বেসামাল_প্রেম #জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৫৪

0
1004

#বেসামাল_প্রেম
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৫৪

দুপুরবেলা। লাঞ্চ শেষে রুমে এলো রুদ্র। হৈমী দাদিনের ঘরে। আমের আচার খাচ্ছে। এই সুযোগে সে সিগারেট ধরাল। রুমে নয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। বেলকনির দরজা আঁটকে দিয়েছে। জানালার গ্লাসও লাগানো। ধোঁয়া রুমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগে এসব মানতে হতো না। এখন মানতে হচ্ছে। শুধু হৈমীর জন্য বললে বিষয়টা মিথ্যে হবে। বরং তাদের দুজনের জন্যই মানছে। দু’জনের জন্য কীভাবে? হৈমীর গর্ভে যে ছোট্ট প্রাণটা আছে। গতমাসে যার হার্টবিট এসেছে বলে ডক্টর নিশ্চিত করলেন। সেই ছোট্ট প্রাণটার সঙ্গে তারা দু’জনই জড়িত৷ একজন তাকে পৃথিবীতে আনার জন্য যুদ্ধ করছে। আরেকজন এ পৃথিবীতে তাকে টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে। স্বপ্ন বুনে চলেছে রাতের পর রাত। দিনের পর দিন। বলা চলে সময়টা বেশ ভালো। এ সময়ে সুখী সুখী একটা ব্যাপার আছে। মাঝেমধ্যে তীব্র ভয়ে অবশ্য বুকে কাঁপুনি ধরে। প্রিয়জন হারানোর ভয়ে টনটন করে ওঠে বুকের বা’পাশটায়। সে টনটনে ব্যথা নিয়ে সে যখন নির্লিপ্ত হয়ে যায়। দুর্বল চোখে তাকিয়ে মলিন হাসি উপহার দেয় হৈমী। কিছুটা খোঁচা দিয়েই বলে,

-” খুব ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে তো ভয় পেলে মানায় না। আপনার এই অসহায় মুখটা দেখতে ভালো লাগে না। একটু গম্ভীর হয়ে ভয়কে ধমকে দিন। ”

এ কথা শুনে রুদ্র মুখ ফিরিয়ে নিলে সে কানের কাছে এসে ফিসফিসে বলে,

-” যত হম্বিতম্বি সব আমার সাথেই। কোথায় গেল সেই গম্ভীরতা, তিরিক্ষি মেজাজ? ”

মানুষের সময় সব সময় সমান যায় না। রুদ্ররও যাচ্ছে না। বিগড়ানো মেজাজটাও ইদানীং শান্ত হয়েছে। বেঁচে থাকার একটিমাত্র অবলম্বনকেও হারানোর ভয় বুকে বাসা বাঁধলে দিশেহারা লাগবে না বুঝি? জন্মলগ্ন থেকেই বোধহয় লেখা ছিল জীবনের পরতে পরতে সে মানসিক অশান্তিতে থাকবে। সুখ থাকবে চিরকাল ধোঁয়াশাতেই। এরই মধ্যে দাদিন তাকে অসাধারণ এক অশান্তি উপহার দিয়েছে। দু’দিন আগে তিনি পাশের বাড়ির ভদ্রমহিলাকে দিয়ে দু’ভরি সোনার গয়না বিক্রি করেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এই টাকা দাদিন তার বড়ো ছেলের ঠিকানায় পাঠিয়েছে গতকাল। টাটকা খবরটি যার মাধ্যমে পাঠিয়েছে সেই জানিয়েছে রুদ্রকে। যে মানুষ দু’টো স্বার্থপরের মতো নিজেদের সুখের আশায় পুরো পরিবারকে অন্ধকারে ঠেলে গিয়েছিল। তাদের সুখ কি এতটাই ঠুনকো হয়ে গেছে আজ? চোরের মতো করে মায়ের কাছে হাত পাতছে। বৃদ্ধা মহিলাটির শেষ অবলম্বন টুকু কেড়ে নিতেও কুণ্ঠা বোধ করছে না। ঘৃণার মুখ বিকৃত হলো রুদ্রর। স্মরণ হলো ছোটো ভাইয়ের বউকে নিয়ে যে ভেগে যেতে পারে তার আবার কুণ্ঠা কিসের? ঐ দু’জন তো মানুষই নয় অমানুষ। কিন্তু দাদিন? সে কী করে এতটা বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে গেল? মাতৃস্নেহে? স্নেহ করা ভুল নয় কিন্তু স্নেহে অন্ধত্ব অপরাধ। ক্রোধে কপালের রগগুলো দপদপিয়ে ওঠল। নিঃশ্বাস ভারি হলো খুব। উত্তেজনা কমাতে সিগারেটে টান দিল একাধারে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল,

