ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব-৮,০৯
মাসুরা খাতুন
০৮
” হ্যালো,হ্যালো,কে বলছেন? কি আশ্চর্য কথা বলছেন না কেন?”
নিশিতার সব কথা গুলিয়ে আসে,কি বলবে বুঝতে পারে না। শুধু ফোনের ওপর পাশের মানুষটির কণ্ঠস্বর শুনতে থাকে।
“হ্যালো,কে বলছেন? কথা বলুন। “কোন উত্তর না আসায় বিরক্ত হয়ে ফোন টা কেটে দেয় আরাফাত।
কিছুক্ষন পরে আবার কল দেয় নিশিতা, এবার ফোন রিসিভ করেই অনেক টা বিরক্ত হয়েই চেঁচিয়ে ওঠে আরাফাত,
“কি ব্যাপার, ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেন, আর ফোন যখন দেনই তাহলে কথা বলতে,,,”বাকিটা আর বলতে পারলো না আরাফাত, ফোনের ওপর পাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ভেসে আসে,
“হ্যা হ্যালো”
আরাফাত একদম শান্ত হয়ে যায়।থেমে যায় আরাফাতের বিরক্ত মাখা কথা,এই এতোটুকু “হ্যালো”বলা কণ্ঠ শুনেই আরাফাত একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়।সে কি সত্যিই শুনেছে? নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না আরাফাত। তায় আবার শান্ত মায়াময় কণ্ঠে বলে ওঠে,
“কে? কে বলছেন? ”
“আমি, আমি নিশিতা “কোনরকমে কথাটা বলে নিশিতা।সেই সাত বছর আগে ফোনে কথা হয়েছিল মানুষটির সাথে, এরপর আর কোনদিম ফোনে কথা হয়নি নিশিতার।তার পরই নিশিতা সিম চেঞ্জ করে ফেলেছিলো।
“নিশু তুমি! তুমি আমাকে ফোন করেছো! এটা কি সত্যি? ”
অবিশ্বাসের সুরে বলে আরাফাত।
“কেমন আছেন আপনি? “নিশিতার কাঁপা কাঁপা প্রশ্ন।
” আছি,অনেক ভালো।তুমি কিন্তু একটা সময় আমায় তুমি করেই বলতে নিশু?”আক্ষেপের সুরে বলে আরাফাত।
” সেই একটা সময় এখন আর নেই আরাফাত সাহেব, আজ আমি অন্য কারো স্ত্রী, কারো মা” উত্তর দেয় নিশিতা।
” তুমি কি এসব বলতেই আমায় ফোন করেছো নিশু?”ব্যথা ভরা কণ্ঠে জানতে চায় আরাফাত।
“না,কথাটা আপনিই তুলেছেন। কি হয়েছে আপনার? আপনার নাকি শরীর খারাপ? “জানতে চায় নিশিতা।
” ধুর কে বলেছে তোমাকে এসব? “উড়িয়ে দেয় আরাফাত।
” মিথ্যে বলতেও শিখে গেছেন? “বললো নিশিতা।
” মিথ্যে! মিথ্যে বলা শিখতে হয় নাকি নিশু? মিথ্যে তো আমি আরো আগে থেকে বলা শিখেছি। নতুন করে আর কি শিখবো।”হালকা হেসে উত্তর দেয় আরাফাত।
” না, আপনি মিথ্যে বলতে পারতেন না।অনেক বার আজগুবি মিথ্যে বলতে গিয়ে আমার হাতের অনেক মাইর খেয়েছেন”জড়তা ভুলে কথা বলে নিশিতা।
“তাহলে তো আমি তোমার হাতের অনেক মাইর খাবো নিশু,আজ আমি অনেক মিথ্যা বলি,”হেসে কথাটি বলল আরাফাত।
“তুমি কি বলতে চায়ছো আরাফাত? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ”
আরাফাত মুচকি হাসে,”তুমি “টা যে নিশিতা ভুল করে বলপ ফেলেছে তা আরাফাত বুঝতে পারে। সে৷ প্রথম দিনই নিশিতার চোখ দেখে বুঝতে পেরেছিল, এ রুক্ষতা, কঠোরতা সবটায় নিশিতার বানানো, মেকি।
“এতো সব বুঝতে হবে না।এবার বলো,এতোদিন পর কি মনে করে ফোন করলে?”প্রসঙ্গ উল্টায় আরাফাত।
“কেন, কল দেওয়ায় কি খুব বিরক্ত? ”
