অবেলায়_তুমি Part-04

0
1844

অবেলায়_তুমি Part-04
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)

হিমান্তের চিন্তায় চিন্তায় রাত কাটে, টিপকে কাছে পেয়েও কিছু করতে পারছে না হিমান্ত।
বন্ধুকে তো আর কিছুই করা যায় না অন্যকেউ হলে জোর করে হলেও নিয়ে আসতো।
,
হানিমুনে টিপ আর সাহিল, কক্সবাজার ঘুরতে এসেছে, যদিও ইচ্ছাটা টিপেরই ছিলো।
টিপ খুব সকালে সমূদ্রের কিনারায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে কখন সূর্য উদয় হয়।
সকালের স্নিগ্ধতা তাকে মুগ্ধ করে তুলছে, আচ্ছা জীবনের প্রতিটা মুহুর্তই কিছু উপভোগ করার থাকে, কখনও কষ্ট কখনও সুখ।
,
দূর থেকে দুটি চোখ সমূদ্রকণ্যাকে না দেখে কোন এক মায়াবীনিকে দেখছে, আর মন খুশিতে ভরে উঠছে।
,
অনু রুমের জানালা দিয়ে তার ভাইয়ের কান্ড দেখছে। এতটা পথ আসতে হলো এই ভাইটার জন্য, এত পাগল না।
,
হিমান্ত টিপকে দেখেই মন চাচ্ছে ছুটে যেতে কিন্তু কিভাবে যাবে।
বন্ধুত্বের কাছে যে বাঁধা পরে গেছে,
,
,
টিপের মনের কষ্ট সব পানির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।
পাখির ডানার মত দুই হাত দুদিকে বাড়িয়ে আছে।
,
মা হারানোর কষ্ট, তারপর বাবার ২য় বিয়ে, কলেজ জীবনে কাউকে ভালোলাগা।
কিন্তু সেই মানুষটা যখন তার প্রাণের বান্ধবীকে লাভ লেটার দেয় তারই সামনে তখন তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরে যায়।
,
সবকিছু কেন আমার অবেলায় ঘটে, সময়ের তারণায় হারিয়ে ফেলি প্রিয় সবকিছুই।
,
এখন আর নেই মনে সামান্য রংটুকুও অবশিষ্ট।
,
স্কুলের সেই ভালোবাসার মানুষটা যখন তাদের সামনে তার বান্ধবীর হাত ধরে ঘোরাঘুরি করতো, যখন তাদের প্রেমের পাহাড়াদার হতে হতো টিপকে। কষ্টে বুকটা ফেঁটে চৌচির হয়ে যেত।
কিন্তু কিছুই করার নাই, প্রকৃতি বড্ড নির্মম।
আর প্রাণের বান্ধবীটাও এত ভালোবাসতো, আমাকে ছেড়ে কিছু করতেই চাইতো না।
,
অবশেষে ভোর এলো তাদের জীবনে, বিয়েতে প্রথম স্বাক্ষী হলাম আমি, হা হা, প্রকৃতির খেলা বড্ড ভয়ংকর।
বিয়ের সব এরেন্জ আর সবকিছুতে আমাকে সময় দিতে হয়েছিলো।
,
সব সুন্দর ভাবে পালন করেছিলাম, নিজের প্রতি যতটা অবহেলা করি ওর প্রতি ঠিক ততটাই একটিভ ছিলাম। ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হা হা, গল্পের শেষ এখানেই হতে পারতো।
কিন্তু তা না, মিম একসময় ডেকে পাঠালো তার প্রেগন্যান্সির খবর নিয়ে, আপন বলতে আমাকেই বেশি ভালো জানে তাই আমাকে কিছুদিন তার সাথে সঙ্গ দিতে হবে।
,
এমন কোন রাত ছিলোনা কাঁদতে হয়নি।
,
বুকের বা পাশে কতটা ব্যথা তা যারা তাদের ভালোবাসার মানুষদের না পেয়ে আমার মত ব্যর্থ তারাই বুঝবে।
,
এক একটা দিন আমার শত সহস্র বছরের মত ছিলো।
,
এরপর তাদের ফুটফুটে একটা সন্তান এলো।
,
সব কষ্ট হাসিতে রুপান্তরিত হলো, খুব ভালোবাসতাম পুচকুটাকে।
,
এরপর সব ভুলে সাহিলের জীবনে পা রাখলাম।
কিন্তু সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন তার চারিপাশ।
,
