একদিন নববর্ষা -১৬,১৭
অদ্রিজা আশয়ারী
১৬
-“বর্ষা…”
আমার কথা থেমে গেল। ঝোপের আড়াল থেকে অস্থির পদক্ষেপে বেরিয়ে এল বর্ষার মা। ভীত গলায় বলল,
-“কি হইছে বর্ষনের বাপ? এত চেচামেচি কিসের?”
-“আরে সাহেব আইছে বষ্যার খোঁজ করতে। কিন্তু মেয়ার বিয়া হয়া গেসে এই কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতাসে না। তুমিই কও আমার কথা মিছা কিনা?”
আমি বর্ষার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম উত্তরের অপেক্ষায়। বর্ষার মা কিছু বলতে সংকোচ করছে। ইতস্তত করে মাথা নুইয়ে বলল,
-“উনি সত্যিই কইছেন। গত জুম্মা বার বর্ষার বিয়া পড়ানি হইছে। গ্রামের লোকজন সাক্ষি। ”
রশু হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এদের দিকে। আমি পরোয়াহীন। এদের কোনো কথাই বিশ্বাস করি না। তবে এই ধরনের কথা মিথ্যা হলেও আমার জন্য সহ্য করা কঠিন মনে হল। সবাইকে অগ্রাহ্য করে চিৎকার করে বর্ষাকে ডেকে প্রতিটি ঘরের দরজা ঠেলে ওকে খুঁজলাম। নাহ। বর্ষা কোথাও নেই।
তবে নিশ্চিত ভাবে অন্যকোথাও ওকে লুকিয়ে রেখেছে বসির শেখ। শেষ ঘরটা থেকে বেরোনোর আগে একটা জিনিস আমার চোখে পড়ল। যেটার অস্তিত্ব এখানে থাকা অসম্ভব ছিল। অন্তত জিনিসটা যার বলে আমি জানি। তার কাছ থেকে চুরি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এটা এদের পাওয়ার কথা নয়। তবে এবাড়ির কেউ চুরি করতে পারে এই কথা আমি এখনো বিশ্বাস করি না। অসংখ্য জটিল এবং খুব বাজে কিছু চিন্তা মাথায় জেঁকে বসল। আমি টেবিলে পড়ে থাকা সেই বিশেষ ডায়েরি টা তুলে নিলাম। খুব দামি, কারুকার্য শোভিত তার মলাট। মাঝখানটা একটা বিশেষ উপায়ে তালাবদ্ধ। ডায়েরি টার ওপর গোটা গোটা অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা রাহিল সোবহান। শেষবার বাংলোয় গিয়ে ডায়েরি টা রাহিলের বেডসাইড টেবিলে দেখেছিলাম আমি।
ডায়েরির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কেন যেন আমার মুহুর্তের জন্য মনে হল বসির শেখ মিথ্যে বলছে না। পরমুহূর্তেই পুরো গায়ে একটা শিহরণ অনুভব করলাম। ধারণা টা সত্যি হলে আমি আদৌ কিভাবে বাচবো জানা নেই। অথচ চিন্তাটা মস্তিষ্ক থেকে হটানো গেল না। মনের এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাচতে ঘর ছেড়ে ধাঁ করে বেরিয়ে এলাম। নিজের মনের সম্পুর্ন বিপরীতে গিয়ে সহসা বসির শেখকে সরোষে প্রশ্ন করলাম।
-“আপনি বলছেন বর্ষার বিয়ে হয়েছে। কার সাথে বিয়ে হয়েছে বলুন?”
আমার কথার ধরন আর মুখের অবস্থায় বসির শেখ বোধহয় কিছুটা ভরকে গেল। সে উত্তর দিতে দ্বিধা করতে লাগল। প্রবল ক্রোধে অন্ধ হয়ে বসির শেখের কলার চে/পে ধরলাম। চিৎকার করে বললাম,
-“বলুন কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে? বলুন…”
বর্ষার মা আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে এল। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-” ওই পাড়ার বাংলোয় যে সাহেব আসছিল তার সঙ্গেই বষ্যার বিয়া হইছে। দোহাই লাগে আপনি ওনারে ছাইরা দেন।”
রশুর উত্তেজিত স্বরে বলল,
-“কোন সাহেব? ”
-” রাহিল সোবহান। ”
উত্তর শুনে এবার আমি সত্যিই বসির শেখকে ছেড়ে দিলাম। পাথরের দাঁড়িয়ে রইলাম উঠোনের মাঝখানে। এত আতঙ্কের মাঝেও বসির শেখের মুখে কোথায় যেন একটা ক্ষীণ হাসির আভাস দেখতে পাচ্ছি। সেই হাসি শেষ বেলায় আমাকে পরাজিত করতে পারার হাসি। রশু আমার কাছে এগিয়ে এল।
-“নবু দা…”
রশুর কথা মাঝপথে থামিয়ে শীতল স্বরে বসির শেখকে বললাম
-“আপনি মিথ্যে বলছেন। বর্ষা কখনো এমন করতে পারে না। ”
বসির শেখের মুখের অস্পষ্ট হাসির রেখা এবার আরও স্পষ্ট হলো।
-” মেয়ে-জামাই এহনো গ্রাম ছাইড়া যায় নাই। আমার কথায় সন্দেহ থাকলে পুর্ব পাড়ার বাংলোয় গিয়া দেইখা আসতে পারেন।”
সামনের লোকটির দিকে শ্যেনদৃষ্টি হেনে কয়েক মুহূর্ত পর নিজেকেই যেন প্রবোধ দিলাম আমি। যে রাহিলের বাংলোয় যাওয়া যাক! ওখানে গেলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। বসির শেখ যে মিথ্যে বলছে তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না।
***
তুমি তাহার সনে বেধো ঘর
যাহারে পেলে আমি হইব পর….
আমার কতখানি জুড়ে বিস্তৃত বর্ষার ব্যাপ্তি, হয়তো বর্ষা কখনো সেটা জানবে না। সে হয়তো শুধু আমাকে ভালোবেসেছে। কিন্তু আমি ভালোবাসার চেয়েও বেশি বর্ষাতে অভস্ত্য হয়েছি। জীবনের অনেকখানি জুড়ে বর্ষাকে স্থান দিয়েছি।
বর্ষা আজ থেকে অন্যের, কেউ বললেই একথা আমি বিশ্বাস করতে পারি না। বর্ষা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে এই বিশ্বাস নিজের কাছে আমার নিজের পরাজয়। আমি শুধু বর্ষাকেই চাই। শতবার, বহুবার। তবুও বুকে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি টের পাচ্ছি। বুকের কোন এক ফোকড় থেকে চুইয়ে পড়ছে বিষাক্ত ব্যাথা।
যখন বাংলোয় গেলাম। তখন সন্ধ্যা লগ্ন। দারোয়ান আজও গেটে আমাকে আটকালো। চিৎকার করে রাহিল কে ডাকলাম আমি। বর্ষার নাম ধরে ডাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ আমি শতভাগ নিশ্চিত সে এখানে নেই। রাহিলের সাথে আমার সম্পর্ক যেমনই হোক। এই ব্যাপারে সে নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবে।
রাহিল আসছে না। আমি ফের ডাকলাম। মাথায় একবারও এই ভাবনাটা এলো না। এই অসময়ে রাহিল গরানবনে কি করছে! সে তো আর লেখক নয় যে দিনের পর দিন এই অরণ্য জীবনে পড়ে থেকে সাহিত্যসাধনা করবে।
রাহিলের আগমন হলো আরও অনেকক্ষণ পর। কৌতুহলের ছায়া খেললেও তার মুখে একটা হাসির আভা স্পষ্ট। গম্ভীরতায় ঢাকা পড়েনি সেটা।
-” হঠাৎ নাব্য এখানে! আগের বারের মতো গলা চে/পে ধরতে এসেছ নাকি? কিন্তু এবার আমার অপরাধ?” বাংলো থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে ঠোঁটের কোণে তির্যক হেসে রাহিল জিজ্ঞেস করল।
জল শূন্য মুখে তাকিয়ে রইলাম মুহুর্তক্ষণ।
শুষ্ক গলায় বললাম,
-” এই অসময়ে তুমি এখানে..? ”
রাহিল হো হো করে হাসল।