“বিরক্ত “কথাটি নিয়ে মনে মনে দুই তিন বার আওড়ায় আরাফাত। নিশিতার কলে ও বিরক্ত হবে? যেই মেয়ে টি ওর প্রতিটি নিশ্বাস, যেই মেয়েটি ওর হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন সেই মেয়ে টির ফোনে ও বিরক্ত হবে? ওর প্রতিটি নির্ঘুম রাতের কারণ যেই মেয়ে টি, সে কখনো আরাফাতের বিরক্ত হতে পারে? সেই মেয়েটির প্রতিটি কণ্ঠস্বর যে ওর কাছে কোটি টাকার চাইতে দামি,জীবনের শেষ দিন আগে ও যে ওই মোহময় কণ্ঠস্বর ও শুনতে চায়।
“কি হলো আরাফাত? আমি কিন্তু উত্তর পায়নি “আবারও বললো নিশিতা।
“না না,তেমন কিছু না,ঐ এমনিই আরকি,আমার আবার কি হবে তায়”খাপছাড়া উত্তর আরাফাতের।
“একদম কথা উল্টাবে না,যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।কি অসুখ করেছে তোমার? “শাসনের সুরে বলল নিশিতা।
” আমার কিছু হয়নি মায়াবতী।কি আর হবে বলতো? মরে তো আর যাচ্ছি না”আবেগের বশে বলে ফেলে আরাফাত।
“কি বলছ এসব? তোমার কি মনে হয় আজও তোমার আমায় মায়াবতী বলার অধিকার আছে? “চেঁচিয়ে বলে ওঠে নিশিতা।
“সরি ভুল করে বলে ফেলছি,অনেক দিনের অভ্যাস তো! তায়।”
“সব অভ্যাস জিইয়ে রাখতে নেই আরাফাত “বলল নিশিতা।
“তুমি ও তো অনেক অভ্যাস ভুলতে পারোনি নিশিতা। এই যে আমাকে আপনি বলবে ভেবে রাখলেও ভুল করে তুমি করে বলে ফেলছো”মুচকি হাসি দিয়ে বলে আরাফাত।
চুপসে যায় নিশিতা। প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য কথায় চলে আসে নিশিতা।
“শোন,তোমাকে যে কারনে ফোন করেছি,তুমি নাকি ইদানিং ড্রিংক করো? এটা কি সত্যি আরাফাত? ” উতলা হয়ে প্রশ্ন করলো নিশিতা।
“এসব তোমাকে কে বলেছে নিশিতা? এতো কিছুর পরও তুমি আমার সম্পর্কে এতো খোঁজ আজও রাখো নিশিতা? “প্রেয়সীর কাছে অধির আগ্রহে প্রশ্ন আরাফাতের।
“ওসব হেয়ালি বাদ দাও,আমি জানি তুমি ড্রিংক করো।তোমার তো কোন কষ্ট থাকার কথা নয় আরাফাত । তুমি যা চেয়েছো আমি তো তায় দিয়েছি।তুমি মুক্তি চেয়েছিলে,আমি সারাজীবনের জন্য সরে এসেছি তোমার জীবন থেকে, তাহলে কিসের এতো কষ্ট, কিসের এতো আক্ষেপ তোমার আরাফাত? নাকি সুপ্তির মায়ের জন্য তুমি কাঁদো? “আগ্রহে জানতে চায় নিশিতা।
নিঃশব্দে হাসে আরাফাত। নিশিতার করা প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ও।এসব প্রশ্নের উত্তর কি দেওয়ার মতো,না একদম দেওয়া যায় না।আজ ওর এই পরিনতির জন্য কে দায়ী? নিশিতার তো কোন দোষ নেই, তাহলে কি ওর দোষ? নাকি নিয়তির? নিয়তি ওদের এক হতে দেয় নি।দুটি হৃদয়ে আকাশ সমান ভালোবাসা, প্রগাঢ় টান,সব সব কিছু থাকা সত্বেও এক হতে পারে নি ওরা।এক হতে দেয় নি ওদের নিয়তি।তাহলে আজ যখন নিশিতা কষ্ট গুলোকে ভুলে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে তবে ও কেন এসে ওদের জীবনের কাটা হবে।ওর অভিশপ্ত জীবনের ছায়া ও পড়তে দেবেনা ও নিশিতার সুখের সংসারে।তায়তো এতোদিন পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে।আজ এ শহর,কাল ও শহর, ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান, কখনো দেশে,কখনো বিদেশে নানা ভাবে পালিয়ে থেকেছে আরাফাত। সুপ্তিকে নিয়ে দিনের পর দিন বাইরে বাইরে থেকেছে শুধু নিশিতার সামনে পড়বে না বলে।নিশিতার প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে আরাফাত নিজেই প্রশ্ন করে,
“তুমি খুব সুখে আছো তায় না নিশিতা? সোহান খুব ভালোবাসে তোমাকে “অনেক কষ্টে কথাটি বলল আরাফাত।
