#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৪১,৪২
#মাসুরা_খাতুন
৪১
“জীবন ঠিক কতোটা কঠিন তা বুঝি বাবা মা না থাকা সন্তানেরাই সবথেকে ভালো জানে।আমার দূর্ভাগ্য আমি ও সেই দলের।আমার বয়স যখন ছয় বছর তখন বাবা মা দুজনেই একটা দূ*র্ঘটনা*য় মা*রা যান,দূর্ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যাই আমি।হ্যাঁ এটাকে দূর্ভাগ্যই বলবো,কারণ সেদিন বাবা মার সাথে আমিও মা*রা গেলে আজ এতো লড়াই করে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হতো না আমার।সেদিন আমাদের উঠোনে দুটো খাটিয়া রাখা হয়ছিলো,একটা তে বাবার থেঁ*তলে যাওয়া দেহ,আরেকটি তে মার র*ক্তা*ক্ত শরীর।
রাতে ভিষণ ঝড় উঠেছিল সেদিন, আমাকে ঘরে ঘুমিয়ে রেখে বাবা আর মা বেরিয়েছিল আমাদের গোয়ালঘরের কি অবস্থা দেখতে, তিনটে গরু বাঁ*ধা ছিলো,চাল টাও খুব একটা মজবুত না,তাই তো দেখতে উঠেছিল বাবা মা।কিন্তু গোয়াল ঘরের কাছে যেতেই গোয়ালের সাথের বড় আম গাছটা উপড়ে পড়ে চালের ওপর। সেই সময় উনারা চালের নিচেই ছিলেন।এতোবড় গাছটা সহ চাল ভেঙে পড়ে উনাদের মাথার ওপর। একটা গরুও মা*রা যায় চাপা পড়ে। সাথে আমায় এতিম করে চলে যায় আমার সুখের প্রদীপ দুটো মানুষ, যাদের ছাড়া পৃথিবীতে আমি একদম একা।একটা মেয়ে হওয়ায় বাবা আমায় খুব ভালো বাসতেন।দুজনার চোখের মণি ছিলাম আমি,এতোটুকু কষ্ট কখনো পাইনি।কিন্তু উনারা চলে যাবার পর আমার দায়িত্ব পড়ে হাসেম চাচার ওপর।উনি আমার বাবার একমাত্র ছোটভাই।চাচি খুব একটা ভালোভাবে নেন নি উনার সংসারে বাড়তি আমার বোঝা। যদিও আমার বাবার যা কিছু ছিলো সনটায় চাচা দখল করে নেন, কিন্তু বিনিময়ে আমাকে একটু খানি ভাত আর মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতেও উনাদের গায়ে লাগতো।
যাই হোক,অনাদরে অবহেলায়,কখনো চাচির হাতের মা*রপিট খেয়ে বড় হতে লাগলাম আমি।কোন কাজের এতোটুকু ভুল হলেই চলতো চাচীর হাত। কিন্তু আমি প্রচন্ড জেদ করেও নিজের পড়াশোনা টা এগিয়ে নিয়েছিলাম।আস্তে আস্তে আমি মাধ্যমিক দিলাম, বড় হলাম। চাচার কাছেও মনে হয় আমি বাড়তি বোঝা ছিলাম, দেখেও না দেখার ভান করতেন আমার ওপর হওয়া অন্যায় গুলো চাচীর বাড়ির কাজের লোকের চাহিদা মিটিয়ে বড় হলাম আমি।কিন্তু এতেও আমার কোন আফসোস ছিল না, আমার খারাপ তখন লাগতে শুরু করে যখন আমার চাচাতো ভাই আমার দিকে বাজে নজর দিতে শুরু করে।সে আমার চাচার ছেলে হলেও আমার থেকে বয়সে বড়।লোকের মুখে শুনেছি বাবা মার বিয়ের অনেক বছর পর আমার জন্ম হয়।তাই তো চাচার ছেলে হারুনের থেকে আমি ছোট।তো,প্রায় রাতে আমি বুঝতাম কে যেন আমায় বাজে ভাবে ছোঁয়। তারপর একদিন এমন বাজে স্পর্শের মধ্যেই চোখ খুলে দেখলাম সেটা আর কেউ নয়,আমারই আপন চাচাতো ভাই হারুন।আমি চাচী কে বলে দেবো বললে উনি আমায় মা*রার হুমকি দেন।আর আমায় রোজ রাতে দরজা খোলা রাখতে বলেন।সে রাতের মতো হারুন ভাই চলে গেলে সারারাত ধরে কাঁদি আমি।একটু ও ঘুমায় না সারারাত। বাবা মাকে দোষারোপ করে করে কাদি।কেন এই নোংরা পৃথিবীতে উনারা আমায় একা রেখে চলে গেলেন? যেখানে র*ক্ত র*ক্তকে চেনেনা।আধাভাঙা একটা টিনের ঘরে থাকতে দিয়েছিল উনারা আমায়,আর আমার বাবার বাড়িটাতে উনারা নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবহার করতেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমার কলিজা কাঁ*পত, এই বুঝি হারুন ভাই আসলো!এখনই বুঝি বাজে ভাবে স্পর্শ করলো আমায়!ভালো করে এঁটে দরজা লাগানোর পরও উনি কেমন করে চলে আসতেন।নোংরা নোংরা কথা বলতেন আমায়,বাজে ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে আমি বাঁধা দিলে মা*রতেন আমায়,রাগ করে চলে যেতেন।