#চক্রব্যুহ,২৬,২৭
মোহাম্মদ মনোয়ার
[ছাব্বিশ]
ছটফট করছিল সামিহা অবন্তি। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তেই তার মুক্তি প্রয়োজন। জীবনের সকল জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া কি আদৌ পাওয়া সম্ভব? মনে হচ্ছে না এই মুহুর্তে খুব বেশি ভাবনা চিন্তা করে কথা বলছেন। হতে পারে, তার দুঃসহ স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে ফিরছে। কিন্তু কী সেই স্মৃতি? যার থেকে পালাতে চাইছে সামিহা আবন্তি?
-আমি কিছুতেই খুনের দায় নিতে পারি না। মিঃ হাসিব। আমি খুনের সঙ্গে জড়িত নই!
আরিফ চমকে উঠেছে। কার খুনের দায় নিয়ে কথা বলছে সামিহা? নিজের স্বামীর? আবরার হোসেনের? কিন্তু ও তো ভেবেছিল আবরার বেঁচে আছে! তাহলে? হাসিবের চেহারা এখনো ভাবলেশহীন। খুব হিংসে হচ্ছে আরিফের। রহস্যের সমাধান করে হাসিব স্যার কী দারুণ গম্ভীর এক চেহারা নিয়ে সামিহা অবন্তির ছটফট করা দেখছে! সামিহা অবন্তির কথার কোন উত্তর দিলেন না হাসিব।
-আমি ব্ল্যাকমেইল্ড হতে হতে টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলাম। আর নিতে পারছিলাম না। এক মাস দুই মাস নয়। এক বছর দুই বছর নয়। দীর্ঘ চার বছরের ঘৃণিত জীবন থেকে আমি মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি খুন করিনি! আমি শুধু মুক্তির উপায় খুঁজছিলাম। মুক্তি! উফ!
আবারো মুখে ওড়না চেপে কান্না করে উঠল সামিহা। হাসিব টেবিলের ওপর রাখা কাগজ থেকে একটি গোছা উঠিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাতা উল্টে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে লাগলেন। আরিফ আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখল। এটাও তদন্ত রিপোর্ট। আগেরটার চেয়ে অনেক বেশি পৃষ্ঠা।
-কথা বলুন মিঃ হাসিব। প্লিজ! আপনি তো জানেন আমি এতে জড়িত নই। কিন্তু আমাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে!
কাগজগুলো গুছিয়ে কোলের ওপর নিয়ে রাখল হাসিব। নিজের চামড়ার ব্যাগ খুলে একটি এ ফোর সাইজের কাগজ বের করলেন।
-আপনাকে বাঁচাতে হলে আমাকে অনেককিছু করতে হবে। সোজা পথে যেতে পারব না। কিছু মিথ্যে আর অন্যায়ের আশ্রয় নিতে হবে। আমি নিশ্চিত, আপনি সেটা জেনে গেছেন।
সামিহা করুন দৃষ্টি মেলে হাসিবের দিকে তাকিয়ে রইল। সেই দৃষ্টিতে রাজ্যের হতাশা। দাবার ঘুঁটির চাল হাসিবের হাতে। সেটা সে নিশ্চিত। এইমুহুর্তে হাসিবের সহযোগিতা ছাড়া তার বাঁচার উপায় নেই। মনে মনে হয়ত ধিক্কার দিচ্ছে। তার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে হাসিবকে সে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। অথবা, এভাবে জড়িয়ে যাবে তা হয়ত সুদূর কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। ঘটনার নাটকীয় মোড় তাকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। মুখ খুলল সামিহা। মাথা নিচু করে খুব ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল, “জ্বী। বুঝতে পারছি।“
-আপনার আর আবরারের ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত ডিটেলস আমার হাতে আছে। সাথে এমেরিকায় পাচার করা টাকার হদিসও আমার কাছে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এবং এমেরিকায় আমার নিজস্ব সোর্স থেকে নিশ্চিত হয়েছি সব।
-কত টাকা হলে আমার দায়মুক্তি মিলবে?
এবার শব্দ করে হেসে উঠলেন হাসিব। আরিফ বেশ চমকে উঠেছে সেই হাসির শব্দে। কৃত্রিম হাসিটা আবার হঠাৎ করেই থামিয়ে দিলেন। হাতে ধরা এ ফোর সাইজের কাগজটি এগিয়ে দিলেন সামিহা অবন্তির দিকে।
-এখানে খরচের খাত অনুযায়ী বিস্তারিত বলা আছে। কোন থানায় কত টাকা দিতে হবে তার উল্লেখ আছে। আমার বিভিন্ন সোর্সকেও কত দিতে হবে তাও বিস্তারিত লেখা আছে। এয়ারপোর্টের ঝামেলা এড়াতে ইমিগ্রেশনকে কিছু টাকা দিতে হবে। আপনার ভাগ্য বেশ ভাল। ঢাকা এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনের বর্তমান এসপি আমার খুব কাছের মানুষ। অল্প কিছু টাকাতেই হয়ে যাবে।
কাগজটি ডান হাতে ধরে একবার নজর বুলাল সামিহা। পুরোটা সে পড়েনি। নিচের দিকে যোগফলের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়। তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
-ঠিক আছে। আমি জানি না খরচের খাতগুলো কতটুকু সত্য। তবে আপনাকে বিশ্বাস করছি।
-বিশ্বাস করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ সামিহা। টাকাটা কীভাবে দিতে চাচ্ছেন? আমাদের চক্রব্যুহ এর ব্যাংক একাউন্ট বরাবর পে অর্ডার করে দিতে পারেন।
-টাকাটা কি আমি দেশে থাকতেই এনক্যাশ করবেন?
হঠাৎ করে প্রশ্ন করে বসল সামিহা। মনে মনে সাহসের তারিফ করল আরিফ।
-আপনি দারুণ বুদ্ধিমতি। আপনার বুদ্ধির প্রশংসা না করে উপায় নেই। ঠিক আছে, আপনি ইউএস এ তে পৌছার পর টাকাটা এনক্যাশ করা হবে। তাহলে টাকাটা পে অর্ডারে দিচ্ছেন? কথা দিচ্ছি, ব্যাংক থেকেও কেউ ঝামেলা করবে না।
-আমাদের একাউন্ট ফ্রিজ করা হবে বলতে চাইছেন?
-ঠিক তা নয়। আবার মিথ্যেও নয়। আপনি রাজি হচ্ছেন কিনা সেটার ওপর সব নির্ভর করছে!
