এ_কেমন_ভালোবাসা #পর্ব_৩৭,৩৮

0
1008

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৭,৩৮
#মাসুরা_খাতুন
৩৭

আজকের সকাল টা স্বাধীন ছোঁয়ার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সুচনার। দীর্ঘ এতো বছর পর ওরা আজ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পা দিয়েছে ওরা, সংসার নামক বাঁধনে বাঁধা পড়েছে ওরা দুজনে একসাথে ফজরের নামাজ শেষ করে নীচে আসে। সেখানে কেয়া বাঁধন সহো সকলেই আছে।ওদের নীচে নামতে দেখেই কেয়া দৌড়ে যায় ছোঁয়ার কাছে। মুখ টিপে টিপে হেসে বলে,

“কিরে,ভালো ঘুম হয়েছিল আজ? ”

“হু্,ঘুম হবেনা কেন?”ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে ছোঁয়া ।

কেয়া একেবারে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“বলছি,আমাদের সাইকোলজির সাহারিয়ার স্যারকে রাতে ঘুমানোর জন্য কেমন ট্রিটমেন্ট করলি?”

এবারে লজ্জায় মুখ রাঙা হয়ে আসে ছোঁয়ার।পাশে দাঁড়ানো স্বাধীন ও শুনতে পায় কেয়ার কথা। সেও লজ্জা পেয়ে খেয়াল না করার ভান করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে যায়।
বেচারি ছোঁয়া একায় পড়ে কেয়ার হাতে।কেয়াও কম যায় না, নানা রকম প্রশ্ন করে ছোঁয়া কে নাজেহাল করে দেয়।
এদিকে স্বাধীন এসে বাঁধনের কানে কানে বলে,

“ভাই বাঁধন, তাড়াতাড়ি যাও,তোমার বাঘিনী তো আমার লজ্জাবতী কে একেবারে নাজেহাল করে ফেলছে।ঐ মেয়ে কে তুমি ছাড়া আর কেউ চুপ করাতে পারবে না।একটু যাও ভাই, উদ্ধা*র করো আমার নিষ্পাপ বাচ্চা বউটাকে।”

“তুমি চিন্তা করো না স্বাধীন ভাই, আমি এখনি গিয়ে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোনোর ব্যবস্থা করছি।”
বলেই বাঁধন চলে যায় ওদের কাছে।

“গুড মর্নিং ছোঁয়া। বলছি যে তোমাদের তাও হলো,এবার আমাদের জন্য কিছু করো,আমার কতো সখ স্বপ্নের বাসর করার প্রিয় উগান্ডা বাসী কন্যাকে নিয়ে। ”
কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল বাঁধন।

“এই যে,মানে টা কি? কাকে নিয়ে আপনি বাসর করবেন? এতো সখ আপনার? ”

“হুম বাসর তো করবোই,আমার আশেপাশে থাকা উগান্ডা রে নিয়ে। কতো কি করব,তা তো আমি রোজ স্বপ্নে দেখি। এক্কেবারে ইমরান হাসমির মতো রোমান্স করবো।”

“ছিহ্! কি নির্লজ্জ আপনি? আর আশেপাশে থাকা উগান্ডা রে নিয়ে মানে?”

“হুম,আমার আশেপাশে থাকা উগান্ডা রে নিয়েই তো।ফুল নাইট রোমান্স হবে।একটুও ঘুম নয়।”

“খুব খচ্চর ছেলে তো আপনি? মেয়েদের সামনে এসব বলছেন আপনার লজ্জা করছে না? আর আপনার সাহস কি করে হয়,আমাকে নিয়ে এসব বলার? ”

“এই একদম খচ্চর বলবেন না,খচ্চর গিরি কাকে বলে দেখিয়ে দিবো কিন্তু? আর আপনাকে নিয়ে কখন বললাম। ”

“ঐ যে আপনি বললেন না,উগান্ডা রে নিয়ে যাবেন?”

