ডাকপাড়ি #পর্ব_৪১,৪২

0
309

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪১,৪২
#আফনান_লারা
৪১
________
সজীব মালয়েশিয়াতে ফিরেই সিম অন করে লেভেনকে কল করতে করতে বাসায় ঢুকেছে।ওর বাসার কাজের লোক দরজা খুলে ওকে শুরুতেই জানালো লেভেন অনেকবার এসেছিল বাসায়।সজীব যেহেতু কিছু বলে যায়নি তাই তারাও লেভেনকে সজীবের ব্যাপারে কিছুই সঠিক করে বলতে পারেনি।সজীব ওদের কথা শুনে ফোন কানে ধরে নিজের রুমে এসে হাতের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে লাইট অন করে বললো ডিনার রেডি করতে, আজ সে লেভেনকে নিয়ে ডিনার করবে এখানে।
এই কথা বলে গায়ের কোটটা খুলে টাই ঢিলা করে আরও একবার কল করে সে লেভেনকে।কিন্তু এইবার ও লেভেন রিসিভ করেনি।
লেভেনের বাবাকে কল দেয়ার মতন সাহস সজীবের নেই, তাই সজীব আর লেভেনের ক্লাসমেট অমিসনকে সজীব কল করে জানতে পারলো লেভেন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এই কথা শুনে সজীব আর এক মিনিট ও বাসায় না থেকে বের হয়ে গেলো।অমিসনের বলা হাসপাতালে এসে লেভেনের কেবিনে ঢুকতে নিতেই লেভেনের বাবার লোকজন এসে সজীবকে ঘিরে ধরে আটকে ফেলে।ওরা সজীবকে বলছে লেভেনের বাবার কড়া নিষেধ আছে সজীবকে ঢুকতে দেয়া যাবেনা।সজীব আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো এটা কেন বলেছে। ঠিক সেসময় লেভেনের বাবা এসেছেন ওখানে।সজীবের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি রেখে চেয়ে আছেন তিনি।

‘আঙ্কেল ওরা কি বলছে!আমাকে কেন ভেতরে যেতে দিচ্ছেনা।লেভেনের কি হয়েছে?’

‘তুমি এখন কেন এসেছো?’

‘আসলে আঙ্কেল জরুরি একটা কাজে আমাকে বাংলাদেশ যেতে হয়েছিল।তাই যোগাযোগ বন্ধ ছিল’

‘এটা তুমি লেভেনকে বলে যাওনি।লেভেন তোমাকে উন্মাদের মতন ভালবাসে এটা তুমি জানোনা?এরপরেও এত বড় অন্যায় কি করে করেছো??লেভেনের ইমোশনের কি কোনো দাম নেই তোমার কাছে?আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে লেভেনের বিয়ে দিবোনা।আমার পছন্দ করা ছেলের সাথেই দিবো।তোমার মতন দায়িত্বহীনতায় ভোগা ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দিবোনা।সোজা বাসায় যাবে এখন।লেভেনের মুখ ও তোমায় আমি দেখতে দিবোনা’

‘আঙ্কেল প্লিজ, একবার দেখা করবো।আই এম সরি ফর এভ্রিথিংক আই ডিড’

‘সরি বলে এখন আর লাভ নাই।যেতে বলছি।চলে যাও’

এই কথা বলে লেভেনের বাবা দেহরক্ষীদের ইশারা করে চলে গেলেন।

সজীব বাইরে থেকে লেভেনের নাম ধরে বারবার করে ডাকছে।তার ডাক লেভেন শুনতেও পেলো কিন্তু সজীবের প্রতি জমা একরাশ অভিমানের চোটে সে চুপ করে রইলো।একটা টু শব্দ ও করেনি।

সজীব অনেকক্ষণ লেভেনকে ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে সামনে থাকা দুজন দেহরক্ষীর সাথে মারপিট শুরু করে দিয়েছে।হইচই শুনে লেভেন মাথায় হাত দিয়ে ফেললো এরপর নার্সকে বললো গিয়ে সজীবকে ভেতরে ডাকতে।নার্স জলদি গিয়ে দরজা খুলে সজীবকে বললো ভেতরে আসতে।

