#বেদনার_রঙ_নীল,৩২,৩৩
বত্রিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
বুকের ভেতর দামামা বেজে উঠল। সচকিত দৃষ্টিতে প্রণয় তাকাল ডানদিকে। তুলি দৌড়ে আসছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য ভয়ংকর বিচলিত হয়ে উঠেছিল সে। কিন্তু তুলি যখন কাছে এসে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,” প্রিয়ন্তী আপু চলে গেছে?”
তখন প্রণয় হাঁফ ছেড়ে বলল,” হুম৷ কেন? কোনো কাজ আছে ওর সাথে?”
” আমি প্রিয়ন্তী আপুর সাথে একটু কথা বলতে চেয়েছিলাম। স্যরি বলবো। হসপিটালে ওই বোকামিটা করার জন্য।”
তুলি মাথা নিচু করে ফেলল। তাকে অনুতপ্ত দেখাচ্ছে খুব। প্রণয় ব্যাপারটা পাশ কাটাতে চাইল। আলতোভাবে তুলির বাহুতে স্পর্শ করে বলল,” দরকার নেই। ও চলে গেছে।”
” দরকার নেই কেন? ও কোথায় গেছে বলেন? আমিও যাই?”
প্রণয় আমতা-আমতা করল,” অন্য আরেকদিন বললে হয় না? আজকেই কেন স্যরি বলতে হবে?”
তুলি হাস্যজ্জ্বল কণ্ঠে বলল,” আজকে আমার মন ভালো। তাই আমি সব ভালো কাজ করতে চাই।”
এই কথা বলেই তুলি লিফটের বাটন টিপল। তারপর আবদারের সুরে বলল,” বলুন না আপু কোথায় গেছে? কোন ফ্লোরে?”
প্রণয় অল্প হতাশ হয়ে বলল,” জানি না৷ তুমি ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারো।”
প্রণয় নিজের মোবাইল বের করে দিল। তুলি তুষ্ট কণ্ঠে বলল,” ওকে।”
প্রণয় ফুডকোর্টে গিয়ে রাইফার সাথে বসল। তাদের অর্ডার করা খাবার চলে এসেছে। প্রণয় ভাবলেশহীন হয়ে জুসে চুমুক দিল। রাইফা রেগে বলল,” আরে, কি করছো? এটা আমার জন্য, প্রণয়। দাও।”
প্রণয় নিজের কপালে মালিশ করতে করতে বলল,” প্লিজ রাইফা। চিৎকার কোরো না। চুপ থাকো।”
রাইফা একটু কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল,” কিছু হয়েছে নাকি তোমার? তুলি কোথায়?”
প্রণয় ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল,” প্রিয়ন্তীর সাথে গেছে। তাকে স্যরি বলবে।”
” ও। এজন্যই ওইভাবে দৌড়ে গেল? বুঝেছি। যাক ভালো!”
প্রণয় নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে তার।
প্রিয়ন্তী ব্যাগ আর জুতোর কালেকশনে ঢুকেছে। তুলি তার পাশাপাশি হাঁটছে। প্রিয়ন্তী মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,” তুমি কি বলতে এসেছো?”
তারপর দায়সারাভাবে বলল,”যা বলার দ্রুত বলে এখান থেকে চলে যাও।”
তুলি অনুরোধ করল,” এইভাবে না। একটু এইপাশে আসো!”
প্রিয়ন্তী বিরক্ত হয়ে ওইপাশে গেল। তুলি ইতস্তত বোধ করছে। তীব্র অপরাধ বোধ নিয়ে উচ্চারণ করল,” স্যরি।”
” কেন?” আগ্রহহীন কণ্ঠে প্রশ্নটা করেই অন্যদিকে চাইল প্রিয়ন্তী। তার ভালো লাগছে না তুলির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। তুলিকে সহ্যই হচ্ছে না। তুলি আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করল।
” আমি একটা অন্যায় করেছিলাম৷ হসপিটালের বাথরুমে সেদিন ওই বাজে কাজটা আমিই করেছিলাম।”
প্রিয়ন্তী চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাল আবারও। সে সবই জানে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” ওকে। বুঝেছি। এজন্য স্যরি বলতে এসেছো? যাও, মাফ করে দিলাম।”
এই কথা বলে প্রিয়ন্তী চলে যেতে নিল। তখন তুলি নরমভাবে বলল,” না হয়নি। আমি জানি তুমি রেগে আছো আপু। ব্যাপারটা অবশ্যই রাগার মতো। তোমার জায়গায় আমি হলেও সেইম রিয়েক্ট করতাম। আসলে আমি ভুল করেছি। তাই আজকে আমি সব ঠিক করে ফেলতে চাই। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও!”
” তুমি আমার থেকে পাঁচ-ছয়বছরের ছোট হয়েও আমাকে থাপ্পড় মেরেছো। আর এখন বলছো মাফ করে দিতে? খুবই ভালো ব্যাপার।”
তুলি মনখারাপের কণ্ঠে বলল,” আমার খুব রাগ হয়েছিল আজমীর ভাইয়ের উপর। নিজের ভাগ্যের উপর। সবকিছুর উপর। আর তুমিও প্রণয়ের সাথে…”
প্রিয়ন্তী ঠাস করে বলল,” সহজ ভাষায় বলি? আমার সাথে প্রণয়ের ফ্রেন্ডশীপ তোমার সহ্য হচ্ছিল না। তাই না? আচ্ছা, প্রবলেম নেই। তোমার জায়গায় হলে আমিও জেলাস করতাম। কোনো সুন্দরী মেয়ে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঢলাঢলি করবে এটা তো মানা যায় না। কিন্তু তুমি আমাকে বুঝিয়ে বললেই পারতে। এমন অদ্ভুত একটা ইন্সিডেন্ট ঘটানোর প্রয়োজন ছিল না।”
তুলি আহত হলো। খানিক রাগ নিয়ে বলল,” তুমি ভুল ভাবছো। আমি এটা জেলাস থেকে করেছি তা ঠিক। কিন্তু তোমারও দোষ ছিল।”
প্রিয়ন্তীর চোখ দু’টি অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠল এবার। অনেকটা উচ্চস্বরেই সে বলল,” আচ্ছা তাই? আমারও দোষ ছিল? কোনটা দোষ আমার? প্রণয়ের জান বাঁচানো, তাকে প্রটেক্ট করা, তার টেইক কেয়ার করা নাকি তার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করাই আমাদের দোষ? ”
সবাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। তুলি ফিসফিসিয়ে বলল,” এইভাবে সিন ক্রিয়েট করার কিছু হয়নি। আমি ঝগড়া করতে আসিনি।”
প্রিয়ন্তী রাগে তুলিকে ধাক্কা মেরে বলল,” তাহলে কেন এসেছো আমার কাছে? কি ভেবেছো স্যরি বললেই আমি জড়িয়ে ধরে তোমাকে চুমু দিবো? চাইলেই যতগুলো থাপ্পড় আমাকে তুমি সেদিন দিয়েছিলে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিতে পারি এখন। কিন্তু আমি এটা করবো না। কারণ আমি তোমার মতো না।”
তুলি বিস্মিত হয়ে তাকাল। ক্ষীপ্ত হয়ে উঠল তার শান্ত মন। তবুও বোঝানোর চেষ্টা করল,” তোমার হঠাৎ এমন রাগের কারণ আমি জানি না। কিন্ত আমার মনে হয় হসপিটালে সেদিন তুমি আমাকে জ্বালানোর জন্য প্রণয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করছিলে। এই কারণে আমি তোমাকে মেরেছিলাম। হ্যাঁ জানি কাজটা অন্যায়। আমি অন্যায় করেছি। আর এজন্যই স্যরি বলতে এসেছি। কিন্তু এখন তুমি যেই বিহেভটা করলে তাতে আমি হতাশ।”
” আহ! তোমার হতাশায় আমার কি যায়-আসে?”
