THE_BOOK #পর্ব_১৬,১৭

0
283

#THE_BOOK
#পর্ব_১৬,১৭
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)
১৬

মধ্যরাত, শহরের প্রতিটি মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু ঘুমায়নি কিছু কিছু মানুষ,কেউ কেউ তার প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত কেউ কেউ ডিউডিতে আছে আর কেউ কষ্টের পাহাড় নিয়ে বসে আছে। দুজন নারী ভয় নিয়ে এই রাত্রি যাপন করছে। খাটের দুই কোণায় দুজন বসে আছে কারো ঘুমই হচ্ছে না। কি করে হবে?? এরকম একটা ভুতুড়ে কান্ড ঘটলে কি ঘুমানো যায়??যে ভ্রুণ এখন গঠন হয়নি সেই কথা বলতেছে এটা বেশ আশ্চর্য জনক। কোন ডক্টরকে এসব বললে তো সে হাসতে হাসতেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এদের তো সত্যি বলাও যাবে না।

লাবন্য পূর্ণাশা চুপ করেই বসে আছে। ঘুমও ধরা দিচ্ছে না ওই বাচ্চার বকবকানিতে। সে শুধু তার বাবাকে চায়। আশ্চর্য,কি এমন বলে গেল লোকটা যে বাবার প্রতি তার এতো টান?আর লাবন্য তো ওর মা তাহলে মায়ের প্রতি কোন টান নেই কেন??লাবন্য তা ভেবে পায় না। ভোর হতেই দুজনের চোখ লেগে আসে ফলে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। বেশ বেলা করেই দু’জনে ঘুম থেকে উঠে। পূর্ণাশা দ্রুত রা’দকে ফোন করে সবটা জানায়।

রা’দ সব শুনে নিজের মনে মনে সব প্ল্যান সেট করে ফেলে। বাঁচার উপায় সে একটা পেয়ে গেছে আর এই সুযোগ টা সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। তাই সে অভিনবের সাথে দেখা করতে গেলো।

এদিকে ঘুম থেকে উঠার পর ওই বাচ্চাটা এবার ভয়ানক কান্ড ঘটাচ্ছে। নিজের শক্তিতে এটা ওটা ভাঙতেছে। এসব দেখে তো পূর্ণাশা ভয়ে সিটিয়ে গেছে লাবন্যর অবস্থা ও সেইম। দুজনে কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছু বললে যদি ওদের কেও মারে??না বাবা এর থেকে চুপ থাকাটাই বেটার। কলিং বেলের শব্দে পূর্ণাশা দ্রুত দরজা খুলল। রা’দ আর অভিনব এসেছে ওরা ঘরে ঢুকতেই একটা ফুলদানি ওদের দিকে উড়ে আসতেই ওরা সরে যায়। ফুলদানি টা দেওয়ালে লেগে ভেঙে গেল।

“তোমরা কেন এসেছো আবার?? আমার বাবাকে কোথায় রেখেছো?? তোমাদের তো আমি মেরেই ফেলবো।”

বাচ্চাটা হুংকার দিয়ে কথাগুলো বলতেই রা’দ বলে উঠলো,”দেখ আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমরাও চাই তুমি এখন তোমার বাবার কাছে থাকো। তাইতো আমরা এখান থেকে চলে গিয়েছি যাতে তোমার বাবা এখানে আসতে পারে।”

“তাহলে আবার এসেছো কেনো??”এবার অভিনব বলল,”লাবন্য তো আমাদের বন্ধু ওকে মাঝেমধ্যে আমরা দেখতে আসতেই তো পারি।”

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
রা’দ পূর্ণাশার দিকে একটু ইশারা করে বললো,”তাহলে তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখো সেই তোমাকে বলে দেবে।”

পূর্ণাশা এবার বলল,”কিন্তু ওর বাবা তো কালকে আসেনি বেচারা কতো করে ডেকেছে বাবাকে আমার তো খুব খারাপ লাগছিলো। এতো বার ডাকলো আর এলো না। লাবন্যর ও খারাপ লেগেছে তাই না লাবন্য??”