সজীব দেহরক্ষী গুলোর সাথে জমপেশ মারপিট করে তিনজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় নার্সের দিকে চেয়ে ছিল।সজীব তখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে ভেতরে চলে গেছে।লেভেন ওর এই হাল দেখে এক চিৎকার দিয়ে নার্সকে ডাকলো।বললো মলমপট্টির ব্যবস্থা করতে।
সজীব এগিয়ে এসে লেভেনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।লেভেনের চোখে পানি ছলছল করছিল সজীবকে এমন হালে দেখে।সে ভাবেনি তার অভিমানের রেশ এতদূর গড়াবে।সজীবকে পাশে বসিয়ে নার্সকে দিয়ে ওর কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে নিয়ে নার্সকে চলে যেতে বলে সে।

‘বাংলাদেশ গিয়েছিলে?’

‘হ্যাঁ’

‘কেনো?’

‘একটা জরুরি কাজ ছিল’

‘আমাকে বলে গেলে আমি তোমায় যেতে দিতাম না?’

‘সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি’

‘কিসের সারপ্রাইজ? ‘

সজীব পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা দলিল বের করে লেভেনের দিকে ধরে বললো,’সারথি আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে’

লেভেন তো যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।খুশিতে সে কাগজ না দেখেই সজীবকে জড়িয়ে ধরলো।চিৎকার করে বললো,’আমি তোমায় অনেক বেশি ভালবাসি সজীব।’
———-
অরিন্দম কর্মকারকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেলায়েত হোসেন শিখিয়ে নিয়েছেন অসুস্থ হবার নাটক করার জন্য।
যাতে করে পূর্ণতা বিয়ে করতে রাজি হয়।
অরিন্দম শুরুতে নাকচ করলেও পরে রাজি হয়ে গেলো।বুকে হাত দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বেলায়েত হেসেনের ইশারার অপেক্ষায় ছিলেন। বেলায়েত হোসেন সিঁড়ি দিয়ে চেয়ে দেখছেন পূর্ণতা আসছে কিনা।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি দেখলেন পূর্ণতা হাতে মিষ্টির প্লেট নিয়ে উরের তলার দিকে আসছে।ওমনি তিনি ছুটে এসে অরিন্দমকে নাটক শুরু করতে বললেন।
অরিন্দম বুকে হাত দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছেন মেঝেতে।পূর্ণতা সিড়ি বেয়ে উপরে আসা ধরতেই পেছন থেকে মিসেস সায়না ডেকে বললেন রান্নাঘরের ডালাটা চেক করে আসতে।তাই আর উপরে গেলো না সে।
অরিন্দম বুকে হাত দিয়ে বলছে,উহু! আমি শেষ।মাগো কেউ বাঁচাও!!পানি পানি!!!’

বেলায়েত হোসেন পূর্ণতাকে আবার চলে যেতে দেখে এগিয়ে এসে বললেন,’নাটক থামাও।তোমার মেয়ে উল্টো পথে চলে গেছে’

অরিন্দম তখন সোজা হয়ে বসে বলে,’তবে আবার কখন নাটক করতে হবে?আমি শুয়ে পড়লে উঠতে আমার কোমড় ব্যাথা করে।’

‘এত অধৈর্য্য হলে চলবে?পরে আবার বিকেলের দিকে করিও।এখন নিজের কাজে যাও’
———-
পূর্ণতা বাগানে বের হয়েছিল অর্ককে খুঁজতে।ওকে না পেয়ে আবার চলে আসার সময় তার চোখ গেলো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐদিনের সেই ছেলেটার দিকে,শাহেদ।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে সে ফোনে কথা বলছিল।
পূর্ণতা কাছে গিয়ে হাত নাড়িয়ে বললো,’হাই??আপনি বাইরে কেন?ভেতরে আসুন।ফারাজ ভাইয়া বাসাতেই আছে’

শাহেদ পূর্ণতাকে দেখে থতমত খেয়ে গেছে।সে ওকে এসময় এখানে আশাই করেনি।কলে কথা বলতে বলতে এখানে এসে পড়েছিল ভুলে।এখন পূর্ণতা তো ওকে ছাড়বেনা।
ঢোক গিলে শাহেদ বললো,’ভাল আছেন?’