তুলি আর কিছু না বলে চলে এলো সেখান থেকে। প্রিয়ন্তী রাগে বাতাসে লাথি মারল। অসম্ভব অসহ্যবোধ হচ্ছে তার। প্রণয় এই মেয়েটিকে কি দেখে এতো ভালোবাসে?
সন্ধ্যাটি আনন্দময় ছিল। তুলি প্রিয়ন্তীর ব্যাপারটি মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিল পুরোপুরি। আজকে সে সব খারাপ স্মৃতি ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু শুধু মায়ের মৃত্যুর স্মৃতিটা ভুলতে পারছে না। কারণে-অকারণে শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ইশ, এই আনন্দমুখর সময়ে মা যদি তার পাশে থাকতো! রাইফা, তুলি আর প্রণয় রাত নয়টা পর্যন্ত বাইরে কাটাল। তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করল। তিনজনের মাঝে আজ সবচেয়ে বেশি কথা বলেছে তুলি। সবচেয়ে বেশি হেসেছেও সে। রাইফা আর প্রণয় অন্যদিনের তুলনায় একটু চুপচাপই ছিল। যদিও সেটা তুলির নজরে পড়ল না। কিন্তু একটা ব্যাপার সে ঠিকই লক্ষ্য করল। প্রণয় প্রেম বিষয়ক কোনো কথা বলছে না তার সঙ্গে। এই লটারী পাওয়ার ঘটনায় প্রণয়ের তো এই বিষয় নিয়েই সবার আগে লাফানো উচিৎ ছিল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, সে এই বিষয়ে তুলিকে কিছুই বলল না!
বাড়ি ফিরে এসে রাইফা আর তুলি ভেবেছিল সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু বাড়িতে সারপ্রাইজ দেওয়ার মতো কেউ নেই৷ সূচি বিছানায় শুয়ে পড়েছেন। তার নাকি মাথাব্যথা। রাইফা আর তুলিকে শুধু বললেন, খাবার ফ্রীজে আছে। ওভেনে গরম করে খেয়ে নিতে। অথচ তারা ভরপেট খেয়ে এসেছে! সামির আর তন্বিও এখানে নেই। এতোরাত হয়ে গেল। তারা বাড়ি ফেরেনি কেন?
রাইফা মোবাইল হাতে নিল তন্বিকে ফোন করার উদ্দেশ্যে। তুলি নিজের টাকায় কেনা নতুন ফোনটি দেখছিল। সে আজ তার প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস কিনেছে। তন্বির জন্যেও উপহার কিনেছে। আর মামা-মামীর জন্যেও। বাকি টাকা সে ব্যাংকে তুলে রাখবে। তারপর আস্তে-ধীরে চিন্তা করবে এই টাকা দিয়ে কি করা যায়!
রাইফা হঠাৎ চেঁচিয়ে বলল,” ওহ মাই গড!”
তুলি হালকা কেঁপে উঠল। রাইফা তন্বির সাথে কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হয়েই এভাবে চিৎকার করেছে সে। তুলি প্রশ্ন করল,” তোর কি হয়েছে?”
রাইফা তাঁক লেগে দেয়ালের দিকে চেয়ে থেকে বলল,” তন্বি চলে গেছে।”
” কোথায়?”
” সামির ভাইয়ের সাথে তোদের গ্রামে।”
” কি? হঠাৎ গ্রামে কেন গেল? ”
রাইফা এবার জোরে চিৎকার দিয়ে বলল ” কারণ তারা বিয়ে করে ফেলেছে!”
তুলি এমনভাবে আৎকে উঠল যে তার হাতের নতুন ফোন প্রথমদিনই হাত থেকে পড়ে গ্লাস প্রটেক্টর ফেঁটে গেল। রাইফা মোবাইলটি মেঝে থেকে তুলতে তুলতে বলল,” ওদের মধ্যে প্রেম ছিল নাকি?”
তুলি স্তব্ধ কণ্ঠে বলল,” আমি জানি না। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।”
” তুই কি তন্বির সাথে কথা বলবি একবার?”
” আমার অদ্ভুত লাগছে খুব। ওরা তো আজমীর ভাইকে থানা থেকে ছাড়াতে গিয়েছিল, তাই না? তাহলে বিয়ে কিভাবে হলো?”
রাইফা দাঁতে দাঁত পিষে উচ্চারণ করল,” সেটা তো আমারও প্রশ্ন।”
“তুই ওকে জিজ্ঞেস করিসনি?”
” ও আমাকে কিছুই বলছে না। রহস্য করছে। শুধু বলছে বিয়ের দাওয়াত রইল। গ্রামে এলে সব জানাবে। আজরাতেই চলে যেতে বলল। কি অদ্ভুত মশকরা!”
তুলি কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে হাতে চুটকি বাজিয়ে বলল,” আমরা এখনি যাবো।”
” কোথায়?”
” আমার গ্রামের বাড়ি। তুইও যাবি আমার সঙ্গে।”
রাইফা বিষমচিত্তে আওড়ালো,” পাগল হয়ে গেছিস? আমাদের না কোচিং-এ ক্লাস আছে? ”
তুলি খোঁচা মারার উদ্দেশ্যে বলল,” ক্লাস করা নিয়ে তুই আবার কবে থেকে এতো সিরিয়াস হয়ে গেলি?”
