রহস্যের_কুয়াশা☠️ #পর্ব_১৫,১৬

0
192

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১৫,১৬
#হাফসা_ইরিন_রাথি
১৫

সিড়ি দিয়ে নেমে জ্বীন রাজ আর জ্বীন রাণী দিকে ব্যাথাকাতর স্নেহের দৃষ্টিতে তাকালেন।মিলির বুকের ভেতরটা কেমন ধুক্ করে উঠলো।মিলি বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে,যেনো অসম্ভব তোলপাড় চলছে ভেতরটায়,ইচ্ছে করছে ওদের জড়িয়ে ধরে কিন্তু সেটা কয়েক মুহূর্তের জন্য মাত্র। কয়েক মুহূর্তের এই অদম্য অনুভূতির কোনো ব্যাখা খুঁজে পেলো না ও।মিলি খেয়াল করলো জ্বীন রানীর চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে।হঠাৎ তিনি মিলিকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। জ্বীনরাজ অনেক কষ্টে নিজের স্ত্রীকে সামলে নিজের কাছে নিলেন।
মিলিকে পুরো প্রাসাদটা ঘুরিয়ে দেখালো রুশা, ইহান গেলো না ওদের সাথে কারণ ওর মনটা খারাপ আর আশাহত হয়ে আছে।মিলি বুঝতে পারলো না হঠাৎ ইহণের কি হলো কিন্তু জিজ্ঞেস করার আগেই রুশা ওকে টেনে নিয়ে গেলো সব ঘুরে দেখাবে বলে।
–”আমাদের প্রাসাদ,রাজ্য তোমার ভালো লাগছে তো?”

–”হুম খুব।
(একটু ইতস্তত করে)
আচ্ছা ওরা কারা?”
রুশা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললো,
–”কারা?”

–”ওই যে সুন্দর মহিলা আমায় জড়িয়ে ধরে কাদলেন,চুমু খেলেন?আর তার সাথে যেই ভদ্রলোক ছিলেন? তিনিই বা কে?”
রুশা অনেক কষ্ট নিজের দীর্ঘশ্বাস চেপে মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,
–”রিদ তুমি তো জানো যে আমরা তোমাদের মতো সাধারণ মানুষ না,আমরা জ্বীন।”

–”হ্যাঁ আমি জানি। ইহান আমায় বলেছিলো অনেক আগেই।আর মা বাবাও বলতো।কেনো বলোতো?”

–”উনাদের দুজন দুজনকে যে তুমি দেখলে,তারা ছিল জ্বীন রাজ আর জ্বীন রাণী।”

–”আমায় জড়িয়ে কাদলেন কেনো তবে?”(অবাক হয়ে)

–”অনেক বড় ইতিহাস আমাদের জ্বিনদের ইতিহাসে সেটা। পরে শুনিও অন্য কোনোদিন।আজ চলো, ইহানের কাছে যাই আর তোমার সাথে আরেকজনের পরিচয় করিয়ে দিবো।”

–”কার?”

–”চলই না।”
***
–”ওরা আবারো হামলা করতে চলেছে আমাদের জ্বীন রাজ্যে।আর সেটা সম্ভবত ১ সপ্তাহের মধ্যেই।”

–”সেটা কিভাবে সম্ভব? রিদের সব মনে পরার আগে ওরা কিছুতেই হামলা করবে না।”

–”কিন্তু ওরা সেটাই করছে। নিশ্চয়ই অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে ওদের।এটা কোনো নতুন চাল।”
মিলি আর রুশা রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু ইহান আর রিমাদ সেটা খেয়াল করে নি।মিলি সব কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে দেখে রুশা গলা খাকারি দিয়ে ওদের সতর্ক করে দিলো। রিমাদ কথা বলা থামিয়ে ওদের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললেন,
–”আরে তোমরা এসে গেছো!”
রিমাদের কথা বলার আগ্রহ চলে গেলো রুশার তীব্র দৃষ্টির সামনে। রুশা রিমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো মিলির। ইহান এতক্ষণে মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,
–”চলো তোমায় বাসায় রেখে আসি।”

–”না আমি যাবো না,আমিও তোমাদের সাথে যুদ্ধে যাবো।”
মিলির কথা শুনে ওরা ৩ জন মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। রিমাদ জানে এখন ওরা দুজন ওকেই দোষারোপ করবে মিলির কানে ব্যাপারটা পৌঁছানো নিয়ে তাই সে আগে বাগেই বললো,
–”যুদ্ধ?কিসের যুদ্ধের কথা বলছো তুমি?তুমি বাসায় যাও আবারো পরে আসিও ইহানের সাথে।”

