শব্দহীন_বৃষ্টি
(২৭)(২৮)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
_________________________
প্রকৃতির বসন্ত ডালে ডালে শাখায় শাখায় আর মাহির মনের বসন্ত সাগরের টি শার্টে দেখা যাচ্ছে। কাল রাতে সাগর ছাঁদে যাওয়ার পর মাহি ও হাজির হয়। সাথে থাকে সাথী আর তিথি।
–” ভাইয়া পপকর্ন খাবে? ” সাথী জিজ্ঞেস করলো সাগরকে। সাগর সে কথার জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে পড়া শেষ কিনা?” সাথী মাথা নাড়ায় ” হ্যা” আজকের মত পড়া কমপ্লিট। তারপর মাহিকে একটু অপেক্ষা করতে বলে পপকর্ন আনতে নিচে যায়। তিথি ও মুতু করবে বলে সাথীর পেছনে যায়। তখন ছাঁদে মাহি আর সাগর ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি ছিলো না। ছাঁদের আলো ও না থাকায় মাহি কখন সাগরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় টের পায় নি সে। ঘাড়ের উপর তপ্ত নিঃশ্বাস পড়তেই সাগর ঘুড়ে দাঁড়ায়।মুখোমুখি হয় দু’জন কিন্তু মাহি এতোটা লম্বা কি করে হলো মনে হতেই হাতের ফোনে টর্চ জ্বালিয়ে নিচে ধরে। অবাক হয়ে মাহির মুখের দিকে তাকায়।
–” এমন করে তাকানোর কি আছে? আমি আপনার মতো লম্বা নই তো কি হয়েছে অতোটা খাটো ও নই।”
–” হ্যা তাতো দেখতেই পাচ্ছি। টবের উপর দাঁড়িয়ে আমার সমান হয়ে গেছো।” ব্যঙ্গ করেই যে বলছে সাগর তা বেশ বোঝা যাচ্ছে কিন্তু মাহি তা গায়ে মাখলো না।
–” কাল যা বলেছিলেন মনে আছে?”
–” কোন ব্যাপারে!”
–” ওই যে বিয়ের প্রপোজাল। ” মাহির বলা শেষ হতেই খালি গলায় বিষম খেলো সাগর৷ কাল প্রপোজ করেনি তবে বিয়ে করবে কিনা জিজ্ঞেস করেছিলো মাহির কান্না থামাতে। কেন যেন ওই মুহুর্তে মাথায় কিছুই আসছিলো না তার। শুধু মনে হয়েছে এই পাগলি মেয়েটা বিয়ের কথা শুনলে নির্ঘাত কান্না থামিয়ে দিবে তাই ওরকম বলা। আজকাল বাড়িতে তার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে এটা সত্যি এবং কনে হিসেবে মাহিকেই সিলেক্ট করেছে তা ও সাগরের কানে হালকা ঝাপসা এসেছে। তবুও যতক্ষণ অফিসিয়াল কিছু না ঘটছে ততক্ষণ সাগর এ নিয়ে মাহির সাথে ওপেনলি কথা বলতে চায় না। কিন্তু এখন আরেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাহিকে দেখলেই কেবল ওই ডায়েরির স্বপ্নকুমারীর কথা বেশি বেশি মনে পড়ে। পরশু মাহির ঘাড় থেকে মৌমাছি ধরতে গিয়ে ঘোর লেগে যাচ্ছিলো তার। আর সেই ঘোরে শুধু মনে হয়েছে এই তো তার স্বপ্ন কুমারী তার স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ শুধু এই কন্যাটির। আর এসব ভেবেই এক ভয়ংকর ইচ্ছে জেগেছিলো তার। ভাগ্যিস নিরব এসেছিলো তখন নয়তো তার ওষ্ঠের ছোঁয়ায় মাহির ঘাড় অপবিত্র হতো সেদিন। মাহি আবেগি বড্ড ছেলেমানুষী তার ভেতর সাগর চাইলেই যে কোন ভুল করতে পারবে মাহিকে ঘিরে। মাহি চোখ বুঁজে মেনে নিবে সব তা এতদিনে সাগরের জানা হয়ে গেছে। কিন্তু সাগর! সে তো বাচ্চা নয়। ভুল করা তার জন্য সম্পূর্ণ অন্যায় অপরাধ। কাল রাতেও সাগর সামলেছে নিজেকে মাহির পাগলামো থেকে কিন্তু আর কত দিন? পপকর্ন আর খাওয়া হয়নি সাগর মাহির। দু’জনেই অজানা কারণে হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো৷ কিন্তু তারপরই মাহি এক অদ্ভুত কান্ড করেছে। হুট করেই সাগরের পেটের দিক থেকে টি শার্ট টেনে নাকের স্বর্দি মুছে গটগট করে ছাঁদ থেকে নেমে গিয়েছিলো। আর সাগর তো কিছু মুহুর্ত তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। যতক্ষণে তার হুঁশ এলো ততক্ষণে মাহি পগারপার। সেই রাতে সাগরের আর ঘুম হলো না। নিজের ঘরে গিয়ে টি শার্ট চেঞ্জ করেছে। আর স্বর্দিমাকা টি শার্ট টা একেবারে মুড়িয়ে পেঁচিয়ে খাটের নিচে ফেলেছে। মনে মনে পণ করেছে মাহিকে দিয়েই ধোয়াবে এটা।
মাহির আজকের দিন কেটেছে দাদুনীর সাথে শুয়ে,বসে গল্প করে। কতশত গল্প আর সবটা জুড়েই সাগর ছিলো। মাহি অবাক হলেও খুশি ও কম হয় নি। বারবার মনে হচ্ছিলো দাদুনী বুঝতে পারছে মাহির শুধু সাগরের গল্পই শুনতে চায় তাই যেন তিনি সব গল্প সাগরের করছিলো। সাগরের ছোট্ট বউ তিথি কিভাবে সেটা ও জানতে পারলো মজার ছলে৷ তিথি বড্ড সাগর পাগল মেয়ে। একেবারে ছোট্টটি ছিলো তখন থেকেই তার সাগর ভাইয়া প্রিয় কেন প্রিয় তা জানে না কেউ । এদিকে বাড়ির সকল বাচ্চার চেয়েও সাগরের কাছে তিথি প্রিয় আর তাই বাড়ির সবাই মজা করেই বলতো তিথিকে সাগরের সাথেই বিয়ে দিয়ে বাড়িতে রাখবে। দাদুনী কথার ছলে মাহির কাছ থেকেও জেনে নিয়েছেন মাহির কাজকর্ম সম্পর্কে সে সাংসারিক কাজে কতোটা পারদর্শী। মনঃপুত জবাব পান নি। মাহি তো শুধু চা আর নুডলস বানাতে পারে৷ আজ অব্ধি ভাতটা ও রান্না করেনি কখনও৷
–” বড় বউ এদিকে আসো। কিছু গোপন কথা কই।” এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে বড় বউমাকে কাছে ডাকলেন সাগরের দাদুনী৷ রুদ্ধদ্বার বৈঠক বলা চলে ঠিক এমন করেই ঘাপটি মেরেছেন হাওয়া বেগম বড় ছেলের ঘরে। সাথে আছে তাহমিনা আর শামসুন্নাহার। জয়নব অবশ্য আজকাল তাদের মাঝে ঠিকঠাক ভিড়েন না৷ আলাদা হওয়ার পর থেকেই তার আনাগোনা বাপের বাড়িতেই দ্বিগুন। আর এ কারণেই হাওয়া বেগম ও জরুরি আলাপে তাকে ডাকেন না।
–” বলেন আম্মা শুনছি। ”
–” মনজুরের মাইয়া সংসারের কোন কামকাজ জানে না।” হাওয়া বেগমের কন্ঠে হতাশার সুর৷
–” হ্যা, আমরা তো জানি এ কথা।” তাহমিনা জবাব দিলো।
–” কিহ! তোমরা জানো তয় আমারে কও নাই ক্যা আমি যে বিয়ার প্রস্তাব নিলাম।”
–” কাজ না জানলে কি হবে আপনি না বললেন সাগর পছন্দ করে মাহিকে।” এবার শামসুন্নাহার বললেন কথাটা।
–” এহ, সাগর পছন্দ করলেই হইবো আমি ভাবছি মাইয়া কামের আছে তাই রাজী হইছি৷ চামেলি বউ তো অনেক কামের তাই ভাবছি তার মাইয়া ও কামের। ”
–” আম্মা আজকাল সংসারের কাজ কেউ বিয়ের আগে শিখে না। পড়াশোনা করে অতসময় কই মেয়েদের”? তাহমিনা যেন শ্বাশুড়িকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু এতে লাভ হলো বলে মনে হয় না।
