ভালো বেসেছিলাম তারে পর্ব – ৪,০৫

0
359

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব – ৪,০৫
মাসুরা খাতুন
০৪

ব্যালকোণির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক আহত পুরুষ। দু আঙুলের ফাঁকে স্থান পেয়েছে জলন্ত আগুন সুদ্ধ সিগারেট, যা হয়তো নিজের মতোই পুরুষটির ও দুঃখ গুলোকেও পোড়াচ্ছে। দূরে আকাশে তারাদের মিটিমিটি আনাগোনা। চাঁদ টাও আজ অন্ধকার অন্ধকার, তবে কি চাঁদ ও বুঝে গেছে সোহানের মন ভালো নেই।বকুল গাছটা থেকে ভুরভুর করে বকুলের মাদকময় গন্ধ ভেসে আসছে, বকুলের গন্ধ একটুও পছন্দ নয় সোহানের,কেমন গা গুলানো গন্ধ। কিন্তু তার পরেও বকুল গাছটা অনেক নার্সারি ঘুরে ঘুরে কিনে এনে দিয়েছে সোহান । নিশিতার খুব বায়না তার একটা বকুল গাছ চাই,নিশিতা বায়না করেছে আর সোহান সেটা না মিটিয়ে থাকতে পারে? উহু পারে না,একদম পারে না।যদিও সে জানে এ বকুল ফুল নিশিতার পছন্দ নয় বরং এ অন্য কারো পছন্দ। ছোট বেলা থেকে দেখছে নিশিতাকে,নিশিতার পছন্দ অপছন্দ সবটায় জানা সোহানের।

নিশিতার মামাতো ভাই হলো সোহান,দুজনেরই দুজনকে ছাড়া চলতো না।মারামারি,ঝগড়া, গাল ফুলে থাকা এসব লেগেই থাকতো ওদের মধ্যে, কিন্তু এর মাঝেও ছিলো খুব সুন্দর বোঝাপড়া।নিশিতা সবসময় সোহান কে ভালো বন্ধু ভেবে আসলেও সোহান কখনো নিশিতা কে শুধু একজন ভালো বন্ধু ভাবতে পারেনি,সব সময় খুব নিজের একান্ত আপন মানুষ হিসেবে চেয়েছে নিশিতা কে।যাকে ছাড়া ওর একটি মুহুর্ত চলে না,কিন্তু ছেলে মানুষ নিশিতা ওসব অনুভূতি বুঝলে তো! না নিশিতা ভাবেনি,কখনো গভীর ভাবে ভাবেনি নিশিতা।সোহান ভাবতো থাক না নিশিতা ও ওর নিজের মতো,কেউতো আর নিশিতা কে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে না । নিশিতা ওরই আছে,শুধু শুধু নিজের মনের অনুভূতি ওকে চাপিয়ে দেওয়ার দরকার কি? তারচেয়ে বরং কোন একদিন নিশিতার অজান্তেই একেবারে বিয়ের বাসর সাজিয়ে নিশিতাকে অবাক করে দেবে,আর এতোদিন বন্ধুত্বটাকে উপভোগ করি।কিন্তু না,সোহানের সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো, তার আগেই তার অব্যক্ত প্রিয়তমার মন অন্য কেউ জয় করে নিয়েছিলো।
সোহানের বড়ভাই রোহানুর রহমান অষ্ট্রেলিয়ার সিটিজেন, পড়াশোনা কমপ্লিট করে ওখানেরই একটা ভালো কোম্পানি তে জব করে।তায়তো বাবা মা সহ সোহানকেও ওখানে শিফট করতে চেয়েছিলো,কিন্তু সোহান পারেনি তার না বলা প্রিয়তমাকে ছেড়ে যেতে।নিশিতার সঙ্গ ছাড়া কি করে ওখানে গিয়ে থাকবে সোহান? তায়তো মাত্র ছয় মাসের জন্য মা বাবাকে রাখতে গিয়েছিল সোহান।আর সেই ছয় মাস টায় সোহানের জীবন থেকে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টায় কেড়ে নিয়েছে। অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে শোনে নিশিতা প্রেমে পড়েছে । প্রথমে এটা নিশিতার রসিকতা মনে করলেও পরে বুঝতে পারে না,নিশিত প্রেমে পড়েছে, সত্যিই ভয়ানক প্রেমে পড়েছে নিশিতা।
এসব অতীত স্মৃতি আওড়াতে আওড়াতে কখন নিশিতা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারে নি সোহান।

সোহানের কাঁধে হাত রাখে নিশিতা,
” কি হলো ঘুমাবে না”?

