বৃষ্টিময়_প্রেম #পর্বঃ৫২

0
700

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৫২
#লেখনীতে-তাসফিয়া হাসান তুরফা

রাগ ও অভিমান শব্দ দুটি সম্পূরক হলেও তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। রাগ মস্তিষ্ককে বশ করে কিন্তু অভিমান বশ করে হৃদয়কে! রাগের রেশ হুট করে কমে গেলেও অভিমানের রেশ সহজে কাটা দায়! পূর্ণর ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। উনি আমার উপর রাগ করেছেন না অভিমান প্রথমে সঠিক বুঝতে পাচ্ছিলাম না আমি। রাগ করলে মানুষ দূরে ঠেলে দেয় কিন্তু অভিমান করলে তা করতে পারেনা। পূর্ণর ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। উনি আমার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছেন না ঠিকি তবে আমার কোনোদিকে যেন কোনোরুপ অযত্ন না হয় সে বিষয়েও কঠোর দৃষ্টিপাত করছেন বরাবরের মতো। এতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেলো আমার কাছে! প্রিয়ার কথাটা বলার দু’দিন পার হয়ে গেলেও পূর্ণর আমার প্রতি আচরণের পরিবর্তন না দেখে বুঝলাম এটা তার অভিমান বৈকি আর কিছুই নাহ!

কারও অভিমান কিভাবে ভাঙাতে হয় সে বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলাম। স্বভাবতই উনার পূর্বে কোন পুরুষের সাথে প্রেম বিনিময় হয়নি আমার। জীবনের প্রথম ভালোবাসাও উনি, সকল অনুভুতির সূচনাও তাকে ঘিরেই হয়েছে এজন্যই এত নতুন সব আবেগের সাথে আমি পূর্বপরিচিত নই। বারকয়েক নরম সুরে পূর্ণর সাথে কথা বলার চেস্টা করেও যখন উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হলাম ঠিক তখনি মনের গহীনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। উনি কেন অভিমান করেছেন? আমি তার থেকে কথা লুকিয়েছি বলে নাকি রায়হান ভাইয়াকে সাপোর্ট করছি বলে? মানুষটা চাপা স্বভাবের হওয়ায় নিজে থেকেই বুঝে নিতে হয় আমাকে, মুখ ফুটে মনের কথাগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করা বরাবরই উনার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ! এবারও ব্যতিক্রম হলোনা। আমার ছোট্ট মন উনার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেও দু’দিন থেকে জনাব আমাকে অন্যদিনের মতো পাত্তা দিচ্ছেন না। সেদিনের সাজগোজও সব জলে গেলো! সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে বসে ভাবছিলাম এসব। একটু পর অফিস থেকে বাসায় ফিরলেন পূর্ণ রা। আমায় গম্ভীর মুখে সোফায় বসে থাকতে দেখে প্রান্ত ভাইয়া বললেন,

—এভাবে সোফায় বসে আছো কেন, তুরফা? বাকি সবাই কোথায়?

—রাইসা ও মা রান্নাঘরে, ভাইয়া। আমিও সেখানেই ছিলাম এতক্ষণ। পড়তে বসবো একটু পর তাই রুমে যাওয়ার আগে একটু এখানে বসেছি।

—প্রান্ত, তোর বোনকে বল ওর হাতে যে এতক্ষণ ধরে মশা বসে র/ক্ত শু/ষে নিচ্ছে ও কি আদৌ সেটা টের পাচ্ছে কি না? নাকি আহম্মকের মতো বসে বসে স্বেচ্ছায় মশাকে র/ক্তদান করছে তখন থেকে?

পূর্ণর কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আমি। ভ্রু কুচকে আমার হাতের দিক তাকালেন প্রান্ত ভাইয়াও। গভীর ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিলাম যে কখন এটা উড়ে এসে র/ক্ত খে/তে শুরু করেছে বুঝতেই পারিনি! মশাটাকে লক্ষ্য করতেই মেরে দিলাম, র/ক্ত খেয়ে নড়তে পাচ্ছিলো না বেচারা।

—আরে, আসলেই তো অনেক রক্ত খেয়েছে মশাটা। তোমার দৃষ্টিশক্তি এত ভালো আগে তো জানতাম না, বড় ভাইয়া। এতদূর থেকেও লক্ষ্য করলে? তুরফা, তুমি কি টের পাওনি নাকি?

আমি বিড়বিড় করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই পূর্ণ তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,

—টের পাবে কিভাবে? দেশে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহ পরিস্থিতি, মানুষ কোথায় নিজে থেকেই সতর্ক থাকবে! অথচ ওর নিজের ব্যাপারে কোন চিন্তাই নেই! আমি কিছু বললেও সেটা আমার দোষ! অথচ আজকাল ওর নিজের মন যে আলতু-ফালতু সব চিন্তায় ব্যস্ত সেদিকে কিছুই নাহ! পরীক্ষার দিন যত ঘনিয়ে আসছে ঠিক ততটাই পড়াশুনায় ফাকি দিয়ে অন্যচিন্তায় ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। এরপর রেজাল্ট খারাপ হলে নিজেই কান্না করবে। ওকে স্টুপিড কি আমি সাধে বলি?

—আহহা, এভাবে বলছো কেন ওকে? সকালের মশার কামড় খেলে ডেঙ্গু হয়, সন্ধ্যার মশায় নাহ। তুরফার কিছু হবেনা তুমি চিন্তা করোনা। ও পড়াশুনাও ঠিকি ম্যানেজ করবে। আমার বোন ফালতু চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেনা আমি জানি তো!

আমার পক্ষ নিয়ে পূর্ণকে এসব বললেন প্রান্ত ভাইয়া। তবে এতে পূর্ণর মনোভাবের বিশেষ একটা পরিবর্তন হলোনা। আমার ও প্রান্ত ভাইয়ার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন আমাদের রুমে। প্রান্ত ভাইয়া বেচারা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন উনার যাওয়ার দিকে। বিস্ময়ের সাথে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

—বড় ভাইয়ার কি হয়েছে, তুরফা? এরকম রেগে আছে কেন? অফিসেও দেখলাম মুড ভালো নেই। কাল থেকে নোটিস করছি বিষয়টা। ঝগড়া হয়েছে নাকি তোমাদের মধ্যে?

—উনাকে তো আপনি চিনেনই, ভাইয়া। রাগ তার নাকের ডগায় থাকে সবসময়। আমি কিছু না করলেও রেগে যায়। আমি নিজেই বুঝছিনা উনার কি হয়েছে!

মিনমিনিয়ে বললাম আমি। আমার কথা যেন পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন না প্রান্ত ভাইয়া, তবুও পরিস্থিতির খাতিরে হালকা হাসলেন। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই রাইসা এলো সেখানে। প্রান্ত ভাইয়াকে দেখেই বলে উঠলো,

—তুমি এসে গেছো? আমি আরও বলছি আজ তোমরা আসছোনা কেন এতক্ষণেও!

—আর বলোনা, আগেই আসছিলাম আমরা। এমন সময় এক স্টাফ একটা ফাইল হারিয়ে ফেলেছে সেটা বলতে এসেছে। আমি সামলে নিচ্ছিলাম ব্যাপারটা এমন সময় বড়ভাইয়া এলেন, কথাটা উনার কানে গেলো। আর তুমি তো জানোই ও সবকিছু নিয়ে কতটা সিরিয়াস? হেরফের পছন্দ করেনা, একটু এদিক সেদিক হলেই রেগে যায়। আর দু’দিন ধরে এমনিতেও ওর মনমেজাজ কেন যেন ভালো ঠেকছেনা আমার কাছে, সুযোগ পেলেই ঝাড়ছে সবাইকে। আজও ব্যতিক্রম হলোনা। লেকচার দিয়ে আসলো সেই স্টাফকে। বেচারা এমন ভয় পেয়েছে যে কালকের মধ্যেই ফাইলটা খুজে বের করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে! হাহা! এগুলো করে আসতে আসতেই দেরি হয়ে গেলো আমাদের।

—আচ্ছা, এই ব্যাপার তাহলে? পূর্ণ ভাইয়ার কি হয়েছে? তুরফা তুই জানিস?
আমি “না-সূচক” মাথা নাড়তেই রাইসা বললো,

—বাদ দেও। এখন রুমে চলো। ফ্রেশ হয়ে নিবে। বাকি কথা পরে শুনছি।

ওরা দুজন চলে গেলে আমিও চলে এলাম রুমে। পূর্ণ এতক্ষণে ফ্রেশ হয়ে গেঞ্জি ট্রাউজার পড়ে বের হয়েছেন। ভেজা মুখটা এখনো ভার করে রাখা। আমি আর নিতে পারলাম নাহ। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম উনার দিকে। পূর্ণ আমাকে দেখেও কিছু না বলে বিছানায় বসতে ধরছিলেন। আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে উনার বাহু ধরে থামালাম। তিনি এক পলক আড়চোখে আমার দিক তাকাতেই দৃষ্টি কোমল হলো আমার। আচমকা উনার গালে হাত রেখে বিনয়ী কণ্ঠে বললাম,

—এত রাগ করছেন কেন বলুন তো? দু’দিন ধরে আপনার অভিমান ভাঙানোর চেস্টা করছি। আপনার জন্য রান্না করছি, নিজে থেকে কথা বলার চেস্টা করছি। সেসব কি চোখে পড়ছেনা আপনার? কথা বলছেন না কেন ঠিকভাবে আমার সাথে? আবার আমার রাগ অন্যের উপর ঠিকই ঝাড়ছেন। এসব কি ঠিক, বলুন?

