তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান পর্ব_৮,০৯

0
254

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_৮,০৯
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা
০৮

৯.
“কি করো ফাবলীহা?”
“কি খাবে ফাবলীহা?”
“ফাবলীহা? ওও ফাবলীহা।”
রাস্তায় মাঝেমধ্যে দেখা যায় রিকশা করে যেতে যেতে মাইকে বিজ্ঞাপন দেয়, “তেইল্লাচোড়া মরবে, টিকটিকি মরবে। লাফাইয়া লাফাইয়া মরবি। চিত হইয়া মরবে, চ্যাপ্টা হইয়া ডিগবাজী খাইতে খাইতে মরবে। ইদুরের বংশ, গর্বিত বংশ। মাথার উপরে উঠে নাচে।”

ফাহাদের ফাবলীহা ফাবলীহা সারাদিন আমার তেমনই লাগে। ফাহাদও যেনো আমার মাথায় উঠে নাচছে। গর্ভবতী পেট চিপা ইঁদুর একটা। অথচ সে নিজেকে কোক স্টুডিও বিডির গায়ক মনে করছে। তার সাহস দেখে আমি অবাক। আমার সঙ্গে শুধু কথা বলছে না, রীতিমতো আমার কোলে এসে বসে জায়গা নিতে চাইছে। আর তার মা-বাপ সহ আমার মা-বাপ তা দেখে মুচকি মুচকি হাসে। এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দামড়া যে কবে যাবে আল্লাহ জানে।

“ফাবলীহা, আমি বাইরে যাচ্ছি। তোমার কিছু লাগবে?”
আমি ভ্রুজোড়ায় কাঠিন্য এনে চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আর একবার জিগ্যেস করলে, প্রমিস! আমি এই ছেলের ইজ্জতে হাত দেব। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম ট্রাউজারের গিঁট ঝুলছে। টান মারলে কি অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে ট্রাউজার মেঝের সংস্পর্শে আসবে?
হাত থেকে কলমটা রেখে হাতটা খানিক উপরে তুললাম।
“ওর জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো। চকলেট আইসক্রিম। ফাবলীহার চকলেট আইসক্রিম অনেক পছন্দ।”
ফাহাদ, আমি দুজনেই আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু দরজার কাছে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাটি বললো। আবার মুচকি হেসে চলে গেলো।
ফাহাদ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“আরও কিছু প্রয়োজন হলে কল করে জানিও।”
বলেই সে আমার রুম থেকে প্রস্থান নিলো। আমি হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিলাম।
কিন্তু পরিস্থিতি তো হাতের বাহিরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে আমার হবে না। কি করা যায়, কি করা যায়?
তুশিরার সঙ্গে কথা বলতে হবে। চাঁদনী ভালো বুদ্ধি দিতে পারতো কিন্তু সে এখন ফাহাদের একনিষ্ঠ শালিকা ও ভদ্র রাইস কুকার। তাই তার সঙ্গে আমার সাময়িক ব্রেক-আপ চলছে। ঘর থেকেও টোকা মেরে বের করে দিয়েছি (যদিও সে নিজেই গেছে, হোস্টেলে ওর বোন এসেছে)। পরে ভেবেচিন্তে গ্রহণ করা যায় কি-না দেখবো।
আমি তুশিরাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিলাম।
কান্নাভেজা ইমোজি দিয়ে তার ইনবক্স আকাশে বাতাসে ধোঁয়াশা করে দিলাম।
“দোস্ত।”
“বল।”
“কি করিস?”
“পড়ি।”
“এমন রোবটের মতো কথা বলছিস কেন? ডাকাত আঙ্গুল কেটে নিয়ে গেছে?”
“ঘুম থেকে মাত্র উঠেছি দোস্ত। আম্মু পানি ঢেলে তুলেছে। তুলেই বক-ঝকা করে পড়ার টেবিলে বসিয়ে গেছে। এখন আমি চোখের সামনে তারা বাতি দেখি। মাথা ঘুরায়। প্রেশার ফল করেছে বোধহয়।”
“প্রেশার বাড়া দোস্ত, প্রেশার বাড়া। দরকার হলে হাঁসের ডিম খা। কাজ না হলে নাহিয়ানকে বাসার নিচে ডেকে আন।”
“ওকে ডাকবো কেন? তার সঙ্গে প্রেশারের সম্পর্ক কি?”
“সে আসলে তার থেকে পাপ্পি ধার নিবি। ফিল্মে দেখিস না, দুই ফুট দূর থেকে উমম করে চুমু দিলেই হার্টের রোগীর মতো হার্টবিট বেড়ে যায়? তেমন যদি তোর প্রশার বাড়ে অযথা টাকা খরচ করে হাঁস-মুরগির আন্ডা খাওয়ার প্রয়োজন কি।”
“চুপ কর, ছিঃ! প্রেশারের জন্য আমি এখন ওকে ডেকে এনে তার চুমু খাবো? বেয়াদব!”
“হোয়াট ছি? জামাই নিয়ে তুমি বিভীষিকাময় স্বপ্নদোষে আক্রান্ত হতে পারো আর আমি বললেই দোষ।”
“আমার চুমু খেয়ে প্রেশার হাই করার কোনো শখ নেই। তোমার দরকার হলে তুমি তোমার বাপের ঠিক করা ঝুনঝুনিওয়ালার কাছে গিয়ে খাও।”
আমি ওয়াক করার ইমোজি দিয়ে অফলাইনে চলে এলাম। এর মাঝে কলিংবেলের আওয়াজ হলো। নিশ্চয়ই ওই ফাহাদ এসেছে।
অনুমান ঠিক হলো, ‘ফাবলীহা ফাবলীহা, আইসক্রিম খাবা’ গান শুরু হয়ে গেছে। এই বেটা ছাগল কবে যাবে?

