর লাগছে এমন জায়গায় তিল টা।ইচ্ছে করছে এখনি কিস করে দেই।”

ফিসফিস করে স্বাধীনের বলা কথায় লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় ছোঁয়ার মুখ।সামনে পেছনে এতো মানুষ জনের ভেতরে কি সব বলছে স্বাধীন ভাই! ছেলেটার কি একটু ও লজ্জা শরম নেই? মনে মনেই বকে ছোঁয়া।

“এতো মানুষের ভীড়ে তুমি কি সব বলছো ভাইয়া? তোমার মুখটা অন্তত বন্ধ করো প্লিজ। ”

বাঁকা হাসে স্বাধীন।
“এই মেয়ে, এতো লজ্জা তুই কই পাস বলতো? তোর এই লজ্জা পাওয়া মুখ টা আমায় আরো বেশি করে তোর কাছে টানে।আমি হাজার বার হার্ট বিট মিস করি তোর এই রক্তিম মুখের গোলাপি আভায়।আমার মনে যেসব ফ্যান্টাসি আছে,ওগুলো পূরণ করতে গেলে তো তুই লজ্জায় ম*রেই যাবি জান।”

“আমাকে লজ্জা দিয়ে তুমি খুব মজা পাও, তাইনা?”

“হুম।খুউব।তুই যে আমারই লজ্জাবতী।”

এরই মাঝে হস্তদস্ত হয়ে ছুটে আসে কেয়া।জোরে জোরে আসায় চশমা টাও প্রায় নাকের ডগায় চলে এসেছে, কিন্তু তাতেও কোন হেলদোল নেই। তাড়াতাড়ি এসে ছোঁয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ছোঁয়া, একটা কান্ড ঘটে গেছে রে।মানে আমিই ঘটিয়েছি আরকি।এখন কি করি বলতো?”

“কি করেছিস সেটা বল আগে।এমনেই তোর যা মাথা গরম! না জানি কি করেছিস?”

“হুম।একটু বেশি বেশিই মনে হয় করে ফেলেছি,এবার তুই আমায় বাঁচা প্লিজ দোস্ত। ”

“এতো টেনশন নিস না তো।আগে আমায় বল,কি হয়েছে?”

“কি হয়েছে আবার? ঐ মেয়ে গুলো আমায় রাগিয়ে দিয়েছে, কি আবোলতাবোল সব বলছিলো,আমিও তায় কালি নিয়ে গিয়ে তোর বাঁধন ভাইয়ের মুখ মাখিয়ে দিয়েছি।একদম ভূত বানিয়ে দিয়ে চলে এসেছি। ”

“কি করেছিস কি তুই? আর কোন মেয়ে গুলো তোকে রাগিয়েছে? খুলে বল আমায় জান”

“কোন মেয়ে আবার? ঐ যে সেদিন রাতে নাচালো যেই মেয়ে দুটো,দুই বোন,রিমি না কি নাম।”

“হুম হুম, জেমি আপুর বোন রিমি। কি বলেছে তোকে?”

“আমাকে বলেনি,তবে আরেকজন কে বলেছে।”
মুখ ঘুরিয়ে বলল কেয়া।

“কাকে?”
“তোর পরাণের বাঁধন ভাইয়া কে।”

“আচ্ছা বাবা! এতো রাগ না করে সব কিছু খুলে বলতো আমায়,কি হয়েছে? ”

“আরে ঐ রিমিটা,কাল থেকে নজর দিয়েছে ঐ উগান্ডার পাবলিকের দিকে। আজ সকালে একবার বলছে ওকে নাকি ভালোবেসে ফেলছে।এখন আবার উগান্ডা টা দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন হেসে ফোনে কথা বলছিলো,ওই মেয়ে টা বলে কি,এমন ছেলে নাকি জীবনে ও দেখেনি,পুরাই ক্রাশ খেয়েছে।এমন আড় দাঁতের হাসি দেখে নাকি ওর হার্টবিট মিস হচ্ছে। আরো কতো কি?”

“তো? তুই কি করলি?”

“আমিও হাতে অনেক করে কাজল ঘষে নিয়ে একেবারে সোজা মেয়ে গুলোর সামনে গিয়ে ওর চোখে মুখে ঘোষে এসেছি।ভালো করিনি বল?”

হাহা করে একগাল হাসে ছোঁয়া। কেয়ার মতো মেয়ে ও যে এমন বাচ্চাদের মতো করবে ভাবতেই ওর হাসি পাচ্ছে।

“তুই না? এমন হয়েছিস।তা বাবু,তুমি নাকি উগান্ডা রে সহ্য করতে পারো না,তাহলে অন্য কেউ উগান্ডার প্রশংসা করলে তোমার এতো লাগছে কেন বলতো?”

কিছু টা থতমত খায় কেয়া।ছোঁয়ার এমন প্রশ্নে কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। সত্যিই তো,ও কেন এমন বাচ্চামো করলো নিজেই ভেবে পায় না।

“আরে,যে দেখতে ভালো না,তাতাকে ভালো ববলবে কেন? যা চেহারা! তার আবার দুনিয়ার প্রশংসা! ”

কিছু ক্ষণ পর রুমালে ভেজা মুখ মুছতে মুছতে আসে বাঁধন। বাঁধন কে আসতে দেখেই কেয়া সোজা ছোঁয়ার পেছনে লুকায়।

“কি হয়েছে আপনার ভাইয়া? এই অসময়ে আবার মুখ ভিজিয়েছেন কেন?”
হাসি চাপিয়ে বলে ছোঁয়া।

“নাহ্ এমনেই। তোমাদের মতো একটু মেকআপ করতে মন চাইছিলো,তায়তো স্বাধে একটু মেকআপ করেছিলাম।এখন সব তুলে মুখ ধুয়েছি।”
কেয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বাঁধন বলল।

“মেকআপ? ওমা ভাইয়া আপনি ও মেকআপ করেন? ”

“হ্যাঁহ!মাঝে মাঝে করতে হয়।”
একদম বাঁকা চোখে কেয়ার দিকে তাকিয়েই বলল বাঁধন।

এবার সত্যিই আর হাসি আটকাতে পারলো না ছোঁয়া। এদের অবস্থা দেখে স্বাধীন ও হেসে ফেলল।শুধু হতভম্বের মতো বাঁধন তাকিয়ে দেখল ওদের হাসি গুলো।

_______________

কিছুক্ষণ বাদেই স্বাধীন ছোঁয়ার রেজিস্ট্রি করা হবে।বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ও উকিল সাহেব কে আনা হয়েছে। আগে উনাকে খাওয়ানো হচ্ছে। স্বাধীন ও খেয়েছে,আর ছোঁয়া কে দেওয়া হয়েছে স্বাধীন খেয়ে এঁটো করে দেওয়া খাবার।বিয়ের দিন বরের এঁটো খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বেড়ে যায়, তায়তো ছোঁয়ার মামী আর স্বাধীনের খালারা মিলে এনে ছোঁয়া কে খেতে দিয়েছে। (এটা কিছু কিছু এলাকার প্রচলিত নিয়ম মাত্র। এর কোন সত্যতা প্রমাণিত নেই। অনুগ্রহ করে তর্কে জড়াবেন না।)
ছোঁয়া ও খেয়ে নেয় সাগ্রহে প্রিয় মানুষ টির হাতের স্পর্শ পাওয়া খাবার। ছোয়ার কাছে এর চেয়ে সুস্বাদু কোন খাবার আছে বলে মনে হয়না।এই খাবারের প্রতিটি লোকমায় যে স্বাধীনের স্পর্শ জড়িয়ে আছে।কেয়া ও ছোঁয়ার সাথে বসেই খায়।যদিও বাঁধন চেয়েছিল একসাথে বসে খেতে কিন্তু কেয়া যায়নি।