দাবার ঘুঁটির পরের চাল দ্রুত চাললেন হাসিব। সামিহা অবন্তির মুখ কালো হয়ে গেল।
-ঠিক আছে। পে অর্ডারে দেব টাকাটা।
-তাহলে পে অর্ডার করে কাল ঠিক এগারোটার মধ্যে আমাদের চক্রব্যুহ অফিসে আসবেন। এগারোটার থেক এগারোটা পাঁচ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর থেকে এক মিনিট দেরি হলে কেস আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে!
…
“চক্রব্যুহ অফিস। সকাল দশটা পঞ্চাশ।“
সামিহা অবন্তি খাবার টেবিলের একটি চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে। সাইফুদ্দিন জিজ্ঞেস করে গিয়েছে কিছু খাবে কিনা, অস্ফুট স্বরে কী বলেছে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সাইফুদ্দিন। হাসিব ইশারায় গ্রীন টি এর কথা বলে দিয়েছে। সাইফুদ্দিন বড় বড় চোখ করে দেখছিল সামিহাকে। ইশারা পেয়ে ভেতরে চলে গেল।
-হুম। আপনার গোছগাছ হয়ে গেছে?
মুখ তুলে তাকাল সামিহা। সেই দৃষ্টিতে এখনো হতাশা, না পাবার অতৃপ্তি আর অবিশ্বাস একসাথে মিলেমিশে আছে। সাইফুদ্দিন এক কাপ গ্রীন টি বানিয়ে এনে টেবিলে রেখে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল। হাসিবের ইশারায় চোখ মুখ কালো করে রান্নাঘরে চলে গেল। সাইফুদ্দিন ভেতরে চলে যেতে মুখ খুলল সামিহা।
-বেশি কিছু নিচ্ছি না। গত কয়েকদিন ধরেই গোছাচ্ছিলাম।
-জানি। আপনি আমার তদন্ত রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বুঝে উঠতে পারেননি, আপনি ওভাবে চলে যেতে পারতেন না। গতকালই আপনার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবার কথা ছিল। আমি আঁটকে রেখেছি। সরকারি গোয়েন্দারা চারিদিক থেকে আপনাকে ঘিরে রেখেছে। আমার গ্রীন লাইট ছাড়া আপনি কিছুতেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারতেন না।
-ঠিক বলেছেন। গত দুদিন ধরে এমন কিছুর আভাস পাচ্ছিলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসতে লাগল। পাগল হতে বাকি শুধু। গত কদিন ধরে আত্মহত্যার ইচ্ছেটা ভয়ংকর রকম বেড়ে গেছিল। আমি আর চাপ নিতে পারছিলাম না। আপনারা গত রাতে যদি না আসতেন, জানি না, হয়ত আত্মহত্যাটা করেই ফেলতাম।
মাথা নিচু করে শাড়ির আঁচলের এক কোণা দিয়ে দুই চোখ মুছল। তারপর সামনে রাখা টিস্যু পেপারের বক্স থেকে একটি টিস্যু ডান হাতে উঠিয়ে নাকের সামনে ধরে রাখল। আরিফের খুব মায়া হচ্ছিল। কত অজানা আমাদের চারিদিকে। কত অজানা আমাদের সবার জীবন যাপন। কত অনিশ্চিত আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত। ক্ষণিকের ভুলের মাসুল সাড়া জীবন ধরে টেনে যাচ্ছে আশেপাশের কত শত মানুষ। তাদের সামনে বসা মধ্য বয়সী এই নারীর জীবনের অজানা গল্প না জানি কত ভুলে মিশে ছিল।
-আইনের আশ্রয় নিতে অনেক অনেক দেরি করে ফেলেছেন ম্যাডাম সামিহা অবন্তি। আরো চার বছর আগেও যদি আইনের আশ্রয় নিতেন, তাহলে আজকের এই পরিণতি হত না। অনেকগুলো পরিবার বেঁচে যেত। আমার ছোটবেলা কেটেছে দাদির সাথে। উনার একটা কথা এই মুহুর্তে মনে পড়ছে। কোন ঘরে ঢোকার আগেই জেনে নেয়া উচিত সেখান থেকে বের হবার পথ আছে কিনা!
-হুম। একটার পর একটা ভুল করে গেছি জীবনে। আবরার সেইসব ভুলের শুরুটা করেছিল। আমি সংসার নামের সোনার হরিণের মায়ায় ছুটেছিলাম। ভয় হতো। সংসার টিকিয়ে রাখতে আবরারের করা ভুলগুলোর প্রতিবাদ না করে ওর সাথে আমিও গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। হাওয়ার স্রোতে। সেই স্রোত আজ ঠেলতে ঠেলতে খাঁদের কিনারায় নিয়ে এসেছে।
-যাহোক। আপনার সময় বেশি নেব না। সাইফ খান তার প্রাপ্য শাস্তি নিষ্ঠুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পেয়েছে। পে অর্ডারটা এনেছেন?
“হ্যা” বলে পার্স খুলে পে অর্ডারটি এগিয়ে দিল হাসিবের দিকে। হাসিব পে অর্ডারটা আরিফের দিকে বাড়িয়ে দিল। ষোলো লাখ আশি হাজার টাকা। আরিফ ভেবেছিল আরো বড় অংক হবে। “স্যরি” বলে উঠে গিয়ে পে অর্ডারটি কম্পিউটার টেবিলের উপরের ড্রয়ার খুলে রেখে দিয়ে ফিরে এসে বসল চেয়ারে।
-খুব অদ্ভুত কো ইন্সিডেন্ট। আপনার তাই মনে হয় না মিঃ হাসিব?
হঠাৎ করে প্রশ্নটা করল সামিহা। আরিফ পুরো গল্প এখনো জানে না। চমকে ডান পাশে বসা হাসিবের দিকে তাকাল।
-হ্যা। এ যেন ‘অল রোডস লিড টু রোম’ এর মত! অনেকগুলো ঘটনা অদ্ভুত যাদুবলে এক বিন্দুতে এসে মিশেছে।
ডান হাত উল্টে সময় দেখল সামিহা।
-দেখুন, আমি কিন্তু পুরো বিশ্বাস করেই টাকাটা পে করে দিয়েছি।
এটুকু বলে হাসিবের চোখে দিকে সরাসরি তাকাল সামিহা। আরো কিছু বলতে যেয়েও বলল না। অনেক কষ্টে মনে চেপে রেখেছে। আরিফ দেখছিল ওর অভিব্যক্তি।
-হ্যা। খুরশিদা বেগম যদি কোন একশনে না যান, তাহলে আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। সবাইকে গত রাতেই আমার ম্যাসেজ পৌছে দিয়েছি। আশা করি গত রাতের পর এখন পর্যন্ত আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করেনি?