আমি পুরো রাত জেগে থাকতাম,প্রচন্ড ভয়ে সবসময় গুটিসুটি মে*রে বসে থাকতাম।হারুন ভাই কোন দিক দিয়ে আসে সেই পথ খুঁজতে গিয়ে পেলাম উনি আমার একটু খানি ভাঙা টিনটা কে*টে আরো খানিকটা বড় করেছেন,আর ঐ দিক দিয়েই আসেন আমার ঘরে।এবার আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলো।কতদিন আর নিজেকে এভাবে রক্ষা করব? তাই তো চাচী কে সব বললাম, কিন্তু উনি শুনে আমায় স্বান্তনা দেওয়ার বদলে আমাকেই দোষারোপ করতে লাগলেন।বিষয় টা গোপনে সমাধান না করে অনুয় বিনয় করে কাঁদতে লাগলেন। আমি নাকি উনার ছেলের মাথা নষ্ট করেছি,আমার চরিত্রে দোষ আছে, ঘরের টিন ফাঁকা করে পরপুরুষ ভেতরে নিই এমন আরো অনেক বিশ্রী কথা শোনাতে লাগলেন। পাড়ার মানুষ কেউ বিশ্বাস করলো,তারা ছি ছি করলো,আর কেউ বিশ্বাস করলো না,কিন্তু বিনিময়ে গোপনে একটু হা হুতাশ ছাড়া আর কিছুই করল না।চাচা ও চাচীর কথা বিশ্বাস করলেন,রেগে গিয়ে উঠোনে পড়ে থাকা একটা চ্যালা কাঠ দিয়ে খুব মা*রলেন আমায়,আমার পিঠ জায়গায় জায়গায় কে*টে গিয়ে র*ক্ত বেরিয়ে জামা ভিজে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে কখন জ্ঞান হারালাম মনে নেই।চাচাতো বোন হাফসা চাচার হাতে পায়ে ধরে থামিয়ে আমায় ঘরে এনে রাখল।হাফসা আমায় ভালোবাসতো,আমার কষ্ট অনুভব করতো,কিন্তু চাচীর ভয়ে বেশী সাহস দেখাতে পারতো না।শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে যখন জ্ঞান ফিরল তখন রাত,কিন্তু ভালো করে খেয়াল করে দেখি আবারও সেই বাজে স্পর্শ।ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠল আমার।কিন্তু বাজে স্পর্শ টা আমার বুকের দিক থেকে আস্তে আস্তে গলায় আসলো।বাঁধা দেওয়ার মতো শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না,তাও চেষ্টা করছিলাম। একসময় তা আমার গলায় গিয়ে থামলো,আর প্রচন্ড জোরে আমার গলা চে*পে ধরল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল আমার,চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।হারুন ভাই আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন “খুব সাহস দেখিয়েছিলি না? এবার পেলি তো উচিত শিক্ষা? বলেছিলাম না, আমার বিরুদ্ধে কথা বলে লাভ নেই। ”
আমার শরীর মনে হয় এবার হাল ছেড়েই দেবে,চোখের সামনে বাবা মায়ের র*ক্তা*ক্ত মুখ টা দেখতে পেলাম। চোখের কোণ বেয়ে জল বেরিয়ে এলো।আমার অবস্থা খারাপ দেখে ভয় পেয়ে বোধহয় হারুন ভাই আমার গলা ছেড়ে দিলেন,আর তাড়াতাড়ি চলে গেলেন।খুব কাশি বর শ্বাসকষ্ট শুরু হলো আমার।মৃ*ত্যুকে যেন কাছ থেকে দেখলাম। সে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম এলো আমার,শরীরে অনেক ব্যথা তাই ঘুম আসতে দেরি হলো না।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর নিয়ে আর দাঁড়ানোর জো ছিল না।বহু কষ্টে চাচীর ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম একটু খাবার চাইতে।গতকাল সকালে একটু খানি খেয়েছিলাম আমি,তারপর থেকে না খাওয়া। চাচীর ঘরের কাছে যেতেই শুনি ফিসফিসানির শব্দ। কারো গোপন কথা শোনা উচিত নয় বলে চলে যাচ্ছিলাম,কিন্তু পরক্ষণেই কানে এলো আমার নাম।চাচী তার মায়ের কাছে বলছেন যে গতকাল আমার কথা উনি ঠিক বিশ্বাস করেছেন,কারণ উনি জানেন আমি মিথ্যা বলি না,আর তাই তো হারুন ভাইয়ের জীবন থেকে আমাকে সরাতে উনি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিতে চান।কারণ উনি চান না ছেলের কোন কুকীর্তির জন্য আমার মতো অনাথ মেয়ে কে বউ বানাতে। তাই তিনি উনার মাকে বলছিলেন যেমনই হোক একটা বর আমার জন্য জোগাড় করতে।খুব তাড়াতাড়ি উনি আমায় বিদায় করতে চান।
