রহস্যের_কুয়াশা☠️ #পর্ব_১৩,১৪

0
193

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১৩,১৪
#হাফসা_ইরিন_রাথি
১৩

অনেক ভাবনা চিন্তার মাঝেও মিলি তাবিজটা খোলার প্রচুর তাগিদ অনুভব করছে কিন্তু এখন খোলা বিপদজনক,যেকোনো মুহূর্তে মা চলে আসতে পারে তাই অনেক কষ্টে নিজের ইচ্ছেকে দমন করার চেষ্টা করতে লাগলো।মিলির কেনো যেনো মনে হচ্ছে মায়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে,আর করেও বেশ কিছু বছর যাবৎ।মিলি ড্রেস চেঞ্জ করে মা আর বোনের কাছে গেলো।অনেকদিন পর ওদের সাথে এমন হাসি খুশি কথা বলতে দেখে ওর মা আর বোন দুজনেই খুশি হলো খুব।এই খুশি অমূল্য,যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।মিলির খুব ভালো লাগলো ওদের সাথে কথা বলে, দুশ্চিন্তাটা অনেকাংশে কমে গেছে।কথার এক ফাঁকে মিলি মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–মা এই তাবিজটা খুলে ফেললে কি হবে?

ওর মা মেয়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেললো।মিলিকে বুঝানোর চেষ্টা করছে যেনো এমনভাবে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
–মা তুমি কখনো এটা খুলিও না।এটা তো ভালো জিনিস,এটা সাথে রাখো কেমন?
মিলি মায়ের কথার কোনো জবাব না দিয়ে একটু বিষন্ন হাসলো শুধু।তারপর ছোটো বোনের সাথে কতক্ষন খেলা করে ক্ষুধা নেই বলে না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেলো।
***
রাত তখন ১ টা ছুঁই ছুঁই।মিলি এখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে হুজুরের কথাগুলো সম্পর্কে।হঠাৎ ওর মধ্যে একপ্রকার জেদ চেপে বসলো তাবিজটা খোলার।মিলি একটানে তাবিজটা ছিড়ে ফেললো।কিন্তু ছিড়ে ফেলার পর নিজেই অবাক হয়ে গেলো নিজের এত্তো শক্তি কোথা থেকে এলো ভেবে।তাবিজটা ছেড়ার ১০ সেকেন্ডের মধ্যে মিলির চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগলো।একসময় ও জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে গেলো।
চোখ খুলতেই নিজেকে নিজের বিছানায় এলোপাথাড়ি হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলো মিলি।চারপাশে অন্ধকার আর ড্রিম লাইট জ্বালানো দেখে বুঝতে পারলো এখনো রাত্রি।মিলির চোখ গেলো দেয়ালে থাকা ঘড়িটার উপর।নাহ্!তেমন কোনো সময় হয় নি,মাত্র ৩ টা বাজে।মিলির আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে লাগলো।তড়িঘড়ি করে ছুটে টেবিলের কাছে গেলো তারপর ব্যাগ থেকে গ্যাস লাইটারটা বের করলো যেটা সকালে কিনে এনেছিল।
লাইটার নিয়ে বিছানায় বসে কি করবে ভাবতে লাগলো।এখন কেমন যেনো একটা দ্বিধা কাজ করছে কিন্তু আবার ইহানকে ফিরে পেতে চায় ও।তাই মিনিটখানেক ভাবার পর আগুন জ্বালালো লাইটারে।আগুনের দিকে চোখ বড় বড় করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও,আগুনের প্রতিচ্ছায়া পড়ছে ওর চোখে আর একহাতে ধরা আছে তাবিজটা।মিলি আগুনটা ঘুরিয়ে তাবিজের নিচে ধরলো,তারপর সেটা আগুনে পুড়তে থাকলে ছুড়ে ফেলে দিলো ফ্লোরে।চোখের সামনে তাবিজটা পুড়ে ভস্ম হয়ে গেলো শুধু রয়ে গেছে তার শক্ত খোলসটা।মিলির মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়লো।কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হলো না,মিলি আবারো জ্ঞান হারালো।
সকালে ফজরের আযান কানে যেতেই চোখ খুলে তাকালো।চোখ খুলেই যা দেখলো তাতে হৃদপিন্ডটা আনন্দে বের হয়ে আসতে চাইছে যেনো।মিলি দেখলো ওর মুখের উপর ইহান ঝুঁকে আছে,উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে যেনো জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে।মিলি উঠেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ইহানের উপর।ঝাপটে ধরলো ইহানকে।তারপর অনেক অনেক কাদতে লাগলো,কাদতে কাদতে হিচ্কি উঠে গেছে ওর কিন্তু ইহান বাধা দিচ্ছে না। ইহান শুধু মিলির নরম চুলের মধ্যে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর নিজেও কাদছে।
প্রায় ১০ মিনিট পর মিলি মুখ তুললো।চোখ,মুখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে।
–তুমি কোথায় গিয়েছিলে?আমি তোমায় খুব মিস করেছি,তুমি কি জানো?
ইহান কান্নার মধ্যেও মুখ টিপে হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়ালো।মিলি একপ্রকার চিৎকার করেই আবার কেদে উঠলো,
–না,তুমি জানো না।তুমি জানলে এত্তদিন আমার না কথা না বলে থাকতে পারতে না,খেলা না করে থাকতে পারতে না।

