আরোও_একবার_বসন্ত,১৮,১৯

0
388

#আরোও_একবার_বসন্ত,১৮,১৯

#১৮তম_পর্ব

বাসায় ঢুকতেই আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলো আরাফাতের। বাসায় তখন মানুষের অভাব নেই। মামা-খালা মিলে একাকার অবস্থা। আরাফাতের বুঝতে বাকি রইলো না তাদের কে ডেকে নিয়ে এসেছে! বসার ঘরে তার নানাবাড়ির পঙ্গপাল জড় হয়ে আছে। আরাফাতের জন্যই যেনো তারা অপেক্ষা করছিলেন। প্রিয়ন্তী বাসায় ডুকতেই সবার নজর তার দিকে ঘুরে যায়। এই পঙ্গপালের কিছু মানুষকে সেদিন নিজের বাসায় দেখেছিলো প্রিয়ন্তী। আরাফাতের নানাবাড়ি যে মাশাআল্লাহ অনেক বড় সেটা বুঝতে বাকি রইলো না প্রিয়ুর। মোটামোটি পুরো পাড়া সমান লোক এসে হাজির হয়েছে। বাসায় আসতে আসতে আরাফাত তাকে তাদের সম্পর্কে হালকা ধারণা দিয়েছিলো, রাফিজা বেগমেরা মোট ছয় ভাই বোন। দুই ভাই এবং চার বোন। মামারা মোটামোটি সামলানোর মতো, বিশেষ করে বড় মামা। কিন্তু খালারা একেক জন একেকটি পিস। আর সবাই আশেপাশেই থাকে। এক ডাকে চার বোন একমাথা হয়ে যান। প্রিয়ন্তী শুকনো ঢোক গিলে বাসার ভেতরে ঢুকলো। আরাফাতের খালারা এমনভাবে তার দিকে তাকিয়ে রইলো যেনো চিড়িয়াখানার কোনো অদ্ভুত জন্তু দেখছেন। আরাফাত তার বড় মামা আকরাম সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালো। ধীর কন্ঠে বললো,
– মামা তোমরা কখন এলে? আমাকে জানালে না যে
– তুমিও তো জানাও নি ভাগনা। বিয়ে করে বউ নিয়ে এলে, কোথায় আমাকে তো জানালে না।
– হুট করে সিদ্ধান্ত কাউকে জানাতে পারি নি। আর এতে এতো অবাক হবার কি আছে! বিয়েই তো করেছি, খুন তো নয়।
– তোমার ভাবটা এমন যেনো আমরা সকালে উঠেই প্রতিদিন বিয়ে করি। তুমি যে ছেলে বিয়ের কথা বললেই দশ হাত দূরে সরে যেতে বিয়ে করে ফেললে, কাউকে জানাও নি অবধি। তা শুনি কি এমন হয়েছে যে হুট করে এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিতে হলো!
– সত্যি বলবো না মিথ্যে?

চোখের চশমাটা মুছতে মুছতে প্রশ্নটা করলো আরাফাত। আরাফাতের মুখের ভঙ্গিমা বেশ স্বাভাবিক। ভাবটা এমন যেনো সকালে উঠে কাউকে না বলে বিয়ে করাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তার প্রতিদিনের কাজ। এতে এতো অবাক হবার কি রয়েছে। তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই মানুষ কি চিন্তা করছে তাতে। আকরাম সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। গলা খাকারি দিয়ে আকরাম সাহেব বললেন,
– সত্যিটাই বলো
– আমি প্রিয়ন্তীকে ভালোবাসি, মাকে বললে অহেতুক জি বাংলার ফাটা সিরিয়ালের মতো ঘ্যানঘ্যানানি হতো। প্রথমে ইমোশনাল ড্রামা করতো, তারপর ব্লাকমেইল। এই কাজটা তখন করতে হতো। তাই সময় নষ্ট করে একেবারে বিয়ে করেই চলে এলাম। এখন যা কান্নাকাটি করার করুক। আমার বউ তো আমার কাছেই থাকবে। কোনো ভূল করেছি? ভুল করলে বলতে পারো!

