#চক্রব্যুহ,১০,১১
মোহাম্মদ মনোয়ার
[দশ]
লিফটে উঠেই হাসিব চোখ কান নাক খোলা রাখার কথাটা বলার পরে একেবারেই চুপ করে গেছে। আরিফ মনে করার চেষ্টা করল লিভিং রুমে আদৌ কোন সিগারেটের গন্ধ পেয়েছিল কিনা। মনে করতে পারল না। স্যারের কথা সত্য হলে ওরা বাড়িতে ঢোকার আগে আগে ওখানে কেউ সিগারেট খাচ্ছিল। রুনি হয়ত ওদের আসার সংবাদে দ্রুত পারফিউম ছড়িয়ে দিয়েছিল। পুরুষহীন একটি বাড়িতে সিগারেটের গন্ধে গোয়েন্দাদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে। হয়ত এই কারণেই সে পারফিউম ছড়িয়েছে। পুরুষমানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসতেই পারে। কিন্তু যে বাড়িতে পুরুষ থাকে না, সে বাড়িতে অতি নিকট কেউ না হলে সিগারেট খাবেন না। এমন তো নয়? রুনি চৌধুরীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে এমন মানুষের আনাগোনা হয় এই বাড়িতে। আবরারের নিখোঁজ হবার ব্যাপারটাতে এমন কেউ জড়িত নয় তো?
নিচে নেমে হাসিব সোজা দারোয়ানের কাছে চলে গেল। মনে হচ্ছে আরো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন হাসিব। হাসিবদের দেখা মাত্র সালাম দিয়ে সটান দাঁড়িয়ে পড়েছে।
-তোমাদের ভিজিটর লগটা আবার একটু বের কর।
সরাসরি আদেশ করলেন হাসিব। ভিজিটর লগ আনতে বলে বা হাত ঘুরিয়ে তার বিখ্যাত পাটেক ফিলিপ ঘড়িটির দিকে একমনে চেয়ে রইল। মনে হচ্ছে এই ঘড়ির ভেতরে কোন সংবাদ লুকিয়ে! আরিফও উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করল কিছু দেখা যায় কিনা!
-লগ বইতে বার তারিখের পর থেকে দেখা যাচ্ছে। তোমাদের এখানে প্রতি মাসে নতুন বই শুরু করা হয় নাকি একটা বই শেষ হলে আরেকটা বই শুরু কর?
-স্যার, প্রতি মাসে নতুন বই ব্যবহার করা হয়।
-তোমাদের এপার্টমেন্ট এ কোন ম্যানেজার বা সুপারভাইজার এমন কেউ নেই?
-আছেন স্যার। সুপারভাইজার একজন আছেন। রশিদ নাম। ডাকব তাকে?
-হ্যা। তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।
ভিজিটর লগ বই থেকে কয়েক পাতার ছবি তুলতে বলায় আরিফ সেগুলো তুলে নিল। এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে এক প্রায় প্রোঢ় লোককে আসতে দেখা গেল। কালো গ্যাবার্ডিন কাপড়ের প্যান্টের উপর সাদা ফুলহাতা সুতির শার্ট। টাগ ইন করা। পায়ে ক্যানভাসের কেডস। এসেই সালাম দিল ওদের।
-স্যার, কিছু হয়েছে?
পরিচয়ে জানা গেল রশিদ আর্মির সুবেদার ছিল এক সময়ে। বিশ বছর আগে রিটায়ারমেন্টে চলে গেছেন। এই এপার্টমেন্ট শুরু হবার সময় থেকে এখানে আছেন। তাও প্রায় বছর চৌদ্দ হবে। ওদেরকে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে বসাল। বেশ পরিপাটি করে সাজানো। চারিদিকে স্বচ্ছ কাচে ঘেরা। এসির শীতল বাতাসে হাত পা জমে যাবার অবস্থা।
-আমাদের দু তিনটা ইনফো দিয়ে সাহায্য করতে হবে রশিদ।
-স্যার বলুন। আমার পক্ষে যতটুকু দেয়া সম্ভব সব বলতে পারব। তবে স্যার এর থেকে বেশি কিছু হলে ম্যানেজমেন্ট কমিটির কাছ থেকে জানা যাবে।
-আপনাদের ভিজিটর লগ বুক এ মাসের বারো তারিখ থেকে শুরু করা হয়েছে। যেটা সাধারণত মাসের এক তারিখ থেকে শুরু হবার কথা।
বেশ জোরের সাথে “মাসের এক তারিখ” উচ্চারণ করলেন হাসিব উদ দৌলা। সুপারভাইজারকে কিছু একটা চিন্তা করতে দেখা গেল। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করল।
-স্যার। প্রথম লগ বইটি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছিল। ম্যানেজমেন্ট কমিটি থেকে বলা হয়েছে নতুন বই শুরু করতে।
-ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে কি রুনি চৌধুরী ম্যাডাম আছেন?