–” অতকিছু জানি না এই মাইয়া বাদ দাও আমি গ্রামের কোন মাইয়ার খোঁজ লাগামু। ”
–” যা ভালো মনে করেন আপনি। তবে একটা অনুরোধ আম্মা যা করবেন ছেলেটার মতের বাইরে কিছু কইরেন না৷ ” শামসুন্নাহার খুবই নম্র সুরে শ্বাশুড়িকে এতটুকু বলেই বসা থেকে উঠে পড়লেন। যার অর্থ এই আলোচনায় তিনি আর থাকতে চাচ্ছেন না। হাওয়া বেগমের ভালো লাগলো না বড় বউয়ের এমন আচরণ তাই মুখ ঝামটি মেরে বলে উঠলেন, ” দাম দেও না কোন কিছুতে আমারে। দুই পোলার মা হইয়া এত তেজ দেখাও। কয়দিন পোলাগো জন্য তেজ থাকবো আমিও দেখমু৷ এক বউ তো পোলারে লইয়া ভাগছে এইডা ও যদি না গেছে তয় আমার নাম ও হাওয়া না। ”
চামেলি বড্ড অস্থির হয়ে আছে যশোরে এসে৷ মাহিমকে রেখে গিয়ে তার ততোটা ও চিন্তা হচ্ছে না যতোটা মাহিকে নিয়ে হচ্ছে । এত বড় মেয়েকে অন্য কারে বাড়িতে এভাবে রাখা ঠিক হয়নি৷ যদিও ওই পরিবারের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রয়েছে মনজুর সাহেবের কিন্তু চামেলির নেই৷ কিন্তু ভাইয়ের অবস্থা কখনো ভালো কখনও মন্দ হওয়ায় ঠিক আসতে পারছেন না। মনজুর সাহেব আজ রাতেই রওনা দিবেন ফিরে আসবে নিরব আর তার বাবা ও কিন্তু চামেলি কিংবা শিউলি কেউ আসবে না। বড় ভাইয়ের অবস্থা দেখে দু’জনেরই মনের অবস্থা খারাপ৷
মাহিমের আজকের পরীক্ষা ভালো হয় নি ভীষন মন খারাপ তার। নিজের বাড়ি নিজের ঘর ছাড়া পড়ায় কিছুতেই মন বসাতে পারে না সে। তাই আজ অনেকটা জেদ করেই বলছে নিজেদের বসায় চলে যাবে। মাহির খারাপ লাগছে না কিছুই তবুও বাসায় চলে গেলেই বেশি ভালো হতো। কাল তার ক্লাস ও আছে৷ বাড়ির চাবিও মা রেখে গেছেন শামসুন্নাহার এর কাছে৷ সন্ধ্যে থেকেই বেশ গড়িমসি করেছে মাহিম অতঃপর সাগরের কাছে হার মেনে রাতটা এখানেই পার করলো। মাহিম আর সাথী একই ক্লাসের স্টুডেন্ট । দু’জনেই নাইনে পড়ে। পড়াশোনায় মাহিমের চেয়ে একটু খারাপই সাথী তবুও ততোটা নয়৷ কিন্তু সাথীর পরীক্ষা একেবারেই ভালো হচ্ছে না কথাটা জানে মাহিম। রাতে সাগরের পাশে ঘুমানোর সময় গল্প করতে করতে কথাটা বলেই ফেলল সে৷ সাগরের বুঝতে যেন একটু সময় লাগলো৷ যখন বুঝে এলো তখনই সাগর সাথী কে ডেকে পাঠালো৷ ভাই বোনদের পড়াশোনা নিয়ে কোন প্রকার তদারকি করে না অনেক গুলো মাস হলো। কিন্তু আজ মাহিম কথায় কথায় যখন বলল, ” নিহান নামের ছেলেটার জন্য সাথী নিশ্চিত এবার পরীক্ষায় ফেইল করবে। ” তখনই সাগরের মস্তিষ্কে একটু ধাক্কা লাগলো। কোন নিহান? মনের মধ্যে ঘুরতে লাগলো কথাটা৷ কিছুদিন আগেই তো চেয়ারম্যান এর ছেলে নিহান এর নামে একটা স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছিলো।
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। সাথী কাচুমাচু করে দাঁড়িয়েছে সাগরের ঘরে সাগরের সামনে।
–” পড়াশোনা কেমন চলে?” খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন সাগরের।
–” ভালো।”
–” কেমন ভালো?”
–” অ অনেক ভালো।” গলাটা একটু কেঁপে উঠলো বোধ হয় সাথীর।
–” অনেক ভালো হলে আমতা আমতা করছিস কেন?” ধমকে বলল সাগর। আবার জিজ্ঞেস করলো স্কুলে আসা যাওয়ায় কোন প্রকার সমস্যা হয়? সাথী এবার মাথা নাড়লো ” না”।
–” যুথিকে ডাক।” বলার সাথে সাথেই সাথী যুথিকে ডেকে নিয়ে আসলো।
–” ভাইয়া আমায় ডেকেছো”? যুথি ঘরে প্রবেশ করেই বলল।
–” স্কুলে আসা যাওয়ার পথে কি কোন সমস্যা হয় তোদের? ” প্রশ্ন করতেই যেন চমকে উঠলো যুথি। সাথী তখন ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল । দরজার বাইরে মাহি ও লুকিয়ে শুনছিলো। যুথির মনে হলো এই মুহুর্তে ভাইয়াকে না জানালে বর কোন বিপদে পড়তে হবে৷ তাদের ভাই গুলো একেক জন সুপারম্যান। যতদিন সমুদ্র ভাইয়া স্কুলে পড়তো তখন কোন ছেলে তাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় নি। এখন স্কুলে ভাইয়া নেই তাই অনেক ছেলেই গা ঘেঁষার চেষ্টা করে। যুথি সাহস পেয়ে বলেই দিলো নিহান আজকাল সাথীপুকে খুব ডিস্টার্ব করে। রোজ যাওয়া আসার পথে রিকশা আটকে এটা ওটা দিতে চায়। বৃহস্পতিবার ও জোর করে যুথির হাতে চকোলেট দিয়ে বলেছিলো ” শালিকা অর্ধেক তোমার আর অর্ধেক আমার জানের।” গা ঘিন ঘিন করছিলো নিহান দাঁত কেলিয়ে এমন কথায়। সাথী মাথা নিচু করে চুপ থাকলে ও যুথি এক এক করে সবটা বলে গেল। সাগরের যেন পায়ের রক্তে মাথায় উঠলো। ক্রমশ রক্ত তার টগবগ করে ফুটতে লাগলো যেন কেউ জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করেছে তাকে। নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার সাধ্য সাগরের নেই তাই যথাসম্ভব সে সব বিষয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এ বেলায় কি করবে কিছু বুঝে আসলো না হুট করেই দেয়ালে ঘুষি মেরে বসলো।
–” কালকে থেকে যদি কোন কুত্তার বাচ্চা ভুল করেও তোদের কাছে ভিড়ে আর সেই খবর যদি আমায় অন্য কারো কাছ থেকে শুনতে হয় তবে প্রথমে তোদের দু’টোর হাড়গোড় ভাঙবো। ”
ঘরে থাকা সাথী,যুথি, মাহিম এমনকি দরজার বাইরে থাকা মাহি ও কেঁপে উঠলো এমন হুংকার শুনে। সাথীর মা বাবা দোতলায়ই থাকেন তাই তার মা ও আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে এলেন।
–” কি হয়েছে সাগর?” অনেকটা ইতস্তত করেই প্রশ্ন করলো জয়নব৷ সাগরের রাগ সম্পর্কে সে আগে থেকেই অবগত তাই একটু ভয় হলো জিজ্ঞেস করতে।
–” কাল থেকে এই দু’টোকে গাড়িতে করে পাঠাবেন আর অবশ্যই কেউ সাথে যাবেন। ছুটির সময় ও আনতে যাবেন যার পক্ষে সম্ভব। বাড়িতে গাড়ি এখন দু’টো। যদিও সাথীর বাবা আলাদা হওয়ায় তার ব্যবসায়ের ভাগ ও আলাদা আর এ সবটার জন্য জয়নবই দায়ী। উচ্চ বিলাসিতার শখ আর আধুনিক ছোট ফ্যামিলি বানানোর চক্করে সব কিছু থেকেই আলাদা হতে হয়েছে। তবুও গাড়িটা তারা ব্যবহার করতে পারবে সবসময় এমনটাই বলেছিলো সাগরের বাবা। জয়নব আর কিছু জানতে না চেয়ে মেয়েদের নিয়ে চলে গেলেন। মাহিম ও চুপচাপ শুয়ে পড়েছিলো। সাগর চিন্তামুক্ত নয় নিহান ছেলেটা সম্পর্কে তার যতটুকু জ্ঞান ওই ছেলে প্রেম করতে বা ভালোবাসার জন্য কারো পেছনে লাগে না। এর আগেও রেপ কেস এ জেল খেটেছে। অনেকক্ষণ ভেবে কাউকে কল করলো সে। গোয়েন্দার মত একজনকে দরকার যে অন্তত তার বোনদের আসা যাওয়ার পথে নজর রাখবে।
ভোরেই মাহির বাবা মনজুর মোর্শেদ ফিরে এসেছেন বাড়িতে। চামেলি রয়ে গেছে ভাইয়ের ওখানে। রাতের বাসে উঠায় সকালেই ঢাকায় পৌঁছেছে মনজুর। মাহি আর মাহিম ও বাবা এসেছে বলে চলে গেছে। সাগর নাশতার ফাঁকে এদিক ওদিক খুব ভালো করে দেখে নিচ্ছে কিন্তু কোথাও মাহি চোখে পড়েনি। তার জানা নেই মাহি চলে গেছে। কিন্তু আজ এত কেন চোখ দু’টো মাহিয়াকে খুঁজছে? সাগরের অফিস সাথীদের স্কুল আর মাহির কলেজ একই এলাকায় পাশাপাশি তাই সাগর ভাবছিলো আজ নিজেই সবাইকে নিয়ে যাবে। কখনো তার এত আগ্রহ থাকে না বাড়ির বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু আজ একটু বেশিই মন চাইছে। হয়তো মাহির জন্য অস্থিরতার এক নতুন অধ্যায় শুরু এখান থেকেই। সাগর যখন যুথিকে ডাকলো স্কুলে নিয়ে যাবে বলে তখন দেখা গেল সাথীর বাবা নিজেই নেমে এলেন মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাবেন বলে।
–” চাচু তুমি নিয়ে যাবে ওদের?”
–” হ্যা রে তোর চাচী বলছিলো যাবে। আমি আজ ফ্রী আছি তাই ভাবলাম আমিই যাই। ” রিয়াদুল সাহেব সাগরের মায়ের কাছ থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিলেন।
–” ওহ তবে মাহিমকে ও নিয়ে যাও সাথীদের সাথে। ” কথাটা বলেই সাগর ভাবলো ভুল কিছু বলল না’তো? কেউ কি কিছু মনে করবে?
–‘ মাহিম আর মাহি তো নেই এখানে। ” তাহমিনা শ্বাশুড়ির নাশতার প্লেট সাজাচ্ছিলেন তখনই বললেন। এদিকে সাগরের পাশেই বসা হাওয়া বেগম একটু সন্দেহের চোখে তাকালেন নাতির দিকে। ” বিয়া না হইতেই শালার জন্য এত দরদ বিয়া হইলে কি কি করবো!” বিড়বিড় করে বললেন যা সাগর ঠিকঠাক শুনতে পায় নি।
–” এখানেই মানে?”
–” মনজুর ভাই চলে আসছেন ভোরেই আর তাই মাহিম আর মাহি সকালেই চলে গেছে বাড়িতে। কত করে বললাম নাশতা করে যেতে করলোই না। ”
–” ওহ” ছোট্ট করে বলে খাবারে মনযোগ দিলো সাগর। নাশতা শেষে অফিসের জন্য বের হতেই কি মনে করে গেইটের সামনে দাঁড়ালো। হুট করেই ঘাড় বাঁকিয়ে মাহিদের দোতলার দিকে তাকালো। যা ভেবেছে তাই জানালার পর্দা সরিয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে মাহি। বুকের ভেতর হঠাৎ করে দামামা বেজে গেছে সাগরের। মাহিও বেশ চমকালো। প্রায় প্রতিদিনই সে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে সাগরকে দেখে। কখনও সাগর উল্টো ফিরো তাকায় না আজ কেন তাকালো? কি দেখলো অমন করে!
চলবে
#শব্দহীন_বৃষ্টি
(২৮)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
__________________________
আজও নিহান পথ আটকালো সাথীর। আজ বাবা গাড়িতে করে নিয়ে আসায় পথিমধ্যে আটকাতে পারেনি সকালে। এখন স্কুল ছুটির পর দেখলো গাড়ি কিংবা মা কেউ আসেনি। স্কুল গেইটের বাইরে মাত্রই এসে দাড়িয়েছে সাথী আর যুথি। মাহিম ও রিকশা দেখতে একটু এগোচ্ছিলো আর তখনই দেখলো নিহান একটা দোকান থেকে গেইটের কাছে যাচ্ছে। তখন ও স্কুলের গেইটে অনেক ছাত্রছাত্রী ছিলো। কি মনে করে মাহিম আবার একটু পিছিয়ে এলো। হুম, নিহান সাথীর সামনে গিয়েই দাঁড়ালো। কাল রাতেই সাগর ফোন নম্বর দিয়েছিলো নিজের। মাহিম ফ্রী ফায়ার খেলার চক্করে মোবাইল ইউসিং শুরু করেছিলো। আজ এই মোবাইল কাজে দিলো খুব ঝটপট পকেটে থাকা ফোনটা বের করেই সাগরের নাম্বার ডায়াল করলো। অফিসে কাজের প্রেশার খানিক কম থাকায় এক মগ কফি নিয়ে বসেছে সাগর৷ ডেস্ক আজ খালিই প্রায় পেন্ডিং কোন কাজ নেই। মুঠোফোনটা বাজতেই চেক করলো মাহিম কল দিচ্ছে। চওড়া প্রশস্ত কপালের মধ্য ভাগ ইষৎ কুঞ্চিত হয়ে গেল।
–” হ্যালো! মাহিম ”
–” সাগর ভাইয়া আজও নিহান সাথীর সামনে গেছে। ”
–” কোথায় এখন সাথী। ” বলতে বলতেই সাগর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে৷ বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে ফোন কানে রেখেই বসের রুমে নক দিলো। ইমারজেন্সি বলে অফিস থেকে বের হলো। বাইকের স্পিড আর সাগরের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ এত দ্রুত চলছে যেন মিনিটের রাস্তা সে সেকেন্ডে পার হবে। সাগর যখন স্কুলের সামনে বাইক থামালো তখন গেইটের কাছে ছোট খাটো জটলা চোখে পড়লো। ভয়ে তার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো। আল্লাহ না করুক সাথীর সাথে কিছু হয় নি তো! ভয়ে যেন কোন প্রকার দোয়া পড়তে ও ভুলে গেছে সে। একটু খানি এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো ছোট চাচু কাউকে বেধরম পেটাচ্ছে। ওই মুহুর্তে সাগরের হাত ও নিশপিশ করতে লাগলো চোয়াল জোড়া ক্রমশ শক্ত হয়ে এলো। তবুও নিজেকে সামলানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। চাচু নিহান কে পেটাচ্ছে কিল, ঘুষি, থাপ্পড় যা পারছে দিচ্ছে সাথে আরো কয়েকজন অচেনা ব্যক্তি। কিছু সময় পার করে সাগর চুপচাপ এগিয়ে গেল সাথীর দিকে ততক্ষণে নিহান এর হাত আর পায়ের অবস্থা খারাপ । নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে৷ সাগরকে দেখেই সাথী যুথি দুজনেই জাপটে ধরলো। “ভরসা” বাবার পরে ঠিক এখানে ও আছে। দু’বোনকেই মাথায় হাত বুলিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে দেখে নিলো নিহানকে। আশপাশ থেকে অনেক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ” চেয়ারম্যান এর ছেলেকে মারছে এরা তো এবার পঙ্গু হবে গুষ্টি শুদ্ধ। কথাটা সাগর কিংবা রিয়াদুল ইসলাম কেউই গায়ে মাখলো না। এই মারামারির মাঝেই কয়েকজন লোক এসে নিহানকে নিয়ে গেল আর যেতে যেতে কিছু ইঙ্গিত দিয়ে গেল তৈরি থাকতে। বলা যায় আগাম সংকেত দিয়ে গেছে পরবর্তীতে বড় কোন ঝড়ের।
সাথী কাঁদছে সাথীর মা কাঁদছেন সাথে হাওয়া বেগম ও বিলাপ করে কাঁদছেন। বাড়িতে সন্ধ্যা থেকেই এক অন্যরকম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে গেছে। সৈকত অফিস ছুটির পরই জেনেছে ঘটনাটা। দাদুনীকে ফোন করেছিলো খবরাখবর নিতে আর তখনই কান্নামাখা কন্ঠ শুনে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। হাওয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতেই সবটা বলে দেন। শিলাকে কিছু না জানিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এসেছে। মাহিমের কাছ থেকে শুনে মাহি ও এসেছে সাথীর কাছে। এটা ওটা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ভয় পেয়েছে আজ সাথী খুব নিহান আজ সবার সামনেই জোর করে সাথীর হাত ধরেছিলো। স্কুল গেইটে অনেক লোকজন ছিলো অথচ কেউ আটকায়নি নিহানকে বরং সবাই মজা দেখেছে। এখন ও হাত পা কাঁপছে মেয়েটার।
মাহির বড় মামা পলাশ এখন অনেকটা সুস্থ যদিও ডক্টর বলে দিয়েছে সাবধানে থাকতে। একবার হার্ট এটাক হয়ে গেছে ভাগ্য ভালো থাকায় কোন প্রকার মারাত্মক বডি ইফেক্ট হয় নি।তবুও ভয় রয়েই যায়। ঢাকা থেকে যশোর কাছের কথা নয় তাই চামেলি,শিউলি আর শিমুল তিনজনই এখন ও সেখানেই রয়ে গেছেন। আরো দু’টো দিন দেখে পড়েই ফিরবেন। শিউলি অবশ্য চামেলির সাথে তেমন কথা বলছেন না। খুব রাগ জমা হয়েছে তার বোনের প্রতি। মাহিকে কেন বোঝালো না নিরবকে বিয়ে করার কথা। নিরব ছেলে মানুষ মাহি নিজে থেকে একটু এগুলেই নিরব এসব ভাইবোন লজিক দেখানো ভুলে যেত। এমন খালাতো, মামাতো,ফুপাতো ভাই বোনের বিয়ে হচ্ছে । এসব কোন ব্যাপারই না। শিউলি মানতে চান না মন থেকে যে সম্পর্কের তৈরি তা রক্তের সম্পর্ক থেকে ও গভীর। নিরব মাহিকে কখনোই খালাতো বোনের নজরে দেখেনি। মাহি তার জন্য আপন বোন ছিলো নিজের একমাত্র বোন৷ মাহি ও ঠিক তেমনই ভাবে। কি করে সম্ভব এত গভীর ভাই বোনের সম্পর্কে অন্য কোন সম্পর্ক টানা!
