অবেলায়_তুমি Part_08

0
2511

অবেলায়_তুমি Part_08
#Writer_Aysha_Siddika(Tip)

হঠাৎ রোড এক্সিডেন্ট, চারিদিকে আর্তনাদ, আমি বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম ছুটিতে, বাসে উঠলে বমি পায় তাই আগেই ভয়ে থাকি, বমির মেডিসিন সাথেই থাকে, তবুও জেনারেল উইকনেস এজন্য খুবই অস্থির লাগে। জানালার সিটে গ্লাসের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলাম। এমন সময় বিকট একটা শব্দ, চোখে ঘুম তাই প্রথমে ধরতে পারিনি কি ঘটতে চলেছে।
মুহুর্তের মধ্যেই গাড়ীটা উল্টে পরলো রাস্তার পাশে পুকুর পাড়ে, একটা গাছের সাথে বেজে ছিলো বলো পুকুরে পরেনি।
চোখ মেলেই দেখি সব অন্ধকার চারিদিকে।
শুধু শুনতে পাচ্ছিলাম কিছু মানুষের আর্তনাদ। বাবাগো মাগো কান্না, কেউবা আমার ছেলে, আমার বাবু এমন কথা শুনে আমও নিস্তব্ধ হয়ে ছিলাম, নিজের কথা ভুলেই গেছিলাম, পাশের সিটের মুরুব্বী কাকার সব ভর আমার গায়ে, মাথায় প্রচুর প্রেশার পরছে, একটা সময় ভাবছিলাম মরেই যাচ্ছি বোধহয়, চোখটা বন্ধ করে হাতে থাকা মোবাইলটা শক্ত করে ধরলাম।
ততক্ষণে কেউ একজন এগিয়ে এলো গাড়ীর মধ্যে আরো কিছু লোক এসে সবাইকে উদ্ধার করছে, আমার গায়ে উপর থেকে টপটপ করে রক্ত পরছে, মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
,
কেউ একজন টান দিয়ে বের করলো আমাকে..
বাহিরে এসে কিছক্ষণ স্তব্ধ ছিলাম, কারো কারো মাথা ফেটে রক্ত পরছে..
আমার সেরকম কিছুই হয়নি, পাশের ছেলেটার চোখ থেকে রক্ত পরছে, কাঁপা কাঁপা হাতে টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছিলাম, নিজের কথা বাদ দিয়ে ছেলেটা সবাইকে এম্বুলেন্স এ তুলে দিচ্ছে, আমার কঁপাল থেকে রক্ত পরছে তা আমার খেয়াল নেই,
,
জ্ঞান ফিরলে তাকিয়ে দেখি হাসপাতালে, হঠাৎ ছেলেটার কথা মনে পরে, ঠিক তখনই ছুটে যাই মেইল সার্জারি ওয়ার্ডে,
,
এভাবেই তার সাথে আমার পরিচয় ঘটে, পরিচিতি থেকে ধীরে ধীরে চেনা জানা।
,
মানুষটা এতোটা ভালো ছিলো যে সবাই তাকে ভালোবাসতো, রাস্তার মানুষগুলোকে সে কতোটা আপন করে নিতে পারতো, আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
,
,
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে,
, সুখের সংসার, কিন্তু ইচ্ছে হত খুব এমন একটা সুখের সংসারের ভাগিদার হতে।
,
বেশ কিছুদিন দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি।
কিন্তু দুজনার কেউই কাউকে বলতে পারতাম না।
,
দুজনে মিলে পথশিশুদের সাহায্য করার জন্য একটা টিম গঠন করলাম, আমি মেয়েদের টিমের দায়িত্বে আর সে ছেলেদের।
,
সারাদিন কিছু বাচ্চাদের সাথে কাটিয়ে দিতাম, কত আনন্দময় ছিলো সেই দিনগুলো ভাবলেই চোখের জ্বলে ভিজে যায় আজও।
,
কথাগুলো বলে চোখ মুছলো সেই মেয়েটি, ততক্ষণে হিমান্তের শরীরে কাঁপুনি ধরে গেছে।
ভিজে শার্ট চুলগুলো ও ভিজে চিপচিপে।
,
ঠান্ডা বসে গেছে যে, হিমান্ত ভাবছে কিছুক্ষণ আগেও আমি মৃত্যুর কথা ভাবতেছিলাম।
কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে মেয়েটি আমাকে বাঁচার আশা জাগিয়ে দিলো,
যখন গলা পানিতে ডুব দিবো ঠিক তখনই কেউ একজন স্রোতের মত আমাকে টেনে তুললো বোর্ডে।
,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, যার নামটাও জানতাম না আজ সে আমার জীবনটাকে বাঁচিয়ে দিলো।
,
ডিপ্রেশনে থেকে আমরা অনেক ভুল পদক্ষেপ নিয়ে থাকি, কিন্তু আমরা ভাবি না আমাদের জন্য কিছু মানুষ কষ্ট পায়, অপেক্ষায় থাকে।
,
বোন অনুর মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
,
বুকটা ব্যথায় ভার হয়ে আছে যে, দুজনে বোর্ডে বসে আছি, আর পাশের মেয়েটি অনবরত বলেই চলছে…
,
আমিও আবার মন দিলাম ওর কথায়।
,
ছেলেটার না ছিলো জীবন, যার হাতে অনেক জীবন প্রতিদিন বেঁচে থাকতো, আর অনেক জীবন হাসতে সিখেছে।
,
ও মানুষকে বাঁচতে শিখাতো, হাসাতে পারতো, তার কষ্টগুলোকে ঘুচিয়ে দিতো।
,
খুব ভালোবাসতাম দুজন দুজনকে,
,
সারাটাদিন কাটিয়ে দিতাম ওর সাথেই, রাতটাও ওকে নিয়ে ভাবতাম।
,
আমাদের সুখ আর প্রতিদিনের কাজ ছিলো পথশিশুদের নিয়ে।
,
কখনও মালা বিক্রি করা মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে কিছু নতুন জামা কিনে দিতাম, তারপর যখন মেয়েটা হাসি মুখে তাকাতো, আমরা দুজনেরর খুশিতে চোখে পানি এসে যেত।
তারই ফাঁকে আমি জীবনের মুখের দিকে আড়চোখে তাকাতাম।
,
হয়তো ও বুঝতে পেরেছিলো আমার ফিলিংসটা।
,
বেশকিছুদিন পরে আমার বাবা আমাকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
বাবা যা রাগী, যদি গ্রামের বাড়ি নিয়ে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় সেই ভয়ে সারারাত কান্না করেছিলাম।
,
সকালে আমার চোখ মুখ দেখে ও যা হাসি হেসেছিলো, এমনভাবে ওকে কখনও হাসতে দেখিনি,
,
—-কিরে স্মৃতি তুই বিয়ের কথা শুনেই এভাবে কেঁদে চোখ ভাসাচ্ছিস যে বড়? হা হা হা, তুই হা হা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে জীবন।
,
—এই দেখ তুই হাসলে আমি আমি, দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন, বলে দুজনে এপাশ ওপাশ ছুটোছুটি আর বাচ্চারা গোল হয়ে আমাদের কে দেখে ওরাও খুশিতে নাচানাচি করছে।
,
তারপর হঠাৎ সব পিচ্চিগুলো আমার দিকে এসে আমাকে ঘিরে ধরলো, আর জীবন দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে, আমি একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কঁপালে চুমু এঁকে দিলাম, সাথে সাথে পিচ্চিটা আমাকে একটা সাদা গোলাপ এগিয়ে দিলো।
আমি গোলাপটা নেয়ার পর দেখলাম সবাই আমার দিকে গোলাপ ধরে আছে।
আমি মাঝখানে দাঁড়িয়ে,
,
,
শুরু হলো আমাদের একসাথে পথ চলা, সেই থেকে চারটি বছর দুজন একসাথে কাটিয়েছি।
,
কখনও রাগ কখনও অভিমান, আবার দিন শেষে ভালোবাসায় দুজন এক হয়ে যেতাম।
,
কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় মেয়েটির, অদ্ভুত একটা মায়া আছে মেয়েটার মুখে,
হিমান্ত নিজের কষ্ট ভুলে মেয়েটার কথা শুনতে থাকে,
,
মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ওর, কি হয়েছিলো জীবন নামের ছেলেটার এখনও জানতে পারেনি হিমান্ত।
,
,
,
ঘুম ঘুম চোখে তাকায় টিপ, আরো একটি স্নিগ্ধ সকাল, সকালটা আজ খুব মিষ্টি দেখতে, মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায় টিপের।
,
পাশেই সাহিল বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। অনেকদিন তো হলো বেড়ানো, আজকেই ওরা ঢাকায় ফিরবে, তাছাড়া টিপ অনেক খুশি এখন, আর যা ই হোক সাহিল আগের থেকে অনেকটাই পাল্টে গেছে কিন্তু জানিনা বাড়ি ফিরলে আবার আগের মত হয়ে যায় কি না।