-” একই প্রশ্ন তো আমিও তোমাকে করতে পারি নাব্য! এই অসময়ে তুমি এখানে কি করছ? শুনেছিলাম বাবার মৃত্যুর খবরে নাকি এই জায়গা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলে। তারপরই পারিবারিক ব্যাবসা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছ। তা এসবের মাঝে হঠাৎ আবার এখানে ফেরার মন হলো কি করে ! ”
উত্তর না দিয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম।
রাহিল নিজ থেকেই কথা বলল,
-“যাকগে। তুমি জানতে চেয়েছ। আমি কেন এসেছি সেটাই আগে বলি তাহলে এবার।
একটা কথা কি জানো। পুরুষ মানুষ বেশিদিন ঘর শূন্য রেখে চলতে পারে না। নিজে ঘরে থাকি আর না থাকি। অন্তত ঘরে কেউ আছে এটা ভেবে মনে স্বস্তি তো পাওয়া যায়। তুমি বোধহয় জানো কয়েকমাস আগেই নওরিনের সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে আমার। তারপর থেকে মা তাড়া দিচ্ছিলেন আবার বিয়ে করার জন্য।
আমি অবশ্য ভেবেছিলাম আর ওই পথে যাবো না। তবে এখানে এসে একজন কে দেখে ভাবনা চিন্তার মোড় হুট করেই ঘুরে গেল। ওদিকে মা ও ভয় দেখাচ্ছিলেন। তিনি মরে গেলে আমার ছেলেমেয়ে দুটোর কি হবে, ওদের দেখাশোনা কে করবে।
এইরে! কথা বড় বেশি বিস্তৃত করে ফেলছি বোধহয়। আচ্ছা সংক্ষেপে বলি। মোটকথা হলো আমি আবার বিয়ে করেছি। সেজন্যই এখানে ফের আসা। মেয়েটি কে জানার জন্য কৌতুহল হচ্ছে নিশ্চয়ই ? দাঁড়াও ডাকছি। দেখে অবাক হবে নিশ্চিত। তবে আমার রুচির প্রশংসা না করে পারবে না। ”
-“নোরা…”
নামটা শুনে আমি স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললাম। বুক থেকে ভীষণ ভারি একটা বোঝা নেমে গেল। মুহুর্তের জন্য আমি হাসলাম। রশু আমার কাঁধে হাত রাখল। আমার বর্ষা আমায় ঠকায়নি। সে যেখানেই থাকুক। এবার আমি ওকে ঠিক খুঁজে বের করে নেব।
চোখগুলো তখন সবে ক্লান্তি ভরা দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়েছে। বাংলোর সিড়ি কোঠায়। কিছুদূর হেটে গিয়ে রাহিল সেখানে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রীর অপেক্ষা করছে।
আমার ক্লান্ত চোখদয় হঠাৎই থমকে গেল। আমি টের পেলাম আমার চারপাশে বাতাস থেমে প্রকৃতি ভীষণ গুমোট হয়ে উঠেছে। চপল পায়ে সিড়ি ভেঙে নেমে আসা মেয়েটিকে দেখে। সে অবশ্যি এখনো আমাদের দেখেনি। মুখে একরাশ স্বচ্ছ নীল হাসি নিয়ে চঞ্চল পায়ে এসে দাঁড়িয়েছে রাহিলের গা ঘেঁষে। রাহিল তার হাত ধরে আমাদের দিকে অগ্রসর হলো।
আমি টলতে টলতে রশুর শার্টের আস্তিন খাম/চে ধরলাম। চোখে জ্বালার জন্য সামনে স্পষ্ট করে তাকানো দায় হলো।
তবুও দেখলাম মেয়েটি রাহিলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ে এত বেশি ব্যস্ত যে আমাদের অস্তিত্ব তখনো নজর কাড়েনি ওর। আমাদের মুখোমুখি এসে রাহিল ওকে নিয়ে দাঁড়াতেই সে প্রথমবারের মতো তাকাল আমার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ সারশূন্য, কাগজের মতো সাদা হয়ে গেল। সে রাহিলের জড়িয়ে রাখা বাহু ছেড়ে দিল। তার বা পাশের মানুষটির মুখে তখন বিশ্ব জয়ের হাসি। সেই বিশ্ব জয়ের হাসি নিয়ে রাহিল বলল,
-“ওর আগের নামটায় বড় বেশি গেঁয়ো গেঁয়ো গন্ধ ছিল। ” বর্ষা ”
তাই আমি ওটা বলদে নোরা নাম রেখেছি। কি অবাক হওনি বর্ষাকে, সরি নোরাকে এখানে দেখে? ”
ওভাবে কতক্ষণ আমি থমকে দাঁড়িয়েছিলাম খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরতেই উদভ্রান্তের মতো হাসলাম। একদৃষ্টে বর্ষার দিকে চেয়ে বললাম,
-“ভীষণ!”