আমি যেমন পরিবেশ পছন্দ করি সে তার উল্টো। আমার ভালোলাগে প্রকৃতি তার ভালোলাগে পার্টি নাইট ক্লাব হাই সোসাইটিতে নাম যস।
,
সবাই এক নামে চিনে সাহিল মাহমুদ অর্নব।
,
কত ছেলেরা তাকে হিংসে করে, আর কত মেয়েরা পাগল তার জন্য।
,
কিন্তু আমি শত চেষ্টা করেও পারছিনা তার সাথে নিজেকে মিলাতে। তবুও আমাকে পারতেই হবে, কেননা নারীর জন্ম একটাই মৃত্যুও একটা, আর বিয়েও একবারই।
,
প্রকৃতির খেলায় আমরা যা চাই তা কখনও হয় না। ভিন্ন কিছু হয় যা আমাদের মানতে কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়।
,
মিম আমার এখানে আশা শুনে খুশি হয়েছে,
সেও নাকি আসবে, কিন্তু আমার নিজেকে নিয়ে এখন আর ভাবার কিছুই নাই , আমার জীবনের সেই ভোর মৃত্যুতেই পরিপূর্ণ হবে।
,
সূর্যটা উকি দিয়েছে ঠিক সমূদ্রের ভেতর থেকে।
মনে হলো পানির ভেতর থেকে সূর্য উদয় হলো।
,
আমি বাম হাত দিয়ে লাভের একাংশ ধরলাম অন্য হাতে মোবাইল।
,
আধখানা চাদঁের ন্যায় আধখানা লাভ।
,
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমায় জরিয়ে তার ডান হাত দিয়ে লাভের বাকিটা পূর্ণ করে দিলো।
,
আমি ঘাড় ঘুরাতেই সে আমার কাঁধে গভীর নিশ্বাস ফেললো, আমি মুহূর্তেই শিতল বরফে পরিনত হলাম।
নরতেও পারছিনা….
,
,
—-উহু নরোনা এভাবেই থাকো, ফিল করো আমাকে টিপ, আমি তোমার সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে তোমাকে এভাবেই বুকে আগলে রাখবো,
কখনও আমায় ছেড়ে যেওনা টিপ।
,
হিমান্ত দূর থেকে দেখে তাকিয়ে আছে, চোখ থেকে অজান্তেই পানি পরছে।
,
পাশ থেকে অনু একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো।
,
….মেয়ের নাম নীলান্তি, বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে, প্রথম দেখায়ই তোকে ভালোবেসে ফেলেছে, তোর আপন ছোট বোন অনুর একমাত্র বান্ধবী জানে জিগার।
,
কবে মিট করছিস তার সাথে.?
,
—হিমান্ত অনুর কথা শুনে ওর দিকে তাকায়, কি বলছে অনু, যাই বলুক কলন উত্তর না দিয়ে আবার টিপকে দেখায় ব্যস্ত হয়ে পরে হিমান্ত।
ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে টিপকে নিজের কাছে নিয়ে আসি।
,
,
টিপ চোখ বুঝে ফিল করছে সাহিলের স্পর্শ, চোখ থেকে আপনা আপনিই জ্বল পরছে।
,
হঠাৎ মোবাইলের ফ্লাশের শব্দে দুজনই পেছনে তাকায়।
,
হিমান্ত আর অনু দুজনে হাসছে ওদের দিকে তাকিয়ে।
,
—আরে হিমান্ত, তোরা এখানে,.?(সাহিল)
,
হিমান্ত সাহিলের সাথে হাগ করে বললো, অনুর বান্ধবীরা আসবে ঘুরতে, ওকে তো আর একা ছাড়তে পারনা জানিসই তো তাই ওকেও নিয়ে এলাম।
,
—ওহ আচ্ছা, টিপ এই হলো হিমান্ত আমার জানে জিগার দোস্ত(সাহিল)

—টিপ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হিমান্তের দিকে, কারন এর আগেও টিপ তাকে দেখেছে।
,
হিমান্ত টিপকে একটা চোখ টিপ মেরে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডসেক করার জন্য।
,
টিপ মুখেই সালাম দেয়, সাহিল তা দেখে মনে মনে হাসে।
হিমান্ত হাত ফিরিয়ে নেয় সাহিলের কাঁধে হাত দিয়ে…
,
কিরে সালা হানিমুনে সিঙ্গাপুর যাবি বললি, এটা তোর সিঙ্গাপুর?
,
—নাহ টিপ যেতে চাইলো না, চিপ মাইন্ডেড, দেখনা কত ভালো অফার করলাম পায়ে ঠেলে দিলো(আস্তে করে)
,
হিমান্ত বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।
,
ওকে চল একসাথে ঘুরতে যাওয়া হবে বেশ ভালোই হবে।
,
অনু আর টিপ দুজনে কথা বলছে।
বেশ হাসাহাসি করছে দুজনে…
,
সাহিল গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো, চলো জান, রোদ উঠে গেছে রোদে থাকলে চেহারা কালো হয়ে যাবে বলে হাত ধরলো।
,
হিমান্ত টিপের অপর পাশে গিয়ে বললো, আরএকটু থাকনা, এই রোদে কিছুই হবে না, তবে সকালের মিস্টি রোদ গায়ে মেখে প্রিয় মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে সমূদ্রের বিশালতা অনুভব করার মজাই আলাদা, এটা অনুভব করার মন সবার থাকেনা।
,
টিপ হিমান্তের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়, এই ছেলেটা কি করে আমার মনের কথা বুঝে ফেললো, যে আমি যেতে চাই না।
,
সাহিল হেসে বললো টিপকে…
,
তুমি কি যাবে নাকি থাকবে.?
টিপ কি বলবে বুঝতে পারছে না।
,
অনু টিপের হাত ধরে বললো ভাবি থেকে যাও, আমরা অনেক মজা করবো।
,
টিপের ঠোঁটে আনন্দ দেখে হিমান্তের মনটা ভরে যায়, কিন্তু টিপ মুখ ফুটে বলেনা কিছুই।
,
,
অবশেষে সাহিল বেচারা সমূদ্রের পাশে হাটে।
,
টিপ সাহস পায় না পা ভেজাতে।
,
অনু গিয়ে টিপকে টেনে সমূদ্রে নামায়, সাহিলকে ডাকলে সে যায় না দূরেই থাকে।
,
টিপ ভয় পেয়ে অনুকে খামচে ধরে।
,
হিমান্ত ছুটে গিয়ে টিপের অপর পাশে দাড়ায়,
তিনজন দাড়িয়ে হাটু পানিতে, একএকটা ঢেউ এসে ওদের পায়ে বারি খাচ্ছে।
,
সাহিল দূর থেকে দেখছে, ওর এসব ন্যাকামি মনে হয়।
,
টিপের আজ খুব আনন্দ লাগছে, দুইপাশে দুজন, হিমান্ত একটু বেশিই কাছে মনে হচ্ছে, ওর হাতটা একটু টাস লাগছে টিপের হাতে।
আনইজি ফিল হচ্ছে টিপের।
,
হঠাৎ হিমান্ত টিপের মুখে পানি ছিটিয়ে দিলে টিপ ভয় পেয় পরে যেতে নিলেই হিমান্ত টিপের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।
,
সাহিল এটা দেখে রেগে একাকার হয়ে যায়, আর হিমান্ত খুব খুশি হয়।
তার ভালোবাসা আজ তার পাশে, মন চায় জরিয়ে ধরে কঁপালে চুমু এঁকে দিই।
,
টিপ হিমান্তের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসতে নিলে আবার ঢেউ আসে ভয়ে অনু আর হিমান্তের হাত খামচে ধরে টিপ।
,
হিমান্ত মুচকি হেসে টিপের হাত ধরে অনেক যত্ন করে উপরে নিয়ে আসে।
,
টিপের বড্ড ভয় লাগছে, সাহিল রেগে যায় যদি।
,
হিমান্ত টিপকে সাহিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলে…
,
,
তোর বউ এত ভিতু রে দোস্ত নেহ তুই ই সামলা, এখানে উপরে না দাঁড়িয়ে একটু দুজনে একসাথে পা ভিজিয়ে দেখ।
অন্যরকম ফিলিংস, সিঙ্গাপুরে তা পাবিনা যা এখানে পাবি।
,
সাহিল হিমান্তের হাত থেকে টিপের হাত জোরে টেনে আনে।
আর শক্ত করে টিপের হাত চেঁপে ধরে।
রাগে ওর সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে,
,
টিপ ব্যথা পেলেও ভয়ে কিছু বলছে না।
,
,
—দাদাভাই এটা কি ঠিক হচ্ছে?(অনু)
,
হিমান্ত আরো একটু পানির দিকে গিয়ে জোরে পানিতে নিজের হাত দিয়ে বারি দিচ্ছে আর ইচ্ছে মত আনন্দ করছে।
,
অনু আজকে আমি অনেক খুশি অনু।
কি ঠিক কি ভুল আমি জানিনা, ভালোবাসি এটাই জানি ব্যস।
,
,
,
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here