অবেলায়_তুমি Part:-06

0
2034

অবেলায়_তুমি Part:-06
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)

সন্ধায় টিপকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে সাহিল।
নিজের সব রাগ জিদ যেন এই একটা মেয়ের কাছেই হার মেনে যেতে হয়। সাহিল ভাবে সেই পুরনো দিনের কথা। হিমান্ত আর সাহিল দুজনে যখন কিছু পছন্দ করতো সেটা হয় একটাই আছে নয়তো একটাই দুজনের পছন্দ অন্য অপশন মানবে না।
,
কোন শপিংমলে গেলে দুজনের মধ্য দন্দ হতো।
ঠিক এভাবে টিপকে নিয়েও যে একই সমস্যায় পরতে হবে তা জানা ছিলোনা সাহিলের।
,
,
—চলো টিপ সামনেই একটা রেস্টুরেন্ট, কি খাবে বলো।
কাকরা, চিৎড়ি বা অন্যকোন সামুদ্রিক মাছ, এগুলো এখানকার জনপ্রিয়।
,
টিপ মৃদু একটু হাসি দিলো, সাহিলকে এখন ভয় লাগে বড্ড, মাথা নুইয়ে দিলো হালকা করে।
,
পেছনে তাকাতেই হিমান্ত টিপের দিকে একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো, সাহিলও আচমকা চমকে উঠলো।
,
টিপ বোকার মতন তাকিয়ে আছে,
,
—-ভাবিজী এই ভর সন্ধায় কোন এক বড় ছাতার নিচে ঠিক দুজনে একটা ক্যান্ডেলের রঙিন আলোয় বসে বসে আইসক্রিম খেলে বেশ হয় কি বলো(বলেই মুচকি হাসি দিলো হিমান্ত)
,
—-কিরে দোস্ত কাব্যিক হলি কবে থেকে রে (সাহিল)
,
—-তোর বউকে আস্ক কর কাব্যিক না প্রত্যেকটা মেয়েরই এমন ইচ্ছা জাগে, আবার চকলেট আর আইসক্রিমের প্রতি মেয়েরা একটু দূর্বল থাকে বেশি।
,
সাহিল টিপের দিকে তাকিয়ে আছে, এখানেও আইসক্রিম, কক্সবাজার ঘুরতে এলে মানুষ কাকরা খায় শখে, কিন্তু ক্যান্ডেল জালিয়ে আইসক্রিম খায় এটাতো কখনও শুনিনি, আজব ক্যারেকটার এই মেয়েগুলো।
,
টিপ এখানে কাবাবমে হাড্ডি নিজের ইচ্ছে চাওয়া কোনটাই প্রকাশ করতে চাইছে না।
,
সাহিল আর হিমান্ত কেউই বুঝতে পারছেনা টিপ আসলে কি ভাবছে, মুখ দেখে কোনটাই বোঝা যাচ্ছে না।
,
টিপ কিছুক্ষণ ভেবে বললো, এই সন্ধায় প্রিয়জনের সাথে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে রঙিন আলোয় মুখোমুখি বসে কিছুক্ষণ চোখে চোখে কথা, তারপর টুংটাং গিটারের সুর তুলে সেই প্রিয় মানুষটার কাধে মাথা রেখে গান শোনার মজাই আলাদা।
এখানে খাবারের অপশন না হলেও চলে,,
,
টিপের কথা শুনে দুজনেই ভরকে গেলো।
,
সাহিল অট্টহাসিতে ফেটে পরছে হিমান্তকে দেখে,
কারন টিপ তার অফার চুজ করেনি।
,
টিপ আবার বলে উঠলো, যদিও আইসক্রিম কিংবা চকলেটের কোন ম্যানু থাকলে অবশ্য মন্দ হয় না।
,
হিমান্ত এবার সাহিলকে দেখে জোরে হাসি শুরু করলো।
,
সাহিল রেগে টিপের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতে আসতে হিমান্তকে বললো।
,
—-আগে বিয়ে কর আমার মত, তারপর তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখ ভাই।
বলে সোজা রুমে চলে এলো,
,
টিপকে এনে দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলো।
,
টিপ হাসছে মনে মনে,
মানুষটা যত খারাপই হোক, তার এই পাগলামি আচরণগুলো ভালোলাগে,
,
সাহিল রুমে মধ্যে পায়চারী করছে আর রাগে নিজের চুল টানছে ইচ্ছে মত।
,
এখন থেকে আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে, অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলা তো দূর তাদের দিকে তাকাবেও না বলে দিলাম।
,
টিপ প্রতিউত্তরে কিছুই বলেনি।
,

,
হয়তো এটা বিধাতারই খেলা, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ, তাদের ভিন্ন পছন্দ চাওয়া পাওয়াগুলো ও ভিন্ন।
,
একজন হাই সোসাইটিতে বিলং করে, অন্যজন তেমন উল্টো।
মানুষের ভির, কোলাহল, পার্টি নাচ গান এসবের থেকে দূরে থাকতে ভালোবাসে।
,
টিপ চুপটি করে বারান্দায় গিয়ে বসে, সাহিলের মাথা ঠান্ডা হলে কাকে যেন কল করে।
,
,
—Excuse me sir, What can I do?
—সাহিল লোকটার কাছে খাবার অর্ডার করে, আবার রুমে যায়।
টিপ বারান্দা থেকেই বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করে।
,
সাহিল টিপকে ডাকলে টিপ আসে না, মনে মনে কোথাও একটু রাগ অভিমান জরো হয়ে গেছে হয়তো এজন্যই নিরব ভূমিকায় তার বিচরণ।
,
সাহিলের রাগ আরো বেড়ে যায়।
হনহন করে বারান্দায় গিয়ে টিপের হাত টেনে রুমে নিয়ে আসে, তবুও টিপ কিছুই বলে না।
,
সাহিল খাবার এনে টিপের সামনে রাখলে টিপ উঠে যেতে নিলে সাহিল টিপকে জোর করে মুখে গুজে দেয় খাবার টিপ হা করে তাকিয়ে থাকে।
,
প্রতিবাদ করিনা বলে যা খুশি তাই করবে নাকি, পেয়েছে টা কি।
,
টিপের চোখ থেকে পানি পরে যায়।
,
আর কত ভাবে নির্যাতন করলে আপনি শান্তি পাবেন…?
,
প্রশ্ন শুনে থমকে যায় সাহিল, সত্যিই তো এভাবে কি একটা মানুষকে বেঁধে রাখা যায়।
নাকি মনের মত করে গড়ে নেয়া যায়, প্রকৃত ভালোবাসা হলো প্রজাপতির ন্যায় আকরে ধরা যাতে সে ব্যথার সামান্য আঁচটুকু ও পাবে না।
,
সাহিল টিপের চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকের সাথে চেঁপে ধরে টিপকে।
,
—হয়তোবা আমি অনেকটাই অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে, নিজের পছন্দ চাপিয়ে দেয়া, সবার সামনে অপমান করা যাতে আমায় ভয় পাও, গায়েও হাত পর্যন্ত তুলেছি, আসলে আমি খুব ভিতু জানো টিপ, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে তাকে আটকে রাখতে চাই, কিন্তু তার হিতে বিপরীত হয়।
যেমনটা পাপা আমাকে ছেড়ে আজ দূরে থাকে।
সাহিল মনে মনে কথাগুলো ভাবে,
টিপকে দেখেছিলো তার বিজনেজ পার্টনারের সাথে কোন একটা মিটিং এ, টিপ তখন বাবাকে খুঁজতে অফিসে এসেছিলো।
,
মিটিং না বুঝেই হুট করে রুমে ঢুকে পরে, তার জন্য তার বাবা তাকে কম অপমান করেনি।
,
তারপর থেকে রোজ ওকে ফলো করতাম।
,
একবার একটা ছেলে টিপকে প্রপোজ করেছিলো, টিপ চলে যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো।
,
আমি না চাইতেও রাগ, অপমান করে ফেলি টিপ।
ভয় পেয়ে যাতে আমার থেকল দূরে না যাও এজন্য।
,
কিন্তু আমি ভূল, দুটি মানুষের মধ্যে ভালোবাসাই পারে দুজনকে কাছে রাখতে।
,
আটকে রাখার প্রয়োজন হয় না, সাহিলের বুকে মাথা রেখে টিপ ফুঁপিয়ে ওঠে।
,
এত রাগ এত অত্যাচারের পরও মানুষটার বুকে মাথা রাখলে শান্তি পাই, মনে হয় আমি সারাজীবন তার বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে পারবো।