ছোঁয়া কে বসিয়ে রেখে কেয়া আসে ফোন চার্জে দিতে।ছোঁয়া কে সাজানোর পর থেকে প্রচুর ছবি তুলে তুলে চার্জ একেবারেই কম,তায় রুমে আসে।কেবলই ফোন টা চার্জে ঢুকায় কেয়া,আর ওমনি রুমে হটাৎ কেউ এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।হটাৎ এমন হওয়ায় কিছু টা ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে যায় কেয়া।সাথে সাথেই কেয়ার মুখ চেপে ধরে বাঁধন।

“একদম চিল্লাবেনা,চুপ।”

তারপর মুখ থেকে হাত সরায়।

“ককি ব্যাপার? এমন করে দরজা আটকালেন কেন? সেদিনের নখের আঁচড় বুঝি ভোলেন নি? ”

কোন কথা বলেনা বাঁধন।একটু একটু করে এগোয় কেয়ার দিকে। কেয়া ও ভয় পেয়ে যায় বাঁধনে আচমকা এমন কান্ডে।

“এই কি কি করছেন? এমন করে আমার দিকে আসছেন কেন? দেখুন,আমি কিন্তু চিল্লাবো।”

এতোক্ষণে বাঁধনের দুহাত কেয়ার দু বাহুর দুদিকে দিকে কেয়া কে আটকিয়ে ফেলেছে।

পকেট থেকে সকালের চিঠি টা বের করে বাঁধন।

“এটা কি? কে লিখেছে এটা?”

“এটা কি আমি কেমন করে বলবো?”

“ও আপনি জানেন না তায়না? এই আমার চোখ বিড়ালের মতো? আর নাক? নাক কি কুকুরের মতো? ”

“আআমায় কেন বলছেন? যে লিখেছে তাকে গিয়ে বলুন।”

“যে লিখেছে তাকেই তো বলছি। আর ওভাবে কালি মাখালেন কেন?”

“বেশ করেছে, আমার ইচ্ছা করেছে মাখিয়েছি।”

“তাহলে আমার ও এখন অনেক কিছু ইচ্ছা করছে, করবো।”
বলে বাঁধন কেয়ার দিকে ঠোঁট এগোতে থাকে।

“এই এই থামুন থামুন। দেখুন, বিয়ের আগে এগুলো কিন্তু পাপ।আর আপনি একটা অবলা নারীর সাথে এভাবে সুযোগ নিতে পারেন না।”

“কে অবলা? আপনি? যাক তাও স্বীকার করলেন। ”

আবার আগের ফর্মে চলে আসে কেয়া।
“নাআ,আমি অবলা নই।তবে একটা মেয়ের সাথে সুযোগ নেওয়া ঠিক নয়।”

“আর মেয়ে টা যে অবলীলায় আমার মুখ, ঠোঁট, গাল ছুঁইয়ে দিলো? আমার অতৃপ্ত মন কে আবারও জাগিয়ে দিলো? তারবেলা কি? আপনি জানেন, আমার মনে আপনার স্থান কোথায়?আর এই যে এতো উগান্ডা উগান্ডা করেন,অন্য মেয়ে রা আমার প্রশংসা করছে তো আপনার এতো জ্ব*লছে কেন? হুম।”

“ওওও তার মানে ওসব প্রশংসা নেওয়ার জন্যই মেয়ে দের সামনে ওমন করে হাসা হচ্ছিল? সরুন তো।আমি বাইরে যাবো।”

বলেই কেয়া বাঁধন কে ধাক্কা দিয়ে সরাতে যায়,আর হটাৎ ধাক্কায় বাঁধন ও কিছু টা বেসামাল হলে কেয়া দৌড়ে চলে যায় রুম থেকে। দাঁড়িয়ে থাকে বাঁধন অবাক হওয়া একটা হাসি নিয়ে। বড় তৃপ্তির এ হাসি। অনেক কিছু না পেয়েও পাওয়া লুকিয়ে আছে এ হাসিতে।