পূর্ণ হয়তো হঠাৎ করে আমার এমন আচরণ আশা করেন নি। তাই বিস্মিত নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন শুধু৷ তবুও কিছু না বলে গাল সরানোর জন্য মুখ ফিরাতেই তার গালের খোচাখোচা দাড়ি সূচের মতো ফুটলো আমার হাতের কোমল তালুতে। নিজ থেকেই মুখ দিয়ে হালকা স্বরে “উহ” শব্দ ধ্বনিত হলো। উনি গাল সরাতে গিয়েও থেমে গেলেন। পুনরায় আমার দিক তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

—রেগে আছি বলেই তোমার সাথে কথা বলছিনা। রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা তুমি তো জানোই। কেন জানি আমি চেয়েও রাগ কমাতে পাচ্ছিনা, তুরফা। প্রিয়াকে দেখলেই আমার ওর প্রতি মেজাজ খারাপ হচ্ছে! দুনিয়াতে রায়হানকেই পেলো? আর তুমি এ বিষয়টি জানতে মনে হতেই তোমার উপর রাগ বাড়ছে। এজন্যই নিজেকে বিরত রাখছি। কয়দিন আমাকে একা ছেড়ে দেও। রাগ কমলে নিজে থেকেই কথা বলবো।

শান্তভাবে কথাগুলো বলে নিজ থেকেই ধীরগতিতে আমার হাতটি সরিয়ে দিলেন তার গাল থেকে। উনার কথায় দিশেহারা অনুভব করলাম। ইতস্ততভাবেই বললাম,

—কতদিন অপেক্ষা করবো আমি? আর যদি আপনার রাগ না কমে? তাহলে কি কোনোদিনও কথা বলবেন না আমার সাথে?

আমার কথায় যেন বেশ খানিকটা রাগান্বিত হলেন উনি। চোখের শান্তভাবটা নিমিষেই ক্রোধে পরিণত হলো যেন। চোয়াল শক্ত করে বললেন,

—বলবোনা। এখন সরো এখান থেকে।

উনার কথায় এতক্ষণের অনুভূতি তুচ্ছ হয়ে গেলো আমার। তিল তিল করে অভিমানের পাহাড় জমলো বুকে! উনি আমার সাথে কোনোদিনও কথা বলবেন না? এটা কিভাবে বলতে পারলেন উনি! আবার আমাকে সরতেও বলছেন তার কাছে থেকে। মনের ভেতর সদ্য জন্মানো ভালোবাসার গোলাপ স্থানচ্যুত হলো নিমিষেই! রাগে-অভিমানে গর্জে উঠলাম,

—সরবো কেন? আমি চলেই যাবো। কথা না বললে থাকবো কেন আমি আপনার সাথে?

আমার কথায় চমকে উঠে স্থির দৃষ্টিতে চাইলেন উনি। চোখ-মুখ শক্ত হয়ে লালচে হয়ে গেলো খানিকটা। দাতে দাত পিষে চোখের ক্রোধাগ্নি বাড়িয়ে বললেন,

—যাও। কে আটকিয়েছে তোমায়? এতবছর যাকে না জেনেশুনেও তার জন্য অপেক্ষা করেছি, সে যদি আমায় বুঝেও আমার জন্য অপেক্ষা না করতে পারে তবে তাকে বাধা দেওয়া মূল্যহীন! সে যেতে চাইলে আটকানোর কারণ নেই আমার কাছে!

কথাগুলো বলে বিন্দুমাত্র দেরি না করে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে গেলেন পূর্ণ। দ্রুতহাতে বাটন টিপে যেন যন্ত্রটার উপর রাগ ঝাড়ছেন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যর্থ চেস্টা করছেন। কিছুক্ষণ সেদিকে বজ্রাহতের ন্যায় চেয়ে থেকে রুম ত্যাগ করলাম আমি। উনার কথাগুলো বারবার ঘুরছে মাথার ভেতরে! শূন্য মস্তিষ্ক কাজ করছেনা যেন! কোথায় উনার অভিমান ভাঙাবো এখন তো নিজেরই অভিমান জাগ্রত করলাম। হতাশ মনে বসে কি করবো ভাবতে লাগলাম!

___________________

রাতে খাবার টেবিলে পূর্ণ ও আমাকে নীরব দেখে বেশ কয়েকবার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেন বড়াম্মু। দুজনেই প্রশ্নটি ভদ্রভাবে এড়িয়ে এলাম। স্বামী-স্ত্রীর ভেতরের কথা বাহিরে প্রকাশ না করাই ভালো! পরিবেশ বদলাতে বড়াব্বু মুখ খুললেন। হাসিমুখে বলতে আরম্ভ করলেন,

—তোমাদের জন্য একটা সুসংবাদ আছে।

—কি সুসংবাদ, আব্বু?

কৌতুহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন প্রান্ত ভাইয়া। বাকি সবাইও মনোযোগ দিয়ে চেয়ে রইলাম বড়াব্বুর দিকে।

—ভেবেছি তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করবো এ মাসেই। সামনের সপ্তাহে করলে কেমন হয়?

খুশিতে চকচক করে উঠলো প্রান্ত ভাইয়ার চোখ। উৎসাহী গলায় বললেন,

—ওয়াও দ্যাটস গ্রেট। আমার তো আপত্তি নেই। বড় ভাইয়া কি বলছো?

—তোদের বিয়ের অনুষ্ঠান তোরা রাজি থাকলে অবশ্যই এ সপ্তাহেই কর। তবে আমার বিয়ের অনুষ্ঠান এখনি করতে চাইছিনা আমি।

বেশ শান্তভাবেই বললেন পূর্ণ। উনার প্রথম কথায় সবাই খুশি হলেও দ্বিতীয় কথায় চমকে উঠলেন। উনি যে আমাদের অনুষ্ঠানে মানা করবেন এটা কেউ ভাবেনি, বলতে গেলে আমি নিজেও ভাবিনি। বাকি সবার সাথে চমকে গেলাম আমিও। এমন করছেন কেন? বড়াব্বু অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বললেন,

—কি সমস্যা তোমার? সবাই রাজি থাকলে তুমি অনুষ্ঠান করতে চাইছোনা কেন? নিজের বিয়ে নিয়ে তো সবাই এক্সাইটেড থাকে। তোমার মতো গোমরামুখো আর দুটো দেখিনি।

বড়াব্বুর কথায় বিরক্ত হলেন পূর্ণ। ধারালো মুখে উত্তর দিলেন,

—আমি তো প্রান্তদের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু বলিনি, বাবা। আমার আর তুরফার বিয়ের অনুষ্ঠান ওর এডমিশনের পরে করবো। আমি চাইনা এসব ঝামেলার কারণে ওর পড়াশুনায় ক্ষতি হোক। এমনিতেই ধরে ধরে পড়াতে হয়। এসব অনুষ্ঠান শুরু হলে তো পড়াশুনা হবেনা ওর দ্বারা আর!

এরপরও বড়াব্বু উনাকে মানানোর চেস্টা করলেন কিন্তু পূর্ণ মানতে নারাজ। শেষমেশ উনার জিদের কাছে হার মানলেন বড়াব্বু। ঠিক হলো সামনের সপ্তাহে অনুষ্ঠান হবে রাইসা-প্রান্ত ভাইয়ার বিয়ের। আন্টিদেরকেও ফোনে জানানো হলো, শীঘ্রই দেখা করে সব আলোচনা করা হবে!

সবাই খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেও আমি পড়ে রইলাম পেছনে। মনের মধ্যে ঘুরছে বহু প্রশ্ন, উনি কি সত্যিই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চান না? এজন্যই আমার পরীক্ষাকে বাহানা হিসেবে চালিয়ে দিলেন? উনার রাগের গুরুত্ব কি আমার চেয়েও বেশি তার কাছে? এমন তো হওয়ার কথা ছিলোনা! তপ্তশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলাম আমাদের ভবিষ্যত! সারারাত এক প্রকার ছটফটিয়ে কাটালাম! নিদ্রাহীন চোখে পূর্ণর শিওরে বসে রইলাম ঠিকি, অশান্ত মন শান্ত হলোনা তবুও।

__________________

যথারীতি পরের দিন রাইসা মার্কেটে, প্রিয়া কলেজে থাকায় দুপুরের দিকে বিয়ের এক কাজের ব্যাপারে আন্টির সাথে কথা বলার জন্য আমায় রাইসার বাড়িতে পাঠালেন বড়াম্মু। বহুদিন পর প্রিয় আন্টিকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরলাম আমি। তার সাথে মন খুলে কথা বলে কাল হতে যে খারাপ লাগা বিরাজ করছিলো অন্তরে, মাতৃতুল্যার সান্নিধ্যে কিছুটা অবসান হলো অবশেষে! মায়ের স্নেহের পরশে যেমন শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সন্তান, আন্টির কোলে মাথা রেখে কথা-বার্তা শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম আমিও! এ ক’দিনের ক্লান্ত নির্ঘুম রাতের পর নিজের মনকে শান্ত করতে যেন একটি সুন্দর ঘুমেরই প্রয়োজন আমার, বড্ড বেশিই প্রয়োজন!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here