” ওহ হ্যাঁ, ঘুমাবো।তুমি এখনো জেগে? ঘুমাওনি কেন? ”
নিশিতার থেকে অন্য দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সোহান।

” এমনি ঘুম আসছিলো না তায়।”
শুকনো উত্তর নিশিতার।

” মানুষের জীবন মনে হয় ঐ চাঁদের মতো তায়না নিশিতা? কখনো আলোর ঘনঘটা, আবার কখনো অন্ধকার, একগুচ্ছ মেঘ এসে সব আলো শুষে নেয়। ঢেকে দেয় চাঁদের আলো”
বারান্দার রেলিঙে হেলান দিয়ে বলল সোহান।

” উহু, না সোহান, একগুচ্ছ মেঘ কখনো চাঁদের আলো কেড়ে নিতে পারেনা । হ্যাঁ হয়তো কিছুক্ষনের জন্য চাঁদের আলো কে আড়াল করে রাখে তায় বলে মেঘের ক্ষমতা কোথায় বলো চাঁদের আলো কেড়ে নেবে।এ আলো যে শুধু চাঁদকেই শোভা পায়।মেঘ শুধু ক্ষনিকের অতিথি মাত্র। এ আলো চাঁদের, শুধু চাঁদের, মেঘের নয়।

এতোক্ষণে নিশিতার দিকে তাকালো সোহান। দুচোখ ভরে দেখলো নিশিতাকে।

” চলো ঘুমাতো চলো।সকাল সকাল উঠতে হয় তোমার, কাল না আটটায় ক্লাস আছে?”

” হ্যাঁ,কিন্তু আমার ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না,তুমি আমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবে সোহান?”
বাচ্চাদের মতো বায়না করে বললো নিশিতা ।

” উহু একদম না।চুল টেনে টেনে দিতে পারবো না।তবে আদর করে ঘুম পাড়াতে বললে পারবো” নিশিতার চুলে একটা টান মেরে বললো সোহান।

” ইস,,, না না একদম আমার দরকার নাই । আসছে আমারে আদর করতে। একদম না” ঠোঁট উলটিয়ে বললো নিশিতা।

” না না,আমি একদম দায়িত্বহীন পুরুষ নই,আমার একমাত্র স্ত্রী যখন আবদার করেছে ঘুম পাড়াতে, তাহলে তো আমার ঘুম পাড়াতেই হবে।
দুহাতে জরিয়ে ধরলো সোহান নিশিতাকে।
দুটি মনের টানা বোঝাপড়া শেষ হয়ে আবারও একবার এক হয়ে গেলো।

বাসায় ফিরেই আরাফাত গভার্নেসের কাছে সুপ্তিকে দিয়ে নিজের রুমে গেলো।এসময় সে একা থাকতে চায়।একদম একা।ভেতরের দগদগে ক্ষতটা আজ আবার জেগে উঠেছে। এতোদিন থেকে চেপে রাখা কষ্ট টা আজ আর কিছুতেই বাধ মানতে চায়ছে না। পাগল পাগল লাগছে আরাফাত কে।তবে কি ও সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেলো নাকি! প্যাকেটভরা সিগারেট টা নিয়ে ছাদে গেলো আরাফাত। এই এতোদিন থেকে এই চাঁদ, চাঁদের আলোই তো ওর নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী হয়ে এসেছে। একমাত্র সাক্ষী আরাফাতের নির্ঘুম রাতগুলোর।