___________

রেজিস্ট্রি কাবিননামায় সাইন করে স্বাধীন। এবার ছোঁয়ার পালা।পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন আলম চৌধুরী,সাহানা বেগম। ছোঁয়া কলম টা নিয়ে একবার উনাদের মুখের দিকে তাকায়। চোখে চোখেই উনারা বলে দেন সম্মতি। এ যে উনাদের ও অনেক দিনের চাওয়া পাওয়া।খ্যাচখ্যাচ করে ছোঁয়া লিখে ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের নাম ছোঁয়া চৌধুরী। আজ আইননত ও ওরা স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলো।আবার কাজী সাহেবকেও আনা হয়েছে। স্বাধীনের ইচ্ছে নতুন করে আবার ও কবুল পড়বে।কারণ ইসলামি শরীয়া মতে মজা করে, বা ভুল বশত ও স্বামী স্ত্রী কে তালাক দিলে বা অস্বীকার করলে তা কার্যকর হয়ে যায়, আর এ যাবত স্বাধীন বহুবার ছোঁয়া কে অস্বীকার করেছে। আর বিয়ের প্রকৃত আনন্দ তো তিনবার বলা কবুলেই।আর ওদের কবুল বলার সময় দুজনের কেউই তা উপলব্ধি করে নি।তায় আজ আবার ও ওরা কবুল বলার মধ্যে দিয়ে একে অপরের পরম সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয়।

আজ পূর্ণতা পায় স্বাধীন ছোঁয়ার সম্পর্ক। আনন্দে সাহানা বেগম কেঁদে ফেলেন। আলম চৌধুরীর ও চোখে আনন্দের অশ্রু টলমল করছে। এতোদিন একমাত্র ছেলে আর একমাত্র আমানত নিয়ে উনারা যেই চিন্তায় ছিলেন আজ তার পরিসমাপ্তি হলো।

স্বাধীন ছোঁয়া দুজনেই সাহানা বেগম, আলম চৌধুরী কে সালাম দিয়ে দোয়া নেন।খুব সুন্দর আনন্দঘন মূহুর্তে কেটে গেলো কিছু টা সময়।

সতেজ তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে স্বাধীন ছোঁয়ার বাসর ঘর। পুরো ঘরে মৌ মৌ করছে ফুলের মিষ্টি গন্ধ।ছোঁয়ার ড্রেসের সাথে ম্যাচিং কালারের ফুল দিয়েই সাজানো হয়েছে পুরো রুম।লাল সাদা ফুলের রাজ্যে ছোঁয়া যেন এক ফুলপরী।স্বাধীন বাঁধন আর কিছু কাজিনদের সাথে ছাঁদে সিগারেট খাচ্ছে। আর ছোঁয়া বসে আছে স্বাধীনের ঘরে,আশেপাশে আরো ভাবিসহ ওর আর স্বাধীনের কাজিনগুলো।কেয়া ও কাছেই বসে এটা সেটা বলে ছোঁয়া কে লজ্জা দিচ্ছে। ছোঁয়ার ভাবতে অবাক লাগছে আজ থেকে এ ঘর তার! কতো শত স্বপ্ন ওর এ ঘরকে নিয়ে, ঘরের মানুষ টিকে নিয়ে। আজ সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে ওর সে স্বপ্ন পূর্ণ করছে।রাত প্রায় এগারোটা। একে একে অনেকেই ঘুমানোর জন্য চলে যাচ্ছে। দুদিন ধরে সবাই টুকটাক ব্যস্ত।স্বাধীন ও আসে সবাই কে বিদায় দিয়ে।,,,,,,,,