-” দরজা খুলুন, দরজা খুলন। ”

দরজায় টোকা দিয়ে জানালার কাছে গেল হৈমী। কাঁচ ভেদ করে রুদ্রর কাণ্ডগুলো স্পষ্টই দেখল সে। মজা পেল খুব। হৈমীর উপস্থিতি টের পেতেই রুদ্র ত্বরিত সিগারেট ফেলে দিল। চারপাশের ধোঁয়া হাত দিয়ে রেলিঙের বাইরে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করল৷ হা করে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ছাড়ল। যেন সিগারেটের গন্ধ বেরিয়ে যায়৷ হৈমী যেন এই গন্ধ একটুও না পায় তাই বারেবারে হা করে নিশ্বাস ছাড়ল। হৈমী অধৈর্য্য হয়ে দরজায় টোকা দিল। রুদ্র শান্ত হতে বলে আরো কয়েক পল পর দরজা খুলল। হৈমী উৎসুক হয়ে বেলকনিতে যেতে নিলে রুদ্র ওর হাত চেপে ধরল৷ দরজা বন্ধ করে রুমে টেনে এনে বলল,

-” আচার খাওয়া শেষ। ”

হৈমী মাথা নাড়িয়ে তার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল। রুদ্র মৃদু হেসে বিছানায় বসল। হৈমীর ফুলে ওঠা পেটের দিকে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ। তা লক্ষ করে এক পা এগোলো হৈমী। বলল,

-” চুমু খান। ”

হকচকিয়ে গেল রুদ্র। মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। পরোক্ষণেই মনে পড়ল পেটে চুমু খেলে সমস্যা নেই। মুখের গন্ধ বেবি পর্যন্ত পৌঁছাবে না। তাই স্বাচ্ছন্দ্যে পেটে চুমু খেল। খুশিতে গদগদ হলো হৈমী। মোটামুটি শরীরটা তার ভারি৷ স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়াতে চেহেরায় নাদুসনুদুস ভাব এসেছে। পাঁচ মাস পড়েছে। আরো কটা মাস গেলে পেট ভারি হলে ওজন ষাট প্লাস হবেই। সেই ফিনফিনে শরীর আর আজকের এই নাদুসনুদুস শরীর ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। এই শরীর নিয়েই রুদ্রর কোলে চড়ে বসল সে৷ আচমকা বসাতে সামলাতে বেগ পেল রুদ্র। হঠাৎ এভাবে কাছে আসায় ঘাবড়ালোও। টের পেল কুমতলব আছে নিশ্চিত। তার ধারণাই সঠিক হলো। হৈমী মুখ এগিয়ে আবদার করে বসল,

-” কিস মি প্লিজ। ”

চমকে ওঠল রুদ্র। হৈমী এ অবস্থায় না থাকলে বিষয়টা এখন অন্যরকম হতো। কুমতলব সুমতলব করে মেয়েটাকে নাজেহাল করে ছাড়ত। কিন্তু সময়টা এমন যে নাজেহাল শুধু তাকেই হতে হবে। অসহায় মুখ করল রুদ্র। অপরাধীর ন্যায় বলল,

-” সরে বসো। ব্রাশ করে আসি। ”

-” না না এক্ষুনি আমার চুমু চাই। ”

-” বোঝার চেষ্টা করো হৈমী। আমি সিগারেট খেয়েছি সমস্যা হবে। ”

মৃদু ধমকে টনক নড়েনি হৈমীর। সে বাচ্চাদের মতো জেদ করল,

-” আমারো সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। ”

চোখ রাঙাল রুদ্র। হৈমী পাত্তা না দিয়ে টোপ করে ওর ঠোঁটে চুমু খেল। রুদ্র ঝটকায় মুখ সরিয়ে কৌশলে হৈমীকে বিছানায় শুইয়ে দিল। হৈমী বাহু চেপে ধরল ওর। রুদ্র হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

-” জ্বালাচ্ছ কেন? ”

-” আমি না সিগারেট জ্বালাচ্ছে আপনার ফুসফুস। ”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্র বলল,

-” রেগুলার খাই না এখন৷ হঠাৎ… ”

-” জানি। ”

-” তাহলে পাগলামি করছ কেন? ”

-” এটুকু বাদ দিন। ”

-” দেব শর্ত আছে মানবে? ”

সহসা ক্ষেপে ওঠল হৈমী। বলল,

-” সবকিছু তে শর্ত শর্ত আর শর্ত। আর কত শর্ত দেবেন। ভালো লাগে না এসব। ”

পাশফিরে শুয়ে রইল হৈমী। শ্বাস ফেলল ঘনঘন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওঠে গেল রুদ্র। ব্রাশ করে এসে রুমের দরজা রুদ্ধ করে বিছানায় এলো৷ হৈমীর পাশে শুয়ে হাত বাড়িয়ে পেটে স্পর্শ করল৷ কয়েক পল যেতেই হাতটা কেঁপে ওঠল। সঙ্গে সঙ্গে রুদ্রর শরীরও কাঁপল। উত্তেজনায় শ্বাস আঁটকে এলো৷। এরপর সে আতঙ্কিত গলায় বলল,

-” অ্যাঁই অ্যাঁই ও নড়ছে! এইতো এইতো! ”

চিৎকার করে ওঠল রুদ্র। হৈমী ভয় পেয়ে গেল রুদ্রর উত্তেজনা দেখে। রুদ্র প্রায় লাফিয়ে ওপাশে চলে গেল। হৈমীর মুখের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে পেটে তাকাল। গতকাল ঠিক একই উত্তেজনা নিয়ে হৈমী কল করেছিল তাকে৷ রাতে খাওয়ার পর রুদ্র একঘন্টার জন্য বাইরে বেরিয়েছিল। হৈমী আরাম করছিল রুমে বসে। এমন সময় পেটের ভিতর অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা চলছিল। ভয়, উত্তেজনা নিয়ে রুদ্রকে ফোন করে আনার পর সব শান্ত। রুদ্র কিছুতেই তার কথা বিশ্বাস করল না। শেষে মন খারাপ করে সেও বিশ্বাস করাতে যায়নি। ভাগ্যিস মাঝেমধ্যে পেটে হাত রাখার অভ্যেস রুদ্রর। তাই তো ম্যাজিকটা ঘটে গেল। পেটের ভিতর বাচ্চার নড়াচড়া চলল অনেকক্ষণ। রুদ্রর হাতের স্পর্শ পেয়ে যেন ওখানে থাকা প্রাণটা প্রচণ্ড খুশি হয়েছে। বেশি নড়াচড়া করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। হৈমীর চোখ দিয়ে জল গড়াল। খেয়াল করল রুদ্র কেমন বাচ্চাদের মতো তার পেটের সঙ্গে খেলা করছে। হাত বুলাচ্ছে সস্নেহে। কয়েক পল রুদ্রর ঝাপসা দৃষ্টি, ঠোঁটে মৃদু হাসিরও দেখা মিলল। তৃপ্তির শ্বাস ফেলল হৈমী। চোখ বুজল আরামে। মিনিট দুয়েক পর অজান্তেই ঘুমিয়েও পড়ল। রুদ্র শান্ত, অপলকে তাকিয়ে আছে ফুলে থাকা নগ্ন চামড়াটার দিকে। যে চামড়া আজ থেকে পাঁচ মাস আগেও তাকে কামুক করে তুলত। সে চামড়ায় এ মুহুর্তে কোনো কামুকতা নেই। আছে শুধু প্রতীক্ষা, স্নেহ, আদর, ভালোবাসা।
_____________________
মাঝরাতে ওঠে একবার খায় হৈমী। আজো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রুদ্র ওকে খাইয়ে নিচে এসেছিল সবকিছু রাখতে। তখনি দাদিনের ঘর থেকে কান্নার শব্দ পেল। আজ যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল তার। বড়ো বড়ো পা ফেলে বিনা অনুমতিতে আধখোলা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল সে। তার উপস্থিতি দেখে আঁতকে ওঠল দাদিন। ত্বরিত ফোন কেটে দিয়ে কাঁপা স্বরে বলল,

-” তুই! ”

-” কেন খুব অসুবিধায় ফেললাম? কী চায় তোমার বড়ো ছেলে আর তার বউ। গত সপ্তাহে গয়না বিক্রির দেড় লক্ষ টাকা পাঠালে। সব শেষ, আরো চাই? এবার কী দেবে এ বাড়িটা বিক্রি করবে? দাদানের নামে বাড়ি তুমি চাইলে বিক্রি করতেই পারো। ”