চোখ ভরে জল এলো আমার,হায়রে দুনিয়া! কখন কার ভাগ্যে কি হয় বলা মুশকিল। যেখানে আমার বাবা মার কতো স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে, আর এখানে চাচী আমায় যেমন তেমন পাত্রের হাতে বিদায় করতে পারলেই বাঁচে। তবে তারপর ও একটা কারণে স্বস্তি পেলাম প্রতিদিন যে নোংরা ছোঁয়ার থেকে বাঁচতে ভয়ে ভয়ে বাঁচি আমি,সেটা তো অন্তত দূর হবে। প্রতিদিন এমন নোংরা ছোঁয়া নিয়ে গা ঘিনঘিন করার চেয়ে স্বামী যেমনই হোক,তাকে নিয়ে সংসার করবো,পড়াশোনা না হবে না হোক,তাও তো এ জাহা*ন্নাম থেকে মুক্তি পাবো।
একদিনের মাথায়ই চাচী একটা বর জোগাড় করে বিয়ে দিলেন আমায়।আমি এখনও আমার বর কে দেখিনি। আমাকে সাজানোর সময় চাচাতো বোন হাফসা চাচীর সাথে তর্ক করে আমার মায়ের কিছু গহনা এনে পড়িয়ে দেয়,যদিও চাচী এতে ওকে আর আমাকে দুজন কেই অনেক কথা শোনায়।বিদায়ের সময় ধরে কাঁদার মতো কেউ ছিলো না আমার,সব জায়গায় দেখেছি বউ বিদায়ের সময় মা বাবা,খালা, ফুফু কতজন কে ধরে কাঁদে। কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য, কাঁদার মতো কেউ নেই আমার,কিন্তু হাফসার চোখে পানি টলমল করছিল,কিন্তু ও চাইতো যে আমি এই দোযখ থেকে বেরোয়,তাই তো বেশি কাঁদে নি মনে হয়।স্বামী নামক মানুষ টার হাত ধরে আমি বেরিয়ে আসলাম আমার নতুন ঠিকানায়। ”
এতোটা পড়ে চোখের পানি মুছলো ছোঁয়া।সবসময় দুষ্টুমি করা হাসিখুশি মেয়েটার জীবনে এতো এতো যন্ত্র*ণার গল্প লুকিয়ে রেখেছিল যে এটা ভাবতেও অবাক লাগে। কতোটা কষ্ট সহ্য করেছে ও।এই মূহুর্তে কেয়ার কাছে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার। চোখের পানি মুছে চিঠি টা বাকী অংশ পড়ার জন্য হাতে নিতেই সাহানা বেগমের ঘর থেকে ডাক পড়ল ছোঁয়ার। চিঠিটা ভাজ করে লুকিয়ে রেখে ও গেলো সাহানা বেগমের ঘরে।চারদিকে মাগরিবের আজান ও দিয়ে দিয়েছে। সাহানা বেগমের কাছে গিয়ে দেখল উনি সুতো দিয়ে উলের সোয়েটার বুনছিলেন। ছোঁয়ার চোখ মুখ দেখে বুঝে গেলেন কিছু একটা হয়েছে মেয়েটার।
“কি হয়েছে রে মা? তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?”
“কিছু হয়নি বড়মা।কেন ডাকছিলে আমায়?”
“আগে বল,তোর কি হয়েছে? আমার কাছে লুকচ্ছিস? ”
ছোঁয়া সাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরল,
“তুমি এতো ভালো কেন বড়মা? তুমি যদি এমন না হতে,তবে কোথায় ভেসে যেতাম আমি।হয়ত কোন এতিমখানায় ঠাঁই হতো আমার,নয়তো কোন আস্তাকুঁড়ে। সেই ছোটটি থেকে তুমি আমায় মানুষ করছো।কেন সবাই তোমার মতো ভালো হয়না বড়মা? কেন চারদিকে মানুষের জীবনে এতো কষ্ট? ”
কাঁদে ছোঁয়া। এতোক্ষণের চেপে রাখা কান্না৷ এবার ঝরঝর করে বেরোয় ওর চোখ থেকে।
“কি হয়েছে ছোঁয়া মা তোর? কি সব বলছিস তুই? তুই এতিমখানায় থাকবি কেন? তুই আমার মেয়ে, এ বাড়ির সন্তান, এ বংশের র*ক্ত।”
“তুমি সত্যিই অসাধারণ বড়মা।অনেকেই পারে না জায়ের সন্তান কে এমন আপন করে নিতে।তাই তে কতো শিশু কতো অনাদরে অবহেলায় বড় হচ্ছে। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বড়মা।অনেক ভালোবাসি।”
“তুই যে আমায় ভালোবাসিস তা কি মুখে বলতে হবে রে? আগে বল,কার কষ্ট দেখে আমার পাগলীর এমন কান্না পাচ্ছে? ”
এমন সময় বাড়ি আসে স্বাধীন।আর সাহানা বেগমের ঘর থেকে ছোঁয়ার কান্না মিশ্রিত কথা শুনে বেচারা ভয় পেয়ে যায়।নিশ্চিত ক্লাসের ঐ ঘটনা ও কেঁদে মাকে বলছে এই মনে করে চুপিচুপি ও নিজের রুমে চলে যায়। পেছনের দিক আর ফিরেও তাকায় না।
তারপর ছোঁয়া সাহানা বেগমকে কেয়ার কিছু কিছু ঘটনা খুলে বলে।ওর চাচীর চাচার আচরণ , মেয়ে টার ওপর হওয়া অত্যা*চার। সব শুনে সাহানা বেগমের চোখে ও পানি চলে আসে।তারপর উনি বলেন,
“তুই কেয়াকে বলবি আর মেসে থাকতে হবে না।ও যেন তাড়াতাড়ি মেসের পাট চুকিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসে,এটা বড়মার কথা।মেয়ে টা কখনও পরিবারের ভালোবাসা পায়নি,এতো কষ্টের যার জীবন তার পাশে ভালো একটা পরিবেশের দরকার। আর ওকে আমাদের বাসায় এনে তোর রুম টা দিয়ে দিস।এখানে ও ভালো থাকবে।এতো ঘর আমাদের পড়ে আছে,তোর বড়আব্বুর ব্যবসার টাকা,তোর বাবার রেখে যাওয়া প্রোপার্টি আবার স্বাধীন ও চাকরি করছে কে খাবে এতোকিছু। আমাদের কম কিসে? একটা মেয়ে কে ভরণপোষণ দেওয়ার সামর্থ্য ইনশাআল্লাহ আমাদের আছে।এতো কষ্ট বুকে রেখে মেয়ে টা ওভাবে একা একা ল*ড়াই করবে তা হয়না।আমাদের বাড়িতে ও ভালো থাকবে।”
“কিন্তু বড়মা,ও যা মেয়ে আমি বললে আসবে বলে মনে হয় না।তুৃমি নিজে বললে হয়তো শুনতে পারে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে আমিই কথা বলতে যাবোনে তোর সাথে। দেখি কেমন না এসে থাকতে পারে। এবার তুই যা,অজু করে মাগরিবের নামাজ টা পড়ে নে,মন ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা বড়মা।”
বলে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন পড়ে বসে থেকে।এবার সত্যিই মনে হয় মনটা হালকা লাগছে।অনেক বোঝা মাথা থেকে নামালে যেমন পাতলা লাগে,কোরআন পড়ার পর ওর নিজেরও তেমন লাগছে।এবার উঠে রাতের খাবার গরম করতে যায়।এদিকে স্বাধীনের সাথে ওর আর দেখায় হয়না।বাইরে থেকে স্বাধীন এসেছে বুঝতে পেরে ও আর স্বাধীনের রুমের আশপাশেই যায় না।
খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের আগের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া, চিঠি টা স্বাধীনের রুমে আছে তাই বাকীটা পড়া ও হয়না।খাবার টেবিলেও একটা কথাও বলেনি স্বাধীনের সাথে।
রাত ঠিক কতোটা জানা নেই , ঘুমের মাঝেই ছোঁয়া কারো দু বাহুর বন্ধনে আবিস্কার করে।তৎক্ষনাৎ ওর মাথায় কেয়ার চিঠির কথা স্পষ্ট হয়।ঘুমের মধ্যে মনে হয় কে যেন ওকে গভীর ভাবে বাজে স্পর্শ করছে।ওর মনেই থাকে না ও বিবাহিতা।সপাট করে স্বাধীনকে ধাক্কা মা*রে ছোঁয়া। তারপর ছটফট করতে করতে বলতে থাকে
“ছাড়ো,ছাড়ো আমায়,খবরদার ছোঁবে না আমায়।আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”
হটাৎ ছোঁয়ার এমন আচরণে চমকে যায় স্বাধীন। মেয়ে টা এমন করছে কেন? ও তো এমন করে না।
“ছোঁয়া, এ্যাই ছোয়া,জান এমন করছিস কেন? কি হয়েছে তোর?ছোঁয়া। ”
বুঝতে পারে ছোঁয়া ওটা ওর ভ্রম ছিল,ওর পাশে বাজে স্পর্শ করার মতো কেউ না,বরং ওর স্বামী স্বাধীন শুয়ে আছে। তাই তো চুপ করে যায় ছোঁয়া।
“কি হয়েছে জান? তুই কাঁদছিলি দেখলাম মার ঘরে,তুই কি কলেজের ব্যাপারটার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিস? আমি সরি রে।আসলে তোর পড়ায় মনোযোগ নেই দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না।প্লিজ রাগ করিস না।”
এতোক্ষণে ছোঁয়ার কলেজের ঘটনা মনে পরে।সাথে সাথেই স্বাধীনের বাঁধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ছটফট করতে করতে বলে,
“কেন এসেছো তুমি এখানে? টিচার হয়ে ছাত্রীর ঘরে আসতে লজ্জা করে না? তাও আবার পাশে শুয়েছো? যাও বলছি আমার রুম থেকে। তুৃমি স্যার,আর আমি ছাত্রী। বেরোও।”
আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরে স্বাধীন।
“উহু,একদম ছাড়বো না।এটা যেইসেই ছাত্রী নয়,একেবারে আমার ব্যক্তিগত ছাত্রী। একবার ধরেছি,জীবনে ও আর ছাড়ছি না।”
“তাহলে ওমন করো কেন আমার সাথে? সবার সামনে আমার বুঝি লজ্জা করে না? এ্যাই তুমি যাও তো আমার ঘর থেকে। ”
“আমি যা করি,সব তোর ভালোর জন্যই করি।পড়াশোনায় মনোযোগ না দিলে ভবিষ্যতে ও আরো এমন করব।”
বলেই একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ছোঁয়া কে।