চলবে,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৬
#মাসুরা_খাতুন

দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর কাটিয়ে এক জোড়া প্রেমিকযুগল আজ এক অনাবিল চাওয়া পূর্ন হওয়ার দোরগোড়ায়। লাল সাদা ফুলে সজ্জিত বাসর ঘরে বধূর বেশে বসে আছে ছোঁয়া। মনে তার হাজারও দ্বিধা! এতো এতো কাছ থেকে দেখা রাগী মানুষ টাকেও আজ ওর অচেনা মনে হচ্ছে। মনে আজ প্রতি পদক্ষেপে এক অন্য স্বাধীন কে আবিস্কার করছেও।এই স্বাধীন ওর অচেনা, বড্ড অচেনা।আজ ছোঁয়া বারবার কেঁপে উঠছে স্বাধীনের কামুকতায় ভরা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে। এতোদিন প্রিয় মানুষ টিকে কতোভাবেই না চেয়ে এসেছে ও।আর আজ এতো কাছে পেয়ে মনে হচ্ছে দরজা খুলে হুট করে দৌড় দিয়ে বাইরে কোন এক জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
অনেক টা জল্পনা কল্পনার পর স্বাধীন রুমে আসলো।নিজে থেকেই দরজা বন্ধ করে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।তারপর হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে আড়চোখে ছোঁয়া কে দেখে বলল,

“কিরে,এখনো এসব পড়েই আছিস, তোকে দেখে তো আমারই দম বন্ধ হয়ে আসছে।কি করে এতো ভারী পোশাক পড়ে থাকতে পারিস বলতো? ”

হটাৎ স্বাধীনের এমন কথায় কিছু টা থতমত খেয়ে যায় ছোঁয়া। কি ছেলেরে বাবা! ছোঁয়া তো নিজেই এগুলো খুলতে চেয়েছিল,কিন্তু সেই তো একটু আগে ফোন দিয়ে বলল “ছোঁয়া তুই যেমন পোশাকে আছিস,আমি না যাওয়া পর্যন্ত ওভাবেই থাকবি।বউ সাজে আরো কিছু ক্ষণ দেখার ইচ্ছে তোকে।একদম রাশ মিটিয়ে দেখা হয়নি।আমি গেলে খুলবি।”
আর এখনই এসব বলছে? মাথা নিচু করেই ছোঁয়া উত্তর দেয়,

“আমি তো খুলতেই চেয়েছিলাম,কিন্তু তুমিই তো?”

“থাক আর বলতে হবে না।আরে আমি কি জানতাম,ওরা এতো দেরি করিয়ে দেবে? ঘরে আমার বউ অপেক্ষা করছে আমার জন্য, আর শয়তান ছেলে গুলো দুনিয়ার গল্প জুড়েছে। ”
ছোঁয়ার পাশে বসতে বসতে বলল স্বাধীন।

এদিকে স্বাধীনের মুখে এমন আমার বউ বলায় লজ্জায় জড়িয়ে গেলো ছোঁয়া। যেই স্বাধীন ভাইয়া কে ও জমের মতো ভয় পেতো,যার সামনে যাওয়া ওর নিষেধ ছিলো,যেই স্বাধীন ভাইয়া কে কর্কশ গলায় ছাড়া নরম গলায় কথা বলতে দেখে নি ও,আর আজ সেই স্বাধীন ভাইয়ার মুখেই এমন রোমান্টিক কথা শুনে ছোঁয়া কে যেন রাজ্যের লজ্জা ঘিরে ধরল।

“কিরে এখন কি খুলবি? নাকি আমিই খুলে দেবো? অনেক জ্বা*লিয়েছিস আমায় জান,আজ তোকে জ্বা*লানোর পালা।”
বলেই ছোঁয়া কে চোখ টিপ্পনী মারে স্বাধীন।

“না না,আমিই খুলতে পারবো।”
বলেই উঠে যেতে লাগে ছোঁয়া। ওঠার সময়ই ছোঁয়ার একটা হাত ধরে টান দিয়ে একদম নিজের কোলে বসিয়ে নেয় স্বাধীন। ছোঁয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

“খুব খুব সুন্দর লাগছে আজ তোকে জান।আমি মনে হয় পাগলই হয়ে যাবো আজ তোর এই রূপ সুধা পান করে।বারবার পান করতে চাই,তোর এই রূপের বিষ।আমার এ একাকীত্ব জীবনের সকল কষ্ট, সকল যাতনা আজ আমি তোকে ঢেলে দিতে চাই,তুই পারবি তো? পারবি তো আমার দেওয়া অসহ্য বিষের ভার বহন করতে? ”
আস্তে আস্তে ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে স্বাধীন। স্বাধীনের বলা প্রতিটি কথার নিশ্বাস আছড়ে পড়ে ছোঁয়ার ঘাড়ে।তাতে আরও কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। আজ ওর ও নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ও নিজেই আজ আত্মসমর্পণ করে নেবে স্বাধীনের কাছে।

স্বাধীন কে উপেক্ষা করে উঠে যায় ছোঁয়া। এই ছেলের স্পর্শে জাদু আছে,পাগল করে দেবে ছোঁয়া কে
তাই তো ছোঁয়া নিজ থেকেই উঠে যায়। সত্যিসত্যিই এসব ভারী পোশাকে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল ওর।কোন নরম পাতলা পোশাক না পড়লে ও শান্তি পাবে না।তায়তো স্বাধীন কে ছেড়ে উঠে গলায় হাত দিয়ে নেকলেস টা খুলতে লাগে।কিন্তু ওড়নার সুতোর সাথে চেইন টা আটকে যাওয়ায় বেশ কিছু ক্ষণ হুটোহুটি করেও খুলতে পারে না।স্বাধীন এতোক্ষণ ও তাকিয়ে নয়ন ভরে দেখছিল ওর প্রেয়সীকে। এবার নিজ থেকেই উঠে গিয়ে সরাসরি ছোঁয়ার কাঁধে থাকা তিলটায় টুপ করে চুমু খায়। হটাৎ এমন করায় কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এবার স্বাধীন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“তোর শরীরের এই ছোট্ট তিল টাও তৈরী হয়েছে মনে হয় আমায় পাগল করতে।কি এতো নেশা তোর এই তিলে? এতো টানছে কেন আমায়?”

অসহায় চোখে তাকায় ছোঁয়া। একে তো খুলতে পারছে না,তাতে আবার এমন কান গরম করা কথা।

“থাম,যেটা পারবি না সেটা করতে যাস কেন? আমি তো আছিই। দেখি দে,আমি খুলে দিচ্ছি। আর শোন,এসব ছেড়ে পাতলা নরম একটা শাড়ী পরে আয়,আজকের দিনে অন্য ড্রেস পড়িস না প্লিজ, আজ তোকে আমি শুধু বউ রূপে দেখতে চায়।”

স্বাধীন নিজের হাত ছোঁয়ার গলায় ছোঁয়ায়।একটানে খুলে ফেলে গলায় দেয়া ডায়মন্ডের নেকলেস টি।তারপর ছোঁয়ার কান থেকে খুব আস্তে আস্তে দুল টাও খুলে নেয়।হাতের চুড়ি গুলো একটা একটা করে খুলে টেবিলে রাখে।চুলে অসংখ্য পিন,আর ক্লিপ লাগানো।তায়তো আস্তে আস্তে একটা একটা ক্লিপ খুলে নেয় স্বাধীন। এবার শুধু লেহেঙ্গার ওড়নার পিন খোলা বাকি।ওড়নায় স্বাধীন হাত বাড়াতে গেলে বাঁধা দেয় ছোঁয়া। একটু খানি সরে এসে বলে,

“থাক ভাইয়া,এবার আমি খুলছি।তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।”

সাথে সাথে ছোঁয়া কে জড়িয়ে ধরে স্বাধীন। ছোঁয়ার গলায় গভীর চুৃমু একে দিয়ে বলে,

“এই মেয়ে আজকের দিনে তুই কাকে ভাইয়া বলছিস? আমার এতো এতো ফিলিংসের কথা গুলো কি শুনে তোর আজও আমাকে ভাইয়া মনে হলো? এতো আদর পেয়ে ও কি তুই কিছুই অনুভব করলি না।দু দুবার বিয়ে করেছি জান্স,বাসর ঘরে ভাইয়া ডাক শুনবো বলে নয়।”

“তুমি সরোতো।আমি চেইঞ্জ করবো,যাও,বাইরে যাও।এমন লুচু ছেলেদের মতো তাকিয়ে থেকো না।আমি তোমার কতো ছোট! আর আমাকে এসব বলছো,লজ্জা লাগছে না।যাও বলছি।নাহলে আমার জামাই সাহারিয়ার স্যার তোমায় পিটিয়ে সোজা করবে।”
আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে ছোঁয়া।
প্রিয়তমার মুখে এমন রসিকতা শুনে স্বাধীন বেপরোয়া হয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করায় ওর যুদ্ধ জয় মনে হয়।

স্বাধীন কে বাইরে বের হতে বলে ছোঁয়া। বেছে বেছে একটা সুতি লাল শাড়ী নিয়েছে ও।কিন্তু নাছোড়বান্দা স্বাধীন যেন ছোঁয়া কে জ্বা* লাতে পারলেই বাঁচে,

“আরে আমি কেন বাইরে যাবো? ঘর আমার,বউ আমার,বাসর আমার আর আমাকেই কেন বাইরে যেতে হবে।আজব তো!”

“তাহলে কি আমি বাইরে গিয়ে চেঞ্জ করবো? ওয়াশরুমে এসব ভারী পোশাক নিয়ে গিয়ে আমি চেঞ্জ করতে পারবো না।তুমি বাইরে যাও ”

“হ্যাঁআ,আমার সামনেই করবি।একটু পর তো,,,”

বাকীটা বলার আগেই স্বাধীন কে জোড় করে বাইরে বের করে দেয় ছোঁয়া। দরজা লাগিয়েই পেট ফেটে হাসি পায় ছোঁয়ার।

পাতলা সুতির একটা শাড়ী পড়েছে ছোঁয়া। মেকআপ সব তুলে একদম হালকা হয়েছে । বিয়ের দিন মনে হয় নতুন বউকে বিশেষ সাজতে হয়না,এমনিই তার সব কিছু তে সৌন্দর্য ঠিকরে পরে।ছোঁয়া কে খুব সুন্দর লাগছে এমন সাধারণ ভাবেও।গা থেকে ভুরভুর করে জেসমিন ফুলের ঘ্রাণ আসছে। পুরো রুম জুড়েই বিরাজ করছে ফুলের সুবাস।এবার দরজা খুলে দিতেই ভেতরে আসে স্বাধীন। এক ঝলক ছোঁয়া কে দেখেই এক মায়াবতীর মতো লাগে। নিজেও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।রাত্রি প্রায় পৌনে দুটোর কাছাকাছি চলে গেছে। রুমে এসেই বিছানা তে ছোঁয়া কে বসা আবিষ্কার করে।আস্তে আস্তে এগোয় ছোঁয়ার দিকে।
পরম যত্নে চুমু খায় ছোঁয়ার কপালে।ছোঁয়া ও এবার আর বাঁধা দেয় না।বহু প্রতীক্ষার পর দুটি কপোত-কপোতী মিলিত হয় জান্নাতি এক অনাবিল আনন্দে। প্রাচীন এ সুখ টুকু নর পুরুষ সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বিরাজমান। প্রত্যেকটা জীবজগতই নানা ভাবে নানা প্রকৃিয়ায় আস্বাদন করে থাকে এর স্বাধ।শান্ত হয় স্বাধীনের এতোদিনের নির্ঘুম কা*টানো রাত্রি গুলোর প্রতিটি প্রহর।হারিয়ে যায় ছোঁয়া নামের এক ভীতু কিশোরীর আলাদা অস্তিত্ব। আজ সে বিলীন হয়েছে স্বাধীন নামের উত্ত*প্ত আ*গ্নেয় গিরিতে।আজ সে নারী।দুটি প্রাণ এক হয়ে যাওয়া এক নারী।