–”হ্যাঁ চলো।তোমার মা বাবা তোমায় খুঁজবে।”
ইহান যাওয়ার জন্য উদ্ধত হয়ে মিলির হাত ধরলো কিন্তু মিলি এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে দিয়ে একরোখা ভাবে বললো,”আমি যাবো না,যাবো না,যাবো না।”
ইহান অবাক হয়ে গেলো সাথে রুশা, রিমাদও।মিলিকে এমন জেদী হতে কখনো দেখেনি ওরা কেউই। ইহান মিলিকে শান্ত করতে বললো,”তোমার বাসার সবাই তো তোমায় খুঁজবে।কেনো এমন জেদ করছো হঠাৎ?”

–”আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।আমি কিছুতেই যাবো না এখন।আমি যেতে পারি না।”(বিড়বিড় করে)
ইহান চিন্তিত হয়ে রুশা আর রিমাদের দিকে তাকালো। রুশা ওকে চোখ টিপে আশ্বস্ত করলো তারপর অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে থাকা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,”তুমি এখানে অপেক্ষা করো আমরা আসছি।চিন্তা করিও না,এখানে তুমি নিরাপদ।”
মিলিকে ঘরের মধ্যে রেখে দরজাটা চাপিয়ে রেখে ওরা তিনজন বেরিয়ে বারান্দায় হাটতে লাগলো।
–”রিমাদ,তুই এত্তো কেয়ারলেস কেনো? দেখলি তো এখন কি হলো?”

–”ওমা দোষ কি আমার একার নাকি?ইহানেরও দোষ আছে তাহলে।”

–ইহানের কিভাবে দোষ হয়?তুই ওর রুমে ঢুকেছিলি দরজা বন্ধ করার খেয়াল ছিল না?”

–”প্লিজ তোরা থামবি?এখন নিজেদের মধ্যে না লড়ে কি করা যায় সেটা বল। রিদের হঠাৎ কি হলো কিছুই তো বুঝতে পারছি না!”

–”আমার মনে হয় এখন জ্বীন রাজের সাথে দেখা করতে যাওয়াই বেটার।”

–”আমিও সেটাই বলি।”(রিমাদ)
রিমাদের কথা শুনে রুশা ওর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। ইহান ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–”এখন অন্তত তোদের ফালতু ঝগড়া রাখ,প্লিজ।

–”আমি ঝগড়া করছি নাকি?রোজা নিজেই তো আমার সাথে পায়ে পায়ে ঝগড়া করছে।”

–”হেই ইউ ননসেন্স,আমি মোটেও এমন ঝগরুটে না।তোর ভুলের জন্য সতর্ক করছি আর তাতেও তুই তর্ক শুরু করে দেস যেনো ডিবেটিং এ অংশগ্রহণ করেছিস জিতলে পুরস্কার পাবি।”

–”একদম বাজে কথা বলবি না রোজা।তুই সবসময় আমার পেছন ক্যান লেগে থাকস বলতো?তোর দরকার ছিল মানুষের ওই যে যুক্তিবিদ্যা না কি যেনো নামের একটা ফালতু ক্লাস আছে না?সেটা করা।আমি রাজা মশাই এর কথা বলে তোকে পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে পাঠিয়ে দেবার ব্যাবস্থা করছি।”
ইহান ওদের এসব আজাইরা ঝগড়ায় বিরক্ত হয়ে কানে আঙ্গুল গুজে জ্বীন রাজের রুমে দিকে হাটা শুরু করলো তাড়াতাড়ি। ইহানকে চলে যেতে দেখে রোজা রিমাদকে একটা চাটি মেরে ইহানের পেছনে দৌড়াতে লাগলো।

জ্বীনরাজ ওদের সব কথা শুনে চিন্তিত মুখে ভাবতে লাগলো ব্যাপারটা।
–”তুমি তো একবার রিদকে তোমার আর ওর ব্যাপারে একটা গল্প বলেছিলে।তখন ওর রিএক্ট কি ছিল?”

–”ওর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ছিল না,এমনকি ও গল্পের মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়েছিল।ও সেটাকে শুধুমাত্র একটা গল্পই ভেবেছিলো।”
জ্বীনারাজ আবারো চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগলেন। রিমাদ আর রোজা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ইতিমধ্যে ভুলে গিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকাতে লাগল প্রশ্ন সূচক ভাবে।ওরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জ্বীনরাজের উত্তরের প্রতীক্ষায়।
–”এখন দুটো উপায়ই বাকি আছে এর সমাধানের।প্রথমে সহজ উপায়টাই অবলম্বন করবো আমরা।”

–”কি সেটা?”

