#আরোও_একবার_বসন্ত,১২,১৩
#১২তম_পর্ব
বুক থেকে অচিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো প্রিয়ন্তীর। সব শেষে নিজের দোষটার মাত্রা সর্বাধিক লাগছিলো। শিপন ঠিক ই বলতো, তার জন্য হয়তো ছুটকির জীবনে সুখ আসবে না।
– আপু, আসবো?
কথাটা কানে আসতেই পেছনে ফিরে প্রিয়ু। দরজার ওপারে তখন শিপন দাঁড়িয়ে আছে। শিপনের সাথে প্রিয়ন্তীর কখনোই বনিবনা হয় না। পরপর হবার কারণে শিপনের সাথে তার ঝামেলা লেগেই থাকে, এটা ছোট বেলা থেকেই। আর শাহাদাত সাহেব ও ছেলে থেকে মেয়েদের অধিক ভালোবাসতেন বলে তার ধারণা। এখনোও নিশ্চিত কথা শুনাতেই এসেছে। কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি ফুটিয়ে আবারো শুণ্য দৃষ্টিতে ল্যাম্পপোস্টের আলো আধারে ঢাকা ব্যস্ত শহরের দিকে তাকায় প্রিয়ন্তী। ধীর কন্ঠে সে বলে,
– আয়, আমি জানি কি বলতে পারে এসেছিস। জানি দোষটা আমার ছিলো। ওখানে পায়ে বাধিয়ে ঝগড়া না করলেও না পারতাম। কিন্তু নিজেকে থামাতে পারি নি। আমার বিবাহিত জীবন দিয়ে তিনি আমার বোনকে জাজ করছিলেন৷ আমি কিছুতেই সেটা মানতে পারি নি৷ কিভাবে মানবো বল, নিজ হাতে ওকে মানুষ করেছি
– তোর দোষ ছিলো না আপু। যা করেছিস, একদম ঠিক করেছিস৷
শিপনের কথাটা শুনে অবাক নয়নে তার দিকে তাকায় প্রিয়ন্তী। শিপন এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথা নিচু, কন্ঠ কাঁপছে। হয়তো চোখেও নোনাজল ভিড় করেছে। কিন্তু প্রিয়ন্তীকে সেটা দেখাতে নারাজ সে। নিজের ভাইকে কখনো বুঝে উঠতে পারে না প্রিয়ন্তী। ছেলেটা তার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করবে, আঘাত করে কথা বলবে কিন্তু অন্য কেউ তাকে আঘাত করলে একদম সহ্য করতে পারে না। তাইতো আজ রাফিজা বেগমের কথার প্রতিবাদ ও শক্ত কন্ঠে করেছিলো। প্রিয়ন্তীর এখনো মনে রয়েছে যখন ইরফান তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিলো। শিপন ইরফানের অফিসে গিয়ে তাকে মেরে এসেছিলো। তার বিনিময়ে অবশ্য বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছিলো শাহাদাত সাহেবকে। মলিন হাসিটা ধীরে ধীরে প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো প্রিয়ন্তীর। আকুতিভরা কন্ঠে বললো,
– ভেতরে আয় না, গল্প করি!
শিপন ভেতরে এসে চেয়ার টেনে বসলো। প্রিয়ন্তী বারান্দা থেকে ঘরে এসে বসলো। টিটকারি কন্ঠে বললো,
– আজ আমার সাথে ঝগড়া করবি না?
– আমি কি শুধু ঝগড়া করি? তোর ভুলগুলো দেখিয়ে দি খালি। তুই তো আমার কথা শুনিস না। কত বলেছিলাম, ওই ইরফানকে বিয়ে করিস না। প্রেমে অন্ধ হয়ে ছিলি।
– আসলেই অন্ধ ছিলাম। প্রেম জিনিসটাই এমন।
– ছাতা
– হাহাহাহা, আসলেই ছাতা। ছুটকি কি করছে?
– স্নেহা খাওয়িয়ে দিয়েছে। চুপ করে আছে। ছেলেটাকে কি সত্যি সে ভালোবাসে?