“ওওওও,তারমানে আপনি নিজেও নিজেরে ফুল পিউর উগান্ডা মনে করেন। জানা ছিলো না।”

নিজের কথায় নিজেই ধরা খেয়ে যায় কেয়া।হো হো করে হাসতে থাকে বাঁধন। আর এদের ঝগড়া শুনে ছোঁয়া ও মুখ টিপে টিপে হাসে।কিন্তু কিছু দূর দাঁড়িয়েই একটু সুদর্শন ছেলে যে দুচোখ ভরে ওর মুচকি হাসির ঝরণা ধারা অবলোকন করছিলো তা ছোঁয়ার অজানা।

কেয়া পাশে টেবিলে থাকা একটি বড় খালি বোতল নিয়ে বাঁধন কে মা*রতে শুরু করে, বাঁধন ও সুযোগ বুঝে দৌড় দেয় কেয়ার হাত থেকে বাঁচতে। কেয়াও পিছু নেয় বাঁধনের,

“দাঁড়ান, উগান্ডা কাকে বলে দেখাচ্ছি। আজ বুঝিয়েই ছাড়বো,শয়তান ছেলে। ”

টেবিলে সবাই খাওয়ার জন্য বসেছে।সবাই একসাথে বসা যাবে না বলে কেউ কেউ বসেছে কেউ কেউ বসে নি,আবার অনেকের খাওয়া হয়ে ও গেছে। যারা খেয়েছে তারা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।এখন বসেছে স্বাধীন, ছোঁয়া, কেয়া বাঁধন, নিহান আর রিমি।বাকীরা খাওয়া শেষ করে আড্ডা দিচ্ছে। আর বড়রা বাকী।ছোঁয়া বড়মার সাথে খাবে বললেও সাহানা বেগম পাত্তা দেন নি ওর কথায়।উনার এককথা,এই কয়দিন এতো অনুষ্ঠান,পার্টি খুব ধকল যাবে তোর ওপর,তায় খাওয়া দাওয়ায় কোন অনিয়ম করা যাবে না।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে, আবার স্বাধীন ও বলল খেতে বসতে তায় ছোঁয়া ও ওদের সাথেই বসেছে।
সাহানা বেগম বলেই দিয়েছেন,

“শোন ছোঁয়া, তুই আমার ছেলের বউ কখনোই ছিলিস না,তুই আমার মেয়ে, তুই আমার বন্ধু। এতোদিন তুই আমাকে যেমন শুধু বড়মা মেনে এসেছিস,যেমন আমায় শাসন করেছিস,আবার খুনসুটি করেছিস বড় আব্বুর সাথে মিলে? তুই তেমনই থাকবি।আমার ছেলের বউ ছোঁয়া কে চাই না,মাথায় ঘোমটা দিয়ে মেকি সম্মান জানানো শাশুড়ী বউয়ের সম্পর্ক আমি চাই না।আমি আমার মেয়ে ছোঁয়া কে এতোদিন যেমন আগলে রেখেছি,তেমন ছোঁয়া কেই চাই।তাই এসব শাশুড়ী বউয়ের ফরমালিটিস আমার সামনে একদম দেখাবিনা।”

ছোঁয়ার মামীরাও মনে মনে খুব খুশি সাহানা বেগমের ওপর।সত্যিই,আজকালকের দিনে এমন মানুষ পাওয়ায় যায় না।এতো সুন্দর যে মানুষের মানসিকতা তেমন মানুষের সাহচর্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

একসাথে খেতে বসলেও নিহান কে অনেক ক্ষণ ধরে খেয়াল করে স্বাধীন।ছেলেটার মন কেমন ভার ভার লাগছে।কখনো কখনো চোখে ও টলটলে পানির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু খাবার টেবিলে ছোঁয়া আর স্বাধীন পাশাপাশি বসার পর থেকে ও একদম মাথা নিচু করে আছে, তারপর থেকে ও মনে হয় মাথা উঁচু করে ওদের দিকে তাকিয়ে খায় নি।ছোঁয়ার বা পাশে বসেছে কেয়া,তারপর রিমি তারপর বাঁধন আর নিহান।ইচ্ছে করেই কেয়া রিমি কে বাঁধনে পাশে দিয়েছে।বেচারা বাঁধন কেয়ার পাশেই বসেছিল, মনে মনে খুব খুশি হয়ে, কিন্তু রিমি খেতে আসতেই কেয়া উঠে রিমিকে বলে ওখানে বসতে।রিমিও তো মনে মনে এটায় চাচ্ছিল,সুযোগ টা পেয়ে সাথে সাথেই খুশি মনে বসে পড়ে,আর মুখ কালো করে গোমড়া মুখে বসে থাকে বাঁধন। চোখের ইশারায় বোঝায় একবার খেয়ে উঠুক,খবর আছে ওর।

