বিপরীতে_হিত-১২,১৩

0
261

#বিপরীতে_হিত-১২,১৩
#পর্ব-১২

আজ একসপ্তাহের বেশি হয়ে গেলো আদি ভার্সিটিতে আসে না। প্রথম কয়েকদিন সুমনা বিশেষ পাত্তা দেয়নি বিষয়েটা। দু’তিন হলো কেমন যেন শুন্য শুন্য লাগে চারপাশটা। কেউ একজন কারণে অকারণে তাকে ফলো করতো, খোঁচাত, পিছু লেগে থাকতো। ভীষণ রকম বদমায়েশি করে ওকে ভয় দেখাতো! আজ এক সপ্তাহ ধরে সে নেই, সুমনার মনে হয় কি যেন একটা নেই ওর। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে, ভেতরটা খা খা করে। মনের অজান্তেই সুমনা দিনের ভেতর দশবার নিজের আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে ফেরে আদিকে। মাঝে মাঝে ভাবে এই বুঝি আদি এসে ওর গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দিলো কিংবা মাথায় কিছু দিয়ে দিলো। হঠাৎ মনে হলেই পিছু ফিরে দেখে, আশা করে আদিকে দেখতে পাবে।
অথচ, কেউ যদি কথাটা ওকে বলে তাহলে ও বেমালুম অস্বীকার করবে কথাটা। বলবে, নাহ! আমি কেন ঐই বদকে খুঁজবো? আমার বয়েই গেছে ওকে খুঁজতে?

আজ ভার্সিটিকে আশার সময় খুব করে প্রার্থনা করছিলো, আজ যেন আদি আসে? ওকে যেন দেখতে পায় একনজর? ভার্সিটিতে এসেও আদিকে খুঁজতে খুঁজতেই ক্লাসের দিকে আসছিলো। কোথাও দেখা পেলো না আদির। নিজের ক্লাস রুমে ব্যাগ রেখে কি মনে করে আবার ফেরত আসছিলো আদির ক্লাসের দিকে। দৌড়ে উঠতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেলো। সুমনা সরি বলতে যাবে তার আগেই পরিচিত কন্ঠে সরি শুনে চোখ তুলে তাকাতেই আদিকে দেখতে পেলো। ওকে সরি বলে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যাচ্ছে। মাথাটার সামনে রুমাল দিয়ে বাঁধা, তারউপর আবার ক্যাপ পড়েছে। সুমনা ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করলো। আচ্ছা, আদি কি ওকে দেখেনি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করলো? সুমনা ভাবলো একবার ডাকবে আদিকে। পরক্ষণেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলো। থাক, এখন না। ক্লাস শেষে দেখা যাবে ব্যাপারটা।

ক্লাস শেষে আদি বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এতোদিন পর ভার্সিটিতে এসে পড়েছে মহা বিপদে। ক্লাসের বন্ধুদের চুল কেটে ফেলার রহস্য বলতে বলতে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর সুমনা উপর রাগ বাড়ছে। বন্ধুরা ওর অবস্থা দেখে আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসছে পাছে মুখের উপর হাসলে আদি মাইন্ড করে? এসব দেখে আদির মেজাজের পারদ আরো চড়ে যায়। এই বুড়ো বয়সে এসে যদি মাথা টাক করতে হয় তবে কার না মেজাজ খারাপ হবে? তার উপর আদির চুলগুলো ছিলো ওর নিজের খুব ফেবারিট। কি সুন্দর করে চুলগুলো ছেটে ছিলো। আদির পুরো মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল ছিলো যেটা ম্যানলি স্টাইলে কাটা। সুমনার বাচ্চা কিনা সেই চুলে হাত