–”রিদকে অতীতের গল্প শুনাতে হবে।প্রথম থেকে।যেটুকু তুমি বলেছো তার পর থেকে।”

–”কিন্তু………”

–”কোনো কিন্তু নেই,এটাই সমাধানের পথ।”
জ্বীনরাজ ওদের সবাইকে নিয়ে রিদের কাছে যেতে লাগলো।

দরজায় ধাক্কা পড়ায় তাকিয়ে দেখলো মিলি।দরজার সামনে সবাইকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। জ্বীনরাজ ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
–”তুমি বসো মা।”
মিলি আবারো বসলো।মিলি ইহানের দিকে প্রশ্ন সূচক ভাবে তাকিয়ে আছে দেখে জ্বীনরাজ বললো,”তুমি কি ইহানের কাছ থেকে একটা গল্প শুনেছিলে?”
মিলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।
–”বাকিটা শুনতে ইচ্ছে করে না?”
মিলির সত্যি পরেরটা জানতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু সেটা অনেকদিন পর আর তখন ইহান জ্বীন রাজ্যে থাকায় জিজ্ঞেস করতে পারে নি।যখন ইহান গল্পটা শুনিয়েছিল তখন ও অনেক ছোট থাকায় গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।আর ব্যাপারটা একপ্রকার ভুলেই ছিল এতদিন কিন্তু আজ জ্বিনরাজের কথা শুনে খুব আগ্রহ হলো জানতে।মিলি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
জ্বীনরাজ বাদে ওরা ৩ জনই খুশি হয়ে মুচকি হাসলো কিন্তু জ্বীনরাজ জানেন এটাই হয়তো সমাধান না।

চলবে””
(পরের পর্বে সব রহস্য উন্মোচন হবে আর।)