তারপর সবকিছু অগ্রাহ্য করে ঘুরে হাটতে শুরু করলাম অজানা গন্তব্যে। কারণ এরপর আমার বলার মতো আর কিছু ছিলনা।
______________________
-“গাড়ি থামাও। ”
গাড়িটা এয়ারপোর্ট রোড ধরে সবে কিছুদূর এগিয়েছে। আমার এহেন কথায় রশু আর ক্যাব ড্রাইভার দুজনেই অবাক হয়ে তাকাল। দু’হাতের ভাজে আড়াল করা মুখ না উচিয়ে ফের বললাম
-“গাড়িটা থামাও।”
মধ্যরাত্রির জনশূন্য রাস্তার পাশে গাড়িটা থামল। দরজা ঠেলে বেরিয়ে রশুকে বললাম,
-“তুমি বাড়ি ফিরে যাও।”
রশু কোনো প্রতিবাদ করল না। নিশব্দে আমার কথা মেনে নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
রাস্তার মাঝখানে, বিস্তৃত খোলা আকাশ আর সহস্র নক্ষত্রের নিচে আমি একা হেটে চলেছি। অনুভূতিশূন্য। গন্তব্যহীন।
হাটতে হাটতে একসময় পা দুটো ক্লান্ত হয়ে এল।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে অঝোরে। আমি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পরলাম। বৃষ্টির প্রথম ফোটা মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একফোটা উষ্ণ বিন্দুও গাল গড়িয়ে পড়ল। আমার চোখের প্রথম বিচ্ছেদ অশ্রু বিন্দু!
আমি কাঁদছি। একটি মেয়েকে সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবেসে, আজ তার কাছে প্রতারিত হয়ে নাব্য ইমতিহান কাঁদছে। যাকে ভালোবেসে সেচ্ছায় দুচোখে অন্ধত্বের কালো কাপড় বেঁধেছিলাম। আর সব ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম অনায়াসে। সেই ভালোবাসা আজ আমার বুকেই বিধিয়েছে বিষাক্ত তীর।
মাঝরাস্তায় হাটু গেড়ে বসে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলাম আমি। বর্ষার ভালোবাসায় নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে কখন যে এতটা দুর্বল হয়ে পরেছিলাম জানি না। বড়বেলায় এসে বাবাকে হারানোর পর আজ দ্বিতীয় বারের মতো একটা মেয়ের জন্য অসহায়ের মতো রাস্তায় বসে কাঁদছি। ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত আর্ত হৃদয় বারবার চিৎকার করে বলছে, ভালোবাসা ভালো নয়, ভালোবাসারা কখনো ভালো হয় না। ভালোবাসারা শুধু জানে সুখ কেড়ে নিতে।
বৃষ্টি আমার গায়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল। ফুটপাত ঘেঁষে, দু’পা ভাজ করে একসময় শুয়ে পড়লাম আমি।
গায়ে শীতল বৃষ্টির তীক্ষ্ণ ফোটা তখনো অনবরত পড়ছিল। তার মধ্যেও ঝিমুনি এসেছিল। হঠাৎ পিঠে একটা প্রচন্ড লা/থি পড়ল। ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম। মাথা তুলে তাকাতেই আরও একটা লা/থি এসে পড়ল ঘাড় বরাবর। এবার মাথাটা তুলে উঠে দাড়ানোই কঠিন হলো। কোনো মতে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালাম ল্যাম্পপোস্টের পিলার ধরে। জীবনের এত বড় একটা ঝড়ের সম্মুখীন হওয়ার পর আমার দেহে কিংবা মনে আর একবিন্দু শক্তি তখন অবশিষ্ট নেই। যা নিয়ে আমি বর্তমানের এই প্রতিরোধ করতে পারি।
সামনে তিন যুবক দাঁড়িয়ে। বয়স বিশ-বাইশের মধ্যে। ভালো করে খেয়াল করতেই মনে হল তিনজনই অল্পবিস্তর নেশা গ্রস্ত। তিনজনই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল আমাকে। এবার একজন সামনে এগিয়ে এল।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হঠাৎ পকেট থেকে একটা যন্ত্র বের করল। সেটায় এক টিপ দিতেই সাই করে বেরিয়ে এল একটা ছু/রি। ছু/রি ঘোরাতে ঘোরাতে ফিসফিস স্বরে ছেলেটা বলল,
–“দেইখা তো বড়লোক বাপের পোলাই মনে হয়। আরামের বিছানা রাইখা এই ফুটপাতে ঘুমাস কে? সাথে কি আছে সব বাইর কর।”
ছেলেটার কথার সঙ্গে ভুরভুর করে বেরিয়ে এল বিশ্রী মাদকের গন্ধ। আমি কিছু না বলে ক্লান্ত চোখ চেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার মস্তিষ্ক তখনো সারশূন্য।
পেছন ফিরে বাকি দুজন কে সে এবার বলল,
–“কিরে, এই মাল তো দেহি কথা কয় না। বেশি চালাক মনে হইতাসে। তোরা এদিকে আয়। হাত লাগা। ” বলেই কিছু বুঝে উঠবার আগে ছেলেটা আচমকা প্রচন্ড এক ধা/ ক্কায় মাটিতে ফেলে দিল আমাকে।
উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই বাকি দুজন তেড়ে এল। একের পর এক বৃষ্টির মতো লা/থি এসে পড়তে লাগল আমার গায়ে।
ওরা কি আমাকে নিজেদের জন্য হুমকি ভেবে এভাবে দুর্বল করতে চাইছে? অথচ আমি তো আগে থেকেই অর্ধমৃত! এই কয়েকটা মা/রে আমার আর বিশেষ কি ক্ষতি হবে! কিন্তু নেশাগ্রস্তরা যুক্তি নিয়ে চলে না। ওরা আমাকে মে/রেই চলল। যতক্ষণ ক্লান্ত না হয়ে পড়ল।
আকাশ ভেঙে তখনো ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আমার শরীরে একের পর এক লা/থি পরেই চলেছে। আমি মনে মনে বললাম,
–“এই আঘাত কখনোই তোমার দেয়া আঘাতের চেয়ে বেশি নয় বর্ষা। ওদের আমাকে অকারণে আঘাত করছে, আর তুমি আমাকে ভালোবাসার প্রতিদানে আঘাতে জর্জরিত করেছ। ”
একসময় ওরা থামল। একজন আমার হাতঘড়ি, ফোন আর ওয়ালেট কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার তাড়া দিল।
সেই প্রথম ছেলেটা হঠাৎ বলল,
–“দাঁড়া। আগেই যাইস না। শালারে সোজা কইরা ধর তো। ”
কথা মতো দুজন আমাকে চে/পে ধরতেই ছেলেটা নিচু হয়ে বসে আমার পেটের বা পাশে ছু/রিটা বসিয়ে একটা মোচড় দিল। তারপর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেল ওরা। রাস্তায় পাশে আস্তাকুঁড়ের আবর্জনার মতো আমি পরে রইলাম। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে কাটা জায়গাটা থেকে। বৃষ্টির জলে আমার গা গড়িয়ে পড়া রক্তের স্রোত মিশে যাচ্ছে। কালঘুম ভর করেছে যেন দুচোখে। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না। আর এই ঘুম ভাঙবে কিনা জানি না। শেষ বার ভালো করে চোখ মেলে তাকাতে চাইলাম। তার আগেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে এল।
চলবে……..
একদিন নববর্ষা -১৭
অদ্রিজা আশয়ারী
____________
চেতনা বোধ জাগ্রত হবার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম হসপিটালের সাদা রঙ করা একটি বদ্ধ কেবিনে। সেটাই ছিল তখন সবচেয়ে স্বাভাবিক।
জানলাম গত পাঁচদিন ধরে আমি এখানে আছি। আরও কিছুদিন থাকতে হবে। জঞ্জালে ভরা স্মৃতিরা পরিষ্কার হতেই হৃদপ্রকষ্ঠে দহন জ্বালা চনমনিয়ে উঠল। নিরুপণ করলাম একশ প্রজাপতি একসঙ্গে ডানা মেলে উড়ে গিয়ে বুকের খাঁচাটাকে শূন্য করে দিয়েছে। সেখানে আর কোনো আলো নেই, মন ভালো করা স্নিগ্ধ, নির্মল বাতাস নেই। আছে শুধু অঞ্জন কালো হাহাকার! শরীরের ক্ষত সারাতে তো ডাক্তাররা উঠে পড়ে লেগেছে। মনের ক্ষত সারাবার তাড়া নেই কারো!