একের পর এক সিগারেটে কষ্ট পোড়াতে থাকে আরাফাত। মাঝখানে মদ ধরেছিলো,কিন্তু ডক্টরের কড়া নির্দেশ কিছুতেই আরাফাত ড্রিংক করতে পারবেনা।এ তার জন্য বড়ই বিপদজনক। তায়তো আরাফাত ড্রিংক করা বাদ দিয়েছে। শুধু নিজের কথা ভাবলেই তো হবে না।সুপ্তিকেও তো দেখে রাখতে হবে ওর।ওর কিছু হয়ে গেলে সুপ্তির কি হবে।তায়তো আরাফাত নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে।

” কেন? কেন দেখা হলো তোমার সাথে? আমি তো তোমায় দেখতে চায়নি,আমিতো তোমার স্মৃতি গুলো নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। কেন দেখা হলো? “”
জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে চাঁদ কে প্রশ্ন করে আরাফাত। দুচোখ বেয়ে নোনাজল ভির করে।ছেলেটা চিৎকার করে, জোরে জোরে চিৎকার করে।

” তোমার ঐ দু’চোখে আমি কখখনো ঘৃণা দেখতে পারবো না নিশু।এই,এই ভয়েই আমি এতোগুলা বছর পালিয়ে পালিয়ে থেকেছি নিশু। আজ!আজ তোমার চোখে কেন আমি ঘৃণা দেখলাম? না না এ তোমার ঘৃণা হতে পারে না, তায়না? এ তোমার অ অভিমান।

” আমি নিরুপায় ছিলাম নিশু,আমি নিরুপায়।তায়তো তোমাকে আমার করতে পারিনি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও নিশু।ক্ষমা করে দাও প্লিজ, প্লিজ।

আকাশের ঐ চাঁদ বড়ই নিষ্ঠুর,কোন জবাব দেয় না আরাফাতের এতোগুলা প্রশ্নের। আরাফাত কে দেখে যেন তাচ্ছিল্য করছে চাঁদ।তায়তো আরাফাতের এতো কষ্টের মাঝে ও অহংকারীর মতো আলো ছড়াচ্ছে।
কাঁদতে কাঁদতে আরাফাত ছাদের রেলিং ধরে বসে পরে। এমন সময় প্যাকেট ভর্তি সিগারেট ও শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশ্রী একটা গালি দেয় নিজেকেই।তারপর ক্লান্ত বিধস্ত শরীর টা নিয়ে ওখানেই পড়ে থাকে।

ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়।কেউ হাজার তপস্যা করেও পায়না,আবার কেউ পেয়েও হারায়।ভালোবাসায় কারো রাত হয় সুখের অন্য দিকে কারোবা আবার যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ। কেউবা আবার মনের গহীনে প্রিয় মানুষ টিকে পুষে রেখেও হাসিমুখে সংসার নামক খেলায় দিবারাত্রি যাপন করে। আবার কেউবা প্রিয় মানুষ টিকে পেয়েও হারিয়ে ফেলে নিকোটিনে নিজেকে পোড়ায়।

চলবে,,,,,,,

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব -৫
মাসুরা খাতুন

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুপ্তি কে ড্রাইভার স্কুলে আনা নেওয়া করছে।অনেকটা ইচ্ছে করেই আরাফাত এড়িয়ে গেছে সুপ্তি কে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা।কি লাভ! যাকে আর কোনদিন পাওয়ায় যাবে না, সম্পূর্ণ ধরা ছোঁয়ার বাইরে তার সাথে হটাৎ হটাৎ দেখা করে নিজের কষ্ট গুলো বাড়ানোর।একদিন যে মানুষটার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো,যে মানুষ টা ওর ছন্নছাড়া জীবন টাকে একটা সুন্দর ফ্রেমে বাঁধতে চেয়েছিলো তাকেই তো সে ধরে রাখতে পারে নি তবে কেন আজ যখন মানুষটা নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে, তার সেই গোছানো জীবন টাতে নিজের অভিশপ্ত জীবনের ছায়া ফেলবে।না না, এ আরাফাত কিছুতেই চায়না। বরং থাকুক নিশিতা নিজের মতো,হোকনা কারো সুখের ঘরের ঘরণী, রাঙিয়ে দিক কারো জীবন, তাতে আরাফাতের কি? আরাফাত নিজেই তো নিশিতাকে ছেড়ে দিয়েছিলো,সেই ধরে রাখতে পারে নি তার নিয়িতাকে।যেই মেয়ে টা এক মুহূর্ত আরাফাত কে না দেখলে থাকতে পারতো না,আরাফাত ছিলো যার অক্সিজেন, আজ সেই মেয়ে টা কতো কতো দূরে,এযে আরাফাতেরই অপারগতা।

আজ সুপ্তি ও নিশানদের স্কুলে অভিভাবকদের মিটিং আছে,সামনে বার্ষিক পরীক্ষা তায়তো বাচ্চাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, প্রত্যেকটা বাচ্চার অভিভাবক কে নোটিশ করা হয়েছে আসার জন্য। নিশিতার আজ নয়টায় ফাস্ট ইয়ারে ক্লাস আছে। দশটার সময় মিটিংয়ে পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে যাবে, তায়তো নিশানকে আগেই বলে রেখেছে তার একটু দেরি হলেও ঠিক মিটিংয়ে গিয়ে পৌছাবে,সে যেনো কান্না না করে।

সত্যি সত্যিই নিশিতা খানিকটা দেরি করে ফেলে,ক্লাস থেকে প্রায় নয়টা চল্লিশের দিকে বেরোয়,আর নিশানের স্কুলে পৌঁছাতে প্রায় দশটা পনেরো বেজে যায়। গেইট দিয়ে প্রবেশ করেই খেয়াল করে বাইরে খুব একটা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একটু তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে হটাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগে নিশিতা।সাথে সাথেই শক্ত পুরুষালি হাত ধরে ফেলে নিশিতাকে।নিজেকে সামলে নিয়ে নিশিতা হাতের দিকে তাকাতেই খেয়াল করে সিলভার কালারের ঘড়ি টা।হাতের অধিকারী পুরুষটির মুখের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে নিশিতা। নিজেকে যথাসম্ভব দূরে নিয়ে নেয় সাথে সাথেই।
নীল রঙা পাড়ের সাদা সুতি শাড়িটা পড়েছিলো নিশিতা।চুলগুলো হাত খোপা করে রাখা, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। আর কোন মেকি সাজ ছিলো না,তাতেই নিশিতা কে পুরো অপ্সরির মতো লাগছিলো,এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক মন নিজের হাহাকার শূন্য জীবনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিলো অপলোক তাকিয়ে থেকে।
আরাফাতের ও আজ ব্যবসায়িক পার্টির সাথে দেখা করার কথা ছিলো,তায়তো সেও একটু দেরি করে এসেছিলো,এসে একটু বসতেই আবারও ফোণ আসায় রিসিভ করতে বাইরে এসেছিলো,সাইডে দাঁড়িয়ে তার স্বপ্নকন্যাকে আসতে দেখে হা করে তাকিয়ে ছিলো সেই প্রিয় রমণীর দিকে, এরমাঝেই নিশিতা এসে একদম ধাক্কা খেলো আরাফাতের বুকে,আর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো তখনই ধরে ফেললো আরাফাত।

” কি ব্যাপার, এভাবে আমাকে টাচ করলেন কেন? একজন অপরিচিতা নারী কে ছোঁয়ার এতোই সখ?
অত্যন্ত রাগী কণ্ঠে প্রশ্ন করলো নিশিতা ।

” তুমি তো আমার অপরিচিতা নও নিশু,তবে হ্যাঁ, আমি তোমাকে ইচ্ছে করে টাচ করিনি,তুমি পড়ে যাচ্ছিলে তায় ধরলাম,নাহলে তুমি আঘাত পেতে নিশু” মায়াবী কণ্ঠে জবাবদিহিতা আরাফাতের।