প্রিয় মানুষের স্পর্শ কে মনেহয় বেশিক্ষন অগ্রাহ্য করা যায় না। তাই ছোঁয়া ও পারলো না বেশিক্ষণ দূরে থাকতে।একদম গুটিয়ে গেলো বিশ্বস্ত প্রিয় মানুষটার বুকের মাঝে, আবদ্ধ হলো বাহুডোরে,,,,,,,
চলবে,,,,,,
#এ_কেমন_ভালোবাসা
#পর্ব_৪২
#মাসুরা_খাতুন
“জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা দেই আমি সম্পূর্ন অপরিচিত বৈধ পুরুষটির হাত ধরে। তখনও আমি তার মুখটা ভালো করে দেখিনি, তবে তার আচার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে সে সঠিক জ্ঞানে নেই।সঠিক জ্ঞানে থাকলে একটা স্বামী তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কে এমন টানতে টানতে হিড়হিড় করে আনতো না।বরযাত্রী বলতে শুধু মাত্র দুজন।একজন নাকি সম্পর্কে আমার মামাশ্বশুর হোন।উনিই বিয়ে টা দিয়েছেন আমার সাথে,আবার আমি সালাম দিলে আমার হাতে দুশো টাকাও দিয়েছেন।আরেকজন আমার স্বামীর বন্ধু। তাকেও খুব একটা সুবিধের মনে হলো না আমার।কেমন করে যেন তাকাচ্ছিল আমার দিকে,যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।খুবই নোংরা সে চাহনি। পাশের গ্রামেই হওয়ায় হেঁটেই আসলাম আমরা।মাঝপথে এসে আমার মামাশ্বশুর বিদায় নিয়ে চলে গেলেন,ওখানেই নাকি উনার বাড়ি।আর বললেন বাড়িতে গিয়ে আমাদের জন্য রাতের খাবার আজ উনার বাসায় থেকে কারও মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবেন।
রাত প্রায় আটটার দিকে আমাকে নিয়ে উনি উঠলেন একটা ভাঙা টিনের দোচালা ঘরে।বাড়ি বলতে শুধু ঘরটা ছাড়া আর কোন চিহ্ন নেই। একটা কারেন্টের বাল্ব ঝুলছিল চালাটার সাথে। উঠনে থাকতেই উনার বন্ধু উনাকে সুরুজ বলে ডাকলেন,তখন বুঝলাম উনার নাম সুরুজ। তারপর উনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন, সাথে বিরবির করে কি যেন অনেক ক্ষণ বলে গেলেন। বৈদ্যুতিক আলোয় আমি উনার মুখ দেখলাম, শ্যামলা বর্নের পুরুষ টি দেখতে খুব একটা খারাপ না।আমাকে ঘরে গিয়ে বসতে বললেন। আমিও উনার কথা মতো ঘরে গিয়ে বসলাম। ঘরের মধ্যে আসবাব বলতে একটা মাঝারি সাইজের কাঠের চৌকিখাট। আর একটা টেবিল,তার নীচে কিছু পুরনো হাড়ি পাতিল,ঘরের একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত দরি টানানো,তাতে কিছু কাপড়চোপড় ঝুলিয়ে রাখা।চুপচাপ বসে আছি আমি,তারপর একজন হালকা বয়সী ছেলে এসে খাবার দিয়ে চলে গেলো।আমি উঠে খাবার গুলো প্লেটে বেড়ে রাখলাম। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও উনার কোন দেখা পেলাম না।শেষে আমি অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি।গভীর রাতে ঘরে কারো জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দে ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে দরজার কাছে যেতেই উনি আমার নাম ধরে ডাকলেন। কেয়া কেয়া বলে।ভেতরে ভেতরে একটা ভালোলাগা কাজ করলো,উনি আমার নামও জানেন বলে।শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো করে ঘোমটা টা দিয়ে আমি দরজা খুলে দিলাম।হস্তদস্ত হয়ে উনি ঘরে ঢুকেই আমায় বললেন আমার হাতের চুরি টা খুলতে।চুরি টা আমার মায়ের। আমি উনাকে বললাম কি করবেন? উনি আমার ওপর ধমক দিয়ে বললেন যা বলছি তায় করো।আমিও ভয়ে ভয়ে বালা জোড়া খুলে দিলাম উনার হাতে , সাথে সাথেই উনি খুশি হয়ে বেরিয়ে চলে গেলেন। আমায় বললেন ঘুমিয়ে যেতে। বুক ফেটে কান্না এলো আমার।একটা মেয়ে কতো স্বপ্ন দেখে এই কাঙ্খিত বাসর রাত নিয়ে, কিন্তু আমি যার জন্য এতো স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করছি সেই স্বামী এসেই একটিবার ফিরেও দেখল না আমার দিকে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম আমি।পরদিন ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হলো।