লাবন্য হা হয়ে পূর্ণাশার দিকে তাকালো ও আবার কখন দুঃখ প্রকাশ করলো??ও তো মনে প্রাণে চায় যে ওই লোকটা যাতে এখানে না আসে তাহলে পূর্ণাশা এসব কি বলছে??পূর্ণাশা লাবন্যকে চোখের ইশারায় হ্যা বলতে বলল। কিন্তু লাবন্য ভেবে পাচ্ছে না যে ও কেন হ্যা বলবে??রা’দের দিকে তাকাতে দেখলো রা’দ ও একই ইশারা করছে। আর চুপ থাকছে ওরা। লাবন্য হয়তো কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে তাই মুখটা একটু গোমড়া করে খাটের উপর বসে পড়ল। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল, “হ্যা আমিও তো মন খারাপ করে বসে ছিলাম। কিন্তু ওই কুৎ,,, তোমার বাবা তো এলোই না। আমার খুব খারাপ লাগছে এখনো।”

কথাগুলো লাবন্য ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল। ওরা তিনজনই বুড়ো আংগুল দেখিয়ে কারেক্ট বলল। লাবন্য এখনো কিছু বুঝতেছে না। পূর্ণাশা আবার বলল,”রা’দ অভিনব তোরা বরং খুঁজে দেখ আশেপাশে যদি খুঁজে পাস তাহলে এখানে নিয়ে আয়। দেখবি লাবন্য আর ওর বাচ্চার মন ভালো হয়ে যাবে।”

“আমরা চেষ্টা করবো। তাহলে আজকে যাই হ্যা??”

ওরা দুজনেই বেরিয়ে গেল। পূর্ণাশা মুচকি হাসলো লাবন্য এসে পূর্ণাশাকে ধরে চোখের ইশারা করলো। বুঝালো কি হয়েছে??পূর্ণাশা ভেবে পেলো না যে কিভাবে বুঝাবে??তাই খাতা কলম নিয়ে বসলো। ধীরে ধীরে সবটা লিখে লাবন্যকে দেখালো। এবার লাবন্য সবটা বুঝলো এটাও বুঝলো যে ওদের চারজনকে এখন থেকে নাটক করে যেতে হবে যাতে বাচ্চাটার মন ওর বাবার থেকে উঠে যায়। আর এটা করতে পারবে একমাত্র লাবন্য। লাবন্যই পারবে বাচ্চাটার কান ভাঙাতে। লাবন্য তাই পূর্ণাশাকে আশ্বাঃস দিলো যে ও পারবে।

প্রতিশোধ!!! আজকের সমাজের প্রতিটি মানুষ ই প্রতিশোধ নিতে চায় তার শত্রুর থেকে। সুযোগ পেলে কেউ কাউকে ছাড়ে না। তবে বেশিরভাগ মানুষ তার প্রিয় মানুষের জন্য এই প্রতিশোধে নামে। হত্যা,ধোকা, লাঞ্ছনা এছাড়া আরো অনেক কিছুর শিকার হয় মানুষ। তার মধ্যে প্রিতমও শিকার হয়েছে আর লাবন্য তার প্রতিশোধ নিতে উদ্বিগ্ন হয়েছে। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট যেমন ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তেমন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে ওর মনে। এক চোখে কাঁদছে তো আরেক চোখে আগুন জ্বলছে। তাই এর শেষ দেখে ছাড়বে ও। এই প্রতিজ্ঞা করেছে।

দুদিন পার হয়ে গেছে। পূর্ণাশা এখনও লাবন্যর কাছেই থাকে। এখান থেকেই অফিসে যায়। লাবন্যর জন্য তিনদিন ছুটি নিয়েছিলো ছুটি ও শেষ। কিন্তু পূর্ণাশা চেয়েছিল চাকরি ছেড়ে দিতে। ওর কাছে সবার আগে ওর বন্ধুর জীবন তারপর চাকরি।লাবন্য এতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ খুব কম সংখ্যক মেয়েরাই বিনা স্বার্থে বন্ধুত্ব করে। তার মধ্যে পূর্ণাশা একজন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পূর্ণাশা ভিন্ন ধর্মের মানুষ। দুজনই আলাদা ধর্মের হয়েও একে অপরের প্রতি টান রয়েছে। রা’দ আর অভিনব ও। তাই লাবন্য জোর করেছে পূর্ণাশাকে যেন ও চাকরি টা করে। লাবন্যর জোড়াজুড়িতে পূর্ণাশা বাধ্য হয়।
লাবন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাই থাকে ফ্ল্যাটে। সারাদিনই ওর বাচ্চার সাথে কথা বলে। আগের মতো এখন আর ভয় পায় না। প্রতিশোধের নেশা ওকে শক্ত করে দিয়েছে।
সবসময় বাচ্চাটার সাথে এটা ওটা কথা বলে।
কিন্তু বাচ্চাটাকে কিছুতেই বোঝাতে পারে না যে ওর বাবা খারাপ। বাচ্চাটার মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে ওর বাবাই ভালো বাকি সবাই খারাপ। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতেই কলিং বেল বাজলো। লাবন্য চমকে উঠে কারণ যদি ওই লোকটা আসে?? কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো যে এই ফ্ল্যাটে ওই লোকটা আসতেই পারবে না। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই দেখলো রা’দ আর অভিনব দাঁড়িয়ে আছে। লাবন্য ওদের ভেতরে আসতে দিলো। রা’দ বলল,”কেমন আছিস??”

