#THE_BOOK
#পর্ব_৪,০৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
০৪
“বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার মধ্যে ময়মনসিংহ একটি। উঁচু নিচু পাহাড়গুলো এই জেলার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে।
ময়মনসিংহ জেলা মুক্তা-গাছার মন্ডা এবং জাকির মিয়ার ‘টক মিষ্টি জিলাটি’ এর জন্য বিখ্যাত।
ময়মনসিংহ জেলার ১০টি বিখ্যাত বা দর্শনীয় স্থান হলো আলেকজান্ডার ক্যাসেল, শশী লজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিপিন পার্ক, ময়মনসিংহ জাদুঘর, তেপান্তর ফ্লিম সিটি, চীনা মাটির টিলা, গারো পাহাড়, কেল্লা তাজপুর, ব্রক্ষপুত্র নদ
ময়মনসিংহ জেলাটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি অঞ্চল, এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এ জেলার মোট আয়তন প্রায় ৪৩৬৩.৪৮ বর্গ কিমি। ময়মনসিংহ জেলাটির পশ্চিমে রয়েছে শেরপুর, জপমালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা, পূর্বে অবস্থিত নেত্রকোন জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিনে রয়েছে গাজীপুর জেলা এবং এর উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
এরকমই সুন্দর জেলাটিতে ২৪শে জুন ১৯৯৪ সালে জন্ম ছেলেটির। অসম্ভব সুন্দর ছেলেটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে যায়। ঘন কালো চুল, কালো কুচকুচে চোখের মণি দুটো অসম্ভব সুন্দর।
ভালোবাসা মানুষকে নতুন জিবন দেয়।জিবনে চলার পথে নতুন পথের সৃষ্টি করে। একসাথে কতোই না প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দুজনে। কিন্তু যদি কখনো জানতে পারো যে সেই ভালোবাসা তোমার মৃত্যুর কারণ হবে তাহলে??
মারমেইড,মৎস্যকন্যা!!! পৃথিবীর মানুষ এখনো এই মৎসকন্যাকে সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে হাতেগোনা কয়েকজন মৎসকন্যার মুখোমুখি হয়েছেন। প্রাচীন সভ্যতার মানুষ বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারীরা নাকি কখনোই মানুষ হয়না তারা হয় মৎসকন্য অনেকে একে জলপরী বলে আখ্যায়িত করে। জলপরীর দেহের গঠন অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক মাছের ন্যায় থাকে। তাই একে মৎস্যকন্যা বলা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় মারমেইড।
কিন্তু যখন কোন মানুষ এই জলপরীর প্রেমে পরে তখন তার কি হবে?? মানুষ তো পানির নিচে থাকতে পারবে না আর মৎস্যকন্যা ও ডাঙায় থাকতে পারবে না। তাহলে কি করে হবে সেই অপরূপ সুন্দর ছেলেটি আর জলপরীর প্রেম কাহিনী??আদৌ কি জলপরী ছেলেটিকে ভালোবাসে নাকি এটা তার কোন ছলনা?? একবার যদি সে ছেলেটিকে পানির নিচে নিজদেশে নিয়ে যেতে পারে তাহলে তার সাথে কি ঘটবে??
শেষমেশ কি হবে মানুষ আর মাছের প্রেম খেলায়???”
পড়া শেষ করে রা’দ বইয়ের পাতা উল্টালো কিন্তু অদ্ভুত আর কিছু লেখা নেই। বাকি সবগুলো পৃষ্ঠা সাদা। রা’দ দ্রুত সবগুলো পেইজ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো কিন্তু কোন লাভ হলো না। সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। লাবন্য বলল,”এসব কি অদ্ভুত লেখা রা’দ??কিসব মানুষ জলপরী!!প্রেম ভালোবাসা এসব কি??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
পূর্ণাশা বলল,”সবচেয়ে বড় কথা হলো এই বইতে বাংলা লেখা হচ্ছে কেন??আর কোন ছেলে আর জলপরীর প্রেমের গল্প বলতে চাচ্ছে এই বই??”
রা’দ নিজেও অবাক। এসব লেখার মানে ও নিজেও জানে না। তাই বলল,”আমি জানি না কিন্তু ছোটবেলায় দাদির কাছে রূপকথার গল্প শুনতাম। দাদি মারমেইডের গল্প বলতো। ওরা নাকি মানুষকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে পানির গভীরে নিয়ে যায়। আর মানুষ তখন শ্বাস আটকে মরে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কাহিনী। কিন্তু এরকম একটা কাহিনী এই বইতে লেখার মানে কি সেটা বুঝতে পারছি না।”
অভিনব এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এইবার মুখ খুলল,”আমি একটা কথা বলবো??”
“বল।”
অভিনব মাথা চুলকে বলল,” এই বইতে যে বার্থডে ডেট আছে না ওটা আমার বার্থডে ডেট।”
সবাই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।পূর্ণাশা বলল,”এটা কিভাবে সম্ভব অভিনব??তোর জন্মতারিখ আর এই বইতে লেখা ছেলেটার জন্মতারিখ এক!!!”
লাবন্য বলল,”ওয়ান মিনিট,অভিনবের বাড়ি ও তো ময়মনসিংহ। কোনভাবে অভিনবের কথা এই বইতে লেখা হয়ছে??”
লাবন্যর কথা শুনে অভিনব শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল,”আর ইউ ক্রেইজি?? আমার কথা লেখা এই বইতে।যতসব ফালতু কথা। আমি একটা জলপরীর প্রেমে পরবো?? ইমপসিবল, যেখানে জলপরীর উপস্থিতি আমি বিশ্বাস করি না আর সেখানে প্রেম?? এই ফালতু বইটাকে ফেলে দে তো আমার অসহ্য লাগছে।”
রা’দ কিছু ভেবে বলল,”কোথাও যেন একটা খটকা লাগছে। এটা ব্ল্যাক ম্যাজিকারের তৈরিকৃত বই কিন্তু এই বইতে ব্ল্যাক ম্যাজিক করার পদ্ধতি থাকার বদলে এসব অদ্ভুত গল্প লেখা হচ্ছে কেন??”
সবার মনে প্রশ্নের জটলা পাকিয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর সবার অজানা। লাবন্য আর পূর্ণাশা আবার ভয় পাচ্ছে। এই বইটা আসলেই অন্যরকম। কিন্তু কি এমন আছে এই বইতে??যার কারণে পাঁচজন মানুষ মারা গেলো। তারাই বা কি এমন পড়েছিলো এই বইটি থেকে?? নাকি সবটাই গুজব। অভিনব বিরক্ত হয়ে বলল,”সব চিন্তা বাদ দে তো। রা’দ কালকে এই বইয়ের বিষয়ে একটা আর্টিকেল তৈরি করে আমাদের চ্যানেলে আপলোড করে দিস। সবাইকে জানাবি যে এই বইটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যতসব ফালতু,হুদাই এইটার পেছনে এতগুলো টাকা খরচ করলাম।”
রা’দ বলল,”একটু চুপ থাক আমাকে ভাবতে দে??”
“তোর ভাবাভাবি বাদ দে তো আমার খিদে পেয়েছে আর ঘুমও পেয়েছে তোরা কি খাবি??না খেলে বিদায় হ।”
বলতে বলতে অভিনব উঠে দাঁড়িয়ে সব লাইট জ্বালিয়ে দিলো। কি আর করার লাবন্য পূর্ণাশা আর রা’দ উঠে দাঁড়ায়। রা’দ বইটাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। লাবন্য আর পূর্ণাশার মনে আবার অজানা ভয় দেখা দেয়। ওরা কেউ বুঝতে পারছে না যে এরপর ওদের সাথে কি হতে চলেছে???
…………………
ঘন গাছগাছালি ঘেরা জঙ্গল। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। কোন মানুষের চিহ্ন মাত্র নেই। জঙ্গলে তো সাধারণ পশু পাখিদের বসবাস কিন্তু কোন জীবজন্তু ও নেই। রা’দ এতে খুব অবাক হয়। সামনের দিকে এগিয়ে যায় রা’দ কিন্তু এখান থেকে বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পায় না। হঠাৎ ওর চোখ পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন রমনির দিকে। চোখ ধাঁধানো সাদা আলো ছড়িয়ে পড়ছে রমনির শরীর থেকে। গায়ে সাদা রঙের অদ্ভুত পোশাক মাটি পর্যন্ত নুইয়ে পড়েছে।মেয়েটা দুহাতে নিজের পরনের পোশাক গুটিয়ে রেখেছ। চুলগুলো এতোই লম্বা যে কোমড় ছাড়িয়ে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দরী রমনীর চোখের মণি দুটো গাঢ় বাদামী রঙের। গাঢ় কাজলে আবৃত চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। গোলাপের পাপড়ির মত কোমল ঠোঁট জোড়ায় মধু মাখানো হাসি যা কোন পুরুষকে মুহূর্তেই ঘায়েল করতে সক্ষম। মেয়েটা একহাতে নিজের পোশাক সামলিয়ে অন্যহাতটা রা’দের দিকে বাড়িয়ে দিল।
মুহূর্তেই রা’দের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। এইরকম সুন্দর রমনীর হাত ধরতে কে না চায়??রা’দ হাত বাড়িয়ে মেয়েটার হাত ধরতে গেল কিন্তু পারলো না। ততক্ষণে মেয়েটা কিছুটা পিছনে চলে গিয়েছে। রা’দ আরেকটু এগোলো কিন্তু এবার ও ধরতে পারলো না। এভাবে রা’দ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই মেয়েটাকে ধরতে পারছে না। কিন্তু রা’দ হাল ছাড়ার পাত্র নয় মেয়েটার পিছু নিলো। মেয়েটা দুহাত দিয়ে নিজের পোশাক গুটিয়ে সামনে দৌড়ে যাচ্ছে আর পেছনে পেছনে রা’দ দৌড়ে আসছে। কিছুক্ষণ দৌড়াতেই হঠাৎ করে মেয়েটা গায়েব হয়ে গেল। রা’দ পাগলের মতো মেয়েটাকে খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। নেশাক্ত মানুষ যখন তার নেশার পানিয় না পায় তখন সে পাগল হয়ে যায়।রা’দের অবস্থা হয়েছে সেইরকম। রা’দ সারা জঙ্গল দৌড়াচ্ছে আর মেয়েটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ কিছুতে হোঁচট খেয়ে রা’দ পড়ে গেল,
তখনই রা’দের ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘামে ভিজে গেছে রা’দের পুরো শরীর। মনে হচ্ছে এই মাত্র জঙ্গলে দৌড়াচ্ছিলো। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নিলো। গতকাল দেখা স্বপ্ন টা আবার দেখেছে। কিন্তু একই স্বপ্ন বারবার দেখার কারণ কি??আর এই অপরূপ মাধুর্যের এই রমনী কে?? কেন ওর স্বপ্নে আসছে আর ওকে ধরা দিচ্ছে না কেন??রা’দ দুহাতে নিজের চুল টেনে ধরলো।
নিজের ডেস্কে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে লাবন্য। পূর্ণাশা তা খেয়াল করে বলল,”লাবন্য কি হয়েছে তোর??কালকের ব্যপারটা নিয়ে আপসেট??”
লাবন্য ডেস্কে আলতো করে হাত রেখে বলল, “আরে ইয়ার জানি না কি করবো আমি?? এমনিতেই ওই বইটা পড়ার পর থেকে কেমন যেন লাগছে তার উপর আবার সেই দুঃস্বপ্ন। কিছু বুঝতে পারছি না আমি।”
পূর্ণাশা নিজের চেয়ার ঘুরিয়ে লাবন্যর দিকে ফিরে বসে বললো,”তুই আজকেও স্বপ্ন দেখেছিস?? আমিও দেখেছি কিন্তু এক স্বপ্ন বারবার দেখার কারণ কি হতে পারে??”
“আমি জানি না কিন্তু একটা কথা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারছি যে ওই বইটা আমাদের বিপদ ডেকে আনবে।”
“কিন্তু এই কথা তো অভিনব আর রা’দ মানতেই চাইছে না।”
তখনই রাহুল এসে বলল সামির সবাইকে ডাকতেছে। অগত্যা লাবন্য আর পূর্ণাশা সামিরের কেবিনে উপস্থিত হলো। অভিনব ও রা’দ আগে থেকেই ওখানে ছিলো। সামির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,”শোন সবাই চট্টগ্রাম থেকে এক দম্পতি ফোন করেছিল। ওনাদের বাড়িতে নাকি অদ্ভূত ঘটনা ঘটছে। অনেকটা ভুতুড়ে ঘটনা। তাই আমাদের ডাক পরেছে। তোমাদের যেতে হবে। আজকে রওনা দিলেই ভালো হয়।”
অভিনব আগ বাড়িয়ে বলল,”আচ্ছা তাহলে আজকে সন্ধ্যার ট্রেনে চলে যাই।”
সামির খুশি হয়েই বললো,”তাহলে তো ভালই হয়।”
রা’দ পূর্ণাশা আর লাবন্য কটমট করে অভিনবের দিকে তাকাতেই অভিনব রাহুলকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।
“রাহুল এবার তুই আমাদের সাথে যাবি।”
রাহুল অনুনয় করে বলল,”না ভাই আমাকে ছেড়ে দিন ওসব আমার কাজ না।”
অভিনব কিছু বলার আগেই রা’দ এসে অভিনবের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিল।অভিনব পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,”মারছিস কেন??”
“আগ বাড়িয়ে কেন পাকনামো করলি।”
লাবন্য বলল,”শয়তান এক নম্বর। দুদিন পর গেলে কি হতো??”
অভিনব বলল,”রিল্যাক্স, দুদিন পর হোক বা আগে হোক যেতে তো আমাদের হবেই।”
লাবন্য আর পূর্ণাশা রেগে অভিনবকে মারতে লাগলো।অভিনব দৌড় দিতে ওরাও অভিনবের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।
রাহুল তা দেখে হেসে বলল,”তোমাদের ফ্রেন্ডশিপ সত্যি অসাধারণ। কিন্তু রা’দ আমাকে একটা কথা বলো তো?? তোমরা বন্ধু হলে কিভাবে??”
রা’দ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,”মানে??”
“মানে হলো তোমরা চারজন বন্ধু চার ধর্মের এটা কিভাবে সম্ভব?? তোমরা তো ভার্সিটি কালের বন্ধু তাই না?? কিভাবে চলে তোমাদের??”
রা’দ হেসে বলল,”ঈদের দিন চারজন একসাথে ঘুরি আনন্দ করি,পুজোয় সবাই লাবন্যর বাড়িতে গিয়ে আড্ডা দেই,ইস্টার সানডে তে অভিনবের সাথে সময় কাটাই আর বৌদ্ধ পূর্ণিমার রাতে সবাই একসাথে ফানুস ওড়াই। আরো সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একসাথে সময় কাটাই। এভাবেই আমাদের দিন চলে যায় বুঝেছিস। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনোই ধর্মের উপর নির্ভর করে না। একজন মানুষের উপর নির্ভর করে। প্রেম ভালোবাসা বিয়ে এসব ধর্মের উপর নির্ভর করে বুঝেছিস??”
“তবুও তোমাদের চারজনের বন্ধুত্ব দেখে সবাই অবাক হবে।”
রা’দ কিছু বলল না। রাহুল তো সত্যি বলেছে।ভার্সিটি থাকতেও ওদের বন্ধুত্ব নিয়ে ট্রল হতো। এতে ওদের কোন মাথা ব্যথা নেই। ওরা ওদের মতোই বন্ধুত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রা’দ এটা ভেবে পায় না যে ওরা কিভাবে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলো??হয়তো এটাই বিধিলিপি ছিলো।
সন্ধ্যার আগেই সবাই রেল স্টেশনে পৌঁছে যায়। রা’দ আজও বাড়িতে ঝামেলা করে এসেছে। এখন এসব নিয়ে না ভেবে ও নিজের কাজে মন দিলো। সবাই একসাথে কেবিনে গিয়ে বসলো। লাবন্য কখন থেকে প্রিতমকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু প্রিতম ফোন ধরছে না। এতে লাবন্যর মন খারাপ হয়ে গেল।পূর্ণাশা বলল,”কি রে প্রিতম ফোন ধরছে না?”
অভিনব কানে ইয়ারফোন গুঁজে বলল,”দেখ পাখি অন্য খাঁচায় বন্দী হয়ে গেছে।”
লাবন্য ধমক দিয়ে বলল,”বাজে কথা বলবি না। প্রিতম রাগ করেছে কালকে ওকে ফোন দিতে পারিনি তাই।”
অভিনব ভেংচি কেটে গান শোনায় মন দিলো।
লাবন্য মুড অফ করে বসে রইল।
চট্টগ্রাম পৌঁছে আরো কিছুক্ষণ বাসে আর সিএনজি তে জার্নি করে ওরা গন্তব্যে পৌছায়। একটা হোটেলে চারজন মিলে ওঠে।রাত পেরিয়ে দিন হতেই ইনভেস্টিকেশনের জন্য বেরিয়ে যায় সবাই। এই মুহূর্তে সবার মন থেকে বইয়ে পড়া ঘটনাটা বেরিয়ে গেছে।
ইনভেস্টিকেশন শেষে অভিনব আর পূর্ণাশা বায়না ধরলো কক্সবাজার যাবে। ওখানে থেকে কক্সবাজার বেশি দূরে নয় তাই যাওয়াই যায়। কিন্তু লাবন্য যেতে চাইলো না। ওর মতে এর আগেও ওরা কক্সবাজার এসেছে। তাই শুরু হয়ে গেল তর্কাতর্কি। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো সেন্টমার্টিন যাওয়ার। তাই ওরা সেন্টমার্টিন গেলো।
অসম্ভব সুন্দর সেন্টমার্টিন দ্বীপ। চারদিকে সাগরের নীল রঙের পানি দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানের রিসোর্ট গুলো খুব সুন্দর। জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখা যায়। লাবন্য আর পূর্ণাশা খুবই ক্লান্ত। তাই তাড়াতাড়ি রিসোর্ট বুক করে ওরা রুমে চলে যায়। কালকে ঘোরাঘুরি করে তারপর ওরা ফিরে যাবে। তাই আপাতত ঘুমানোই শ্রেয়।
ক্লান্ত থাকায় রা’দ ঘুমিয়ে পড়েছে। অভিনব জানালার পর্দা সরিয়ে সেখানে বসে হাওয়া খাচ্ছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ ওর চোখ গেল বাইরে সমুদ্রের দিকে। কেউ একজন সমুদ্রের পানিতে লাফালাফি করতেছে বোধহয়। পানির আওয়াজ আসছে।অভিনব দেখার জন্য জানালা দিয়ে উঁকি দিলো। দেখলো কিছু বাচ্চারা কোমর পর্যন্ত পানিতে নেমে গোসল করতেছে।অভিনব খুব অবাক হয়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারোটা দশ বাজে। এত রাতে কারা সমুদ্রের নেমেছে।অভিনব অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বাইরে চলে যায়। সমুদ্রের পাড়ে আসতেই,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,
#THE_BOOK
#পর্ব_৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
আকাশে গোলাকার থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে যার কারণে দ্বীপটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। অভিনব বালুর উপর লম্বা লম্বা পা ফেলে সমুদ্রের তীরে পৌঁছালো। কতগুলো বাচ্চা পানিতে নেমে লাফালাফি করতেছে। অভিনব এগিয়ে এসে বলল,”এই তোমরা এতো রাতে পানিতে নেমেছো কেন?? তোমাদের কি কোন ভয় নেই??”
বাচ্চাগুলো কিছু বলার আগেই পানির নিচে থেকে বেরিয়ে এলো একটা মেয়ে। সাথে সাথে সব বাচ্চারা হাততালি দিতে লাগল। অভিনব স্তব্ধ চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল। চাঁদের আলোয় মেয়েটার সৌন্দর্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। চোখে মুখে লেগে থাকা পানি চিকচিক করছে চাঁদের আলোতে। হরিণীর মতো চোখগুলোর পাপড়ি ভিজে গেছে। বারবার চোখের পলক ফেলছে মেয়েটা। সোনালী রঙের চুলগুলো পানির ঢেউয়ে খেলা করছে। অজানা অচেনা রমনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে অভিনব। এই মুহূর্তে যদি প্রধানমন্ত্রী এসেও ওর সাথে কথা বলতে চায় তাহলেও অভিনব তা নিঃসন্দেহে নাকচ করে দিয়ে এই রমনীকে দেখায় মগ্ন হবে।
হঠাৎ মেয়েটার চোখ পড়লো অভিনবের চোখে। এই চাহনি অভিনবকে ভস্ম করে দিচ্ছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি আর চোখের চাহনিতে নেশা ধরে যাচ্ছে অভিনবের। শুকনো ঢোক গিলে অভিনব বলল,”আপনি??আর এতো রাতে সমুদ্রে নেমেছেন কেন??”
অভিনবের কথা শুনে মেয়েটা হাসলো। সেই হাসিতে অভিনবের বুকে কাঁপন ধরে গেল। মেয়েটা বলল,”আমাদের সমুদ্র আমাদের যখন ইচ্ছা তখন আসবো তাতে আপনার কি??”
অভিনব প্রতুত্যরে কিছু বলল না। মেয়েটা আবার বলল,”আপনি এখানে কেনো এসেছেন??”
“আপনাকে দেখতে??”
“কি???”
নিজের বোকামোতে নিজকেই গালি দিলো অভিনব। তারপর কথা ঘোরাতে বলল,”আপনার চুলগুলো খুব সুন্দর।”
একথা শুনে মেয়েটা আবার সেই মন ভুলানো হাসি দিলো। অভিনবের ভেতরটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ওর হলো কি??সেটা বুঝতে পারছে না। ইচ্ছে করছে এই রমনীর কাছে যেতে। নিজেকে সামলাতে অনেক চেষ্টা করতেছে। অভিনব বলল, “আপনার বাড়ি কি এখানেই??”
“কেন বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন বুঝি??”
অভিনব মুচকি হেসে দুহাত পকেটে পুরে বলল, “পাঠাতেও পারি,এতো সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করার ভাগ্য ক’জনের থাকে??”
“উহু আমাকে বিয়ে করা এতো সহজ নয়। কঠিন শর্ত আছে।”
অভিনব মাথা ঝুকে বলল,”আপনার সব শর্ত মঞ্জুর জলকন্যা।”
মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”তাহলে আসুন আমার সাথে।”
অভিনব সবকিছু যেন ভুলে গেলো। কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই যে এই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে অভিনব। হাত বাড়িয়ে মেয়েটার হাত স্পর্শ করতেই অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল অনুভবের মধ্যে। মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারবে। মেয়েটার হাত ধরে অভিনব যেই না পানির মধ্যে পা দেবে তখনই পেছন থেকে কেউ একজন ওকে ডাকলো,”অনুভব,,,,,”
অনুভব চমকে মেয়েটার হাত ছেড়ে পিছনে তাকালো। দেখলো রা’দ ওকে ডাকতে ডাকতে এদিকেই আসছে। রা’দ অভিনবের কাছে এসে বললো,”এতো রাতে এখানে কেন এসেছিস??কি করছিলি এখানে??”
অভিনব ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল মেয়েটা সহ বাচ্চাগুলো উধাও। অভিনব অবাক চোখে চারিদিকে তাকাতে লাগল। রা’দ বিরক্ত হয়ে বলল,”এই রাতের বেলা কি খুজছিস?? চল রুমে। তোকে খুঁজতে এসে আমার ঘুমটা নষ্ট হয়ে গেল।”
রা’দ অভিনবের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। অভিনব এখনও মেয়েটার রূপে মোহিত হয়ে আছে। তাই রা’দকে কিছু বলল না। রুমে এসে রা’দ আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু অভিনব ঘুমাতে পারলো না। ওর সবকিছু জুড়ে শুধু ওই মেয়েটাই। হঠাৎ অভিনবের মনে হলো মেয়েটার নামটাই তো জানা হলো না। আর ওইটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা কোথায় গায়েব হয়ে গেল??
এসব ভাবতে ভাবতেই ভোর হয়ে গেছে।অভিনব চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরল। সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি।মেয়েটা যেহেতু এখানেই থাকে তাহলে সমুদ্রের পাড়ে গেলে নিশ্চয়ই আবার দেখা পাওয়া যাবে। অভিনব দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো। সূর্য এখনও দেখা দেয়নি বিধায় সমস্ত পর্যটকরা ও ঘুমাচ্ছে। এখন খুব একটা পর্যটক নেই। অনুভব এদিকে ওদিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলো না। হতাশ হয়ে গেল অভিনব।ঠিক তখনই কোথা থেকে আওয়াজ এলো,”আমাকে খুঁজছেন বুঝি??”
অভিনব চকিতে তাকালো। সমুদ্রের মধ্যে একটা পাথরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটা। পাথরের আড়াল থেকে শুধু মাথাটা বের করে অভিনবের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার সেই মন ভুলানো হাসি মেয়েটার মুখে।অভিনব হেসে বলল,”আপনি কি সারাদিন পানিতেই থাকেন নাকি??”
“আগে বলুন আমাকে খুঁজছিলেন??”
অভিনব ছোট করে বলল,”হুম।”
“প্রেমে পড়ে গিয়েছেন বুঝি।”
“আপনার মতো রমনীর প্রেমে পরতে যেকোন পুরুষ বাধ্য। সত্যি কথা বলতে কি কাল সারারাত শুধু আপনার কথা ভেবেছি। জানি না হঠাৎ করে আমার কি হলো??এটা কি আদৌ ভালোবাসা??এক রাতেই কি কারো মনে ভালোবাসা জন্মায়??”
অনুভবের কথায় মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। অভিনব বুকে হাত দিয়ে বলল, “ওভাবে হাসবেন না প্লিজ আমার বুকে ভিশন ব্যথা হয়।”
মেয়েটা হাসি থামিয়ে বললো,”তাই বুঝি?? তাহলে আমার কাছে আসুন ব্যাথা সারিয়ে দিচ্ছি।”
মেয়েটা আবারো ওকে ডাকছে। অভিনব আবারো এগোতে নিলেই পিছন থেকে পূর্ণাশা ডাকলো। মেয়েটা দ্রুত সরে গেল।পূর্ণাশা এসে বলল,”কি রে একা একা কার সাথে কথা বলছিস??”
“একটা মেয়ের সাথে।”
“এই সাত সকালে মেয়ে পেলি কোথায়??”
অভিনব ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো কেউ নেই।অবাক হয়ে বললো,”এখানেই তো ছিলো গেলো কোথায়??কাল রাতেও দেখেছি।”
“বাজে বকিস না তো!!চল ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে যাবো।”
পূর্ণাশা এক প্রকার জোর করেই অভিনবকে টেনে নিয়ে যায়। খেতে বসে সবাই অভিনব এর মধ্যে অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করলো।কিসব ভেবে একা একাই হাসছে অভিনব।রা’দ অভিনবকে ধাক্কা মেরে বলল,”কি রে হাসছিস কেন??ভুতে ভর করলো নাকি??”
“না তো?? আমরা এখান থেকে ফিরছি কবে??”
“আজ সন্ধ্যায়।”
“সন্ধ্যায় কেন??কাল সকালে রওনা হই।দেখ আমরা তো রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলাম না। আজকে না হয় থেকেই যাই।”
রা’দ এতে আপত্তি জানায় কিন্তু অভিনব শুনলো না অনেক জোরাজুরি করে রা’দকে রাজি করায়। অভিনবের হঠাৎ এরকম আচরণে সবাই একটু ঘাবড়ে গেল। হঠাৎ করে ছেলেটার হলো কি?? সবসময় তো এটা ওটা বলে সবার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতো। কিন্তু আজকে প্রয়োজন ছাড়া কোন কথাই বলছে না।
অতোসব ভাবনা বাদ দিয়ে সবাই খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো। পুরো দ্বীপে ঘুরে ছবি তুললো ভিডিও করলো। পানিতে গোসল করতে নেমে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো। চারজনেই মজা করে সারাদিন কাটালো।
কিন্তু অভিনব সারাদিন অন্যমনস্ক ছিল। কিছু খুঁজছিলো সারাদিন। কয়েকবার পূর্ণাশা আর লাবন্যর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলো কিন্তু অভিনব তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যা নামার পর সবাই কিছু খেয়ে নিলো।রাতের সেন্টমার্টিন উপভোগ করার জন্য বেরিয়ে পড়লো। অভিনব নৌকায় চড়ার কথা বললো সবাই তাতে রাজি হয়ে গেল।
ছোট্ট একটা নৌকা ভাড়া করে চারজনেই চেপে বসলো। অনুভব আর রা’দ দাড় বাইছে লাবন্য আর পূর্ণাশা ভিডিও করতে ব্যস্ত। আজকেও চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে সমুদ্রের পানি। দৃশ্যটা চমৎকার তাই সবাই এই দৃশ্য উপভোগ করায় ব্যস্ত। স্বচ্ছ পানির মধ্যে দিয়ে নিচের সবকিছু দেখা যায়।পূর্ণাশা পানির নিচে একটা অক্টোপাস দেতেই লাবন্যকে দেখালো।রা’দ ও বৈঠা ফেলে সেদিকে উঁকি দিলো।
অভিনবের এবার খুব বিরক্ত লাগছে। ওই মেয়েটাকে না দেখা পর্যন্ত ওর কিছু ভালো লাগছে না। বিরক্ত হয়ে ওদের বিপরীত পাশে তাকাতেই দেখলো একটা হাত নৌকা ধরে আছে। উৎসুক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালো অভিনব। মুহূর্তেই অবাক হয়ে যায় সেই মেয়েটিকে দেখে। সবকিছু ভুলে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,”তুমি এখানে?? তোমাকে কত খুঁজেছি??”
খুশিতে অভিনবের চোখগুলো চিকচিক করছে। মেয়েটা বলল,”যাবেন আমার সাথে??”বলতে বলতেই অভিনবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অভিনব এই মূহুর্তে সবকিছু ভুলে গেছে। এই মেয়েটার হাসি আর চাহনি ওর মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে যার কারণে এই মেয়েটাকে ছাড়া ও কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। এই মুহূর্তে এই মেয়েটা যা বলছে তা ওর করতেই হবে তাই অভিনব দেরি না করেই হাত বাড়িয়ে দিলো।
হঠাৎ পানিতে একটা শব্দ হওয়াতেই রা’দ পূর্ণাশা লাবন্য সেদিকে ঘুরে তাকালো।দেখলো অভিনব নেই ওরা দ্রুত নৌকার পাশে এসে পানির দিকে তাকালো। পূর্ণাশা আর লাবন্য চিৎকার করে বলে উঠলো,”অভিনব,,,”
রা’দ এক মূহুর্ত দেরি না করে পানিতে লাফিয়ে পড়লো। স্বচ্ছ পানির মধ্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মৎসকন্যার মাছের আকৃতির লেজটি।আর অভিনব তার হাত ধরা। পানির গভীরের দিকে যাচ্ছে দুজনে। অভিনব এই মুহূর্তে জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে। রা’দ সাঁতরে গিয়ে অভিনবের একহাত চেপে ধরতেই মৎসকন্যা রক্তচক্ষু নিয়ে রা’দের দিকে তাকালো। কিন্তু আশ্চর্য মৎসকন্য রা’দের উপর আক্রমণ না করে অভিনবকে টেনে নিয়ে যেতে ব্যস্ত। এই মৎসকন্যার শক্তির সাথে রা’দ পেরে উঠছে না। দুজনকেই গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে দুজনের। রা’দ ভাবলো এভাবে তো দুজনেই শ্বাস আটকে মারা যাবে।রা’দ পকেটে থাকা ছোট ছুরিটা বের করে মৎসকন্যার গায়ে আঘাত করলো। সাথে সাথে রক্তে পানি লাল হয়ে গেল। মৎসকন্যা অভিনবের হাত ছাড়তেই রা’দ দ্রুত অভিনবকে নিয়ে উপরে উঠে এলো।পূর্ণাশা আর লাবন্য নৌকায় বসে কাদতেছে ওরা ভাবছে রা’দ আর অভিনব বুঝি মরেই যাবে।
কিন্তু ওদের ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে রা’দ আর অভিনব ফিরে এসেছে। লাবন্য আর পূর্ণাশা মিলে অভিনবকে টেনে নৌকায় তুললো। ততক্ষনে অভিনব জ্ঞান হারিয়েছে। রা’দ নৌকায় উঠে এসে শুয়ে পড়লো। রা’দ হাপাচ্ছে ওর শরীরে এতটুকু শক্তি নেই।লাবন্য পূর্ণাশা বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকা বাইতে লাগলো। পাড়ে এসে কয়েকজন লোকের সাহায্য নিয়ে অভিনবকে রুমে নিয়ে এলো।রা’দ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই ওকেও রুমে নিয়ে গেলো।
লাবন্য পূর্ণাশা সারারাত ওদের পাশে বসে ছিল। দুজনে কোন কথাও বলেনি। কিন্তু দুজনের ভাবনা যে বইয়ে লেখা কথাগুলো সত্যি হলো কিভাবে?? সত্যি জলপরী আছে??অভিনব কি তাহলে এই জলপরীর মায়ায় পড়ে গেলো??এর পর কি হবে অভিনবের সাথে??
সকালে রা’দের আগে জ্ঞান ফিরলো।পূর্ণাশা রা’দের কাঁধে হাত রেখে বলল,”এখন কেমন ফিল করছিস??”
রা’দ এক হাতে মাথা চেপে ধরে বলল, “ভালো।”
লাবন্য বলল,”আমাদের সাথে এসব কি হচ্ছে রা’দ??ওই বইয়ের কথাগুলো সত্যি হয়ে গেল?? আমরাও কেন এখানে আসলাম?? কাজের তাড়নায় সব ভুলে গিয়েছিলাম উফফ,,,”
একহাতে মাথা চেপে ধরে বলল কথাগুলো।
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না। বইয়ের কথাগুলো এভাবে ঠিক হলো??আর ওই মৎস্যকন্যা,,,,,”
পূর্ণাশা বলল,”আজ সকালে অভিনব বলেছিল একটা মেয়ের কথা। আমি তখন অতোটা ভেবে দেখিনি। আমরা এখন কি করবো রা’দ??না জানি অভিনবের জ্ঞান ফিরলে ও কিরকম রিয়্যাক্ট করবে??”
পূর্ণাশার কথার পরে আর কেউ কোন কথা বলল না। রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।সবার মাথা বনবন করে ঘুরছে। এটা কোন গোলক ধাঁধায় পড়লো সবাই। এর থেকে বের হবেই বা কিভাবে??
অভিনবের জ্ঞান ফিরতেই আস্তে আস্তে উঠে বসলো।পূর্ণাশা দ্রুত গিয়ে অভিনবের পাশে বসলো অপরপাশে রা’দ বসলো। অভিনব চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,”আমি এখানে কেন??আর ওই মেয়েটা কোথায়??”
রা’দ বলল,”কোন মেয়েটা??”
“গতকাল রাতে দেখা হয়েছিলো। ইনফ্যাক্ট কাল সকালে দেখা হয়েছিলো। আমি তো ওই মেয়েটার সাথে যাচ্ছিলাম তাহলে এখানে কিভাবে এলাম?? আমাকে যেতে হবে ওই মেয়েটার কাছে।”
রা’দ একবার পূর্ণাশা আর লাবন্যর দিকে তাকালো তারপর বলল,”ওই মেয়েটা একটা মৎসকন্যা। আর ওই বইতে লেখা কথাগুলো সত্যি হয়েছে অভিনব। তোকে এখন ওই মেয়েটার থেকে দূরে থাকতে হবে। না হলে তোর প্রাণ সংশয়ে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।”
অভিনব রা’দের কথা শুনে রেগে বলল,”কিসব
আবোলতাবোল বলছিস??এসব মিথ্যা কথা তোদের মাথা ঠিক নেই। সর আমাকে যেতে দে মেয়েটা এখনও বোধহয় সমুদ্রের আশেপাশে আছে আমাকে খুঁজতে হবে।”
পূর্ণাশা বলল,”রা’দ ঠিক বলেছে। আমি কাল রাতে নিজের চোখে দেখেছি ওই জলপরীকে।ও তোকে মেরে ফেলবে অভিনব। তুই যাস না।”
লাবন্য বলল,”এরকম পাগলামি করিস না অভিনব। রা’দ চল আমরা আজকেই ফিরে যাই।”
অভিনব উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”তোরা চাইলে যেতে পারিস কিন্তু আমি যাব না। ওই মেয়েটাকে নিয়ে তবেই ফিরব।”
লাবন্য রাগন্বিত স্বরে বলল,”তুই পাগল হয়ে গেছিস। জলপরী কখনোই ডাঙায় বসবাস করতে পারে না। তুই আমাদের সাথে যাবি ব্যাস।”
“আমি যাব না বললাম তো!!”
রা’দ অভিনবের হাত টেনে ধরে বলল,”ওই মৎসকন্যা তোকে পাগল করে দিয়েছে এরমধ্যেই না জানি এখানে থাকলে আরো কি কি হবে?? তুই চল আমাদের সাথে।”
অভিনবের হাত ধরে টান মারতেই রা’দকে জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। পূর্ণাশা এগিয়ে আসতেই সজোরে থাপ্পর মারলো পূর্ণাশার গালে। পূর্ণাশাসহ সবাই অবাক অভিনবকে দেখে। এই মুহূর্তে অভিনব একজন হিংস্র পশুর ন্যায় আচরণ করছে। দুদিনে এতটা পরিবর্তন!!অভিনব বাইরে যেতে নিলে রা’দ আবার ওকে টেনে ধরলো।অভিনব রা’দের গায়ে হাত তুলতে নিলে রা’দ ধরে ফেললো। পূর্ণাশা আর লাবন্য এসে অভিনবকে ধরে। পূর্ণাশা দ্রুত ব্যাগ থেকে নিজের দুটো ওড়না বের করে অভিনবের হাত পা বেঁধে ফেলে যাতে অভিনব বাইরে যেতে না পারে।
চলবে,,,,,,,,,,,