– হুম, আমাকে বলেছিলো। কি করবো বল তো? মেয়েটার প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। আজকে দুপুরেই ছেলেটার সাথে কথা হয়েছে আমার। খুব ভালো ছেলে৷ স্ট্রেট কাট কথা বলে।
– বড় ভাইটা, আরাফাত ভাই। উনিও বেশ ভালো মানুষ। কিন্তু আন্টিটা জানে কেমন। আর তুই ও, যখন বলেছিস ই তুই ডিভোর্সি এটাও বলে দিতি ওই জানোয়ারটা কেমন ছিলো! তাহলে তো আর কথাই আগাতো না।
শিপনের অভিযোগের স্বরের কথাটা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো প্রিয়ন্তী। তারপর হাসি থামিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,
– তাতে কি কোনো লাভ হতো? মানুষটার সাথে আমার সম্পর্কই নেই। তাকে খারাপ প্রমাণ করে কি কোনো মহাভারত শুদ্ধ হয়ে যেতো? নাহ হতো না। আর বাহিরের মানুষের কাছে শুধু সিম্প্যাথির জন্য জীবনের কিচ্ছাটা বলাটা আমার যৌক্তিক মনে হয় না।
– এখনো ভালোবাসিস তাকে?
– না, ভালোবাসি না। আবার ঘৃণাও করি না। আমি সুখে নেই বলে যে সেও সুখে থাকতে পারবে না এটা তো কোনো নিয়ম হলো না। সে সুখে আছে, থাকুক না। বউ, বাচ্চা নিয়ে সে সুখে আছে। হয়তো আমি তাকে সুখ দিতে পারি নি। বিগত চার বছর ধরে ওই মেয়েটা তো ঠিকই তার সাথে সংসার করছে। বাচ্চাটাও বেশ সুন্দর জানিস। আমার বাচ্চাটা থাকলেও বুঝি এমন হতো। আমার একটা আক্ষেপ জানিস? আমি কি মানুষটা খুব খারাপ? এক চিলতে সুখ কেনো আমার ঝুলিতে আসে না? আল্লাহ আমার বাবাটাকেও নিয়ে গেলো। বাবা থাকতে না এতো প্রেসার লাগতো না জানিস!
প্রিয়ন্তীর গলা কাঁপছে। বুকের মাঝে জমানো কষ্টগুলো গলায় এসে ভিড় করেছে। হয়তো চোখেও হামলা করবে। শিপন প্রিয়ন্তীর আড়ালে তার চোখ মুছে নিলো। প্রিয়ন্তী জিদ্দি, একটু ঠোঁটকাটা, কাউকে পরোয়া করে না কিন্তু মানুষের দিক থেকে তার কোনো অংশে কমতি নেই। প্রিয়ন্তীর ভাগ্যটা এমন কেনো এটা শিপন নিজেও বুঝে পায় না। হয়তো সবার কপালে সুখটা ঠিক লেখা থাকে না।
__________________________________________________________________
সকাল ১১টা,
বটতলায় বসে রয়েছে আরশাদ। অপেক্ষা রুপন্তীর ক্লাস শেষ হবার। মেয়েটা সাতদিন যাবত তার সাথে কথা বলে না। ফোন দিলে কেটে দেয়। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করে রাখতে পারছে না আরশাদ। তাই একেবারে রুপন্তীর কলেজে এসে হাজির হয়েছে সে। বিগত একঘন্টা যাবৎ সে বসে রয়েছে। অপেক্ষার প্রহর যেনো কাটতেই চাচ্ছে না। একটা ঘন্টা দশ ঘন্টার মতো মনে হচ্ছে আরশাদের কাছে। মোবাইলে গেম খেলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না তার। একটু পর পর উঠে হাটছে, তারপর বসে পড়ছে, আবার হাটছে। হঠাৎ কলেজের মেইন বিল্ডিং থেকে রুপন্তীকে বের হতে দেখতে পায় আরশাদ। সাতটা দিনে বেশ বদলে গেছে রুপন্তী। চোখজোড়া গর্তে চলে গেছে, মুখখানা শুকনো। প্রান্তবন্ত মেয়েটি যেনো কোথাও হারিয়ে গেছে। দৌড়ে তার কাছে চলে যায় আরশাদ। আরশাদকে দেখেও না দেখার ভান করে রুপন্তী৷ রুপন্তীর এমন ব্যবহারে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আরশাদের। রুপন্তী তাকে উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে হাত জোড়া টেনে ধরে আরশাদ। শক্ত হাতে রুপন্তীর হাত ধরে হাটা শুরু করে সে। রুপন্তী চাইলেও এ বাধন থেকে নিজেকে সারাতে পারে না। আরশাদের উম্মাদনা যেনো বেড়ে গিয়েছে। রুপন্তীকে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে আসে সে। এই জায়গাটা সাধারণত জনশুন্য থাকে অধিকাংশ সময়। একটা গাছের চেপে রুপন্তীকে চেপে ধরে সে। চোখজোড়া লাল হয়ে রয়েছে তার। রুপন্তী কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়। আরশাদের রাগ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে তার। ক্ষুদ্ধ কন্ঠে আরশাদ বলে,
– আমাকে মানুষ মনে হয় না তোর? সাতটা দিন চাতক পাখির মতো তোর জন্য অপেক্ষা করছি। ফোনের পর দিয়েছি। কেটে দিস, এখন আবার পার্ট দেখাচ্ছিস। কি মনে হয় আমাকে?
– ছাড়ো আরশাদ, সিন ক্রিয়েট করো না
– সিন ক্রিয়েট মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসাকে? রুপু তোমার তো অজানা নয়। তুমি আমার মনের খোরাক। এমন নেশা যা আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে। তবুও কেনো এমন করছো।
রুপন্তীর কাধে মাথা ঠেকিয়ে কথাটা বলে আরশাদ। আরশাদের কথাটা বুকে তীরের মতো লাগলো রুপন্তীর। সে চাইলেও লোকটা থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে না। এই সাতটা দিন তারও বেশ কষ্ট হয়েছে। এই পাগল লোকটার উম্মাদনায় আসক্ত হয়ে গিয়েছে সে। তা অস্বীকার করার উপায় নেই রুপন্তীর। কিন্তু তাদের পথ যে আলাদা। শুধু শুধু মায়া জড়িয়ে কি লাভ! ধীর কন্ঠে বলে,
– আলাদা তো হতেই হবে। তাহলে দেরী করে কি হবে? আমাদের মাঝে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
– কে বলেছে?
– আরাফাত ভাই। তোমার মায়ের আমার পরিবারে ডিভোর্স হওয়াতে আপত্তি রয়েছে। আর আমিও চাই না, আমার বোনকে মাথা নিচু করে থাকতে হোক। তিনি বুবুকে অনেক কথা বলেছে। আমার বুবুর কি দোষ বলো? সে কি ইচ্ছে করে ডিভোর্স নিয়েছিলো? আর সেদিন যা হয়েছে তাতে তোমার আম্মু কখনোই আমাকে পছন্দ করবেন না তাই আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে।
রুপন্তী গড়গড় করে কথাগুলো বলে দিলো। আরশাদ চুপ করে কথাগুলো শুনলো। এবার ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
– শেষ?
– হুম?
– যা বলার শেষ হয়েছে?
– হুম
– এবার আমার কথা কান দিয়ে শুনো। আর মাথায় সেট করে ফেলো। বিয়ে তো তোমার আমার সাথে হবে, দরকার হলে আমি আমার মা কে নিজে আনাবো তোমার বাসায় সম্বন্ধ নিয়ে।
– কিভাবে?
– সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।
বাঁকা হাসি দিয়ে কথাটা বললো আরশাদ। লোকটা আস্ত উম্মাদ, তার মাথায় যে কি চলে এটা কখনোই আন্দাজ করতে পারে না রুপন্তী। না জানি কি প্যাঁচ কষছে সে। কি করবে আরশাদ!