লাবন্য কিছু বলার আগেই বাচ্চাটা হুংকার দিয়ে উঠলো বললো,”তোমরা আবার এসেছো কেন??চলে যাও নয়তো তোমাদের মারতে আমার একটুও সময় লাগবে না।”

অভিনব বলল,”দেখ আমরা সত্যিই তোমার আর তোমার বাবার কোন ক্ষতি করতে চাই না। আমরা তো তোমার বাবাকে খুজতেছি। এমনকি পেয়েও গিয়েছি তোমার বাবাকে।”

একথা শুনে লাবন্যর মনে ভয় দেখা দিলো। ভয়ার্ত গলায় বলল,”পেয়েছিস??কোথায়??”

রা’দ চোখের ইশারায় লাবন্যকে শান্ত হতে বলে তারপর মুখে বলল,”আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ওনাকে আনতে কিন্তু উনি আসবেন না বলেছেন। উনি বলেছেন এই বাচ্চা আর তোকে মেনে নেবে না। তাই আর কখনোই তোদের কাছে আসবে না।”
রা’দের কথা শেষ হতেই কাঁচের জগটা উড়ে আসলো রা’দের দিকে। অভিনব তা দেখে টান দিয়ে রা’দকে সরিয়ে ফেলে। নাহলে জগের আঘাতে রা’দের মাথাই ফেটে যেতো। তখনই বাচ্চাটার বিশ্রি গলার আওয়াজ আসলো, “আমার বাবার নামে মিথ্যা বললে তোমাদের আমি শেষ করে দেব।”

এটা বলার সাথে সাথে আশেপাশের জিনিস পত্র সব উড়ে আসতে লাগলো ওদের উপর। রা’দ অভিনব নিজেদের সেফ করতে লাগলো।অভিনব বলল,”তুমি বিশ্বাস না করলে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে তোমার বাবার জন্য অপেক্ষা করেই দেখো আদৌ সে আসে কি না??”
বাচ্চাটা আবার ও গর্জন তুলে বলল,”তোমরা আমার বাবার ক্ষতি করে ফেলেছো তাই না?? তোমাদের তো আমি ছাড়বো না।”

“তুমি বিশ্বাস করো আমরা তোমার বাবাকে কিছুই করিনি। আমরা তো তোমার বাবার খোঁজ দিতে এসেছি তোমাকে।”

বাচ্চাটা এবার একটু শান্ত হলো কিন্তু ওদের কথা বিশ্বাস করলো না। ভয়ংকর হুংকার দিতে লাগল। রা’দ আর অভিনব চলে আসলো। লাবন্যকে চোখের ইশারাতে কিছু বুঝিয়ে দিলো। লাবন্য ও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। কারণ এখন পুরো গেম লাবন্যর হাতে।

বাইকে বসতেই রা’দ আর অভিনবের মুখে হাসি ফুটে উঠল। অভিনব বলল,”খাসা চাল দিয়েছি আমরা। এবার বুঝবে মজা মামা। নিজেকে যতোই শক্তিশালী মনে করো না কেন মানুষের বুদ্ধির কাছে তোমরা সবসময় নুয়ে থাকবে।”
বলেই অভিনব হেসে উঠলো। সাথে সাথে বাইকের লুকিং গ্লাসে অশরীরীর বিভৎস চেহারা ভেসে উঠলো তা দেখে ওরা দুজনেই হেসে উঠলো। কারণ এই দুইদিন লোকটা ওদের আয়নায় দেখা দিয়েছে। শাসিয়ে বলেছে যে লাবন্যর কাছে যেন ওকে যেতে দেওয়া হয় কিন্তু ওরা তা শোনেনি। এখন থেকে প্রতিদিনই ওদের দেখা দেয়। রা’দ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,”হ্যালো ব্রো কেমন আছো??”

