শব্দহীন_বৃষ্টি (৩১)

0
1137

শব্দহীন_বৃষ্টি
(৩১)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
__________________________
গ্রীষ্ম, বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত,শীত,বসন্ত ছয়টি ঋতু দু’বার করে কেটেছে মাহিয়ার জীবনে সাগরের প্রেমে পড়ে। অগোছালো চুলের মানুষটার গোছালো জীবনে মাহি শুরুর দিকে মূল্যহীন এক পরিচিতা ছিলো বটে। কিন্তু আজ! আজতো মাহিয়া শুধু পরিচিতা নয়। বুকের ভেতর থাকা হৃৎপিণ্ডটার ধকধক করে ছন্দ তোলার কারণও হয়ে আছে। গোলাপি ডায়েরির স্বপ্নকুমারী ভালোলাগায় থাকলেও মাহিয়া তো অস্তিত্ব হয়ে তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। সাগর নিজের চারপাশে উঁচু পাঁচিলের মত এক দেয়ালে আবদ্ধ পায় নিজেকে আর সেই দেয়াল মাহির পাগলামো ভরা ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু নয়। অথচ আজ কয়েকটা মাস ধরে সেই পাঁচিল সরে গেছে তার জীবন থেকল। ঝড়বৃষ্টির রাত গুলোতে ছাঁদে সাগর ভিজতে যায় নিয়ম করে। অপেক্ষা করে মাহিয়া আসবে হয়তো। হয়তো বলবে আপনি কি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন? খুন করে ফেলবো আপনাকে। দাদুনী কেন অন্য মেয়ে খুঁজছে আমি তো আছি বলুন না। এখন তো আর মাহি ছাঁদেই আসে না বৃষ্টির দিন ছাড়া। তাই সাগরও আসা ছেড়ে দিয়েছে। কোন কমিটমেন্ট ছাড়াই যেন দু’জনের মধ্যে কতোশত কমিটমেন্ট হয়ে আছে৷ বড্ড বিতৃষ্ণায় কাটে সাগরের সময়। নিয়ম করে অফিস আর বাড়ি ছুটির দিন গুলোতে গিটার নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে পুরনো ক্লাবটায়। কলেজ লাইফে তৈরি হয়েছিলো সেই মিউজিক ক্লাব যার প্রতিষ্ঠাতা সাগর আর তার বন্ধু তামিম। অনার্স শেষ হতেই সাগর ছিটকে পড়ে সেই মিউজিক লাইফ থেকে সরে যায় তামিমও। তারপর থেকেই কিছু জুনিয়র ছেলে সেই ক্লাবটাকে চালিয়ে যাচ্ছিলো৷ সেখানেই কত কত ছেলেমেয়ে এখন গান শিখছে, বিভিন্ন ফাংশনে গানের কনসার্ট করছে৷ সাগরের এখন আর কোন দিকেই মন নেই । বাড়িতে দাদুনীর দেওয়া প্রেশার খুব বিয়ে নিয়ে।সব বন্ধুরা বিয়ে করে নিয়েছে আমারও এবার করা দরকার। মেয়েও প্রায় ডজন খানেক দেখা হয়ে গেছে আর অবশ্যই প্রত্যেকটা মেয়ে আমার থেকে দশ, বারো বছরের ছোট। কারণ একটাই মাহির বাবা মেয়ে ছোট বলে ফিরিয়ে দিয়েছে তবে কি সাগর বুড়ো তার মেয়ের সামনে। দাদুনীর এই এক বদঅভ্যাস যে কোন ব্যাপারেই জেদ দেখায় বাচ্চাদের মত৷ মাহির বাবা তো ভালো করে বুঝিয়েই বলেছিলো এখানে জেদ করার কি আছে সাগর বোঝে না। আবার দাদুনীর বিপরীতে কিছু বলতেও পারছে না। এ কয়েকমাসে মেয়ে দেখা ছেলের বায়োডাটা দেওয়া সব করে ফেলেছে। সাগর চুপচাপ ছিলো। মাহিকে সে ভালোবাসে কিনা আজোও বলতে পারে না। রাতের ছাঁদ,সকালে জানালার সামনে কখনো গেইটের কাছে গভীর দৃষ্টি রাখে সাগর। মাহিকে দেখা যায় না কোথাও।

–নিরব ফোন করছে তোকে সেই সকাল থেকে ধরছিস না কেন?”