–সত্যি বলছি,জানি তো আমি।আমি সব দেখেছি।

–তাহলে আসো নি কেনো?

–আসতে পারি নি যে।তুমি এখন কান্না বন্ধ করো নাহলে তোমার আম্মু আব্বু আর ছোটো বোন ঘুম থেকে জেগে উঠবে।

–তোমার বাসায় নিয়ে যাবা না আমায়?চলো যাই।

–এখন না,আগে তোমার ১০ বছর পূর্ণ হোক।

–তাহলে তো তুমি আবারও চলে যাবে।(কাদতে কাদতে)

–আরে নারে বোকা।আমি যাবো না।তুমি তোমার হাতটা লুকিয়ে রেখো যাতে তোমার আম্মু,আব্বু বা কেউ বুঝতে না পারে যে তুমি তাবিজটা পুড়িয়ে ফেলেছো।ঠিক আছে?
মিলি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তারপর ইহানের বুক থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কারণ ওর কেমন কেমন লজ্জা লজ্জা করছিল,শত হলেও ও এখন বড় হচ্ছে। ইহান মিলির অস্বস্তি বুঝতে পেরে ওকে ছেড়ে দিলো।
–আচ্ছা তুমি এখন বিশ্রাম নাও।আমি যাই?

–চলে যাবে?

–তুমি কি বলো?

–আরেকটু থাকো।আগে তো সারাক্ষণই আমার সাথে থাকতে,এখন কেনো তবে চলে যেতে চাইছো?

–আমাদের চারপাশে এখন অনেক বিপদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রিদ।সামনে আরো অনেক বিপদ আছে।তুমি হয়তো তাদের দেখতে পাচ্ছো না কিন্তু তারা আছে।তুমি সবসময় সাবধান থাকবে,কেমন?
মিলির ইহানের কথাগুলো শুনে হুজুরের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো।যেনো সবাই একটা বিষয়েই সতর্ক করছে,কিন্তু সেটা কি?
–কেনো সতর্ক থাকবো?কি আছে আমাদের আশেপাশে?আমি তো কিছুই দেখতে পাই না।

–রিদ,দৃশ্যমান আর বাস্তব জগৎ ছাড়াও আরেকটা জগৎ আছে।সেই জগতের সব অদৃশ্য,তারা ধরা না দিলে বা কোনো কিছু না করে খালি চোখে তুমি তাদের দেখতে পাবে না।তাদের থেকে সতর্ক থাকতে তোমার এই জিনিসটা সব সময় সাথে রাখবে,উপকার হবে।
মিলির হাতে বিছানায় পড়ে থাকা গ্যাস লাইটারটা তুলে দিলো ইহান।মালিহা বেগম নামাজ পড়তে উঠেছে আওয়াজ পেয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
–মেঝেতে পড়ে থাকা ছাই গুলো পরিষ্কার করে লুকিয়ে ফেলো তোমার আম্মু উঠে পড়েছেন মনে হচ্ছে।
আর তোমার অনেক প্রশ্ন করার আছে আমি জানি কিন্তু সেসবের উত্তর তোমার ১০ বছর পূর্ণ হলে আমার বাসায় যাবার পরই পাবে। আমি আবারো একটু পর আসবো তুমি নামাজ পড়ে নাও।আমিও যাই।আল্লাহ হাফেজ।
মিলির সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।মিলি বুঝতে পারছে না ১০ বছর পূর্ণ হওয়াটা কেনো এতো জরুরি তবে এটুকু ঠিকই বুঝতে পারছে যে কোনো কিছু স্পেশাল হতে চলেছে।আর চিন্তা না করে নাচতে নাচতে বাথরুমের দিকে গেলো,এখন ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়বে।
***
ইহান সকাল থেকেই যে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে সেটা দৃষ্টি এড়ায় নি রিমাদের। রিমাদ ওকে অনেকক্ষন যাবৎ আড়চোখে দেখছে সন্দেহের দৃষ্টিতে কিন্তু সেদিকে ক্রুক্ষেপ নেই ইহানের।সে হাঁটছে আর একা একা হাসছে।
–আরে এইবার তো বল কি হইছে?এতো খুশি ক্যান তুই?লটারি পাইছিস নাকি?

–পাই নি,হারানোটা জিতছি।

–তারমানে তুই কাল সারারাত কিছু একটা করেছিস! রিদ! রিদের ব্যাপারে কিছু এটা আমি সিউর।কালকে আমি আর রোজা তো আড্ডা দিছি সারারাত।

–হুম তোরা দুজন হইলি ফাঁকিবাজ,আড্ডা দিবি না তো কি আর করবি!

–আরে মার খাবি কিন্তু।কালকে আমাদের ছুটি ছিলো, তোরও ছিল কিন্তু তুই যাস নি আমরা কি করতে পারি?
এখন কথা না পেচায়া বল কি হইছিলো কাল?

–রিদের সাথে কাল দেখা করছি, মানে আজ সকালে।

–হোয়াট!!!!আর ইউ সিউর?

–অফকোর্স!
ইহান রিমাদকে সবটা খুলে বললো। রিমাদ তো খুব খুশি।তারপর দুই বন্ধু ছুটলো রোজার কাছে খবরটা দিতে।আজ তো ওরা অনেক উদযাপন করবে,আড্ডা দিবে এটা নিশ্চিত।অনেকদিন পর একটা খুব খুশির সংবাদ পেয়েছে যেনো।ওরা দৌড়ে প্রাসাদে চলে গেলো। ইহান যদিও দৌড়াতে চায় নি কিন্তু রিমাদের সাথে তাল মিলাতে দৌড়াতে হচ্ছে।ওদের এভাবে আসতে দেখে রোজাও লাফাচ্ছে কারণ ও জানে ওর বন্ধুরা নিশ্চয়ই খুব খুশিতেই এমন করে দৌড়ে আসছে।
–আরে তুই লাগাচ্ছিস ক্যান?

–তোরা লাফাচ্ছিস তাই আমিও লাফাচ্ছি।
এখন ব্যাপারটা কি বল?
ইহান আর রিমাদ দুজন একই সাথে বলতে শুরু করলে রোজা ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো,
–কুল গাইস, আস্তে আস্তে খুলে বল।
তারপর রিমাদ পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতেই ৩ জন মিলে পুরো প্রাসাদ মাথায় তুলে ফেললো হইহই করতে করতে।

চলবে”””

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১৪
#হাফসা_ইরিন_রাথি
আজ মিলি খুব খুশি আর প্রতিক্ষীয়মান হয়ে আছে ইহানের দেখা পাওয়ার জন্য কারন আজকে রাত ১২ টার পর নতুন একটা বয়সে পা রাখতে চলেছে মিলি।আর ইহানের কথা অনুযায়ী ইহান নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে ওকে কিন্তু বিকেল থেকেই তার কোনো পাত্তা নেই,লাপাত্তা হয়ে আছে।মিলির রাগ,অভিমান,খুশি,অপেক্ষা সবকিছু যেনো মিলে মিশে একাকার অবস্থা হয়েছে।
রাত ৮ টা বাজতেই মায়ের রুমে চলে গেলো মা বাবা আর বোনের সাথে দেখা করতে।মিতু এখনো ওর বাবা মার সাথেই ঘুমায়।মিলি রুমে ঢুকেই বিষন্ন মুখে মা বাবাকে বললো,
–আজ রাতে আমায় আর ডেকো না মা।আমার খুব খারাপ লাগছে একটু একা থাকি।ঘুমিয়ে পড়বো এখন।
মিলির মা কি যেনো বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মিতু চেঁচিয়ে উঠলো।
–আপু আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।

–না আজ না,অন্যদিন ঘুমাস।আজকে আমার একদম ভালো লাগছে না বললাম তো।

–আহা,থাম না মিতু।কি হয়েছে মা তোমার?শরীর খারাপ করছে?ডাক্তার ডাকবো?(জারিফ সাহেব)

–না না বাবা তেমন কিছুই না।মা তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বল না যাতে টেনশন না করে।আমি ঘুমাতে গেলাম।আল্লাহ হাফেজ।

–আরে আরে আরে খাবার না খেয়েই ঘুমাবি নাকি?তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নে,তারপর ঘুমা কোনো সমস্যা নেই।
মিলি অগত্যা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো।মালিহা বেগম নিজের হাতেই ওকে খাইয়ে দিচ্ছেন।মিলির খুব মায়া হচ্ছে মা বাবা আর ছোট বোনটার জন্য,ওদের মিথ্যে বলে খারাপ লাগছে তবে ইহানের বাসায় যাওয়ার অধম্য ইচ্ছেকে যে অস্বীকার করার উপায় নেই!
খাওয়া শেষ করে মিলি মিতুর সাথে একটু দুষ্টুমি করে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।দেয়াল ঘড়ির সামনে অধীর আগ্রহে বসে অপেক্ষা করছে কখন ১২ টা বাজবে কিন্তু সময় যেনো কাটতেই চায় না,১ মিনিটকে মনে হচ্ছে অনন্তকাল।
রাত তখন ১১:৪৫।মিলির চোখের ত্রিসীমানায় ঘুমের চিহ্ন নেই।সেই কখন থেকে বসে আছে,পায়চারি করছে আর একটু পর পর ঘড়ির কাটার দিকে তাকাচ্ছে।অবশেষে সময় অনেকটা কমে এসেছে এইবার আর মাত্র ১৫ মিনিটের অপেক্ষা।কিন্তু এই ১৫ মিনিট যেনো আরো বেশি সময় নিচ্ছে পার হতে।
ঠক ঠক আওয়াজ শুনতে শুনতে মস্তিষ্ক ভোতা হয়ে গেছে ওর।১১:৫৯ বেজে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭……………৫৫,৫৬,৫৭,৫৮,৫৯…..১২:০০।
–”শুভ জন্মদিন রিদ”

–ইহান!!!
মিলি ইহানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো আনন্দের অতিশয্যে। ইহান এতক্ষণ এখানেই ছিল কিন্তু সামনে আসে নি মিলিকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
–আরে আস্তে আস্তে।এতো হাইপার হতে হবে না।চলো যাবে না?

–হ্যাঁ,১০০ বার যাবো। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।

–এখন যদি রাগ,অভিমান করে বসে থাকো তাহলে কিন্তু আমি একাই চলে যাবো।

–আমি কান্না করবো কিন্তু?আমি যাবো বললাম তো।
ইহান মিলির কথায় হাসতে থাকে।তারপর মিলিকে চোখ বন্ধ করতে বলে।চোখ খুলে মিলি নিজেকে একটা নদীর তীরে আবিষ্কার করে।নদীর পানি কাচের মত স্বচ্ছ আর হালকা ঢেউ খেলানো,অসংখ্য বড় বড় নীল রঙের পদ্ম ফুলের মেলা বসেছে নদী জুড়ে।নদীর পাড়ের উপরে চোখ পড়লো মিলির,সেখানে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছে লালে লালে ছেয়ে গেছে।মিলির মনে হতে থাকে এখানে আরো বহুবার,বারবার এসেছে কিন্তু ঝাপসা রহস্যের কুয়াশায় কিছুই স্পষ্ট নয়।মিলি এমন সুন্দর পরিবেশ,জায়গা আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।মিলি আশপাশটা দেখতে দেখতেই অন্ধের মতো পাশে হাত দিয়ে ইহানকে খুঁজছে।
–ইহান,কি সুন্দর তাই না?
মিলি পাশ ফিরে দেখলো ইহান নেই কিন্তু ইহানের জায়গায় দাড়িয়ে আছে একটা ২৫ বছরের সুদর্শন যুবক।ছেলেটির গায়ের রঙ মাঝামাঝি কিন্তু ওর চুলগুলো অনেক সুন্দর,কুচকুচে কালো আর চোখজোড়া অসম্ভব সুন্দর।ছেলেটার সাথে ইহানের অনেকটা মিল আছে চোখ আর চুলের কিন্তু ইহান তো ১২ বছর আর এই ছেলে ২৪/২৫,তবে?মিলি ভয় পেয়ে ছেলেটার হাত ছেড়ে দিলো।
–কক কে আপনি?
ইহান বুঝতে পারলো মিলি ওকে ওর বাচ্চা রূপেই চিনতে পারবে শুধু।একটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ইহান মুহূর্তের মধ্যে ১২ বছরের কিশোরে পরিণত হলো।মিলি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে কিন্তু ও কিছু বলার আগেই রুশার কণ্ঠ শুনা গেলো।
–কেমন লাগছে এখানে রিদ?

মিলি পাড়ের কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো রুশা দাড়িয়ে আছে একগাল হাসি নিয়ে।
–তুমি আমার এই নামটা জানলে কিভাবে? ইহান যে আমায় বলতে মানা করেছিলো কাউকে! তুমিও বুঝি এখানেই থাকো?

–হ্যাঁ আমি এইখানেই থাকি।এই নামটা ইহানের কাছ থেকেই শুনেছি আমি।তোমার তন্ময়িকে কেমন লাগছে বললে নাতো?

–তন্ময়ী?

–ওহ্ বলতেই ভুলে গেছি। তম্ময়ী হলো এই নদীটার নাম।

–হ্যাঁ আমার অনেক ভালো লেগেছে।তোমাদের এখানে কতো সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে।

–তাহলে এখানেই থেকে যাও না কেনো?

–আমার আম্মু তো আমায় খুঁজবে।না দেখতে পেলে কষ্ট পাবে!
মিলি আর রুশা অনেকক্ষন গল্প করলো কিন্তু ইহান চুপচাপ উদাস হয়ে বসে তন্ময়ির বুকে ঢিল ছুড়তে লাগলো।
প্রায় ৩০ মিনিট পর রুশার সাথে গল্প করতে করতে যখন মিলি ক্লান্ত তখন ওর ইহানের কথা মনে পড়লো।
–ইহান তুমি ঐখানে বসে বসে কি করছো?এমনিতেই আমায় খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তখন ম্যাজিক করে।এখন কি এখনেই বসিয়ে রাখবে নাকি তোমার বাসায় নিয়ে যাবে?