আয়নায় থাকা লোকটা কটমট করে বলে উঠলো,”ভালো কাজ করছিস না তোরা?? আমাকে যেতে দে??”
রা’দ কটাক্ষ করে বলল,”এমনিতেই তো তোমার চেহারা কুৎসিত রাগলে আরো কুৎসিত দেখা যায়। নিজের মুখখানা আয়নায় একবার দেখেছো কখনো??”
বলেই রা’দ হাসলো এটা দেখে আয়নায় থাকা লোকটার মাথা গরম হয়ে গেল। এই একটা কথাই ওকে দূর্বল করে দেয়। তখন ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায় কিছু বলার ক্ষমতা থাকে না। অভিনব রা’দের কাঁধের কাছে মাথা এনে আয়নায় তাকিয়ে বলল,”আমাদের কোন ক্ষতি তুমি করতে পারবে না কিন্তু আমরা পারবো। আর আমাদের সাথে লড়াই করতে হলে তোমাকে বাইরে আসতে হবে। বাইরে আসলে তোমার মৃত্যু অবধারিত। আমাদের হাতেই তোমার মৃত্যু শিঘ্রই হবে জাস্ট ওয়েট।”

আয়না থেকে অশরীরী প্রস্থান করলো। রা’দ ও বাইক স্টার্ট দিলো।

……………

পূর্ণাশা অফিস শেষে বের হয়েছে মাত্র। রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। লাবন্যর বাসা থেকে ওর অফিস কাছেই। পূর্ণাশা ব্যাগ থেকে আয়না বের করে মুখটা দেখতে দাগলো। এটা ওর অভ্যাস বলতে গেলে। কিন্তু যখন অশরীরীর ছায়া আয়নায় দেখতে পেল তখনই ওর বুকটা ধক করে উঠলো। অশরীরী খিটখিটে মেজাজে বলল,”তুই লাবন্যর কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দে না হলে তোকে তো আমি মেরে ফেলবো। নিজের ভালো চাইলে আমার কথা শোন??”

পূর্ণাশা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। চেহারা দেখে ভয় পাচ্ছে কিন্তু রা’দ ওকে সব বলেছে তাই এখন অতোটাও ভয় পাচ্ছে না।পূর্ণাশা মুখ বাঁকিয়ে বললো,”তুই সর আমার লিপস্টিক দিতে হবে জ্বালাস না আমাকে??”

“তুইইইইই,,,,” রাগে ফেটে পড়লো সে। পূর্ণাশা বলল,”তোর থেকে আমি ঢের সুন্দর আছি। নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখেছিস।”

এটা বলার সাথে সাথে অশরীরীর প্রস্থান হলো। পূর্ণাশা আয়না ব্যাগে রেখে বড় শ্বাস ফেলে বলে,”আপদ একটা কবে যে ঘাড় থেকে নামবে কে জানে??যদি অভিনবের মতো এর প্রেমে লাবন্য পড়ে যায়??”
পূর্ণাশা চোখমুখ খিচে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি আমি??এই কুৎসিত লোকটার প্রেমে লাবন্য পড়বে কেন?? তাছাড়া লাবন্য তো শুধু প্রিতমকে ভালোবাসে। নাহ এসব ভাবলে চলবে না তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে লাবন্য একা বাসায় আছে।”

পূর্ণাশা দ্রুত বাসায় ফিরলো। লাবন্যকে দেখেই বলে উঠলো,”জানিস আজকে ওই কুৎসিত ব্যাটা আমাকে দেখা দিয়েছে বলেছে,,,”
লাবন্যর চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। জিভে কামড় দিলো কি বলে ফেললো কার সামনে??বাচ্চটা খুশিভাব নিয়ে বলল, “বাবা তোমাকে দেখা দিয়েছে?? কোথায় বাবা এখানে আনলে না কেন??”

পূর্ণাশা পড়েছে বিপাকে এখন কি বলবে??লাবন্য বারবার ইশারা করছে রা’দের বলা কথাগুলো বলতে। কিছুক্ষণ পর তা বুঝে পূর্ণাশা বলল,”তোমার বাবা আমার সাথে আসেনি। আমি বলেছিলাম আসতে। এটাও বলেছিলাম যে তোমার সন্তান তোমার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সে বলেছে সে নাকি তোমাদের কারো সাথে যোগাযোগ রাখবে না।”
বলতে বলতেই সামনে থাকা টেবিলটা শব্দ করে উল্টে গেল। পূর্ণাশা ভয়ে কেঁপে উঠলো। এবার লাবন্য বাচ্চাটাকে শান্তনা দিয়ে বলল, “সবাই তো তোমার বাবাকে বুঝিয়েছে তুমি কেন বিশ্বাস করছো না?? তাহলে তোমার বাবা আসছে না কেন??আর তোমার বাবা নেই তো কি হয়েছে মা আছে না?? তোমার মা ই তোমার খেয়াল রাখতে পারবে।”

“না আমার বাবাকেও লাগবে??”

“আচ্ছা তাহলে আমরা অপেক্ষা করি দেখি তোমার বাবা কবে আসবে??”

বাচ্চাটা আর কিছু বলল না। তবে এখনও ওদের কথা বিশ্বাস করছে বলে ওদের মনে হচ্ছে না। পূর্ণাশা ওখান থেকে সরে পড়লো। বাথরুমে গিয়ে লম্বা শাওয়ার নিলো। এই ফ্ল্যাটে কোন আয়না নেই কারণটা হলো ওই অশরীরী। বলা তো যায় না যদি আবার আয়নায় চলে আসে। তবে ওদের কাজগুলো ওই বাচ্চার থেকে লুকিয়ে করতে হবে নইলে ওদের সমস্ত প্ল্যান শেষ হয়ে যাবে। তাই সবাই কোমড় বেঁধে নেমেছে।

চলবে,,,,,,,,

#THE_BOOK

#পর্ব_১৭

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

সময়!!!যা কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বরং নিজ গতিতে এগিয়ে চলে। মানুষ এই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাধ্য। সময়কে হার মানানো যায় না। কারণ একজন শক্তিশালী মানুষের থেকে সময় অধিক শক্তিশালী। সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায় মানুষের মন,চিন্তাধারা,দরিদ্রতা, এমনকি ধনসম্পদ ও। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ছয়মাস। লাবন্যর শরীর বেড়েছে বিশেষ করে পেটটা একটু বড় হয়েছে। শরীরে পানি জমার কারণে হাত পা মুখ অনেকটাই ফুলে গেছে। ফর্সা গাল দুটো সবসময় লাল হয়ে থাকে। মুখ চোখের অবস্থা ভালো না। মন খারাপ থাকে সবসময়। বসে থাকতে ওর আর ভালো লাগে না। কিন্তু বাইরে যেতেও পারবে না। গর্ভকালীন সময়ে তো বারবার হাঁটাচলা করতে হয় যাতে শরীর ঠিক থাকে। লাবন্য বাইরে যেতে না পারলেও রুমের ভেতর হাঁটাহাঁটি করে। পূর্ণাশা সবসময় ওর খেয়াল রাখে। রা’দ আর অভিনব সপ্তাহে তিনবার ওকে দেখে যায়। ওদের প্ল্যান আগের মতোই এগোচ্ছে। বাচ্চাটার মস্তিষ্ক প্রায় ঘুরে গেছে তবে পুরোপুরি নয়। একটা বাচ্চার মন ঘোরাতে ওদের কতোই না পরিশ্রম করতে হচ্ছে অদ্ভুত। তবে শেষমেশ ওরা বাঁচতে পারবে তো??আরো সাড়ে তিনমাস বাকি বাচ্চা জন্মের।

লাবন্য খাটের উপর বসে আছে। বাড়ন্ত পেটের উপর হাত বুলাচ্ছে। মুহূর্তেই প্রিতমের কথা মনে পড়লো। এরকম একটা দিন ওদের আসলে কিই বা ক্ষতি হতো??এই দিনটার জন্য তো দুজন মানুষ অপেক্ষা করতো। কিন্তু সেটা হলো না। যেখানে প্রিতমের বাচ্চার মা হওয়ার কথা সেখানে একটা খারাপ কুৎসিত অশরীরীর বাচ্চার মা হচ্ছে। এর থেকে খারাপ লাগা আর কি হতে পারে??এসব ভাবতেই বুক ভেঙে কান্না আসছে লাবন্যর। কেন হলো ওর সাথে এমন??প্রিতমকে খুব বেশি মনে পড়ছে আজ। ডুকরে কেঁদে উঠলো লাবন্য।আস্তে আস্তে কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেল ওর। এই কান্নায় নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে লাবন্যর। এমনিতেই শরীর খারাপ কাঁদার ফলে আরো শরীর খারাপ করছে।

“মা তুমি কাঁদছো কেন?? বাবার জন্য খারাপ লাগছে তোমার??”
বাচ্চাটার এরকম কথায় লাবন্যর কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। ওর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে যে ওই খারাপ লোকটার জন্য ওর খারাপ লাগছে না। ও প্রিতমকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে না এতে লাবন্যর কষ্টটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবে একদিকে ভালো হয়েছে যে বাচ্চাটা শুধু ওর কথাই শুনতে পায়। মাইন্ড রিড আর সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুই দেখতে পায় না। হয়তো ওদের বাঁচার জন্য সৃষ্টিকর্তা বাচ্চাটাকে এই ক্ষমতা দেয়নি। লাবন্যর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিন্তু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই শরীর দূর্বল তার উপর শ্বাস কষ্ট। লাবন্য বিছানায় শুয়ে পড়লো। অস্থির হয়ে পড়েছে সে।

পূর্ণাশা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। কলিং বেল বাজায়নি কারণ দরজা খুলতে গিয়ে যদি লাবন্য পড়ে যায় এই ভয়ে।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লাবন্যকে এই অবস্থায় দেখে পূর্ণাশা ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত লাবন্যকে ধরে উঠে বসায়। জিজ্ঞেস করে, “তোর কোথায় কষ্ট হচ্ছে লাবন্য??বল আমাকে??”
বলতে বলতে পূর্ণাশার চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। লাবন্য কথা বলতে পারছে না শুধু বড়বড় করে শ্বাস টানছে। পূর্ণাশা দ্রুত রা’দকে ফোন করে বলল। রা’দ আর অভিনব দ্রুত একজন মহিলা ডক্টরকে নিয়ে আসে। উনি এসে লাবন্যকে চেকআপ করলো। ইনজেকশন পুশ করে কিছু মেডিসিন লিখে দিলো। বাইরে এসে তিনি সবাইকে বললেন,”দেখুন পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। গর্ভাবস্থায় বারবার চেকআপ করাতে হয় কিন্তু ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি চেকআপ করেইনি। ওনার শরীরে পানি জমেছে যার কারণে শরীর ফুলে গেছে।এটা পেশেন্টে জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত কাঁদার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়েছে পরে আবারো হতে পারে। তখন তো অক্সিজেন দিতে হবে।তাছাড়া আরো অনেক প্রবলেম আছে যা বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে। ওনাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে এডমিট করুন না হলে ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।”
রা’দ চিন্তিত হয়ে বলল,”ওকে আমরা সিন্ধান্ত নিয়ে আপনাকে জানাবো।”
“তাড়াতাড়ি সিন্ধান্ত জানাবেন কারণ সময় খুব কম। ডেলিভারির সময় খুব কাছেই।”

ডক্টর চলে যেতেই ওরা তিনজনই চিন্তায় পড়ে যায়।

“কি হবে এখন??লাবন্যকে বাইরে নিলেই তো সব শেষ হয়ে যাবে। এতদিনে ওই বাচ্চাটাকে হাত করতে পেরেছি। যদি বাচ্চাটা হাতছাড়া হয়ে যায়??”
পূর্ণাশার কথায় রা’দ বলল,”কিছু হবে না। লাবন্যকে তো আমরা বাচাবোই।”

অভিনব রা’দের কথায় সম্মতি দিয়ে বলল,”দরকার পড়লে এই ফ্ল্যাট আমরা হসপিটালে পরিণত করবো তবুও লাবন্য এখানেই থাকবে ব্যস।”

“হুম এখন চল লাবন্যর কাছে যাই।”

ওরা তিনজনই লাবন্যর কাছে গেলো। লাবন্য শুয়ে আছে। ওদের দেখে আস্তে আস্তে উঠে বসলো। পূর্ণাশা লাবন্যর বাহুতে হাত রেখে বলল,”কেদেছিলি কেন?? জানিসই তো এখন কাঁদলে তোর শরীরের ক্ষতি হবে। নিজেকে শক্ত রাখ। আমরা আছি তোর সাথে সবসময়।”
লাবন্য পূর্ণাশার হাত ধরে বলল,”কি করবো বল প্রিত,,,,”
মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল লাবন্যর বলল, “ওর কথা খুব মনে পড়ছে। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারছি না। এইদিনটার‌ জন্য কত আশা স্বপ্ন ছিলো সব শেষ হয়ে গেল। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।”

পূর্ণাশা লাবন্যকে জড়িয়ে ধরলো। লাবন্য আবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। তখনই বাচ্চাটার গলার আওয়াজ আসলো,”মা তুমি বাবার জন্য কষ্ট পেয়ো না এই দ্যাখো আমি আর বাবার জন্য কষ্ট পাচ্ছি না। তুমি ঠিকই বলেছ বাবা সত্যি খারাপ নাহলে আমাদের থেকে এতদিন দূরে থাকতে পারতো না। তুমি কষ্ট পেয়ো না বাবা তার কাজের জন্য নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে।”

রা’দ বলল,”তবুও আমরা তোমার বাবাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি আসার জন্য কিছু সে আসেনি। এখন আমরা কি করবো?? কাউকে তো জোর করে আনা যায় না।”

অভিনবও সায় দিয়ে বলল,”হুম কিন্তু এখন আমরা সবাই লাবন্যর খেয়াল রাখবো। লাবন্য খুব অসুস্থ। চল রা’দ অনেক ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের।”

একসপ্তাহের মধ্যে লাবন্যর ফ্ল্যাট হসপিটালের একটা কেবিনের মতো তৈরি হয়ে গেল। যা যা লাগে সবকিছু নিয়ে আসা হলো। শুধু এক্সপেরিমেন্ট করার যন্ত্রগুলো বাদে। সাথে দুজন নার্সকে রাখা হলো লাবন্যর দেখাশোনা করার জন্য। এছাড়া নার্সদের সেফটির ব্যবস্থা ও করলো হুজুরের সাহায্য নিয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক। প্ল্যানমাফিক এগোচ্ছে সবাই। এখন শুধু লাবন্যর ডেলিভারির অপেক্ষা। কিন্তু ওরা লাবন্যকে নিয়ে চিন্তিত। যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে কি হবে??মনের জোরের সাহায্যে ওরা এগিয়ে যাচ্ছে।

লাবন্য এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। এতো কেয়ার করছে সবাই সুস্থ না হয়ে পারে। লাবন্য নিজেকে গর্বিত মনে করে রা’দ অভিনব আর পূর্ণাশার মতো বন্ধু পেয়ে। গত জন্মে মনে হয় কোন পূণ্য করেছিলো যার কারণে এতো ভালো বন্ধু পেয়েছে সে। তাই লাবন্য ওর বন্ধুদের প্রশংসা বেশি করে ওর বাচ্চার কাছে। আজকাল বাচ্চাটার মন ভুলানো কথাগুলো ওকে মুগ্ধ করে। খুব ভালো লাগে কথা বলতে। মা হওয়ার অনুভূতি সত্যিই আনন্দের। সন্তানের মুখে মা ডাক শোনা যে কতখানি সুখের সেটা বলা বাহুল্য।

নার্সরা মাঝে মাঝে লাবন্যকে একা একা কথা বলতে দেখে ঘাবড়ে যায়। কারণ বাচ্চাটার কথা শুধু ওরা চারজন ব্যতিত আর কেউ শুনতে পায় না। তবে নার্সরা ভাবে হয়তো আনমনেই লাবন্য তার বাচ্চার সাথে কথা বলতেছে। গর্ভাবস্থায় তো অনেকেই এরকম ভাবে কথা বলে।

সময় যতো এগোচ্ছে লাবন্যর ভয় তত বাড়ছে।কি হবে এই বাচ্চাটা যখন পৃথিবীর বুকে আসবে?? খারাপ কিছু হবে নাকি ভালো কিছু হবে?? তবে রা’দ পূর্ণাশা অভিনব ওকে বারবার শান্তনা দিচ্ছে। মনকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।

দেখতে দেখতে সময় কেটে গেছে। লাবন্যর ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে এসেছে। আজ না হয় কাল বাচ্চা এই ধারার বুকে পা রাখবে। ছোট ছোট হাত পা নাড়িয়ে খেলা করবে। ছোট চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখবে ওর মা’কে।

রাত্রি আটটা বাজে। লাবন্যর কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। পাশেই পূর্ণাশা বসে আছে ওর মনেও অস্থিরতা কাজ করছে। আজকে নার্স দুজন ও আসেনি। আসার তো কথা ছিল তবুও আসেনি কেন??এবিষয়ে পূর্ণাশা রা’দকে সব বলেছে। রা’দ বলেছে যে ও একটা ব্যবস্থা করতেছে। কিছুক্ষণ পরেই কলিং বেল বাজলো। পূর্ণাশা দরজা খুলে দেখলো রা’দ দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণাশা জিজ্ঞাসা করল,”অভিনব আসেনি??”

রা’দ ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”না আসেনি।”
তখনই লাবন্য বলল,”পূর্ণাশা আমার ভিশন পেটে ব্যথা করছে। আমার সহ্য হচ্ছে না।”

রা’দ দ্রুত লাবন্যর কাছে গিয়ে বলল,”লেবার পেইন উঠেছে বোধহয় চল তোকে হসপিটালে নিয়ে যাই।”
পুর্ণাশা অবাক হয়ে বলল,”এসব কি বলছিস তুই??যার জন্য এই ফ্ল্যাটটা হসপিটালে পরিণত করলি আর এখন লাবন্যকে হসপিটালে নিয়ে যাবি??তুই ডক্টরকে কল করে এখানে আসতে বল??”

রা’দ রক্তচক্ষু নিয়ে পূর্ণাশার দিকে তাকিয়ে বলল,”তুই বেশি বুঝবি না আমি যা বলবো তাই হবে।”
রা’দের এরকম ব্যবহারের কারণ বুঝতে পারলো না পূর্ণাশা। হঠাৎ করে রা’দের হলো কি??লাবন্যকে কোলে তুলতে নিলে পূর্ণাশা রা’দের হাত ধরে বলল,”ওকে নিবি না তুই??”

এতে রা’দ আরো রেগে গিয়ে বলে,”তুই বেশি কথা বলবি না ছাড় আমাকে??”