মাহি আজ রান্না করেছে ভাত,ডিম ভাজা আর ডাল। ডাল আর ভাত সে রাবু আপার কাছে জিজ্ঞেস করছিলো। রাবু তাদের বাড়িতে ছুটা কাজ করে। রাতের খাবার শেষে বাবা আর মাহিম শুয়ে পড়লে মাহি আজও ছাঁদে উঠলো। আজ ও সাগর ছাঁদে ছিলো কিন্তু মাহি তাকে দেখে ও কোন সাড়াশব্দ করলো না। মন ভালো নেই আজ তার সাদা টি-শার্ট ভাইয়ার সে খুব ভালো করেই জানে। চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে অপলক দেখছে। মানুষটা প্রায়ই গম্ভীর থাকে কিন্তু আজকের গম্ভীরতা যেন মাহির বুকে লাগছে। কিছু কি বলা উচিত? একবার কি জিজ্ঞেস করবে সাথীর কান্না থেমেছে কিনা। সাহসে কুলাচ্ছে না যদি বিরক্ত হয়! যদি রেগে যায়!
মাহি ছাঁদে আছে ঘোর অন্ধকারেও টের পাচ্ছে সাগর। আজ এত চুপ কেন মাহি? আজ তো সাগরের মন খারাপ আজ কেন আজগুবি কথা বলে মন ভালো করছেনা তার? ছোট চাচু নিহানকে যেভাবে মেরেছে তাতে যদি নিহানের হাত বা পায়ের হাড় নাও ভেঙে থাকে তবুও কমপক্ষে ক্ষত থাকবে বহুদিন। কেটেছে নাক মুখে অনেক জায়গায়। এখন পর্যন্ত বাড়ি বয়ে কোন দুঃসংবাদ আসেনি তাই বলে কি আসবেই না। চেয়ারম্যান নাজিম এমনিতেই কি ছেড়ে দেবে?
মাহি উসখুস করছে সাগরের সাথে কথা বলার জন্য । একটা বার কি জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা? ধ্যাৎ কি ভাববে সাদা টিশার্ট ভাইয়া মাহি কুব খাদক প্রাণী তাই এমন পরিস্থিতে ও খাবারের কথা মনে পড়ছে। আর ভাল্লাগছে না মাহির গলা খাঁকড়ি দিয়ে সাগরের ধ্যান টানার চেষ্টা করলো।
–” কিছু বলবে?” সাগরই প্রথম কথা বলল।
–” সাথী কি এখন ও কাঁদছে?”
–” নাহ, থেমেছে। তবে ভয় পেয়েছে খুব।”
–” আপনার হাতটা ঠিক আছে?”
সাগর চমকে তাকালো মাহির দিকে। ঘন অন্ধকারে মাহির মুখটা একদমই বোঝা যাচ্ছে না তবুও সাগর কি যেন দেখার চেষ্টা করলো।
–” কি হলো চুপ করে আছেন যে!”
