আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_২৭

0
609

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৭
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

গাড়ি এসে থামে বাড়ির ঠিক সামনে। সুবহার দৃষ্টি এখনো বাইরের দিকে। ও খুব মনোযোগ সহ চারোপাশ চোখ বুলিয়ে দেখছে।

গেইটের সামনে চার থেকে পাঁচ জন গার্ড পাহারা দিচ্ছে আর বাড়ির দরজার বাইরেও দুজন গার্ড। সুবহা একটু খেয়াল করে দেখতেই চারপাশে কয়েকটা সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পায়।

বাড়িটা যেমন সুন্দর তেমনি এর সেফটি ব্যবস্থা। একটা পাখিও যদি এখানে এসে বসে সেটাও কারো দৃষ্টির আড়াল হবে না। এতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখেও তেমন একটা অবাক হলো না সুবহা, কারন এই ব্যাপার গুলো আহামরি কিছু না রওশন রায়জাদার জন্য।

সুবহার ধ্যান ভাঙ্গে দরজা খোলার শব্দে। রওশন ওর পাশের দরজা খুলে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সুবহা রওশনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে রওশনের আশেপাশে তাকালো, হুইলচেয়ার আছে কিনা সেটা দেখার জন্য। কিন্তু হুইলচেয়ার তো আশেপাশে কোথাও দেখতে পেল না সুবহা।

সুবহা এবার রওশনের দিকে তাকালো, চোখ দুটো কুঁচকে কপালে ভাঁজ টেনে বলল ও…

“ আপনি কী ভুলে গেছেন যে আমার পায়ে ব্যথা?হুইলচেয়ার ছাড়া যাব কিভাবে?” মুখটা ভার করে কথা গুলো বলল সুবহা। ওর কথার প্রতিউত্তরে রওশন কিছু বলল না কোনো ধরনের রিয়েকশনও দিল না, বরং হুট করে সুবহার হাত টেনে কাছে এনে ওকে কোলে তুলে নিল।

রওশনের এমন হঠাৎ আক্রমণে হচকিয়ে যায় সুবহা। চোখ দুটো বিস্ময়ে ভরে যায় ওর। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সুবহা রওশনের দিকে।

কিন্তু রওশনের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, ও সুবহাকে কোলে তুলে সোজা বাড়ির ভিতরে হাঁটা ধরে। রওশন যেতেই একজন গার্ড দৌড়ে এসে গাড়ির দরজা বন্ধ করলো তারপর আবার আগের ন্যায় নিজের পজিশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

রওশন সুবহাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। কিন্তু এভাবে রওশনের কোলে চড়ে সুবহারই নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে। ও আফসোস করছে প্রচন্ড আফসোস, কেন যে রওশনের কোলে উঠার ইচ্ছে প্রকাশ করলো? এখন ওর উপর দিয়েই ঝড় যাচ্ছে।

হার্টবিট বেড়ে ভয়ঙ্কর গতি ধারণ করেছে। রওশনের উম্মুক্ত বুকে বারাবার মাথা লাগছে ওর। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ দুটো রওশনের বুকের উপরই যাচ্ছে সুবহার। বরাবরই রওশন নিজের শার্টের উপরের দুইটা বাটন সবসময় খুলে রাখে যার ফলে ওর বুকের কিছুটা অংশ উম্মুক্ত থাকে।

অবশ্য দূরত্ব থেকে এভাবে রওশনকে দেখতে আকর্ষণীয় লাগলেও এতটা কাছ থেকে দেখাটা যেন নিজের জন্যই এক প্রকার শাস্তি।

রওশনের বুকের সাথে মাথা লাগতেই গায়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সুবহার। শরীর কাঁপছে, নিঃশ্বাস ঘন হচ্ছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে চোখ দুটোকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে সুবহা।

অন্য দিকে নীল বেডে বসে ড্রইং করছিল এর মধ্যেই গাড়ির শব্দ কানে আসতেই বুঝে যায় ও যে রওশন ফিরে এসেছে।

নীল সবকিছু ছড়ানোছিটানো অবস্থায় ফেলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সিড়িঁ অব্দি এসেই ও দেখতে পায় রওশন সুবহাকে কোলে তুলে পাশের রুমের দিকে যাচ্ছে। নীল এক মিনিটও সময় নষ্ট করলো না দৌড়ে ওর পিছু চলে গেল।