দিলো? ন্যাড়া মাথা বানিয়ে দিলো ওকে? আদি রাগে দুঃখে ক্লাস শেষ হতেই বেড়িয়ে যেতে চায়। ওর আর কারো হাসির খোরাক হওয়ার ইচ্ছা নাই আবার সুমনার সামনেও পড়তে চায় না। সুমনা সামনে পড়লেই আদির মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাচ্ছে। আদি ইচ্ছা করলেই সুমনাকে পাল্টা কিছু করতে পারে। কিন্তু করবে না। এখন তো বড় হয়ে গেছে, বাচ্চাদের মতো এসব টম এন্ড জেরি খেলা কি মানায়? আর তাছাড়া,
আর কতোদিনই বা চলবে এসব? এক না এক সময় তো ক্ষান্ত দিতে হবে নাকি? সুমনার হিসেবে, এই টাক হওয়া নাকি ওর পাওনা ছিল? ওর কারনে সুমনার চুল কাটতে হয়েছিলো এখন সুমনার কারনে ওর চুল কাটতে হলো। সুমনার ভাষ্যমতে হিসাব বরাবর হলো তবে? আদি তাই আর সুমনাকে ঘাঁটাচ্ছে না। নতুন করে আর হিসাব নিকাশ না হোক এটাই ভালো হবে।
এজন্যই সকালে সুমনাকে দেখেও না দেখার ভান করে কেটে পড়েছিলো।
“এই আদি, আদি, এই আদি!”
দৌড়ে এসে কেউ একজন পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো। কন্ঠ শুনে আদি চলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলো কিন্তু সুমনার সাথে দৌড়ে পারলো না। আদির সামনে দাঁড়ায়ে ভ্রু কুঁচকে আদির দিকে তাকালো-
“কি সমস্যা তোর? আমাকে এভোয়েড করছিস কেন? সকালে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে এমন ভাবে চলে গেলি যেন আমাকে চিনতে পারিস নি?”
“খেয়াল করি নি!”
অন্য দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো আদি।
“মিথ্যে কথা বলছিস কেন? আর আমার দিকে তাকাচ্ছিস না কেন?”
“কই তোর দিকে তাকাচ্ছি না?”
আদি একবার সুমনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ঘুড়িয়ে নেয়।
“এই যে তাকাচ্ছিস নাই তো?”
“দেখ সুমনা, যেতে দে আমাকে। জরুরি কাজ আছে আমার!”
“বাব্বাহ এতো রাগ? তুই তো তাও ছেলেমানুষ, তাই চুল কেটে এতো রাগ দেখাচ্ছিস? তাহলে বোঝ, আমার কেমন লেগেছিল? আমার অতো সুন্দর লম্বা চুল!”
আদির চোখের সামনেও যেন সুমনার মাথা ভর্তি চুল ভেসে উঠলো। আসলেও মেয়েটার চুলগুলো সুন্দর ছিলো।
“তোর দুঃখ বুঝলাম, এবার তুই খুশিতো? আমি গেলাম?”
আদি আগাতেই সুমনা হাত দিয়ে আটকালো।
“আবার কি হলো?”
আদির কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি।
“তুই আমাকে এভোয়েড করছিস?”
“দেখ সুমনা, আমি আর তোর সাথে ঝগড়া করতে চাইছি না। না এনার্জি আছে আর না মুড!”
“আশ্চর্য! আমি কি তোর সাথে ঝগড়া করছি নাকি? কথা বলতে চাইছি শুধু? ”
“কেন কথা বলতে চাইছিস? অন্য সময় যখন আমি তোর পিছন পিছন ঘুরি তুই তো একটুও পাত্তা দিতে চাস না। আর আজ আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তুই ফোর্স করছিস!”
“এখনো রেগে আছিস?”
“এবং সেই রাগটা আমি আর তোর উপর দেখাতে চাইছি না। তোকে দেখলে মেজাজ খারাপ হচ্ছে তাই তোকে এভোয়েড করতে চাইছি। কিন্তু তুই তো নাছোড়বান্দা!”
“এভাবে কেন কথা বলছিস?”
“তো কিভাবে বলবো? দেখ সুমনা, আমরা এখন বড় হয়ে গেছি। আগের সেই বাচ্চামো এখন করলে মানাবে, বল? এসব এখন ছেড়ে দেওয়া উচিত। আজ আমি করবো কাল তুই করবি, এভাবে কি অনন্তকাল চলবে? তাই বলছি, এসব বাদ দেই।”
শান্ত কন্ঠে আদি উত্তর দেয়। কথাগুলো শুনে সুমনার মনে কেমন যেন হতাশা তৈরি হলো। মনেহলো, কেউ যেন জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিলো ওর কাছ থেকে। আদিকে কে বোঝাবে যে, আদির এসব দুষ্টুমি সুমনা এনজয় করতে শুরু করেছে আর নিজেও আদিকে জ্বালিয়ে মজা পাচ্ছে ভীষণ। সুমনা অনেক কষ্টে ঠোঁটে হাসি এনে আদির দিকে তাকিয়ে বললো-
“বেশ ভালোই তো, তোর মাঝে ম্যাচুরিটি এসেছে দেখে ভালো লাগলো। বেশ আজ থেকে তবে শান্তিচুক্তি হলো, নাকি?”
“কোনো চুক্তি ফুক্তি আদি করে না। ব্যাস, আদির আর ঝগড়া করার মুড নাই।”
কথাটা শুনেই সুমনার ভেতরটা জ্বলে উঠলো। মনে মনে ভেংচি কাটলো আদিকে। মুখে বললো-
“ওকে। যা তাহলে!”
আদি কিছু না বলে চলে গেলো। সুমনা পেছন থেকে আদিকে দেখছিলো আর মুখ বাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভেবে যাচ্ছে, এই মুডি আদিকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়? কি কথা? আদির আর ঝগড়া করার মুড নাই! হুহ। তোর মুডের এ্যায়সি কি ত্যায়সি। ভেবেছিলাম তোকে ছেড়ে দেবো। কিন্তু মুড দেখিয়ে ভুল করে ফেললি। এই সুমনাকে মুড দেখিয়ে তুই পার পাবিনা। নিজ থেকে তোর সাথে কথা বলেছি বলে তোর ভাব বেড়ে গেছে, তাই না? দাড়া, কালই তোর এই ভাব কমিয়ে দিচ্ছি। দেখি কাল তুই কিভাবে এতো ভাব নিয়ে চুপচাপ বসে থাকিস? সুমনা মুখে মৃদু হাসি দিয়ে আনমনে ওর গালে হাত বুলায়। সেই ছয় বছর আগের আলতো ছোঁয়া আজও যেন ওর মনে নতুন করে শিহরণ জাগিয়ে গেলো। কেউ জানে না, ওই স্পর্শ কতোটা প্রিসিয়াস ছিলো ওর কাছে। না বুঝে শুনে আদির হঠাৎ গালে দেওয়া স্পর্শ সুমনার ভেতরটা তো সেদিনই নাড়িয়ে দিয়েছিলো। সুমনা আজ আবার যেন সেই স্পর্শটা নিজের ভেতর অনুভব করতে চাইলো। কিছু না বুঝেই মনের অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ করে গালটা আবার স্পর্শ করলো সুমনা।

চলবে—–
Farhana_Yesmin

#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-১৩

আজ অনেক দিন পর মামুন আদির পাশে বসে ক্লাস করছে। মামুন আজ একটু লেট করে এসেছে। তখন ক্লাস শুরু হয়ে গেছিলো। মামুন ক্লাসে ঢুকে চুপচাপ আদির পাশে এসে বসে গেলো। আদি একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে মামুনকে দেখলো। মনেহলো মামুনের চেহারায় হালকা একটা খুশির আমেজ, মুখটা উজ্জ্বল আর হাসিহাসি হয়ে আছে। আদির মনে হলো ও ভুল দেখছে। আবার তাকালো মামুনের দিকে। মামুন এবার ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো মুচকি। আদি ভ্রু কুঁচকে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। মাথার মধ্যে মামুনের খুশি হওয়ার কারন কি, সেই প্রশ্ন ঘুরছে। স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই মামুন আদিকে ডাকলো-
“দোস্ত, খুব খুশির একটা ঘটনা ঘটেছে। কি করবো বুঝতে পারছি না?”
আদি ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো-
“কি হয়েছে?”
“মোনা আমার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে?”
এবার যেন আদি নড়েচড়ে বসলো। সুমনার নাম শুনেই শিরদাঁড়া খাঁড়া হয়ে গেছে আদির-
“তুই আবার সুমনাকে কি প্রস্তাব দিয়েছিস আর কবেই বা দিয়েছিস?”
“আমি ওকে বলেছিলাম যে, আমি ওকে পচ্ছন্দ করি। ও বলেছিলো, ও সময় চায় কিছুদিন। কাল হঠাৎ ফোন দিয়ে জানালো আজকে নাকি জবাব দেবে। ক্লাসের পর আমাকে থাকতে বললো। আমি সিওর, পজিটিভ কিছু বলবে। তোর কি মনেহয় বলতো?”
মামুনের কথা শুনেই আদি পায়ের রক্ত যেন ফট করে মাথায় উঠে গেলো। বলে কি মামুন! সুমনা ওকে পচ্ছন্দ করে? তাহলে আদির কি হবে? সে কবে থেকে ওর মনের ভেতর সুমনা বাসা বেঁধেছে সেটা কি সুমনা জানে! এখন কিনা সুমনা আরেকজনের পালে নৌকা ভেরানোর চিন্তা করছে? এটা আদি কি করে হতে দেয়? কয়েকদিন আদি ওকে একটু এভোয়েড কি করেছে আর সুমনার যেন পাখনা গজিয়ে গেছে। আদির ভীষণ রাগ হলো। এতো রাগ যে সুমনাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সাহস কতো মেয়ের! মামুনের সাথে প্রেম করবি তুই! মামুনের সাথে! আমি কি মরে গেছি? কেন রে বাবা, এতো সুন্দর, হ্যান্ডসাম আদিকে তোর চোখে পড়ে না? রাগে আদির চোয়াল একবার শক্ত করছে একবার নরম। মামুন ধাক্কা দিলো আদিকে-
“এই আদি, বলনা কি করি? মোনার জন্য কি ফুল নিয়ে নেবো?”
“কেন? তোর মোনা কি বলে সেটা আগে দেখ?”
আদি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।
“আমি তো খুব পজিটিভ ভাইব পাচ্ছি। আজ থেকেই শুরু হয়ে যাবে মনেহয়?”
“কি শুরু হয়ে যাবে?”
মামুনের লজ্জা লজ্জা উওর শুনে আদি অবাক হয়ে জানতে চায়।
“আর কি, প্রেম?”
আদির গায়ে জ্বালা ধরে গেলো যেন। মনে মনে বিরবির করলো-
“তোর প্রেমের খ্যাতা পুড়িয়ে দেবো, বদমাশ। তুই যদি সুমনার দিকে নজর দিস তাহলে যে আমি কি করবো নিজেই জানিনা।”
আদি মুখে কোনো কথা না বলে মুখ শক্ত করে বসে রইলো। মনে মনে ভাবছে, এই সুমনাকে কি করে থামানো যায়? মেয়েটার সাথে দু’দিন কথা বলেনি আর মেয়েটা উল্টো পাল্টা কাজ করতে শুরু করেছে। স্যার এসেছে ক্লাসে কিন্তু আদির মন নেই। সে সুমনার ভাবনায় বিভোর হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই আদি উঠে দাড়ালো, স্যারকে শরীর খারাপ এর বাহানা দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। ভার্সিটি লাইফে এই প্রথম এমন করলো আদি। তাই স্যার অবাক হলেও ওকে আটকালো না। মামুন কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু আদি কান দিলো না। সুমনার ক্লাসের বাইরে এসে দাঁড়ালো। জানালায় উকি দিয়ে সুমনাকে খুঁজতেই পেয়ে গেলো। অনেক কষ্টে সুমনাকে ইশারায় ডেকে বাইরে আসতে বললো। সুমনা কয়েকবার মানা করলেও পনেরো মিনিট পর ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে এলো। সুমনা বেরিয়ে আসতেই আদি ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে সোজা লাইব্রেরিতে। এরমাঝে সুমনা কয়েকবার ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আদি এতো শক্ত করে ওর হাত ধরেছে যে, সুমনা সে হাত একটুও নাড়াতে পারলো না। সকালের সময়, তাই লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা বলা যায়। আদি একদম কোনার দিকে এসে চেয়ার টেনে নিয়ে সুমনাকে বসালো, নিজে বসলো ওর সামনে। টেবিলের ওপাশটাতে বইয়ের সারি, একদম সুনসান নীরবতা এপাশটায়। চেয়ারে বসেই সুমনা ওর হাতটা দেখলো, একদম লালচে দাগ হয়ে আছে। আদিও তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। সুমনা হিসহিসিয়ে উঠলো-
“কি সমস্যা তোর? সবসময় এমন করিস কেন আমার সাথে?”
“তুইও বা এমন করিস কেন?”
সুমনা অবাক হলো-
“আমি কি করেছি?”
“তুই মামুনের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিস?”
সুমনা মনে মনে একচোট হেসে নিলো, কিন্তু মুখে গম্ভীরতা এনে বললো-
“হুম তো?”
“কেন রাজি হবি তুই?”
“আমার জীবন আমার ইচ্ছা! তোর কি সমস্যা তাতে?”
“অনেক সমস্যা! তুই বুঝিস না কিছু?”
“কি বুঝবো?”
আরো অবাক হওয়ার ভান করে সুমনা।
“সেই কবে থেকে তোর পিছনে পরে আছি। কত কথা বলতে চাই তোর সাথে আর তুই সবসময় আমার সাথে ভাব দেখিয়ে দূরে সরে থাকছিস। কেন?”
আদির কন্ঠে অভিমান ঝরে পরছে। সুমনা যেন আকাশ থেকে পড়লো এমন ভাব করে বললো-
“আমি কোথায় তোকে ভাব দেখালাম? কাল তোর সাথে কথা বলতে গেলাম, তুইতো আমার সাথে কথা বললি না। আর আজ আমাকে দোষ দিচ্ছিস?”
“তোকে দেখলে রাগ লাগছিলো, তাই! তোর সাথে নতুন করে কিছু করতে চাইছিলাম না। আচ্ছা মানলাম কাল আমি কথা বলিনি, কিন্তু তার আগে?”
“তার আগে কি? তোর তো শুধু আমাকে দেখলে জ্বালাতে ইচ্ছে করে। ”
“জ্বালানোটাই বুঝলি? আর জ্বালানোর আড়ালের ইচ্ছে বুঝলি না?”
“কি ইচ্ছে? ঝগড়া ছাড়া আর কিছু পারিস তুই? ছেলে মানুষ এতো ঝগড়া করতে পারে সেটা তোকে না দেখলে জানা হতো না।”
আদি সম্মোহিতের মতো উঠে এসে সুমনার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে নিজের সামনে দাড় করালো-
“আমার চোখে তাকাতো ভালোমতো, দেখতো কিছু দেখতে পাস কিনা?”
হটাৎ আদির এমন আচরণে অবাক সুমনা আরস্ঠ হয়ে আদির চোখে তাকালো। দেখলো আদি তাকিয়ে দেখছে ওকে একদৃষ্টিতে। আদির চোখগুলো হালকা লাল। সুমনার মনে হলো ও পুড়ে যাবে আদির দৃষ্টিতে। সুমনা চোখ নামিয়ে নিতেই আদি আবার ওর থুতনি ধরে উপরে তুললো, একহাতে সুমনার কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো, ফিসফিস করলো-
“বললি না কি দেখতে পাচ্ছিস?”
আদির মুখ দিয়ে যেন গরম হলকা বেরুলো। সুমনার মনেহলো ওর মুখটা পুড়ে গেলো। আদির এমন কাজে সুমনা দিশেহারা, লজ্জায় ওর গালও লাল হলো। তারপর, আদি যেভাবে ওকে জাপটে ধরে আছে, ওর খুব ইতস্তত লাগছে। ছেলেটা এমন পাগলামি করছে কেন হঠাৎ?
আদি আচমকা সুমনার গালে নিজের ডানহাতের আঙুল ছুঁইয়ে দিলো-
“সেই স্পর্শ কি ভুলে গেছিস? তোকে রিকশায় বসে আচমকা যেটা দিয়েছিলাম?”
সুমনার ভেতরটা যেন কেঁপে উঠলো আদির কথা শুনে। আদির মনে আছে সেকথা? সুমনা তো ভেবেছিলো, ওটা আদির হঠাৎ করে করা, ওর মনেও থাকবে না সেকথা। সুমনার চোখ দুটো কেন কে জানে জলে ভরে গেলো। হঠাৎ একরাশ অভিমান ঘিরে ধরলো সুমনাকে। কিছু বলতে যেয়েও গলা দিয়ে স্বর বেড়োলো না ওর। আদি টুপ করে আজ আরেকবার সুমনার গালে ঠোঁট ছোয়ালো। ঠোঁট ছোয়াতে যেয়েই টের পেলো নোনতা স্বাদের পানি। মুখ তুলে দেখলো সুমনা চোখ বন্ধ করে কাঁদছে। আদির খুব কষ্ট হলো সুমনার চোখের পানি দেখে। ও কি মেয়েটাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে? কিন্তু ও তো কষ্ট দিতে চায়নি?
“সু, আম সরি? তোকে কি আমি বেশি কষ্ট দিয়েছি?”
সুমনা জ্বল ভরা চোখে তাকালো আদির দিকে, তাকিয়ে মাথা নাড়লো। আদি খুব যত্ন করে সুমনার চোখের জ্বল মুছে দিলো-
“সু, তোকে ভালোবাসি রে, অনেক ভালোবাসি। সেই যে সেদিন তোর মাথায় আঠা লাগিয়ে দিতে যেয়ে তোর গালে চুমু একে দিলাম সেদিন থেকে। কিংবা কে জানে তারও আগে থেকেই হয়তো? তবে বুঝেছিলাম তুই যেদিন স্কুল ছেড়ে দিলি সেদিন, অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। অনেক খুঁজেছি তোকে পাগলের মতো তবুও পেলাম না। এতোদিন পর পেলাম কিন্তু তুই আমায় এড়িয়ে চলছিলি তাই রাগ উঠে গেছিলো। আমি মোটেও তোর সাথে এসব করতে চাইনি।”
সুমনা কেঁদে যাচ্ছে নিরবে। আদির কথা শুনে মনে মনে বলছে, ভালোবাসার কথা বলছিস সেটাও জোর করে ধরে এনে। কেন রে গাধা একটু যত্ন করে বলা যেতো না? আমাকে জ্বালানো যেন তোর আজন্ম অধিকার হয়ে গেছে। সুমনা কিছু বলছে না দেখে
আদি সুমনার মুখ তুলে আবার ওর চোখ দুটো মুছে দিলো-
“কিছু বল, সু? তোর কি এতোদিন আমার কথা একবারও মনে পড়েনি?”
সুমনা আবারও মাথা নাড়ে। কেঁদে অলরেডি চোখ আর নাক লাল করে ফেলেছে। ঠোঁট দুটো কাঁপছে তিরতির করে, গাল দুটো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। আদির ইচ্ছে হলো সুমনাকে ছোট্ট বাবুর মতো বুকে জড়িয়ে নিতে। বেশ অনেকক্ষন সুমনার দিকে তাকিয়ে ওর কান্না করা দেখলো, তিরতির করে ঠোঁটের কাঁপন দেখলো তারপর আচমকা সুমনার ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিলো আলতো করে। সুমনা অবাক হয়ে আদির দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো-
“পারবি না সু। তোর এতো শক্তি নেই। রাগ করেছিস? করলে বেশ করেছিস? কিন্তু তবুও আমি এতোটুকুও রিগ্রেট করছি না আমার এ কাজের জন্য। তোর ঠোঁটে আমার স্পর্শ দিয়ে তোকে আমার করে নিলাম। ঔই মামুনটার আর কোনো চান্স রইলো না।”
বলেই হাসলো আদি। নিজের নাকটা সুমনার খাড়া ছোট্ট নাকের সাথে ঘষলো।
“আমি জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস। বল, বাসিস না?”
সুমনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো মুখ নিচু করে।
“বলবি না?”
সুমনা না বোধক মাথা নাড়লো।
“আরো চুমু দিলে বলবি? মুখে জবাব দে?”
সুমনা ভয় পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আদি ওর দিকে মুখ এগিয়ে দিতেই সুমনা আঁতকে পেছনে ঝুকলো। আদি মুচকি মুচকি হাসছিলো। সুমনা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো। আদি সুমনার আরেক গালে চুমু দিলো আলতো করে।
“তোর গাল দুটো মাশাল্লাহ। শুধু কিসি দিতে ইচ্ছে করে। ছয় বছর আগে দিয়ে লোভ ধরে গেছে।”
“বদ, ছাড় আমাকে। ভালোবাসার কথা বলছিস সেটাও জোর করে ধরে এনে? তুই আর মানুষ হলি না?”
সুমনা ফিসফিস করলো। আদি ছাড়ার বদলে আরো একটু আগলে নিলো সুমনাকে তারপর মুচকি হেঁসে বললো-
“ভদ্রভাবে বললে মনেহয় তুই শুনবি? আর তাছাড়া তোর সাথে জোর খাটাতে কেন যেন ভালো লাগে খুব। এবার চট করে নিজ থেকে একটু আদর করে দে আমায়!”
“তোকে আদর করতে আমার বয়েই গেছে।”
“বয়ে যায়নি? ঠিক আছে তবে গেলাম আমি। সেই তখন থেকে আমি বলে যাচ্ছি একা একা। তুই তো ভালোবাসিস না আমাকে? তুই ঔই মামুনকে ভালোবাসিস।”
আদি ফট করে সুমনাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটা ধরলো। সুমনা পেছন থেকে আদির হাত ধরলো-
“এখন তোর জন্য কি একটু ভাবও নিতে পারবো না নাকি? মেয়ে হয়েছি একটু লজ্জা পেতে হবে না?”
আদি ঘুরে দাঁড়িয়ে সুমনার মুখের কাছে মুখ এনে বললো-
“ওটা আমার কাছে না পেলেও চলবে, আমি কিছু মনে করবো না। এখন আমার পাওয়া দে।”
“এখন কিন্তু আমি সত্যি সত্যি লজ্জা পাচ্ছি!”
সুমনা লজ্জায় মাথা নিচু করলো। আদি বললো-
“তাহলে মুখে বল যে, ভালোবাসিস?”
“বলবো না। সব কথা মুখে বলতে হবে কেন, বুঝে নে!”
ফিসফিসিয়ে বললো সুমনা।
“তোর এই ফিসফিস করে কথা বলা শুনলে তোকে আমার একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ”
আদি আর সুমনার সম্মতির অপেক্ষা করলো না। আচমকা সুমনাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। এই প্রথম সুমনাও সাড়া দিলো আদির ডাকে। দুই নব্য প্রেমিক প্রেমিকা আকন্ঠ একে অপরের মাঝে ডুবে গেছে। আর এদিকে মামুন সুমনাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, আজ পেলে আচ্ছা মতোন বকে দেবে। এতো টেনশন দেওয়ার কি দরকার মামুনকে?

চলবে—–
Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here