নার্স বলল বাইরে আম্মা বসে আছেন। আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। আমার হঠাৎ ভীষণ লজ্জা করল। কিভাবে এতসব কিছুর পর আম্মার মুখ দর্শন করবো আমি! তিনি তো মা। মায়েরা যে না বলতেই বুঝে যায় সব কথা। অথচ এই অসময়ে কেউ আমাকে সবটা পড়ে কিংবা বুঝে ফেলুক। সে আমি চাইছিনা কিছুতেই। একজন ভাঙ্গাচোরা, পলকা মানুষ কে পুরোটা বুঝে নিয়ে পৃথিবীর কি লাভ! এর চেয়ে আমার দুঃখ গুলো আমার একার গন্ডিতে বাঁধা থাকুক। কেউ না জানুক একটি মেয়ের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে নাব্য কতটা ক্ষয়েছে, হৃদয়ের গহনে কতটা মর্মঘাতে জর্জরিত হয়েছে।
আমাকে মাতৃস্নেহ দিয়ে প্রণয়াবেষ্টন থেকে বের করতে চেয়েছিলেন আম্মা। তাতে ফল হলো উলটো। প্রণয়ের জালে আরও বেশি জড়িয়ে পড়লাম আমি। আবেশে আচ্ছন্ন, অন্ধ মন বোঝেনি কিন্তু আম্মা পেয়েছিলেন আমাকে হারানোর ভয়। বাবাকে হারিয়ে আম্মার ভঙ্গুর মনে বেদনার সাদাকালো দেয়ালে রঙ্গিন প্রলেপ লাগিয়েছিল আমার ঔদ্ধত্যতা। আমি বুঝিনি, শুধু ভালোবেসে ক্ষান্ত হয়েছিলাম।
আম্মা ভেতরে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। মাথা উচু করে আম্মার চোখের দিকে তাকাতেও আমার সংকোচ হচ্ছিল। সহসা মাথায় প্রশান্ত হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আম্মা স্নেহাদ্র গলায় বললেন,
-“আব্বা, অনেক কষ্ট হয়েছে তোর। তাই না? তোকে দেখলেই আমি বুঝতে পারি। তোর শরীরের সব কষ্টগুলো যদি আমি নিজে নিয়ে নিতে পারতাম…।
ছোট বেলায় আমি যখনি ব্যাথা পেতাম বাবার বলা একটা কথা মনে করে আমার সব কষ্ট ফিকে হয়ে যেত।
আমরা এমন এক রবের বান্দা, যিনি কিনা পায়ে একটা কাঁটা ফুটলেও, তার বিনিময়ে গুনাহ মাফ করে দেন।
ভাবতেই ভালো লাগত। একটু কষ্টের বিনিময়ে কতশত পাপের বোঝা থেকে মুক্তি মেলে।
তোর এই কষ্টের বিনিময়েও আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দেবেন। দেখিস আব্বা।”
কথাটা শুনে আমি নির্মল স্বচ্ছ হাসি হাসলাম। আম্মা আমার হাত ধরলেন। বহুদিন পর বড় নির্ভার হয়ে আমিও আম্মার হাত ধরে বসে রইলাম অনেকক্ষণ। মনের আকাশ জুড়ে ক্রমশ তুলোর মতো সাদা মেঘের আনাগোনা শুরু হলো। ঢেকে দিতে লাগল গতবাঁধা যাতনার ধূসর রঙের মেঘেদের।
__________________
হসপিটালে তখন আমার দ্বাদশতম দিন। ডক্টর জানিয়েছে কাল সকালেই ছাড়পত্র দেয়া হবে। সেই সঙ্গে বেশকিছু নির্দেশনা আর হুমকিও দিয়েছে। পেটের কাটা স্থানে যখন তখন প্রচন্ড ব্যাথা ওঠে, তাছাড়া পায়ে দু-তিন স্থানে ফ্র্যাকচার। ক্রাচ নিয়ে হাটতে হবে বেশ কিছু দিন।
বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছি। বাইরে আকাশে গোলাপি রঙ ধরেছে। জানালায় তাকালে দেখা যায় সন্ধ্যার ঘরমুখী পাখিদের ক্লান্ত পাখা ঝাপটানি। এই সময়ে বড় বেশি বিষন্ন লাগে চারপাশ। বিষাদ ছবি গুলো একে একে নির্জনে হানা দেয় মন কুটিরে। কি চাইলাম আর কি পেলাম! ভালোবাসাটা কি তবে এক তরফাই ছিল এতকাল? কত বোকা ছিলাম আমি! কখনো বুঝিনি সে আমাকে ভালোবাসেনি।
-“নবুদা আসব?” বাইরে থেকে রশু বলে উঠল।
-“এসো।” একটা প্রলম্বিত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললাম।
রশু এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে চুপচাপ বসে রইল। নিজের মাঝে এত ব্যাস্ত ছিলাম যে ওর প্রতি খেয়ালই করি নি। সম্বিত ফিরতেই বললাম,
-“কি রশু, সব ঠিক তো? বাড়ি থেকেই সোজা এসেছ মনে হচ্ছে। আম্মা, নিতিন, দাদি ভালো আছে তো সবাই? ”
-“হ্যাঁ, ওখান থেকেই ফিরছি। ভালো আছে সবাই।”
-“কি হয়েছে রশু? কিছু বলবে বলে মনে হচ্ছে। ”
রশু দ্বিধা করল।
-” একটা ব্যাপার বলার ছিল। তবে সেটা আপনার কান পর্যন্ত না পৌছোলেই বোধহয় ভালো হত। কিন্তু ভেবে দেখলাম জানা থাকলে কিছু উপকারও আছে। মিথ্যে মানুষের প্রতি সত্যি মায়া নতুন করে আর কখনো তৈরি হবে না কখনো। ”
আমার ভ্রু কুচকে গেল।
-” কি বলতে চাইছ?”