“কে তুমি??”
পূর্ণাশার এরকম প্রশ্নে রা’দ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”আমি রা’দ।”

“তাহলে আমি কে??”
বলতে বলতে রা’দ আর অভিনব আসলো।পূর্ণাশা অবাক হলো দুটো রা’দকে দেখে। রা’দ একবার লাবন্যর দিকে তাকিয়ে বলল,”পূর্ণাশা লাবন্যকে নিয়ে বাইরে যা বাকিটা আমরা দেখছি।”
পূর্ণাশা বলল,”তাহলে এইটা কে??”

“নার্স দুজনকে এবং সেই হুজুরকে ছলনা করে মেরে এই ফ্ল্যাটে ঢুকেছে আমার রূপ ধারণ করে। এবার বুঝেছিস কে??”
অভিনব বলল,”পূর্ণাশা তুই লাবন্যক নিয়ে বাইরে যা সেখানে ডক্টর আছে তোদের হসপিটালে নিয়ে যাবে।”

পূর্ণাশা লাবন্যক হুইলচেয়ারে বসিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো। সাথে সাথে রা’দের বেশে অশরীরী বলে উঠলো,”ওকে নিয়ে কোথাও যাবি না তাহলে ভালো হবে না বলে দিলাম।”

পূর্ণাশা কোন কথা না শুনে বেড়িয়ে গেল। লিফটে উঠে নিচে চলে এলো। অভিনব কুৎসিত লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,”সেই তো আয়নার ভেতর থেকে বের হতেই হলো। এবার তুমি বাঁচবে কিভাবে??”

লোকটা হো হো করে বিকট শব্দে হেসে উঠলো। সাথে সাথে ওদের দুজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ল।

পূর্ণাশা হসপিটালে চলে এসেছে। লাবন্যকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেতর থেকে লাবন্যর আর্তনাদ ভেসে আসছে। পূর্ণাশা সৃষ্টিকর্তা কে বারবার স্মরণ করছে। যাতে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টাখানেক পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। পূর্ণাশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। একজন নার্স তোয়ালে তে মুড়ে ফুটফুটে শিশু নিয়ে বের হলো। পূর্ণাশার দিকে শিশুটি এগিয়ে দিয়ে বলল,”কংগ্রাস মেয়ে হয়েছে। তবে এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে কখনো দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। বাচ্চার বাবা বুঝি খুব সুন্দর??”

পূর্ণাশা চুপ করে গেল। কোলে নিয়ে একধ্যানে তাকিয়ে রইল নবজাতক শিশুর দিকে। নূরের আলো যেন পড়েছে শিশুর সারা গায়ে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে এই সৌন্দর্যে। চোখে ঘন পাপড়ি, মাথাভর্তি কালো চুল ছোট ছোট হাত পা। অসম্ভব সুন্দর এই শিশু। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোন পরীর মেয়ে। কিন্তু এতো সুন্দর হলো কিভাবে বাচ্চাটা??লাবন্য তো এতো সুন্দর নয়??আর ওর বাবা তো কুৎসিত লোক তাহলে??নার্সের কথার জবাব দিতে পারলো না পূর্ণাশা। বাচ্চাটাকে নিয়ে সোজা লাবন্যর কাছে গেল। নরমাল ডেলিভারি হয়েছে লাবন্যর। জ্ঞান ও ফিরেছে, বাচ্চাটাকে লাবন্যর পাশে শুইয়ে দিলো পূর্ণাশা বলল,”তোর মেয়েটা খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে লাবন্য।”
বিনিময়ে লাবন্য মুচকি হেসে মেয়ের দিকে তাকালো। কিছু বলার আগেই কেবিনের দরজা হাট করে খুলে গেল। পূর্ণাশা সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সামনে থাকা লোকটিকে দেখে। ওই কুৎসিত লোকটা এখানে এল কিভাবে?? তবে কি রা’দ অভিনব ওকে আটকাতে পারলো না??লোকটা লাবন্যর দিকে এগিয়ে আসছে হাতে ভারি একটাই কিছু। মনে হচ্ছে লাবন্যকে আঘাত করবে। পূর্ণাশা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে লোকটাকে আটকাতে গেল। সাথে সাথে লোকটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় পূর্ণাশাকে। দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায় পূর্ণাশা। মাথা ফেটে যাওয়ার কারণে জ্ঞান হারায়।

লাবন্য ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। উঠতেও পারছে না শরীরে এতটুকু শক্তি নেই লড়াইয়ে করার। এই মুহূর্তে লাবন্য হার মেনে গেছে। অপেক্ষা করছে নিজের মৃত্যুর জন্য।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here