রাইফা মাথায় হাত চেপে ধরল। তার অনেক অস্বাভাবিক লাগছে। বোধগম্য মনে হচ্ছে না কিছুই। কিন্তু তুলি এতো ঠান্ডা কিভাবে আছে? সে কি তন্বি-সামিরের বিষয়ে আগে থেকেই কিছু জানতো? তুলি তার নতুন মোবাইলে সিম ভরে প্রণয়কে ফোন করল।
” হ্যালো।” প্রণয়ের সরল কণ্ঠ ভেসে এলো। তুলি লাজুক হাসি দিয়ে বলল,” চিনতে পেরেছেন?”
” তুলি!” প্রণয় আদুরে কণ্ঠে উচ্চারণ করল নামটি। তুলি খিলখিল করে হেসে উঠে প্রশ্ন করল,” কিভাবে চিনলেন?”
” চিনবো না কেন? তোমার কণ্ঠস্বর আমার অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে।”
” ইশ, খালি ডায়লগ! জরুরী কথা বলার জন্য ফোন করেছি।”
প্রণয় একটু মনমরা হয়ে বলল,” ও আচ্ছা। হুম সেটাই ভাবছি আমাকে হঠাৎ কেন ফোন করবে প্রয়োজন না হলে?”
তুলি ঠোঁট চেপে হাসল। প্রণয়ের অভিমানকে পাশ কাটিয়ে বলল,” আমরা বরিশাল যাচ্ছি।”
” হঠাৎ?”
” হুম…পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে যাবো। আপনি কি আমাদের নিয়ে যেতে পারবেন?”
প্রণয় প্রফুল্ল সজীব হাসি দিয়ে বলল,” নিশ্চয়ই। এটা তো আমার সৌভাগ্য! তুমি আর কে?”
” আমি আর রাইফা যাবো।”
” এখনি যাবে নাকি সকালে?”
” আপনার যখন সুবিধা হয় তখন গেলেই হবে। এখনি যেতে পারলে ভালো। ”
প্রণয় ব্যস্ত হয়ে বলল,” আচ্ছা, আমি কি বাসায় আসবো?”
তার এতো উৎসাহ দেখে তুলি হেসে ফেলে বলল,” আসুন।”
রাইফা মুখে হাত ঠেঁকিয়ে বসে আছে। তুলি ফোন রাখতেই সে চিন্তিত কণ্ঠে বলল,” কি করতে চাইছিস তুই?”
” প্রণয়কে ফোন করেছি। সূচি আন্টিকে বলবো মামা অসুস্থ। তাই দেখতে যেতে হবে। প্রণয় আমাদের নিয়ে যাবে। এইভাবে যদি বলি তাহলে কি যেতে দিবে না?”
রাইফা নিশ্চিন্তে বলল,” আম্মুকে নিয়ে সমস্যা নেই। আম্মু আমাকে এমনি ঘুরতে যেতে চাইলেও যেতে দিবে। কিন্তু এই রাতে যেতে দিতে রাজি হবে কি-না বুঝতে পারছি না। তন্বির বিয়ে হয়ে গেছে বললে শক খাবে। তারপর হয়তো যেতেও দিবে।”
” আচ্ছা নাহলে কি আমি প্রণয়কে ফোন করে বলে দিবো সকালে আসতে?”
” থাক লাগবে না। আমরা এখনি যাবো। আমার খুব এক্সাইটিং লাগছে।”
তুলি হাসিমুখে বলল,” আচ্ছা চল।”
সূচি প্রথমে আপত্তি করলেন। তারপর প্রণয়ও তাদের সঙ্গে যাবে শুনে নিশ্চিন্তবোধ করলেন। দু’টো মেয়ে একা যাওয়ার থেকে একজন ছেলে সঙ্গে যাওয়া ভালো। রাইফা তৈরী হতে হতে বলল,” প্রণয়কে ফোন দিয়ে ভালোই করেছিস। বাই দ্যা ওয়ে, তোরা কিন্তু চাইলে এবার হানিমুন সেরে ফেলতে পারিস। ”
তুলি বিছানায় বসে চুল আঁচড়ে নিচ্ছিল।রাইফার উক্তি শুনে সজোরে চিরুনীটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল,” অসভ্য মেয়ে! বিয়ের আগে আবার কিসের হানিমুন? মুখে লাগাম দে!”
রাইফা খোঁচা মেরে বলল,” ও আচ্ছা। তার মানে বিয়ের পর হানিমুন হবে? এর মানে তুই শিউর ওকেই বিয়ে করবি?”
তুলি চুপ করে একটু ভাবতে লাগল। তারপর আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলল,” হয়তো করবো। যদি আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়… ”
” অন্তত প্রেমটা শুরু কর। বেচারা অপেক্ষায় আছে। তুই তো অর্ধেক বড়লোক হয়েই গেছিস। লাখ টাকার মালিক এখন তুই।”
তুলি রাশভারী কণ্ঠে বলল,” রাইফা, শুধু পয়সাওয়ালা হওয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য না। আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। উপযুক্ত সম্মাননা পেতে চাই। অনেক বড় মানুষ হতে চাই। আর তুই তো সবই জানিস। তুই কি ভাবছিস শুধু প্রণয়কে বিয়ে করার জন্যই আমি বড়লোক হতে চাই?”
রাইফা আয়নার দিকে তাকাল। মলিন দৃষ্টিতে বলল,” না। আমি জানি তুই কেন বড়লোক হতে চাস। তোর বাবাকে জবাব দেওয়ার জন্য..”
ফোন বেজে উঠল। তুলি চোখ মুছে ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেল। প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে নিচে। তার গায়ে সাদা জ্যাকেট, কালো জিন্স। গাড়ি থেকে বের হয়ে মাথা তুলে চাইল। তুলি মুচকি হেসে বলল,” অপেক্ষা করুন। আমরা নামছি।”
চলবে
#বেদনার_রঙ_নীল
তেত্রিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
সূচির থেকে বিদায় নিয়ে তুমুল উত্তেজনা আর আনন্দকে সঙ্গী করে দুই বান্ধবী ঠিক রাত সাড়ে দশটায় বাড়ি থেকে বের হলো। গেইটের সামনেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষারত প্রণয় দাঁড়িয়ে ছিল। তুলি তাকে দেখে কোমলভাবে হাসল। চোখ ভরে এলো মিষ্টি লজ্জায়। মানুষটা শুধু তার কথায় এই রাতের বেলা কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই চলে এসেছে। এতো ভালো কেন সে?রাইফা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলল,” থ্যাঙ্কিউ প্রণয়৷ সো সুইট অফ ইউ।”
প্রণয় তুলির দিকে চেয়ে রইল। তুলি মাথা নিচু করে বলল,” বলার সাথে সাথেই চলে আসার জন্য থ্যাংকস।”
প্রণয় তার সামনে হাতটা বাড়িয়ে বলল,” কিভাবে না আসবো? মহারানীর অর্ডার বলে কথা! ভেতরে এসো।”
তুলির মুখ আরক্ত হলো। প্রণয়ের বাড়িয়ে রাখা হাতটি ধরতে গিয়েও সে গুটিয়ে গেল। প্রণয় আশাহত হয়ে অন্যদিকে চাইতেই তুলি ঝলমলে হাসি দিয়ে আচমকা প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরল। প্রণয়ের যেন ঝটকা লাগল শরীরে। তুলি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,” এটা আমাকে এতো ভালোবাসার জন্য।”
প্রণয় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রাইফা আনন্দিত কণ্ঠে বলল,” ওয়াও, আমার কথা কাজে লেগেছে তাহলে? তুলি তুই কি প্রণয়ের প্রপোজ্যাল এক্সেপ্ট করে ফেললি?”
তুলি খিলখিল করে হাসল। প্রণয় নিজের বুকের বামপাশ চেপে ধরল সাথে সাথে। উত্তেজনায় হার্টবীট বেড়ে গেছে অনেক। তুলি অন্যদিকে চেয়ে মুখের হাসি আড়াল করে বলল,” হয়তো।”
প্রণয় অস্থিরমনা হয়ে বলল,” হয়তো মানে কি?”
তুলি হালকা ধমকের সুরে বলল,” মানে আপনি পাগল!”
রাইফা জোরে হেসে উঠল। তুলি গিয়ে সামনের আসনে বসল। রাইফা অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,” আমি কি তাহলে পেছনে একা বসবো?”
প্রণয় বিজয়ী হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,” বেস্ট অফ লাক রাইফা।”
রাইফা ঢং করে বলল,” ছিঃ কি স্বার্থপর তোমরা!নিজেরা জুটি হয়ে এখন আমাকে পেছনে একা ছেড়ে দিচ্ছো। তুলি, মনে থাকবে!”
তুলি কোনো জবাব দিল না। ঠোঁট চেপে হাসছিল। প্রণয় এক চোখ টিপে বলল,” আগে তো বসো! তারপর দেখা যাবে..”
” কি দেখা যাবে?”
রাইফা দরজা খুলেই চমকে উঠল। পেছনে রিসব বসে আছে মোবাইল হাতে। রাইফার দিকে চেয়ে হাত নেড়ে বলল,” হায়।”
রাইফার মনে হলো সে এখনি অজ্ঞান হয়ে যাবে। নির্বাক চোখে সে একবার তাকাল প্রণয়ের দিকে।
প্রণয় উচ্চ কণ্ঠে বলল,” সারপ্রাইজ!”
রাইফা মুখে হাত চেপে বলল,” এমন সারপ্রাইজ আমি এক্সপেক্ট করিনি।”
রিসব ভ্রু কুচকে বলল,” তাহলে কি তুমি আমার পাশে বসতে চাও না ?”
” হ্যাঁ অবশ্যই চাই। ”
দ্রুত কণ্ঠে উত্তর দিয়েই রাইফা রিসবের পাশে বসে পড়ল। রিসব কৈফিয়ৎ দেওয়ার মতো বলল ” কোনো কাজ ছিল না৷ তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে আসি। কোনো অসুবিধা নেই তো?”
তুলিও রিসবকে দেখে প্রফুল্ল। সে বলল,” একদম অসুবিধা নেই। বরং আমরা তো খুশি। স্পেশালি রাইফাকে কোম্পানি দেওয়ার পারফেক্ট মানুষ পাওয়া গেল।”
তুলি এই কথা বলে ঠোঁট কামড়ে হাসল৷ রাইফা লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রিসব তার অবস্থা লক্ষ্য করে মৃদু হেসে পাশ কাটানো কণ্ঠে বলল,” থ্যাংকস তুলি। তোমার মামার বাসা একাক্টলি কোন জায়গায়?”
” ফরাজগঞ্জ।”
প্রণয় এক ফাঁকে রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,” আমাদের মধ্যে ডিল হয়েছিল। তুমি আমাকে হেল্প করলে আমিও হেল্প করবো। এইযে করলাম, রিসবকে আমিই কনভিন্স করে এনেছি কিন্তু।”
রাইফা বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে নিম্নস্বরে বলল,” থ্যাঙ্কিউ প্রণয়। আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
” কন্ট্রোল!”
রাইফা কাঁপা বুক নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। রিসব সহজ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কেমন আছো রাইফা?”
” ভালো আছি। আর আপনি?”
” এইতো, ভালো।”
তারপর নীরবতা। রাইফা তো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। টুকটাক কিছু কথা প্রণয় আর তুলির মাঝে চলছে। তারা এমনভাবে কথা বলছে যেন বিবাহিত দম্পতি। কিন্তু রাইফার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে তার রাগী স্যারের সাথে বসে আছে। কথা বলতেও গলা কাঁপছে। একটু পর প্রণয় একটা ক্যাফেটেরিয়ায় গাড়ি থামাল। রিসব পেছন থেকে বলল,” এনি প্রবলেম?”
প্রণয় গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত ঠেঁকিয়ে প্রস্তাব দিল,” আমরা চাইলে কিছু কিনে নিতে পারি। আর কিছু খেয়েও নিতে পারি। যেহেতু লং জার্ণি করতে হবে।”
তুলি বলল,” আমার একদম ক্ষিদে পায়নি।”
রাইফাও একই সুরে বলল,” আমারও না।”
প্রণয় বলল,” তাহলে আমরা কিছু কিনে নেই। আর কেউ কফি খেতে চাও?”
এবার সবাই সম্মত হলো। কফি খাওয়ার জন্য চারজন ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকল। প্রণয় আর তুলি একটা টেবিল ঠিক করে বসে পড়েছে। রাইফা তাদের পাশে বসতে গেলেই রিসব হাত ধরে থামাল। অন্য জায়গা দেখিয়ে বলল,” ওখানে গিয়ে বসি আমরা?”
রাইফা তো খুশিতে বাক-বাকুম। আচ্ছা, সে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবেই এসব হচ্ছে? মিস্টার রুড হঠাৎ এমন সুইট হয়ে গেল কি করে? তার এমন আচরণের কোনো কারণ পাওয়া যাচ্ছে না তবে রাইফার ভীষণ ভালো লাগছে। রিসব মেন্যবুক দেখতে দেখতে বলল,” এভাবে আলাদা কেন বসলাম জানো? প্রণয় আর তুলি যাতে একটু স্পেস পায়। ওদের নতুন প্রেম। এসবের দরকার আছে। বুঝেছো?”
রাইফার মুখ ফুঁস করে নিভে গেল। অন্যদিকে চেয়ে বিরস গলায় বলল,” জ্বী বুঝেছি।”
” আমি ক্যাপাচিনো নিচ্ছি। তুমি কি নিবে?”
রাইফা পানসে কণ্ঠে বলল,” সেইম।”
কিন্তু মনে মনে বলল,” এই মুহূর্তে আপনার মাথা চিবাতে ইচ্ছে করছে।”
কফি অর্ডার করা হলো। সময় লাগবে দশমিনিট। রাইফা আঁড়চোখে প্রণয় তুলিদের টেবিলে তাকাল। কি সুন্দর দু’জন হেসে কথা বলছে। আর এদিকে রিসব গম্ভীর মুখে মোবাইল নিয়ে বসে আছে। রাইফার খুব হতাশ লাগছিল। সে কথা বলার বাহানা খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোনো বাহানাও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে বসে থাকা খুব বোরিং আর অস্বস্তিকর। একপর্যায়ে রিসব নিজে থেকেই প্রশ্ন করল,” এখনও কি রেগে আছো?”
রাইফার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। একটু হকচকিয়ে বলল,” মানে?”
” শেষবার যখন আমাদের দেখা হয়েছিল তখন তুমি রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছিলে। আমার সেই কথা মনে আছে! কিন্তু আমি কি ভুল করেছিলাম সেটা বুঝতে পারিনি। তবুও বলছি, যদি এখনও রেগে থাকো তাহলে স্যরি।”
রাইফা স্তব্ধ। হঠাৎ করেই তার চোখ আধবোজা হয়ে এলো প্রশান্তিতে। এই ব্যাপারটি রাইফার জন্য অনেক মূল্যবান। সে বাক-বাকুম হয়ে বলল,” একদম রেগে নেই আমি। আমার সব রাগ উধাও হয়ে গেছে।”
রিসব হাসিমুখে প্রশ্ন করল,” তাই? কিভাবে উধাও হলো?”
” জানি না। একটা অদৃশ্য প্রজাপতি এসে সব রাগ রঙিন ডানায় ভর করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।”
রিসব ফিক করে হেসে দিল এই কথায়। ওয়েটার কফি নিয়ে এসেছে। সে চলে যেতেই রিসব কফিতে চুমুক দিতে দিতে মন্তব্য করল,” তোমার কোম্পানি খুব মজাদার রাইফা। ইউ আর আ সুইট গার্ল।”
” আপনি তার মানে ওই ঘটনার জন্য আমার উপর একটুও রেগে নেই?”
” আমি আগেও বলেছি। আমি এই বিষয়ে রাগ করার কেউ না। কিন্তু তোমার নিজেকে শুধরাতে হবে।”
” আপনি বললে আমি শুধু শুধরাবো না, একদম শুদ্ধ হয়ে যাবো।”
” আমি বলেছি বলে না, শুধরানো উচিৎ। তাই তুমি শুধরাবে।”
” আচ্ছা। তাই হবে।”
রাইফা চকচকে দৃষ্টিতে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইল। রিসবের কফি খাওয়া দেখছে। রিসব মৃদু হেসে বলল,” তোমার কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”
রাইফা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। রিসবকে দেখতে দেখতে সে বিবশ হয়ে গেছিল প্রায়। এবার অন্যদিকে ঘুরে বলল,” হুম। খাচ্ছি।”
সে দ্রুত কফিতে চুমুক দিতে নিয়ে ঠোঁটে ছ্যাঁকা খেল। গরম কফি বা চা খেয়ে তার অভ্যাস নেই। অচিরেই কফির কাপ উল্টে পড়ে গেল। মৃদু আর্তনাদে রাইফা মুখ দিয়ে শব্দ বের করল,” ইশ..”
রিসব সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। রাইফা বলল,” আমার গা জ্বলে যাচ্ছে, পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।”
চোখ বন্ধ করে রাইফা ছটফট করতে লাগল। রিসব বলল,” কিন্তু তোমার গায়ে তো কফি লাগেনি। ব্যাগের উপর পড়েছে শুধু।”
রাইফা চোখ খুলে দেখল, আসলেই তার গায়ে লাগেনি। ব্যাগেই একটু পড়েছে। সে জীভ কেটে বলল,” ও স্যরি। আমি ভেবেছি গায়েও পড়েছে। তাই জ্বলুনি হওয়ার আগেই চিৎকার শুরু করেছি। চিৎকার করলে জ্বলুনি কমে যায় জানেন?”
রিসব হাঁ করে তাকিয়ে থেকে হেসে উঠল হঠাৎ। রাইফা নিশ্চুপ দেখতে লাগল,এই হাসিটাই তার হৃদয়কে ছুঁয়ে দেয়।
প্রণয় তুলির হাত চেপে ধরল হঠাৎ। তুলি আশেপাশে তাকিয়ে রাগান্বিত হওয়ার চেষ্টা করে বলল,” এসব কি হচ্ছে?”
প্রণয় কফি খেতে খেতে বলল,” যতক্ষণ উত্তর না পাচ্ছি ততক্ষণ ছাড়বো না।”
তুলি মুখের হাসি আড়াল করে শক্ত গলায় বলল,” এতো শখ কেন? মুখ দিয়ে সব বলতে হবে?”
” আমি শুনতে চাই।”
” আমি শোনাতে চাই না।”
প্রণয় আবার দায়সারাভাবে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,” ঠিকাছে। তাহলে এভাবেই হাত ধরে থাকবো।”
” পাগলামি করবেন না। মানুষ কি মনে করবে? বলবে ছেলে-মেয়ে দু’টো কত বেহায়া, কত নির্লজ্জ!”
” হাত ধরলে বেহায়া, নির্লজ্জ বলবে কেন?”
” কারণ আপনি ছেলে আর আমি মেয়ে। এভাবে ছেলে-মেয়ে জনসম্মুখে হাত ধরে বসে থাকতে পারে না।”
” আমরা তো হাসব্যান্ড-ওয়াইফও হতে পারি, তাই না?”
তুলি বিরক্ত হওয়ার ভং ধরে বলল,” অসম্ভব। আমাকে দেখে কি মনে হয় আমার বিয়ে হয়েছে?”
” আমাকে দেখেও তো মনে হয় না৷ তাই বলে কি বিয়ে হতে পারে না? চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। ”
তুলি লজ্জায় চোখ বড় করে ফেলল। ঝটিতে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,” আপনি কিন্তু এবার মার খাবেন। খালি উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন। আপনার সাথে বসাই ভুল হয়েছে। আচ্ছা, রাইফারা কোথায়? ওরা আমাদের থেকে এতো দূরে গিয়ে বসল কেন?”
প্রণয় ঝুঁকে এসে বলল, ” বসবেই তো। ওদেরও একটু স্পেসের দরকার আছে। যেমন আমাদের আছে।”
তুলি প্রণয়কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।
” শাটআপ। আমাদের স্পেসের কোনো দরকার নেই। বিয়ের আগে কোনোকিছু করা অসম্ভব।”
” এজন্যই তো বলছি, চলো বরিশালে গিয়েই বিয়ে করে ফেলি।”
তুলি ভীত কণ্ঠে বলল,” তারপর মামা আমাকে আর তন্বিকে একসঙ্গে বেঁধে পিটাবে।”
” তন্বিকে কেন পিটাবে?” ভ্রু কুচকে এলো প্রণয়ের। তুলি হেসে উঠে বলল,” তন্বি বিয়ে করে নিয়েছে তো, জানেন না?”
” না। কিভাবে জানবো?” প্রণয় অবাক। তুলি জানাল,” ও বিয়ে করেছে। এজন্যই তো আমরা রাতারাতি বরিশাল যাচ্ছি।”
হঠাৎ রাইফা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ক্যাফেটেরিয়া থেকে। প্রণয় আর তুলি ঝটিতে উঠে দাঁড়ালো। রিসব বসে আছে গম্ভীরমুখে। তুলি অস্থিরতা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” রাইফার কি হলো আবার?”
” আমি জানি না। গিয়ে দেখোতো!”
” নিশ্চয়ই আপনার ভাইয়া ওকে কিছু বলেছে।” অভিযোগ ছেড়ে দিয়ে দ্রুত বাইরে গেল তুলি। প্রণয় রিসবের কাছে গেল।
” ভাইয়া, কিছু কি হয়েছে?”
রিসব ইতস্তত গলায় বলল,” না।”
” তাহলে রাইফা এভাবে চলে গেল কেন?”
রিসব এই কথার উত্তর দিল না। জরুরী গলায় বলল,” আমাকে যেতে হবে প্রণয়।”
” কোথায়?”
“ট্রেনিং এর ডেইট বদলে গেছে। সকালের আগেই আমাকে বান্দরবান থাকতে হবে। আমার সঙ্গীরা সবাই একত্রিত হয়েছে সেখানে।”
প্রণয় অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,” তুই রাইফার জন্য এমন করছিস না তো!”
” একদম না। এখানে রাইফা কোথ থেকে আসবে? আমি আমার কাজে যাচ্ছি।”
রিসব খুব তাড়াহুড়োয় বের হয়ে গেল। তারপর সম্পূর্ণ রাস্তা রাইফা কারো সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলেনি। সে মনমরা হয়ে ছিল। প্রণয় আর তুলিও তাকে প্রশ্ন করে বিব্রত বানাতে চায়নি। তারা বরিশাল পৌঁছালো রাত তিনটায়।
চলবে
#বেদনার_রঙ_নীল
তেত্রিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
সূচির থেকে বিদায় নিয়ে তুমুল উত্তেজনা আর আনন্দকে সঙ্গী করে দুই বান্ধবী ঠিক রাত সাড়ে দশটায় বাড়ি থেকে বের হলো। গেইটের সামনেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষারত প্রণয় দাঁড়িয়ে ছিল। তুলি তাকে দেখে কোমলভাবে হাসল। চোখ ভরে এলো মিষ্টি লজ্জায়। মানুষটা শুধু তার কথায় এই রাতের বেলা কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই চলে এসেছে। এতো ভালো কেন সে?রাইফা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলল,” থ্যাঙ্কিউ প্রণয়৷ সো সুইট অফ ইউ।”
প্রণয় তুলির দিকে চেয়ে রইল। তুলি মাথা নিচু করে বলল,” বলার সাথে সাথেই চলে আসার জন্য থ্যাংকস।”
প্রণয় তার সামনে হাতটা বাড়িয়ে বলল,” কিভাবে না আসবো? মহারানীর অর্ডার বলে কথা! ভেতরে এসো।”
তুলির মুখ আরক্ত হলো। প্রণয়ের বাড়িয়ে রাখা হাতটি ধরতে গিয়েও সে গুটিয়ে গেল। প্রণয় আশাহত হয়ে অন্যদিকে চাইতেই তুলি ঝলমলে হাসি দিয়ে আচমকা প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরল। প্রণয়ের যেন ঝটকা লাগল শরীরে। তুলি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,” এটা আমাকে এতো ভালোবাসার জন্য।”
প্রণয় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রাইফা আনন্দিত কণ্ঠে বলল,” ওয়াও, আমার কথা কাজে লেগেছে তাহলে? তুলি তুই কি প্রণয়ের প্রপোজ্যাল এক্সেপ্ট করে ফেললি?”
তুলি খিলখিল করে হাসল। প্রণয় নিজের বুকের বামপাশ চেপে ধরল সাথে সাথে। উত্তেজনায় হার্টবীট বেড়ে গেছে অনেক। তুলি অন্যদিকে চেয়ে মুখের হাসি আড়াল করে বলল,” হয়তো।”
প্রণয় অস্থিরমনা হয়ে বলল,” হয়তো মানে কি?”
তুলি হালকা ধমকের সুরে বলল,” মানে আপনি পাগল!”
রাইফা জোরে হেসে উঠল। তুলি গিয়ে সামনের আসনে বসল। রাইফা অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,” আমি কি তাহলে পেছনে একা বসবো?”
প্রণয় বিজয়ী হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,” বেস্ট অফ লাক রাইফা।”
রাইফা ঢং করে বলল,” ছিঃ কি স্বার্থপর তোমরা!নিজেরা জুটি হয়ে এখন আমাকে পেছনে একা ছেড়ে দিচ্ছো। তুলি, মনে থাকবে!”
তুলি কোনো জবাব দিল না। ঠোঁট চেপে হাসছিল। প্রণয় এক চোখ টিপে বলল,” আগে তো বসো! তারপর দেখা যাবে..”
” কি দেখা যাবে?”
রাইফা দরজা খুলেই চমকে উঠল। পেছনে রিসব বসে আছে মোবাইল হাতে। রাইফার দিকে চেয়ে হাত নেড়ে বলল,” হায়।”
রাইফার মনে হলো সে এখনি অজ্ঞান হয়ে যাবে। নির্বাক চোখে সে একবার তাকাল প্রণয়ের দিকে।
প্রণয় উচ্চ কণ্ঠে বলল,” সারপ্রাইজ!”
রাইফা মুখে হাত চেপে বলল,” এমন সারপ্রাইজ আমি এক্সপেক্ট করিনি।”
রিসব ভ্রু কুচকে বলল,” তাহলে কি তুমি আমার পাশে বসতে চাও না ?”
” হ্যাঁ অবশ্যই চাই। ”
দ্রুত কণ্ঠে উত্তর দিয়েই রাইফা রিসবের পাশে বসে পড়ল। রিসব কৈফিয়ৎ দেওয়ার মতো বলল ” কোনো কাজ ছিল না৷ তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে আসি। কোনো অসুবিধা নেই তো?”
তুলিও রিসবকে দেখে প্রফুল্ল। সে বলল,” একদম অসুবিধা নেই। বরং আমরা তো খুশি। স্পেশালি রাইফাকে কোম্পানি দেওয়ার পারফেক্ট মানুষ পাওয়া গেল।”
তুলি এই কথা বলে ঠোঁট কামড়ে হাসল৷ রাইফা লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রিসব তার অবস্থা লক্ষ্য করে মৃদু হেসে পাশ কাটানো কণ্ঠে বলল,” থ্যাংকস তুলি। তোমার মামার বাসা একাক্টলি কোন জায়গায়?”
” ফরাজগঞ্জ।”
প্রণয় এক ফাঁকে রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,” আমাদের মধ্যে ডিল হয়েছিল। তুমি আমাকে হেল্প করলে আমিও হেল্প করবো। এইযে করলাম, রিসবকে আমিই কনভিন্স করে এনেছি কিন্তু।”
রাইফা বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে নিম্নস্বরে বলল,” থ্যাঙ্কিউ প্রণয়। আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
” কন্ট্রোল!”
রাইফা কাঁপা বুক নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। রিসব সহজ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কেমন আছো রাইফা?”
” ভালো আছি। আর আপনি?”
” এইতো, ভালো।”
তারপর নীরবতা। রাইফা তো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। টুকটাক কিছু কথা প্রণয় আর তুলির মাঝে চলছে। তারা এমনভাবে কথা বলছে যেন বিবাহিত দম্পতি। কিন্তু রাইফার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে তার রাগী স্যারের সাথে বসে আছে। কথা বলতেও গলা কাঁপছে। একটু পর প্রণয় একটা ক্যাফেটেরিয়ায় গাড়ি থামাল। রিসব পেছন থেকে বলল,” এনি প্রবলেম?”
প্রণয় গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত ঠেঁকিয়ে প্রস্তাব দিল,” আমরা চাইলে কিছু কিনে নিতে পারি। আর কিছু খেয়েও নিতে পারি। যেহেতু লং জার্ণি করতে হবে।”
তুলি বলল,” আমার একদম ক্ষিদে পায়নি।”
রাইফাও একই সুরে বলল,” আমারও না।”
প্রণয় বলল,” তাহলে আমরা কিছু কিনে নেই। আর কেউ কফি খেতে চাও?”
এবার সবাই সম্মত হলো। কফি খাওয়ার জন্য চারজন ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকল। প্রণয় আর তুলি একটা টেবিল ঠিক করে বসে পড়েছে। রাইফা তাদের পাশে বসতে গেলেই রিসব হাত ধরে থামাল। অন্য জায়গা দেখিয়ে বলল,” ওখানে গিয়ে বসি আমরা?”
রাইফা তো খুশিতে বাক-বাকুম। আচ্ছা, সে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবেই এসব হচ্ছে? মিস্টার রুড হঠাৎ এমন সুইট হয়ে গেল কি করে? তার এমন আচরণের কোনো কারণ পাওয়া যাচ্ছে না তবে রাইফার ভীষণ ভালো লাগছে। রিসব মেন্যবুক দেখতে দেখতে বলল,” এভাবে আলাদা কেন বসলাম জানো? প্রণয় আর তুলি যাতে একটু স্পেস পায়। ওদের নতুন প্রেম। এসবের দরকার আছে। বুঝেছো?”
রাইফার মুখ ফুঁস করে নিভে গেল। অন্যদিকে চেয়ে বিরস গলায় বলল,” জ্বী বুঝেছি।”
” আমি ক্যাপাচিনো নিচ্ছি। তুমি কি নিবে?”
রাইফা পানসে কণ্ঠে বলল,” সেইম।”
কিন্তু মনে মনে বলল,” এই মুহূর্তে আপনার মাথা চিবাতে ইচ্ছে করছে।”
কফি অর্ডার করা হলো। সময় লাগবে দশমিনিট। রাইফা আঁড়চোখে প্রণয় তুলিদের টেবিলে তাকাল। কি সুন্দর দু’জন হেসে কথা বলছে। আর এদিকে রিসব গম্ভীর মুখে মোবাইল নিয়ে বসে আছে। রাইফার খুব হতাশ লাগছিল। সে কথা বলার বাহানা খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোনো বাহানাও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে বসে থাকা খুব বোরিং আর অস্বস্তিকর। একপর্যায়ে রিসব নিজে থেকেই প্রশ্ন করল,” এখনও কি রেগে আছো?”
রাইফার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। একটু হকচকিয়ে বলল,” মানে?”
” শেষবার যখন আমাদের দেখা হয়েছিল তখন তুমি রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছিলে। আমার সেই কথা মনে আছে! কিন্তু আমি কি ভুল করেছিলাম সেটা বুঝতে পারিনি। তবুও বলছি, যদি এখনও রেগে থাকো তাহলে স্যরি।”
রাইফা স্তব্ধ। হঠাৎ করেই তার চোখ আধবোজা হয়ে এলো প্রশান্তিতে। এই ব্যাপারটি রাইফার জন্য অনেক মূল্যবান। সে বাক-বাকুম হয়ে বলল,” একদম রেগে নেই আমি। আমার সব রাগ উধাও হয়ে গেছে।”
রিসব হাসিমুখে প্রশ্ন করল,” তাই? কিভাবে উধাও হলো?”
” জানি না। একটা অদৃশ্য প্রজাপতি এসে সব রাগ রঙিন ডানায় ভর করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।”
রিসব ফিক করে হেসে দিল এই কথায়। ওয়েটার কফি নিয়ে এসেছে। সে চলে যেতেই রিসব কফিতে চুমুক দিতে দিতে মন্তব্য করল,” তোমার কোম্পানি খুব মজাদার রাইফা। ইউ আর আ সুইট গার্ল।”
” আপনি তার মানে ওই ঘটনার জন্য আমার উপর একটুও রেগে নেই?”
” আমি আগেও বলেছি। আমি এই বিষয়ে রাগ করার কেউ না। কিন্তু তোমার নিজেকে শুধরাতে হবে।”
” আপনি বললে আমি শুধু শুধরাবো না, একদম শুদ্ধ হয়ে যাবো।”
” আমি বলেছি বলে না, শুধরানো উচিৎ। তাই তুমি শুধরাবে।”
” আচ্ছা। তাই হবে।”
রাইফা চকচকে দৃষ্টিতে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইল। রিসবের কফি খাওয়া দেখছে। রিসব মৃদু হেসে বলল,” তোমার কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”
রাইফা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। রিসবকে দেখতে দেখতে সে বিবশ হয়ে গেছিল প্রায়। এবার অন্যদিকে ঘুরে বলল,” হুম। খাচ্ছি।”
সে দ্রুত কফিতে চুমুক দিতে নিয়ে ঠোঁটে ছ্যাঁকা খেল। গরম কফি বা চা খেয়ে তার অভ্যাস নেই। অচিরেই কফির কাপ উল্টে পড়ে গেল। মৃদু আর্তনাদে রাইফা মুখ দিয়ে শব্দ বের করল,” ইশ..”
রিসব সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। রাইফা বলল,” আমার গা জ্বলে যাচ্ছে, পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।”
চোখ বন্ধ করে রাইফা ছটফট করতে লাগল। রিসব বলল,” কিন্তু তোমার গায়ে তো কফি লাগেনি। ব্যাগের উপর পড়েছে শুধু।”
রাইফা চোখ খুলে দেখল, আসলেই তার গায়ে লাগেনি। ব্যাগেই একটু পড়েছে। সে জীভ কেটে বলল,” ও স্যরি। আমি ভেবেছি গায়েও পড়েছে। তাই জ্বলুনি হওয়ার আগেই চিৎকার শুরু করেছি। চিৎকার করলে জ্বলুনি কমে যায় জানেন?”
রিসব হাঁ করে তাকিয়ে থেকে হেসে উঠল হঠাৎ। রাইফা নিশ্চুপ দেখতে লাগল,এই হাসিটাই তার হৃদয়কে ছুঁয়ে দেয়।
প্রণয় তুলির হাত চেপে ধরল হঠাৎ। তুলি আশেপাশে তাকিয়ে রাগান্বিত হওয়ার চেষ্টা করে বলল,” এসব কি হচ্ছে?”
প্রণয় কফি খেতে খেতে বলল,” যতক্ষণ উত্তর না পাচ্ছি ততক্ষণ ছাড়বো না।”
তুলি মুখের হাসি আড়াল করে শক্ত গলায় বলল,” এতো শখ কেন? মুখ দিয়ে সব বলতে হবে?”
” আমি শুনতে চাই।”
” আমি শোনাতে চাই না।”
প্রণয় আবার দায়সারাভাবে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,” ঠিকাছে। তাহলে এভাবেই হাত ধরে থাকবো।”
” পাগলামি করবেন না। মানুষ কি মনে করবে? বলবে ছেলে-মেয়ে দু’টো কত বেহায়া, কত নির্লজ্জ!”
” হাত ধরলে বেহায়া, নির্লজ্জ বলবে কেন?”
” কারণ আপনি ছেলে আর আমি মেয়ে। এভাবে ছেলে-মেয়ে জনসম্মুখে হাত ধরে বসে থাকতে পারে না।”
” আমরা তো হাসব্যান্ড-ওয়াইফও হতে পারি, তাই না?”
তুলি বিরক্ত হওয়ার ভং ধরে বলল,” অসম্ভব। আমাকে দেখে কি মনে হয় আমার বিয়ে হয়েছে?”
” আমাকে দেখেও তো মনে হয় না৷ তাই বলে কি বিয়ে হতে পারে না? চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। ”
তুলি লজ্জায় চোখ বড় করে ফেলল। ঝটিতে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,” আপনি কিন্তু এবার মার খাবেন। খালি উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন। আপনার সাথে বসাই ভুল হয়েছে। আচ্ছা, রাইফারা কোথায়? ওরা আমাদের থেকে এতো দূরে গিয়ে বসল কেন?”
প্রণয় ঝুঁকে এসে বলল, ” বসবেই তো। ওদেরও একটু স্পেসের দরকার আছে। যেমন আমাদের আছে।”
তুলি প্রণয়কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।
” শাটআপ। আমাদের স্পেসের কোনো দরকার নেই। বিয়ের আগে কোনোকিছু করা অসম্ভব।”
” এজন্যই তো বলছি, চলো বরিশালে গিয়েই বিয়ে করে ফেলি।”
তুলি ভীত কণ্ঠে বলল,” তারপর মামা আমাকে আর তন্বিকে একসঙ্গে বেঁধে পিটাবে।”
” তন্বিকে কেন পিটাবে?” ভ্রু কুচকে এলো প্রণয়ের। তুলি হেসে উঠে বলল,” তন্বি বিয়ে করে নিয়েছে তো, জানেন না?”
” না। কিভাবে জানবো?” প্রণয় অবাক। তুলি জানাল,” ও বিয়ে করেছে। এজন্যই তো আমরা রাতারাতি বরিশাল যাচ্ছি।”
হঠাৎ রাইফা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ক্যাফেটেরিয়া থেকে। প্রণয় আর তুলি ঝটিতে উঠে দাঁড়ালো। রিসব বসে আছে গম্ভীরমুখে। তুলি অস্থিরতা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” রাইফার কি হলো আবার?”
” আমি জানি না। গিয়ে দেখোতো!”
” নিশ্চয়ই আপনার ভাইয়া ওকে কিছু বলেছে।” অভিযোগ ছেড়ে দিয়ে দ্রুত বাইরে গেল তুলি। প্রণয় রিসবের কাছে গেল।
” ভাইয়া, কিছু কি হয়েছে?”
রিসব ইতস্তত গলায় বলল,” না।”
” তাহলে রাইফা এভাবে চলে গেল কেন?”
রিসব এই কথার উত্তর দিল না। জরুরী গলায় বলল,” আমাকে যেতে হবে প্রণয়।”
” কোথায়?”
“ট্রেনিং এর ডেইট বদলে গেছে। সকালের আগেই আমাকে বান্দরবান থাকতে হবে। আমার সঙ্গীরা সবাই একত্রিত হয়েছে সেখানে।”
প্রণয় অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,” তুই রাইফার জন্য এমন করছিস না তো!”
” একদম না। এখানে রাইফা কোথ থেকে আসবে? আমি আমার কাজে যাচ্ছি।”
রিসব খুব তাড়াহুড়োয় বের হয়ে গেল। তারপর সম্পূর্ণ রাস্তা রাইফা কারো সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলেনি। সে মনমরা হয়ে ছিল। প্রণয় আর তুলিও তাকে প্রশ্ন করে বিব্রত বানাতে চায়নি। তারা বরিশাল পৌঁছালো রাত তিনটায়।
চলবে