রশু মাথা নুইয়ে ফেলল, একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
-“নবুদা, মেয়েটির নাম আর কখনো মুখে নেবো না। শপথ করেছি আমি। ”
একটু থেমে বলল,
-“আপনি যাকে ভালোবাসতেন, সে কোনো কালেই আপনাকে ভালোবাসেনি। ওরা টাকার কাঙাল। প্রায় চারমাস পেরিয়েছিল। আপনি ফিরছিলেন না। ওরা ভেবেছিল আর কখনো ফিরবেন না। তখনি রাহিল সোবহান সেখানে যায়। বসির শেখের কাছে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বসির শেখ তাকেও আপনার মতো নাকচ করে দিলে বিশাল অঙ্কের টাকা অফার করে রাহিল সোবহান। এরপর বাবা মেয়ে কারো আপত্তি আর টেকেনি। বিয়ের আগে পাঁচ লক্ষ এবং বিয়ের দিন আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেয় ওদের রাহিল সোবহান। টাকার বিনিময়ে মেয়েটি ভালোবাসার মানুষ বদলে ফেলতে রাজি হয়ে যায় অনায়াসে। ”
ঘৃণার একটা উতকট ধাক্কা আমার গলায় এসে আটকে রইল। কাকে ঘৃণা করবো আমি? জানি না! ভালোবাসা শূন্য করে দিয়ে এত সহজেই কি সেই স্থানে ঘৃণার জন্ম দেয়া যায়?
একটা কথা সহসা মনে হল। বর্ষা দশ লক্ষ টাকা চাইলে আমি কি দিতে পারতাম না! সে ক্ষমতা কি আমার ছিলনা?
তবে কেন শুধু টাকার জন্য ও আমাকে এত বড় একটা সাজা দিল! টাকার বিনিময়ে ভালোবাসা কিনে নেয়া যায় কখনো জানা ছিলনা যে আমার। জানলে কবেই দেনাপাওনা চুকিয়ে আমার ভালোবাসাকে সযত্নে গচ্ছিত রাখতাম কাঁচের রূপালী কৌটোয়।
***
বাড়ি ফেরার পর প্রথম দিন নিজের ঘরে যাবার সুযোগ হলো না। সে ঘর ওপর তালায়। হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরার ধকল সইতেই বেগ পেতে হচ্ছিল। আম্মা নিজের ঘরে আমার জন্য বিছানা পাতলেন। নিজে আশ্রয় নিলেন নিতিনের ঘরে। আর নিতিন রইল আমার সারাবেলার ছায়াসঙ্গি হয়ে। নিতিনের পাখির মতো মুখটায় আজকাল সারাক্ষণ বিষন্নতা খেলে। আমাকে সে ভীষণ ভালোবাসে, আমার দুঃখগুলো কেও..। হসপিটালে জ্ঞান ফেরার পর দেখতে এসে নিতিন এত কেঁদেছিল যে নার্স একটা সময় বাধ্য হয়েছিল ওকে বের করে নিয়ে যেতে। আমার প্রতি নিতিনের বিশেষ একটা অনুভূতি আছে। প্রতিটি মায়ের, সন্তানের প্রতি যেমন থাকে।
সেদিন নিতিনের অশ্রুস্নাত মুখ দেখে বুঝেছিলাম নিতিন আমার কষ্টটা পুরোপুরি আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছে।
সুখের কথা হলো শতভাগ পারেনি। কেউই হয়তো পারে না। অন্যের দুঃখকে সম্পুর্ন নিজের ভেবে কষ্ট পেতে। কারণ মানুষ মাত্রই একটি একক সত্তা।
পনেরো দিন বেড রেস্টে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ডক্টর। সেই সঙ্গে প্রতিদিন কিছুটা সময় হাটার অভ্যেস করতে বলেছে।