-জ্বী স্যার। উনি কমিটির চেয়ারম্যান।
-সত্যি করে বলবেন। স্পেসিফিক্যালি রুনি ম্যাডামের আদেশেই লগ বই চেঞ্জ করা হয়েছে কিনা।
মুখ কালো হয়ে গেছে সুপারভাইজার রশিদের। মাথা চুলকাতে লাগল।
-আচ্ছা ওসব থাক। আমাকে শুধু এটুকু ইনফো দিয়ে সাহায্য করুন। গত পনের দিনে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে এই এপার্টমেন্টে?
-স্যার, এখানে অফিস আছে, এপার্টমেন্টও আছে। প্রতিদিনই তো কত কিছু ঘটছে!
-স্পেসিফিক্যালি বলছি। রুনি ম্যাডামের এপার্টমেন্টে কিছু ঘটেছে? যেটা হয়ত অন্য সময়ে স্বাভাবিক বলে আপনার কাছে মনে হতে পারে।
আবারো চিন্তাক্লিষ্ট দেখাল সুপারভাইজার রশিদকে। ডান হাত দিয়ে মাথা চুলকাল কিছুক্ষণ। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
-স্যার! এক মিনিট। এই সংবাদটা দেয়া যায় কিনা ভাবছি। কিন্তু স্যার পুরো ঘটনা আমি জানি না।
-আপনি নির্ভয়ে বলুন। আমরা তদন্তের স্বার্থে এই তথ্য গোপন রাখব।
তবুও একটু আমতা আমতা করতে দেখা গেল সুপারভাইজার রশিদকে।
-স্যার। এই বয়সে আমার আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। রুনি ম্যাডাম নিজেই এই কমপ্লেক্স এর ওউনারস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। উনি কোনভাবে টের পেলে আমার চাকরি চলে যাবে স্যার।
আরিফ উত্তেজনা সামলাতে পারছিল না। একবার হাসিব আর সুপারভাইজারের দিকে তাকাচ্ছিল উদ্গ্রীব দৃষ্টিতে। নিশ্চয় রহস্যের কিনারা পাওয়া যাবে এই রুনি চৌধুরীর কাছেই!
-আপনি নিশ্চিত থাকুন।
বলেই আশেপাশে তাকালেন হাসিব। কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
-এই রুমে সিকিউরিটি ক্যাম নেই, তাই তো?
-হ্যা স্যার। তবে এই রুমের বাইরে গেটের ওপরে আছে।
হাসিব প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দ্রুত এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে সুপারভাইজার রশিদের শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিল!
-এবার বলুন রশিদ। আর কতটুকু জানেন!
বেচারা ঘাবড়ে গিয়েছে। একবার গলা খাঁকারি দিল। তারপর হাসিবের কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে নিচু গলায় কিছু কথা বলল। আরিফ হতাশ হয়ে তাকিয়েছিল। কিছুই শুনতে পায়নি ও।
-হুম রশিদ। আপনাকে ধন্যবাদ সংবাদটা শেয়ার করার জন্য। আমার মোবাইল নম্বর সেভ করে নিন। ০১৭xxxxxxxx।
সুপারভাইজার রশিদ তার ফোনে নম্বরটি সেভ করতেই তাড়া দিলেন হাসিব।
-আরিফ। চল যাওয়া যাক।
বলেই হনহন করে দরোজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন হাসিব। মেইন গেটের কাছে আসতে দারোয়ান সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আরেকবার স্যালুট দিয়ে দরোজা খুলে দিল। সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে। গুমোট গরম। রাত্রে খুব সম্ভবত ঝড় বৃষ্টি হবে।
গাড়িতে উঠে আর কোন কথা বলেনি হাসিব। আরিফ মনে মনে খুব ছটফট করছিল। সুপারভাইজার হাসিবের কানে কানে কী বলেছে? কেন তাকে না শুনিয়ে শুধুমাত্র হাসিবকে বলেছে? কেন এত গোপনীয়তা? রুনিকে নিয়ে গুরুতর কোন সংবাদ? অথচ জিজ্ঞেস করার সাহস করে উঠতে পারল না। হাসিব কোন এক গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। হয়ত হিসেব নিকেশ করছেন কিছু একটা। গাড়ির গতিপথ দেখে আন্দাজ করে নিল কলাবাগান থানার দিকেই যাচ্ছে। রাস্তায় এদিকে তেমন জ্যাম নেই। আরিফের ভাবনা সত্য করে দিয়ে একটু পরেই গাড়ি কলাবাগান থানার সামনে এসে পড়ল। থানা কমপ্লেক্সের ভেতরে পার্কিং করে আরিফকে কিছু না বলেই চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন হাসিব। আরিফ তার পিছু নিল।
-স্লামু আলাইকুম স্যার।
সেকেন্ড অফিসার আজিম ওসির রুমে ছিল তখন। ওদের দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠল।
-স্যার! কতদিন পরে দেখা! আমাকে এভাবে ভুলে গেলেন স্যার! আপনার নম্বর চেঞ্জ করেছেন। পুরনো নম্বরে কতবার যে ফোন করেছি আপনাকে! স্যার বসুন বসুন!
একেবারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আজিম। যেন বুঝে উঠতে পারছে না স্যারকে কীভাবে আরো সম্মান দেখান যায়। হাসিব মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে আজিমকে বুকে টেনে চেপে ধরে পিঠ চাপড়ে দিলেন। ওসির চেয়ার খালি। খালি চেয়ারের দিকে ঈংগিত করতে মাথা নাড়াল আজিম।
-স্যার এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যারের বাসায় গেছেন। আপনার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ছিলেন স্যার। আর স্যার, যদি ভুল না করি, উনিই আমাদের আরিফ স্যার?
হেসে হাত বাড়িয়ে দিল আরিফ। কথাবার্তায় শুধু নয়, আচার আচরণেও বেশ স্মার্ট আজিম।
-হ্যা, আপনার নাম খুব শুনেছি আমাদের স্যারের কাছে!
-আজিম, আজ বেশিক্ষণ বসব না। একটু নিরিবিলি বসে কেসটা নিয়ে ভাবতে হবে। যদি সংক্ষেপে বলতে…
-স্যার, আমার পক্ষে এই অল্প সময়ে যেটুকু খবর বের করা সম্ভব বের করে ফেলেছি। স্যার কি এখনো দুধ ছাড়া ব্ল্যাক কফিতে এক চামচ চিনি খান?
-হা হা হা! তোমার তাহলে সেসব বেশ মনে আছে আজিম! হ্যা। এক কাপ কফি হলে মন্দ হত না।
কফির কথা শুনে আরিফের পেটের ক্ষুধাবোধ আবার নাড়াচাড়া দিয়ে উঠল। সে জানে, না চাইলেও থানায় সিঙ্গারা, সমুচা আর প্লেইন কেক পাওয়া যাবে। হাসিব কফি খেতে রাজি হওয়াতে মনে মনে বেশ খুশি হল ও। তবুও বলা যায় না, যে মেজাজ মর্জি। কখন আবার কিছু মুখে না দিয়েই বের হয়ে যায়!
-স্যার। এই যে একটা ফাইল করে রেখেছি। এখানে অনেকগুলো মামলা, অভিযোগ আর জিডির কপি আছে। সব কিছুই ওই একটি বাড়ি ঘিরে!
বেশ মোটা একটা ফাইল এগিয়ে দিল আজিম। এত ঘটনা ঘিরে আছে একটি বাড়ি ঘিরে! আরিফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
-সামিহা ম্যাডাম নিজেই এসেছিলেন ভোরের দিকে। আমি জিডি আকারে নিতে চেয়েছিলাম। তখনো আসলে জানতাম না সে কোন বাড়ির স্ত্রী। ওসি স্যার ছিলেন না। উনি থাকলে বলতে পারতেন। যাইহোক। হন্তদন্ত হয়ে এসেছিলেন। তেমনি ব্যস্ততার সাথে অভিযোগপত্র লেখা শেষ হওয়া মাত্রই চলে গেছিলেন। শুধুমাত্র অভিযোগনামা লিখতে পেরে অবশ্য একটু স্বস্তিবোধ করেছিলাম তখন।জিডি করলে তদন্তের ঝামেলা হত। উঁচু কারো তদবির আসলে দৌড়ঝাঁপ করতে হত। পরে ওসি স্যারকে ঘটনা বলতে উনার প্রথম কমেন্টটা এখনো মনে আছে স্যার। “এটাই শেষ নয় আজিম। ও বাড়ি থেকে আরো অনেক দূর্ঘটনার খবর থানাতে আসবে।“
-আচ্ছা! তারপর?
বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন হাসিব। আজিম থেমে যেতে বেশ বিরক্ত হয়েছেন। আরিফ আজিমের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল।
-ওই বাড়িটা ঘিরে প্রচুর রহস্য আছে স্যার।
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছে আজিম। একজন আর্দালিকে ট্রে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখে থেমে গেল। আরিফ “স্যরি স্যার” বলেই একটা সিঙ্গারা হাতে তুলে নিয়ে মুখে পুরে দিল। আর্দালি ট্রে নামিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেই আবার শুরু করল আজিম।
-স্যার। আপনি নিশ্চয় শুনেছেন ও বাড়িতে ভূতের আছর আছে!