সকাল প্রায় সাতটা।এতোক্ষণে ঘুম ভাঙে ছোঁয়ার। প্রতিদিনের অভ্যাস মতো উঠতে গিয়ে দেখে কিচ্ছু ঠিক নেই।নিজেকে কোন এক শক্ত বেষ্টনীতে আবিষ্কার করে।ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করলে বোঝো স্বাধীনের বাহুডোরে আবদ্ধ সে।একদম জড়িয়ে আছে স্বাধীনের বুকের সাথে। কাপড় চোপড় ও কিচ্ছু ঠিক নেই। শাড়ি টার আঁচল কোথায় তা খুঁজে পাওয়ায় ভার।কিন্তু প্রচন্ড লজ্জায় কুঁকড়ে যায় ছোঁয়া। তারমানে ও সারারাত এমন ভাবে স্বাধীনের সাথে ছিলো ভাবতেই লজ্জায় ঘিরে ধরে ওকে।শাড়ীর যে অবস্থা তাতে লজ্জা টা আরো বেশি পায়।কিন্তু উঠতে গিয়েই দেখে মানুষ টি ওকে জড়িয়ে কতো শান্ত ভাবেই না ঘুমাচ্ছে। একদম বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ লাগছে মায়া ভরা মুখটি।জোড়া ভ্রু গুলো একদম মেয়েদের মতই চিকন, আর টানা।এই মূহুর্তে ছোঁয়ার মনে ও একটা ইচ্ছে খুব প্রবল ভাবে জাগলো।ঐ মায়া ভরা চোখের পাতায় একটু ঠোঁট ছোঁয়ানোর প্রবল তেষ্টা জাগলো মনে।সমস্ত লজ্জা ঝেড়ে ফেলে টুপ করে একটা চুমু খেলো স্বাধীনের চোখের পাতায়,আর একটা কপালে।চুমু খেতেই হালকা কেঁপে উঠল পাতা দুটো।ছোঁয়া তৎক্ষনাৎ আবার ঘুমের মতো করে গুটিয়ে গেলো স্বাধীনের বুকে।ওর মনে পড়লো স্বাধীনের কথা গুলো,”তুই আমার প্রতিটা নির্ঘুম রাতের কারণ। ”

এবার আবারও স্বাধীন কিছু টা জড়িয়ে ধরলো ছোঁয়া কে।ঘুমন্ত মানুষ ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

“আমাকে লুকিয়ে দেখা শেষ হলে আর একটা চুমু গালেও দে।শুধু কপালে চুমু দিলে নিজেকে বাচ্চাদের মতো মনে হয়। সেদিন মাথা ব্যথার বাহানা করেও কপালে দিয়েছিস।একটা গালেও তো দে।আমি যে বাচ্চা নই,তা তো বুঝিয়েই দিয়েছি।”

তারমানে শয়তান, ছ্যাচড়া ছেলেটা এতোক্ষণ জেগে ছিলো? আর এভাবে সুযোগ টা নিলো? লজ্জায় ছোঁয়ার ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। আর না হলে দৌড়ে পালাতে। স্বাধীনের দিকে আর না তাকিয়ে মুখ টা যতো সম্ভব স্বাধীনের বুকের মাঝে লুকিয়ে চুপ করে রইল ছোঁয়া।

“লজ্জাবতী, লজ্জা পাওয়া হলে চল,ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ পড়তে হবে।এমনেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু আজকের রাত হিসেবে আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিতেই পারেন একটু দেরী।কিন্তু অবহেলা করে দেরী করা যাবে না।”
বলে ছোঁয়ার কপালে আবারও ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় স্বাধীন। ছোঁয়া কিছু ক্ষণ ওভাবেই মুখ লুকিয়ে থাকে বালিশে।,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,৷,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here