–” আমার হাতে কি হয়েছে?” অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো।
–” কাল বাহাদুরি দেখিয়ে দেয়ালে ঘুষি মারলেন। হাত তো ফেটে যাওয়ার কথা।” মাহির এ কথায় সাগর বুঝি একটু খানি হাসলো। অস্পষ্ট হাসির শব্দ পাওয়া গেল।
–” হাত ফেটে ও যায়? আমি যতদূর জানি হাড় ফাটে।”
–” ওই একই হলো। হাতে কি হাড় নেই? দেখুন আপনার পাঁচ আঙ্গুলে পাঁচটা হাড় তো অবশ্যই আছে। ” বিজ্ঞের মত ভাব নিয়ে বলল মাহি।
–” আচ্ছা বুঝলাম। ”
–” কি বুঝলেন?”
–” এই যে মাহিয়া একটা পাগল মেয়ে।”
–“কচু বুঝলেন। একটা ব্যাকরণ ও ঠিকঠাক পারেন না।”
–” তাই বুঝি!”
–” হ্যা তাই আমি মেয়ে পাগল কি করে হই? আমার বেলায় পাগলি হবে সঠিক শব্দ। ”
–” তার মানে তুমি স্বীকার করছো তুমি পাগল না মানে পাগলি৷ ”
–” এই এই এটা কখন বললাম?”
–” এখনই তো বললে। ”
–” আমি বললেই আপনাকে মানতে হবে?”
–” অবশ্যই মানবো তুমি কত্তো কিউটলি বললে না মেনে কি পারি বলো?”
–” তবে এটা কেন মানেন না আমি আপনাকে ভালোবা….” থেমে গেল মাহি। পরিবেশটা হুট করেই থমথমে হয়ে গেল। বাতাসে দু’জনের নিঃশ্বাস যেন ভারী করে তুলছে সময়টাকে।
এই মুহুর্তে সাগরের খুব ইচ্ছে করছে এই বাচ্চা মেয়েটাকে খুব কাছ থেকে দেখতে । কেমন লাগছে তাকে এখন? এই মেয়েটাকে সর্বদাই সে বেয়াদব একেবারে চরম বেয়াদব আখ্যা দিয়েছে অথচ আজকাল এই চরম বেয়াদব মেয়েটাকে সে অন্যরকম করেই চাইছে। একটু গভীর একটু কাছের করে ঠিক আপন করে। দাদুনীর সিদ্ধান্ত তার কাছে আজ একদম সঠিক মনে হচ্ছে । হয়তো তার মন খারাপের রাত গুলোতে এই বোকা পাগল মেয়েটাই হবে কঠিন ঔষধ। যেমনটা আজ হয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা? দীর্ঘ সময়ে মনের ঘরে ভালোবাসা বলতে তেমন গভীর কোন অনুভবই হয় না তার। তবে হ্যা অনুভব বলতে স্পেশাল তো একজন হয়ে আছে গত উনিশ মাস ধরে একজন। সেই স্পেশাল মানুষটির আদল ও খানিক মিল রয়েছে সামনে থাকা এই সতেরো বছর বয়সী মাহিয়ার সাথে। কিন্তু কোথায় পাবে সে ওই স্বপ্নকুমারীকে? আদৌ কখনো দেখা পাবে কিনা সন্দেহ। সন্দেহ থেকেই মনে পড়লো সাগরের মাহির সামনে ওই ডায়েরি বহুবার ফেলে রেখেছিলো সে। যদি মাহির হতো ডায়েরিটা তবে নিশ্চয়ই মাহি দেখে চিনতো। অথবা বলতো তার ডায়েরি হারিয়েছিলো। কিন্তু এমন তো কিছুই হয় নি৷ আজও সাগর সেই ডায়েরি খুলতে পারেনি। ইচ্ছে অনেকবার হয়েছিলে সেই ছোট্ট তালাটাকে এক টানে খুলে ভেতরটা দেখে নিতে। হয়তো খোঁজ পাওয়া যেত তার স্বপ্নকুমারীর। কেন যেন বারবারই সেই ইচ্ছেটাকে দমিয়ে নিতো সে তবে কি মাহিয়ার জন্যই সেই ডায়েরির মালিক আজো অচেনা রয়ে গেল? হয়তো মাহিয়াই তার গন্তব্য।
নিঃশব্দে চলে গেছে মাহি ছাঁদ থেকে । ভালোবাসি শব্দটা অসম্পূর্ণই রয়ে গেল তার। একরাশ লজ্জারা হুট করেই গলা চেপে ধরেছিলো তার। নির্লজ্জ বেহায়া মাহিও আজ লজ্জাদের কাছে হার মেনে ভালোবাসি বলতে পারলো না সাগরকে, তার এলোমেলো চুল সাদা টি-শার্ট ভাইয়াকে ।
চলবে
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন)