#বেদনার_রঙ_নীল
দ্বাদশ পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
শীতল বাতাস নির্গমন হচ্ছে এমন যন্ত্রের নিচে বসেও আজমীর ঘেমে একাকার। তাকে প্রণয় জোর করে একটা রঙচটা পাঞ্জাবী পরিয়েছে এই গরমের মধ্যে। মেয়েদের নাকি চোখ ধাঁধানো রঙিন পোশাক খুব পছন্দ। টকটকে সিল্কের লাল পাঞ্জাবীতে আজমীরের নিজের কাছেই নিজেকে কার্টুন মনে হচ্ছে। কিন্তু তুলির যদি পছন্দ হয় তাহলে সে বছরের তিনশো পয়ষট্টি দিনই এমন লাল রঙ পরতে রাজি। পাঞ্জাবীর সামনের বোতাম দু’টো খুলে রেখে সে ঘাম মুছতে মুছতে প্রণয়কে বলল,” একটু নর্ভাস লাগছে দোস্ত।”
প্রণয় মুচকি হাসল। আজমীর গিফটের বাক্সটা দেখিয়ে বলল,” এটা পছন্দ করবে তো?”
” নিশ্চয়ই। মেয়েরা এসব জিনিস খুবই পছন্দ করে।”
আজমীর এবার একটু আশেপাশে চেয়ে বলল,” দোস্ত, ও আসার পর তুই পেছনে গিয়ে বসিস।”
” কেন?” প্রণয়ের দৃষ্টি গরম হলো। আজমীর হালকা লাজুক গলায় বলল,” বুঝিস না, একটা প্রাইভেসির দরকার তো। নাকি?”
প্রণয় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আজমীর অবাক হয়ে বলল,” কি হয়েছে? এভাবে কি দেখছিস?”
প্রণয় আজমীরের পাঞ্জাবীর কলারে হাত রাখল। ঠিক করে দেওয়ার বাহানায় হঠাৎ টেনে ধরে বলল,” ও তোর গার্লফ্রেন্ডও না, বউও না। তাহলে এখনি কেন এতো প্রাইভেসি লাগবে?”
আজমীর নরমভাবে হাসল। কিন্তু প্রণয়ের হাসিটাও গম্ভীর। আজমীর আদুরে কণ্ঠে বলল,” প্রাইভেসি না দিলে গার্লফ্রেন্ড হবে কি করে?”
প্রণয় মুখে হাসি এঁটে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইল। আজমীর বলল,” প্লিজ দোস্ত, তুই পেছনে গিয়ে বসিস।”
প্রণয় হঠাৎ বলল,” আচ্ছা, তুই কি শিউর যে তুলি তোকেই ভালোবাসে?”
” না। আমি শিউর যে ও আমাকে ভালোবাসে না।”
” তাহলে ওর পেছনে কেন সময় নষ্ট করছিস?”
” এটাকে সময় নষ্ট করা বলে না। সময় ইনভেস্ট করা বলে। যত সময় ইনভেস্ট করবো লাভ তত পাবো। মেয়েদের মন গলানো খুব একটা কঠিন কাজ না। তাছাড়া তুই তো আছিসই। তুই হেল্প করবি না?”
প্রণয় হাত ভাজ করে বলল,” ধর ও তোকে পছন্দ করে ফেলল। তারপর তুই কি করবি?”
” এটাও কি জিজ্ঞেস করতে হয়? প্রেম করবো জমিয়ে! মাঝে মাঝে আমার ফ্ল্যাটে আসতে বলবো। একটু ইঞ্জয়মেন্ট হবে।”
আজমীর চোখ টিপল। প্রণয় শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” এসব করার জন্যই কি তুই বড়ভাইয়ের সাথে তুলির বিয়ে ভেঙেছিস?”
” এখন পছন্দের মেয়েকে বড়ভাইয়ের বউ হিসেবে কেমনে দেখি বলতো? তাকে ভাবী ডাকতে আমার কলিজা ফেঁটে যেতো৷ তাছাড়া ভাইয়া তুলির মতো স্মার্ট মেয়ে ডিজার্ভ করে না৷ নিজের মতো গাঁইয়া বিয়ে করুক। ম্যাট্রিক ফেইল গাঁইয়া।”
” তাহলে কি তুই তুলিকে বিয়ে করতে চাস?”
” বিয়ে-শাদি ভাই ভাগ্যের ব্যাপার। দ্যাখ, ভাইয়ার সাথে বিয়ে একদম কনফার্ম হয়ে গেছিল। কাজীও চলে এসেছে। ঠিক সেই সময় তুই কি দূর্দান্ত কৌশল
খাঁটিয়ে তুলিকে নিয়ে ভেগে এলি। আর এখন আমি তাকে ডেইট করছি। কোন বাগানের আঙুর ফল, কোন ছাগলে খায়।”
প্রণয় হেসে আজমীরের কাঁধে হাত রেখে বলল,”, ঠিকই আছে। তুই ছাগলই। কারণ ছাগলে আঙুর ফল খায় না।”
” কথায় এতো ভুল ধরলে চলে? আচ্ছা, সময় তো হয়ে যাচ্ছে। এখনও এলো না কেন?”
প্রণয় বিড়বিড় করে বলল,” না এলে আমার চেয়ে খুশি কেউ হবে না। প্লিজ তুলি, ডন্ট কাম।”
বড় আলিশান রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ি থামল। তুলি অবাক হয়ে বলল,” এটা কি আসলেই রেস্টরন্ট? নাকি কোনো প্যালেস?”
রাইফা কোমরে হাত গুঁজে বলল,” দম আছে বলতে হয়। ভালো জায়গা সিলেক্ট করেছে দেখা করার জন্য। আজকে বেটার খবর আছে!”
রাইফার বলার ভঙ্গিতে তুলি হেসে ফেলল। তার আজ ভীষণ মজা লাগছে। রাইফা গাড়ির ভেতরে অপেক্ষারত সাতজনকে বলল,” তোমরা বসো। আমি ড্রাইভার আঙ্কেলকে ফোন করলে তোমরা ভেতরে চলে আসবে।”
সবাই হাসিমুখে মাথা নাড়ল। কি সরল হাসি তাদের! তুলি মুগ্ধদৃষ্টিতে দেখল। রাইফা তাড়া দিয়ে বলল,” হাঁ করে কি দেখছিস? দ্রুত নিকাব পর। আর হাতমোজাও তো এখনও পরিসনি।”
তুলি ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,” এইসব পরা কি বেশি জরুরী রাইফা? কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে। আগে কখনও পরিনি তো!”
” মজা দেখতে চাস না তুই?”
” অবশ্যই চাই৷ এজন্যই তো কষ্ট করে হলেও পরছি।”
দু’জন একসাথে প্রবেশ করল রেস্তোরাঁয়। তাদের গন্তব্য তিনতলা। লিফটে উঠতে হলো। তাদের সম্পূর্ণ গা বোরখা নামক কালো পোশাকে আবৃত। শুধু চোখ ছাড়া শরীরের আর কোনো অংশই দৃশ্যমান নয়। এই অবস্থায় তারা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। তুলি আশেপাশে কোথাও আজমীরকে খুঁজে পাচ্ছে না। বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,” এটাই না সেই জায়গা? তাহলে আজমীর ভাই কোথায়?”
রাইফার দৃষ্টি ছুটে গেল দূরে৷ ওইতো কিনারের আসনে বসে আছে আজমীর৷ রাইফা তার ছবি দেখেছিল। তাই চিনতে অসুবিধা হলো না। এতো জায়গা থাকতে এমন চিপায় বসার কারণ কি? নিঃসন্দেহে বেটার মতলব খারাপ। রাইফা তুলির হাত চেপে ধরে বলল,” ওইযে দ্যাখ, তোর লাল কাবুলিওয়ালা। ”
তুলি এতোক্ষণে আজমীরকে দেখতে পেল। সাথে সাথেই নাক সিঁটকে বলল,” ছিঃ, মানুষের ড্রেসিং সেন্স এতো বাজে কিভাবে হয়?”
রাইফা হাসতে হাসতে বলল,” মনে হচ্ছে কোনো রোমান্টিক মুভির পিউর কমেডিয়ান। দ্যাখ এবার এটাকে নিয়ে কেমন কমেডি করি!”
রাইফা তুলিকে নিয়ে একেবারে আজমীরের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর দু’জনেই একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। আজমীর অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,” আপনারা কি আমাকে কিছু বলতে চান?”
