চেনা_পথে,পর্ব-০১

0
1887

#চেনা_পথে,পর্ব-০১
#Tahmina_Akhter

— এত হাতাহাতি কিসের? হাতাহাতি করবার মন চাইলে বিয়া কর। বিয়া করা বৌয়ের লগে হাতাহাতি ক্যান জড়াইয়া ধরবি।

— কি ওয়ার্ড ইউজ করছো দাদি! হাতাহাতি! কি ভয়ানক শব্দ!

মুখে হাত দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে কথাটি বললো মাশফি। যেন সে এমন শব্দ জীবনেও শুনেনি।

— ইংলিশ কইবা না আমার সামনে। বিদেশ থাইকা দেশে আইসা তুমি যারে তার লগে হাতাহাতি করবা এটা তো হইব না৷ বিয়া করো ভেজাল শেষ। ধরো তক্তা মারো পেরেক।

— বিয়ে করা এত সোজা নাকি! দেশে এলাম কাউকে দেখে মনের মাঝে রঙধনু উঁকি দিক এরপর না-হয় বিয়ে করা যাবে।

মাশফি উঠে দাঁড়ালো তারপর নিজের দাদি সুফিয়াকে উক্ত কথাগুলো বলে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে যাচ্ছে । এদিকে মাশফির দাদি নাতির কান্ডকারখানা দেখে ভীষন বিরক্ত। যে করেই হোক নাতির বিয়ের ব্যবস্থা করা লাগবে৷ গত সাতদিন আগে উনার নাতি দেশে এসেছেন। বড়ো মামার কাছে ছিল বছরতিনেক। হুট করে সেদিন কাউকে না জানিয়ে দেশে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছে। যদিও ওর হুট করে ফিরে আসা নিয়ে কেউ কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু,, নাতির কিছু বদঅভ্যেস দেখে সুফিয়ার মাথায় হাত। সকালে কোত্থেকে এক মেয়ে এলো এসেই মাশফির গলায় ঝুলে পরলো। এই যে পরিবারের এতগুলো সদস্যের সামনে এমন বেহায়াপনা দেখালো এটা কি ঠিক হলো? তাই তো রেগেমেগে মাশফির দাদি ওই কথাগুলো বললো।

রাস্তার কোল ঘেষে হেটে যাচ্ছে মধু। আধ ঘোমটা দেয়া,, হেটে যাওয়ার কারনে ছোট চুলগুলো কপালের দুপাশে দুলুনি খাচ্ছে। মাথা নীচু করেই হাঁটছিল এবং তখনি ঘটলো দূর্ঘটনা। একটা ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে গিয়েও লাগেনি। মধুর বুক তখন বুলেট ট্রেনের গতিতে ধুকপুক করছে। বুকে থুতু দিয়ে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে কিছু বলার আগে ওপাশ থেকে এমন জবাব এলো,,

— সুন্দর ছেলে দেখলে তো মাথায় হুশ থাকে না! এমন তো না যে গ্যাদা পোলাপান চোখের সামনে ছিল, সাইজে ছোট তাই চোখে পরেনি। কিন্তু,, পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চির একটা মানুষকে না দেখতে পাওয়া,, এটা কি মানা যায়?

ছেলেটার কথা শুনে মধুর কথা বন্ধ হয়ে গেলো। মানে কি? মধু না হয় মাথা নীচু করে হাঁটছিল কিন্তু উনি কি করছিলেন? সব দোষ এখন ওর ওপর চাপানো হচ্ছে? যদিও মধু তর্ক করতে পছন্দ করে না তবুও এই ছেলেটাকে কিছু না বললেই নয়।

— আমি না হয় চোখে দেখেনি কিন্তু আপনি? আর সুন্দর ছেলে কাকে বললেন? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব ভালো করে নিজেকে আরও একবার দেখবেন এরপর বলবেন সুন্দর কাহাকে বল?

— হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি দেখতে সুন্দর না!

— আপনার সৌন্দর্যের বড়াই আপনি নিজে করছেন। আমি তো যাস্ট জাজ করলাম। এনিওয়ে পথ ছাড়ুন। দেরি হচ্ছে আমার। নেক্সট টাইম থেকে দেখেশুনে পথে হাটতে বের হবেন। নয়তো, একদিন গাড়ি এসে আপনাকে হালকা করে ছুঁয়ে দিবে আর আপনি জান্নাতের বাগানে বসে ভাবতে বাধ্য হবেন কি করে সেখানে পৌঁছালেন!

মধু ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। মেয়েটার কথা শুনে আপাতত মাশফির মুখ বন্ধ। বাড়ি থেকে বের হবার আগে দাদি ভাষণ দিলো। আর রাস্তায় এসে বেগম রোকেয়ার আপডেট ভার্সেনের সঙ্গে দেখা হলো। উফফ আজকের পুরো দিনটাই খারাপ যাবে। মাশফি রাগে-দুঃখে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো মেয়েটার বোধহয় চোখে সমস্যা আছে নয়তো মাশফির সৌন্দর্য নিয়ে এমন কথা আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি।

যদিও মাশফি ভেবেছিল ওর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবে কিন্তু এখন আর মন চাইছে না। তাই যেই পথে রওনা হয়েছিল সেই পথে আবারও রওনা হলো। পথে যেতে যেতে শুধু আপডেট রোকেয়া বেগমের কথা ভাবছিল। ভাববার সময় মাশফির মুখ কেমন যেন কুচকে ওঠে বিরক্তিতে।

বাড়িতে পৌঁছানোর পর মাশফি সোজা ওর রুমে ঢুকলো। বারান্দায় মেলে দেয়া ভেজা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম ঢুকে গোসল সারলো। টাওয়াল কোমড়ে বেঁধে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে পা রাখা মাত্র কারো গগনবিদারি চিৎকার শুনে মাশফি হতবাক হয়ে যায়। যদিও এমনটা আশা করেনি তবুও এমন একটা পরিস্থিতিতে পরলে কেমন রিয়াকশন দেয়া উচিত আপাতত মাশফির মাথায় আসছে না!

— এই যে অসভ্য লোক বস্ত্রহীন গায়ে একটা মেয়ের সামনের দাঁড়িয়ে আছেন লজ্জা করছে না?

দু’হাতে ঢাকা মুখটার আড়ালে থাকা মানুষটি কম্পিত গলায় বললো। মাশফির তো এমন কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেলো। মানে কি? ও কি পুরো বিবস্ত্র অবস্থায় আছে নাকি? মেয়ে মানুষ সবসময় একধাপ এগিয়ে থাকে। মাশফি রেগেমেগে এগিয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটার দিকে তখনি ঘটলো অঘটন। খাটের কোণায় পা বেধে হুমড়ি খেয়ে পরলো মেয়েটার ওপর। আরও একদফা চিৎকার শোনা গেলো। মাশফির মনে হচ্ছে ও আর জীবনেও কানে শুনতে পাবে না। এই মেয়েটার চিৎকার শুনে মাশফির বয়ড়া হবার উপক্রম।

এদিকে মাশফির দেহের ভারে মেয়েটার দম আটকে যাচ্ছে। যা ইচ্ছে তাই একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে জানলে আজ কোনোভাবে এই বাড়িতে আসত না। পরেছে তো পরেছে উঠার নাম অব্দি নেই। বেশ কয়েকবার সরাতে যেয়েও পারে না। একসময় বেশ জোরেসোরে ধমক দিয়ে বললো,,

— বুইড়া খাশি। পরেছেন তো পরেছেন এখন সরছেন না কেন? আমি মরে যাওয়ার পর উঠবেন?

মাশফির এতক্ষণ খেয়াল হলো যে ও সত্যি মেয়েটার ওপরেই আছে। মাশফি লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়ায়৷ এদিকে মেয়েটার যেন প্রাণ ফিরে আসে। জোড়ে শ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু,, সেটুকু করা আর হলো না। মাশফির টাওয়াল গড়িয়ে যাচ্ছিলো। এটুকু দৃশ্য দেখে পড়িমরি করে উঠে দৌঁড় দিতে যেয়ে দেয়ালের সঙ্গে বাড়ি খেলো। আহহ্ শব্দ বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে। মাশফি তো এই মেয়ের কান্ড দেখছে আর বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে কিছু একটা বলার আগে আয়ানায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে নজর যায়। জিহ্বায় কামড় দিয়ে টাওয়াল উঠিয়ে সোজা ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জা পাচ্ছে মাশফি। কারণ,, আজকের দিনের মতো এমন ট্র্যাজেডি ওর লাইফে কখনো আসেনি।

মাশফি চলে যেতেই মধু ওর কপালে হাত বুলাতে বুলাতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। নিজেকে হাজার খানেক বকা দিচ্ছিল মধু। এমনসময় বারো বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে মধুর পথ আগলে ধরে বললো,,

— তুমি এত দেরি করলে কেন আন্টি?? আমি সেই কখন থেকে ওয়েট করছি???

মধু ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে মেয়েটার থুতনিতে হাত রেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,

— আন্টি পথ হারিয়ে একটা উল্লুকের খাঁচায় ঢুকে পরেছিলাম। সেই উল্লুকের পাল্লায় পরে আন্টির অবস্থা নাজেহাল। সুযোগ পেলাম আর অমনি পালিয়ে এলাম তোমার কাছে।

মেয়েটা মধুর কথা শুনে একটিবার ওর চাচ্চুর রুমের দিকে তাকিয়ে আবারও মধুর দিকে তাকালো। কারণ,, মধুকে সে ওর চাচ্চুর রুম থেকে বের হতে দেখেছে। ওর চাচ্চুর ঘরে উল্লুক এলো কোত্থেকে? যেহেতু আন্টি বলেছে উল্লুক দেখেছে তারমানে সত্যি দেখেছে। কিন্তু,, উল্লুকটা যদি চাচ্চুর কোনো ক্ষতি করে? উফফ্ টেনশনে পরে যায় আদিবা।

আদিবার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো মধু যেতে যেতে আরও একবার সেই দরজার দিকে তাকালো এবং সেই উল্লুকটাকে দেখতে পেলো। মধুর ভ্রু কুচকে এলো কারণ এই উল্লুক মহাশয়ের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়েছিল। মধু ভাবছে এই লোক এই বাড়িতে কি করছ?

আর মাশফি মধুকে দেখে একি কথা ভাবছে মনে মনে। যদি মাশফি টাওয়ালের ব্যাপারটা নিয়ে বেশি লজ্জা পাচ্ছে। বাকি সব ঘটনা তো কো-ইন্সিডেন্স।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here