(চলবে)

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_৯
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

১০.
আম্মু সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে আমার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। আমি দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নসিলায় বয়মে চামচ দিয়ে অবশিষ্ট ননসিলাটুকু জান-জীবন দিয়ে বের করে জিহ্বার চাহিদা মেটাচ্ছি।
“ফাবলীহা দেখ তো তোর আন্টি উঠেছে কি-না।”
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
আম্মু ঘাড় কাত করে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি হলো যা।”
আমি বিরক্ত কণ্ঠে বলে ওঠলাম,
“এরা যায় না কেন? এতিমের মতো এসে থাকছে তো থাকছেই। ঘরবাড়ি কি নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে? কীর্তনখোলা নদী ডুবিয়ে নিয়ে গেছে?”
আম্মু আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
আমি পাত্তা না দিয়ে বললাম,
“দশ বছরের একটা মেয়েকে বরিশালের কোনো এক বাড়ি রেখে এসে জামাই-বউ দিব্বি ঘোরাঘুরি করছে। সাথে নিয়ে এসেছে মাঝারি এক ছাগল। তুমি হলে আমাকে ছাড়া থাকতে বলো?”
আম্মু খাবার আমার টিফিন বক্সে ভরতে ভরতে বললো,
“তোর মতো সবাই ফার্মের মুরগি না। সাকেরা ছোট হলেও নিজের দেখাশোনা করতে পারে। গায়ে-গতরেও তোর থেকে বড় মনে হয়। আর তুই কী? হাড্ডি ছাড়া শরীরে আর কিছুই দেখা যায় না।”
“না, আমার মতো ফার্মের মুরগি তো না। মায়ের মতো কানাডিয়ান হাতি।”
আম্মু আমার পিঠে আলতো করে থাপ্পড় মেরে বললো,
“বেয়াদব মেয়ে। বড়দের এভাবে বলে? যা জামাকাপড় পরিবর্তন কর। কলেজ যাবি না?”
আমি মুখ কালো করে আমার রুমের আসার উদ্দেশ্যে পিছন ফিরলাম। পিছনে ফিরে দেখি আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুও উনাকে দেখলেন। আমি তাকাতে উনি সঙ্গে সঙ্গেই অন্যদিকে চলে গেলেন।
আমিও আমার রুমে চলে এলাম।

কলেজের জন্য তৈরি হয়ে যাওয়ার সময় আম্মুর কাছে টাকা চাইলাম। নীলক্ষেতে প্র্যাকটিক্যাল বই-খাতা আনতে যেতে হবে। কিন্তু আমার মা-বাবার তো সুস্থ জিনিস সুন্দরভাবে করার তরিকা জানা নেই। তাই তারা ফাহাদকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বললো। সে আমাকে হাতে ধরে ধরে বই কেনানো শেখাবে, দামাদামি করা শেখাবে।
আব্বু ফাহাদকে নমনীয় স্বরে কাছে ডেকে বললো,
“ফাহাদ, তুমি ফাবলীহার সঙ্গে যাও। ও তো কেনাকাটা কিছু বুঝে না। বই কিনে দিয়ে চলে এসো।”
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“নাকি আজকে কলেজে যাবে না ফাবলীহা? বই-খাতা কিনে এরপর দুজন না হয় ঘুরে এলে।”
আমি টাকা আব্বুর কাছে ফেরত দিয়ে দিলাম। বই-খাতা গর্তে যাক, প্র্যাকটিক্যাল চাঁদের পাহাড়ে উঠুক। আমার কিছু লাগবে না!