–” কেন ফোন দিচ্ছে?”

–” নিজেই জিজ্ঞেস কর” বলেই ফোনটা হাতে দিয়ে গেল চামেলি।

–” হ্যা ভাইয়া বলো।”

–” ফোন ধরিস না কেন? আচ্ছা শোন, জলদি তৈরি হয়ে নে আমরা কনসার্টে যাবো।” ওপাশ থেকে নিরব বলল। খুবই প্রাণোচ্ছল শোনালো তার গলা। কিন্তু মাহির কোন উত্তেজনাই কাজ করলো কনসার্ট এর কথা শুনে৷ এখন তো সে বৃষ্টি দিনে ছাঁদের সিঁড়িতে লুকিয়ে সাগরের গান শোনা ছাড়া আর কারোই গান শোনে না। রোজ অপেক্ষা করে বৃষ্টি কবে হবে আর সাগর ছাঁদে ভিজতে ভিজতে খালি গলায় গান গায়।

মাহির কোন জবাব না পেয়ে নিরব আবার বলল, ” লক্ষী বোন আমার প্লিজ তৈরি হয়ে নে৷ না করিস না আজ একটা সুযোগ মিনহা কে নিয়ে বেড়োবার। তুই না গেলে তাকে দিবে না তার পরিবার। ” ভাইয়ের কথা শুনে মাহির ভালো লাগলো। নিরব তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে একটু সময় কাটাতেই মাহিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। মাহি গেলে যদি নিরব তার হবু বউকে নিয়ে কনসার্টে যাওয়ার অনুমতি পায় তবে মাহি কেন এতটুক করবে না৷ আফটারঅল নিরব শুধু তার ভাই নয় বন্ধুও।

–” আচ্ছা ভাইয়া আমি ভাবিকে নিয়ে আসবো কিন্তু এক শর্ত। ”

–” তোর সব শর্ত মঞ্জুর বনু ফটাফট রেডি হয়ে চলে আয়।” নিরবের যেন খুব তাড়া তার কথাতে তেমনই মনে হলো। মাহিও আর দেরি করলো না। আজ শুক্রবার এমনিতেই তার টিউশন পড়তে যাওয়ার নেই আবার বাড়িতে থাকতেও ভালো লাগছে না। মা’কে বলে মাহি দশ মিনিটেই তৈরি হয়ে নিয়েছে।সাজগোজ করার কোন ইচ্ছেই ছিলো না কিন্তু মিনহার জন্য তাদের বাড়িতে ঢুকতে হবে তাই একটু পরিপাটি হয়ে নিলো। নতুন আত্মীয় বাড়ি বলে কথা। খোলা চুল চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক, কানে দুল কোনটাই বাদ পড়েনি সাজ থেকে তার। একজনের শূন্যতায় নিজেকে নিশ্চয়ই দেবদাসীতে পরিণত করার কোন মানেই হয় না৷ বুকের ভেতর একতরফা ঝড় সেটা বুকের ভেতরেই থাক বাহিরে সেই ঝড়ের তান্ডব নাই-বা এলো।

মিনহা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো শুধু মাহির অপেক্ষা । নিরব অবশ্য হবু শ্বশুড়বাড়ির ভেতরে গেল না। সে গাড়ি নিয়ে গলির মোড়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। বিয়ে ঠিক হয়েছে মাত্রই মাস এক আগে। এনগেজমেন্টও তেমন ভাবে হয়নি তাই সংকোচ । এরমধ্যে মিনহার পরিবার একটু রীতিনীতি সংস্কৃতিতে একটু পুরনো ধাঁচের তাই হবু বরের সাথে মেয়েকে একা ছাড়তে রাজী নন তাই মাহিকে আনতে হলো৷ মিনহা আর মাহি আসতেই নিরব গাড়ি ছোটালো গন্তব্যে। মাহি চেনে না রাস্তাটা কোথায় কনসার্ট সেটাও জানা নেই। শুধু জানে নিরবের বন্ধুরা একটা কনসার্ট করছে তাদের পুরনো কোন আড্ডার জায়গায়। সম্ভবত কোন পুরনো ফ্যাক্টরিতে করছে। লোকেশনে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই মাহি খেয়াল করলো বিকেলের শেষ এখন। রক্তিম আকাশটা একটু ক্ষণের মধ্যেই অন্ধকারে ছেয়ে যাবে৷ বাড়ি থেকে বের হওয়া থেকে এখানে আসা অব্ধি মন খারাপ ভাবটা তেমন অনুভব হচ্ছিলো না কিন্তু এখানে আসতেই কেমন ছটফট লাগছে। কোথাও কি একটু শান্তির জায়গা পাওয়া যাবে না? বাড়িতে থাকতে দমবন্ধ হয়ে আসে বাড়ির বাইরেও অশান্তি লাগে৷ মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়েছুঁড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। কোথাও দূর পাহাড়ে অথবা কোন নির্জন সমুদ্রের পাড়ে৷ যেখানে কেউ থাকবে না থাকবে শুধু মাহি আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতা। কাঁদবে মাহি খুব তখন চিৎকার করে কাঁদবে, হাত পা ছড়িয়ে কাঁদবে কোন দ্বিধা, সংকোচ আর ভয় ছাড়া। নিরব ডাকছে মাহিকে তারা ভেতরে যাবে৷ পুরো জায়গাটা ভালো করেই সাজানো হয়েছে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোন পুরনো পরিত্যক্ত ফ্যক্টরি। নিরব টিকিট নিয়ে নিলো নিজেরা অর্গানাইজার হয়েও টিকিট আলাদা কাটলো। ফ্যাক্টরির পেছনের গেইটকে এক্সিট ডোর আর সামনের দিকে এন্ট্রি রাখা হয়েছে। নিরব মিনহার হাত ধরে আছে এক হাতে তো অন্য হাতে মাহিকে৷ মোটামুটি বড়সড় গেইট তবুও মাহি যেতে যেতে কারো সাথে ধাক্কা খেল। ভাগ্যিস নিরব খুব শক্ত করে হাতটা ধরে রেখেছিলো নয়তো আজ এখানেই পড়তো মাহি। ধাক্কা লাগতেই নিরব ঘুরে তাকিয়েছে মাহি তখনও ধাতস্থ হতে পারেনি। ধাক্কা লাগা ব্যক্তিটি একদম পাহাড়ের মত অনড় হয়েই ছিলো। সামান্য ধাক্কায় ব্যক্তিটির এক পাও নড়লো না অথচ মাহির মনে হলো তার উপর এই মুহুর্তে কোন ভূমিকম্প চলে গেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো ব্যক্তিটি মাহির পড়ে যাওয়া অবস্থা দেখেও তাকে ধরলো না বরং নিষ্পলক চোখে মাহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রা নেই কারো মুখে মাহিও মাথা সোজা হয়ে দেখে নিয়েছে মানুষটাকে। এতো কাছে! ঠিক চার মাস? নাকি আরো বেশি সময়ের পর দেখলো এতোটা কাছ থেকে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস আটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে সে। হৃৎপিণ্ড ছন্দ তুলছে। কি বেয়াদব চরম বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে তার হৃৎপিণ্ডটা ঠিক এমনই বলতো নিশ্চয়ই সাগর যদি সে এই ছন্দতোলা সুর শুনতে পেত মাহির হৃদয়ের।

–” ওহ সাগর ভাই আপনিও চলে এসেছেন৷ ভালোই হলো ” বলেই নিরব মাহির হাতটা ছাড়লো। আবার বলল, ” তুই ঠিক আছিস মাহি।”?

–” হ্যা ভাইয়া। ” মাহি আর চোখ তুলে তাকালো না আগে, পিছে, উপর, নিচে। সাগর এখনও তাকেই দেখছে আন্দাজ করতে পারছে মাহি।

–” তামিম ভাইরাও চলে এসেছে তমাল ফোন করেছিলো।” নিরব মিনহার হাতটা তখনও ধরে রেখেছে৷ সাগরের চোখে পড়লো ব্যাপারটা তাই দ্রুত চোখ সরিয়ে আবার মাহির দিকে তাকালো। ফ্যাকাশে লাগছে তার মুখটা। এখানে আলো মোটামুটি কম নয়।

–” তুমি কি গান করবে না?”

–” না ভাই এদের রেখে ভেতরে যাবো না। বলেই আবার মিনহাকে বলল, ” ইনি সাগর ভাই আজ তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের সিনিয়র ভাইয়া”। মিনহা বোধ হয় নিরবের মুখে আগেই সাগরের পরিচয় শুনেছিলো তাই মাঝেই বলে উঠলো, ” হ্যা মাহির টিচারও ছিলেন ভাইয়া তাই না?”