এন্টিবায়োটিকের অত্যাচ্যারে নিষ্পেষিত, ক্লান্তিকর একটি সকালের শেষে হাটার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেরোলাম। এখনো ওপরের তলায় থাকার পারমিশন মেলেনি আম্মার কাছ থকে। ক্রাচে ভর দিয়ে ধীর পায়ে হাটতে হাটতে একসময় দোতলায় নিজের ঘরের সামনে চলে এলাম। কেউ দেখেনি আমাকে। আম্মা আমার জন্য রান্নায় ব্যাস্ত। নিতিন নিজের ঘরে পড়ছে। আর দাদি ঘর ছেড়ে বেরোয় নি এখনো। ঘরের দোরে এসে দরজা ঢেলে স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিয়ৎক্ষন। পুরো ঘর জুড়ে বর্ষার স্মৃতি চিহ্ন ভরপুর। বর্ষার প্রিয় রঙে প্রতিটি আসবাবের বসন নির্বাচন করা হয়েছিল, দেয়ালে বর্ষার ছবি, ওয়্যার ড্রোবের ওপর বর্ষাকে লেখা আমার এক তরফা চিঠি গুলো…….। বুকের ভেতর আগ্নেয়গিরির লাভার হলকা ছুড়ল যেন কেউ। ক্রাচে ভর দিয়ে খোড়া পায়ে এগিয়ে দেয়াল থেকে ছবিটা নামালাম। ঝুম বৃষ্টির দৃশ্য শোভিত বেডশিট টেনে খুলে ছুড়ে ফেললাম মেঝেতে। বর্ষার ছবি, চিঠি সব একসাথে করে মেঝেতে ফেলার পর ক্রোধে অন্ধ হয়ে নিষ্ঠুর হাতে বারুদ জ্বাললাম। ছুড়ে ফেললাম তার ওপর। আরও একটা জিনিসের কথা সহসা মনে পড়ল। বর্ষাকে নিয়ে কবিতা লিখে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরেছিলাম। আলমিরায় হাতড়ে কাগজগুলো তুলে নিলাম। ফেললাম জ্বলন্ত আগুনের ওপর। আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে গনগনে আগুনের শিখা বেরিয়ে আসতে চাইছে।
আমার জীবনের রঙিন স্বপ্নেরা, যাদের কাগজের খাতা থেকে বেরিয়ে একদিন প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলে আকাশে ওড়ার কথা ছিল। তারা আজ ভীষণ অবহেলায় ঘৃণার ঘৃতানলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। যাক!
আমি লিখব না আর কাব্য, কোনো স্মৃতির ছেড়া পাতায়…..।
নিজের ঘরে এভাবে আগুন ধরানোর ব্যাপার টা বাড়ির অন্য লোকেদের কাছে কিভাবে দৃশ্যত হবে তা নিয়ে আমি মোটেই ভাবিনি। প্রবল আক্রোশ আর প্রতিশোধ স্পৃহার একরকম ঘোরে আবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলাম গনগনে অগ্নিশিখার দিকে। দরজার বাইরে কয়েকজোড়া ত্রাসিত পদধ্বনি টের পেলাম একসময় । সেইসাথে আম্মা আর নিতিনের চিৎকার।
-“নবুর ঘর থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে কেন?”
-“দাভাই তুমি কোথায়? ঠিক আছো তো? দা..” ভেতরে পা রেখেই নিতিন থেমে গেল। দৌড়ে এল আমার কাছে। তার পেছন পেছন আম্মা। দুজন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে রইল দরজার ওপাশে।
-“অ্যাই নবু, কি হয়েছে। হায় আল্লাহ! ঘরে আগুন জ্বালল কে? কি করেছিস তুই নবু!”
গম্ভীর মুখে বললাম
-” যা করেছি ভালো করেছি। এই ব্যাপারে তোমরা কেউ কোনো কথা না বললেই আমি খুশি হব। ”
উত্তর শুনে আম্মা দমে গেলেন। চোখে পড়ল আতঙ্ক মিশ্রিত অবিশ্বাসের দৃষ্টি। সত্যিই কি কোনোদিন আম্মার নবু এই ঘোর থেকে বের হতে পারবে না?
ততক্ষণে নিতিন আগুনে পানি ঢেলে আগুনটাকে তেজহীন করে দিয়েছে। ঘরে একটা বিশৃঙ্খল আবহাওয়া বিরাজমান। যে যার জায়গায় স্থির। হঠাৎ খেয়াল করলাম আম্মার মুখের রঙ পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলাম দরজার হাতল ধরে বড় মামা দাঁড়িয়ে আছেন। তার ওপর আমার দৃষ্টি ভিরা মাত্রই তিনি বেরিয়ে চলে গেলেন। আম্মা সঙ্গে সঙ্গে মামার পিছু নিলেন।
চলবে…..