#প্রিয়_তুই,১৩,১৪
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১৩
-”আমি তার ক/লি/জা মেপে ইঞ্চি ইঞ্চি করে টু/ক/রো করে এসেছি। আগামীকাল গিয়ে কুকুরকে খাওয়াব। আমার সুখ রাজ্যে হাত বাড়ানোর শাস্তি সে পেয়েছে।”
তিতাসের কথা শুনে ভোরের পুরো শরীর কেঁপে উঠল। মানে কি! কার কথা বলছে তিতাস? কাকে মে/রে/ছে সে। কে তার সুখ রাজ্য হাত বাড়িয়েছিল, আয়মান? তবে কি আয়মানকে মেরে দিয়েছে? হঠাৎ কী এমন হলো যে মেরে ফেলতে হলো?এসব ভেবে সে ছটফট করে উঠল।তিতাসের চুল টেনে পিঠে খ/ম/চি বসিয়েও কিছু হলো না। তিতাস কোনোভাবেই তাকে ছাড়ল না, বাহুডোর থেকে মুক্ত হতেও দিলো না। বরং অনড় হয়ে পড়ে পড়ল। কিন্তু তিতাসের অশ্রুতে ভোরের গ্রীবাদেশ ভিজে একাকার হয়ে গেল। ভোর আর বাঁধা দিলো না। বরং অনুভব করল নিঃশব্দে গড়িয়ে যাওয়া তিতাসের অশ্রুবিন্দু।ছেলেটা কাঁদছে! বোধহয় প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। নতুবা এমন করার ছেলে সে নয়। ভোর এবার তিতাসকে শান্ত হতে বলে আলতো করে পিঠে হাত রাখল। জ্বরে তিতাসের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। সত্যিই কাউকে খুন করেছে নাকি জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে? তার কার্যকলাপই উটকো, হতেও পারে।ভোর এবার নিজেকে সামলে চুপ হয়ে গেল। তিতাসের থেকে কথা বের করতে হলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। আস্তে ধীরে মাথা ঠান্ডা করে কথা বলতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ওকে স্থির দেখে তখন তিতাসই বলল,
-”সে আমার জাত শ/ত্রু। অথচ এই আমিই তাকে বুকে টেনে নিয়েছিলাম। কত সন্মান করতাম, ভালোবাসতাম। আমার খেয়ে আমার বুকেই ছুরি মারা, না? এজন্য তার বুক থেকেই আমি কলিজাখানা বের করে নিয়েছি।”
-” কি করেছে সে?”
-”অনেক কিছু।”
-”বল আমায়।”
তিতাস আর জবাব দিলো না। মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে রইল।
বাকি রাতটুকু না নিজে থেকে উঠল আর না ভোরকে উঠতে দিলো। ভোর ততক্ষণে হাজারটা প্রশ্নও করে ফেলেছে। তবুও তিতাস নিরুত্তর। ওভাবেই সময় গড়ালো, ঘন্টা কাটল। তাও তিতাস ভুলেও টু শব্দ উচ্চারণ করল না।একটা সময় জ্বরের ঘোরে শরীরের ভার রাখতে পারল না। নিজেই গড়িয়ে পড়ল বিছানার অপর পাশে। ভোর তড়িঘড়ি উঠে পানি এনে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করল। তিতাস তখন পুরো বেহুশ। অতঃপর বাকি রাতটুকু তিতাসের সেবা শুশ্রূষা করে পার করল ভোর। তবে মাথায় গেঁথে গেল তিতাসের বলা কথাগুলো। মনে রয়ে গেল অবাধ কৌতুহল। সকাল আটটার দিকে তিতাস হুড়হুম করে উঠে ওয়াশরুমে দৌড় দিলো। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে জলদি শার্ট প্যান্ট পরে দৌড়ে নিচে নামল। একগ্লাস জুস খেয়ে সিদ্ধ গোটা ডিম মুখে পুরে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে প্রস্থান করল। ওর মা চেঁচিয়ে পিছু ডাকলেন তবুও শুনল না। বরং
বেরিয়ে যেতে যেতে চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,
-”আমার হয়ে ভোরকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে দিও তো আম্মু। অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার, বলতে গেলে আরো দেরি হয়ে যাবে।”
একথা বলে সে বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুট লাগাল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে গেল। ওর মা ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার শ্বাস ফেললেন। মাঝে মাঝে বুঝেন না, ডাক্তারী পড়তে পড়তে ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি।না প্রচন্ড মানসিক চাপে এমন ভুলভাল কথাবার্তা বলে ফেলছে। নতুবা এমন ধরনের কথা কেউ কারো মাকে বলে?
ছেলের কথা উনি কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন। চাচী পরোটা ভাজতে ভাজতে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন। ভোর এক সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে রুমের দিকে পা বাড়াল।তিতাস
আসলেই বেহায়া। মাথায় বোধবুদ্ধিটুকুও নেই। এসব বলার মানে হয়! এজন্য ছোট বয়সের কাউকে বিয়ে করতে হয় না।
এরা পরিস্থিতি বুঝে না। ভোর তিতাসকে বকতে বকতে হঠাৎ তার গতরাতের কথা মনে হলো। কালবিলম্ব না করে ঝটপট
আয়মানকে কল দিলো। চারবারের বেলায় আয়মান রিসিভ করে বলল,
-”তুমি ঠিক আছো? হঠাৎ এত সকালে?”
-”আসলে তোমাকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছি৷ তাই অসময়ে কল দিলাম, আমি দুঃখিত।”
-”এই না, না, না, বরং আমি খুশি হয়েছি। তোমার যখন ইচ্ছে কল দিবা।”
-”আচ্ছা। ”
-”আজ হসপিটালে যাবে ভোর?”
-”আমি ছুটিতে আছি। আমার রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন তাই আর কি।”
-”আমি ভেবেছি তিতাস হয়তো জোর করে আঁটকে রেখেছে।
হসপিটালেও যেতে দিচ্ছে না। তারমানে হসপিটালের খবরও জানো না দেখছি। তিতাস এখন হসপিটালে গিয়ে নার্সদের সঙ্গে রাশলীলা চালায়। লাজ-লজ্জার বালাইও নেই, ছিঃ!”
-”হুম।”
ভোরের যা জানার জেনে দ্রুত কল কাটল। অহেতুক বকার ইচ্ছে তার নেই। তাছাড়া আয়মানের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত সে। ওর বাবা তাকে সবটা জানিয়েছেন। ভোর এবার চিন্তায় পড়ে গেল। আয়মান দিব্যি সুস্থ আছে, সব ঠিকঠাক আছে। বরং শুয়ে বসে শয়তানি বুদ্ধি পাকাচ্ছে। তাহলে তিতাস কার কথা বলল? কে তার জাত শত্রু? উফ, এসব জটলাতে তার মাথা ঝিমঝিম করছে। এখন তিতাস না আসা অবধি কিচ্ছু জানা যাবে না। সে বা তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেল? তবে কী সত্যি সত্যিই কারো কলিজা কুকুরকে খাওয়াতে গেল? তাছাড়া তার তো কোথাও যাওয়ার কথা না। গতরাতে খেতে বসে সেই বলেছে অনেক পড়া বাকি। সেগুলো কমপ্লিট করা লাগবে, বাজার টাজারে যেতে পারে না। হতে পারে, বাজারে যাওয়া ভয়ে পড়ার অজুহাত দেখিয়েছি। ফাঁকিবাজি করেও কী ভাবে ইন্টার্ণ অবধি এসেছে কে জানে। তখন নিচে থেকে শাশুড়ির ডাক শুনে ভোর সেদিকে পা বাড়াল। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেও গেল গতরাতে ভ/য়ং/ক/র সেই কথাটা।
তিতাস কাজ সেরে ঘন্টা দু’য়েক পরে শিষ বাজাতে বাজাতে বাসায় ফিরল। তার মন বেজায় খুশি। ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখে রোজা বসে টিভি দেখছে। এটা কেন জানি তার পছন্দ হলো না। সে বিনাবাক্য টিভি বন্ধ করে চলে গেল৷ রোজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বিরক্ত হয়ে পুনরায় টিভি চালু করল।এখন গোপাল ভাঁড়ের নতুন পর্ব হচ্ছে, তাকে দেখতেই হবে। নয়তো বুদ্ধি বাড়বে না। বড় হয়ে গোপাল ভাঁড়ের মতো বুদ্ধিমান হতে চায় সে। তারপর ছোট মিয়াকে কথায় কথায় বোকা বানিয়ে টাকা হাতাবে। সেই টাকা দিয়ে তার পা ঠিক করবে বাইরের দেশের বড় বড় ডাক্তারদের দেখিয়ে। তখন তাকে কেউ আর ল্যাং/রা বলতে পারবে না। এসব ভেবে সে হেসে টিভি দেখাতে মন দিলো। তখন তিতাস পুনরায় ফিরে এসে রোজার সামনে দু’টো চকলেট রেখে ‘খা টেপি’ বলে পা বাড়াল। রোজা চকলেট পেয়ে জবাব দিলো,” লাভ ইউ ছোট মিয়া।”
তিতাসের বাবা তখন বিপরীত পাশের সোফায় বসে পেপার পড়ছিলেন। উনি ছেলের কান্ডখানা দেখেও অতি শান্তভাবে বললেন,
-”আব্বু শুনে যাও।”
বাবার এমন আদুরের ডাকের কারণ তিতাসের অজানা নয়। তাই সে সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
-”পারব না। এবার আগে ভিজিট তারপর চিকিৎসা।”
-”তাহলে তোর একটা সিক্রেট ভোরকে বলে দিবো।”
-”বলেই দেখো। তোমার ফোন নং পাবলিক টয়লেটে,’এঞ্জেল পরী’ নামে লিখে আসব। সেই সঙ্গে নিচে ফাস্ট ব্রাকেট দিয়ে লিখে দিবো, ‘সু-প্রেমিকের সন্ধান চাই।”
-‘আমি তোর বাবা হই, বে/য়া/দ/ব।”
-”তো? এমন বাবা আমার দরকার নেই। আম্মুকে বলে বাবা চেঞ্জ করে আনব আমি।”
একথা বলে সে শিষ বাজাতে বাজাতে রুমে চলে গেল। আর ওর বাবা বসে কপাল চাপড়ালেন। মনে মনে দোয়া করলেন, এমন বে/য়া/রা ছেলে যেন কারো ঘরে জন্ম না হয়। নয়তো বাবারা জীবনেও সুখ শান্তি পাবে না। ছেলের জ্বালাতে জ্বলে পু/ড়ে ম/র/বে। তখন ভোর রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে হাত মুছে উনার সমস্যা জানতে চায়ল। সে বাসায় আছে, তাকে বললে
এতক্ষণে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু তিতাসের বাবা বলতে পারলেন না।কোষ্ঠকাঠিন্যের কথা পুত্রবধূকে জানাতে কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ করলেন। পূর্বের মেডিসিনের খোঁসাটাও খুঁজে পাচ্ছেন না। নিশ্চিত তিতাসের মা ফেলে দিয়েছে। এই মা ছেলে উনাকে আর শান্তি দিলো না। অন্তত খোঁসাটা পেলে পাঁজি বে/য়া/দ/ব/টাকে বলতে হতো না। আর না তার ভাব দেখতে হতো। ভোর উনাকে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর না পেয়ে
আন্দাজমতো ওষুধ লিখে দিলো। সঙ্গে বলে দিলো কাজ না হলে জানাতে। গ্যাস্ট্রিক বা অন্য সমস্যা হলে অনায়াসে বলে দিতেন। তাছাড়া সে শুনেছে উনার কোষ্ঠিকাঠিন্যের সমস্যা আছে। তাই গাঁইগুঁই করতে দেখে সেটা ভেবেই ওষুধের নাম লিখে দিয়েছে। দেখা যাক, কাজ হয় নাকি। তিতাসের বাবা
সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে সেটা নিয়ে চলে গেলেন। ওষুধের নামটা উনি এবার লকারে তুলে রাখবেন। যাতে কোনোভাবে আর না হারায়। ভোর উনাকে যেতে দেখে হেসে নিজেও গেল রুমের দিকে।তিতাস তখন শার্ট খুলে কানে ইয়ারফোন গুঁজে
গান শুনছে আর লিখছে। সম্ভবত রাতে যেগুলো পড়েছিল, সেগুলেই লিখছে। পরখ করে দেখছে মনে আছে নাকি জং ধরে পড়াগুলো মূর্ছা গেছে। না পুরোটা লিখতে পারল দেখে কলমখানা ছুঁড়ে মেরে উঠে দাঁড়াল। ভাবখানা এমন সে সব পারে। তখন ঘুরতে গিয়ে ভোরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বললেন,
-”আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। জেরা পরে আগে আমার সঙ্গে চলুন।”
-”কোথায়?”
-”ওয়াশরুমে।”
-” ওয়াশরুমে, কেন?
-”খুব তো নিজেকে বড় বড় জপ করে আমার কানের পোকা বের করে দিয়েছেন। এবার বড় হওয়ার সকল দায়িত্ব পালন করুন।”
-”কথা না পেঁচিয়ে সোজাসাপটা বল।”
-”আমাকে শ্যাম্পু করে দিবেন, চলুন। বিনিময়ে দশখানা চুমু উপহার দিবো। সেগুলো আপনি নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে, লজ্জায় লাল নীল হবেন। আর আমি দু’চোখ ভরে দেখব।”
-”চালাকি করে একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না। রাতে যেগুলো বললি সেকথা কি সত্যি?”
-”কী বলেছি মনে নাই। এখন মনে করিয়ে দেন।”
-”সে কে?”
-”সে কে আবার কী? কোন সে কে?”
-”তিতাস!”
-”আরে বাবা মনে না পড়লে কী করব?”
ভোর এবার রেগে দু’পা উঁচু করে তিতাসের গলা চেপে ধরল। এই ছেলে ইচ্ছে করে কথা বাড়াচ্ছে। যেন মূল টপিক এড়িয়ে যেতে পারে। তখন তিতাস হাট করে খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
–”আরে আরে বউ দরজাটা অন্তত বন্ধ করুন। নয়তো আমি লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারব না।”
ভোর এবার রাগান্বিত দৃষ্টি ছুঁড়ে চলেই যাচ্ছিল। কোনো কথা বলবে না সে। তখন তিতাস খপ তার হাত ধরল। ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে জবাব দিলো,
-”তার নাম নাহিদ হাসান।”
-”সত্যি মেরেছিস?”
-”হুম, আর সেটা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ।”
-”কেন? ”
-”কারণ সে ভোর চৌধুরীর অনাবৃত দেহখানা দেখে খায়েশ মিটাতে চেয়েছিল।”
To be continue…..!!
#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১৪
-”তার নাম নাহিদ হাসান।”
-”সত্যি মেরেছিস?”
-”হুম, আর সেটা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ।”
-”কেন? ”
-”কারণ সে ভোর চৌধুরীর অনাবৃত দেহখানা দেখে খায়েশ মিটাতে চেয়েছিল।”
স্বাভাবিকভাবে কথাটা বলে তিতাস গ্লাস থেকে পানি খেলো। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করে পেছনে ঘুরতেই ভোর তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তিতাস প্রচন্ড অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। মারের কারণ অজানা তার। তাছাড়া ভুল কিছু বলেও নি সে। ভোর যতটুকু জানতে
চেয়েছে তাই বলেছে, তাহলে? মারবে ভালো কথা, তাই বলে এত জোরে? ইস, গালটা জ্বলে যাচ্ছে। তিতাস করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই আরো একটা থাপ্পড় তার বাম গালে। অতঃপর বোবার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া নড়লোও না। যদি আবার মারে! ভোর এবার ওর দিকে তেড়ে চুল ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,
-”ওই বে/য়া/দ/ব তোকে একটা করে প্রশ্ন করব, তারপর তুই বলবি? তোর হুশে নেই, কেউ কিছু জানতে চায়লে তাকে পুরো কথা জানাতে হয়। তোর পুরো কথা শুনতে সারাজীবন এখানে দাঁড়িয়ে থাকব আমি? বল, তাড়াতাড়ি বলবি তুই। নয়তো দেখ তোর কী করি।”
-”আমার ভুল হয়েচে, আমাকে ক্ষমা করে দেন।”
কথাটা বলে তিতাস হো হো হেসে উঠল। ভোর আরো জোরে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে শুনতে পেলো তিতাসের মায়ের গলা। উনি নিচে থেকে কান্নারত কন্ঠে তিতাসকে ডাকছেন।বোধহয় কিছু হয়েছে। নয়তো এভাবে তো উনি ডাকেন না।তিতাস চট করে উঠে টি-শার্ট নিয়ে পরতে পরতে দৌড়ে নিচে গেল।ভোর
তার পিছনে ছুটল। তিতাসের আম্মু কেঁদে কেঁদে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলছেন। চাচী এবং রোজা তৈরি কোথাও যাওয়ার জন্য। ভোর ওর শাশুড়ীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল, পিয়াসের বন্ধু মারা গেছে। উনারা ওখানেই যাচ্ছেন।
পিয়াস মা/রা/ যাওয়ার পর ওর কোনো বন্ধু আর আসত না। একদিন হঠাৎ এই ছেলেটা এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড কেঁদেছিল। কারণ পিয়াসকে সে খুব ভালোবাসত। একসঙ্গে ওরা বড় হয়েছে, পিয়াসের স্কুল লাইফের বন্ধু সে। কতবার ছেলেটাকে নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। কতবার সে
ঈদে এসে সেলামী নিয়ে গেছে। উনি মা, উনি বোঝেন সন্তান হারানোর ব্যথা। উনি কাঁদতে কাঁদতে এসব বলে ভোরকেও তৈরি হয়ে নিতে বললেন। তারও যাওয়া উচিত। ভোর সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে তিতাসের দিকে তাকিয়ে রুমে গেল।তবে তিতাস আজ আর কিছু বলল না। বরং নিজে ঝটপট তৈরি হয়ে সবার আগেই নিচে নামল। ওর বাবা অফিসের মিটিংয়ে ব্যস্ত। ফোনটাও সাইলেন্ট বোধহয়। এজন্য সে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো।
তারপর সকলেই গাড়িতে উঠে কুমিল্লার পথে রওনা দিলো। কারণ ছেলেটার বাসা কুমিল্লা। তিতাস গাড়ি চালাচ্ছে ভোর তার পাশের সিটে। পেছনে মা, চাচী এবং রোজা বসে আছে।
সকলের মন ভার। তিতাসের মা একটু বেশিই আবেগী। উনি
নীরবে কাঁদছেন। পিয়াস নেই, ওর বন্ধুদের দেখলে উনি আর কষ্ট চেপে রাখতে পারেন না। কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এজন্য তিতাস উনাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেছে।আর পিয়াসের বন্ধুরাও বুঝে স্বাভাবিকভাবে সেটা মেনে নিয়েছে।
কারণ উনারাও ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখেছিল।সঙ্গে বুঝে ছিল, একজন মায়ের কষ্ট।
তিতাস একহাতে ড্রাইভ করে অন্য হাত ভোরের হাতের উপর রাখল। ভোর তখন নিজ ভাবনায় মগ্ন। খুব আফসোস হচ্ছে ওর। আর একটুর জন্য তিতাস পিছলে গেল, নয়তো পুরো ঘটনা তখন জেনেই ছাড়ত।হোক জোর দেখিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে। কিন্তু হলো কই!
তখন কারো স্পর্শে সে পাশ ফিরে তাকাল। তিতাসের হাতের মুঠোয় তার হাতখানা বন্দি। শক্তভাবে ধরে আছে তার হাত।
অথচ তার ভাবখানা এমন যেন সে কিচ্ছু জানে না, অতীবও ভদ্র ছেলে। ভোর তিতাসের মুখভঙ্গি দেখে হাতটা ছাড়ানোর বৃর্থা চেষ্টা করল না। কারণ সে অবগত, শক্তি প্রয়োগ করেও লাভ নেই। তিতাস কিছুতেই তার হাত ছাড়বে না। সে ভালো করে পরখ করেছে, তিতাস নিজে থেকে যে কাজ ধরে সেটা সম্পূর্ণ করে তবেই ছাড়ে। হোক সেটা হাত ধরা, জড়িয়ে ধরা, অথবা ওদের বিয়ে। এই তিন কাজই সে মর্জিমতো করেছে।
না কারো বারণ শুনেছে আর না মর্জি বদলিয়েছে। বরং যে বারণ করবে তার সন্মানের দফারফা করে ছেড়েছে। রের্কড করা হিসাব এসব। এরচেয়ে চুপ থাকায় শ্রেয়। তাছাড়া হাত ধরেছে ধুরুক, ভেঙ্গে বা কেটে তো নিয়ে যাচ্ছে না। সে নিজে মনে মনে এসব ভেবে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল।দুরন্ত গতিতে পেছনে ফেলা আসা গাছগুলোকেও দেখল। বুনো ফুলের রং গুনলো। স্বচ্ছ আকাশে পাখিদের উড়াউড়ি দেখে মৃদু হাসল।
আর ওকে দেখে তিতাস হাসল। শব্দহীন অদৃশ্য সেই হাসি।
বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর দু’টো বেজে সাতচল্লিশ। আজকে দুপুরে কারো খাওয়া হয় নি। খাওয়ার আগেই দুঃসংবাদটা শুনে বেরিয়ে পড়েছে। এজন্য তিতাস ভালো মানের একটা রেস্তোরার সামনে গাড়িটা দাঁড় করাল। এখানে সে আগেও এসেছে, খেয়েছেও ।খাবার মোটামুটি ভালোই। তাছাড়া ওর
মাথা ব্যথা করছে কিছু খেয়ে ওষুধ খাওয়া দরকার। নয়তো
দাঁড়িয়ে থাকাও দুষ্কর হয়ে যাবে। তারপর সে নিজে পেটপুরে খেয়ে বাকিদেরও খেতে বাধ্য করল। আপনজনদের মৃ/ত্যু/র খবর শুনে গলা দিয়ে খাবার নামবে না। তবুও সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে এনার্জির প্রয়োজন। নয়তো এত জার্নি করে গিয়ে ওরাই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাছাড়া ওর মা কয়েক দিন হলো হসপিটাল থেকে ফিরেছে। আর এখনই অনিয়ম করা ঠিক হবে না। ছোট্ট রোজাও খুধা সহ্য করতে পারে না।
লজ্জায় মুখে কিছু না বললেও কেঁদে দিবো। এটা ওর পুরনো অভ্যাস। তারপর তিতাস সবাইকে গাড়িতে বসিয়ে ওর ওষুধ খেয়ে, কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে নিলো। গাড়ির দরজা খুলে বসতে গিয়ে দেখে ড্রাইভিং সিটে ভোর বসে আছে। ওর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। সে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি মেলে বিপরীতে পাশে গিয়ে বসল। তারপর শরীরটা এলিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দিলো সিটে। ওর চোখজোড়া খুলে রাখা দায় হয়ে যাচ্ছি। এখন দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম করলে ঠিক হয়ে যাবে। ভোর আপনমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তবে মনে তার নানান ভাবনা। চোখে একরাশ কৌতুহল।
এরপর যথাসময়ে ওরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাল।একটু গ্রামের
ভেতরে বাড়িটা। এজন্যই জিজ্ঞাসা করতে আসতে আসতেই সময় লেগে গেছে। বাড়িভর্তি মানুষ, চারিদিকে আপনজনের কান্নার আহাজারি। তিতাসের মা চাচী ভেতরে ঢুকে গেলেন। ভোর আর তিতাস গাড়িটা পার্ক করে বড় উঠানে দাঁড়িয়েছে। এখানে পুলিশও দেখা যাচ্ছে। হয়তো কেবল আসল। গ্রামের মানুষজন পুলিশকে দেখে একটু দূরে গিয়েই দাঁড়াল। তখন দু’জন পুলিশ একটা ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন।
পাশের পুলিশটা সেগুলো লিখতে লাগলেন। হয়তো তদন্তের স্বার্থে। ভোর যখন এক পা বাড়াবে তখন পুলিশ ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করে বসল,
-”ছেলেটার নাম কি?”
-”নাহিদ হাসান।”
-”আপনি নাহিদের কে হন?”
-”চাচা।”
-”নাহিদের কী স্বাভাবিক মৃত্যু?”
-” না, কেউ তার ক/লি/জা বের করে নিয়েছে।”
সঙ্গে সঙ্গে ভোরের পাজোড়া থেমে গেল। সে ঘাড়টা ঘুরিয়ে
বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তিতাসের দিকে তাকাল। তিতাসের দৃষ্টি তখন তার দিকেই নিবদ্ধ, ঠোঁটে কুটিল হাসি। সে যেন জানত ভোর বিষ্মিত দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকাবে। ভোরকে তাকাতে দেখে তিতাস শার্টের কলার কিঞ্চিৎ পেছনে ঠেলে দিলো। সে
অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে এখনো হেসেই যাচ্ছে। আর সেই চাহনি যেন ভোরকে চিৎকার করে বলছে,
-”ইয়েস, আই এম।”
To be continue………..!!