থানায় অন্যমনস্ক হয়ে বসে রয়েছে আরাফাত। আজকাল অবাধ্য মনটা কিছুতেই স্থির থাকে না। ছুক ছুক করে অভদ্রের মতো। শুধু নিষেধ উপেক্ষা করে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে চিন্তা করে। প্রিয়ন্তীর অতীর জানার জেদ করে বসে রয়েছে সে। মস্তিষ্ক বারবার বুঝাচ্ছে, যে নারীর সাথে তার কখনোই পথ মিলে না তাকে নিয়ে ভেবে কি হবে! একে তো সে তার থেকে বয়সে বড়; উপরে ডিভোর্সি। পুরুষ যদি কোনো নারী থেকে পনেরো বছর বড় ও হয় তাতেও আপত্তি থাকে না। কিন্তু নারী যদি একটা বছর বড় হয় তাহলে সমাজের চোখে বেমানান হয়ে উঠে। আবার কোনো পুরুষের দুটো ডিভোর্স থাকলে এতো যায় আসে না যতটা কোনো নারীর বেলাতে হয়। ইকুয়ালিটির পতাকা যতই সমাজ নাড়ুক, ইকুয়ালিটি কি সত্যি স্থাপন করা হয়েছে সমাজে! আরাফাত ও এই সমাজেই বেড়ে উঠেছে। সমাজকে উপেক্ষা করলেও তার পরিবারকে সে উপেক্ষা করার মতো জোর পাচ্ছে না সে। আর প্রিয়ন্তীও কি তাকে মেনে নিবে। প্রিয়ন্তীর মনে কি তার অতীত এখনো বিস্তার করে আছে! প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। তাই মন এবং মস্তিষ্কের তর্কে সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। টেবিলে পড়ে থাকা কলমটা নাড়াতে থাকে আরাফাত। তার মন কাজে বসছে না আজ। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলে চিন্তায় ছেদ ঘটে আরাফাতের। ফোনের স্ক্রিনে চোখ পড়তেই দেখে………………….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি
#আরোও_একবার_বসন্ত
#১৩তম_পর্ব
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলে চিন্তায় ছেদ ঘটে আরাফাতের। ফোনের স্ক্রিনে চোখ পড়তেই দেখে একটি নাম ভেসে উঠেছে।
“প্রিয়ন্তী”
নামটি কখনো এই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে এটা কল্পনাতীত আরাফাতের জন্য। নাম্বারটি সেভ করেছিলো দু মাস আগে। কখনো নাম্বারটিতে ডায়াল করা হয় নি। মনের মাঝে একটা দ্বিধা কাজ করতো৷ মেয়েদের সাথে কখনোই কথা বলা হয় না আরাফাতের। কি বলতে কি বলবে বুঝে উঠে না। তাই নিজ থেকে কখনোই প্রিয়ন্তীকে ফোন করা হয় নি। সেদিনের ঘটনার পর ভেবেছিলো নাম্বারটা ডিলেট করে দিবে। কিন্তু মন সায় দেয় নি। তাই আর ডিলেট করা হয় নি। আজ সেই নাম্বারটি তার ফোনের জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো। রিসিভ করে কি কথা বলবে সেটাই বুঝে উঠছে না আরাফাত। ফোনটা কেটে গেলে ভেবেছিলো যাক বাঁচা গেলো। আর কথা বলতে হবে না। কিন্তু সেই চিন্তার গুড়েবালি। নতুন উদ্যোমে আবারো ফোনটা বেজে উঠলো৷ নিজেকে শান্ত করে ফোনটা রিসিভ করলো আরাফাত। ফোন রিসিভ করতেই একটি মিষ্টি কন্ঠ কানে ভেসে আসে।
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম সালাম, কে বলছেন?
– আমি প্রিয়ন্তী৷ ফ্রি আছেন?
– জ্বী না, থানায় আছি। কাজ করছি।
– ওহ! আচ্ছা কখন ফ্রি হবেন?
– জানি না। ডিউটির মা বাপ নেই। কখন ফ্রি হবো জানা নেই।
– দশ মিনিট কথা বলবো। দশ মিনিট ও বের করতে পারবেন না?
