#বিপরীতে_হিত-১৪,১৫ শেষ
#পর্ব-১৪
“উমমম, ছাড় এখন। হাসফাস লাগছে খুব।”
সুমনা আদির থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। সেই তখন থেকে সুমনাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
“আর কিছুক্ষণ থাকনা। সেই কবে থেকে এরকম একটা দৃশ্য কল্পনা করেছি, জানিস?”
“এটা লাইব্রেরি শয়তান। কেউ দেখে নিলে কি হবে সে খবর আছে? ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে?”
কথাটা শুনে আদির হুশ আসলো। আসলেই তো! লাইব্রেরিকে সে প্রেমোওদ্যান বানিয়ে দিয়েছে। ছি ছি! জুনিয়র বা সিনিয়র কেউ দেখে ফেললে কি বলবে? সে তাড়াতাড়ি সুমনাকে নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে এলো। আদি তখনো সুমনার হাত ধরে আছে। সে অবস্থায়ই বললো-
“চল, আজ বাইরে কোথাও ঘুরি। তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে। কথাগুলো পেটে জমে থেকে চরা পড়ে গেছে। না বলতে পারলে শান্তি পাবো না।”
সুমনা মাথা নেড়ে সায় জানালো।
“আমারও অনেক কিছু বলার আছে। চল যাই।”
দুজনে হেলতে দুলতে গল্প করতে করতে হাঁটছে এমন সময় পেছন থেকে মামুন ডাকলো-
“সুমনা, কোথায় যাচ্ছো? তোমার না আজ আমায় কি যেন বলার ছিলো?”
মামুনের গলা আদি আর সুমনা দুজনাই চমকে পেছনে তাকাল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। ওরা তো নিজেদের মাঝে এতোটাই বিভোর হয়ে ছিলো যে, মামুনের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। দুজন দুজনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ইশারা করলো। মামুনকে কি জবাব দেবে, দুজন সেটাই ভাবছে। সুমনা আর আদি ঘুরে দাঁড়ালো মামুনের দিকে।
“আরে! আদিও আছে দেখছি? বাহ, ভালোই হলো। তো মোনা বলো কি বলতে চাচ্ছিলে?”
“ইয়ে মানে মামুন ভাই, বলতে চাইছিলাম যে আমি আসলে আপনাকে আসলে…”
সুমনা বারদুয়েক ঢোক গিললো।
“আমাকে আসলে কি?”
“মানে আপনাকে আসলে আমার খুব ভালো বন্ধু ভাবি। আপনি এতো ভালো একটা মানুষ, আমার কতো যত্ন করেছেন, কতো আগলে রেখেছেন…বন্ধুর মতো…”
সুমনার কথা শুনতে শুনতে মামুনের চেহারা ক্রমশ গম্ভীর হয়ে উঠলো।
“ওয়েট মোনা ওয়েট! আমি তোমাকে মোটেও বন্ধুর মতো দেখিনি। আমার তোমাকে ভালো লাগে সেটা আমি অনেক আগেই বলেছি। কাল বলেছিলে, আজ জবাব দেবে আমাকে আমার ভালোলাগার ব্যাপারে..”
“মামুন, দোস্ত… ”
আদি কথা বলতে গেলেই মামুন হাতের ইশারায় আদিকে থামিয়ে দিলো।
“আদি, এখন শুধু আমি আর মোনা কথা বলবো। মাঝে আর কেউ কথা বলুক তা আমি চাই না।”
মামুনের চেহারা থমথমে। আদি একটু ভয় পেলো। মামুন একটু সহজ সরল ছেলে, ও সচরাচরই রাগে। আজ ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, ও রেগে আছে। বোকাদের রাগ চন্ডাল হয়। আদির ভয় হতে লাগলো। মামুন সুমনার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো? সুমনা হাতের ইশারায় আদিকে আশ্বস্ত করে চুপ থাকতে বললো।
“মামুন ভাই, সেটাই বলতে চাইছিলাম। আমি আসলে ওভাবে আপনাকে কখনো দেখিনি। বন্ধুর মতোই দেখেছি। এর বেশি যতটুকু যা করেছি সেটা আদিকে জ্বলানোর জন্য। আপনাকে নিয়ে আমার মনে অন্য কোনো ফিলিংস নেই। সরি ভাইয়া, আমি যদি আপনাকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকি।”
“তোমরা মেয়েরা কেন যে এমন করো বুঝি না। মনে আরেকজন মুখে আরেকজন। একজনকে বলির পাঠা তোমাদের বানাতেই হবে, তাই না? এরচেয়ে তো আদিই ভালো? ও আমাকে মানা করেছিলো তোমার সাথে মিশতে। অথচ তুমি কি করলে? তোমার জন্য আমি আদির সাথে পর্যন্ত ঝগড়া করেছি। তুমিই বলো, কাজটা কি ঠিক ছিলো?”