‘আরে ওসব পরে হবে।আগে ভেতরে আসুন’

‘না না!পরে আসবো।আমি একটা কাজে এইদিকে এসেছি’

‘আপনি ফারাজ ভাইয়ার বন্ধু হোন।আপনাকে তো আসতেই হবে’

শাহেদ কথাই না পেরে দিলো এক দৌড়।
পূর্ণতা এক দৃষ্টিতে শাহেদকে পালাতে দেখলো।তারপর ভাবলো ছেলেটা অদ্ভুত!নিজেই আসে আবার নিজেই পালায়।এত ভয় পাবার কি আছে?বন্ধু তো বন্ধুই। বাসায় আসতেই পারে!
শাহেদ দূরের সেই চা দোকানের কাছে এসে বসলো হাঁপাতে হাঁপাতে।সেই দোকানদার শাহেদকে দেখে চা বানাতে বানাতে বললেন,’এখনও হাবিজাবির লাইন ছাড়লেনাৃ
তুমি তো বাপু খারাপ বংশপর সাথে আত্নীয়তা করার শখ পোষণ করে বসে আছো!’

‘না সেটা নয়।ফারাজের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি, এই আর কি!’

‘ব্যাকগ্রাউন্ড মানে ঐ বাউন্ডারি তাই তো?আরে বাউন্ডারির খবর আমার কাছে জানতে চাইবা।আমি জানি বাউন্ডারির ভেতরে কি চলো আর বাইরে কি চলে!তুমি জানো? এখন ওদের বাসায় ঐ নতুন আসা পূর্ণা মেয়ের সাথে ফারাজের বিয়ের কথা চলছে?’

‘এগুলা ভুয়া!’

‘আরে ভুয়া কি কও!আমি নিজের কানে শুনে আসছি।তোমার বোনের সাথে তো ফারাজের বিয়া হইবোনা’

‘ফারাজ অনেক ভাল ছেলে।আমি বোনের বিয়ে দিলে ফারাজের সাথেই দিবো!!দরকার হলে ঐ পূর্ণতাকে আমি নিজে বিয়ে করে পথ ক্লিয়ার করবো’

দোকানদারের হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেলো এই কথা শুনে।ইয়া বড় হা করে বললেন,’না এ হতে পারেনা।তুমি কেন পূর্ণতাকে বিয়া করবা!তুমি ওরে বিয়া করলে হাবিজাবিতে তো ঝামেলা বলে কিছুই থাকবেনা।আমি কি দেখে বিনোদন নিবো তাইলে!’

দোকানদারের কথা শুনে শাহেদ টাস্কি খেয়ে বসে আছে।তার মানে ভেজাল করতে এবং লাগাতেই এই দোকানদারের ভাল লাগে?এই ছিল তার মনে?
দোকানদার শাহেদকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে আবার বললো,’আরেহ কথা দাও আমাকে, তুমি ঐ মেয়েকে বিয়া করবানা’

‘অবশ্যই করবো।ওকে আমার খুব ভাল লেগেছে।’

‘চুপ করো পোলা!তোমাকে আর চা’ই খাওয়াবোনা।একজনের সাথে আরেকজনের ভেজাল না লাগালে সব কিছু তো একটা সময় পানসে হয়ে যাবে।তাই চেষ্টা করবা ভেজাল লাগিয়ে চলাফেরা করতে।তবেই দেখবা চারপাশটা খুব রঙিন’

‘আপনি তো মশাই একটা পাগল!’

দোকানদার নিজের টাকার বাক্স থেকে একটা ফাইল বের করে শাহেদের দিকে বাড়িয়ে ধরেছে তখন।শাহেদ হাতের কাপ রেখে ফাইলটা মেলে ধরলো।

ফাইলে লেখা আছে ‘লোকমান রহিম’,বয়স ৫১।মানসিক রোগী!!আচ্ছা!আপনি মানসিক রোগী?’