,
,
হিমান্তদা….
,
কারো ডাকে পেছনে ফিরে তাকায় হিমান্ত…
,
ততক্ষণে অনু হিমান্তের কাছে এসে পরে,
,
—তুমি কোথায় ছিলে হিমান্তদা, আমি কতক্ষণ ধরে তোমায় খুঁজছি, (চোখের পাশে জ্বল চিকচিক করছে অনুর)
,
হিমান্ত অনুর সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছে সেই মেয়েটার কথা,
অনুর সাথে চলে যেতে নিলে হঠাৎ মনে পরে ওর, পিছনে তাকায় হিমান্ত, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব….,
,
,
,
চলবে….
,
,
(প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের কিছু ভুল পদক্ষেপের মধ্যে একটা হলো সুইসাইড,
,
আমরা ডিপ্রেশনে থেকে নিজেকে আঘাত করি, মৃত্যুর পথ বেছে নিই কিন্তু কখনও ভাবিনা আমাকে যারা ভালোবাসে তাদের কি হবে।
,
আমরা শুধু ভাবি সে কোন আমায় ভালোবাসলো না, সে কেন আমাকে ধোকা দিলো।
প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে রিয়েলাইজ করতে হবে। জীবন একটাই, ভুল করে তা নষ্ট করলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। একটা ভুল হয়ে যাবে সারাজীবনের কান্না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here