“ভাইয়া, আমি খুবই লজ্জিত আমার ব্যবহারের জন্য।”
“তোমার লজ্জিত হলেই কি আমার মন ভালো হয়ে যাবে? আমি আগের মতো হয়ে যাবো? কাজটা তুমি মোটেও ভালো করোনি।”
মামুন থমথমে মুখ নিয়ে হেঁটে চলে গেলো। একটা বার আদির দিকে ফিরেও দেখলো না। আদির মনটা খারাপ হলো। বন্ধুত্ব বুঝি নষ্ট হলো চিরজীবন এর মতো? কিন্তু ওর তো কোনো দোষ নেই? ও ঠিকই মানা করেছিলো মামুনকে। মামুন না শুনলে ওর কি করার আছে? তবে সুমনা মাথামোটা টার দোষ ষোলআনা! ও আদিকে শায়েস্তা করতে মামুনকে ইউজ করেছে যেটা মোটেও উচিত হয়নি। সুমনা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আদি ওর মাথায় গাট্টা মারলো-
“এসবের জন্য কেবল তুই দায়ী। আমি তখন মানা করেছিলাম তুই শুনিসনি। এখন ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ঠিক আগের মতো করে দেওয়ার দ্বায়িত্ব তোর! তা না হলে তোর খবর আছে?”
“আমি কি করবো? তখন কি আমি জানতাম যে আমার মনে কি আছে? তবে তুই ভাবিস না, তোদের বন্ধুত্ব আমি ঠিক আগের মতো করে দেবো আর মামুন ভাইকেও ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলবো। আমাকে সময় দে একটু।”
“থ্যাংকু। আচ্ছা এখন চলতো, তোর সাথে কথা বলতে না পারলে আমার ভাত হজম হবে না।”
“কি এতো কথা শুনি?”
আদি সুমনার হাত ধরে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় এলো-
“এই, বলতো! তোর এতো সুন্দর চুলগুলো বড় করিস না কেন?”
“তোর উপর রাগ করে, আবার কেন?”
“আমার উপর রাগ করে?”
আদি যেন আকাশ থেকে পড়ে।
“আমার সাথে তো তোর দেখাই হয়নি এতোদিন। তাহলে?”
“তাহলে কি? তোর কারণে চুল কেটে ফেলতে হয়েছিলো, তাই রাগে দুঃখে আর চুল বড় করিনি। কেন করিনি সেটার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। তবে কাল্পনিক তোর সাথে ভীষণ ঝগড়া করতাম আমি। কেন আমার চুলে হাত দিয়েছিলি তুই।”
“ওওওও, তাহলে তুইও আমাকে অনেক আগের থেকেই ভালোবাসিস দেখছি?”
“হুহ, মরন আমার। ক বললে কলাগাছ বুঝিস কেন? তোর কথা বল, তুই তো ভালোবাসিস আমাকে নাকি?”
“আমার তোর মতো অস্বীকারের এলার্জি নেই। আমি তোকে ভালোবাসি এটা বুঝলাম তুই স্কুল ছাড়ার পর পর। জানিস, এরপর আর কোনো মেয়ের দিকে আমি তাকাইনি কখনো?”
“সত্যি? কিন্তু তোকে দেখে কখনো এরকম মনে হয়নি।”
“কি মনে হয়েছিলো আমাকে দেখে?”
“ইচরে পাকা বাদর! তোকে আমার ফিলিংসলেস পারসন মনেহতো।”
“আর তুই এই বাদরের বাদরনী!”
বলেই সুমনার নাক টেনে দিলো আদি আদর করে।
“উফফ লাগে তো! আচ্ছা, তাহলে তুই আমাকে ভার্সিটিতে আমাকে এতো জ্বালাতন করলি কেন?”
“জ্বালাবো না? আমি তোর সাথে কথা বলতে চাইছি আর তুই আমার সাথে ভাব নিচ্ছিলি। না হলে আমি ভালো হয়ে গেছি সেই কবে!”
“ইশশ, আমার গুড বয়রে। আমার সাথে আর বাঁদরামি করবি না তো?”
“করবো। তোকে জ্বালাতে ভালো লাগে আমার। সারাজীবন ধরে জ্বালিয়ে যাবো তোকে। যখন বুড়ো হয়ে যাবো তখনও…”
“আদি…কলার কাদি…আমাকে সারাজীবন জ্বালানোর প্লান করছিস? তবেরে…”
সুমনা আদিকে তাড়া করছে আর আদি দৌড়াচ্ছে। দুজনার চোখে মুখে অপার্থিব আনন্দ খেলে যাচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় পার করছে দুজনে। ভবিষ্যতের ভাবনা নেই কেবল ভালোবাসা আছে। আচ্ছা! ভবিষ্যতে ওরা দুজন মিলবে তো? নাকি ভালোবাসা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে?
চলবে—–
Farhana_Yesmin
#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-১৫
“মামুন ভাই, আমার কারণে আপনাদের দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব নষ্ট হোক তা কিছুতেই চাইনা। কেন এমন করছেন বলুন তো?”
সুমনার কাতর কন্ঠ শোনা গেলো।
“আমি কি করলাম মোনা? যা করার তোমরাইতো করছো? আমরা বোকাসোকা ছেলেপিলে! আমাদের কি আর এসব করা সাজে বলো?”
মামুন হাসলো একটু।
“প্লিজ মামুন ভাই, কেন ভুল বুজছেন বলুন তো? আচ্ছা, মানলাম যে আমার দোষ আছে, আপনাকে নাচিয়েছি কিন্তু আদির দোষ কোথায়? ওর সাথে কেন কথা বলছেন না? বাজে ব্যবহার কেন করছেন?”
“ওর দোষ, ও তোমাকে ভালোবাসে। তোমরা দুজন যখন লাভ বার্ড হয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াও তখন আমার শরীর জ্বলে, বুকের ভেতর খা খা করে। তোমাদের দু’জনকে ধরে মারতে ইচ্ছে করে।”
“তো মারুন না! আমাকে যতগুলো ইচ্ছে চর লাগিয়ে দিন। কিন্তু তবুও আদির সাথে এমন করবেন না। ও আপনাকে বন্ধু হিসেবে খুব ভালোবাসে। আপনি ওর সাথে কথা বলছেন না ও কষ্ট পাচ্ছে।”
মামুন খানিকক্ষণ হেঁসে নিয়ে বললো-
“শোন এতো কষ্ট করতে হবে না। তুমি শুধু আদিকে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসো দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। পারবে?”
সুমনা দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। মামুনকে খুব ভদ্র ছেলে ভেবেছিলো। এখন দেখছে ছেলেটা পুরোই উল্টো ক্যারেকটার। যতটা সহজ দেখা যায় ভেতরটা ততটাই কঠিন।
“সরি ভাইয়া, ভেবেছিলাম আপনি অন্যরকম। কিন্তু..”
“কি ভেবেছিলে? আমি বাংলা সিনেমার বাপ্পারাজের মতো? সবাইকে মিলিয়ে দিয়ে মারা যাবো টাইপ ক্যারেক্টার?”
সুমনা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আসলেও তো! এরকমই কিছু একটা ভেবেছিলো ও।
মামুন আবার কথা বলে-
“শোন জীবনটা বাংলা সিনেমা না আর আমিও বাপ্পারাজ না। তোমাকে আমার ভালো লেগেছিল। তারমানে এই না যে, তোমাকে না পেলে আমি মারা যাবো…ব্লা ব্লা টাইপ ব্যাপার। হ্যা ব্যাপারটা ভুলতে, আবার তোমাদের সাথে সহজ হতে আমার একটু সময় লাগবে। তবে ব্যাপার না, কিছুদিন আমাকে আমার মতো ছেড়ে দাও দেখবে আপনাতেই ঠিক হয়ে গেছি। আমাকে নিয়ে তোমাদের এতো ব্যাস্ত না হলেও চলবে। ঠিক আছে?”
মামুন অনেক কষ্টে ঠোঁট টেনে হাসলো। মামুনের হাসিটা দেখেই কি না কে জানে, সুমনার নিজেকে খুব করে দোষী মনেহচ্ছিলো। ধুর, ছেলেটার সাথে এমন দুষ্টুমি না করলেও পারতাম। সুমনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই মনেহয় মামুন একটু নরম হলো। শান্ত গলায় বললো-
“আর যদি সময় দিতে না চায় তাহলে বাধ্য হয়ে ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করতে হবে। কারন আমি রোবট না মানুষ। চাইলেই একদিনে সব ভুলে হাসাহাসি করবো তোমাদের সাথে, এটা পসিবল না। এখন বলো তুমি কি চাও? ভার্সিটি তে আসা বন্ধ করে দেবো?”
“না না তা করবেন কেন? ওকে, টেক ইয়োর টাইম। আমি আপনাকে ফোর্স করবো না আর। তবে আপনার ফিরে আসার অপেক্ষা করবো অধীর আগ্রহে।”
“থ্যাংস।”
মামুন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাঁটা ধরলো। ছেলেটার চোখদুটো জ্বলে টইটম্বুর যা সুমনা দেখতে পেলো না। পেলে ওর কষ্টটা দ্বিগুন হতো, মেয়েটা অন্তর্দ্বন্দে ভুগতো হয়তো। থাক, এই ভালো! কিছু কিছু ব্যাপার আড়ালে থাকা ভালো।
*******
বছর পাঁচেক পর —
আজ আদি আর সুমনার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে। ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হয়েছে আরো বছর খানের আগেই, আদি চাকরি পাওয়ার পর পরই।
সুমনার জেদ ছিলো যে, ও চাকরি পাওয়ার আগে বিয়ে করে সংসার শুরু করবে না। এখন সুমনাও কিছুদিন হলো পাশ করে বেড়িয়েছে, ভালো একটা কোম্পানিতে ওর ও জব হয়ে গেছে। তাই দু পরিবারের কেউ আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। আদি আর সুমনাও আর একে অপরের থেকে দূরে থাকতে চায় না। যথেষ্ট হয়েছে পড়ালেখা, ক্যারিয়ার গোছানো, এখন শুধু দুজনার দু’জনকে সময় দেওয়া। এই কয়েকটা বছর স্বপ্নের মতো কেটেছে ওদের। একসাথে পড়ালেখা, খুনসুটি, টম এন্ড জেরির মতো মারামারি, ঝগড়া, পেছনে লাগা। তবে দিনশেষে দু’জন জানতে ওরা একে অপরের আত্না। একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তাই সারাদিন যতই ঝগড়া করুন, রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই গুডনাইট লাভ জানাতে দুজনার কেউই ভুলতো না। আর আজ থেকে তো একসাথেই থাকবে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। অবশ্য ওদের দু’জনের বাবা মায়েরা খুব চিন্তিত যে, ওরা দুজন ঠিকঠাক মতো থাকতে পারবে তো? যে ঝগড়া করে দু’জনে সারাদিন!
এই মুহুর্তে আদি চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে স্টেজে সুমনার পাশে। সুমনা আদিকে জিজ্ঞেস করলো-
“কি রে কি ভাবছিস এতো?”
“এই, মামুন কি আসবে? ব্যাটা তো আমার ফোন রিসিভ করে নাই।”
সুমনা ঠোঁট টিপে হাসলো।
“শোন, এতো ভাবিস না। আমার সাথে কথা হয়েছে মামুন ভাইয়ের। আসবে আজকে।”
“হায়রে আমার কপাল!”
আদি কপালে হাতের চাপড় দিলো।
“কি হলো?”
“আমার এখন সারাজীবন ধরে একটা সতীন পালতে হবে এটা ভেবেই কপাল চাপরাচ্ছি। কি কপাল নিয়ে এসেছিলাম, মাইরি!”
“ধুস, বদ ছেলে। এতো ভয় পাইয়ে দিস কেন? তোর বন্ধু যদি তোর সাথে কথা না বলে আমার সাথে কথা বলে তবে আমি কি করবো?”
“হ্যা, সেটাই বলছিলাম আর কি!”
হঠাৎ সুমনার নজর গেলো সামনে। মামুন হেঁটে আসছে স্টেজের দিকে। সাথে একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ে। সুমনা আর আদি একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করলো। মামুন এগিয়ে এসে আদির সাথে কোলাকুলি করে হাত মেলালো-
“কন্গ্রাচুলেশনস বন্ধু। অবশেষে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে তুখোড় মেয়েটাকে শেষ পর্যন্ত বউ বানিয়েই ফেললি?”
“সে তো অনেক আগেই করে ফেলেছি। দোস্ত, তুই আসছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি, অনেক।”
“তোর আর সুমনার বিয়ে, আর আমি আসবো না? ভাববি কি ভাবে? ওহ সরি, ভুলেই গেছি পরিচয় করিয়ে দিতে। মিট মাই উডবি ইশরাত নিম্মি। ইনশাআল্লাহ, আগামী মাসে দাওয়াত পাবি।”
আদি আর সুমনা দুজনাই কথাটা শুনে খুশি হলো। নিম্মি মেয়েটার সাথে কথা বলে ওরা দুজনাই মুগ্ধ হয়ে গেলো। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। সুমনার কাঁধ থেকে যেন হাজার মন ওজনের পাথরটা নেমে গেলো আজ নিম্মিকে দেখে। যাক বাবা, ছেলে স্থিতিশীল হয়েছে! তা না হলে মামুনকে দেখলে ওর নিজেকে গিল্টি মনে হতো। যাওয়ার আগে সুমনা ডাকলো মামুনকে-
“ভাইয়া, দেখলেন তো! আমার চাইতে ভালো কাউকে পেয়ে গেলেন? কতো লক্ষী একটা মেয়ে নিম্মি!”