দোকানদার বিরক্তি চাহনিতে বলে,’পাগল নিজে বলে সে পাগল?তুমি তো মিয়া নিজেও পাগল!’

শাহেদ টুকুস করে ফাইলটা রেখে সরে বসলো।ওমনি দোকানদার বাক্স হাতিয়ে একটা লিপলেট বের করে ধরলো শাহেদের দিকে।
লিপলেটে লেখা”পাবনা মানসিক হাসপাতালের সিরিয়াল নাম্বার ৩০৯ রোগী পলাতক।নাম লোকমান রহিম’

এটা দেখে শাহেদের কাশি শুরু হয়ে গেছে।গলা চুলকে সে উঠে দাঁড়ালো।লোকমান রহিম ব্রু কুঁচকে বললেন,’শুনো মিয়া।আমি মোটেও পাগল না।পাগল হইলে এইসব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতাম না।এগুলা হলো জমির দলিল।আমাকে একজন পড়ে কইছে।নিজে পড়তে তো জানিনা,যারেই পড়তে দিই সেই তোমার মতন উঠে এক দৌড় দেয়।এখন কি তুমিও দৌড় দিবা?

শাহেদ ধপ করে বসে গেলো আবার।যা বোঝা গেলো তা হলো ভাল পাগল।খারাপ পাগল হলে চামড়া আস্ত রাখতোনা।দম ফেলে আরেক কাপ চা চাইলো শাহেদ।
লোকমান করিম চা বানাচ্ছেন আগের মতন।

‘আচ্ছা আপনি কি জানেন এগুলা আসলেই জমির দলিল না?’

‘দেখো মিয়া!চা খাইতে আসছো চা খাও।আমার জমির দলিলকে পাগলা গারদের কাগজ বলে দখল নিতে আসিওনা।তোমার আগেও দুজন বলে গেছে এটা নাকি পাগলা গারদের কাগজ।শেষেরটারে যে পিডান পিডাইছিলাম উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য।তুমিও কি পিডা খাইতে চাও?’

শাহেদ ভাবছে কোন দিক দিয়ে দৌড় দেবে।এই লোক তো মোটেও সুবিধার না।কিন্তু দৌড় দেয়া মনে হয় সম্ভব হবেনা কারণ রাস্তায় গাড়ী চলাচল করছে দ্রুত।পরে দেখা গেলো পাগলের ভয়ে দৌড় দিতে গিয়ে গাড়ীর নিচে পড়তে হবে।
চুপচাপ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বড় করে একটা হাসি দিয়ে শাহেদ বললো আসলেই কাগজটা জমির।
———–
খাদিজা আন্টির বাসার দাওয়াত শেষ হওয়ায় আনাফ সারথিকে নিয়ে একটা জায়গার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।সারথি জানেনা।সে জানে তারা বাসার দিকে যাচ্ছে।
—-
‘আচ্ছা দাওয়াতে অধরাকে আনলেন না কেন?’

‘সে তার কলেজের অনুষ্ঠানে গেছে’

‘আপনি এখন আর আতর ব্যবহার করেননা?’

‘না’

‘কেনো?’

‘কারণ আতর ব্যবহার করলে তুমি বুঝে যাও আমি কোথায় আছি’

‘এটা ঠিক না।তার মানে আমাকে না জানিয়ে আপনি আমার কাছে থাকার চেষ্টা করবেন?’

‘মোটেও না।দূর থেকে যেই দেখা দেখি সেটাতেই যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য আমি আতর ব্যবহার বন্ধ করেছি।’

সারথি বুঝে গেলো তারা বাসার দিকে যাচ্ছেনা।যেখানে দশ মিনিটের পথ সেখানে বিশ মিনিট হয়ে গেছে এখনও বাসা আসলোনা।

আনাফ হাসছে।কিন্তু আওয়াজ করছেনা।গাড়ীর স্পীড বাড়িয়ে সে বললো,’তোমার আর সজীবের ডিভোর্স হয়ে গেছে?’