তুলি কথা বলতে নিলেই রাইফা তার হাত চেপে ধরল। তুলি তখনি নিশ্চুপ। এবার রাইফা একটু ঢং করে বলল,” আরে, আজমীর ভাই! চিনতে পারছেন না? আমি তুলি!”
আজমীরের চোখ রসগোল্লার মতো গোল হয়ে গেল। চমকানো কণ্ঠে বলল,” কি? সিরিয়াসলি?”
রাইফা আহ্লাদ করল,” মুখ না দেখলেই চেনেন না, এই বুঝি আপনি আমাকে ভালোবাসেন? বুঝেছি এটা আপনার কেমন ভালোবাসা!”
আজমীর উঠে দাঁড়ালো। প্রায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,” স্যরি, স্যরি, আসলে তোমাকে কখনও এইভাবে দেখিনি তো। তাই সত্যিই চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল। তুমি বসো না তুলি, প্লিজ।”
তুলি আর রাইফা একত্রে বসল। তুলির এতো হাসি পাচ্ছিল! নিকাবের আড়ালে সেই চাপা হাসি বোঝা গেল না। আজমীর ইতস্তত করে শুধালো,” উনি কে?”
রাইফা তুলির কাঁধে হাত রেখে বলল,” ও আমার বেস্টফ্রেন্ড। বর্তমানে আমি যার বাসায় থাকি, সে। আসলে ও আমাকে কোথাও একা ছাড়তে চায় না। যখন আমি বললাম আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো তখনি খুব রেগে গেছিল৷ তারপর আমি ওকে অনেক ম্যানেজ-ট্যানেজ করে আসলাম। তবুও আমি একা আসতে পারলাম না। ওকে নিয়েই আসতে হলো। বলতে পারেন আমার গার্ডিয়ান।”
আজমীরের কণ্ঠ থেকে গদগদ ভাবটা চলে গেল। খানিক মনখারাপ নিয়ে বলল,” ও আচ্ছা। সমস্যা নেই। আপনি ভালো আছেন?”
তুলি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” আসসালামু আলাইকুম।”
আজমীর দ্রুত বলল,” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তারপর… কি খাবে তোমরা? অর্ডার করো।”
আজমীর মেন্যুবুক বাড়িয়ে দিল। রাইফা ফিসফিসিয়ে বলল,” এখনি অর্ডার করা যাবে না। কারণ খাওয়ার সময় নিকাব খুলতে হবে।”
তুলি এই কথা শুনে সতর্ক হয়ে গেল। গম্ভীর হয়ে বলল,” আমার ক্ষিদে নেই।”
আজমীর রাইফার দিকে চেয়ে বলল,” তাহলে তুলি, তুমিই অর্ডারটা দাও।”
রাইফা আবেদনময়ী কণ্ঠে বলল,” আরে আজমীর ভাই, এতো জলদি কিসের? ট্রেইন ছুটে যাচ্ছে নাকি?”
কথাগুলো বলতে বলতে সে আজমীরের দুইহাত চেপে ধরল। তুলি তো কোনোভাবেই হাসি থামাতে পারছে না। খুব কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছিল। আজমীরের চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে কোনো মেয়ে নিজে থেকে তার হাত ধরেছে!
প্রণয় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টেবিলে আসতে আসতেই তার পা থমকে গেল একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখে। আজমীরের সাথে দু’টো বোরখা পরা মেয়ে বসে আছে। একটা মেয়ে আজমীরের হাত ধরে রেখেছে। অন্যজন শান্ত হয়ে বসে আছে। প্রণয় আরও একটু এগিয়ে গেল। তাকে দেখেই রাইফা নর্ভাস হয়ে বলল,” আরে, ও এইখানে কি করে?”
তুলিও প্রণয়কে দেখতে পেল। তারপর বলল,” উনি তো আজমীর ভাইয়ের ফ্রেন্ড। তোকে বলেছিলাম না?”
রাইফার মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,” তামাশা খতম। প্রণয় নিঃসন্দেহে বুঝে ফেলবে। ইশ, সেও যে আসবে এটা আগে জানালি না কেন?”