আরাফাতের স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্যটি শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন আকরাম সাহেব। নিজের বোনের স্বভাব তার ভালো করেই জানা আছে। প্রিয়ন্তী ডিভোর্সি জানার পর কখনোই সে তাদের বিয়েতে মত দিতো না। আরাফাত সময় নষ্ট না করে একেবারেই বিয়ে করে এনেছে। আরাফাতের জায়গায় আকরাম হলেও একই কাজ করতেন। কথাটা ভাবতেই মনে মনে হেসে উঠলেন তিনি। প্রিয়ন্তী মেয়েটি খুবই ঠোঁটকাটা স্বভাবের। তার বোনের সাথে তার টক্কর অটা দেখতে খুব একটা মন্দ লাগবে না। রাফিজা বেগম বুনো ওল হলে প্রিয়ন্তী বাঘা তেতুল। আরাফাতের কথাটা শুনে তার বড় খালা রেহানা বেগম ক্ষুদ্ধ গলায় বলে উঠলেন,
– দেখছিস আকরাম কতোটা স্পর্ধা হইছে উট্টিন্না পোলার। নাক টিপলে দুধ পড়ে পোলা আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে। বিয়া করবি ভালো করা কর না, সুন্দর ছোট মেয়ে বিয়ে কর। এমন ডিভোর্সী বুড়ো ধারী বিয়ে করার কোনো মানে হয়? আমার তো মনে এই মেয়েটাই তাকে উসকাইছে।
– একদম ঠিক বলছো বড় আপা, এই মেয়ের ই দোষ।

রেহানা বেগমের কথায় সায় দিলে রাফিজা বেগমের ছোট বোন রাশেদা বেগম। প্রিয়ন্তী নিজেকে খুব কষ্ট করে আটকে রেখেছে। বিয়ের প্রথম সন্ধ্যায় খালা শ্বাশুড়িদের সাথে ঝগড়া করাটা ভালো হবে না। ঝগড়া করার জন্য সারাজীবন পড়ে রয়েছে। তাই মুখ শক্ত করে তাদের কটুক্তিগুলো হজম করছে প্রিয়ন্তী। তখন কানে আসলো আরাফাতের বজ্রের কঠোর কন্ঠ, আরাফাত রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
– আমি কি বাচ্চা ছেলে? আমি কি ফিডার খাই? নাকি ক্লাস থ্রিতে পড়ি? একটা মেয়ে আমাকে কিভাবে উসকাবে বড় খালা? আমি তাকে ভালোবাসি বাংলা বাক্যটা বোধহয় আপনাকে বুঝাতে ব্যার্থ হয়েছি। আর আমি নিজে তাকে বিয়ে করেছি, এতে তার দোষ কিভাবে হলো খালা? নাক টিপলে দুধ পড়ে কথাটা আমার ক্ষেত্রে বলো না, আমি কোনো টিনেজার বাচ্চা নই। এই পরিবারকে কিন্তু আমি ই চালাই। নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে ছোট বয়সে চাকরিতে ঢুকে গেছি যাতে মামাদের উপর আমাকে চলতে না হয়। তাই এসব কথা আমাকে বলো না। আর আমি তো তোমাকে আমার বিয়ে নিয়ে কমেন্ট করার অধিকার দেই নি। বউ দেখতে এসেছো। দেখো৷ নিজের বউদের মতো ট্রিট করো না। তোমার খাচ্চতে তোমার নিজের বউ মা ভাইকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। আমার মাটাকে আর উলটা পালটা বুদ্ধি দিও না। তোমার মতো অবস্থা আমার মার হোক আমি তা চাই না। প্রিয়ন্তী ঘরে যান। ফ্রেশ হন। কালকে আপনার ডিউটি আছে।

বলেই ভেতরে হাটা দেয় আরাফাত। রেহানা বেগম যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলেন। রাগে ফুসতে থাকেন। বাকি দুজন চুপ মেরে যায়। প্রিয়ন্তী অবাক দৃষ্টিতে আরাফাতের যাবার পানে তাকিয়ে থাকে। লোকটা তার হয়ে কথা বলেছে। এটা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। প্রিয়ন্তীর মনে হতে লাগলো এতোটাও বিরক্তিকর নয় লোকটা। রাফিজা বেগমের কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হয়। আকরাম সাহেব নিজের ভাগ্নের এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক হন। ছেলেটি কখনোই বদরাগী ছিলো না। তার খালাদের উচ্চবাক্য করেছিলো কি না সেটা মনে পড়ছে না। অথচ আজ এই ছেলে তার বড় বোনকে পুরো চুপ করিয়ে দিয়েছে। কথায় আছে, শান্ত মানুষকে ক্ষেপাতে নেই। শান্ত মানুষ খেপলে খুব ভয়ংকর রুপ নেয়। আরাফাতের ক্ষেত্রে কথাটা পুরোপুরি যথাযথ। আরশাদ মিটি মিটি হাসছে। ভালোবাসা মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলে, আরাফাত তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কিন্তু এই ভালোবাসার সূত্রপাত ঠিক কবে থেকে? এই প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো আরাফাতের নিজেরও অজানা।

রাত এগারোটা,
আজ পূর্ণিমা, থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে। এলাকায় কারেন্টের কাজ চলছে। তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে রয়েছে এলাকা। অন্ধকারে আকাশের চাঁদটি যেনো আরোও মনোমুগ্ধকর লাগছে। মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে, সারাদিনের হাফধরানো গরমের পর এই রাতের শীতল হাওয়াটা খুব ভালো লাগে আরাফাতের। আজ বহুকাল পর ছাঁদে এসেছে সে। এই সময়টায় সাধারণত বারান্দায় বসে সিগারেট ফুকায় সে। কিন্তু এখন রুমটা তার একার নয়, একজন জলজ্যান্ত মানুষ সেখানে বসবাস করবে। প্রিয়ন্তীর সিগারেটের গন্ধে বমি আসে, তাই ছাদে এসে বসা। আজ তাদের বাসর রাত। বাসর রাত ব্যাপারটা বেশ রোমান্টিক। বাসর রাতে জ্যোৎস্না বিলাসের অনেক নজির রয়েছে। ব্যাপারটা ভেবি হেসে উঠে আরাফাত। কিন্তু তাদের সম্পর্কে তো রোমান্সের ছিটাও নেই সেখানে বাসর রাত শুধু নামে। যেদিন প্রিয়ন্তী তাকে মেনে নিবে তবেই হয়তো তাদের প্রকৃত বাসর হবে। হাতের সিগারেটটা রেলিং চেপে নিভায় সে। আজ খুব গিটার বাজাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। গিটারটা অবশ্য ছাঁদের কুটুরেই রাখা। যা ভাবা তাই কাজ। গিটারটা এনে বসে আরাফাত। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে, তার মধ্যে সুর তুলে সে,
“মধু মালতী ডাকে আয়
ফুল ও ফাগুনের এ খেলায়
মধু মালতী ডাকে আয়
ফুল ও ফাগুনের এ খেলায়
যুথি কামিনী কতো কথা
যুথি কামিনী কতো কথা
গোপনে বলে মলোয়ায়
মধু মালতী ডাকে আয়
চাঁপা বনে অলি সনে
আজ লুকোচুরি গো লুকোচুরি
আলো ভরা কালো চোখে
কি মাধুরি গো কি মাধুরি
মনো চাহে যে ধরা দিতে
মনো চাহে যে ধরা দিতে
তবু সে লাজে সরে যায়
মধুমালতী ডাকে আয়”

চোখ বুঝে গান গাইছিলো আরাফাত। গানটি শেষ হতেই ছাদে কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সে। জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোতে কারোর ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এতো রাতে কারোর ছাদে আসার কথা নয়। গিটার রেখে পেছনে ফিরলে……………….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

#আরোও_একবার_বসন্ত
#১৯তম_পর্ব

গানটি শেষ হতেই ছাদে কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সে। জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোতে কারোর ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এতো রাতে কারোর ছাদে আসার কথা নয়। গিটার রেখে পেছনে ফিরলে দেখতে পায় প্রিয়ন্তী দাঁড়িয়ে আছে। রাতের অন্ধকার এবং চাঁদের জ্যোৎস্না মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। এই আলোছায়ায় মায়া খেলায় নীল শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তী৷ ঢেউ খেলানো চুলগুলো উড়ছে। প্রিয়ন্তীর শ্যামমুখখানা জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোতে আরোও বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। অপলক দৃষ্টিতে আরাফাত প্রিয়ন্তীকে দেখে যাচ্ছে। একটা সুপ্ত মাদকতা কাজ করছে মেয়েটার প্রতি। চোখে ঘোর লেগে আছে। সময়টা থেমে গেলে খুব একটা মন্দ হতো না। আরাফাত নেশাগ্রস্ত চোখের দিকে চোখ পড়তেই বেশ অস্বস্তি বোধ হয় প্রিয়ন্তীর। রুমে দম বন্ধ লাগছিলো। আজ রাতটা জ্যোৎস্নার তাই ছাদে আসা তার। ছাদে আসতেই আরাফাতের মাতাল করা কন্ঠ কানে আসে। একটা ঘোরে ডুবে যায় প্রিয়ন্তী। কখন যে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে নিজেরো অজানা। অস্বস্তিকর পরিবেশ কাটাতে গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠে সে,
– রাত কটা বাজে জানেন? যাবেন না রুমে?
– উহু জ্যোৎস্না বিলাস করবো। বসবেন পাশে?
– আমাকে বলছেন?
– না আপনার পাশের পেতনীকে। এখানে কি আর কেউ আছে? স্বাভাবিক আপনাকেই বলছি।
– আপনি কি সোজা করে কোনো উত্তর ই দিতে পারেন না?
– আপনি সোজা করে কিছুই কি বুঝেন না?
– উফফফ

বিরক্ত হয়ে ধপ করে পাশে পড়ে প্রিয়ন্তী। আরাফাত নামক লোকটার সাথে তর্কে মোটেও পেরে উঠে না প্রিয়ন্তী। বেশ বিরক্ত লাগে তার এই লোকটাকে। শুধু পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করবে। ভাবা যায় এই লোকটা কি না তার হাসবেন্ড এখন। হাসবেন্ড কথাটা ভাবতেই হৃদস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে যায় প্রিয়ন্তী৷ হ্যা, আরাফাত তার হাসবেন্ড। আজ আজ রাত তাদের বাসর রাত। প্রিয়ন্তীর খুব ইচ্ছে ছিলো তার বরের সাথে কোনো এক জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ রাতে জ্যোৎস্না বিলাস করবে, সুখ দুঃখের গল্প করবে। তার কাধে মাথা রেখে নিরিবিলি বসে থাকবে এমন কোনো রাতে। কিন্তু ইরফানের কখনোই সেই সময়টা হয় নি। আর তার পেশাও তাকে এমন রাত কাটাতে সহায়তা করে নি। অথচ আজ আরাফাতের সাথে এমন একটি রাত কাটাচ্ছে সে। বাসর রাতে জ্যোৎস্না বিলাস করছে তারা। আচ্ছা আরাফাত কি তাকে বুঝবে! তার ইচ্ছে গুলোর উপর ইমম্যাচুয়রের ট্যাগ লাগিয়ে দিবে নাতো!
– একটা গান ধরুন তো

নির্লিপ্ত কন্ঠে প্রশ্নটি করে উঠে আরাফাত। আরাফাতের প্রশ্নটি শুনে ভাবনার জাল থেকে বের হয় প্রিয়ন্তী। মুচকি হাসি টেনে বলে,
– আমি গান গাইতে পারি না। ইভেন আমি কিছুই পারি না। আমি একটা চালকুমড়া
– পারা লাগবে না। আমিও কি তানসেন নাকি? ধরুন না একটা গান। আমি ই তো শুনবো।

আরাফাতের কন্ঠে এক অজানা মায়া রয়েছে। যা ধীরে ধীরে প্রিয়ন্তোকে গ্রাস করছে। অনেকটা স্লো পয়জনের মতো। ঠোঁটে হাসি টেনে গান ধরে প্রিয়ন্তী,
“দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
গানের ওপারে।
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
গানের ওপারে।
আমার সুরগুলি পায় চরণ,
আমি
পাই নে তোমারে।
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
গানের ওপারে।
বাতাস বহে মরি মরি
আর বেঁধে রেখো না তরী,
বাতাস বহে মরি মরি
আর বেঁধে রেখো না তরী,
এসো এসো পার হয়ে মোর
হৃদয়- মাঝারে।
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার
গানের ওপারে”

প্রিয়ন্তীর গানে হয়তো সুর, তাল, লয়ের অভাব রয়েছে। কিন্তু এক অজানা নেশা রয়েছে তার কন্ঠে। মনে কালকোঠরে লুকায়িত কষ্টগুলো যেনো কন্ঠে এসে জমা হয়েছে। আরাফাত যেনো তার নিজের মাঝে নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো প্রিয়ন্তীর গান শুনছে সে। প্রিয়ন্তীর কষ্টগুলো তার অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারছে। প্রিয়ন্তীর বেদনাদায়ক অতীতের ছাপ তার বর্তমানকে এলোমেলো করে রেখেছে। আচ্ছা, আরাফাত কি পারবে না এই কষ্টগুলোকে ভাগ করে নিতে! যে অগ্নি তার অন্তরে প্রতিনিয়ত দাও দাও করে জ্বলছে সেই অগ্নিকে ভালোবাসার শীতলতা দিয়ে কি নিভিয়ে দিতে পারবে না আরাফাত! পারবে না, একটা নতুন সম্পর্কের সূচনা করতে যেখানে শুধু তারাই থাকবে। থাকবে না কোনো ক্ষত বিক্ষত অতীত! এমন কি হতে পারে না! প্রিয়ন্তীর চুলগুলো বারবার কপাল ঢেকে দিচ্ছে। মনের অজান্তেই আরাফাতের হাত চলে যায় তার চুলে। আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দেয় সে। আরাফাতের এমন কাজে অবাক নয়নে তাকায় প্রিয়ন্তী। আরাফাতের চোখ যেনো অন্য কিছু বলছে। এই চোখের অথৈ সাগরে যেকোনো নারীকে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। রাতের নিস্তব্ধতায় একে অপরের তাকিয়ে রয়েছে তারা। কারো মুখ কোনো কথা নেই। শুধু চোখের ভাষায় যেনো কাব্য রচনা হচ্ছে। মুচকি হাসি দিয়ে আরাফাত বলে,
“মাঝির লাগি আছি জাগি
সকল রাত্রি বেলা
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে
করে কেবল খেলা
ঝড়কে আমি করবো মিতে
ডরবো না তার ভ্রুকুটিতে
দাও ছেড়ে দাও ওগো
আমি তুফান পেলে বাঁচি
আমি ডুবতে রাজি আছি
তোমার খোলা হাওয়া
লাগিয়ে পালে
তোমার খোলা হাওয়া”

প্রিয়ন্তী অপলক দৃষ্টিতে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা এভাবে প্রেম নিবেদন করবে কখনো কল্পনাও করে নি সে। বাতাসে মাদকতা কাজ করছে। আজ প্রকৃতিও যেনো তাদের সাথে উম্মাদ হয়ে উঠেছে। নিস্তদ্ধ রাতের শীতল হাওয়ায় যেনো যে কেউ মাতাল হয়ে যাবে। প্রিয়ন্তী কিছু বলার আগেই……….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here