এই দিকে রওশন সুবহাকে রুমে এনে বেডে বসিয়ে দেয়। সুবহা এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। বেডে বসাতেই ও নড়েচড়ে ঠিক হয়ে বসলো।

এমন সময় নীল দৌড়ে দরজা‌ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়ে যায়। মাথা বাঁকিয়ে ও ভিতরের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করে।

এতক্ষণে ও সুবহার চেহারা দেখতে পায়। সুবহাকে দেখে ঠোঁটে বড় একটা হাসি টেনে ভিতরে ঢুকে পরে ও, “ সুবা! তুমি এসেছো?” জোরে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে বেডে লাফিয়ে উঠল নীল। সুবহার পাশে গিয়েই বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো ও।

“আই মিসড্ ইউ সুবা!” সুবহার গলা জড়িয়ে ধরে গোমড়া মুখ করে বলল নীল।

“আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি নীলু!” সুবহা নীলের গাল টিপে হেসে বলল।

নীল সাথে সাথে নিজের গাল ঘষল তারপর নাক কুঁচকে বলল “ ডোন্ট কল মি দ্যাট! কেমন মেয়ে মেয়ে লাগে। আমার নাম নীল, নীলু টিলু না ওকে। ”

এইদিকে রওশন ওদের দুজনকে দেখছে। কপালে হালকা ভাঁজ নিয়ে কিছুটা ভারি গলায় বলতে শুরু করে ও, “ নীল!”

“ ইয়েস!” রওশনের ডাকের প্রতিউত্তরে ওর দিকে তাকাল নীল। রওশন দু হাত বুকে ভাঁজ করে বলতে শুরু করে, “ তুমি সুবহাকে ওর নামে ডাকছ কেন? এটা কেমন ম্যানার্জ? ও তোমার বড় স্যো ওর নামের পরে আপু অথবা নামের আগে মিস লাগাবে, ওকে?”

রওশনের কথা গুলো যেন নীলের পছন্দ হলো না। কপাল কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলতে শুরু করে ও, “ আজব, আমি কেন সুবাকে আপু ডাকব? ও কী আমার বোন? আর মিস বলবোই বা কেন? ও কী আমার টিচার? তোমার ইচ্ছে হলে তুমি ওকে আপু বলো আমি বলব না।” কথা গুলো বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় নীল। অন্য দিকে নীলের কথা শুনে রওশন পুরোই হতভম্ব, স্তব্ধ। ও নাকি সুবহাকে আপু ডাকবে? এমন কিছুও কখনো শুনতে হবে কখনো ভাবেনি রওশন। সুবহা ঠোঁট চেপে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রওশন একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে আবারো বলে।

“ সুবহা আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট। তাই ম্যানার্জ অনুযায়ী আমি ওকে নাম ধরেই ডাকব।”

“ তাহলে সুবহা তোমাকে ভাইয়া ডাকবে প্রবলেম সলভড্। কিন্তু আমি ওকে আপু বলব না, না মানে না। ” ‘তাছাড়া সুবহা কী আর তোমার মত!’ শেষের কথাটা নিচু স্বরে বলল নীল তবুও শব্দ গুলো স্পষ্ট রওশনের কান অব্দি পৌঁছালো।

“ হোয়াট ডু ইয়ু মিট বায় আমার মতো? ”

“ তুমি শোনতেই যেহেতু চাচ্ছো তাহলে শোনো, যখন আমি তোমাকে প্রথমবার দেখেছিলাম তোমাকে দেখে তো আমার আঙ্কেল আঙ্কেল ভাইভ এসেছিল। আমিতো ভুলে তোমাকে আঙ্কেলই ডেকে ফেলেছিলাম ভুলে গেছো? ”

রওশনের মুখের উপর চটপট করে কথা গুলো বলে ফেলল নীল, তারপর ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হাসলো। ওর এমন কথা শুনে রওশনের চোখ কপালে। সুবহা এবার শব্দ করেই হেঁসে দেয়।

কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না রওশন। এ ছেলের সাথে ওর কী শত্রুতা ও বুঝে পায়না। কদমে কদমে ওকে কথা শোনায় এ পিচ্চি, একটাও সুযোগ হাত ছাড়া করে না ওকে লজ্জায় ফেলার। রওশন এবার সহ্য করলো না রাগী গলায় বলল ও, “ কোন এঙ্গেল দিয়ে আমাকে আঙ্কেল মনে হয় তোমার?”

“ সব এঙ্গেল দিয়ে।” রওশনের মুখের উপর জিভ বের করে ভেংচি কেটে কথাটা বলল নীল। “ তোমার বিগ বডি আর রাগী ভয়েজ মিলিয়ে একদম আঙ্কেল আঙ্কেল টাইপ মনে হয় তোমাকে। আর তুমি হয়ত তোমার এইজের কথা ভুলেই গেছো, লেট মি রিমাইন্ড ইউ মিস্টার টুয়েন্টি নাইন….

নীল আর কিছু বলবে তার আগেই রওশন ওর পা টেনে ওকে নিজের সামনে আনার চেষ্টা করে, আর নীল ভয়ে জোরে চেঁচিয়ে বিছানা খামচে বাঁচার চেষ্টা করে।

“ আজকে একটু বেশিই চলছে তোমার মুখ টেপ মারতে হবে বুঝেছি।” – নীলের পা ধরে টানতে টানতে বলে রওশন।

“ আহ্ লীভ মি, সুবা হেল্প! আমি কিন্তু মার্শাল আর্ট জানি ব্রো!” – নিজের পা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে চেঁচাচ্ছে নীল। কিন্তু রওশন ওকে ছাড়তে নারাজ। এক পর্যায়ে যখন নীলের হাত ছুটে যায় সাথে সাথে সুবহা ওর হাত ধরে ফেলে। “ ডোন্ট ওয়ারি নীল আমি তোমার টিমে আছি।”

রওশন সুবহার দিকে অবাক চোখে তাকায়। একটু আগেই রওশন যাকে বাঁচিয়ে আনল সেই এখন ওর বিপক্ষে চলে গেল।

রওশন নীলকে নিয়ে টানাটানি করে এক পর্যায়ে হার মেনে ওকে ছেড়ে দেয়, সাথে সাথে নীল হন্তদন্ত হয়ে সুবহার পেছনে লুকিয়ে পরে।

“ তোমাকে আমি পরে দেখছি।” আঙুল তুলে ধ*ম*কি স্বরে বলে রওশন নীলকে। কিন্তু নীল ভ*য় পাওয়ার বদলে উল্টো সুবহার পেছন থেকে মাথা বাঁকিয়ে জিভ বের করে ওকে ভেংচি কাটে।

এইদিকে,,,

বাড়ির একজন সার্ভেন্ট এতক্ষন রওশন সুবহা আর নীলের উপর নজর রাখছিল। ওদের ব্যস্ত দেখে এই সুযোগে লোকটি দ্রুত উপরে নীলের রুমে চলে আসে।

লোকটির হাতে মিডিয়াম সাইজের একটা‌ বক্স। লোকটা আশেপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বক্সটা রাখার জন্য সুরক্ষিত স্থান খুঁজে।

অবশেষে নীলের বেডের পাশের টেবিলের ল্যাম্পের পেছনে বক্সটা রেখে দেয় সে। বক্সটা এমন ভাবে রাখা হয়েছে যেন শুধু লাইট অফ করতে নিলেই বক্সটা দেখা যায়।

নিজের কাজ শেষ করতেই লোকটি বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায় তখনই একটা ছোট খেলনা গাড়ির উপর ভুলবশত পা রেখে দেয় সে, আর অপ্রস্তুত ভাবে ফ্লোরে পড়ে যায় লোকটি। পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে বিছানার চাদরও খামচে ধরে সে কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।

খুব জোরে পড়ে যাওয়ার ফলে পায়ে আঘাত পায় লোকটি, কিন্তু নিজের ব্যথা অগ্ৰাহ্য করে দ্রুত উঠে কোনো রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বের হয়ে যায় সে।

অন্য দিকে রওশন রাগ দেখিয়ে সুবহার রুম থেকে চলে আসে। বিরবির করে ওদের বকছে আর জোরে জোরে হাঁটছে রওশন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রেগে আছে ও।

নীলের রুম ক্রস করে যাওয়ার সময় রওশনের চোখ যায় রুমের ভেতরে। বিছানার বালিশ ফ্লোরে পড়ে আছে।

“ ছেলেটা এত অগোছালো কেন?” – রওশন মুখে বিরক্তি টেনে রুমে ঢুকে পরে আর ফ্লোর থেকে বালিশটা তুলে বিছানায় রেখে দেয়।

বালিশটা রেখে দিয়ে চলে আসতে নিলেই ফ্লোরে কিছু একটায় রওশনের দৃষ্টি আটঁকে পড়ে।

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here