-” রুদ্র! ”

-” একদম ধমকাবে না দাদিন। তোমার প্রতিও ধীরেধীরে আমার মনে ঘৃণা জন্মাচ্ছে। ছিঃ তুমি কেমন মা? রিদওয়ান শেখ কি তোমার নিজের সন্তান? আমার তো মনে হয় না। তাই যদি হতো তার জীবন ধ্বংসের জন্য যে দায়ী তাকে নিজের সর্বস্ব দিতে না। ”

মুখে আঁচল চেপে ডুকরে উঠলো দাদিন। রুদ্র মুখ ঘুরিয়ে নিল। দাদিন বলল,

-” আমাকে ভুল বুঝিস না রুদ্র। ওরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। ওর চাকরিটা নেই আজ দু’বছর। বউ বাচ্চা নিয়ে পথে থাকতে হতো আমি টাকা না পাঠালে। ”

-” এবার কী করবে? ঐ টাকা শেষ হলে কী দেবে আর কী আছে তোমার? ”

-” রুদ্র, আমি তো মা। আমি জানি দিলু অন্যায় করেছে। কিন্তু মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু তো চাইতে পারি না। ”

খুব কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছিল রুদ্র। দাদিন হঠাৎ বলে ফেলল,

-” অনেক বছর তো হলো। পুরোনো কথা ধরে রেখে কী লাভ। যা ভুল তা তো করেই ফেলেছে। তাই বলে সারাজীবন কি বাপের ভিটে ছাড়া থাকবে? ”

দু-হাত শক্ত মুঠ করে ফেলল রুদ্র। বলল,

-” বাহ চমৎকার। তোমার বড়ো ছেলে মেজো ছেলের বউ নিয়ে ভেগে সংসার পাতলো। সে ঘরে বাচ্চা সহ এবার এ বাড়িতে ফিরে আসবে। আর মেজো ছেলে দেখবে তার প্রাক্তন স্ত্রী তার বড়ো ভাইয়ের ঘর করছে। আর বড়ো চাচি যে এখনো তোমার বড়ো ছেলের বউ হিসেবে এ বাড়িতে আছে। তার কথাটাও তুমি ভাবলে না। এতটা স্বার্থপর তুমি হয়ে গেলে? কীভাবে সম্ভব দাদিন। কীভাবে সম্ভব এই বাড়িতে ওদের আসা? তুমি এতটা নিচু মনের কী করে হয়ে গেলে। ”

দাদিন বসে পড়ল। হাউমাউ করে কেঁদে বলল,

-” ওরা তাহলে থাকবে কোথায়? রিদুকে বলবি, ঢাকার একটা বাড়ি ওদের দিতে? ”

তাচ্ছিল্য হেসে রুদ্র বলল,

-” অসম্ভব। আমার মতো নির্দয় মানুষকে এমন আবদার করা মোটেই উচিৎ হয়নি তোমার। ”

রুদ্র ফিরে যেতে নিয়েও থামল। দাদিনের দিকে তাকিয়ে রুঢ় স্বরে বলল,

-” তোমার বড়ো ছেলে সম্পর্কে আমার চাচা আর তার বউ আমার জন্মদাত্রী! তোমার মেজ ছেলে আমার বাবা অথচ আমার মা তার বড়ো ভাইয়ের বউ! গা ঘিনঘিন করে না দাদিন এসব শুনতে? জানো আমার ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছে করে! এরপরও যদি তুমি এই ঘৃণ্য, জটিল সম্পর্কের মানুষদের এক বাড়িতে আনার দুঃসাহস দেখাও মনে রেখো, বাবা, আমি, বড়ো চাচি, রাদিফ ভাই সকলের সঙ্গে সম্পর্কের সুতো কাটতে হবে তোমাকে। ”

শেষ বাক্যগুলো বড্ড অসহায়ের মতো আওড়াল রুদ্র। এরপর প্রস্থান করল দাদিনের ঘর। বলা চলে আজীবনের জন্য। ছোটোবেলা থেকে যে মানুষটা তাকে আগলে বড়ো করল সেই মানুষটার ভুল আবদার এক নিমিষে সব তছনছ করে দিল। নিশ্চিত করে দিল শেষ ভবিতব্য।

চলবে….
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here