” আমি নিজেই জানতাম না।”
আজমীর বলল,” তোমরা এতো গুজুরগুজুর করছো কেন? আমি কিন্তু কোনো টেরোরিস্ট না। এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
রাইফা হাসিমুখে বলল,” জানি তো। আপনি খুবই ভালোমানুষ। সহজ, সরল, নরম আর ভদ্র।”
আহা! আজমীরের হৃদয় শীতল হয়ে যাচ্ছে। এতো ভালো আগে কখনও লাগেনি। সে রাইফার হাতগুলো আবার টেনে ধরল। রাইফা মনে মনে বলল,” বদমাইশ! ” প্রণয় ঠিক আজমীরের পাশের চেয়ারে এসেই বসল। আজমীর উৎফুল্ল হয়ে পরিচয় করাল,” তুলি ওকে তো তুমি চেনোই। আমার বন্ধু প্রণয়। ও তোমার জন্য সেদিন যা যা করেছিল সব কিন্তু আমার বুদ্ধিতে। বলতে পারো আমিই বিয়ে ভাঙার জন্য ওকে পাঠিয়েছিলাম।”
আজমীর গৌরব মিশ্রিত হাসি হাসল। রাইফা চোখ বড় করে তুলিকে দেখল। তুলি ফিসফিসিয়ে বলল,” এক নাম্বারের ধান্দাবাজ। ফ্রেন্ডের ক্রেডিট নিজে নিতে চাইছে।”
রাইফা ইচ্ছে করেই মিথ্যা প্রশংসা করল,” তাই বুঝি? আপনি এতো ভালো কেন আজমীর ভাই?
আজমীর মোলায়েম কণ্ঠে বলল,” তোমার জন্য, তুলি।”
প্রণয় সতর্কভাবে আজমীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে চাপা কণ্ঠে বলল,” হাতটা ছেড়ে দে ছাগল। ওইটা তুলি না।”
আজমীরও একইভাবে চাপা কণ্ঠে বলল,” এতো নরম হাতের মালকিনকে পেলে আমার তুলির দরকার নেই।”
প্রণয় বিস্ময়ে কপালে হাত ঠেঁকালো। তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে হাসল। তুলিও বিনিময়ে হাসি উপহার দিল। যদিও নিকাবের আড়াল থেকে সেটা বোঝা গেল না। প্রণয় যে তাকে চিনতে পেরেছে এটা তুলি বুঝে গেল। কিন্তু সে কিছু বলছে না মানে সেও তুলিদের সাপোর্ট করছে। এই ভেবে তুলির আরও ভালো লাগল।
আজমীর মেন্যুবুক খুলে সামনে রাখল। রাইফার একহাত ধরে থেকেই বলল,” কিছু অর্ডার না করে শুধু এভাবে বসে থাকলে তো আমাদের উঠিয়ে দিবে। আমি এতো সুন্দর সময় হারাতে চাই না। চলো সামান্য ড্রিংকস হলেও অর্ডার করি!”
তুলি অন্যরকম কণ্ঠে বলল,” না৷ আমরা বাইরের কিছু খাই না।”
প্রণয়ও তাল মিলিয়ে বলল,” আমারও ক্ষিদে নেই। তুই নিজের জন্য আর তোর নরম হাতের মালকিনের জন্য অর্ডার করতে পারিস।”
আজমীর প্রেমময় দৃষ্টিতে রাইফার দিকে চেয়ে বলল,” তাহলে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার মাঝে তোদের থাকার দরকার কি? তোরা চাইলে অন্যকোথাও গিয়ে বসতে পারিস। অথবা রেস্টুরেন্টটা অনেক সুন্দর। ঘুরেও দেখতে পারিস। আমাদের একটু প্রাইভেসি দরকার ছিল।”
রাইফা এই কথায় একটু লজ্জা পাওয়ার ভং ধরল। কিন্তু ভেতরে সে ফুঁসে উঠল। বেটার হাতে একটা কাম-ড় মেরে দিতে পারলে হতো। প্রণয় বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলল,” অবশ্যই।”
তারপর সে তুলির দিকে চেয়ে বলল,” আপনি কি আমার সঙ্গে যেতে চান?”