ওমা! আব্বু সুন্দর করে টাকাটা ফাহাদের হাতে দিয়ে বললো,
“নাও বাবা। তোমার কাছে রাখো। ফাবলীহা হারিয়ে ফেলতে পারে। হয়তো দেখা যাবে টাকা কোথায় রেখেছে ওর মনেই পড়ছে না। এতো ভুলোমনা মেয়েটা।”
আমি কোমরে হাত রেখে খানিক ঝুঁকে দাঁড়ালাম। চোখ ছোটো ছোটো করে বললাম,
“আপনি যেন কে? চেনা চেনা লাগছে? আমার জন্মদাতা পিতা অনেকটা আপনার মতো দেখতে। জিরাফের মতো লম্বা, গরুর মতো ডাগর ডাগর চোখ, চাকমার মতো ল্যাপ্টানো নাক। আর..”
আমি মাথা কাত করে আমার আব্বার মতো দেখতে ব্যক্তিটিকে দেখায় ব্যস্ত, তখন লোকটি হুংকার ছেড়ে ওঠলো,
”এককালে পোলাপানের মা দাম দিলো না, এখন পোলাপান দেয় না। কপাল!”
আমি লাফিয়ে ওঠলাম,
“ইয়েস, কপাল! এ যেনো কপাল নয়, চোরা বংশের মহারাজ চোরাইঙা বল্লভের ললাট। আহা, এই তো মিল খুঁজে পেয়েছি।”
আম্মু হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে আমাকে ধমকের সুরে বললো,
“দেরি হয়ে যাচ্ছে ফাবলীহা। তাড়াতাড়ি বের হও।”
আব্বু হতাশ নয়নে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“কৃতার্থ মানবী। অনেকগুলো ধনেপাতা।”
আমি ফাহাদের দিকে তাকালাম। সে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঢোঁক গিলে এরপর আব্বুর দিকে তাকালো।
বাটপার! এমন ভাব করছে যেন আমার কথাবার্তা শুনে সে ভীষণভাবে ভীত। ঠ্যাঙ্গা!
ফাহাদ থেকে চোখ সরিয়ে
আমি তীক্ষ্ণ চোখে আব্বুর দিকে তাকালাম।
তখন ফাহাদের মা এসে বললো,
“ফাহাদ যেতে পারবে না। ওর কাজ আছে।”
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
“কি কাজ আম্মু?”
উনি কিছু না বলে গম্ভীর মুখায়বে চলে গেলেন।
ফাহাদও উনার সঙ্গে সঙ্গে গেলো।

কয়েক মিনিট বাদেই দুজনের দেখা পেলাম। উভয়ের মুখই দেখলাম কালো হয়ে আছে। ফাহাদ একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এসব নাটক দেখে আমার মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছিলো। অসংগত আচরণ করে বসি কি-না তা ভাবছিলাম না, ভাবছিলাম করেই বসি! বেশি ভালো, বোকাসোকা সেজে সাপের বৈশিষ্ট্য ধারণ করার চেষ্টা এই মা-ছেলেকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেই। সেইসাথে আমার মা-বাবাকেও।
ফাহাদের মা বললো,
“অনেক তো রইলাম ভাই। আজকে আমরা চলে যাবো।”
বলেই তারা অন্য রুমে যেতে আম্মু আব্বুর কাছে বিচার দিতে শুরু করলো,
“তোমার মেয়ের মুখে তো কথা আটকায় না। অসভ্য একটা। সকালে কি কি বলছিলো, তা ভাবি শুনেছে নিশ্চয়।”
আব্বু আমাকে চওড়া গলায় ডেকে ওঠলো,
“ফাবলীহা!”
আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম,
“বলো, শুনছি। শোনানোর আগে উত্তর দাও। অসভ্য কে?”
আম্মু আমার কাছে এগিয়ে এসে রাগান্বিত গলায় বললো,
“তুই চোখ রাঙিয়ে কথা বলছিস!”
আম্মুর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে আমার তরতর করে রাগ বৃদ্ধি পেলো।
“অসভ্য কে! আমি? আমি বাহির থেকে ছেলে ভাড়া করে এনে সারাদিন গা ঘেঁষাঘেঁষি করি? আমি বই কিনার বদলে বাহিরে গিয়ে ফষ্টিনষ্টি করতে বলি? না, বাপ-মা ঘরে ছেলে ডেকে এনে কিছু করালে তা ভালো কর্ম, আর মেয়ে বাইরে গিয়ে করলে তা নষ্টামি? নষ্টামি কোনটা!”
টেবিলে একটা ফ্লাওয়ার বাস ছিল। সেটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