,
সাহিল আর টিপ দুজনই ভাবনার জগতে বিচরণ করে।
,
হয়তো দুজনের অজান্তেই তারা মনের অনেকটা কাছে চলে যায়।
,
সাহিল মনে মনে প্রতিঙ্গা করে টিপকে আর আটকে রাখবে না, টিপের কথা ও যা চায়, তা পূরণ করবে।
,
কিন্তু মেয়েরা কি পেলে খুশি হয় তা সাহিলের কোন কালেই জানা ছিলো না।
হিমান্ত এ ব্যাপারে ভালো বুঝে,
,
টিপ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে যায়।
,
—টিপ খাবারটা খেয়ে নাও,
—টিপ দাঁড়িয়ে পরে।
—এটা তোমার স্বামীর আদেশ।
—টিপ এবার কি করবে, সে তো আধুনিকা নয়, সে জানে স্বামীকে সম্মান করতে হয়, তার আদেশ যদি খারাপ কিছু হয় তা ব্যতীত পালন করা প্রত্যেক স্ত্রীর কর্তব্য।
,
সাহিল মনে মনে হাসে, তোমার জ্বালে তোমায় বাঁধবো গো বউ।
,
টিপ চুপ করে বসে পরে,
,
সাহিল উঠে যেতে নিলে…
,
—-খাবার সামনে ফেলে রেখে চলে যেতে নেই, এতে খানার অবহেলা করা হয়।
,
—এবার সাহিল দাঁড়িয়ে পরে, এ যে দাবার গুটির মত উল্টো চাল দিয়ে চেক দিয়ে বসলো সয়ং রাজাকেই।
এবার হ
ডু অর ডাই, কর অথবা মর, সাহিল নিজের নিজের ফাঁদে পরে গেলো, তবে মনে মনে খুশিও হলো।
,
দুজনে পাশাপাশি খেতে বসেছে।
,
টিপ একটু একটু করে তাকাচ্ছে সাহিলের দিকে।
,
সাহিল নিজের প্লেট থেকে এক লোকমা খাবার নিয়ে টিপের মুখের সামনে ধরে।
,
টিপ এবার ভাবনায় পরে যায়,
—-আমাদের প্রিয় নবী ও এমনটাই করতেন।
খাবার সময় স্বামী স্ত্রী কে খাবার খাইয়ে দিলে ভালোবাসা বারে।
,
টিপ পুরোই অবাক, এই মানুষটা এসব কথা জানলো কিভাবে, সে তো মনে হয় না পার্টি আর নাইট ক্লাব ছাড়া কিছু জানে।
,
—এটা আমাকে দিদুন শিখিয়েছিলো।
,
টিপ আর অপেক্ষা না করিয়ে সাহিলের হাতে খেয়ে নেয়, ভেতর থেকে একটা শিতল বাতাস বয়ে যায় টিপের শরীর জুরে।
হয়তো কিছু ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই এমনটা।
,
জীবনে আর কি চাই, এতটুকু হলেই যে টিপ খুশি থাকবে।
আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া, এতদিনে আল্লাহ বোধহয় তার ফরিয়াদ কবুল করেছেন।
,
,
হিমান্ত বরাবরের মত রেগেমেগে সমূদ্রের তীরে বসে আছে,
,
পাওয়া না পাওয়ার কষ্ট অনেক বেশি, ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা সবাই সহ্য করতে পারে না।
,
আচ্ছা পৃথিবীতে তো সবাই তার ভালোবাসাকে পায় না।
আর পাওয়ার মাঝেই পূর্ণতা নয়।
,
কখনও কখনও না পাওয়াও থেকে যায়, একজন পূর্ণতা পেলে অপরজন পাবে না এমনটাই।
,
হিমান্ত নিজেকে দোষ দেয়, কেন সময় থাকতে তোকে নিজের করে নিলাম না টিপ।
,
সময় গেলে সাধন হবে না, লাইনটা বারবার মনে হানা দেয় ওর।
,
এখন আর কি লাভ কষ্ট পেয়ে,
অবেলায় কেন এলে তুমি টিপ।
আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি যে,

কেন হঠাৎ তুমি এলে…
কেন নয় তবে পুরোটা জুরে…
আজ পেয়েও হারানো যায় না ভোলা
বাচাঁর মানে টা রয়ে যায় দূরে…
,
,
—মানুষ কাঁদে নিরবে, ভালোবেসে তাই
সবার থেকে আমি কেন বেশি কষ্ট পাই
ভালো না বেসেও পায় তারা, না করেই আপোশ
আমিতো বেশেছি ভালো, তবে আমার ছিলো কি দোষ।
,
হিমান্ত চমকে ওঠে..
,
মৃদু কন্ঠে কেউ একজন কি যেন বলছে।
,
বিরক্ত নিয়ে পাশে তাকায় হিমান্ত, ভাবনার মাঝে ডিস্টার্ব করা মোটেও পছন্দ না ওর।
,
কথা কানে না নিয়ে আবার সিগারেটে মন দেয়।
,
কেউ একজন ওর দিকে একটা প্রদীপ এগিয়ে দেয়।
,
ঘোলাটে অন্ধকার, তার মধ্যে একা একটা মেয়ে তাকে প্রদীপ ধরতে বলছে, বেশ অবাক হচ্ছে হিমান্ত।
,
মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখতে না পেলেও অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে তার মুখ।
,
চোখগুলো চিকচিক করছে তার।
অদ্ভুত একটা মায়া ভরা মুখ…
,
মেয়েটা হিমান্তকে ইশারায় জলন্ত প্রদীপটার দুইপাশে হাত দিয়ে সাপোর্ট দিতে বলছে…
,
—কি সমস্যা আপনার, কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে।
,
—আরে প্রদীপটা নিভে গেলো তো, বলতেই হিমান্ত আর মেয়েটা দুজনেই একসাথে প্রদীপের দুইপাশে হাত দিয়ে দেয়।
,
দুজনের হাতে মৃদু স্পর্শ লাগে, হিমান্তের মনে হয় হাতদুটো বড্ড শিতল।
কিন্তু একটা মেয়ের হাত এতটা শিতল হবার কথা না।
,
মেয়েটা খিলখিল কর হাসে, তারপর প্রদীপটা সমূদ্রে ভাসিয়ে দেয়।
,
হিমান্ত তাকিয়ে দেখে আর প্রদীপটা ভেসে যাচ্ছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে আর মেয়েটা ততোটাই অস্থির হয়ে পরছে।
,
হিমান্ত তাকিয়ে থাকে প্রদীপের দিকে ভেসে ভেসে বহুদূরে যায় সেই প্রদীপ এখনও আলো জ্বলছে, বড্ড অদ্ভুত লাগছে, এত বাতাস তবুও নিভছে না।
,
হিমান্তের মনে হলো মেয়েটার মাথায় নির্ঘাত কোন সমস্যা আছে।
,
পাশে তাকাতেই দেখে মেয়েটা নেই।
,
আরে এতটুকু সময়ে কোথায় গেলো মেয়েটা,
চারিদিক শুনশান নিরবতা, অনেকটা দূরে মানুষজন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মেয়েটার এতটুকু সময়ে এতদূরে যাওয়া অসম্ভব।
,
অদ্ভুত ভাবে বালিতে চোখ পরে হিমান্তের, মেয়েটা এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
কিন্তু কোন পায়ের ছাপ নেই, হিমান্তের পায়ের ছাঁপ বালিতে দেখা যাচ্ছে…
,
কিছুটা ভয় আর সন্দেহ লাগলো, টিপের ভাবনা কখন মাথা থেকে বের হয়ে গেলো বুঝতেই পারছে না।
,
সমূদ্রের মাঝে প্রদীপটা এখনও জ্বলছে…
তবে মনে হচ্ছে দাউদাউ করে জ্বলছে, সমূদ্রের পানিতে আগুন ধরে গেছে মনে হচ্ছে।
,
হিমান্তর শরীরে অদ্ভুত একটা কাঁপুনি শুরু হলো।
,
অসস্তি লাগছে খুব, হিমান্ত রুমে চলে গেলো।
,
গিয়ে শুয়ে পরলো, কিন্তু কম্বল গায়ে জরিয়েও তার কাঁপুনি কমছে না।
,
অনু এসে হিমান্তের কঁপালে হাত দিলে দেখে জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে ওর।

,
,
আর কেমন অদ্ভুত ভাবে বিরবির করছে হিমান্ত, অনু ভয় পেয়ে গেলো, এত জ্বর কিভাবে কি,
,
,

,
চলবে…..
,
,
(কাল্পনিকতার মাঝে কিছু ঘটনা ঘটানো যায় যদি ও বা বাস্তবে তার অস্তিত্ব নাও থাকে?, হয়তো সত্যি নয়তো হ্যালুসিনেশন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here