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
#পর্ব_১৬
#হাফসা_ইরিন_রাথি
সেইদিনের পর থেকে প্রতিদিনই পাগলের বেশে তন্ময়ীর পাড়ে ইহান বসে থাকতো শুধু একটিবার রাজকন্যা রিদ,খাদিজাতুল রিদকে দেখার জন্য। ইহানের কাছে রিদ একটা অন্যরকম নেশা হয়ে যায় একসময়,একটা অভ্যাসে পরিনত হয় রিদ। ইহান এই রিদ নামক নেশা বা অভ্যাসে পড়ে গিয়ে ওর বাবার কথা ভুলেই গিয়েছিল।আসলে জ্বীনরাজ্য একটা একক রাজ্য কিন্তু রাজা সেলিয়াস,আহাম সহ আরো কিছু লোক বিদ্রোহ করে রাজ্য থেকে চলে গিয়ে রাজ্যের কিছু অংশ অধিকার করে তাতেই স্থায়ীভাবে থাকতে আরম্ভ করে আর স্বাধীনতা ঘোষণা করে।তাদের দলে অনেক রাজ কর্মচারী ও পরামর্শদাতা রাও যোগ দেয় ধীরে ধীরে।আর এভাবেই ইহান একজন রাজপুত্র হিসেবে বেড়ে উঠেছিল আর নিজেকে রাজপুত্রই জেনেছিল।রাজা সোলাইমান ছিলেন অনেক ধৈর্যশীল আর শান্ত স্বভাবের লোক।তিনি কোনো সিদ্ধান্ত খুব বিচক্ষণতার সাথে নিতেন।আর এর প্রমাণ হলো ছেলেদের সিংহাসনে না বসিয়ে তার সুযোগ্য কন্যা খাদিজাতুল রিদকে সিংহাসনে বসানো।আসলে রাজার ২ পুত্রই ছিল রাজা হওয়ার অযোগ্য।কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি তার পুত্রদের সুশিক্ষারও অভাব রয়েছে।তাদের রাজ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে তারা খুবই ক্ষেপে যায় এবং বিদ্রোহীদের দলে ভিড়ে যায়।রাজা খুবই হতাশ হলেন আর দুঃখ পেলেন ছেলেদের এই কাজে।তার পুত্ররা ছড়াতে থাকে যে রাজামশাই ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছেন,তার মধ্যে অপরাধ আর পাপাচার বাসা বেঁধেছে কারণ তিনি ইসলামী বিধান না মেনে সিংহাসন শুধুমাত্র তার কন্যার নামেই দিয়েছেন।আসলে রাজা মশাই চাইছিলেন এই দুর্যোগের মুহূর্তটা যাতে রাজকন্যা রিদ তার বিচক্ষণ হাতে সামলিয়ে নেয় আর দুর্যোগ শেষ হলেই তিনি সবার মাঝে ভাগ করে দিতেন শাসনভার।কিন্তু তার পুত্ররা তার কথাকে মিথ্যে ছল ভেবে রাজ্য ছেড়ে দেয় এবং অলিভার আর আহামের দলে যোগ দেয়।রাজকন্যার বয়স তখন ছিল ১৭,তার ভাইরা তার থেকে বয়সে যদিও বড় ছিল কিন্তু ছিল দুটোই অপদার্থ।এভাবেই চলতে থাকে আর আস্তে আস্তে রাজ্যের অনেকে রাজপুত্রদের কথায় বিশ্বাস করে রাজার বিশ্বস্ততা ত্যাগ করে।কিন্তু তবু রাজকন্যা ছিল রাজ্যের রত্ন স্বরূপ,তিনি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার রাজ্যের প্রতি হওয়া আক্রমনগুলো বেশ বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলের মাধ্যমে দৃঢ় হাতে প্রতিহত করেন।
ইহান,ওয়াহেদুল ইহান ছিল আহামের একমাত্র পুত্র।আহাম ছেলেবেলা থেকেই তার পুত্রকে সব সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল তাই ইহান কেবলমাত্র তার বাবাকেই বিশ্বাস করতো।কিন্তু যখন রিদের উপর সে নজর রাখার জন্য আসে তখন সে আস্তে আস্তে রিদের প্রেমে ডুবে যেতে থাকে, ইহানের ভালোবাসা ওকে মানসিকভাবে এতটাই শক্তিশালী করতে পেরেছিল যে ও চোখ বন্ধ করেই রিদকে বিশ্বাস করতে পারতো যেনো রিদ যা করছে সব ঠিক,সব কল্যাণকর।এদিকে রাজা আহাম প্রতীক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যায় অথচ পুত্রের কাছ থেকে কোনো সংবাদ পান না।সে শুধু বলে আরেকটু সময় চাই।তাই তিনি একটা চর পাঠিয়ে রাজপুত্রের খবর নিতে শুরু করলেন।
