প্রিয়_তুই,১১,১২

0
270

#প্রিয়_তুই,১১,১২
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১১

”কে করেছে, তুই?”
-”উহুম, ভোর নিজেই।”
-”তুই কিভাবে জানলি? তারমানে তুইও এর সঙ্গে জড়িত?”
-”না হয়ে আর উপায় আছে? ভালোবাসার মানুষের আবদার বলে কথা।”

আয়মানের কথা শুনে তিতাস শব্দ করে হেসে উঠল। হাসির চোটে কয়েক মিনিট কথায় বলতে পারল না। এমনকি তার হাতের আইসক্রিমটাও মাটিতে পড়ে লুটোপুটি খেলো। অন্য এক হাত কোমরে রেখে সে শরীর দুলিয়ে হাসছে। ওর হাসির শব্দে কয়েকজন পথচারীও যেতে যেতে তাকাচ্ছে। আয়মান ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে বিরক্ত মুখে ওর হাসি দেখছে। ছেলেটাকে এজন্যই ওর এত অপছন্দ। এভাবে হাসার মানে হয়, হাসির কথা বলে নি নিশ্চয়ই! তখন তিতাস বাম হাতের উল্টো পিঠে মুখ মুছে পুনরায় হাসতে লাগল। কেন জানি হাসি থামাতেই পারছে না সে। আয়মানের দিকে তাকালে ওর হাসির মাত্রা
দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে। তবুও অনেক কষ্ট হাসি থামিয়ে বলল,

-”তুই ভোরের উপর নজর রাখিস আড়ালে লুকিয়ে থেকে। আর আমি সর্বদা, সর্বক্ষণ, তার সঙ্গে থেকে খেয়াল রাখি।
সত্যি বলতে, ভোরের আপাদমস্তক পড়া আমার শেষ। তার দৌড় কতদূর আমার অজানা নয়। তাই ভাওতাবাজির গল্প অন্য কাউকে গিয়ে শোনা। তবে হ্যাঁ, যদি আমি জানতে পারি এসবের পেছনের তুই আছিস। তখন খেল কাকে বলে তাইই দেখবি।”

-”ওরে বাবা তাই নাকি? ভয় পাচ্ছি, কেউ বাঁচাও আমাকে।”

আয়মান অভিনয় করে একথা বলে স্বজোরে হেসে উঠল।
পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার কারণে একটু রাগও হলো। তবে ভোরের প্রতি তিতাসের অগাধ বিশ্বাস দেখে মজায় লাগল।
এমন বিশ্বাস ভাংতে তার ভালোই লাগবে। তিতাসকে এভাবে কাবু করতে না পেরে আয়মান অন্য কথার সুর টানল। বাঁকা হেসে অবজ্ঞার সুরে বলল,

-”তুই তো সারার ছোট ভাই তাই না? যে প্রায় সময় ছেলেদের সঙ্গে বেড শেয়ার করে ফূ/র্তি করে বেড়ায়।”
-”না আমার কোনো বোন নেই। আমরা দুই ভাই পিয়াস আর তিতাস।”
-”হা হা হা, তোদের মরে যাওয়া উচিত। এই মুখ নিয়ে সমাজে চলিস লজ্জা লাগে না?”
-”উহুম, লজ্জা লাগবে কেন? বরং গর্বে বুক ফুলে উঠে। ”
-”গন্ডারের চামড়া হলে যা হয় আর কি।”
-”ভেবে কথা বলিস নয়তো পেরে পস্তাবে হবে।”
-”ওহো তাই বুঝি? তবে যার বোন বে** তার মুখে এসব কথা মানায় না। গায়ে মানে না আপনি মোড়ল, হা হা।”