– বলতে পারছি না
– আপনি আমার সাথে দেখা করবেন নাকি আমি থানায় আসবো? মিরপুর মডেল থানাই তো! আমি আসছি। আপনার সময় বের করা লাগবে না।
প্রিয়ন্তীর এমন ধারা কথা শুনে বেকুব হয়ে যায় আরাফাত। সে সত্যিই চায় না প্রিয়ন্তীর মুখোমুখি হতে। মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে যা চৌম্বকের মতো তাকে আকর্ষণ করে৷ মেয়েটার প্রতি সে দূর্বল হচ্ছে। এবং সেটা মাত্রাতিরিক্ত। ফেসবুকের সার্চ লিষ্ট দেখলে সবার উপরে “প্রিয়ন্তী আহমদ” নামটি দেখা যাবে। কিন্তু কখনোই আইডিটিকে ম্যাসেজ করা হয় না আরাফাতের। আরাফাতের ধারণা তারা দুজন রেললাইনের মতো। একসাথে চলা সম্ভব কিন্তু একত্রিত হওয়াটা অবাস্তব। তাদের মাঝে সমাজের একটি অদৃশ্য দেওয়াল৷ রয়েছে। আর এখন সেই দেওয়ালটি প্রিয়ন্তীর অতীতের জন্য আরোও গাঢ় হয়ে উঠেছে। তাই কাজের অজুহাতে এড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই মহিলা তো থানায় এসে উঠবে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,
– না না, আসা লাগবে না। কোথায় দেখা করবেন?
– এবার লাইনে আসছেন
– লাইনে আসার কি আছে? ব্যাস্ততা থাকতেই পারে৷
– হাহ, আচ্ছা শোনেন মিরপুর ১ এর ক্যাফেতে আসেন। আমি চারটার মধ্যেই ওখানে পৌছে যাবো। রাখছি
বলেই খট করে ফোনটা রেখে দিলো প্রিয়ন্তী। আরাফাত কিছুক্ষণ ফোনের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটি অনেকটা ঝড়ো হাওয়ার মতো৷ কয়েক মিনিটে সব এলোমেলো করে দিয়ে চলে যায়। না জানি আজ কিসের জন্য ডেকেছে। কি এমন জরুরি কথা, যা আজ ই বলতে হবে। আর সেটা দশ মিনিটেই শেষ হয়ে যাবে। উফফফ, এমনেই ব্রেইনের নিউরণগুলো এলোমেলো হয়ে ছিলো। এখন যেনো আরো প্যাচ লেগে গেলো। আরাফাতের অবাধ্য মনটা এখন কাজ থেকে একশত মিটার দূরে চলে গেলো। শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, কখন চারটা বাজবে
___________________________________________________________________________________________________
বিকাল সাড়ে চারটা,
বিগত একঘন্টা যাবৎ কফি হাতে ক্যাফেতে বসে রয়েছে আরাফাত। অপেক্ষা প্রিয়ন্তীর আগমনের। চারটায় তার আসার কথা। কিন্তু বান্দির কোনো চিহ্নই নেই। উত্তেজনায় সাড়ে তিনটায় এসে বসে রয়েছে আরাফাত। নিজের ইম্ম্যাচুরিটির জন্য নিজেকে কঠোর ভাবে বকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ নেই। এ যাবৎ ছ কাপ কফি তার ওর্ডার করা হয়ে গেছে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর আসার নাম নেই। মনে মনে বলতে লাগলো,
” আয় আরোও, মিথ্যে কথা বলে ছুটি নিয়ে এসেছিস। কিন্তু ওই মহিলার কি কোনো খোঁজ আছে? নেই। আসবেও না। ছাগল একটা। কেনো আসতে গেলাম?”