১১.
কলেজ শেষে কলেজ ড্রেস পরিহিত অবস্থাতেই রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি। মাথার মধ্যে ফাহাদের খর্খরে গলা বেজে যাচ্ছে। তুমি বন্ধু কালা পাখি আমি যেনো কি।
ত্যাঁদড় ছেলে!
সামনে দিয়ে কলেজের একটি সুন্দর মুখশ্রীর ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। চাঁদনী আমাকে ঝাঁকি দিয়ে বললো,
“দোস্ত দেখ দেখ, পোলাটা কতো সুন্দর না?”
এরপর মুখ বিকৃতি করে বললো,
“ছ্যাহঃ, তোরে কেন দেখাই। তোর তো ফাহাদ আছে।”
আমি ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম। একটু পর অন্য কলেজের কয়েটি ছেলে একসঙ্গে সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চাঁদনী আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে তার বগলের তলায় ঢুকিয়ে দেখালো,
“দোস্ত দেখ দেখ, এই পোলাটা। ওই যে মাঝখানেরটা। ওই যে লাল কালার ব্যাগ.. এক সেকেন্ড।”
বলে সে সন্দিহান ভঙ্গিতে থেমে গেলো। এরপর আমার মাথা ধরে আবার অন্যদিকে ঘুরিয়ে বিগলিত হেসে বললো,
“তোর কেন দেখাই? তোর তো ফাহাদ আছেই। হে হে হে।”
চাঁদনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তুশিরাও হাসলো। আর আমি চিৎকার করে ওঠলাম।
“ধুর, ধুর, ধুর! সব খারাপ। সব নষ্ট। সব এলোমেলো।”
রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ইটটাকে পা দিয়ে বারকয়েক আঘাত করলাম।
তুশিরা হেসে বললো,
“এগুলো কেমন জাতের গালি? সব নষ্ট মানে?”
“তুই ভাবতে পারছিস? কেমন ডাবল ফেইস মানুষ। এতোদিন মুখ দিয়ে বুলিই বের হয় না। মনে হতো এখনও ক খ অ আ শিখিয়ে মুখ দিয়ে কথা বের করতে হবে। তোদের সঙ্গে প্রথম যখন দেখা হয়েছিল তখন কেমন ভাব ধরেছিল মনে আছে? মনে হয়েছিল বেচারা প্রস্রব বেদনায় কাতরাচ্ছে। আর আমরা তাকে সিজার করতে না দিয়ে মাটিতে শুয়ে টান দিয়ে বাচ্চা বের করতে চাইছি। কিন্তু ওইদিন! মাই গড, আন-ফ্রিকিং বিলিভাবল!”
চাঁদনী বুকে হাত রেখে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
“ফাহাদ জানু তো আমারে সবচেয়ে বড় ছ্যাঁকাটা দিছে। বাচ্চার মা হতে চাইলাম, মামী বানাইয়া চইলা গেলো।”
তুশিরা কনুই ভাঁজ করে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমিই কিন্তু একমাত্র ব্যক্তি যে ফাহাদকে প্রথমে দেখে পছন্দ করেছিলাম। আর তোরা আমাকে অপদস্থ করে কতো কিছু বলেছিলি।”
“আমি সিরিয়াস তুশিরা। তুই ভাব একটা মানুষ কিভাবে এরকম ফেইক হতে পারে। এটা মোটেই হাসিঠাট্টা করার মতো কোনো বিষয় নয়। এরকম দ্বৈত মুখোশ নিয়ে ঘোরার ছেলে কতটুকু ভালো হতে পারে? এই ছেলের প্রতি প্রথম থেকেই আমার নেতিবাচক একটা অনুভূতি ছিল। রিজওয়ানের সময়ও আমি বলিনি? তুই কিন্তু এই ছেলের সময়ও পায়জামা কাঁধে তুলে নেচেছিলি।”
চাঁদনী মুখ বাঁকিয়ে তুশিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ছিঃ, অশ্লীল। জামাকাপড় খুইলা ফেলে।”
আমি হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ফাহাদ রেস্টুরেন্টের ঘটনার পর থেকেই যা শুরু করেছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত আব্বু অবধি পৌঁছাতে পারলে আমার বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না। আটকানো যায়, মাঝখান দিয়ে এক ছেলের পিছু ছুটানোর জন্য আমার মা-বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ করতে হবে।
সব সুন্দর সম্পর্কই তৃতীয় কোনো বর্বরের অনুপ্রবেশের জন্য নষ্ট হয়। প্রচন্ড হতাশ লাগছে।
চাঁদনী আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
“থাক দোস্ত মন খারাপ করিস না। আয় আমরা আরও পরিকল্পনা করি।”

আমরা পাশেরই একটা টংয়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। পাশাপাশি দুটো টং। পাশেরটাতে লোকজন ভর্তি। এটাতে আমরা তিনজনই শুধু।
তিনজন তিনটা কলা নিয়ে বসে আছি।
তুশিরা চিন্তামগ্ন ভঙ্গিতে বললো,
“আচ্ছা ফাহাদকে যদি উষ্টা মেরে ফেলে দেই?”
চাঁদনী হাত উচিয়ে বললো,
“রাতে ভূতের ভয় দেখাইয়া হার্ট ফেইল করাইলে?”
আমি দুজনকে থামিয়ে বললাম,
“তোর মনে হয় এই শালার হার্ট ফেইল হবে? ভূতের সঙ্গে যদি একে বেঁধেও দেই, তা-ও দেখবি দিব্যি সুস্থ।”
তিনজন আবারও গভীর চিন্তায় ডুব দিলাম। সেই সময় একটা ইলেকট্রনিক ব্লু রঙের ভলভো এসে টংয়ের বরাবর রাস্তায় এসে থামলো। গাড়ি থামতেই ফরমাল ড্রেস পড়া একটা ছেলে অপরপাশ থেকে বের হয়ে এলো। এপাশে, অর্থাৎ আমাদের অবস্থানের বরাবর দরজার নিকট এসে দরজাটি খুললো। মধ্যবয়সী একজন মহিলাকে দেখা গেলো। মহিলাটিকে অত্যন্ত দুর্বল বলে বোধ হচ্ছে। ছেলেটি মহিলাটিকে আলগোছে ধরে গাড়ির বাহিরে পা ঝুলিয়ে বসিয়ে দিলো। সে ঘুরে আমাদের টংয়ের দিকেই দ্রুত পদক্ষেপে ছুটে আসে। আমার সঙ্গে একবার চোখাচোখি হলো। সন্তর্পণে দৃষ্টি সরিয়ে দোকানদারকে টাকা দিয়ে কেক, আর বন কিনল। ফেরত যাওয়ার সময় আরও একবার দৃষ্টির আদান-প্রদান হলো। মূলত আমিই ভেটকি মেরে তাকিয়ে ছিলাম বলে চোখে চোখ পড়লো। পাশে ফিরে দেখলাম চাঁদনী ও তুশিরা দুজনই অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে ছেলেটিকে দেখছে। আমি বাহু দ্বারা তুশিরাকে একটা ধাক্কা মারলাম।
“লজ্জা করে না বান্ধবীর হবু স্বামীকে এভাবে ডেপ ডেপ করে দেখছিস?”
তুশিরা অবাক হয়ে বললো,
“হোয়াট!”
আমি চোখের অদৃশ্য পানি অনবরত মুছার ভঙ্গি করে বললাম,
“এই ছেলেটিকে চিনিস? পাঁচ বছরের প্রেম আমাদের। টিফিনের পাঁচ টাকা, দুই টাকা জমিয়ে ওকে দিতাম। নিজে না খেয়ে সেই খাবার ব্যাগে ভরে এনে ওকে খাইয়ে দিতাম। এতো মধুর প্রেম, এতো মিষ্টি ভালোবাসা হেরে গেলো শুধুমাত্র কয়েকটা টাকার নোটের কাছে। কি আছে এই নোটে? ফু দিলে উড়ে যায়, আগুনে দিলে ঝলসে যায়। অথচ, অথচ আমি জানতাম আমাদের ভালোবাসা লোহার থেকেও মজবুত।”
বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললাম,
“এই বিরহ, আহ! বুকে ব্যথা পাচ্ছি। হার্ট অ্যাটাক, হস্পিটাল। টেইক মি টু ডক্টর।”
তুশিরা আর চাঁদনী উভয়ই মুগ্ধ ভঙ্গিতে আমার অভিনয় শেষে হাত তালি দিলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটি মহিলাটিকে খাইয়ে কোনো কিছুর ঔষধ খাওয়াচ্ছে। খুব সম্ভবত মহিলাটির প্রেসার বা সুগারে সমস্যা হয়েছিল। গালে হাত দিলে ভাবলাম ইশ, এই মিষ্টি ছেলেটাকে যদি সত্যিই বিয়ে করতে পারতাম।
পাশের টংয়ের লোকজন হঠাৎ গমগম করে ওঠলো। উঠে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে গাড়িটির দিকে এগিয়ে গেলো।
তারা ছেলেটিকে শাসিয়ে কিছু একটা বলছে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। লোকগুলোর মধ্যে মুরুব্বি গোছের কয়েকজন উপস্থিত। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক দেখতে এবং ছোকরা-বাকরা ধরণের মানুষজনও রয়েছে। হঠাৎ করে ছেলেটির উপর ক্ষেপলো কি কারণে।
একজন ধরে ছেলেটিকে টেনে আমাদের টংয়ের সামনে নিয়ে আসতে লাগলো।
“থাবড়া মাইরা লাল কইরা ফেলমু মিয়া। ফাইজলামি পাইছো? পিরিত করবা, বিয়া করবা না? এই মাইয়াটার লগে তোমার প্রেম ছিল না?”
আমাকে ইঙ্গিত করে একজন কথাটি বলতে আমি চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা গেলাম। সর্বনাশ হয়ে গেছে! আমার বলা ডায়লগ লোকগুলো সত্যি হিসেবে নিয়েছে। এই বুইড়াগুলো আমাদের বাচ্চাদের কথা কেন শুনতে গেলো!

“দেখুন, না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। আর গায়ের থেকে হাত সরান। কাউকে না চেনেই গায়ে হাত দেবেন না। না হয় হিতে বিপরীত হতে পারে।”
ছেলেটি কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট রাগ।
“এই ছেলে তুমি আমারে শিখাও কি করমু না করমু? এই এলাকার চেয়ারম্যান আমি। যা কমু তা হবে। কি বলেন আপনারা?”
টুপি পাঞ্জাবি পরা লোকটির সঙ্গে সবাই সাড়া দিলো। ছেলেটির একপাশে মহিলাটি উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
“আপনারা সত্যিই ভুল বুঝছেন। উনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি উনাকে চিনিই না। আপনারা..”
“দেখছেন দেখছেন মেয়েটাকে কিভাবে ভয় দেখাইয়া রাখছে। মেয়েটা স্বীকার করতেই ভয় পাইতাছে।”
পাশ থেকে ছোকরা টাইপ একজন কথাটি বললো।
আমার গলা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে। এই কি ফ্যাঁসাদে ফাঁসলাম।

“চাচাজান এই ছেলে এই মেয়েরে বিয়ে না করলে আপনার অনুমতি নিয়ে আমিই বিয়ে করবো। তবুও এই ফুলের মতো মেয়ের জীবন নষ্ট করা যাইবো না।”
আমার মাথা ঘোরাচ্ছে। কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে ব্যাপারটা। আমি অসহায়ভাবে চারপাশ তাকাচ্ছি। সবার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এই ছেলে আমাকে বিয়ে না করলে এই কুচকুচে কালো দাঁতের ছোকরাকে আমার গলায় বেঁধে দেবে।
ছেলেটি তার মোবাইল বের করতে করতে বললো,
“বিয়ে করলে ওর মা-বাবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে করবো। আপনাদের এখানে কাজ নেই। বেশি কামলা খাটতে চাইলে আপনারাও আলোচনায় উপস্থিত থাকতে পারেন।”
মুরুব্বির সঙ্গের লোকটি হুংকার ছেড়ে বললো,
“কি বেয়াদব দেখছেন ভাই সাহেব। এই ছেলের লগে বিয়ে দিলে তো মাইয়ার কপাল পুড়বো। এর থেকে ভালো আমার পোলা মফিজের লগেই দেন।”
আমার মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করছে এই বুড়োর দুই পায়ের মাঝখান কষিয়ে এক লাথি দেই। তোর ছেলে মহিজকে গুল্লি মারি!
ছেলেটি কাউকে কল করে ফোন কানে ধরতেই ছোকরাটি ফোন হেঁচকা টেনে নিয়ে গেলো।
“ফোন দিয়ে কি করো মিয়া? বিয়া না করলে নাই। আগে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাও।”
মহিলাটি এতক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। উনি ছেলের পক্ষ থেকে বললো,
“আপনারা কি পাগল? যাচাই-বাছাই না করে বিয়ের জন্য এভাবে জোর করতে পারেন না।”
ওই মফিজ নামের ছোকরাটি আবার বললো,
“কইলাম তো বিয়ে করতে হবে না। ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে।”
উনি হঠাৎ-ই রাগে ফেটে পড়লেন,
“এই অসভ্যের বাচ্চা। তোর মতিগতি আমি বুঝি না? কম বয়সী মেয়ে দেখে বাগিয়ে বিয়ে করতে চাইছিস। এতক্ষণ বিয়ে করতে হবে, বিয়ে করতে হবে; এখন ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে! জুতা চিনিস জানোয়ার!”
“মা তুমি থামো, আমি কথা বলছি না?”
চেয়ারম্যান দাবি করা লোকটি বললো,
“খালা আপনি রাগ করতাছেন কেন? মেয়ের এতো চিন্তা থাকলো ছেলের সঙ্গে এখনই বিয়ে দেন। আমি কাজী ডাকি।”
উনি ধমকের স্বরে বললেন,
“ডাকেন কাজী। এখনই বিয়ে হবে।নাহলে দেখা যাবে এই কুত্তার পায়খানাটা পরে মেয়েটার ক্ষতি করে দেবে। এই কুত্তার পায়খানা সামনে থেকে যা!”
“চাচী রাগ করবেন না।”
“কিসের রাগ! নাম কী তোর? মফিজ? তোর শরীর থেকে গন্ধ আসছে। এখান থেকে সর। এই কালা পায়খানা, আগে গোসল করে শরীরের গন্ধ দূর করে এরপর কাউকে বিয়ে করবি। বুঝছিস!”
ছোকরাটির মুখ অপমানে লাল হয়ে গেলো।
ছেলেটি মৃদুস্বরে বললো,
“মা তুমি চুপ করো না।”
“তাহলে আমি কাজী ডাকি। পাশের রেস্টুরেন্টে চলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো আর বিয়ে হয় না।”

ছোকরাটি অন্যদিকে যেতে নিলে মহিলাটি আবার ধমকে ওঠলো,
“এই টিকটিকির চ্যালা। ফোন দিয়ে যা। আইফোন জীবনে দেখছিস? চালাতে পারবি? প্যান্টের চিপায় ভরে যে নিয়ে যাচ্ছিস?”
ছেলেটি এবার চাপা গলায় তার মাকে থামানোর উদ্দেশ্যে বললো,
“উফ মা!”
ছোকরাটি ফোন দিয়ে চলে গেলো।
আমি এদিকে দৌঁড় দেওয়ার পয়তারা করছি। ফাজলামো নাকি, বললেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি।
তখন চাঁদনী কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“এই পোলারে এখন বিয়ে করবি। নাইলে যদি জীবনে ফাহাদ ফাহাদ লইয়া কাহিনী হুনাস তোর হাড্ডি ভাঙমু আমি।”

____
আধ ঘণ্টার মাঝে অনেক সুন্দর করে আমার বিয়ে হয়ে গেলো। আমার পক্ষে সাক্ষী চাঁদনী ও তুশিরা। উকিল বাবা হলেন চেয়ারম্যান। আমাকে মা মা বলে ডাকতে ডাকতে উনি শেষ। আমি যখন সাইন করলাম, উনি তখন হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন।
আমি হতভম্ব হয়ে পিটপিট করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। বিয়েশাদি শেষে সবাই নতুন বর-কনেকে দোয়া দিয়ে যাচ্ছে। হাতে হাতে নতুন কচকচে নোট গুঁজে দিচ্ছে। টংয়ের দুই দোকানদার বললো,
“আমাদের তো দেওয়ার তেমন সামর্থ্য নেই। তোমাদের জন্য এই গরীবের টংয়ের চা ফ্রি।”
আমার মুখের বাতি নিভে গেলেও তুশিরা ও চাঁদনীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে এলো।
তখন কয়েকজন ছেলে এসে উপস্থিত হলো। ছেলে ও তার মায়ের পাশে হতবিহ্বল চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
চেয়ারম্যান অর্থাৎ আমার উকিল বাপ তাদের সম্পর্কে জিগ্যেস করলে আমার শাশুড়ি বললো,
“এরা আমারই ছেলে। চিন্তা নেই। আপনি আসুন।”
উনিসহ সবাই বিদায় নিলে একটা ছেলে হন্তদন্ত হয়ে জিগ্যেস করলো,
“দোস্ত কি হয়েছে? কি ঝামেলা হয়েছে? আন্টি আপনি ঠিক আছেন?”
ছেলেটি কিছু না বলে নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।
ছেলেটি জিগ্যেস করলো,
“বিয়ে কি হয়ে গেছে? সিরিয়াসলি ভাই! বাংলাদেশের মানুষ!”
আমার দিকে খানিক এগিয়ে এসে চোখ রাঙিয়ে জিগ্যেস করলো,
“নাম কি তোমার?”
আমি কিছু বলার আগেই আমার পাশ দিয়ে বুলেট ট্রেন ছুটে গেলো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদনী ও তুশিরা গায়েব। বেইমান!

“কি হলো, নাম নেই!”
আমি আমার সদ্য সংঘটিত শাশুড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম উনিও রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
এবার আমি অনুচ্চ কণ্ঠে বললাম,
“ফাবলীহা।”
বলেই ভোঁ দৌঁড়! চোখ দুটো বন্ধ করে দিগ্বিদিক ছুটছি। কিছুদূর যেতেই এক পায়ের কেডস খুলে গেলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ছেলেগুলো এই মেয়ে এই মেয়ে বলে এগিয়ে আসছি। আরেক পায়ের জুতা খুলে ওদের দিকে ছুঁড়ে মারলাম। একজনের গায়ে ঠিকঠাক পড়লো। এরপর আবার দৌঁড়। ছুটতে ছুটতে এক গলির মাথায় গিয়ে হাপাচ্ছি। আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
অজানা এক ছেলের সঙ্গে টংয়ের দোকানে বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ে হওয়ার খানিক বাদেই বরের ভাই নাকি বন্ধু দ্বারা দৌঁড়ানি খাচ্ছি। এতো রঙ্গময় জীবন আবার! রংধনুর সাতটি রঙ-ও তো আমার জীবন কাহিনীর সঙ্গে আঁটবে না।
পাশে তাকিয়ে দেখে দুইটা ছাগল আমার মতো জিহ্বা বের করে হাপাচ্ছে।
আমি হুংকার দিয়ে ওঠলাম,
“বেইমান কোথাকার! বান্ধবীকে বাঘের মুখে একা ফেলে আসিস, লজ্জা করে না!”
চাঁদনী হাপাতে হাপাতে বললো,
“সব স্বামীই তার বিবির কাছে টাইগার। এখন আমরা কি করবো?”
তুশিরা কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বললো,
“আর আমি তোর সঙ্গে রাগ করেছি।”
তুশিরাকে ধমকে ওঠলাম,
“তোর রাগের উপর আমি গন্ধযুক্ত পাদ মারি বেয়াদবস! তোর সঙ্গে আমি নাহিয়ানের ব্রেক-আপ না করিয়েছি তবে আমার নামও ফাবলীহা না।”
চাঁদনী ও তুশিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নীরব দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চাঁদনী জিগ্যেস করলো,
“আমি যা ভাবছি তুই-ও কি তাই ভাবতাছস?”
তুশিরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আমি বিরক্তি নিলে তাদের আচার-আচরণ দেখছি।
এরপর তুশিরা ও চাঁদনী একে অপরের গলা জড়িয়ে কান্না শুরু করলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে ইমোশনাল হয়ে গেলাম। আহারে, আমি এগিয়ে যাচ্ছি, আর চাঁদনী বলে ওঠলো,
“এইজন্য আমি অপেক্ষা করেছিলাম? এইজন্য?”
প্রত্যুত্তরে তুশিরা বললো,
“তুই জানিস আমি কতদিন ধরে মুরগি-গরু না খেয়ে নিজের ভুড়ি সংযত রাখছি। শুধুমাত্র এই প্রতারকের বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে খাবো বলে। বালের বয়ফ্রেন্ডের জন্য কে ডায়েট করে।”
“আবার দেখ, রেস্টুরেন্টে নিয়া গিয়া নতুন জামাইকে বলতে পারতো যে আমার বান্ধবীদের এক্সট্রা ট্রিট দাও। কিন্তু কি করলো? নিজে গদমদ করে কাবুল হে, কাবুল হে বলে চইলা আইলো।”
তুশিরা বললো,
“এই আমি এখন বুঝতে পেরেছি!”
“কি, কি?”
“আমরা যেনো ওর বিয়েতে খেতে না পারি সেজন্যই এভাবে বিয়ে করে ফেলেছে।”
“একদম। নাইলে কি ওয় বিয়ার সময় হার্ট অ্যাটাক করতে পারতো না? অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পইড়া মাথা ফাটাইয়া ফেলতে পারতো না। তবেই তো বিয়া বন্ধ হইয়া যাইতো, আর আমাদের রিযিক আল্লাহর রহমতে মাছ-মাংসে ভরপুর হইতো। এখন দেখ মাছের কাঁটাও পাইলাম না।”

আমি ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লাম। তখন হার্ট অ্যাটাক না হলেও এখন নির্ঘাত হবে। এগুলো আমার বান্ধবী? একে অপরের গলা জড়িয়ে এমন মরা কান্না দিচ্ছে আমার বিয়ের মুরগি না খেতে পারায়?
চাঁদনী উঠে এসে আমার হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে করুণ স্বরে বললো,
“কেন ফাবলীহা, কেন! কি দোষ ছিল আমাদের দুজনের। হোয়াই!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here