তুলি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” নিঃসন্দেহে।”
প্রণয় আর তুলি একে-অন্যের দিকে চেয়ে হাসিমুখে চলে গেল। আজমীর নিজের আসন থেকে উঠে একদম রাইফার পাশের আসনে বসল। রাইফা সাথে সাথে আজমীরের পায়ে খুব জোরে পাড়া মেরে দিল। আজমীর কঁকিয়ে উঠে বলল,” কি করছো? তুমি আমার পায়ের উপর ভর দিয়ে বসছো কেন?”
” আমার এইভাবে বসতে ভালো লাগে।”
” কিন্তু আমার যে ব্যথা লাগছে।”
” একটু সহ্য করুন। এই ব্যথা তো কিছুই না।”
” মানে?”
” মানে প্রেমের ব্যথার কাছে এমন ছোটোখাটো ব্যথা কিছুই না!”
আজমীর এবার হেসে ঠোঁট কামড়ে বলল,” ও আচ্ছা। তাই?”
রাইফা মেন্যুবুক ঘেঁটে বলল,” আজকে কিন্তু আমরা এইখানে লাঞ্চ করবো।”
” শুধু লাঞ্চ কেন? তুমি চাইলে ডিনারও করতে পারি।”
আজমীর কাছে এসে রাইফাকে জড়িয়ে ধরতে নিল। রাইফা একহাতে তাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে বলল,” আমি কখনও একা লাঞ্চ করি না।”
” একা কোথায়? আমি আছি না?”
” উহুম। শুধু আপনি না, আমার সাথে আমার লম্বা বাহিনী আছে।”
আজমীর হকচকিয়ে বলল,” মানে?”
রাইফা মোবাইল নিয়ে কাউকে ফোন করল,” হ্যালো, ওদের উপরে পাঠিয়ে দিন।”
হতভম্ব আজমীর জানতে চাইল,” কাদের?”
রাইফা ফোন রেখে মধুর কণ্ঠে বলল,” ওইতো, আমার বাহিনী!”
সে এবার দূর থেকে তুলিকে ইশারা করল। তুলি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,” প্রণয়, চলুন বাইরে। বাচ্চাদের নিয়ে আসি।”
প্রণয় আশ্চর্য হয়ে বলল,” বাচ্চা কারা?”
তুলি বাইরে হেঁটে গেল। প্রণয়ও তার পিছে এলো। দু’জন লিফটের সামনে দাঁড়ালো। একটু পর লিফট থেকে বের হলো একগাদা ছেলে-মেয়ে। চারজন মেয়ে আর তিনজন ছেলে। এরা পথশিশু। প্রণয়ের ঠোঁটে হাসি ফুঁটল। তুলি এদের নিয়ে ভেতরে ঢুকছে। রাইফা তাদের দেখেই চিৎকার দিল,” ইয়াহু!”
বাচ্চারাও জোরে বলল,”ইয়াহু…”
তারপর দৌড়ে সবাই নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় বসে পড়ল৷ টেবিল চাপড়ে উল্লাস করতে লাগল। তাদের এভাবেই শিখিয়ে আনা হয়েছিল। আজমীর শুকনো গলায় বলল,” এসব কি?”
রাইফা বলল,” ওরাও আজ আমাদের সাথে লাঞ্চ করবে। এজন্যই তো সাথে করে এনেছি। জানি, আপনি খুব ভদ্র, নম্র, দয়ালু। এদের দেখলে আপনি অবশ্যই খুশি হবেন। বলুন খুশি হোননি?”
আজমীর উত্তর দিল না৷ রাইফা চেঁচিয়ে বলল,” বাচ্চারা, তোমাদের যা মন চায় অর্ডার করো। আজকে এই ভাইয়া তোমাদের খাওয়াবে।”
সবাই চিৎকার করতে লাগল,” ভাইয়া বেস্ট, ভাইয়া বেস্ট।”
রাইফা আর তুলি হাত তালি দিচ্ছে। প্রণয়ও হাত তালি দিতে লাগল। আজমীরের চুপসানো মুখের দিকে চেয়ে তার ইচ্ছে করল টেবিল চাপড়ে হাসতে হাসতে বলে,” বেটা, প্রাইভেসি চেয়েছিলি না? এইযে নে তোর প্রাইভেসি!”
আজমীরের দুশ্চিন্তা তার পকেট নিয়ে। এতো মানুষকে খাওয়ানোর পয়সা তো নেই!
চলবে