বলেই হো হো করে হেসে উঠল আজিম। যেন খুব মজার একটা কথা বলেছে। ঠিক তখনি বাইরে কাছে ধারে কোথাও মেঘের বিজলি চমকে উঠল। জানালা দিয়ে সেই আলো ঘরের ভেতরে এসে ছড়িয়ে যেতেই বিকট বজ্রপাতের শব্দ। বজ্রপাতের শব্দ মিলিয়ে যাবার সাথে সাথেই থানার ঠিক বাইরে রাস্তার উপরে ট্রান্সফরমার বার্স্ট হবার শব্দে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠেছে। গুম গুম শব্দ কমে আসতে আসতে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়ে নিঃসীম অন্ধকারে ঢেকে গেল সব কিছু। খুব সম্ভবত একটা ইদুর আরিফের পায়ের উপর দিয়ে দৌড় দিয়েছে। “বাবা গো, মা গো” বলে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠল। ওর চিৎকার আর লাফ দেখে আজিম আবার হো হো করে হেসে উঠল। “আরে ওটা ইদুর ছিল। কোথাও লুকিয়ে ছিল, বজ্রপাতের শব্দে বাইরে বের হয়ে এসেছে। বৃষ্টির আন্দাজ পেলে এরা এমনিতেও গর্ত থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। আপনি বসুন স্যার। ভূত আসেনি এখানে!” ওর হাসি এখনো থামেনি। হাসতে হাসতেই ড্রয়ার খুলে একটা পাঁচ ব্যাটারির টর্চ জ্বালিয়ে টেবিলের উপরে রাখল।
-স্যার। এই ফাইলে মোটামুটি সব কিছু পাবেন। আপনি ফোন দেবার পরে ওই বাড়ি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজ পত্র বের করে একবার পড়লাম। শুধু একটা কথাই মনে হয়েছিল পড়তে পড়তে। ওই বাড়ির লোকজন সবাই এক্সট্রা অর্ডিনারি। নাহলে একের পর এক এত ঘটনা কী করে ঘটতে পারে?
আরিফ দ্বিতীয় সিঙ্গারায় মাত্র কামড় দিয়েছে। অমন সময়ে ওর ফোনে রিং টোন। হাসিবের বকা খেয়ে রিং টোন বদলে ফেলেছিল। ভূতের ভয় আর নতুন রিং টোন। সব মিলিয়ে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিল। ফোনে রিং হতে তাই ঠিক বুঝতে পারছিল না এটা ওরই ফোন। এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল। আজিম খেয়াল করেছে।
-স্যার, আপনার পকেটের ফোনে রিং টোন বাজছে! ফোন ধরুন!
বলেই আবার জোরে হেসে উঠেছে। হাসিব জানেন এই ছেলেটির হাসির রোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে ওর সাথে কাজ করার সময়ে প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত হত হাসি শুনে। পরে খেয়াল করে দেখেছেন, ও না হাসলেই বরং চারিদিক কেমন যেন নির্জীব হয়ে পড়ত।
-হ্যালো কে বলছেন? সামিহা ম্যাম? কী ব্যাপার বলুন তো?
সামিহার নাম শুনে হাসিব এবং আজিম দুজনেই চমকে তাকিয়েছে আরিফের দিকে।
-কী বললেন? ড্রাইভার বেলায়েত গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে? কী! মারা গেছে! মানে? হ্যা হ্যা! হাসিব স্যার আছেন আমার সাথে। কোথায় ঘটেছে বললেন? হ্যা হ্যা। হুম। স্যারকে জানাচ্ছি। জানাবো আপনাকে। হুম। রাখি। টেক কেয়ার!
ফোন কানের থেকে নামিয়ে হাসিবের দিকে তাকাল আরিফ। বিহ্বল আর উদ্ভ্রান্ত এক দৃষ্টি।
-স্যার, কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফেরার পথে সামিহা ম্যাডামদের ড্রাইভার বেলায়েত গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে। স্পট ডেড। জিগাতলা পোস্ট অফিসের কাছে। ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। ক্রিম কালারের একটা টয়োটা প্রিমিও গাড়ি এসে ওকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। হাজারিবাগ থানা থেকে নাকি জানানো হয়েছে সম্ভবত ডেলিবেরেটলি চাপা দেয়া হয়েছে। আশেপাশের লোকজন অনেকেই দেখেছে ঘটনাটা!
মুখ হা করে কথা শুনছিল আজিম। আরিফ ফোন কেটে দিতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
-স্যার! ওসি স্যার ঠিকই বলেছিলেন। আরো কত যে দূর্ঘটনার সংবাদ আসবে ওই বাড়ি থেকে!
আজিমের কথা শেষ হতে দিলেন না হাসিব উদ দৌলা। আরিফকে “ওঠ” বলে তাড়া দিয়ে নিজেও উঠে দাঁড়ালেন। বেচারা আরিফ। দ্বিতীয় সিঙ্গারার বাকি অংশ মুখে পুরে উঠে দাঁড়াল। আজিম বুঝতে পেরেছে হাসিব আর এখানে সময় নষ্ট করতে চাইছেন না।
-স্যার কি হাজারিবাগ থানায় যাচ্ছেন?
-হ্যা। পরে দেখা হবে আজিম। ভালো থেকো।
(চলবে।)
#চক্রব্যুহ
[এগারো]
রাত এগারোটা। মিরপুর ডিওএইচএস এর অফিসের খাবার রুমে টেবিলের দুপাশে বসে আছে দুজন। রুমে এই মুহুর্তে দুজন নয়। তিনজন মানুষ। অন্যজন সাইফুদ্দিন। টেবিলে খাবার বেড়ে দিয়ে কোণার দিকের একটা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাজারিবাগ থানা থেকে আসার পথে হাসিব ফোন করে বলে দিয়েছিল খিচুড়ি রান্না করে রাখতে। সাথে দেশি মুরগির ডিমের ওমলেট। আরিফ অনেক সাহস করে বলেছিল, স্যার। অফিসে আমের আচার আছে? হাসিব ‘না’ বলাতে একটু মন খারাপ হয়েছিল। ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পাড়ার মোড়ের একটা রকমারি দোকান খোলা পাওয়া গেল। হাসিব নিজেই গাড়ি থামিয়ে আহমেদ ব্র্যান্ডের ছোট একটা আমের আচারের বৈয়াম কিনে নিয়েছে। সাইফুদ্দিন “ঢ্যালঢ্যালা” খিচুড়ি বিশেষজ্ঞ। নানা রকম সবজি দিয়ে রান্না করা নরোম খিচুড়ি। দুই টুকরা দারুচিনি ছেড়ে দেয় শেষের দিকে, সাথে এক চামচ খাঁটি গাওয়া ঘি। খিচুরির সেই অমৃত ঘ্রাণে আরিফের দম বন্ধ হবার দশা। হাসিবের অনুমতি নেয়া বা তার শুরু করার জন্য অপেক্ষা করা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রাখতে পারল না। হাত ডুবিয়ে দিয়েছে খিচুড়িতে।
হাসিব অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলেন। দুপুর থেকে এই পর্যন্ত একটানা এত জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। আপাত প্রাপ্ত ক্লু সব জোড়া লাগাতে চাইছেন। “স্যার” ডাক শুনে খেয়াল করলেন আরিফ খিচুড়িতে হাত ডুবিয়েছে। হঠাৎ ক্ষুধাবোধ জেগে উঠল।
“স্যার”, খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল আরিফ। “বেলায়েতকে কেন খুন হতে হল? যদি গাড়ি এক্সিডেন্ট ইচ্ছেকৃত হয়!”
-বড় একটা প্রশ্ন আরিফ। আজ বিকেলেই যে ছেলেটাকে এত প্রাণবন্ত দেখে আসলাম। সেই ছেলেটাই কিনা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এভাবে মারা গেল! কে দায়ী বা কেন সে মারা গেল, এই ভাবনার চেয়েও ছেলেটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনটি নাবালক বাচ্চা মেয়ে নিয়ে ওর স্ত্রীর কথা একবার ভেবে দেখেছ?
-সামিহা ম্যাডাম তো বললেন ওদের দেখাশোনার ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নেবেন!
-এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? উনারা দেখবেন ভাল কথা। সহায়তা দেবেন। কিন্তু সেটা কতদিন? স্ত্রীর একাকীত্বের ভাগ নিতে পারবেন? কষ্টের ভাগ নিতে পারবেন? বাচ্চাদের বাবার অভাব পূরণ করতে পারবেন? কী অদ্ভুত এক দেশে আমরা বাস করছি। সড়কের সামান্য নিরাপত্তাও দিতে পারি না আমরা!
হাসিব এত সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়বেন ভাবতে পারেনি আরিফ। স্যারের মানবিক এই গুণটি দারুণ লাগে ওর। অনেকদিন ধরে আছে সাথে। এরমাঝে কতজনকে কত ভাবে সাহায্য করেছেন স্যার। এমন একজনের সহযোগী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করে আরিফ। ধন্য শব্দটা মনে হতেই সাইফুদ্দিনের দিকে চোখ গেল। এই অনাথ বাচ্চাটার দায়িত্ব স্যার নিজের হাতেই তো তুলে নিয়েছিলেন! এদিকে আবরার সাহেব মাথা থেকে নামছেই না। অন্যদিকে ভাবতে গেলেও সারাক্ষণ মাথায় গিজগিজ করে তার নিখোঁজের ব্যাপারটা। মনে হাজারো প্রশ্ন এসে উঁকি মেরে যায়।
-কিন্তু স্যার। কার জন্য ওকে জীবন বিসর্জন দিতে হল? কাকে বাঁচাতে গিয়ে এত অল্প বয়সে ওকে মরতে হল স্যার! ও কি কোনভাবে এই নিখোঁজ নাটকের সাথে জড়িত ছিল?
-আপাতত এটাই মূল প্রশ্ন। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি।
-স্যার। রুনি চৌধুরী কিন্তু বেলায়েতকে খুব পছন্দ করতেন। হতে পারে না স্যার বেলায়েতকে দিয়ে বা ওর সহায়তায় আবরার সাহেবকে গুম করা হয়েছে? স্বার্থ হাছিলের জন্য এই ভদ্রমহিলাই কি ওর জীবন কেড়ে নিল?
-মানে বলতে চাইছ রুনি চৌধুরীর পরিকল্পনায় এমনটাই ছিল আগের থেকে?
-জ্বী স্যার। আবরার সাহেবের মৃত্যুটা যদি সত্য হয়, তাহলে ধরে নিতে পারি সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি এই রুনি চৌধুরীই। বাবার ব্যবসা বলে ঠিকাদারী ব্যবসার ভাগ নিয়ে আবরার অনেক ঝামেলা করেছে। কলাবাগান থানায় একটা জিডিও করেছিলেন আবরার। আজিমের ফাইলে সেটা দেখলাম স্যার। এই জিডির তদন্ত এখনো চলমান। তারপরে রয়েছে কলাবাগানের মত প্রাইম লোকেশনে এত বড় বাড়ির মালিকানা। আছে শান্তিনগরের বাড়িটাও। শাশুড়ির থেকে প্রায় বিনা বাঁধায় সব কিছুর মালিকানা সে পেয়ে যাবে। এতে করে ফাইয়াজ তার নিজের জীবনে যেভাবে ঠকেছে, তার দারুণ এক প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে!
-খুব একটা খারাপ পর্যবেক্ষণ নয় তোমার আরিফ। আরেকটা কথা বলে রাখি। সুপারভাইজার রশিদ কিন্ত একটা কথা বলেছে আমায়।
থেমে গেলেন হাসিব। আরিফের ভেতরে টানপোড়েন চলছে। নিচু স্বরে স্যারকে কী বলেছিল রশিদ? বুকের ভেতর হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে আরিফ। খাওয়া বাদ দিয়ে উদগ্রীব দৃষ্টিতে হাসিবের দিকে তাকিয়ে রইল। একসময় অপেক্ষার পালা শেষ হল। হাসিব গ্লাস থেকে একটু পানি খেয়ে টেবিলে নামিয়ে রেখে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন।
-এ মাসের আট তারিখেও নাকি আবরার দলবল নিয়ে রুনি চৌধুরীর অফিসে হামলা করে এসেছে। অর্থাৎ আবরারের নিখোঁজ হবার সাতদিন আগের ঘটনা। প্রচুর ভাঙচুরও করেছে অফিসে। আরো অনেক খবর দিয়েছে রশিদ। কিন্তু সেসব বলার সময় এখনো আসেনি আরিফ।
আরিফের চোয়াল বাস্তবিকই ঝুলে পড়েছে। বলে কী! তাহলে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক দ্বন্ধ ভীষণ আকারেই ছিল দুই পরিবারের মাঝে!
-বেলায়েতের লাশের সুরতহাল রিপোর্টে অবশ্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না। শুনলেই তো। আমি থানায় সিসি ক্যামেরার ভিডিও চেয়েছি। দেখা যাক ওটা কী হত্যাকাণ্ড ছিল নাকি নেহায়েতই দুর্ঘটনা।
-স্যার। কিডন্যাপিং মূলত দুই কারণে হতে পারে। তাই না স্যার? এক। পরিচিত কেউ স্বার্থ হাসিলের জন্য। দুই। অপরিচিত কেউ মুক্তিপণ আদায়ের জন্য। অবশ্য রাজনৈতিক কারণেও হতে পারে। সেখানেও সেই পরিচিত মুখ থাকতে হবে স্যার।
-হ্যা। ঠিকই বলেছ। কিন্তু তুমি তো নিজেই সংবাদপত্রের আর্কাইভ ঘেটে দেখেছ এই মাসে এমন কোন গুম বা হাইজ্যাক বা কিডন্যাপিং এর ঘটনা আসেনি। অন্তত থানাগুলোতে রিপোর্ট যায়নি। আমি অবশ্য হেড অফিসে পুলিশের এডিআইজি শোয়েব স্যারকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে রেখেছি। নতুন প্রমোশন পেলেন যে স্যার। উনি পুলিশের সুপার আসগর স্যারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আসগর স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ রাতের মধ্যেই দেশের সমস্ত থানার খবর পেয়ে যাব আমরা।
-উনার মৃত্যু হলে এতদিনে খবর বের হয়ে যেত না স্যার?
-সেটা ও তো নির্ভর করে লাশ পাওয়ার ওপর। নিখোঁজ হয়েছেন আজ মাত্র চারদিন। কেউ যদি মুক্তিপণের জন্য কিডন্যাপ করত, তাহলে সামিহা ম্যাডামদেরকেই ফোন করত। কিন্তু সেটা করা হয়নি। কাজেই মুক্তিপণের ব্যাপারটা আপাতত বাদ দিতে চাচ্ছি। রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলে অনলাইন-অফলাইন সংবাদপত্র, টিভি বা থানায় রিপোর্ট চলে যেত। অর্থাৎ আবরার সাহেব রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন বলে যে রটনা ছড়িয়েছে, তার অন্তত কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। আশা করি আজ রাতের মধ্যে নামি বা বেনামি সব লাশের খবর আসগর স্যারের কাছ থেকে পেয়ে যাব। ভাল কথা। আবরার সাহেবের কল লিস্ট কি নাসিম তোমাকে ফরোয়ার্ড করেছে?
-জ্বী স্যার করেছে। যখন থানায় ছিলাম তখনই করেছেন। আপনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই বলা হয়নি।
-চোখ বুলাতে পেরেছ সামিহা অবন্তি আর আবরার সাহেবের কল লিস্ট এ?
-জ্বী স্যার। দুজনের মধ্যে শেষ কথা হয়েছে পনের তারিখ যেদিন আবরার সাহেব নিখোঁজ হয়েছেন। সন্ধ্যা সাতটা পনের মিনিটে কথা হয়েছে। এছাড়া দুজনের মধ্যে সেদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় কথা হয়েছে একবার। দু’বারই দুই মিনিটের বেশি নয় স্যার। রাত সাড়ে আটটার পর থেকে আবরার সাহেবের ফোন ট্রেস করা যায়নি। সেই সময়ে শেষ কল ছিল ড্রাইভার বেলায়েতকে!
-বেলায়েত! উফ! কী কথা হয়েছিল দুজনের মধ্যে? বেলায়েতকে এই সময়েই মারা পড়তে হলো!
-স্যার। এমন তো নয় আমরা তদন্তে নেমেছি দেখে আসামী তড়িঘড়ি করে বেলায়েতকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে? যেন কোন তথ্য বের করতে না পারি! এর অর্থ দাঁড়াবে আমাদের তদন্তে লিপ্ত হবার খবর আসামী জেনে গেছে।
-হতে পারে আরিফ। হতে পারে।
হাসিবকে আনমনা দেখাচ্ছে। আজ সারাদিন পরে একটু উচাটনও লাগছে বেশ। আরিফ অবশ্য জানে। যতবার স্যারের এমন উচাটন ভাব হয়েছে, প্রতিবারই দারুণ সব সিদ্ধান্তে এসেছেন। এই নিখোঁজের ব্যাপারটায়ও তেমন ঘটবে। সে নিশ্চিত। আরিফ হাসিবকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছিল। যদিও হাসিব একমনে তার বিখ্যাত পাটেক ফিলিপ ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে আছেন। একদিন স্যারকে জিজ্ঞেস করতে হবে ঘড়িটির দাম কত। কিন্তু সাহসে কুলোতে পারেনি।
-দুজনের নম্বরে কমন কারো নম্বর দেখেছ আরিফ যেটা আগ্রহ জাগাতে পারে? পনের তারিখ বা এর আগে পরে?
-দুটো নম্বর পেয়েছি স্যার। কিন্তু দুটো নম্বরই কলাবাগান বাস স্ট্যান্ডের কাছের এক এসি রিপেয়ার শপের। তেরো তারিখে। খুব সম্ভবত সেদিন বাড়ির কোন এসিতে সমস্যা হয়েছিল।
-তার মানে বলতে চাইছ দুজনের কল লিস্ট ক্লিন? নির্দোষ?
-আপাতত তো তাই মনে হচ্ছে স্যার।
-রুনি চৌধুরীর নম্বরটার কী অবস্থা?
-স্যার। ওটাও আমার হাতে এসেছে। কিন্তু বিশাল বড় কল লিস্ট স্যার। দু’দিনের আগে কিছু হবে বলে মনে হয় না স্যার। তবে চৌদ্দ বা পনের তারিখের কল লিস্ট চেক করেছি। র্যান্ডম নাম্বারের সাথে আবরারের নম্বরও আছে। ধারণা করছি ঝগড়া হয়েছিল দুজনের মধ্যে। চার পাঁচ মিনিট করে কথা হয়েছে দুজনার মধ্যে।
-ড্রাইভার বেলায়েতের নম্বর নিয়েছ?
-না স্যার।
-এক্ষুনি সামিহা ম্যাডাম থেকে নিয়ে নাও।
হাসিবের খাওয়া শেষ। উঠে গিয়ে পাশের বেসিনে হাত ধুয়ে ফের টেবিলে এসে বসলেন। খেতে খেতেই আরিফ সামিহা অবন্তিকে ফোন দিয়ে ড্রাইভার বেলায়েতের ফোন নম্বর এসএমএস করে দিতে বলে দিয়েছে। সাইফুদ্দিন নীরবে সব শুনছিল। ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন হাসিব।
-কী রে! কিছু বলবি মনে হচ্ছে!
-স্যার। কিছু কইতাম না।
-দুপুরে না বললি উনার পার্টনার উনাকে গায়েব করে দিয়েছেন!
-কইছিলাম স্যার। তয়। এক্ষণ তো তার পার্টনাররে জিজ্ঞাসাই করেন নাই। ক্যামনে কইতাম কে আকামডা করছে!
বলার ধরণে দুজনেই হেসে দিয়েছে। আরিফের খাওয়া তখনো শেষ হয়নি। হাসতে গিয়ে কাশি চলে এসেছে বেচারার। সম্ভবত শ্বাসনালীতে কিছু ঢুকে আটকে গেছে। এক চুমুকে বেশ খানিকটা পানি খেয়ে সমানে কাশতে লাগল।
-সাইফুদ্দিন। তোকে নিয়ে এরপর তদন্তে নামব। মনে হচ্ছে ভালোই গুছিয়ে এনেছিস চিন্তাশক্তি। কিন্তু তাতে একটা ক্ষতি করে ফেললি নিজের!
হাসতে হাসতেই সাইফুদ্দিনের দিকে তাকিয়েছিলেন। সাইফুদ্দিনের মুখ কালো হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে রেখেছে।
-তোর বুদ্ধিশুদ্ধি ফিরে আসতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। তাহলে তো আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে রে!
বলেই আবার “হো হো” শব্দ করে হেসে উঠলেন হাসিব। আরিফের কাশি কিছুটা উপশম হয়েছে। ডান হাতের তালু দিয়ে মাথার পেছনে ছোট ছোট চাপড় দিচ্ছিল তখনো। সাইফুদ্দিন কোন কথা না বলে টেবিল গোছানো শুরু করেছে। হঠাৎ হাসিব কী মনে করে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন।
-আরিফ। কল সাফোয়ান। লেট আস মিট হার টুনাইট!
-স্যার। এখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে!
-স্টিল কল হার নাউ। আমার মন বলছে শি ইজ ইন ডেঞ্জার!
আরিফ চমকে উঠেছিল। কয়েক সেকেন্ড লাগল ধাতস্ত হতে। ফোন হাতে তুলে নিয়ে সাফোয়ানের নম্বরে কল করল। এবারও এক রিং এ ফোন তুললো মেয়েটি।
-প্লিজ হেল্প মি! প্লিজ হেল্প মি নাউ!
-হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো? শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো!
ফোন হাতে নিয়ে কেটে দিয়ে ফের ডায়াল করে “হ্যালো হ্যালো” বলতে লাগল আরিফ।
-কী হয়েছে আরিফ? কী হয়েছে সাফোয়ানের?
-স্যার! শুধু বলল প্লিজ হেল্প মি নাউ। এরপর থেকে ফোন বন্ধ। রিং হচ্ছে না!
-তোমার সাথে বেরেটা ৯২এফএস পিস্তলটা আছে না?
-স্যার আছে।
-গুড। আমিও প্রিয় ওয়ালথার টিপিএইচ পয়েন্ট টু টু সাথে নিয়ে নিচ্ছি। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। কুইক। মুভ আউট!
(চলবে।)