“কেউ কারো জায়গা নিতে পারে না মোনা, আর কারে জন্য জীবনও থেমে থাকে না, তাই না! নিম্মি ওর মতো করে ভালো। তবে হ্যা, মেয়েটা বোঝে আমাকে। আশাকরি ওর সাথে বাকী জীবন খুব ভালো কাটবে আমার। ”
” অবশ্যই ভালো কাটবে ভাইয়া! আমি স্পেশাল দোয়া করবো আপনার জন্য।”
মামুন সুন্দর করে হাসলো সুমনার দিকে তাকিয়ে।
“তুমিও ভালো থেকো।”
মামুন চলে যেতেই আদি দৌড়ে এলো সুমনার কাছে-
“কি এতো কথা হচ্ছিল ফিসফিস করে শুনি?”
“তোকে বলবো কেন? ওসব আমাদের দু’জনার গোপন কথা।”
“বলবি না?”
আদি রাগে ফোঁস ফোঁস করে। তা দেখে সুমনা হেসে দিলো-
“এতো হিংসা কেন রে তোর? বিয়ে করেও ভয় যায়নি?”
আদি গভীর ভালোবাসা নিয়ে সুমনার দিকে তাকালো-
“যেখানে ভালোবাসা বেশি সেখানে ভয় বেশি রে, জেরি! বুঝিস না নাকি?”
সুমনা আদর করে আদির নাক টেনে দিয়ে বললো-
“খুব বুঝি! কিন্তু বিশ্বাস রাখাটাও জরুরি, তাই না?”
“ওটার কোনো কমনি নেই আর হবেও না কখনো। সু!”
আদির সু ডাকে সুমনা কেঁপে উঠলো একটু। এতো ভালোবাসা নিয়ে ডাকে ছেলেটা যে ডাক শুনলে গোটা শরীর যেন ঝাঁকুনি দিয়ে জেগে ওঠে। একটা মারামারি আর শত্রুতার সম্পর্কে কবে থেকে যে এতো ভালোবাসা জন্মালো কে জানে? সুমনা আদির ডাকে সারা দিয়ে তার বেশি গভীর ভালোবাসা নিয়ে জবাব দিলো –
“উমমম, বল।”
“ভালোবাসি তোকে অনেক অনেক বেশি।”
“আমিও তোর চেয়ে বেশি।”
সুমনা চোখ বুঁজে ভালোবাসার অনুভুতি অনুভব করছিলো তখনই জোরে সোরে চিমটি খেয়ে চোখ খুললো। দেখলো আদি দাঁত বের করে হাসছে আর ওকে ইশারা করলো চারপাশে তাকিয়ে দেখতে। সুমনা লজ্জা পেলো ভীষণ। এই ভরা বিয়ের মজলিসে সে প্রেমে মজেছিলো? আদির দিকে চোখ পাকিয়ে বিরবির করলো-
“আজ রাতে তোর খবর আছে। দেখে নিস?”
“খবর তো তোর আমি করবো, দেখি কি করে ঠেকাস?”
বলেই আদি চোখ টিপ দিলো সুমনার দিকে তাকিয়ে। সুমনা লজ্জায় মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকালো। অন্য দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো। সুমনা ছিলো আদির উল্টো ক্যারেকটার। অথচ আদির দুষ্টুমির জবাব দিতে যেয়ে ও নিজেও কখন যে আদির মতো দুষ্টু হয়ে গেছে টেরই পায়নি। অবশ্য তাতে তো কোনো ক্ষতি হয়নি কারোরই! বরং ভালোই হয়েছে। সুমনা আর আদি ভালোবেসে এক হয়েছে। দুজনার এক দুষ্টুমিষ্টি সংসার হতে যাচ্ছে যে সংসার আদি আর সুমনার মতো দুষ্টু বুদ্ধিতে ভরা বাচ্চাকাচ্চার কলকাকলীতে মুখরিত থাকবে। সুখী হোক আদি আর সুমনা, সুখী হোক ওদের সংসার জীবন।
সমাপ্ত।
Farhana_Yesmin