মাহি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওড়নার এক কোণা বারবার আঙ্গুলে পেঁচাচ্ছে আর উপরের দাঁতে বারবার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরছে।

–” আরেহ বাহ, এতকিছু জানা?”

–” হ্যা নিরবই বলেছিলো একদিন সাগর ভাইয়া খুব ভালো গান গায় আর মাহিয়ার সাথে কথা হলেই ও আপনাকে নিয়েই ক…. মাহি হাত খামচে ধরলো মিনহার। কথা পাল্টে ফেলল মিনহা। হয়তো বুঝতে পেরেছে মাহি এই টপিক বন্ধ করতে চাচ্ছে। ভেতর থেকে কেউ সাগরের নাম ধরে ডাকতেই সাগর ভেতরে গেল। যাবার সময় নিরবকে বলল, ” ওদের নিয়ে গেস্টরুমটায় বসো ওখান থেকেই কনসার্ট ঠিকঠাক এটেন্ড করতে পারবে ভীড়ের মধ্যে ভালো হবে না। আর তুমিও গাইবে ফিয়ন্সির জন্যই অন্তত গেয়ো। নিরব একটু লজ্জা পেলো তবে মিনহা আর মাহি দু’জনেই খুব করে চাইছে নিরব গাক। সাগরকে দেখার পর থেকেই অস্থিরতা বাড়লো মাহির। কিছুতেই ভালো লাগছে না কথা বলতে ইচ্ছে করছে একটিবার। কতগুলো দিন আর মাস গেল কথা হয় না। টপটপ করে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো। প্রায় প্রতিরাতেই এমন বর্ষণ হয় মাহির দু’চোখে। বাবা যেদিন বলল “শহিদুল ভাইয়ের ছেলে সাগরের জন্য আমি একটা মেয়ে দেখেছি। খুব মানাবে তাদের মেয়েটা অনার্স পড়ছে দেখতেও মাশাআল্লাহ”। মাহির মা বলেছিলেন, ” তুমি কেন মেয়ে দেখে দিচ্ছো?” মনজুর সাহেব বলেলেন, আমার মেয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন আমি মাহির বয়স হয়নি বলে এত ভালো পাত্র হাতছাড়া করেছি। তাই বলে সঠিক পাত্রীর সন্ধান থাকতেও তাদের বলবো না তা কি করে হয়।” সেদিনই মাহি জানতে পেরেছিলো সাগরের সাথে তার বিয়ের কথা তার বাবা’ই না করেছে। সাগর যেদিন বলেছিলো মা গিয়েছে তোমাদের বাড়ি সেদিনও মাহি কিছু জানতে পারেনি। এরপরই সমুদ্র একদিন ফোন করেই ভাবী বলে খুব দুষ্টুমি করছিলো আর এও বলেছিলো দাদুনী আর জেঠিমা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। কথাটা শুনেই মাহি আপন মনে কত রঙিন স্বপ বুনেছিলো তার ইয়ত্তা নেই।সেই স্বপ্ন সব ভেঙেচুরে গুঁড়ো হয়েছে তার। বাবার কথার দাম রাখতে গিয়ে মনের কথা মনে চেপে দূর হয়ে গেল মাহি। ধীরে ধীরে গায়েব হয়ে গেল মাহির অস্তিত্ব সাগরের আশপাশ থেকে ।