প্রায় সকাল আটটা বেজে গেছে, কিন্তু বুঝলাম উনি এখনও আসেন নি।উঠে বাইরে এলাম আমি।চারদিক টা একটু ভালো করে দেখলাম কোন একটা ফাঁকা জায়গায় একটা টিনের ঘর,চারপাশে আশেপাশে আর কোন বাড়ি দেখা যাচ্ছে না।শুধু ঝোপঝাড় ছাড়া।তখন আমি বুঝলাম এটা আমাদের এলাকার তালপুকুর। লোকমুখে প্রচলিত আছে খুব ভয়ং*কর জায়গা এটি।ছোট বেলায় অনেক গল্প শুনেছি এই এলাকা নিয়ে। এর থেকে কিছু টা দূরেই হিন্দুদের পুরনো শ্ম*শান। আমাদের ওখানে একে অন্যকে ভয় দেখাতাম তালপুকুরের কথা বলে,আর সেই তালপুকুরে আমি সারারাত একা একায় ছিলাম! এখন যখন জানতে পারলাম তখনই খুব ভয় হতে লাগলো আমার।তাড়াতাড়ি আবার ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। এভাবে বসেই থাকলাম অনেকক্ষণ।এদিকে বেলা ও অনেক বেড়ে গেলো কিন্তু উনার কোন দেখা নেই। আমার প্রচন্ড ক্ষুধা ও লাগতে লাগল,গতকাল দুপুর থেকে আমি না খাওয়া।তখন টেবিলের ওপর গতরাতে ঐ বাড়ি থেকে আসা খাবারের কথা মনে পড়ল।উঠে গিয়ে দেখি ভাত আর সাথে মলা মাছের চচ্চড়ি আর ডাল।কিন্তু গতকালের হওয়ায় ডাল টা গন্ধ হয়ে গেছে আর সাথে ভাত ও কিছু টা নরম হয়ে গেছে। এদিকে বেলাও প্রায় বারোটা বাজতে চলল উনার দেখা নাই।ক্ষুধার চোটে আমি ঐ গন্ধ হয়ে যাওয়া ভাত তরকারিই খেলাম,যতোটা পারা যায়। আমাকে তো বাঁচতে হবে, তাই তো যা খেয়েই হোক নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।বিকেল চারটার দিকে উনি বাড়িতে আসলেন। হাতে কিছু বাজার।আমি উঠে গিয়ে বাজার গুলো নিলাম রান্না করার জন্য। আর উনি বিছানায় এলিয়ে পড়লেন ঘুমানোর জন্য। আমি বাইরে ভাঙা একটা মাটির চুলো দেখেছিলাম, মনে হয় কতোদিন ধরে মেরামত করা হয়নি।ওটায় ঠিক করে রান্না বসালাম। ভাত আর আলু ভর্তা ডাল রান্না করলাম। রান্না হতে হতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিল।আমি আস্তে আস্তে উঠে উনাকে ডাকলাম, যদিও লজ্জা লাগছিল।এর মাঝে উনার সাথে আমার খুব একটা কথা হয়নি।উনি উঠেই রে*গে গেলেন আমার ওপর।আমি ভয়ে চুপ করে থাকলাম,কিন্তু এবার উনি যা বললেন তাতে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না,
“এই মাইয়া শোন,রাতে সাজগোজ কইয়া থাকবা।একদম পরিপাটি। আমার কিছু বন্ধু আসবো,আনন্দ দিতে হইব তাদের। ”
“কি সব বলছেন আপনি? আপনি আমার স্বামী। আমি আপনার বন্ধুদের আনন্দ দিতে সাজবো কেন?”
“এ্যাহ্! এমন কইরা বলতাছো যেন কচি খুকি তুমি? ঠিকই তো আগেই পরপুরুষ ঘরে নিয়ে থাকতা।এখন সতি সাজো? আর আমার বন্ধু গোর বেলায় সতীগিরি? শোন,এমনেই তোমার মতো বেহুদা মেয়ে মানুষরে বিয়া করিনি,আমি যা কই সব ম্যাইনা চলতে হইবো।”
“দদেখুন,আপনি যা শুনেছেন সব মিথ্যা, সব চাচীর চক্রা*ন্ত। আমি এমন নই।আর আমি আপনার বিয়ে করা স্ত্রী, আপনি কি করে আপনার বন্ধুদের আমার কাছে পাঠাতে পারেন।এসব পাপ!”
“আজাইরা জ্ঞান দিতে আইসো না তো।ম্যাইয়া মানুষের এতো জ্ঞান ভালো লাগে না।আর এমনিতেও তোমারে বিয়াই করছি তো এর লাইগা, আগে টাকা দিয়া মাইয়া মানুষের কাছে যাওয়া লাগতো,আর ওহন ঘরেই পামু।সেই সাথে শালার বন্ধু বান্ধবগোর কাছ থ্যাইকাও কিছু রোজগার করা যাইব।আমাগো দুজনের খুব ভালো মতো চইলা যাইবো।”
“ছিহ্! কি নোংরা মনমানসিকতা আপনার? কতো নীচু মনের মানুষ আপনি! কি করে নিজের স্ত্রী সম্পর্কে এমন ভাবতে পারেন? প্লিজ এমন করবেন না,বাবা মা না থাকা এতিম মেয়ে আমি,একটু ভালো করে বাঁচতে দিন আমায়।আপনি দিনে একবার খাবারের জোগাড় করতে পারলে একবারই খাবো,না হলে না খেয়ে থাকবো,তাও অন্তত এমন অবিচার করবেন না আমার সাথে। খুব সুন্দর সুখের সংসার করব আমরা।”
“এই রাখ তো তোমার নীতিকথা। এইগুলায় আমার প্যাট ভরবো না,আমার চাই টাকা।অনেক টাকা।এমনেই রাতে জু*য়ায় হারছি মেলা ট্যাকা।তাতে আবার আসছো জ্ঞান দিতে। ঐ টাকা গুলান আমার তুলতেই হইবো ওদের কাছ থ্যাইকা।বেশি কথা কইলে কিন্তু হাত উঠবো।”
“আপনিও শুনে নিন,আপনি যা চাচ্ছেন তা কিছুতেই পূরণ হতে দেবো না আমি।”
সাথে সাথেই উনি এসে আমায় চুল ধরে মা*রতে লাগলেন। একহাতে আমার চুলের গোছা আরেক হাতে ইচ্ছেমত চ*ড় থা*প্পড় দিতে লাগলেন । তারপর জোরে বিছানায় আমায় ঠেলে ফেলে আমার শাড়ি টেনে পুরোটায় খুলে ফেললেন। জানো*য়ারের মতো আমার গায়ের ওপর পড়ে ইচ্ছে মত আ*চড়, কা*মড় দিতে লাগলেন আমার শরীরে। য*ন্ত্রণায় ছট*ফট করতে থাকি আমি।এমম সময় উনার ফোনে কেউ কল দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে মুখে একটা বিশ্রী গালি দিয়ে উঠে গেলেন। আর আমায় শাসিয়ে গেলো তৈরি হয়ে থাকতে।দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে উনি চলে গেলেন। একা একা কাঁদতে থাকলাম আমি।যেখানে বিয়ের প্রথম রাত,প্রথম দিন স্বামীর ভালোবাসায় আদরে ভরে থাকার কথা ছিল,সেখানে আমার কপালে শুধুই দুঃখ! কিন্তু একটা জিনিস বুঝে গেলাম আমি,সামনে আমার ওপর আরও ভ*য়ানক কিছু আসতে চলেছে।আর তাই আমার দূর্বল হলে চলবে না।আমি দূর্বল হলে অনেক কিছু হারাতে হবে আমার।আর যেহেতু আমার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নায়,তাই আমার নিজেই নিজের পাশে দাঁড়াতে হবে।তাই তো রান্না করার সময় যে বড় ব*টি টা ছিল,ওটা এনে নিজের কাছে রাখি।আর না ঘুমিয়ে বসে থাকি নিজের ভাগ্যের পরিনতি দেখতে। রাত হয়ে যায় , এখন আর কল্পিত ভূতের ভয় আমার লাগছে না।এখন মানুষ নামক দৈ*ত্যের ভয়েই ভীত আমি।প্রায় দশটার দিকে বাইরে কিছু লোকের কথা শুনতে পেলাম। আর আমি আরও বেশি সচেতন হলাম।দরজা খুলে প্রথমেই প্রবেশ করল আমার স্বামী নামক অমানুষ।তারপর ওর সেই বন্ধু, যে বিয়ের রাতে বাজে ভাবে দেখছিল আমায়।আরও দুজন ঢুকল ওদের সাথে। সুরুজ মানে আমার স্বামী বলল,
“আরে ওই তো জাইগায় আছে আমগো জন্যে।দেখছিস কতো লক্ষী বউ আমার।ওহন ও আমার টেস্ট করা হয়নাই।তোদের মইধ্যে কে আগে যাবি কো? বেশি টাকা কিন্তু দিতে হইবো তার।”
“খবরদার! এক পা ও কেউ আগাবে না।একেবারে কো*প মে*রে কে*টে ফেলব।দূরে থাকো সবাই। ”
“এই এই মাইয়া,কি করতাছস।তখন দেওয়া ঔষধ বুঝি কম হয়ছে? ফেল ঐ টা হাত থ্যাইকা ফেল।নাইলে কিন্তু খবর আছে।”
“এক পা এগিয়েই দেখেন,কি করি।কিছুতেই আমি আপনাদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না।আগে আপনাদের কো*পাবো,পরে নিজেকে।কিন্তু তবুও আমি এসব করব না।”
আমার স্বামী তবু্ও আমার দিকে এগোতে লাগে আমার হাত থেকে ব*টি টা নেওয়ার জন্য। আর তখনই এক কো*প দেই উনার ডান বাহু বরাবর। র*ক্ত গলগল করে বেরোতে থাকে উনার পেশী থেকে।বাকী দুজন ভয়ে দৌড় দেয়।আর ওর বন্ধু ওকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এই সুযোগে আমি পালায় ওখান থেকে। রাতের আধারে তালপুকুর, শ্ম*শান সব কিছুর ভয় তুচ্ছ করে পালায় আমি।তারপর ভাবি কোথায় যাব? চাচার বাড়ি? কিন্তু ওখানে গেলে এমনিতেই আমি বোঝা তারওপর এমন কান্ড করেছি শুনলে চাচী আমায় ঘাড় ধরে বের করে দেবেন।তারথেকে অন্য কোথাও যেতে হবে আমার।কিন্তু আমার এসএসসি পাশের আর ইন্টারের সার্টিফিকেট, কাগজ পত্র আনতে হবে।কারণ জীবনে বাঁচতে হলে আমায় লেখাপড়া করতেই হবে।তাই তো চাচির বাড়ি যাই আমি।তারপর গোপনে যেই রাস্তা টা দিয়ে হারুন ভাই আমার ঘরে ঢুকতো,ওটা দিয়ে ভেতরে ঢুকি আমি।আর নিজের যেটুকু কাপড়চোপড় ছিল সেগুলো একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে কাগজপত্র গুলো নেই।তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে আসি আমি।জীবনের সম্পূর্ন আলাদা ঠিকানায়। যেখানে কেউ নেই আমার সাথে।সম্বল বলতে গলায় মার একটা মোটা হার আছে যেটা অনেক ঝগড়া করে হাফসা চাচীর কাছ থেকে নিয়ে দিয়েছে।আর সুরুজ ও মনে হয় কাপড়ের নিচে থাকায় খেয়াল করে নি।আর আছে সুরুজের মামার দেওয়া দুশো টাকা।কিন্তু কোথায় যাব ভাবতেই মাথায় আসে বিউটি আপার কথা । উনি আমাদের গ্রামেই থাকেন আর আমায় খুব স্নেহ করেন।আমি বিউটি আপার বাড়িতে যাই। আপা ডিভোর্সি ছিলেন তাই একায় থাকতেন।আমি দরজায় বেশ কয়েকবার ডাকতেই উনি খুলে দেন।পুরো ঘেমে একাকার আমায় দেখে এভাবে উনি অবাক হয়ে যান।পরে আস্তে আস্তে আমি উনাকে সবটা খুলে বলি।আপা শুনে আমায় সাহস দেন।আর আমায় বলেন রাতের মধ্যেই ঢাকায় চলে যেতে।যেহেতু সুরুজ কে আমি কো*প মে*রেছি তাই ওর কোন ভালমন্দ কিছু হয়ে গেলে পুলিশ কে*স হয়ে যাবে। আর দিন হয়ে গেলে লোক জানাজানি হয়ে যাবে আমি এখানে আছি,তাহলে অবস্থা আরও খা*রাপ হতে পারে। বিউটি আপা রাতেই আমায় গোসল করালেন,তারপর ভাত খেতে দিলেন।টেনশনে আর ভয়ে ক্ষুধা হারিয়ে গিয়েছিল আমার তবুও আপার জোরাজোরি তে খেতে হলো ।তারপর উনি উনার বিছানায় ঘুমুতে বললেন আমায়।শেষ রাতে চারটার দিকে আপা আবার ডেকে তুললেন আমায়।তারপর নিয়ে স্টেশনে আসলেন আর ঢাকায় ট্রেনে তুলে দিলেন আমায়। সাথে একটা ঠিকানা দিলেন উনার এক বান্ধবীর,যে গার্মেন্টসে কাজ করে।উনার কাছে বিউটি আপার নাম বলে সাহায্য নিতে বললেন।অবশেষে ঢাকা আসি আমি,আসার সময় বিউটি আপা কিছু টাকাও দিয়েছিলেন।উনি দর্জির কাজ করতেন,তা থেকেই রোজগার করে নিজের আর অসুস্থ মায়ের খরচ চালাতেন।একদম নতুন শহরে একা আমি চলে আসলাম। তারপর অনেক ঠোকর খেয়ে, অনেক জায়গায় ঘুরে,কখনও না খেয়ে থেকে মানুষের অবহেলা পেয়ে আজ আমি এ জায়গায়। এখন আমি সবচেয়ে ভালো জীবন পেয়েছি।টিউশনি করি,হাতের কাজ করি যা পাই কলেজ খরচ,মেস ভাড়া দিই, হাতে কিছু থাকলে খাই, নয়তো পানি খেয়ে শান্তির ঘুম ঘুমায়। তবে খাবার কিনতে না পারলেও স্লিপিং পিল কেনার টাকা আমায় রাখতে হয়।নয়তো আজও সেই অতীতের বাজে স্পর্শ আর ভ*য়াবহ রাতের কথা মনে করে ভয়ে কুকিয়ে যায় আমি।এখন তোমারাই বলো,কি করে এমন জঘন্য অতীত নিয়ে আমি বাঁধনের মতো পবিত্র মানুষের সামনে দাঁড়াব? যেই চুলে উনি ডুবে যেতে চেয়েছেন,একদিন এই চুলেরই গোছা ধরে কেউ বেদম মে*রেছে আমায়।আমি কি করে ভুলবো? যখন উনি মুগ্ধ হয়ে আমার চুল ছোঁবেন, বিশ্বাস কর,আমার মনে হবে এই বুঝি খপ করে ধরে আঘাত দেবেন।আমি কোন অনূভুতি পাবো না উনার ভালোবাসায়,বরং উনি কষ্ট পাবেন।উনি পবিত্র, আর আমি কল*ঙ্কিত। উনি পরিশুদ্ধ, আর আমি নোংরায় ভরা।তাই তো আমার এ নোংরা জীবনে আমি কাউকে জড়াতে চাই না।”
চিঠি টা পড়ে চোখের পানি মুছলো বাঁধন। ছোঁয়া আজ সকালে পুরো চিঠি টা পড়ে বাঁধন কে ডাকে ওদের বাড়ি।তারপর বাঁধন আসলেই এগিয়ে দেয় চিঠিটা পড়তে। নয়ন ভরা জল নিয়ে চিঠি টা পড়ে বাঁধন। ছোঁয়া আস্তে আস্তে বাঁধনে কাছে এসে হাতে হাত রেখে বলে,
“আপনি কিছু বলবেন না ভাইয়া? ”
“হুম বলবো।তবে এখানে নয়,যা বলবো তা ওর সামনেই বলবো।চল আমরা এক্ষুনি কেয়ার কাছে যাব।”
“আচ্ছা ভাইয়া চলুন।তবে প্লিজ ভাইয়া অভাগী টাকে কোন দোষ দেবেন না।প্লিজ ভাইয়া ওকে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন দিন।এসব অতীতের জন্য ওকে ছেড়ে যাবেন না।”
“ছোঁয়া, তুমিও কি পাগল হলে? আমার কি করা উচিত তা আমি ভেবেই নিয়েছি।এখন চলো আমার সাথে। ”
“আচ্ছা ভাইয়া চলুন।”
বলে ছোঁয়া আর বাঁধন কেয়ার মেসের দিকে যায়।আজ ছোঁয়া কলেজে যায়নি,বাঁধন কে আসতে বলেছে বলে।আর স্বাধীন কে ফোন করে বলে কলেজে কেয়া আছে নাকি দেখতে।স্বাধীন জানায় কেয়াও আজ কলেজে যায় নি।তাই ওরা কেয়ার মেসের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।,,,,,
চলবে,,,,,,