রাজকন্যা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে যে এই লোকটা পাগল না কেবলমাত্র ভান করে থাকে পাগলের,ছদ্মবেশী।রাজপুত্রকে রাজপ্রাসাদে ধরে আনা হয়।এবং সে জানায় যে সে রাজা আহামের পুত্র।রাজপুত্রের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়,তাকে আটকে রাখা হয় কিন্তু এতকিছুও তার কাছে তুচ্ছ মনে হতো যখন রাজকন্যা দিনশেষে একবার কয়েদখানায় এসে তার সম্মক্ষিন হতো,তার কাছ থেকে গোপন তথ্য বের করতে।কিন্তু কোনো লাভ হতো না কারণ ইহান সত্যিই ওর বাবার বিদ্রোহের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল।রাজকন্যা ওকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে করেও ব্যার্থ হচ্ছিলেন, ইহান কিছু তো বলতই না উল্টে শুধু তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসতো।রাজকন্যা ভেবে কুল পেতো না যে কিভাবে এতো চাবুক মারার পরেও একটা ছেলে এভাবে প্রেমময় হাসতে পারে!কিন্তু সে কিছুই না বলে গম্ভীর মুখে চলে যেতো।
চর আহামকে খবর দেয় যে রাজপুত্র এতদিনে কিছুই করেনি শুধু বসে থেকে রাজকন্যাকে দেখে গেছে পাগল সেজে।রাজকন্যা তাকে বন্ধী করেছে এবং সে এখন কয়েদে আছে।আহাম এই কথা শুনে খুব চিন্তিত ও রেগে গেলেন।তিনি রাজপুত্রকে ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করলেন রাজপ্রাসাদের একজন বিশ্বস্ত চরের মাধ্যমে যে কিনা রাজপ্রাসাদে থেকে সব ধরনের খবর দেয় ওদের।আর সেই চর আর কেউ ছিল না,ছিল বৃদ্ধ সেনাপতির পুত্র সাঈদ। সাঈদ রাতের অন্ধকারে রাজপুত্রকে পালাতে বললেন আর সব ব্যাবস্থা সে করে দিবে সেটাও বললো কিন্তু ইহান যেতে চাইলো না।কারণ এখানে থেকে সে প্রতিদিন রাজকন্যাকে দেখতে পেতো কিন্তু চলে গেলে আর সেটা সম্ভব না। সাঈদ ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে পালাতে রাজি করলো। সাঈদ বললো,
–আপনি না গেলে আপনার বাবা এই রাজ্য আক্রমণ করবেন,তখন নিশ্চয়ই রাজকন্যার অনেক সমস্যায় পড়তে হবে,আপনি কি সেটাই চান?
ইহান তখন বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যায়।সেদিন রাতেই সে নিজের রাজ্যের উদ্দেশে রওনা হলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে সে এতো বড় সমস্যা সম্মক্ষীন হতে হবে সেটা ভাবতে পারে নি।সেদিন ইহান প্রথম বুঝতে পারলো যে ওর বাবা নিজের স্বার্থের জন্য নিজের ছেলের জীবনকে অনিশ্চিতের দিকে ঠেলে দিতেও রাজি। ইহান ভেবেছিলো বাবাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানালে তিনি ওই রাজ্যের সাথে শত্রুতা পরিহার করবেন আর এখন সে তার বাবার সম্পর্কে শোনা সব কিছুকে বিশ্বাস করতে লাগলো যেমন তিনি শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য নির্বিচারে অনেক জ্বীন মারছেন। ইহান সেখানে গিয়ে জানতে পারলো পরেরদিনই রাজা সেলিয়াসের কন্যা সাফিয়ার সাথে ওর বিয়ে হবে,বিয়ের সব বন্দোবস্ত করা হয়ে গেছে। ইহান তার ছোটবেলার দুই প্রাণপ্রিয় বন্ধু রিমাদ ও রোজার সাহায্যে রাজ্য থেকে পালায়,সাথে করে বন্ধুদেরও নিয়ে যায়। রিমাদ ছিল সেনাপতির পুত্র আর রোজা ছিল মন্ত্রীর কন্যা।
আবারো ওরা চলে এলো রিদ এর রাজ্যে।কিন্তু বিপত্তি যা হবার ছিল তাই হলো।রাজকন্যা কিছুতেই বিশ্বাস করছিলো না ওদের কথাবার্তা।কিন্তু ইহান যখন ওকে দস্তখত করে দিলো সে এই রাজ্যের বিরুদ্ধাচরণ কখনো করবে না উল্টে সাহায্য করবে তখন সে একটু বিশ্বাস করলো এবং ইহানের কথা অনুযায়ী সেনাপতির পুত্রকে হত্যা করা হলো,কারণ রিদেরও সাঈদকে সন্দেহ হতো। ইহান, রিমাদ আর রোজাকে কয়েদঃখানায় না রেখে অতিথিশালায় রাখা হলো কারণ ওরা রাজ্যের উপকার করেছে আর আশ্রয়প্রার্থী ছিল। রিদের পেছনে সারাক্ষণই লেগে থাকতো ইহান।এতে রিদ বিরক্ত হয়ে ওকে বললো আর এমন করলে প্রাসাদ থেকে বের করে দেবে। ইহান এর পর থেকে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো ওকে।একদিন ভরা পূর্ণিমার রাতে ইহান রিদের রুমে গেলো।
–তুমি এই সময় আমার কক্ষে?কোনো বিশেষ প্রয়োজন?

–আমার সাথে তন্ময়ীর পাড়ে যাবে?
রিদ ওর কথা শুনে সন্দেহের দৃষ্টিতে ব্রু কুচকে তাকালো দেখে ইহান তাড়াতাড়ি করে হেসে বললো,
–না না তোমার কোনো ক্ষতি করতে আমি চেষ্টা করবো না।তুমি সাথে রক্ষী নিয়ে নাও,কোনো সমস্যা নেই।
রাজকন্যা সাথে করে ৫ জন দেহ রক্ষী নিয়ে তন্ময়ীতে গেলো ইহানের সাথে কারন তার নিজেরও বোরিং লাগছিলো প্রাসাদে একা একা।
–তুমি এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে ভাবিনি।

–আমারও একগুয়ে লাগছিলো,নাহলে আসতাম না।

–কেনো?তোমার কি কোন বন্ধু নেই নাকি?

–উহুম…..
রাজকন্যা খুব ছোট ছোট করে ইহানের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলো কিন্তু তবুও ইহান দমবার পাত্র নয় সে প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল।একটু একটু করে অনেক কথা হলো দুজনের মাঝে।চাঁদের আলোয় রিদের সৌন্দর্য আরো শতগুণে বেড়ে গিয়েছিল আর তার উজ্জ্বল সোনালী চুল গুলো চাঁদের আলোয় ঝলঝল করছিলো। সেদিন ইহানের প্রতি রিদের বিশ্বাস আরো একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল।এভাবে তাদের মধ্যে একটা অলিখিত বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রিদ নিজের জীবনে যেনো একটা নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছিলো ধীরে ধীরে।আগে তার জীবনে বন্ধুত্ব,ভালোবাসা বলতে তেমন কিছুই ছিল না।কিন্তু ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা দিনদিন সে পেতে থাকে। রিমাদ আর রোজার সাথেও বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় আর ওরা সবাই সমবয়সিই ছিল।
ইহানের সাথে প্রতি চাঁদনী রাতেই রিদ আকাশের ছায়াতলে চাঁদের স্পর্শে কাটাতো কিন্তু এখন আর রক্ষীর প্রয়োজন মনে করতো না।ধীরে ধীরে রিদ ইহানের উপর দূর্বল হয়ে পড়লো কিন্তু তাদের এই ভালোবাসার কোনো মৌখিক প্রকাশ ছিল না,কিন্তু মনে মনে দুজনই দুজনকে ভালোবাসতো। ইহান প্রতিদিন তন্ময়ীর পাড়ের সেই কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে একগুচ্ছ ফুল এনে রিদ এর চুলে গুজে দিতো।
এভাবেই সব ভালো চলছিল কিন্তু ভালো শুধু উপরকার রূপ ছিল প্রকৃতপক্ষে আহাম আর সেলিয়াস নতুন পরিকল্পনা করছিল।রাজকন্যা রিদ যদিও ইহানের উপর পূর্ণ বিশ্বাস করতো কিন্তু তার বাবা রাজা সোলাইমান ইহাকে বিশ্বাস করতে পারতো না।
প্রায় ২ মাস যাবৎ ইহান, রিমাদ আর রোজা জ্বীনরাজ্যে আছে কিন্তু কোনো আক্রমণ বা বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা গেলো না কিন্তু রাজকন্যা বুঝতে পেরেছিল কোনো এক বড় ঝড় আসতে চলেছে ওদের উপর।
দিনটা ছিল মঙ্গলবার। সেদিনটাও অন্যান্য দিনের মতোই রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল কিন্তু এমন একটা ঝকঝকে দিনেই হঠাৎ খবর এলো রাজ্যের পশ্চিম–পূর্ব দিক থেকে রাজা আহাম আর রাজা সেলিয়াসের প্রায় ৩০০০০ হাজার সৈন্য আক্রমণ আর লুটতরাজ করতে করতে আসছে।তারা নাকি সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করছে,তলোয়ারের এককোপে অগণিত দুর্বল,অসহায় জ্বিনদের প্রান গেছে জানতে পেরে রাজকন্যার কোমল হৃদয় কেপে উঠলো,সে খুব রেগে গিয়ে রাজ্যের সব সৈন্যদের নিয়ে রওনা হলো রাজ্যের পশ্চিম দিকে।ওদের সৈন্য ছিল মাত্র ১০০০০ হাজারের মতো।ওদের সাথে রিমাদ, ইহান আর রোজাও যোগ দিলো।রাজা সোলাইমান কন্যাকে একাকী ডেকে পরামর্শ দিলেন ওদের উপর নির্ভর না করতে,বিশ্বাস না করতে।কিন্তু রাজকন্যা পিতার এমন কথার কোনো জবাব না দিয়ে যুদ্ধের পথে পা বাড়ালো।কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে যা দেখলো তাতে তার মানসিক ভারসাম্য অনেকাংশে হারিয়ে ফেললো।পুরো প্রান্তর জুড়ে শুধু লাশ আর লাশ,রক্ত আর রক্তে লাল পানির মতো ভেসে যাচ্ছে যুদ্ধ প্রান্তর।এর আগে রাজকন্যা অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও এতো মৃত্যু আর রক্তারক্তি সে দেখেনি। জ্বীনদের ইতিহাসে এমন রক্তারক্তি আর ঘটে নি।এটা ছিল জ্বীন ইতিহাসের একটা অত্যন্ত জঘন্য আর কলঙ্কিত অধ্যায়!

চলবে”””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here