মুখে ম্লান একটি হাসি ফুটে উঠেছে সামিহার।
-না, কোন ফোন কল আমি পাইনি। নিশ্চিন্ত একটা রাত কাটিয়েছি। অনেক অনেকদিন পর। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না। ঠিক আছে। আমি তাহলে উঠছি।
বলেই উঠে দাঁড়াল সামিহা অবন্তি। সামিহা দাঁড়িয়ে যেতে হাসিব আর আরিফও উঠে দাঁড়িয়েছে।
-কাল এয়ারপোর্টে রওয়ানা দেবার আগে আমাকে ফোন করবেন। এয়ারপোর্টে সব কিছু বলা আছে। আরেকবার কনফার্ম করব। ভালো থাকবেন। যাবার আগে একটা উপদেশ দিতে পারি?
-বলুন।
-কারো কথার প্রলোভনে আর কখনো পা দেবেন না। আসুন। সুন্দর যাত্রার প্রত্যাশা রইল।
সামিহা চলে যেতে হাসিব উদ দৌলা তার প্রিয় বারান্দায় চলে গেছেন। সাইফুদ্দিন দুই মগ কফি বানিয়ে এনে দিল। চমৎকার ঘ্রাণ ছড়িয়ে গেছে চারিদিক। বাইনোকিউলারে চোখ লাগিয়ে আশেপাশে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে হাসিব। সামিহা অবন্তি চক্রব্যুহের অফিসে ঢোকার সাথে সাথে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এই কিছুক্ষণ হলো বৃষ্টি পুরোপুরি চলে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে চারিপাশের পাতাদের সবুজ গায়ের সমস্ত ময়লা ধুয়ে নিয়েছে। কেমন এক প্রশান্তিময় সবুজের সমারোহ চারিদিকে।
হাসিবের জন্য আনা কফি বারান্দার কোণে ছোট একটি টিপয়ের উপরে রাখা ছিল। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আরিফের কফিও শেষ হয়ে গেছে। কফি খেতে খেতে আকাশ পাতাল ভাবছিল। একজন মানুষের স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকার জন্য ঠিক কত টাকার প্রয়োজন? শখ, আহ্লাদ মেটাতেই বা কত টাকার প্রয়োজন? টাকা দিয়ে শখ, আহ্লাদ, স্বচ্ছন্দ কেনা যায়। সুখ কি কেনা যায়? সুখ ব্যাপারটি আপেক্ষিক। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে তার সংজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট করে সীমারেখা টেনে দেয়া যাবে না। তবুও…
ভেতরে গিয়ে আরেক মগ কফি বানিয়ে বারান্দায় এসে দেখে হাসিব তখনো বাইনোকিউলারে চোখ লাগিয়ে লেকের দিকটায় তাকিয়ে আছে। কফির মগ ওভাবেই আছে।
-স্যার, কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
দ্বিধাগ্রস্থ কণ্ঠে বলল আরিফ।
হাসিব বাইনোকিউলার থেকে অবশেষে চোখ সরালেন। মুখে হাসির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সাত আট বছর বয়সী বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জীবনের জটিলতা বুঝার মত বয়স নয়। অতি অল্পতেই যেমন তাদের চোখে মুখে প্রাপ্তির আলো ফুটে থাকে, এই মুহুর্তে হাসিবের চোখে মুখেও তেমনি একটি আলো ফুটে আছে।
-শোনো আরিফ। আমার ইন্টুইশন বলছে এই লেকের পাশের বাগানে কয়েকদিনের মধ্যে একটি খুনের ঘটনা ঘটবে।
-বাইনোকিউলারে তার আলামত দেখতে পেলেন?
প্রশ্নটি শুনে হা হা করে হেসে উঠেছেন হাসিব।
-আরে না। ওই যে আমি মাঝে মাঝে অনেক কিছু আগের থেকেই টের পেয়ে যাই না? ব্যাপারটা তেমন কিছু। চল ভেতরে বসে গল্প করি। সামিহা অবন্তি আর আবরার হোসেনের জমজমাট রহস্য গল্পটা শোনাই।
[চলবে।]
#চক্রব্যুহ
[সাতাশ]
দুটি চেকে সাইন করে একটা আরিফের দিকে এগিয়ে দিলেন হাসিব। বলতে গেলে অনেকটা জোর করেই আরিফের হাতে দুই লক্ষ টাকার চেক ধরিয়ে দিলেন। বলেছেন, ‘এক লাখ টাকা তোমার পারিশ্রমিক। আর এক লক্ষ টাকা ভাতিজির জন্য আমার অগ্রীম শুভেচ্ছা।‘ এই কথার পরে আর কিছু বলার উপায় থাকে না। দ্বিতীয় চেকটি পাঁচ লাখ টাকার। “আশ্রয় এতিমখানা” র নামে। হাসিব তার সরকারি চাকরির শেষদিকে একটা তদন্ত করেছিলেন। নিজেই নাম দিয়েছিলেন “ডাবল ক্রস”। সেই তদন্তে বেশ বড় এক থোক টাকা পেয়েছিলেন। চাকরিতে অবসর নিয়ে একটা এতিমখানা দিয়েছিলেন সেই টাকায়। ব্যক্তিগত, সরকারি বা অন্য কোন রকমের অনুদান বা সাহায্য ছাড়া হাসিব তার নিজের টাকায় সেই এতিমখানা চালাচ্ছেন। আরিফ এই এতিমখানার প্রধান হিসাব রক্ষক হিসেবে অনারারী জব করে।
হাসিবের এই মানবিক গুণের ব্যপারটি আরিফের কাছে খুব ভালো লাগে। বলা যায় রীতিমত গুণমুগ্ধ। চেকটি হাতে নিতে কেন যেন মন আর্দ্র হয়ে উঠেছে। মনের অজান্তে চোখের কোনে এক বিন্দু জল এসে টলমল করে উঠেছে। পেছনে তাকিয়ে ডান হাতের চেটো দিয়ে দুই চোখের কোন মুছে নিল।
ওরা বসে ছিল খাবার টেবিলের দুই পাশে। সাইফুদ্দিন একটু দূরে ফ্লোরে বসে আছে। ওর অসাধারণ অভিব্যক্তি প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন দেখতে বেশ লাগে আরিফের। জীবনের জটিলতা বুঝার মত বয়স এখনো হয়নি ওর।
-শোনো আরিফ। সামিহা অবন্তি আর আবরার হোসেনের জীবনের গল্প খুব সাধারণ না হলেও কাছাকাছি অনেক গল্প পাবে। কিন্তু তাদের গল্পটি অনন্য সাধারণ হয়ে উঠেছে এর চরিত্রগুলোর জন্য। সব ঘটনা এক কেন্দ্রবিন্দুতে এসে মিশেছে বলে।
আরিফ নীরব শ্রোতা। প্রতিটি সফল সমাপ্তি মনে প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসে। হাসিবকে খুব উচ্ছ্বল দেখাচ্ছে।
-ব্যক্তি আবরারকে নিয়েই যেহেতু এত আয়োজন, তাই তাকে দিয়েই শুরু করি। আজকের এই রহস্য এবং অঘটন, সব কিছুর শুরু আবরার হোসেনের বাল্যকালে। তার বাবা মা’র অতি আহ্লাদে খুব অল্প বয়সেই সে বখে গিয়েছিল। আবরার হোসেনের পরিবার সময়ে সময়ে সেই অতি আদরের প্রতিফল পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে তাদের ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করা শুরু করেছিল আবরার। একটা ব্যাপারে ভাগ্য তাকে সহায়তা করেছিল। বখাটে ছাত্র হলেও পড়াশোনায় কখনো আঁটকে যায়নি। বাবা হতে যাচ্ছ, একটা কথা মনে রাখবে আরিফ। ইউ নিড টু বি ভেরি কেয়ারফুল হোয়াইল চুজিং ইউর ফ্রেন্ড। ছোট বেলার বন্ধু নির্বাচন খুব ইম্পোর্টেন্ট। বন্ধু নির্বাচনে ভুল করলে সারাজীবন তার প্রতিফল ভোগ করতে হবে। আবরারের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল। খারাপ বন্ধু নির্বাচন অতি অল্প বয়সেই তাকে নিয়ে গেছে অন্ধকার এক জগতে। মদ, জুয়া আর নারীতে সে ভীষণ আসক্ত হয়ে পড়ে।
একটু থামল হাসিব। আরিফ মাঝে মাঝে ‘হ্যা’, ‘হু’ করে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা কফিতে চুমুক দিলেন হাসিব।
-দীর্ঘদিন কেটে গেলেও মুক্তিপণ চেয়ে কেউ ফোন করেনি। আবরারের নিখোঁজ বিষয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। অর্থাৎ, কেউ তাকে গুম করে সরিয়ে দিয়েছে বা খুন করে ফেলেছে, ব্যাপারটা অমন নয়। এলিমিনেশন প্রসেস এখানে খুব সহজেই কাজে এসেছে। আবরার হোসেনের রাজনৈতিক বন্ধুদের সাথে ছোট বেলার পুরনো ঢাকার বন্ধুদেরও প্রাথমিক সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলাম। সব বন্ধুই দুষ্টু প্রকৃতির, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। সব বন্ধুদের খোঁজ খবর বের করে মামলার গতি প্রকৃতির উপর নজর রেখে এগিয়ে গেলাম। স্বার্থ, উদ্দেশ্য আর সুযোগ কমবেশি সবার ছিল, তবে গুম বা খুন করে ফেলার মত মোটিভ কারো ছিল না। বাকি রইল বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার তৈয়ব শামস। সুযোগ বল বা স্বার্থ বা উদ্দেশ্য, সবই তার পক্ষে ছিল। ব্যবসায়িক এবং টাকার স্বার্থে অনেক অঘটন ঘটে যেতে পারে। প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন সোর্স লাগিয়ে রেখেছিলাম ওর ওপর গোয়েন্দা নজরদারী রাখতে। সত্যি বলতে আবরার হোসেনের জীবনে তৈয়ব শামসই একমাত্র পরোপকারী ভাল বন্ধু।
একটু থামলেন হাসিব। সাইফুদ্দিনকে ইশারায় কফি বানাতে বললেন। বারান্দায় গিয়ে রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়ালেন কয়েক মুহুর্ত। এরপর ফিরে আসলেন খাবার টেবিলে।
-বাল্যকালের বন্ধুরা সব মদ জুয়া আর নারীর নেশায় আসক্ত ছিল। কলেজে যেয়ে পেয়েছে রাজনৈতিক পথভ্রষ্ট কিছু বন্ধু। সাইফ খান কলেজ জীবনে তার শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল। কালের বিবর্তনে আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে মদ, জুয়া আর নারীর আসরে এদের পুনর্মিলন হয়। জুয়ার আসরের এক বন্ধু একদিন সাইফ খানকে আবরারের বাড়িতে নিয়ে আসে। ততদিনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সাইফ খান অনেকদূর এগিয়ে গেছে। রাজনীতিতে তার ভাগ্য বরাবরই ভালো ছিল। সাথে যুক্ত হয়েছিল খুরশিদা বেগমের নিজস্ব রাজনৈতিক প্রভাব। এভাবে একদিন ব্যবসা বাণিজ্যে অঢেল টাকার মালিক হয়ে গেছে।
এই সময়ে আরিফ হাসিবকে থামিয়ে দিল।
-কিন্তু স্যার। সাইফ খানের গডফাদার ছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ। অর্থাৎ ব্যবসায়ে সে কারো ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছিল। যেখানে বড় ভাইয়ের মত আগলে ছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
-তুমি ঠিকই বলেছ আরিফ। ইমতিয়াজ আহমেদ অনেকের মত ওরও মূল গুরু। এই ইমতিয়াজ আহমেদ একজন আন্তর্জাতিক স্মাগলার। অস্ত্র আর ড্রাগ চোরাচালানি। একজন গডফাদার যেমন করে থাকেন, পিলারের মত প্রতারণামূলক ব্যবসায়ে সাইফ খানকে টেনে নিয়ে এসেছিলেন। শুনলে অবাক হবে আরিফ। হাজার কোটি টাকার প্রতারণা হয় এই পিলার ব্যবসাতে। পিলার বা সোনার বার বা তক্ষক, সব কিছুর পেছনে রয়েছে ভীষণ রকমের প্রতারণা। অনেকেই প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দেয়, তাদের বিশ্বাস করানো হয় ব্যবসাটা অবৈধ আর অতি গোপনীয়, তাই লাভ বেশি। প্রতারিত হলেও তাই দেখবে বেশির ভাগ মানুষ আইনের কাছে সাহায্য চাইতে ভয় পায়।
এই ব্যবসার ধরণ তোমাকে খুলে বলি। ধর, কেউ বড় ব্যবসায়ী হবার দৌড়ে আছে। কী করে অল্প সময়ে দ্রুত ধনী হওয়া যায় এমন একটা পথ খুঁজছে। সেই সময়ে কেউ এসে তাকে অফার করল এমন এক ব্যবসার কথা, যেটায় ইনভেস্টমেন্ট করলে দ্রুতই শতগুণ রিটার্ন পাওয়া যাবে। তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য বিভিন্ন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে, যারা কথিত এই ব্যবসা থেকে বিপুল মুনাফা পেয়েছে। এর মধ্যে কিছু পরিচিত ধনী ব্যবসায়ীও হয়ত থাকবে। মজার ব্যাপার কি জান? এরা সবাই এই চক্রদলের সদস্য।
পিলার ব্যবসা হলো তেমনই এক ব্যবসা। বলা হবে অল্প বিনিয়োগে শত কোটি টাকা মুনাফা। তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য পর পর কয়েকদিন সংঘবদ্ধ চক্রের লোকজন এসে ব্যবসা কীভাবে করতে হবে সেই গল্প শোনাবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে পিলারের “স্যাম্পল” দেখাবে। নিজেদের ইনভেস্টমেন্ট এর কথা বলবে। এক পর্যায়ে সেই কাস্টোমার লোভের ফাঁদে পা ফেলবে। যতগুলো পিলার কেইস নিয়ে কাজ করেছি, সব চক্র মোটামুটি এই ফর্মুলা ব্যবহার করে কাস্টোমার সংগ্রহ করে।
ধোঁয়া ওঠা কফির মগে এক চুমুক দিলেন হাসিব।
-সাইফ খান এভাবেই আবরারকে প্রভাবিত করেছিল। সে বলেছিল, ভারতের মধ্য প্রদেশে পাওয়া একটা সীমানা পিলার বাংলাদেশে এসেছে। এই পিলারের বিক্রয়মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। ইউরোপের প্রচুর ব্যবসায়ী সীমানা পিলার কেনার জন্য হন্যে হয়ে আছে। তবে, এত টাকা বাংলাদেশে ট্রান্সফার করার মত রিলায়েবল একাউন্ট চাচ্ছে তারা। সাইফ খান নিজের একাউন্ট ব্যবহার করে এর মধ্যে তিনবার পিলার বিক্রি করার টাকা এনেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের নজর থেকে বাঁচতে সে এবার নতুন কাউকে খুঁজছে। পুরনো বন্ধুর বলে এই সুযোগ আবরার হোসেনেকে দিতে চাচ্ছে। আবরার সাইফ খানের দ্রুত ব্যবসায়িক উত্থান দেখেছে। তাই তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। সাইফ খান আবরারকে বুঝাতে সক্ষম হয় ইন্ডিয়ান মালিকের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ কোটি টাকায় পিলারটি কেনা যাবে। সে নিজে দুই কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছে, এখন অন্য ইনভেস্টর খুঁজছে। আবরার হোসেনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লোভ। মদ, নারী আর জুয়ার নেশায় ভীষণ নিমগ্ন। প্রায় বিনা পরিশ্রমে অল্প সময়ে এত মুনাফা, বিষয়টা তাকে প্রায় অন্ধ করে ফেলে। লোভ তাকে নিষিদ্ধ পথে টেনে নিয়ে যায়। সাইফ খান এন্ড গং টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করে গত কয়েক বছর ধরে আবরার হোসেন সহ আরো অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। পিলার নামক সেই সোনার হরিণের দেখা কেউ পায় না।
হাসিব থামতেই আরিফের প্রশ্ন। “স্যার, সেদিন গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেছি। বলা হয় দুস্প্রাপ্য ইউরেনিয়াম থাকে বলেই সীমানা পিলারের এত দাম। কথাটা কি সত্য?”
“হা হা” করে হেসে উঠেন হাসিব। যেন খুব মজার একটা বিষয়।
– না, সেটা পুরোপুরি মিথ্যে। যাহোক, গল্পের এই পর্যায়ে নাটকীয় মোড় নেয়। সাইফ খান টাকা আর ক্ষমতা দেখিয়ে সামিহা অবন্তিকে বশীভূত করে ফেলে। নিজের অজান্তে সাইফ খানের প্রেমের ফাঁদে পা ফেলে সামিহা।
বেশ জোরে “হোয়াট” দাঁড়িয়ে পড়ে আরিফ। চমকে উঠেছে সাইফ খানের সাথে সামিহা অবন্তির পরকীয়া প্রেমের কথা শুনে। সাইফ খানের লাশ দেখার পরে সামিহার সেই এক্সপ্রেশনের কথা মনে পড়ে গেছে ওর। সামিহার সেই অদ্ভুত অট্টহাসি চারিদিক থেকে কানে বেজে উঠল যেন! হাসিব কাঁধ শ্রাগ করলেন একবার। আরিফের মনের ভেতর হাজার চিন্তার ঢেউ খেলে যাচ্ছে। প্রায় রাতে সামিহা বাড়িতে থাকত না। সে কি সাইফ খানের সাথে রাত কাটাত? আবরার কি জানত? জানলে তাকে বাধা দিত না কেন? সামিহা নিজেও কি পিলার ব্যবসায়ের চক্রদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতারণায় যোগ দিয়েছিল? হাসিবের ইশারায় বসে পড়ল চেয়ারে। হাসিব বলে যেতে থাকেন।
-সাইফ খান এই সময়ে এসে সামিহা অবন্তি আর আবরার হোসেন, দুজনের সাথে ভিন্নভাবে প্রতারণা করতে থাকে। আবরার হোসেনকে সে পিলার ব্যবসায়ের লোভে ফাঁসিয়েছে। নানা বাহানায় তার থেকে কোটি টাকা নিয়ে নিচ্ছে। আর সামিহার সাথে পুরোদস্তুর ব্ল্যাক মেইল করা শুরু করে। একান্ত ভিডিও রেকর্ড করে রেখে দেয়। এইসব ভিডিও ইন্টারনেট এ ছড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে সামিহার থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। শুধু টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তাকে বারবার বিছানায় যেতে বাধ্য করে।
হাসিব থেমে মুচকি হেসে আরিফের দিকে তাকালেন।
-আমি জানি এই মুহুর্তে কী ভাবছ! আবরার সাইফ খানের নারী প্রীতির বিষয় জেনেও সামিহাকে বাধা দেয়নি কেন ওর কাছে যেতে? তাই তো?
হাসিব মন পড়তে পারেন, মাঝে মাঝে বেশ বিব্রত করে ফেলেন আরিফকে। লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে কফির মগ হাতে তুলে নেয় আরিফ।
-আবরার ততদিনে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। পিলার আজ পাবে কাল পাবে বলে বলে আরো টাকা ইনভেস্ট করে যায় সে। অঢেল টাকা প্রাপ্তির আশ্বাসে বাকি দুনিয়া তার কাছে ফেইড আউট হতে থাকে। এত টাকা বিনিয়োগের পর সাইফ খানকে সে রাগাতে পারছিল না, পিলার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ভেবে। অন্যদিকে সাইফ খান আর খুরশিদা বেগমের রাজনৈতিক প্রভাব এতই বেশি যে, সেটাতেও সে ভীত ছিল। আবার দেখ, আবরার নিজেও পর নারীতে আসক্ত। সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে যায় সে। সিদ্ধান্তহীনতায় চুপ থাকাকেই সে শ্রেয় মনে করেছিল। তবে একটা সময়ে…
গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল এতক্ষণ, হাসিব থেমে যেতে মনোযোগ হারিয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আরিফ।
-স্যার! একটা সময়ে…?
-হ্যা। সামিহা আর মানসিক চাপ চাপ নিতে পারছিল না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। এই যন্ত্রণার থেকে সে মুক্তির উপায় খুঁজছিল। দিনের পর দিন প্রতারিত হচ্ছে, অঢেল টাকা সে দিয়ে ফেলেছে বিভিন্ন সময়ে। একের পর এক ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে পরবর্তি মিটিং ঠিক করছে, তার দেহ ভোগ করে যাচ্ছে। লাম্পট্য তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল। এত প্রভাবশালী একজনের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতেও ভয় পাচ্ছিল। এক সময়ে আবরারকে সব খুলে বলতে বাধ্য হয়। এই ফাঁকে বলে নেই, আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। ভেরি ইন্টারেস্টিংলি, সামিহা অবন্তির মধ্যে একটা দ্বৈত সত্ত্বার বাস ছিল। সে একই সাথে সংসারী এবং বহুর্মুখী। শত অপমান লাঞ্চনার পরেও কোন ভাবেই সংসার ছেড়ে চলে যেতে চায়নি সে।
-স্যার। থামলেন কেন? তারপর?
-একজন লুজারের প্রতিক্রিয়া যা হবার তাই হলো। প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে উঠে আবরার। সাইফকে কিডন্যাপ করে তাদের দুজনের পাওনা টাকা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করার প্ল্যান ছকে ফেলে! সাথে সাইফ খানকে একটা বিশাল শিক্ষা দেবার সুযোগও পেয়ে যাবে।
-তাহলে আবরার হোসেনই কি সাইফ খানকে খুন করেছে স্যার? কিডন্যাপে মুক্তিপণ পাওয়া নিয়ে জটিলতায়?
-না!
-না? মানে?
উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে আরিফ। সাইফুদ্দিনও দাঁড়িয়ে গেছে। দুই হাতে মুখ চেপে ধরেছে। “তাইলে স্যার খুনটা করলো কে?”
-বসো দুজনে।
আরিফ আর সাইফুদ্দিনের বসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন হাসিব।
-সাইফ খানকে খুন করেছে অন্য কেউ। যার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না!
এমন এমন সব সময়ে হাসিব থেমে যাচ্ছিলেন যে, দুজনেরই হার্ট এটাক হবার দশা। অথচ নিজে গভীর মনোযোগ দিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছেন।
-স্যার!
হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারল না আরিফ। কফির মগ টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালেন হাসিব।
-তাকে হত্যা করেছে তারই স্ত্রী খুরশিদা বেগম!
“হোয়াট” বলে আবারও দাঁড়িয়ে পড়েছে আরিফ। কী করে সম্ভব? নিজের স্বামীকে হত্যা করতে যাবে কেন? মিডিয়াতে এই দম্পতির সুখী সংসার নিয়ে প্রায়ই তো লেখা দেখা যায়!
-নিজের স্ত্রীর হাতে খুন হয়েছেন! ও মাই গুডনেস!
আরিফের কথা শেষ হতেই সাইফুদ্দিনের গলা শোনা গেল।
-আমি স্যার আগেই এইডা ভাবছিলাম!
-আমি জানি তুই আমার থেকেও ভালো গোয়েন্দা হবি। পড়াশোনাটা শুরু করলেই তোকে আমার সহকারি বানিয়ে নেব। আরিফের চাকরি নট!
আরিফ হতাশার মাঝেও হেসে উঠল শব্দ করে। বেচারা সাইফুদ্দিন! পড়াশোনাটাই তার কাছে অসহ্য ঠেকে! লাজুক একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলেছে।
-খুরশিদা বেগমই যদি মূল আসামী হন, তাহলে স্যার, সামিহা অবন্তি কেন ভয় পাচ্ছে?
এই সময়ে আবার সাইফুদ্দিনের গলা শোনা গেল, ”স্যার, এত প্যাঁচের গল্প এই পরথম শুনতেছি!”
হো হো করে কিছুক্ষণ হাসলেন হাসিব। তার দেখাদেখি আরিফও হেসে উঠেছে। হাসি থামতে কাঁধ শ্রাগ করলেন হাসিব।
-শোনো, খুরশিদা বেগম নিজেও পরকীয়ায় যুক্ত ছিল!
চমকের পর চমক। সামান্য নিখোঁজ তদন্তের ভেতরে এত রহস্য! নড়েচড়ে বসল আরিফ।
-তার প্রেমিক ছিল নান আদার দ্যান জিসান আহমেদ!
-জিসান আহমেদ? ইমতিয়াজ আহমেদের ডান হাত। যাকে জেরা করেছিলেন? যার কাছে আবরার জুয়ার বিভিন্ন স্টেকে চল্লিশ লাখ টাকা হেরে আফসানা সাফোয়ানকে তুলে দেয়? যাকে খুন করে ফেলবে বলে আবরার তার প্রাইভেট করে রাখা পোস্টে লিখে রেখেছিল! মাই গড! ভেরি ইন্টারেস্টিং এন্ড এক্সট্রা অর্ডিনারি স্টোরি স্যার!
সত্যিই এক্সট্রা অর্ডিনারি গল্প। হাসিব তাকিয়ে ছিলেন আরিফের দিকে। থামতেই মুখ খুললেন।
-হুম। এই সেই জিসান। যে কিনা রাজনৈতিকভাবে সাইফ খানের প্রতিপক্ষ। এবং স্থানীয় এমপি সাহেবেরও প্রতিপক্ষ। অথচ সে বাইরে বাইরে এমপি সাহেবের সাথে সখ্যতা দেখাতো, এমপি সাহেব নিজেও জানতেন সম্পর্কটা নিতান্তই স্বার্থের। সুলতান শাহ ছিল খুরশিদা বেগমের ডান হাত। সাইফ খানের সাথে স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক সম্পর্ক ধরে রেখেছিল। খুরশিদা বেগম এন্ড গংদের মূল ভাবনা ছিল এমপি সাহেবের জায়গা দখল করা, পরবর্তি নির্বাচনে খুরশিদা বেগম এমপি হবার দৌড়ে ছিল। সাইফ খানের কিডন্যাপিং তাদের সামনে অবারিত সুযোগের দ্বার খুলে দেয়!
একটু বিরতি নিয়ে ফের শুরু করলেন হাসিব। আরিফ হা করে গিলছিল তার পর্যবেক্ষণ।
-এখানে অনেকগুলো বিষয় এসে পড়েছিল। খুরশিদা বেগমের হাত ধরে সাইফ খানের ব্যবসায়ে হাতেখড়ি। বাবার ছোট একটা গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রি সে সাইফ খানকে যৌতুক হিসেবে এনে দিয়েছিল বিয়ের পর। সাইফ খান তার এবং খুরশিদার রাজনৈতিক পরিচিতি ব্যবহার করে অতি দ্রুত সিঁড়ির উপরের ধাপে উঠে গিয়েছিল। ব্যবসা যখন বিস্তৃতি লাভ করেছে, সেই মুহুর্তে সে খুরশিদা বেগমকে আড়াল করে ফেলে সব কিছুর থেকে। সব ব্যবসার কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেয়। রাজনৈতিক ভাবেও সে খুরশিদাকে পেছনে ফেলার খেলায় মেতে ওঠে। খুরশিদা বেগম সাইফ খানের এমন প্রতারণা সহজে হজম করতে পারছিলেন না। সাথে যোগ কর খুরশিদা বেগমের নিজের পরকীয়া। পথের কাঁটা দূর করার সহজ উপায় খুঁজছিলেন। ঠিক এই সময়ে সামিহা অবন্তি একদিন খুরশিদা বেগমের সাথে দেখা করে। সাইফ খান তার সাথে ব্ল্যাক মেইলিং করে টাকা নিচ্ছে, এমন প্রচুর প্রমাণ সাথে নিয়ে গিয়েছিল। সাথে ব্ল্যাক মেইলিং করতে তাকে পাঠানো ভিডিও ক্লিপ। একজন সাধারণ নারীও তার স্বামীর এমন প্রতারণা মেনে নিতে পারে না। বিশেষ করে অন্য একটা মেয়ের সাথে বিছানায় যাওয়া। সব কিছু মিলে খুরশিদা বেগম ফণা তোলা কেউটে সাপের মত হয়ে পড়ে।
একটু থামলেন হাসিব। কী যেন ভাবলেন। তারপর আবার শুরু করলেন।
-একটা ব্যাপার মাথায় রাখবে। মানব চরিত্রের অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে। নিজের করা অন্যায় নিজের চোখে দেখতে পায় না। খুরশিদা বেগমও নিজের অন্যায় দেখতে পায়নি। তাছাড়া প্রথম জীবন থেকেই সে খুব ডেয়ারিং ছিল। সাইফ খানের পরকীয়া, রাজনৈতিক স্বার্থ আর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, সব কিছুর সমাধান সে সাইফ খানের মৃত্যুতে খুঁজে পায়। সাথে এমপি সাহেবকে ফাঁসিয়ে দেয়া। সেও কঠিন প্ল্যান এঁটে ফেলে। সাইফ খানকে সরিয়ে দিতে হবে! জিসান আহমেদ আফসানা সাফোয়ানের কাছ থেকে শুনে ফেলেছিল সাইফ খানকে কিডন্যাপ করে গাজীপুরের শ্রীপুরে নিয়ে যাবার কথা। জিসানের কাছে কিডন্যাপ হবার খবর পেয়ে খুরশিদা বেগম নিজ এলাকায় সাইফ খানকে দেখে নেবার সহজ সুযোগ ছেড়ে দিতে চাননি। সাইফ খানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তার নিজের ডান হাত সুলতান শাহের শরণাপন্ন হয় খুরশিদা বেগম এবং জিসান আহমেদ। মূলত এদের মিলিত বুদ্ধিতে ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে সাইফ খানকে প্রথমে আবরার হোসেনের ভাড়াটে গুণ্ডাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। তারপর তাকে খুন করে এমপি সাহেবের পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাকে বলে! আর লাশের মুখায়ব এবং দেহ বিকৃত করে দেয়া হয় যেন তাকে চিনে ফেলার মত সহজ উপায় না থাকে। নিজেদের আড়াল করার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে পাওয়া যায়!
দীর্ঘ সময় কথা বলার পর হাসিব উদ দৌলা থামলেন। ঠাণ্ডা মগ হতে কয়েক চুমুক কফি খেলেন। আরিফ আর সাইফুদ্দিন অবাক দৃষ্টিতে হাসিবের কথা শুনছিল। ঠিক শোনা নয়। কথা গিলছিল বলাটাই শ্রেয় হবে। নিরবতা ভাঙ্গল আরিফ।
-তাহলে স্যার, আবরার হোসেন কিডন্যাপিং শুরু করলেও আল্টিমেটলি গেম খুরশিদা বেগম এন্ড গং দের হাতে চলে যায়?
আরো দুই চুমুক কফি খেয়ে সাইফুদ্দিনকে নতুন করে কফি বানাতে বলে শুরু করলেন হাসিব।
-ঠিক বলেছ। এই জায়গাটি বেশ ইন্টারেস্টিং। মনে আছে? তুমি নিজেই একবার বলেছিলে ক্রস ফায়ারের কথা? নেহাৎ কো-ইনসিডেন্ট। সময় এবং সুযোগ মিলে যাওয়া আর কী!
হাসিব প্যান্টের ডান পকেট থেকে একটা ছোট নোট বই বের করলেন।
-সাইফ খান আবরার হোসেনকে পিলার দেখাতে পনের তারিখ শ্রীপুরে ডেকেছিল। কল রেকর্ড থেকে দেখেছি, এই ব্যাপারে তারা দুজনে সম্মত হয় গত চার তারিখে। আবরার তার ভাড়া করা গুণ্ডাদের স্থান আর সময় জানিয়ে দেয়। প্ল্যান মত সাইফ খানকে কিডন্যাপিংও করে ফেলে। আবরারের গুণ্ডারা সাইফ খানকে কিডন্যাপ করার পর পরই সুলতান শাহের দল যেয়ে সেই গুণ্ডাদের হাত থেকে সাইফ খানকে দ্বিতীয়বারের মত কিডন্যাপ করে ফেলে!
সাইফুদ্দিন কথা বলার মাঝে আরো দুই মগ কফি নিয়ে এসেছিল। হাসিব একটু থেমে কয়েক চুমুক কফি খেলেন। সুলতান শাহের দল যেয়ে সাইফ খানকে রি-কিডন্যাপ করেছিল! কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়িয়েছে। আরিফও এক চুমুক কফি খেয়ে নিল।
-তোমার কি মনে আছে আরিফ? সেই যে শ্রীপুর থানায় সুলতান শাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সাইফ খানের সাথে তার শেষ কবে কথা হয়েছে? উত্তরে বলেছিল পনের তারিখ সন্ধ্যায়। গাজীপুরে পার্টি অফিসে দুজনের একটা মিটিং ছিল সেদিন। তাকে কার্যালয়ে না পেয়ে ফোন করে। সাইফ তাকে জানিয়েছিল সে শ্রীপুরে। লোকেশন নিশ্চিত হয়ে জিসান আহমেদ আর খুরশিদা বেগমের সাথে পরামর্শ করে তার দল পাঠিয়ে সাইফ খানকে কিডন্যাপ করে ফেলে।
-এ তো মহা জটিল ঘটনা স্যার! এত এত কো ইন্সিডেন্ট এক সাথে!
-সাম টাইম রিয়েলিটি ইজ স্ট্র্যানজার দ্যান ফিকশন। এখানেও তাই হয়েছিল। যাহোক, ষোল তারিখে আবরার বুঝতে পারে সে ডাবল ক্রসড হয়েছে। এবং এটাও বুঝতে পারে সে মহা বিপদে জড়িয়ে গেছে। তার জীবন নিয়ে সংশয়ে পড়ে যায় সে। সে তার ইনফরমারদের কাছ থেকে জানতে পারে সাইফ খানকে খুন করে খুরশিদা বেগমের দল তাকে ফাসিয়ে দিতে যাচ্ছে। একে তো নিজে অপরাধ করেছে, যেটা জানাজানি হয়ে গেছে, সাথে জিসানদের রাজনৈতিক ফন্দি। সব মিলিয়ে আবরারের সামনে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না।
এবার এক চুমুক পানি খেয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা দেখলেন হাসিব। তারপর আরিফের দিকে ঝুঁকে আসলেন।
-মজার ব্যাপার কী জানো? সামিহা অবন্তি আবরারের ছিনতাই নাটকের ঘটনা জানত না। ব্যাপারটা অতি গোপন রাখতে চেয়েছিল আবরার। কিন্তু জীবন নিয়ে সংশয়ে পড়ার পর সামিহাকে ফোন করে সব বলে দেয়। সেটা ষোল তারিখে।
-অদ্ভুত সব কাহিনী স্যার। এক্সট্রা অর্ডিনারি রহস্য গল্প! স্যার। আবরার হোসেন এখন কোথায়? সে কি জিসান আহমেদদের হাতে খুন হয়েছে? আর স্বামী নিখোঁজ বা গুম বা খুন, এমন কোন মামলা খুরশিদা বেগম এখনো করেনি?
-প্রথমে খুরশিদা বেগমের মামলার কথা বলছি। সে সতের তারিখে তার স্বামী নিখোঁজ বলে প্রথম জিডি করেছিল। লাশ না পাওয়া পর্যন্ত সে হত্যা মামলা করতে চাইছিল না, যদিও সে নিজেই গুণ্ডা দিয়ে স্বামীকে খুন করিয়েছে। অফিশিয়ালি সাইফ খানের এখনো লাশ পাওয়া যায়নি। মনে আছে? লাশের পরিচয় জানার পরে আমিই পরিচয় প্রকাশ করতে মানা করেছিলাম? যাই হোক, সে গত পরশু শ্রীপুর থানায় স্বামীর নিখোঁজ এবং হত্যা মামলা করতে গিয়েছিল। এক নম্বর আসামী এমপি সাহেব। দুই আর তিন নম্বর আসামী আবরার হোসেন আর সামিহা অবন্তি, সাথে অজ্ঞাতনামা আসামী। যদিও তুমি জান এভাবে এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। অফিশিয়াল ডেকোরেটাম আছে। এসপি সাহেবের সাথে কথা বলে আপাতত আঁটকে রেখেছি। লাশের পরিচয় প্রকাশ পাবার পর ঘটনা দ্রুত মোড় নেবে। আমি চাইছি, পরিচয় প্রকাশের আগেই যেন সামিহা দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে।
‘দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে’, অর্থাৎ হাসিব নিজেই সামিহাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে সাহায্য করছে! হাসিব উদ দৌলা উঠে দাঁড়িয়ে কফির মগ হাতে বারান্দায় চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পায়চারী করে আবার এসে চেয়ারে বসলেন।
-স্যার। এখন অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়েছে। স্যার, আফসানা সাফোয়ানকে কেন মরতে হলো!
-ভাল প্রশ্ন আরিফ। জুয়ায় হেরে আবরার প্রায়ই আফসানা সাফোয়ানকে বিভিন্নজনের হাতে তুলে দিত। এবার দিয়েছিল জিসান আহমেদের হাতে। আফসানা সাফোয়ানের সাথে আবরারের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। কল লিস্ট থেকে যা পরিষ্কার হয়েছিল। আবরার তাকে বলে দিয়েছিল জিসান আর সুলতান শাহদের দল সাইফ খানকে কিডন্যাপ করেছে। নিজেদের বাঁচাতে এবং পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে তাই জিসানের লোকদের হাতে আফসানা সাফোয়ানকে জীবন দিতে হয়।
-তাহলে আবরার হোসেন কোথায়?
[চলবে।]