একথা শুনে তিতাসের মুখভঙ্গি বদলে গেল। রাগে ওর শরীর শিরশির করে উঠল। মস্তিষ্ক সায় দিলো কিছু একটা করার।
তিতাস আয়মানকে স্বজোরে ঘুষি মারার সংকল্প করল,ঠিক তখনই ভোরের ডাক শোনা গেল। তিতাস ফিরে দেখে জ্যাম ছুটে গেছে।গাড়িগুলো নিজস্ব পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। ভোর হাত বাড়িয়ে ওদেরকে ডাকছে। আর ওর গাড়িটার পেছনের গাড়িগুলো হর্ণ বাজিয়ে গাড়ি সরাতে বলছে। ট্রাফিক পুলিশ বাঁশি বাজাচ্ছেন একে একে যাওয়ার জন্য। তিতাস আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও পুনরায় সে ফিরে এলো। তারপর ঝটপট আয়মানকে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে
স্বজোরে এক কিল বসিয়ে দিলো। অতঃপর মুখভর্তি হাসি নিয়ে ভালো থাকতে বলে দৌড়ে চলে গেল। ঘটনা তড়িঘড়ি ঘটাতে আয়মান কিছুই বুঝল না। তবে পরক্ষণেই পিঠে ব্যথা অনুভব করাতে নাকটা চেপে নিঃশ্বাস আঁটকে দাঁড়িয়ে রইল। প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে সে।তিতাস গিয়ে বসলে ড্রাইভার বাসার পথ ধরে গাড়ি এগোলেন। শাঁ শাঁ শব্দে গাড়িও চলতে থাকল আপন গতিতে। বাইরের ঠান্ডা বাতাসে শরীরখানাও জুড়িয়ে
এলো। দেহের একরাশ ক্লান্তি লেজ গুটিয়ে পালালো। একটু
পর, ভোর তিতাসের দিকে তাকিয়ে দেখে তিতাসের নির্লিপ্ত দৃষ্টি বাইরের দিকে। মলিন মুখ। ভোর বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।

তিতাস তখনো ভাবনায় মগ্ন। ওর ঠোঁটে নেই দুষ্টু হাসির রেশ।
যার বোন এত নোং/রা তার মুখে হাসি না থাকায় স্বাভাবিক। পিয়াস মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে। অথচ সে বেঁচে থেকে একটু একটু করে প্রতিনিয়ত ম/র/ছে। তার এ মৃ/ত্যু/র আয়োজন নেই এজন্যই কেউ বোঝে না, দেখে না। শুধু আয়মানই নয়, তাকে আল্লাহর ত্রিশটা দিনই কেউ না কেউ সারার নামে এই কথা বলবেই বলবে। মানুষের আর দোষ কী, সে যেসব করে মানুষ তো তাইই বলে।পূর্বের নম্র ভদ্র সারা এখন প/তি/তা/।
যাকে টাকার বিনিময়ে দেহের খায়েস মিটাতে ব্যবহার করা হয়।একপ্রকার জেদ ধরেই সারা নিজের জীবন নষ্ট করেছে। উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয়েছিল তার। তবে বিয়ের ছয়মাস পরেই জানা যায়, তার স্বামী তাকে জোরপূর্বক অন্যের বেডে যাওয়ার জন্য মা/র/ধো/র করে। নানান ভাবে অ/ত্যা/চা/র করে। শুধুমাত্র নিজের ব্যবসার লাভের স্বার্থে। সারা আর না সহ্য করতে পেরে সবাইকে জানিয়ে দেয়।তারপর জানাজানি হলে পিয়াস কোনোভাবেই তাকে শশুড়বাড়ি যেতে দেয় না। নিজ দায়িত্বে তার ডিবোর্স করায়। এবং সারার সকল দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে জুবায়ের নামে কেস ফাইল করে। তাতে
সারার স্বামী জুবায়ের প্রচন্ড রেগেও যায়। এবং সারার সঙ্গে অন্যের অ/ন্ত/র/ঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও সোস্যাল সাইটের ছেড়ে দেয়। মিনিটেই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। পাড়া-পড়শীরাসহ ওদের নিকট আত্মীয়রাও কথা শোনাতে থাকে। নানানভাবে কুৎসা রটাতে থাকে। যা ঘটে নি তাই নিয়েও বদনাম করতে থাকে। তারপর থেকে সারা কোথাও বের হতো না, এমনকি অসুস্থতার কারণে হসপিটালেও না। যদি বের হতোও, কেউ না কেউ কথা বলার অজুহাতে নোং/রা প্রস্তাব দিয়েই বসত।
এসব ঘটনার মধ্যে দিন কাটতে লাগল তবুও সুফল পাওয়া গেল না। ততদিনে সারার মনে জেদ চাপল, খারাপ না হয়ে যেহেতু তাকে সবাই খারাপ বানাচ্ছে। এবার সে খারাপ হয়ে দেখাবে। যে কাজের জন্য তাকে এবং তার পরিবারকে এত অপমান হতে হয়, এবার সেই কাজই করবে। তারপর হঠাৎ’ই সে বাসা থেকে চলে যায়। কোনোভাবেই তার হদিস মিলে না।
প্রায় ছয় মাস পর, তার খোঁজ হয় এবং ওর প/তি/তা বৃত্তির কাজ সর্ব সম্মুখে আসে।উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকদের সঙ্গে ওর
উঠাবসা। নামীদামী হোটেলে প্রতিনিয়ত রাত্রি যাপনও করে।
নিজস্ব বিশাল বহুল বাড়িও বানিয়েছে। চলন বলনে ঠিঁকরে পড়ে আভিজাত্যের ছোঁয়া। আজকে প্রায় আটটা বছর হতে চলছে, সারার সঙ্গে ওদের কারোর যোগাযোগ নেই। দেখাও হয় না কতকাল। বাবা-মা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। ধীরে ধীরে সারার সমস্ত জিনিস বাসা থেকে মুছেও ফেলা হয়েছে। ওর মা বাবা একটাই কথা, উনাদের মাত্র দুটো ছেলে। একটা মেয়ে ছিল, মারা গেছে।

তিতাস এসব ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ভোরের পানে তাকাল।
মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। বাবার মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। তখন আয়মান ইচ্ছে করে তাদের মধ্যে নীরব যুদ্ধ বাঁধাতে চাচ্ছিল। যেন একে অপরের প্রতি সন্দেহ করে।
অথচ তাদের বিয়ের বয়স মাত্র একদিন। এর মধ্যে অশান্তির ডানা বাঁধাতে অনেকেই উঠে পড়ে লেগেছে। তিতাস ওর দৃষ্টি সরিয়ে পুনরায় বাইরে তাকাল। এই সমাজ কতটা নিষ্ঠুর,,সে সারার মাধ্যমে দেখেছে। নতুন সারার জন্ম হতে দিতে চায়নি সে। সারাও প্রথমে অবলা নারীই ছিল, ঠিক ভোরেরই মতো।
অথচ পরিস্থিতি সারা এবং তার চালচলনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিলো। তার একটা ভুল সিদ্ধান্তই তাকে সকলের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। সে এখন সকলর চোখে প/তি/তা। অথচ
সে অস্বীকার করলেও, সারা তার বোন, একমাত্র বড় বোন।
সারার কথা ভেবে তিতাস ভোরকে বিধবা থাকতে দিতে চায় নি। নিকৃষ্ট কিছু হায়েনা তাকে ভালো থাকতে দিতোও না। সে
মানসিক ভারসাম্য হারাত নয়তো আ/ত্ম/হ/ত্যা/র পথ বেঁছে নিতো। যেটা সে একবার করেও দেখিয়েছে। এরচেয়ে যেটা করেছে, এটাও উত্তম। অন্তত সন্মান নিয়ে বেঁচে তো থাকুক।
তখন তিতাস আচমকা ভোরের কাঁধে মাথা রেখে বলল,

-”ভোর, শুনছেন?”
-”বল।”
-”আমি না কখনো চাইব না আমাদের মেয়ে হোক। আপনিও চায়বেন না, ঠিক আছে?”
-”কেন?”
-”মেয়েদেরকে আমার ভালো লাগে না।”
-”একটা মেয়ের কাঁধে মাথা রেখে একথা বলতে লজ্জা লাগছে না?”
-”আমি তো আমার সিনিয়র বউয়ের কাঁধে মাথা রেখেছি।”
-”তোর সিনিয়র বউ কী মেয়ে নয়?”
-”ওহ তাই তো।”

তিতাস জিহ্বাতে কামড় বসিয়ে বোকামার্কা হাসি দিলো। সে কথাটা এভাবে বলতে চায় নি। যেহেতু ভুল করে ফেলেছে সে কান ধরে সরি বলল। ভোর জবাবে কিছু বলল না। শুধু দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকাল। তখন তাদের গাড়ি বাসার গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। দু’জন বাসায় পৌঁছে সবার সঙ্গে কথা বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল। তিতাস তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিজে ঝটপট কিছু খেয়ে ভোরের পেছনে লাগল। প্রচন্ড জ্বালাতন করে বকবক চালিয়ো ভোরকে অল্প কিছু খাইয়ে ছাড়ল। ভোর মুখে খাবার নিয়ে যখন নীরবে কাঁদছিল তখন তিতাস বলল,

-”আমরা দু’জন ছোট্র একটা বাসা বানাব। বাসার নাম দিবো সুখরাজ্য। তারপর আপনি আর আমি একটু একটু করে সুখ কুড়িয়ে সেখানে জমা রাখব। দু’জনে মিলে খুনসুটি, ঝগড়া,
মায়া, আর বিশ্বাস দিয়ে সুখরাজ্যটা শক্তকরে আবৃত করব।
তারপর আমাদের একটা ছেলে হবে। ঠিক আমার ভাইয়ার মতো।তখন নিয়ে আমরা সুখরাজ্যে সুখ বিলাশ করব, ঠিক আছে? এর আগে বা পরে আপনাকে ছাড়ছি না, ছাড়ব না।
এটাই আমার ওয়াদা, বুঝলেন?”

To be continue………….!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১২

-”আমরা দু’জন ছোট্র একটা বাসা বানাব। বাসার নাম দিবো সুখরাজ্য। তারপর আপনি আর আমি একটু একটু করে সুখ কুড়িয়ে সেখানে জমা রাখব। দু’জনে মিলে খুনসুটি, ঝগড়া,
মায়া, আর বিশ্বাস দিয়ে সুখরাজ্যটা শক্তকরে আবৃত করব।
তারপর আমাদের একটা ছেলে হবে। ঠিক আমার ভাইয়ার মতো।তখন তাকে নিয়ে আমরা সুখরাজ্যে সুখ বিলাশ করব, ঠিক আছে? এর আগে বা পরে আপনাকে ছাড়ছি না, ছাড়ব না। এটাই আমার ওয়াদা, বুঝলেন?”

-”লোভ দেখাচ্ছিস?”
-”না, স্বপ্ন বুনাতে শিখাচ্ছি।”
-”একটা সত্যি কথা বলবি? যদি বলিস তাহলে আর কখনো একথার পুনরাবৃত্তি করব না।”
-”প্রমিস?”
-”পাক্কা প্রমিস।”
-”হুম, আগে খাওয়া শেষ করুন।”
-”আগে কথাটা শোন।’

ভোর বাঁধা দিলেও একগুঁয়ে তিতাস শুনল না। সম্পূর্ণ খাবার টুকু খাইয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো । তারপর প্লেট রেখে হাত ধুয়ে এসে, বিনাসংকোচে ভোরের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।
ওর মুখভঙ্গি অত্যান্ত স্বাভাবিক। তবে ভোর নড়েচড়ে বসল, মুখে সংকোচের ছাপ স্পষ্ট। ওদিক-ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সামলেও নিলো। তারপর আলতো করে তার চুল টেনে দিতে থাকল। তিতাস কিঞ্চিৎ মাথা উঁচিয়ে দেখল দরজাটা বন্ধ কি না। সব ঠিকঠাক দেখে চোখজোড়া বুজে ফেলল। ওর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে ভোর চুপ করে রইল। খানিক্ষন পরে,
তিতাস বলল,

-”আমি কি খুব খারাপ হাজবেন্ড?”
-”একথা কখন বললাম?”
-”কর্মে বুঝালে, মুখে বলার প্রয়োজন পড়ে না।”
-”তুই একটু বেশিই বুঝিস।”
-”আচ্ছা বলুন কি বলতে চেয়েছিলেন?”
-”ভেবে জবাব দিবি, ঠিক আছে?”
-“হুম।”
-”আমাকে নিয়ে লোক সমাজে চলতে তোর লজ্জা লাগছে না?”

একথা শুনে তিতাস মৃদু হাসল। উঠে বসে ভোরের আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছু কথা গুছিয়েও নিলো। তারপর জবাব দিলো,

-”না, কারণ আপনি আমার জীবনসঙ্গী, খেলার পুতুল নয়। তাই অহেতুক এসব ভেবে বর্তমান সময়টুকু নষ্ট করবেন না।”

-”ভেবে বলছিস, পারবি আমার সঙ্গে বাকি পথ পাড়ি দিতে?”

-”পারব বলেই তো আপনাকে অর্ধাঙ্গিনী করেছি। আমি আর পাঁচটা স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর মতো আমাদের সম্পর্কটা গড়ে তুলতে চাই। আপনি বয়সে বড়, বিধবা, হ্যানত্যান এসবকিছু নিয়ে আমার কোনো ভাবনা আসে না, আসবেও না। দেখুন,
দিন শেষে আমারও কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে, শখ-আহ্লাদ আছে। বউকে নিয়ে বোনা কতশত রঙিন কিছু স্বপ্নও আছে। সেগুলো আপনাকে দিয়েই বাস্তবায়ন করতে চাই। বাকি পথ একসঙ্গে পাড়ি দিতে চাই,আপনার হৃদয় নিংড়ানো প্রেম হতে চাই। স্বামী রুপে আপনার ছত্রছায়া হতে চাই। আপনার মনে আমার জন্য নতুন করে জায়গা দখল করতে চাই। যেখানে
থাকবে শুধু আমার নাম। আর এই সবকিছুই আমার চাই-ই চাই। এগুলো পেতে একচুল পরিমানও ছাড় দিবো না আমি আপনাকে। আর না পাবেন অতিরিক্ত কোনো সময়। আমার সঙ্গে থেকে আমাকে বুঝে আমার মনমতোন প্রস্তুত হতে হবে আপনাকে।”

ভোর জবাব পেয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। না বলা কিছু গল্পগাঁথা তার চাহনিতে। তবে কী তার জীবনেও সুখ আসতে চলেছে? তিতাসই কি হবে ওর সুখের মাঝি? বাবা বলেছিল, তিতাস তার সব দুঃখ-কষ্ট মুছে দিবে। একমুঠো সুখ কুড়িয়ে বেঁধে দিবে তার শাড়ির আঁচলে। সেই সুখটুকু বিলাশ করতে করতেই কেটে যাবে তার বাকি জীবন। তিতাস, নির্মল এবং স্বচ্ছ সুখের ফেরিওয়ালা। এজন্য তার উচিত এই একগুঁয়ে, চঞ্চল, পাঁজি ছেলেটাকেই নিজের জীবনে ঠাঁই দেওয়া। আর যায় হোক, তিতাস তার জীবনে কখনোই ক্ষতির কারণ হবে না।বাবার বলা কথাগুলো স্মরণ করে ভোর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
তখন তিতাস বলল,

-” এত চাপা স্বভাবের হবেন না ভোর। কষ্টগুলোকে এভাবে হৃদয়বন্দি করে রাখবে না। এতে কষ্ট বাড়বে, বৈ কমবে না।
আর এখন তো আমি আছি, আমাকেও এ কষ্টের ভাগ নিতে
দিয়েন। তাছাড়া আজ আপনার বাবা মারা গেছেন, আপনি কাঁদছেন না কেন? কাদুঁন ভোর, মনপ্রাণ জুড়িয়ে ইচ্ছে মতো কাঁদুন। আমার বুকটা আপনার জন্য বরাদ্দ করা ভোর, এই বুকেই লুটিয়ে পড়ে কাদুঁন।আমি নাহয় চোখজোড়া বন্ধ করে রাখছি, কানে তুলো গুঁছে নিচ্ছি। আপনি না বলা অবধি এক চুলও নড়বো না আমি।তবুও আমার বুকে মুখ লুকিয়ে একটু হলেও কাঁদুন ভোর, একটু কাঁদুন।”

-”হসপিটালে যাবি না?”

-”হুম, কৌশলে ফিরে দিলেন তো। একদিন এই বুকটাই হবে আপনার একমাত্র আশ্রয়কেন্দ্র। একটু শান্তি খুঁজতে আপনি এই বুকে মাথা রাখবেন, কারণে অকারণে আমার বুকে মুখ লুকাবেন। সেদিন আসতে বেশি দেরি নেই, মিলিয়ে নিবেন।”

একথা বলে তিতাস উঠে রেডি হতে শুরু করল। হসপিটালে যাওয়ার সময় গেছে। সে রুম এলোমেলো করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজতে লাগল। চোখের সামনে থাকা জিনিস’ও সময় নিয়ে খুঁজে হয়রান হয়ে তারপর পেলো। তার গোছানো রুম পছন্দ নয়। গুছিয়ে রাখলে কিছুই খুঁজে পায় না। এখন যেমন পাচ্ছে না। সে বিরক্ত নিয়ে পরণের টি-শার্ট খুলে বিন ব্যাগের উপর ছুঁড়ে মারল। ওয়ার্ডড্রোপ ঘেটে ঘুটে পছন্দনীয় শার্ট বের করে পরিধান করল। তারপর আড়চোখে ভোরকে একবার দেখল, সে উঠে বেলকনিতে চলে গেছে। গ্রিল ধরে
চাঁদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মূলত সে পোশাক পরিবর্তন করতে দেখে গেছে। তিতাস তখন মনের সুখে সিটি বাজাতে বাজাতে তোয়ালে পরে প্যান্টটাও পরে নিলো। তার আবার বরাবরই লজ্জা-টজ্জা একটু কম। এজন্য নির্লজ্জ খেতাবও আছে। কেন, সেসব ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না।
তিতাস এবার হাতঘড়ি পরতে পরতে ভোরকে ডাকল। ভোর নিঃশব্দ এসে দাঁড়াতেই সে বলল,

-”আপনাকে এমনি এমনি বিয়ে করি নি আমি? এখন সেই উদ্দেশ্য পূরণ করার সময় এসে গেছে।”
-”মানে?”
-”সিনিয়র বউ বিয়ে করেছি, পেশায় আবার মস্তবড় ডাক্তার। আল্লাহর রহমতে টাকা-পয়সাও কম নেই, তাই এখন থেকে আমার হাত খরচ দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। এখন ঝটপট দুই হাজার টাকা দিন, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।”

ভোর বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই ছেলে বলে কি? এই জন্য তাকে বিয়ে করেছে! তাকে হাতখরচও দিতে হবে? শেষ পর্যন্ত এই ছিল তার ললাটে? ভোরকে অনড় দেখে দেখে, সে নিজেই ভোরের পার্স থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেল। দু’এক সেকেন্ডের মধ্যে পুনরায় ফিরে এসে ভোরের গালে শব্দ করে চুমু এঁকে দ্রুত পায়ে প্রস্থান করল। ভোর সেখানেই স্থির হয়ে
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই ঘটনা এত দ্রুত ঘটল না কিছু বলতে পারল, না বলতে দিলো। পরক্ষণেই তার ঠোঁটে ফুটল একচিলতে মিষ্টি হাসি। ছেলেটা এত চঞ্চল। সর্বদা দুষ্টু বুদ্ধি তার মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকে। নির্লজ্জ একটা। সে
লাজুক হেসে বসতে যাবে তখন তিতাস দরজার পাশে থেকে উঁকি দিয়ে বলল,
-”আর লাগবে?”
-”তুই এখনো যাস নি?”
-” না, দেখছিলাম আপনি কি করেন? ভেবেছিলাম রাগ টাগ
করবেন। ওমা, মেয়ে দেখি লজ্জা পাচ্ছে।”

ভোর এবার রেগে কুশন ছুঁড়ে মারার আগেই তিতাস সত্যি সত্যিই দৌড় দিলো৷ এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। ভোর ধীর পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তিতাস শব্দ করে ড্রাইভার চাচাকে ডেকে গাড়িতে গিয়ে বসল। পরক্ষণেই জানালা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়িয়ে টাটা দিলো। ভোর মুচকি হাসল। এই ছেলেটা আর কয়েকদিন পরে ডাক্তার হবে। তারও নাকি দায়িত্ব বহন করবে। অথচ এর বাচ্চামো স্বভাবই কাটল না। অথচ সে নাকি হবে পার্ফেক্ট জীবনসঙ্গী, এবং দায়িত্বশীল একজন ডাক্তার!
_________________

প্রায় সপ্তাহ তিনেক পরের ঘটনা,

রাত তখন সাড়ে তিনটে। চারদিকে সুনশান নিরাবতা।তিতাস
কেবল বাইরে থেকে আসল।পরীক্ষা চলছে বিধায় অকারণে
বাইরে যায় না সে। সর্বক্ষণ বই হাতেই বসে পড়ে। এত্ত পড়া, পড়ার ঠেলায় চোখে সর্ষে ফুল দেখে। ভোরও তাকে যতটুকু পারে সাহায্য করার চেষ্টা করে। তিতাস যখন পড়তে পড়তে ক্লাস হয়ে তখন সে ভোরের পেছনে লাগে। মেয়েটাকে প্রচন্ড জ্বালিয়ে, বিরক্ত করে, ধমক খেয়ে তারপর থামে। নতুবা ওর
ফাজলামি একের পর এক চলতেই থাকে। এটা খাবো, ওটা খাবো, পানি দেন, চুল টেনে দেন, কাঁধটা ম্যাসাজ করে দেন।
ভোর কখনো মুখ বুজে মেনে নেয় তো কখনো রেগে বাগানে গিয়ে বসে থাকে। কিন্তু আজ জুররি কাজের কথা বলে সে রাত সাড়ে এগারোটায় বাইরে বেরিয়েছিল। ফিরল কেবল। ওর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভোর ঘুমিয়ে পড়েছে। স্নিগ্ধ সরল অতি সাধারণ মায়াবী একখান মুখ তার। কি চমৎকার ভাবে গুছিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ’ই কেউ আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরাতে, ভোরের ঘুমটা হালকা হয়ে গেল। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে তিতাস তার গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। তার শরীরের সমস্ত ভার ভোরের উপর। ভোর হতভম্ব হয়ে কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ থেকে সমানে ঠেলতে শুরু করল। কিন্তু তার কাজের কাজ কিছুই হলো না।বরং কিছু একটা খেয়াল করে অবাক হলো।তিতাসের শরীর মৃদুভাবে কম্পিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের গলাতে পানি জাতীয় কিছু অনুভব করছে। সে পুনরায় তিতাসকে সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল। ফলস্বরূপ, ব্যর্থ হলো। ভোর তার শক্তি সঙ্গে না পেরে এবার মুখ বলল,

-”তিতাস! এই তিতাস, কি হয়েছে? বল আমাকে, কাঁদছিস কেন তুই?”

তিতাস জবাব দেওয়া তো দূর নড়ল না পর্যন্ত। তবে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ বেড়ে গেল। ভোরকে আরো শক্ত করে জড়িয়েও ধরল। তিতাসের শরীরে প্রচন্ড জ্বর, মেরুণ শার্টে কাঁদা মাটি।ভোর নিজেকে ছাড়াতে না পেরে এক হাত তিতাসের মাথায় আর অন্য হাত রাখল তার পিঠে। তারপর নরম সুরে বলল,

-” না বললে বুঝব কিভাবে? বল প্লিজ, আমি কাউকে বলব না। সত্যি বলছি, প্রমিস।”

-”আমি তার ক/লি/জা মেপে ইঞ্চি ইঞ্চি করে টু/ক/রো করে এসেছি। আগামীকাল গিয়ে কুকুরকে খাওয়াব। আমার সুখ রাজ্যে হাত বাড়ানোর শাস্তি সে পেয়েছে।”

To be continue………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here