–তুমি ইহানের ম্যাজিক দেখে ভয় পেও না।ও তো এমনই,সবসময় দুষ্টুমি।
ইহান মিলির দিকে তাকিয়ে জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে নদীর পাড় থেকে উঠে এলো উপরে ওদের দুজনের কাছে।
–চলো যাওয়া যাক।
মিলি সামনে হাঁটছে আর আশেপাশের ফুল গাছগুলো ছুয়ে দেখছে।এতো রকমের ফুল ও কখনো দেখেনি।সব ফুলগুলোই ওর অচেনা শুধু গোলাপ বাদে।মিলিকে ব্যাস্ত দেখে রুশা ইহানকে আড়ালে টেনে নিয়ে বিরক্ত সুরে বললো,
–এটা কি করছিলিস তুই?তুই কি পাগল?তুই জানিস না এতে কতো বড় সমস্যা হতে পারতো? রিদ যদি তোকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে তোকে আর বিশ্বাস না করতো,তখন কি হতো ভেবে দেখেছিস?
ইহান হতাশ হয়ে বললো,
–আমি পাগলই হয়ে গেছি।আমি আশা করেছিলাম এখানে এলে ওর সবটা মনে পড়ে যাবে হয়তো, কিন্তু তা তো হলোই না উল্টে আমায়ও চিনতে পারলো না!

–তুই কেনো এমন হয়ে গেছিস বলতো ইহান?তোর কি মনে নেই তুই কিভাবে আমাদের সবাইকে বলতি সাহস না হারাতে,চেষ্টা করে যেতে।তুই নিজেই তো বলতি সাফল্য আসবেই আসবে চেষ্টারত থাকলে।তাহলে আজ কেনো? কেনো ইহান?সেই পুরনো ওয়াহেদুল ইহানকে জাগিয়ে তোলা যায় না?

–না যায় না। রিদকে ছাড়া ওয়াহেদুল ইহান বলতে কিছুই নেই।আমি তোকে বলছি না এই নামটা বলবি না?এই নাম ততদিন পর্যন্ত আমার না যতদিন না রিদ আমার হচ্ছে পুনরায়। রিদকে ছাড়া ওয়াহেদের অস্তিত্ব ছিল না,থাকবে না। “ওয়াহেদ রিদ” আবারো এক হবে,এক স্রোতে ভাসবে, ভাসতেই হবে।নাহলে আবারো সেই ধ্বংস নেমে আসবে,আবারো মৃত দেহে ছেয়ে যাবে জ্বীন রাজ্য,আবারো নেমে আসবে সেই কলঙ্কিত অধ্যায়!
রুশা জানে ইহান একদম ঠিক বলছে আর ওকে বুঝিয়েও লাভ নেই অন্য কিছু তাই রুশা মিলিকে নিয়ে প্রাসাদের দিকে চললো,সাথে ইহানও।
প্রাসাদে আসতেই মিলি লক্ষ্য করলো সবাই ওকে দেখে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে।মিলি সেসবকে বাদ দিয়ে প্রাসাদটা দেখতে লাগলো। প্রসাদটা খুবই সুন্দর,পুরোটা শ্বেত পাথরের তৈরি সাদা ঝকঝক করছে।একফোঁটা কালোর ভিন্ন নেই এতটাই পরিষ্কার প্রস্বাদটা।ভেতরে ঢোকার পথে প্রতিটি পিলার বেয়ে লতার মতো পেঁচানো সুন্দর একটা অচেনা গাছ যেটায় লাল রঙের ফুল ফুটে আছে ছোটো ছোটো। সাদার মধ্যে লালের আবির্ভাব দেখার মতো দৃশ্য।মিলি মুগ্ধ হয়ে চারপাশটা দেখতে দেখতে বললো,
–তোমার বাড়ি এত্তো সুন্দর!!
কিন্তু তারপর পরই মিলির চোখ আটকে গেলো সিড়ি দিয়ে নামতে থাকা অসম্ভব পবিত্র দেখতে দুটি মূর্তির উপর তাই ইহান কি জবাব দিলো সেটা মিলির কানেই ধুক।একটা মহিলা আর একটা পুরুষ সিড়ি বেয়ে নামছে।তাদের মুখটা এতই পবিত্র আর উজ্জ্বল লাগছে যে মিলি স্তব্দ হয়ে গেলো।কেমন যেনো একটা টান অনুভব করলো ওই দুটো ব্যাক্তির জন্য,কিন্তু এদের তো এই প্রথম দেখলো,,,মিলি চিন্তা করতে লাগলো।

চলবে””””
(শেষ করতে পারলাম না,দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here