‘আমার আর ওনার কথা শুনেছেন তাহলে?’

‘শুনেছি এবং আন্দাজ ও করে ফেললাম’

‘তবে উনি সই করেছেন কিনা জানিনা’

‘করবে করবে।নেচে নেচে করবে’

‘তো এগুলা কেন বলছেন এখন?’

‘কারণ আজ আমাদের বিয়ে!’

চলবে♥

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪২
#আফনান_লারা
________
এক মূহুর্তের জন্য সারথি আনাফের কথাটা বিশ্বাস করে ফেলেছিল।তাই সবার আগে চেঁচিয়ে বলে ফেললো “অসম্ভব।”

আনাফ খিলখিল করে হাসছে।সারথি ওর হাসি শুনে বলে,’মজা করছেন তাহলে?’

‘দেখতে চেয়েছিলাম তোমার রিয়েকশান।দেখা হয়ে গেছে।তবে এটা ভেবো না যে আমি তোমায় বিয়ে করছিনা।বিয়ে করবোই।সব কিছুর একটা সময় থাকে সারথি।একটা সঠিক সময় আসবে,দুটো সঠিক মানুষের মিলনের জন্য।অপেক্ষায় থাকো’

‘আমার স্বাদ নেই আপনাকে বিয়ে করার’

‘ কিন্তু জানো? আমার অনেক স্বাদ।তোমাকে বিয়ে করে লাল শাড়ী পেঁচিয়ে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যাবো’

সারথি আবারও চেঁচিয়ে বললো,’আপনি একটা খারাপ লোক!’

‘বিয়ে করা বর সজীব তোমায় ছোঁয়নি বলে সে ভাল আর আমি বিয়ের পর ছোঁবো বলে আমি খারাপ??তোমরা মেয়েরা যে এত ভুলভাল আইন তৈরি করো!!এটার জন্য তোমাদের তো একটা আইন দেখিয়ে জেলে পুরা উচিত’

সারথির কথা হাওয়া হয়ে গেছে আনাফের ধমক খেয়ে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে আবার বললো,’আমরা কোথায় যাই?’

‘তোমায় কেন বলবো?’

‘আজব তো!আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন আর আমাকেই বলবেন না?’

‘না বলবোনা।আর একবার জানতে চাইলে অদ্ভুত একটা নাম বলে দিব।পরে তুমি নিজেই রাগ করবে’

‘কি নাম?’

‘বাসর ঘর’

সারথি প্রচণ্ড রেগে গেলো।রাগে চুপ করেই থাকলো আর কিছুই বললোনা।
আনাফ যাচ্ছে তার নানুর বাড়ি। মায়ের চাইতে বেশি ফ্রি সে তার নানুর সাথে।
সারথিকে একবার নানুর কাছে নিয়ে যাবে।নানুকে দেখাবে।
এই ভেবে সে নানুর বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
বেশিদূরনা আবার বেশি কাছেওনা।মোটামুটি জার্ণি করতে হয়।

সারথি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে থেকে আবারও জানতে চাইলো তারা কোথায় যাচ্ছে।
আনাফ হেসে উড়িয়ে দিলো তাও বললোনা।
নানুরবাড়িতে যেতে এখনও অনেকসময় বাকি বলে আনাফ হাইওয়েতে থামালো গাড়ী।সারথি বললো তারা কি পৌঁছে গেছে।আনাফ জবাবে বললো’নাহ’

গাড়ী থেকে বেরিয়ে সারথির হাত ধরে বের করে সামনের একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো সে।

চায়ের কথা বলে আনাফ এক দৃষ্টিতে সারথিকে দেখছিল।সারথি তার খোলা চুলগুলোকে বেঁধে হঠাৎ বলে উঠলো,’আপনার জন্য কি মেয়ের অভাব?’

‘এটা কেন বললা?’

‘জেনেশুনে কেউ অন্ধ মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেনা আমি যতদূর জানি’

‘আমি তো ফ্লার্ট করছিনা।আমি প্রেম করছি।’

‘আচ্ছা যাই হোক।প্রেম করছেন মানলাম কিন্তু কেন?আপনি জানেন আপনি হাত বাড়ালেই সুন্দরী ডাক্তার পাত্রীর লাইন লেগে যাবে?’

‘জানি’

‘তাহলে আমায় কেন চুুজ করছেন?’

‘কারণ আমি ডাক্তার বউ চাইনা।সুন্দরের মধ্যে সাদাসিধা ঘরণী,গৃহিনী টাইপের একটি মেয়ে চাই’

সারথি আরও কিছু বলতে যাবে অমনি একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শোনা গেলো।দূর থেকে ছুটে এসে আনাফের সামনে এসে বললো,’আনাফ স্যার রাইট?’

‘ইয়েস।হু আর ইউ?’

‘স্যার আমি নীলা।চিনতে পেরেছেন?’

‘কোন নীলা?’

‘যাকে আপনি উনিশবার ব্লক করেছেন সেই নীলা’

আনাফের কাশি এসে গেলো কথাটা শুনে।সারথি ফিক করে হেসে দিছে।ওর হাসি শুনে নীলা মেয়েটি সারথির দিকে বিরক্ত চোখে তাকালো তারপর আবার আনাফের দিকে চেয়ে ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে বললো,’ফেসবুকের ফ্রেন্ড হই।চা খাওয়াবেন না?’

‘না।আমি পরিচিত হওয়া ছাড়া কারোর চায়ের বিল দিই না’

‘আরে কতই যাবে,বিশ টাকা মাত্র!’

‘জ্বী না।এই রেস্টুরেন্ট হাইওয়েতে করা।হাইওয়ের রেস্টুরেন্টে চায়ের দাম পঞ্চাশের নিচে হয়না’

‘এত বড়লোক হয়ে এত কিপটামো কেন করছেন?আচ্ছা এই আপুটা কে?আপনার কি হয়?আমি তো জানি আপনি অবিবাহিত ‘

আনাফ সারথির ডান হাত টান দিয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো,’আমার ওয়াইফ।কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করার শখ হলো তাই করে ফেললাম।আপনার কোনো সমস্যা আছে নীলা আপু?’

নীলার যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।আনাফের উপর সে রীতিমত দিওয়ানা ছিল।আজ এই শুভদিনে এই কথা শুনতে হবে কে জানতো!
————-
শাহেদ তার বড় বোনকে নিয়ে ফারাজদের বাসায় এসেছে।পূর্ণতা তার রুমেই ছিল।সে জানেনা শাহেদ আসার কথা।শাহেদকে দেখেই চিনেছেন বেলায়েত হোসেন।সুন্দর করে আপ্যায়নও শুরু করলেন তিনি।রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তা বানাতে বলে শাহেদের সাথে তার ছোট বোন নিয়ে আলাপ শুরু করলেন এবার।
শাহেদের বোন ইন্টার পাশ করেছে এই বছর।দেখতে শুনতে ভালই।ব্যবহার ও ভাল।সব শুনে বেলায়েত হোসেনের ভালই মনে হলো।তিনি দেখতে চাইলেন সেই মেয়েটির ছবি।পরে শাহেদ বললো তার বোন কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে।
বেলায়েত হোসেন খুশি হয়ে ফারাজকে ডাকতে চলে গেছেন।পূর্ণতা সেসময় রুম থেকে বেরুলো।চুল আঁচড়াচ্ছিল এতক্ষণ। বাবার সাথে কথা আছে।চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে কিনা সেটা জানা দরকার তার কাছ থেকে।এইসব ভাবতে ভাবতে সে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল।পূর্ণতাকে দেখে শাহেদ তার বড় বোনকে ফিসফিস করে বললো,’আপা দেখো।এই মেয়েটির কথা বলছিলাম’

পূর্ণতা শাহেদকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো,’শেষমেশ আসলেন তাহলে!’

শাহেদ মুচকি হেসে পূর্ণতাকে বসতে বলে।শাহেদের বোন ওকে ভাল করে দেখে ফিসফিস করে বললো,’মেয়ে তো কালো!’

শাহেদ তখন গলার আওয়াজ কমিয়ে বললো,’কালো না আপা।এটাকে শ্যামলা বলে।দারুণ একটা রঙ’

‘তুই ও তো শ্যামলা।বাচ্চাকাচ্চা সব শ্যামলা হবে’

‘শ্যামলা শ্যামলা একসাথ হয়ে ফর্সা জন্ম নেয় জানোনা?আমাদের বাবা মাও তো দুজনেই শ্যামলা,তুমি এত ফর্সা হলা কেমনে বলোতো?’

‘মা গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা হলুদ দুধে মিক্স করে খেয়েছিল আমার বেলায়’

‘তো আমি পূর্ণতাকে প্রতিবার গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা হলুদ দুধে মিশিয়ে খাওয়াবো’

শাহেদের আপা ঠাস করে নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি মারলেন
শাহেদ পূর্ণার দিকে হেসে চেয়ে আছে।পূর্ণতা ওদের দুজনের ফিসফিস কিছুই বুঝলোনা তাও দাঁত কেলিয়ে রাখলো।
——–
বেলায়েত হোসেন ফারাজকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসেছেন। শাহেদ ফারাজকে দেখে হাত মেলালো।পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে জায়গা খালি করতে।ফারাজ সেই পাশে বসলো এবার।
শাহেদ ফারাজের সাথ স্বাভাবিক ভাবেই কথা শুরু করে।
শাহেদের বড় বোন শায়লা তখন উঠে এসে পূর্ণতাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছিলেন।
পূর্ণতা বিষয়টা বুঝতে পারলোনা কেবল হাসিমুখে চেয়ে রইলো ওনার মুখের দিকে।

‘তোমার বয়স কত?’

‘২৩’

‘সত্যি?’

‘হুম।কয়েক মাস আগে ২৩হইছে।’

‘ভালই তো বয়স হইছে।বিয়ে করোনা কেন?’

‘আমি পড়ালেখা করে ভাল পোস্টের চাকরি করতে চাই।এখন বিয়েতে ইচ্ছুক না’

‘তার মানে তুমি বিয়ে করতে চাওনা এখন?’

‘হুম,চাইনা’

শায়লা খুশি হয়ে শাহেদের সামনে এসে বললো পূর্ণতা বিয়ে করতে চায়না।শাহেদ বেশ বুঝতে পারছে আপা কিছু একটা কান্ড ঘটিয়েছেন।তাই সে আপার কথার তোয়াক্কা না করে ফারাজকে আপার সাথে কথা বলতে বলে নিজেই পূর্ণতার কাছে গেলো কথা বলার জন্য।
———–
নীলা কিছুতেই মানছেনা সারথি আনাফের স্ত্রী। এক প্রকার তামাশা শুরু করে দিয়েছে সে।
আনাফ বিরক্ত হয়ে সারথিকে নিয়ে চলে যেতে চাইলো তাও পারলোনা।নীলা ওদের দুজনকে নড়তেই দিচ্ছেনা।বকবক করেই যাচ্ছে।
শেষে বাধ্য হয়ে আনাফ বললো,’দেখুন আপু।আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।দয়া করে নব বিবাহিত দম্পতিকে বিরক্ত করে গুনাহর ভাগিদার হইয়েন না’

নীলা রেগে গিয়ে বললো,’আমি জানি আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।আমি কিছুতেই মেনে নেবোনা আপনি বিবাহিত ‘

সারথি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আনাফ আর নীলা তর্কাতর্কি করেই চলেছে।শেষে আবার আনাফ সারথির হাত ধরে নীলার সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলো।ওকে গাড়ীতে বসিয়ে আনাফ নিজে ড্রাইভিং সিটে বসতেই নীলা এসে জানালার কাঁচে হাত দিয়ে বললো,’আমাকে আনব্লক করবেন তা নাহলে আরও উনিশটা আইডি খুলবো।আমাকে তো চিনেননা’

আনাফ নীলার কথা এড়িয়ে কাঁচ উঠিয়ে গাড়ী স্টার্ট করে চলে এসেছে ওখান থেকে।এবার সারথি বললো,’মেয়েটি আপনাকে খুব ভালবাসে’

‘এটাকে ভালবাসা বলেনা,পাগলামি বলে’

‘পাগলামি মানেই ভালবাসা।যে ভালবাসায় পাগলামি থাকে সেটাই তো টিকে থাকে’

‘এক পাগলামি হয় মানুষটাকে নিজের করে না পেলেও একা একা পাগলামি করা।আর আরেক পাগলামি হলো মানুষটাকে পায়নি বলে সারাদিন জ্বালানো। নীলা দ্বিতীয়টা করছে।সেটাকে ভালবাসার জন্য পাগলামি বলেনা।আমার ভাষায় ছেঁসড়ামি বলে।কলেজ লাইফ থেকে এমন ১০০টা নীলাকে আমি পেছনে ফেলে এসেছি।সবাই চায় ডাক্তারের বউ হতে,সবাই চায় বড়লোক একটা ছেলে তার হাসবেন্ড হোক।আর আমরা যারা এগুলার অধিকারী তারা চাই একটা শান্তিযুক্ত
স্থানে।যে মানুষটার কাছে শান্তি পাবো সেই মানুষটাকেই দিনশেষে আমরা বিয়ে করি।বুঝলে?’
———
ডিভোর্স পেপারে সজীবের সই করা বাকি ছিল।সে সময় হাতে নিয়ে সইটাও করে ফেলেছে।লেভেন এতদিন যেটার অপেক্ষা করছিল সেটা মূহুর্তেই সত্যি হয়ে যাবে সে কখনওই ভাবেনি।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাবাকে রাজি করিয়ে সজীবের সাথে ওর বাসায় এসেছে লেভেন।বাবাকে রাজি করাতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।লেভেন অসুস্থ বলে তিনি অল্পতেই রাজি হয়ে গেছিলেন।
সজীব লেভেনকে বাসায় এনে ওর সেবাতে কোনো ত্রুটি রাখছিল না।ওকে বিছানায় বসিয়ে নিজেই সব করছিল।খাবার এনে বিছানায় বসে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সে লেভেনকে।লেভেন মুগ্ধ চোখে সজীবকে দেখতে দেখতে বললো,’জানো আমি ধরে নিয়েছিলাম তুমি হয়ত সারথিকে ছাড়তে পারবেনা,ওকে ভালবেসে ফেলেছো’

‘আর কি ভেবেছিলে?’

‘ভেবেছি তোমায় ভালবাসা হয়ত ভুল ছিল।কত বোকা ছিলাম!আসলে বোকাও না।আমরা যারা কাউকে অনেক করে চাই,অনেক বেশি ভালবাসি, তার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা।আমারও প্রতিবার এমনই হতো।বারবার মনে হতো তোমায় আমি হারিয়ে ফেলবো।কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই।আমি তোমায় নিজের করে পেয়ে যাব খুব শীঘ্রই।’
———-
নানুরবাড়িতে সারথিকে নিয়ে এসেছে আনাফ।নানু তখন নামাজ পড়ছিলেন।
আনাফ সারথিকে সোফায় বসিয়ে নিজে নানুকে দেখতে গেলো।নানু নামাজ শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই আনাফ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সারপ্রাইজ দিয়েছে।
নানু তো খুশিতে আটখানা হয়ে গেছেন।চিৎকার করে সবাইকে ডাকলেন আসার জন্য।
নানুর বাসায় আনাফের মামা -মামি,এক খালা আর মামাতো দুইটা বোন থাকে।
নানুর ডাকাডাকিতে সবাই ছুটে এলো।
আসার পথে সারথিকে সোফায় দেখে অর্ধেকজন ওখানেই থেমে গেছেন বাকিরা নানুর রুমে এসে হাজির।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here