বসে আছে মাহি একটা চেয়ারে পাশেই মিনহা। বাইরে বেশ হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। ফ্যাক্টরিটাতে কম করে হলেও তিন থেকে চারশো মানুষ একসাথে কনসার্ট উপভোগ করতে পারবে। স্পেসটা বিশাল আবার স্টেজের ব্যাক সাইডে কোন জায়গা না রেখে রাখা হয়েছে ডান পাশে৷ আজকের কনসার্টে ফিমেল সিঙ্গার নেই বলে ডানপাশের ঢাকা স্টেজটায় মেয়ের সংখ্যা হাতে গোণা মাত্র পাঁচ জন তার মধ্যে মাহি আর মিনহা দু’জন। নিরব উঠে চলে গেছে স্টেজে৷ মাহি চমকে গেল প্রথম গান শুনে কন্ঠটা সমুদ্রের । সেও কি এসেছে? সাগরও নিশ্চয়ই গাইবে আবার নিরবও গাইবে। প্রত্যেকটা প্রিয় মানুষই আজ এ মঞ্চে গাইবে । মাহির মনের মেঘ একটু একটু যেন সরে যাচ্ছিলো আর ঠিক তখনই আবার মেঘের আগমন টের পেল৷ স্টেজ থেকে একটু দূরে সাগর দাঁড়িয়ে আছে। ডান হাতের দু’আঙ্গুলের ফাঁকে জলন্ত সিগারেট। বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে কি সুন্দর আপনমনে টেনে যাচ্ছে কখনোবা ধোঁয়া ছাড়ছে। কাঁধে গিটার, বাম হাতটা কোমড়ে রেখে দুনিয়াদারী ভুলে সিগারেটে সুখ নিচ্ছে। আরেকটু খেয়াল করতেই মনে হলো মানুষটার বয়সে পার্থক্য এসেছে তবে সেটা বেড়েছে বলে নয়৷ দেখে বয়স আগের চেয়েও কম লাগছে । কেমন যেন উসখুসে মুখ,বাউন্ডুলে গোছের আর অপ্রকৃতস্থ লাগছে খুব৷ কই অফিসে যাওয়ার সময় তো এমনটা লাগে না তখনতো পরিপাটি একজন সুদর্শন পুরুষ লাগে। সুদর্শন এখনও কি লাগছে না! অবশ্যই লাগছে৷ মাহির মনে হলো এই লোকটা যদি বয়স বেড়ে আশির গোঁড়ায়ও ঠেকে তবুও তার চোখে সুদর্শনই লাগবে।

পুরো বাড়ি মাথায় করে রেখেছেন হাওয়া বেগম এই সন্ধ্যের মুখে। একটু আগেই সৈকত ফোন দিয়েছে । খুশির সংবাদ এসেছে বাড়িতে। উৎসব উৎসব আমেজ লেগে গেছে যেন। মনজুর সাহেব যেই পাত্রীর সন্ধান দিয়েছিলেন সেই মেয়ের পরিবার সাগরকে খুব পছন্দ করেছে। এ বাড়িতেও প্রায় সবাই পছন্দ করেছে সেই মেয়েকে শুধু হাওয়া বেগমের মত ছিলো না মেয়ের বয়স আঠারোর বেশি হওয়ায়৷ তিনি নিজেই নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সাগরের বউ আনবেন মাহির চেয়েও ছোট মেয়ে দেখে কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। তবুও সবার পছন্দ আর সাগরতো বলেছেই তার এ ব্যাপারে কোন কিছু বলার নেই মা যা বলবেন তাই হবে। শামসুন্নাহার ছেলের মনের অবস্থা ঠিকঠাক ধরতে পারেন নি তাই তো সামনে আগাচ্ছেন। এদিকে সৈকতের সন্তানের আগমনী বার্তাও এসেছে আজ সন্ধ্যায়। শিলা প্রেগন্যান্ট একটু আগেই কনফার্ম রিপোর্ট পেয়ে সৈকত কল করেছিলো। বাড়ির বড়রা সবাই মাগরিবের নামাজ পড়েই মিষ্টিমুখ করছে। তিথি আর শৈবালও তাতে আছে শুধু মুখে ঝামটি মেরে বসে আছে সাথী। যুথি বারবার বলছে কি হয়েছে মন খারাপ কেন কিন্তু সে উত্তর দিচ্ছে না। সাথীর মন খারাপ মাহির জন্য সে অনেক ভাবেই দেখেছে মাহি সাগর ভাইয়ার জন্য কেমন পাগল। আর সাগর ভাইয়াও মাহিপুকে পছন্দ করে তা বুঝতে পারে। যেদিন মাহিপুর বাড়ি থেকে বিয়ের প্রপোজাল ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেদিন থেকেই ভাইয়া চেঞ্জ হয়ে গেছে। আর তা কেউ না দেখলেও সাথী দেখেছে। তাই আজ তার মন ভীষণ খারাপ। নতুন ভাবী আসবে এ নিয়ে একটুও যেন আনন্দ হচ্ছে না তার এদিকে “যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই” এমন হচ্ছে বাড়িতে।

চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here