” বাহ! আমার আঘাত পাওয়া নিয়ে আপনার কতো চিন্তা। পড়ে যেতাম তো কি হয়েছে? না হয় একটু ব্যথা পেতাম,সেড়ে যেতো,কিন্তু অপরিচিত কেও ছুয়ে দিলে আমার ঘেন্না লাগে, গা ঘিনঘিন করে। “অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে উত্তর দেয় নিশিতা।

” নিশু!”
সেসময় নিশিতা সামনে থাকা মানুষটির দিকে একবার তাকালে দেখতে পেতো চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে ছেলেটি ওর দিকে।

আরাফাত অতীতের সাগরে ডুব দিলো,নিশিতার ভিষণ রকম দাবি, প্রতিদিন দেখা হলেই নিশিতার কপালের মধ্যেখান টায় একটা চুমু খেতে হবে আরাফাত কে । আর বেশী কোন আদর বা জিনিসের দাবি ছিলো না নিশিতার। যেখানে অন্য মেয়েরা কতো কতো গিফট বায়না করে বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে সেখানে ওর পাগলিটার দাবি শুধু একটা চুমু,কপালের মাঝ বরাবর। ওদের চার বছরের প্রেমে খুব কম দিনই গেছে যেদিন নিশিতা আরাফাতের কাছ থেকে একটা চুমু নেয় নি,ওদের প্রেমে কোন অশ্লীলতা ছিলো না,আরাফাত কোন ও দিন ও চায়নি ওর প্রিয়তমার গায়ে কোন কালি লাগুক।ওর নিশিতা যে ভিষণ রকম পবিত্র । নিশিতা খুবই স্বার্থপর, ও কোনদিনও একটা চুমু আরাফাত কে দেয় নি বরং নিশিতার উইশ ছিলো ও ওর প্রথম চুমু ওর বরকে দিবে,যেদিন আরাফাত বর বেশে নিশিতার ঘরে আসবে,সেদিনই নিশিতা ওর প্রথম চুমুটা আরাফাত কে দেবে,এমন হাজারো ইচ্ছে বুনেছিলো একজোড়া প্রেমিক মন।কিন্তু সময় ও পরিস্থিতির কাছে ওরা পরাজিত।
আজও নিশিতার কপালে কেউ রোজ সকালে খুব যত্ন করে চুমু দেয়, কিন্তু সেটা আরাফাত নয়,অন্য কেউ,নিশিতা এখন পুরোপুরিই তার,এখন আরাফাতের সামান্য ছোঁয়া ও নিশিতার বিরক্তির কারণ,নিশিতার গা গুলিয়ে তোলে।

অতীত থেকে ফিরে এলো আরাফাত ঘণ্টা বাজার ঢং ঢং তীক্ষ্ণ শব্দে। সামনে তাকিয়ে দেখে নিশিতা নেই, অনেক আগেই নিশিতা স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে।

নিশান কে নিয়ে নিশিতা যখন বাসায় এলো তখন পুরোপুরিই দুপুর, বাইরের পোশাক পাল্টে ফেলে নিশিতা ওয়াশরুমে ঢুকলো,ঘণ্টা ধরে নিশিতা শাওয়ার নিলো।আজ এতো দিন পরে আবার ও ঐ বেইমান টার ছোঁয়া লেগেছে, তা কিছুতেই থাকতে দেবে না নিশিতা,ধুয়ে মুছে তুলে ফেলবে সকল স্পর্শ। সেই চিরচেনা পারফিউমের গন্ধ, সেই গায়ের ঘ্রাণ না না কিছুতেই যাচ্ছে না নাক থেকে। সেই মায়াবী মুখ কিছুতেই ভুলতে পারছেনা নিশিতা,সেই সময় ভাগ্যিস নিশিতা মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলো,নাহলে ঠিক আজ ঐ বেইমানটার সামনে ধরা পড়ে যেতো নিশিতা। এতো দিনের অভিনয় করে যাওয়া শক্ত রুক্ষ কঠোর চেহারাটা যে ও খুব কষ্ট করে বানিয়ে রাখে আরাফাতের সামনে তা ঠিক ধরতে পারতো আরাফাত। আরাফাত কে ওমন কড়া কথা শুনিয়ে যে নিশিতা কতোটা যন্ত্রণা পেয়েছে তা আরাফাত কে কিছুতেই বুঝতে দিতে চায়নি নিশিতা। তায়তো পালিয়ে এসেছে ও।
ওয়াশরুমের দরজায় কারো জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দে নিশিতার ঘোর কাটে।সোহান আজ একটু আগেই বাসায় এসেছে, হাতে সময় ছিলো,তায়তো নিশিতার পছন্দের খাবার রান্না করেছে।আর নিশিতা বাসায় এসে সেই তখন থেকেই ওয়াশরুমে আটকে আছে, তা দেখেই সোহান বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।সেই ছোট বেলা থেকেই তো দেখে আসছে নিশিতার আচরণ। কারো সাথে কিছু হলেই মেয়েটা সোজা ওয়াশরুমে ঢুকবে আর লম্বা শাওয়ার নিয়ে চোখ দুটো লাল বানিয়ে বাইরে আসবে।