“হ্যাঁ, আমি সুখে আছি,অনেক অনেক ভালো আছি আমি।সোহান খুব ভালো ছেলে,তুমি ছেড়ে না গেলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না,আরো একজন আমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারে। ভিষণ ভাবে আগলে রেখেছে আমায়”
উৎসাহের সাথে বলল নিশিতা।
আরাফাত মুচকি হাসলো নিশিতার কথার বিনিময়ে।সে না পাক,এই পৃথিবীতেই কারো বুকে সুখে আছে নিশিতা, এই তো ঢের।নিশিতার তো কোন দোষ নেই, সেতো নিষ্পাপ, সে ডিজার্ভ করে একটি সুখী সুন্দর সংসার।আর তা নিশিতা পেয়েছে। চোখের সামনে নিশিতাকে সুখী দেখে তার থেকে বেশি খুশি আর কে হবে।
“খুব ভালো নিশিতা। সোহান খুব ভালো ছেলে, আমি প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছি,তুমি ডিজার্ভ করো এমন ছেলেই।”দীর্ঘ শ্বাস ফলে বলল আরাফাত।
“আরাফাত শোন, প্লিজ,,,, ড্রিংক করো না,তোমার ড্রিংক করা সুপ্তির ওপর প্রভাব ফেলে,ও মন খারাপ করে থাকে স্কুলে এসে।বাচ্চা মেয়েটা ভিষণ ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে দিন দিন। সো প্লিজ,,, ওর কথা চিন্তা করে হলেও ড্রিংক করো না প্লিজ। “নিশিতার আবদার ।
“আমি চেষ্টা করবো নিশু,তবে কথা দিতে পারছিনা,কিন্তু ওই, ওই একটা বোতলই আছে আমার সব কষ্টের দূর করার ঔষধ। ওটা খেতে মানা করো না প্লিজ। তবে সুপ্তি আর কখনো ওর বাবাই কে ড্রিংক করতে দেখতে পাবেনা,আমি তোমায় কথা দিলাম। “মিনতি করলো আরাফাত।
দূর মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের সুমধুর সুর ভেসে আসছে।মুয়াজ্জিন মধুর ধ্বনিতে মানুষ কে কল্যাণের জন্য ডাকছেন।নামাজ পড়ে নিশানকে পড়াতে বসলো নিশিতা।
সোহান প্রায় নয়টার দিকে বাসায় আসলো,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,
ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব -৯
মাসুরা খাতুন
রাত প্রায় নয়টা।ঘড়ির কাটা নয়টার ঘরে ছুঁইছুঁই। ঘোর কালো রাত,চারদিক নিকষ কালো অন্ধকার ছেয়ে আছে।আকাশে কোথাও চাঁদের অস্তিত্ব নেই। আলোহীন নিকষ কালো এ রাতে নিশিতা বাড়িতে একা।নিশান কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে আটটার দিকে। কেমন একটা অপরাধ বোধ ছেয়ে গেছে নিশিতার মন।আজ সে আরাফাতের সাথে কথা বলেছে।কিন্তু সোহানের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল না।সোহান যদি শোনে নিশিতা আরাফাত কে কল দিয়েছিলো, তাহলে কি সোহান খুব রাগ করবে? মুখে কিছু না বললেও মনে মনে কি খুব রাগ করবে সোহান?এসব কথা আওড়ায় নিশিতা মনে মনে।দূরে কোথাও থেকে ডাহুকের ডাক ভেসে আসছে।খুব খুব করুন স্বরে ডাকছে ডাহুক টা।হয়তো ওর সঙ্গী টা হারিয়ে গেছে, তায়তো সঙ্গী হীনতায় করুন স্বরে একটানা আর্তনাদ করছে বিরহী পাখি টা।
একটা দমকা হাওয়া এসে লাগলো নিশিতার গায়ে,সাথে সাথে কাটা দিয়ে উঠলো ওর সারা শরীর। নিশিতা গিয়ে জানালা গুলো বন্ধ করে দিলো।সোহানকে একটা কল দিলো,কিছুক্ষণ পরে কেটে দিলো সোহান। আর সাথে সাথেই বেজে উঠল কোকিল পাখির ডাকের স্বরের কলিং বেল টা। নিশিতা বুঝে গেল সোহান এসেছে। এই প্রতিক্ষায় তো ছিলো ও এতোক্ষণ । সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় খুব একটা সময় দুজনে দুজনকে দিতে পারেনা।সোহান সকালে যায় অফিসে, দুপুরে অবশ্য খানিকক্ষণের জন্য আসে,পরিবারের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাবে বলে,তার ওপর আবার ওর মহারাণী ওকে ছাড়া কিছুতেই খাবে না।সোহানের হাতের না খেলে নিশিতার নাকি পেট ভরে না।অভ্যাস টা শুরু করেছে সোহান নিজেই। ঐ দিন গুলোতে, যখন নিশিতা মৃত প্রায় হয়ে বেঁচে ছিলো,ঠিক মতো খেত না,তখন সোহানই একটু একটু করে ওকে খাওয়ায় প্রতিদিন। আর সেই থেকে এটাকে নিয়ম করে নিয়েছে নিশিতা।দিনে একবার হলেও নিশিতাকে খাইয়ে দিতে হবে সোহানকে। সকালের টার সময় হয়না।সকালে কাজের খালা এসে যখন রান্না করে দেয় তখন হয়তো নিশিতা নিশান কে তৈরি করে দেয় স্কুল যাবার জন্য , আর সোহান তখন পড়ে পড়ে ঘুমায়।তারপর তিনজনের যে যখন সময় পায় একটু নাকে মুখে গুজে দৌড় দেয় । আর তায়তো দুপুরের খাবার টা সোহান বাসায় এসেই খায়।কেননা রাতে আবার নিশান তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায় খুব কম দিনই ওদের বাবা ছেলের দেখা হয় রাতে।
দরজা খুলেই কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখে মুচকি হাসি ফিরিয়ে দেয় নিশিতা।প্রিয় পুরুষটি ও কপালে আদর চিহ্ন এঁকে দিতে ভোলে না।
“আজ এতো দেরি হলো যে?”সোহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে নিশিতা।
“আরে ঐ যে বললাম না,বিদেশি এক ক্লাইন্টের সাথে আজ মিটিং আছে, ওখানেই মিটিং শেষ করে উনাকে হোটেলে পাঠাতে পাঠাতে দেরি হয়ে গেছে। “সুন্দর করে উত্তর দিলো সোহান।
নিশিতা রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে এক ঝটকায় নিশিতার হাত টা টান দিয়ে নিশিতা কে নিজের বাহুদ্বরে আঁটকে নেয় সোহান।
“আহা কি করছ? ছাড়ো তো। একদম পাগলামি করোনা “বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো নিশিতা।
“আজ না হয় করলাম একটু পাগলামি। একদম ছাড়বো না।পাগলামি কাকে বলে আজ দেখিয়েই ছাড়বো”কথাটি বলেই ঠোঁটের উষ্ণ পরশে ডুবিয়ে দিতে থাকলো নিশিতার ঠোঁট, গলা ঘাড়।
সোহানের উষ্ণ ছোয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠল নিশিতা। প্রিয় স্বামির প্রতিটি স্পর্শে দূর হয়ে গেলো ওর মনের সারাদিনের যত গ্লানি।
“কি ব্যাপার? স্যার আজ একটু বেশিই রোমান্টিক মুডে আছেন দেখছি?এতো রোমাঞ্চ এলো কোথা থেকে? “মজা করে বলল নিশিতা।
“আরে, আর বলো না।এসব বিদেশিরাও না? ঘরে বই রেখে এসে কোন অফিস পার্টি বা মিটিংয়ে আসলেই ওদের মেয়ে লাগবে।পার্টি তে কি সব মেয়েদের আনা হয়েছিল, কি বিশ্রী পোশাক! “একদম নাক ছিটকানোর মতো করে বলল সোহান।
“ওও তায় জন্য আপনার ও মনে রোমাঞ্চ জেগেছে তায়না? তো কেমন দেখলেন ওসব মেয়েদের? নাকি একটু নাচ ও করলেন? “কৌতুকের স্বরে বলল নিশিতা।
“নাউজুবিল্লাহ,, কিযে বলো না? আ- আমি কি ওইরকম টাইপের নাকি?”বাচ্চাদের মতো করে বলল সোহান।
“ওও আপনি ঐ টাইপের না? তায়না,,তাহলে মেয়ে গুলো যে পোশাক কেমন পড়ে আছে সেগুলো দেখলেন কেমন করে? “কপট রাগ দেখিয়ে বলল নিশিতা।
“তুমি বিশ্বাস করো নিশু,আমি একদম ওদের দিকে তালায় নি,এমনিই চোখের সামনে এসে পড়েছিল আর কি।” পড়া না হওয়া ছাত্রের মতো করে অসহায় মুখে বলল সোহান।
“হা হা,,,দিলাম তো তোমার রোমান্সের বারো টা বাজিয়ে। এইবার যাও,আট রোমান্স করতে হবে না । ফ্রেশ হয়ে এসো,টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ”
নিশিতা যেতে লাগলেই হাতের বন্ধন টা আরো জোরালো করে সোহান বলল,
“এই নিশু,তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করেছ আমি ওদের দিকে তাকিয়েছি?”আবার ও অপরাধীর মতো করে বলল সোহান।
“ধুর বোকা,আমি ভালো করেই জানি আমার সোহান কতোটা সরল,কতটা ইনোসেন্ট। বরং আমিই তোমার যোগ্য নই।”অপরাধীর মতো বলল নিশিতা।
“কিই নিশু? আবার শুরু করলে এসব।আমার কোন অভিযোগ নেই নিশু তোমার ওপর।”মায়াময় চোখে তাকিয়ে বলল সোহান।
“তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো তাইনা সোহান? আচ্ছা সোহান, তুমি আমায় বিশ্বাস করো তো?”সোহানের দিকে অপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো নিশিতা।
“নিজের থেকেও বেশি নিশু।আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি, যায় হয়ে যাক, তুমি আমাকে আর নিশানকে ছেড়ে যেতে পারোনা।এটা ঠিক তোমার পুরোনো স্মৃতি গুলো অনেক নাড়া দেয় তোমার মনে,কিন্তু আমি তোমাকে চিনি নিশিতা । আমার নিশিতাকে আমি সেই ছোট থেকে দেখছি।আমি ভালো করেই জানি আমার নিশু কোন অন্যায় করতে পারে না। না আরাফাতের সাথে করতে পারে, না আমার সাথে করতে পারে। ”
“তুমি কেন এতো ভালো বলতো সোহান। আর কেউ তোমার মতো হতে পারে না, কখখোনো না।”
“ধুর বোকা”।তুমি আমাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবো তায়। সোহানের সরল উক্তি।
“জানো সোহান,আজ তোমাকে না বলেই একটা কাজ করেছি।তুমি রাগ করবে না তো?”সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল নিশিতা।
“কি হয়েছে নিশিতা, কী করেছো তুমি? তায় এতো অনুশোচনা? ”
“নিশান স্কুল থেকে এসে বলল সুপ্তি নাকি ভিষণ মন খারাপ করে ছিলো, আরাফাত নাকি প্রতিদিন ড্রিংক করে। আর ডক্টর নাকি ওকে ড্রিংক করতে না করেছে, বড় অসুখ নাকি করেছে ওর।তায়তো আরাফাতের কাছে ফোন দিয়েছিলাম, নিষেধ করতে।”অপরাধীর মতো বলল নিশিতা।
“ওও তাহলে এই জন্য ম্যাডামের ভেতর এতো অনুশোচনা? ধুর বোকা, একজন মানুষ হিসেবে, একজন বন্ধু হিসেবে তোমার উচিত ছিলো আরাফাত কে নিষেধ করা।এতে খারাপের কি আছে? প্লিজ তুমি এসব নিয়ে নিজেকে দোষ দিও না। “বুঝিয়ে বলল সোহান।
“তুমি এতো সুন্দর করে কেন ভাবো সোহান। “চোখে চোখ রেখে বললো নিশিতা।
“কারণ, আমার বউ আমাকে সুন্দর ভাবে সবকিছু ভাবতে সাহায্য করে, আমার বউ আমার আশেপাশের পরিবেশ টা সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে তায়।তায়তো আমি সুন্দর করে ভাবতে পারি।”সুন্দর করে গোছানো কথা সোহানের।
আরো একটি সুন্দর রাত পার করলো একজোড়া সার্থক কপোত-কপোতী।
হসপিটালের করিডোরে বিবর্ণ বিষন্ন মুখে বসে আছে মধ্য বয়সী এক মহিলা, তার সাথে মন খারাপ করে নিশ্চুপ হয়ে আপন মনে বিরবির করছে সুপ্তি। ভেতরে ডাক্তাররা সব অত্যান্ত চিন্তিত মুখে যাওয়া আসা করছে।ভেতরের বেডে শুয়ে থাকা টা ব্যক্তিটা যে বিশেষ ভালো নেই তা খুব বোঝা যায়,,,,,
চলবে,,,,,,