“এই নিহান,তুই খাচ্ছিস কই? ওমন মাথা নিচু করে থাকলে খাবি কি করে? “স্বাধীন নিহান কে উদ্দেশ্য করে বলে।

“হ্যাঁ ভাইয়া,এইতো খাচ্ছি। ”
হকচকিয়ে ওঠে বলে নিহান।

“সত্যিই তো নিহান ভাইয়া,তুমি তো খাচ্ছোই না,শুধু খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছো।মুখে তো দাও।”
ছোঁয়া ও বলল।

“হ্যাঁ আমি খাচ্ছি ছোঁয়া। তোমরা চিন্তা করো না,আমি এমন আস্তে আস্তেই খাই।”

“নিহান শোন,খাওয়া শেষে তুই একটু ছাদে আসিস,একটু কথা আছে তোর সাথে। ”
বলে খাওয়া শেষ করে উঠতে যায় স্বাধীন।

“আর কেয়া,আমি আর বাঁধন বিজি থাকবো দুপুরে বৌ ভাতের আয়োজনের জন্য। তুমি ছোঁয়ার সাথেই থেকো,আর ওকে সময় দিও।”
বলে চলে যায় স্বাধীন।

খেতে খেতে কেয়া টেবিলের নীচে দিয়ে পা দেয় রিমির পায়ে।ইচ্ছে করেই রিমির পায়ে এমন ভাবে পা ঘষে যেন মনে হয় বাঁধনের পা।রিমি বুঝতে পারে এটা বাঁধনের পা,আর তা ওর পায়ে এসে ঠেকছে। খুশিতে নেচে ওঠে ওর মন।তারমানে বাঁধন ও ওকে ইশারা করছে! রিমি আনন্দে বাঁধনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি বলবে,সেটা মুখেই বলো,আমি শোনার জন্য প্রস্তুত।”

বিরক্তি নিয়ে বাঁধন বলে,
“কি বলবো মানে? আমি আবার কি বলবো তোমায় খুকি?”

“দেখো আমি মোটেও খুকি না,আমি ছোঁয়ার সাথেই পড়ি,আর আজ ছোঁয়া বিয়ে করে অলরেডি বাসর করে ফেলল,তায় খুকি বলবে না।”

রিমি বলতেই নিহান খাবার রেখে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো।

“যা বাবাহ্! এর আবার কি হলো? খাবার না খেয়েই চলে গেলো। ”
বলল রিমি।

“এই মেয়ে দেখো,তুৃমি বাচ্চাই।আর আমি তোমাকে কিচ্ছু বলতে ও চাচ্ছি না।কি শুধু শুধু শুনতে চাচ্ছো তুমি? ”

এদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে ছোঁয়া আর কেয়া। আর মুখ টিপে টিপে হাসছে কেয়া।

“বারে,তুমিই তো পা দিয়ে ঠেলছো? তায়তো বলছি যা বলার মুখেই বলো।এতো লজ্জা পেতে হবে না। ”

“পা দিয়ে ঠেলছি মানে আমি কখন তোমায় পা দিয়ে ঠেললাম? আজব তো!মাথা খারাপ নাকি?”

“ওমা! এখনি ভুলে গেলে? তুমিই তো আমার পায়ে পা লাগালে।”

এবার আরো হাসে কেয়া।ছোঁয়া কিছুই বুঝতে পারে না এদের মধ্যে কি হচ্ছে, সে একমাত্র চুপচাপ দর্শক হয়ে এদের কীর্তি দেখছে।

কেয়ার হাসি দেখে বাঁধন বুঝতে পারে কিছু একটা শয়তানি করেছে ও।তায়তো নরমাল ভাবে রিমি কে বলে,

“আসলে আমি সরি,ভুলবশত লেগে গেছে। ”
বলে কেয়ার দিকে তির্যক ভাবে তাকিয়ে বলে বাঁধন।

“আরে না,আপনার কোন দোষ নেই, তা আপনি লাগাতেই পারেন।আমি কিছু মনে করিনি। “বলে মুচকি হাসে রিমি।

________

খোলা ছাদে একপাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে স্বাধীন, একটু পরেই নিহান আসলো।নিহানকে দেখেই হাতের সিগারেট টি নিহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“লাগবে,?”

“আমি সিগারেট খাই না ভাইয়া।”

“ওহ্,ভেরী গুড! ”
বলেই হাতের সিগারেট টা দূরে ছুঁড়ে ফেলল স্বাধীন।

এবার নিহানের কাঁধে হাত রেখে বলল
“দেখ নিহান,আমি তোর সাথে একটু কথা বলতে চাই।যদি তুই লজ্জা না পাস,আর ভয় না পাস?”

মাথা নিচু করে নিহান বললল,
“কি বলবে বলো ভাইয়া?”

“তুই আমার দিকে তাকা,আর শোন আমি যা বলতে চাই।তুই ছোঁয়া কে পছন্দ করিস,তাই না নিহান?”

স্বাধীনের কথা শুনে চমকে ওঠে নিহান।

“কি বলছো তুমি ভাইয়া?”,,,,,

চলবে,,,,,,

#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৮
#মাসুরা_খাতুন

“তুই ছোঁয়া কে পছন্দ করিস,তাইনা নিহান?”

হটাৎ স্বাধীনের এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে ওঠে নিহান।স্বাধীন যে এমন প্রশ্ন করবে তা ও ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারে নি।

“কি বলছো ভাইয়া তুমি? না না।একদম না।”

মুচকি হাসি দিয়ে বলল স্বাধীন,
“আমি তোর অনেক বড় নিহান।তোদের বয়সের ছেলে মেয়ে কে আমি পড়াই।তার ওপর মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক আমি,মনের ভাবই ধরতে না পারলাম তো কেমন মনোবিজ্ঞান পড়লাম। ”

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে নিহাব।মুখে টু শব্দটি নেই।

“দেখ নিহান, জীবন খুব কঠিন,জীবনে আমরা সবসময় যা চাই, তা কিন্তু পাই না।মানুষের সব আশা পূর্ণ হয়না।অনেক সময় মনের গভীর আকাংখা কে মাটি দিয়ে ও হাসি মুখে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।মানুষ যদি,চাইতেই সেই জিনিস টা পেয়ে যেত,তবে আর প্রাপ্য বস্তুটির ঠিকঠাক মূল্য দিত না।তাই পরিস্থিতি কে বুঝতে শেখ।নিজের মন কে শান্ত কর।”

নিহানের চোখে হাজার অশ্রু কণা এসে ভির করেছে। একটু টোকা দিলেই ঝরঝর করে তারা বাঁধ ভাঙবে।
নিহানের কাঁধে হাত রেখে স্বাধীন আবারও বলে,

“দেখ ভাই ছোঁয়া কোন বস্তু নয় যে আমার জিনিস টা তোর খুব পছন্দ হয়েছে, আর আমি তোকে দিয়ে দিলাম।ও একটা মানুষ, আল্লাহর কালাম পড়া স্ত্রী আমার ও।ও, আমি না চাইতেই জন্মের আগেই ওর সাথে আমার জুটি বাঁধা ছিলো।সৃষ্টিকর্তা ও এটায় চান নিহান,তায় মিছে মায়ায় পড়ে থেকে কি লাভ বল? শুধু শুধু কেন কষ্ট পাচ্ছিস ভাই তুই? তারচেয়ে এটা বলে মনে সান্ত্বনা দে,ছোঁয়া তোর ভাবি,তোর বড় ভাইয়ের বউ।একবার সম্মানের চোখে তাকা ওর দিকে,দেখবি তোর মনের যত সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। মন তো আমাদেরই নিয়ন্ত্রণের বস্তু। আমরা চাইলেই এটা কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।আবেগ দিয়ে জীবন চলে না,তুই বাস্তবে ফিরে আয়,দেখ সব কিছু মেনে নিতে পারবি। ”

স্বাধীনের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে নিহান।এবার চোখের দিকে তাকায় স্বাধীনের।নিহান নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে ছোঁয়া ওর বড় ভাইয়ের বউ।

“আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া, ছোয়া তোমার স্ত্রী জেনেও তার মায়ায় নিজেকে জড়িয়েছি।এ অপরাধ! মস্ত বড় অপরাধ। তুমি আমাকে শাস্তি দাও ভাইয়া।আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে। ”
নিজের ভুল বুঝতে পেরে কেঁদে ফেলে নিহান।

“আরে না,এমন বয়সে এসব হয়েই থাকে।তুই শুধু নিজেকে শক্ত রাখ,তাহলেই হবে।”

“ছোঁয়ার প্রতি এমন ধারণা আনা আমার ঠিক হয় নি।ও আমার বড় ভাইয়ের বউ, আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে,তুমিও তখন ছোঁয়া কে সহ্য করতে পারতে না,অকারণেই গায়ে হাত তুলতে।আর তাই তো আমার ছোঁয়া কে ভালো লাগতে শুরু করে। আর এমন হবে না ভাইয়া।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ভাই, এবার চোখের পানি মোছ,আর নীচে চল।অনেক কাজ আছে, দুপুরের অনুষ্ঠানের পুরো দায়িত্ব তোর। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া,চলো।”

বলে দু ভাই নীচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।যাওয়ার সময় আবারও নিহান বলে,”ভাইয়া,আমার অন্যায় টা ক্ষমা করেছ তো? আমি ভুল করেছি ভাইয়া।”

হেসে ওঠে স্বাধীন বলে,”আরে ধুর! কখন ভুলে গেছি সব।”

________________

আজকেও ছোঁয়া কে সাজাতে পার্লার থেকে বিউটিশিয়ন আনা হয়েছে । গাঢ় লাল টকটকে রঙের কাতান শাড়ি পড়ানো হচ্ছে ছোঁয়া কে।অসাধারণ সুন্দর শাড়িটি ও স্বাধীনের নিজের পছন্দ করা।ছোঁয়া আরো অবাক হয় গহনা গুলো দেখে।ক্লাসিক্যাল মডেলের মর্ডান ভার্সনের গহনা গুলো।আজ একটু ভারী মেকআপই করানো হলো ছোঁয়া কে।আর সাথে এসব ভারী ভারী গহনা থাকায় কোন রাজরাণীর থেকে কম লাগছে না ওকে। পরিপূর্ণ বউয়ের সাজে ছোঁয়া কে আজ অনন্য সুন্দরী লাগছে।দেখার পর থেকে স্বাধীন চোখই ফেরাতে পারছেনা ওর মায়াবতীর থেকে।আত্মীয় স্বজনদের সবাই প্রশংসা করছে ছোঁয়ার সৌন্দর্যের।

স্বাধীন ও কম যায় না। লম্বা সুদর্শন ছেলেটি ব্ল্যাক প্যান্ট,ব্ল্যাক ব্লেজারের সাথে হোয়াইট শার্ট পরেছে।চকচকে কালো সু আর হাতে সিলভার কালারের দামী ঘড়ি।চোখে বরাবরের মতো কালো ফ্রেমের চশমা। চুল গুলো স্পাইক করে রাখা।ধবধবে ফর্সা ছেলেটির এমন স্টাইলই যে মানায় তা বরাবরই প্রমান করে ওর সৌন্দর্য। জেমি আজ আবারও ক্রাশ খায় স্বাধীনের ওপর।সেই সাথে রাগে ফুঁসে ওঠে মনে মনে। কিন্তু এতো কাছে থেকে ও হারিয়ে ফেলায় এমন মানুষ টিকে মনে মনেই নিজের ভাগ্য কে দোষ দেয় জেমি।কেন ওর ফুফু ওকে স্বাধীনের বউ হিসেবে দেখতে পেল না,আর কোন রকম সাধনা ছাড়াই ঐ একরত্তি মেয়ে টা প্রাচীন কাল থেকেই এমন সুদর্শন পুরুষ টাকে দখল করে আছে।আজ স্বাধীন কে চাওয়াও যে পাপ।আজ স্বাধীন যে সম্পূর্ন রুপে ছোঁয়ার হয়ে গেছে। আজ স্বাধীনের মনে প্রাণে যে শুধু ছোঁয়ায় বিরাজ করছে।স্বাধীনের গায়ে যে ছোঁয়ার গন্ধ মিশে গেছে। মনে মনেই বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে জেমি।

কেয়া ও আজ খুব সুন্দর একটা ড্রেস পড়েছে। নেভী ব্লু কালারের জামাটা মনে হচ্ছে স্পেশালি এই কোকড়া চুলের চাশমিশ মেয়েটির জন্যই তৈরী।চুলগুলো খোলা রেখে তাতে বাচ্চাদের মতো পুতুল বসানো ক্লিপ লাগিয়েছে।চোখে চশমা আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। শুভ্র রঙা মেয়েটি কে একদম পুতুলের মতো লাগছে,একদম মোমের পুতুল।যেন একটু টোকা দিলেই গলে পড়বে।
বাঁধন ও নেভি ব্লু রঙের ব্লেজার পড়েছে, সাথে মেরুন কালারের শার্ট। প্রথমে যদিও বাধন ও স্বাধীনের সাথে ব্ল্যাক পড়েছিল,কিন্তু যেই দেখল ওর কেয়া রাণী নেভি ব্লু পড়েছে, সাথে সাথেই বাঁধন নিজের ব্ল্যাক ব্লেজার খুলে নেভি ব্লু পড়ে।ব্যাপারটা কেয়া খেয়াল করে তির্যক দৃষ্টিতে তাকায় বাঁধনের দিকে। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বলে
“আফ্রিকার বান্দরদের দেখতে অবশ্য ভালোই লাগে। ”
কেয়ার বিরবির করে বলা কথায় বাঁকা হাসে বাঁধন। আজ অনেক বার চেয়েছিল কেয়া কে শপিংয়ে নিয়ে যেতে।কিন্তু এইটুক বাচ্চাদের মতো দেখতে মেয়ে টার মনে ব্যাক্তিত্ব ভরপুর। কিছুতেই যায় নি বাঁধনের সাথে।
বাঁধন মনে মনে ঠিক করে, আজ যে করেই হোক প্রপোজ করবে কেয়া কে।মেয়ে টার মুখ থেকে স্পষ্ট কথা শুনতে চায়,এমন ঝু*লে থাকা যে কতোটা কষ্টের তা এমন ঝু*লে থাকা প্রেমিক পুরুষ গুলো ঠিকই জানে।

স্বাধীন ছোঁয়া কে পাশাপাশি বসানো হয়।অনেক অনেক ফটো তোলা হয় দুজনার।আত্মীয় স্বজন রা সবাই এসে দোয়া করে ওদের।পাশাপাশি দুজন কে বেশ লাগে দেখতে।টকটকে লাল পরিহিতা মায়াবী মেয়ের পাশে সুদর্শন সুপুরুষ। এ যে রাজজোটি তা অনেকেই বলে যায়।নিহান নিজেও এসে ওদের সাথে সেলফি তুলে যায়,সেই সাথে ছোঁয়া কেও ভাবী ভাবী বলে ডাকে।

অবশেষে অনেক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ওদের বৌ ভাতের অনুষ্ঠান। আত্মীয় রাও বেশির ভাগই চলে যায়।
ছোঁয়ার খুব ক্লান্ত লাগে, তাই তো ও রুমে এসেই সব কিছু খুলে ফ্রেশ হয়।একটা সুতি শাড়ি ও পড়ে নেয়।এখনো সবাই বাইরে থাকলেও ছোঁয়া কে ঘুমাতে পাঠায় সাহানা বেগম।

স্বাধীনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া। রাত প্রায় এগারোটার দিকে স্বাধীন রুমে আসে।এসে ফ্রেশ হয়ে দেখে ছোঁয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোঁয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে স্বাধীন। ঘুমন্ত ছোঁয়ার কপালে টুপ করে চুমু দেয়।ঘুমের মধ্যেই স্বাধীনের এমন উষ্ণ পরশে কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ছোঁয়ার কেঁপে ওঠা দেখে দু’হাতে জড়িয়ে নেয় স্বাধীন ওকে বুকের মাঝে। ছোট্ট মেয়ে টাকে একদম বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়,পরম যত্নে প্রিয় প্রেয়সীকে আগলে নেয় বুকের সাথে। তারপর মাথায় বিলি কা*টতে কা*টতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে। ছোঁয়া বিশস্ত প্রিয় মানুষ টির আহ্বান পেয়ে একদম গুটিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

বাঁধন কেয়া কে ছাদে আসতে বলে ছোট্ট চিরকুট দিয়ে। আজ অনেক সাহস সঞ্চয় করে এসেছে ওর বাঘিনী কন্যাকে মনের কথা জানাবে ও।ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করে ওর কেয়া রানী আসার,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here