নিশিতা দরজা খুলে বাইরে আসে,ওর চোখ গুলো দেখে আঁতকে ওঠে সোহান,অসম্ভব লাল হয়ে গেছে চোখগুলো।সোহান নিশিতার গালে হাত দিলো,
” কি হয়েছে নিশু? কেন করো এমন পাগলামি? ”

” তুমি আমাকে একটু আদর করবে সোহান? খুব করে জরিয়ে ধরবে একবার”

দু’হাতে শক্ত করে জরিয়ে নিলো প্রিয়তমাকে সোহান।বুকের উষ্ণতা দিয়ে ঢেকে দিলো নিশিতার ঠান্ডা বরফসম দেহ টাকে।

” তুমি আমাকে কখনো ছাড়বে না তো সোহান? কখনো ভুল বুঝবে না?”

” না নিশিতা কখনো ভুল বুঝবো না,আমি জানি আমার নিশিতা ভুল করতে পারে না। ”

” যদি কখনো ভুল করে ফেলি,খুব কঠিন ভুল,যদি কোন সম্মহনী শক্তি আমাকে তার দিকে টেনে নেয়, আমি নিজেও যদি হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ি,এগোতে থাকি,সেই শক্তির দিকে,? তুমি ফেরাবে তো আমায়? আটকাবে তো আমাকে?যেতে দেবে না তো?”

“ধুর পাগলি,তুমি আমার,আমি বিশ্বাস করি তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।তুমি আমার মায়ায় বাঁধা পড়ে গেছো,কোন সম্মোহনী শক্তি তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।”
নিশিতার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল সোহান।

” না না আমিও যেতে চায়না সোহান তোমাকে ছেড়ে, কোথথাও যেতে চায়না” অত্যন্ত আতংকিত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলো বললো নিশিতা।
আসলে আজকের ঘটনায় নিশিতা নিজেও ভিতু হয়ে গেছে, নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস হারাচ্ছে।যদি যদি আবার কখনো ও আরাফাতের জন্য আগের মতো আকুল হয়ে যায়,আরাফাতের মায়ায় পড়ে যায়। না না, আর ভাবতে পারে না নিশিতা। ও ভালো আছে, সোহান কে নিয়ে ও ভালো আছে, সোহানের মতো মানুষকে কষ্ট দেওয়া যায় না।ধিরে ধিরে সোহানের বুকে শান্ত হতে থাকে নিশিতা।

তিন ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে আরাফাতের। নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে। একটু উঠতে চায়লেই দায়িত্বরত চিকিৎসক বাধা দেয় আরাফাত কে।

” আমি ঠিক আছি ডক্টর। আই এম ফিট! ”

” না মিস্টার আরাফাত আপনি ঠিক নেই, আপনাকে বার বার বলে দিয়েছিলাম ড্রিংকস না করতে,তার পরও আপনি ড্রিংক করেছেন,আপনার শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন করতে থাকলে বেশি দিন আপনাকে আমরা ধরে রাখতে পারবো মিস্টার আরাফাত। ”

ডক্টরের কথা শুনে হা হা করে হেসে ওঠে আরাফাত,,,,,

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here