নিজেকে কঠোরভাবে যখন শাসন করে যাচ্ছিলো তখনই একটি হাফানো কন্ঠ কানে আসে আরাফাতের।
– সরি, অনেকক্ষন বসিয়ে রেখেছি। আসলে একটা প্যাসেন্ট চলে এসেছিলো।
মাথা তুলতেই দেখে হাফাতে হাফাতে প্রিয়ন্তী তার টেবিলের কাছে এসেছে। মাজা অবধি ঢেউ চুলগুলো মুখের উপর এলোমেলো হয়ে রয়েছে। একটা নীল লং কুর্তি এবং জিন্স পড়ে রয়েছে মেয়েটি। উড়নাটা গলায় স্কার্ফের মতো ঝুলিয়ে রেখেছে। চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া এবং ঠোঁটে মিষ্টি গোলাপি লিপস্টিক৷ কি মায়াবী লাগছে মেয়েটিকে! আরাফাত কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তীকে দেখেই যাচ্ছিলো। তার চোখের ক্ষুধা মিটাচ্ছিলো সে। মন বারবার একটা কথাই বলছিলো,
” কি হবে একটিবার সাহস করলে! কি হবে একটিবার হাতখানা ধরলে! মন তো বয়স, ধর্ম, বর্ণ বুঝে না। মন শুধু অনুভূতি বুঝে। না হয় থাকলো তাদের বয়সের তফাৎ! না হয় থাকলো তাদের মাঝে কমতি। ভালোবাসা তো বয়স দেখে হয় না। না দেখে অপরমানুষটি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত। শুধু দেখে মানুষটি মনের মতো কি না। কি হবে একটিবার ভালোবাসলে! কি হবে আরোও একবার বসন্ত আসলে! ”
হঠাৎ আরাফাত খেয়াল করলো সে কি অবাস্তব জিনিস ভাবছে! সে অনুভব হলো তার হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছে। সে কি ভালোবেসে ফেলেছে প্রিয়ন্তীকে! তার মনের দোয়ারে কি তবে প্রিয়ন্তী নামক নারীটি নগ্ন পায়ে প্রবেশ করেছে! তার উম্মুক্ত হৃদয় কি তভে পিয়ন্তী নামক চোরাবালিতে আটকা পড়ে গিয়েছে!
– ইজ এনিথিং রং? আরাফাত সাহেব? আরাফাত সাহেব!
প্রিয়ন্তীর তুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে আরাফাতের। প্রিয়ন্তী ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি ভাবছিলেন? কোনো সমস্যা?
– সমস্যা তো বটেই। কিন্তু সমস্যার সমাধান পাচ্ছি না।
– কি সমস্যা?
– বললে কি হবে?
– চেষ্টা করে দেখতেই পারি।
– সমস্যা বলছে সমস্যার সমাধান করবে!
– জ্বী?
– বুঝবেন না, কেনো ডেকেছেন! কি এমন জরুরি তরফ সেটা বলুন
– আপনার সাহায্য চাই।
– কোন বিষয়ে?
– আরশাদ এবং রুপন্তীর বিষয়ে। আমি চাই আরশাদ এবং রুপন্তীর বিয়েটা হোক। তার জন্য যদি আপনার মার কাছে ক্ষমা চাইতে হয় আমি রাজি তাতে।
খুব স্বাভাবিকভাবে কোনো ভনিতা ছাড়াই কথাটা বললো প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তীর দৃষ্টি উৎসুক হয়ে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আরাফাত নিশ্চুপ দৃষ্টিতে প্রিয়ন্তীর চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটির সাথে তার দেখা খুব বেশি হয় নি। তবে যখনই দেখা হয়েছে তখনই মেয়েটিকে রুদ্ররুপেই দেখে এসেছে আরাফাত। দমে যাবার মতো মেয়ে মোটেই প্রিয়ন্তী নয়। কিন্তু আজ মেয়েটির কোনো দোষ না থাকতেও সে রাফিজা বেগমের কাছে ক্ষমা চাইতে রাজী। আরাফাতের খারাপ লাগছে। মনে অপরাধবোধ কাজ করছে। গলায় কথা আটকে আসছে। নিজেকে যথাযথ শান্ত রেখে ধীর কন্ঠে বললো,
….………………………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি