বেদনার_রঙ_নীল চৌত্রিশতম পর্ব

0
299

#বেদনার_রঙ_নীল
চৌত্রিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

এতোরাত, অথচ বাড়িতে মামা-মামী জাগ্রত। তুলিদের স্বাগতম জানালেন তার মামা হেলাল সাহেব। মামী ব্যস্ত হয়ে তাদের ঘরে বসালো। নারকেলের পানি পান করালো। নারকেলের নাড়ুও দিল। তন্বি আর সামিরকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও৷ রাইফা তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তুলির মামী আশা বলল,” আজ তো ওদের বাসর।”

এই কথা শুনে তুলি কেশে উঠল। লজ্জায় মুখ-মন্ডল অন্যরকম হয়ে গেল। রাইফাও হকচকালো। বিয়েটা যে সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এটা বোঝা যাচ্ছে। তুলি ভেবেছিল মামা তার আগমনে খুশি হবেন না। তন্বির উপর রেগে তাকেও বকা-ঝকা করবেন। সেই ক্ষেত্রে প্রণয় আর রাইফাকে নিয়ে বাড়িতেও ঢোকা যাবে না। তুলির পরিকল্পনা ছিল তারা বকুলদের বাড়িতে গিয়ে উঠবে। বকুল তুলিদের প্রতিবেশী। তারও তুলির মতো মা নেই। বাবার সাথে থাকে। তার বাবা আর সে দু’জনেই খুব আন্তরিক। সে এইখানে আসার আগে বকুলকে ফোন করেছিল। কিন্তু মামা যেভাবে আপ্যায়ন শুরু করেছেন তাতে মনে হয় আর বকুলদের বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হেলাল সাহেব এসে বললেন,” তুলি আর রাইফা, তোমরা আমাদের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো। সকালে তন্বির সাথে দেখা হবে। এখন আর তাদের ডাকার দরকার নেই।”

রাইফা বলল,” জ্বী হ্যাঁ একদম ডাকার দরকার নেই। আমরা সকালেই দেখা করবো।”

আশা খোশমেজাজে বলল,” চলে এসে খুব ভালো করেছিস তোরা মা। আমিই তন্বিকে বলেছিলাম তোদের যেন ডাকে।”

হেলাল সাহেব প্রণয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলেন,” তুমি কি ওদের রাতের বেলা নিয়ে এসেছো তাই না?”

রাইফা বলল,” জ্বী আঙ্কেল। ও আমাদের প্রতিবেশী। আম্মু তো একা আমাদের পাঠাতে রাজি না। তাই ওকেও সাথে পাঠিয়ে দিলেন।”

আশা মুচকি হেসে বলল,” আচ্ছা, কোনো সমস্যা নেই। আমরা ব্যালকনির যে বিছানাটা আছে সেখানে শুয়ে পড়বো। তুমি ভেতরের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো বাবা।”

প্রণয় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভদ্র গলায় বলল,” কোনো অসুবিধা নেই। আমাকে নিয়ে ভাববেন না। ”

হেলাল সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন,” ভাববো না কেন? তুমি আমাদের মেহমান না?”

প্রণয় ব্যালকনির দিকে যেতে যেতে বলল,” এই জায়গাটা খুব সুন্দর। আমি মনে হয় এখানেই বেশি কমফোর্টেবল ফীল করবো।”

হেলাল সাহেব জীভ কাটলেন।

” ছিঃ, কি বলে! তুমি ঘর থাকতে ব্যালকনিতে কেন শুবে?

তুলি হাসিমুখে বলল,” বাদ দাও মামা। উনি এমনি।”

আশা অসন্তুষ্ট হয়ে তাকালো। খানিক ধমকের সুরে বললো,” এমনি মানে কি? মেহমানকে কখনও বাইরে শুতে দেয় কেউ? তোমাকে যেখানে বলেছি সেখানেই শোও বাবা। অনেক ঠান্ডা এখানে। ভোরে শীত লাগবে।”

” আমি ঠান্ডা সহ্য করতে পারি। আমার একদম কষ্ট হবে না। প্লিজ, আমি এখানেই থাকি।”

প্রণয় বিনীত ভঙ্গিতে হাসল। হেলাল সাহেব একটু ইতস্তত হয়ে হাসলেন। তুলি বলল ” ছেড়ে দাও মামা। থাকুক উনি এখানেই।”

” ঠিকাছে বাবা। তোমার যেমন ইচ্ছা। কিছু প্রয়োজন হলে বোলো।”

” বলবো।”

তুলি মামীকে নিয়ে ঘরে এলো। রাইফা বাথরুমে ঢুকেছে। তুলি তখন ফিসফিস করে কৌতুহল মেটাতে জিজ্ঞেস করল,” এসব কিভাবে হলো মামী? আমাকে বলোতো!”

আশা নরম গলায় বলল,” আমিও জানি না মা। হঠাৎ দেখি তন্বি আর সামির হাজির। তন্বি কাঁদছে তো কাঁদছেই। তোর মামা তখন বাসায় নাই। আমি তো ভাবলাম তোর আবার কিছু হয়েছে নাকি! সামিরকে প্রশ্ন করলে সেও কেঁদে ফেলল। বলল মাফ করে দেন৷ তন্বিও মাফ চাইছিল। কথা নেই, বার্তা নেই পায়ে ধরে কাঁদল। আমি তো তখন ভয়ে শেষ। আমার কলিজা এতোটুকু হয়ে আসছিল বার বার৷ একজন মাফ চায়। অন্যজন কাঁদে। আবার সেও মাফ চায়। কি একটা অবস্থা বলতো?”

তুলি বিছানায় বসতে বসতে বলল,” আচ্ছা তারপর?”

” তারপর তোর মামাকে ফোন করলাম। সে বাড়িতে এলে জানলাম তারা দু’জন বিয়ে করেছে। চেয়ারম্যান সাহেবকে ডাকা হলো। তিনি সামিরকে প্রশ্ন করলেন বিয়ে স্ব-ইচ্ছায় করেছে নাকি বাধ্য হয়ে। সামির বলল সে নিজের ইচ্ছায় করেছে। সে বিয়েতে খুশি। তারপর তাদের বাড়ি নিয়ে গেল। ইকবাল ভাই বললেন অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানাবে। বিয়ে যখন হয়েই গেছে তিনি আর ঝামেলা-টামেলা করেননি। আমরাও মেনে নিয়েছি। তোর মামা তো খুশি। চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেছে।”

তুলি থুতনিতে হাত রেখে সাত-পাঁচ ভাবতে লাগল। প্রশ্ন করল,” তাদের কি এমন হলো যে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেছে?”

আশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মৃদু চালে ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল,” জানি নারে মা। তোদের কখন কি মর্জি হয় তোরাই ভালো বুঝিস। প্রথমে তুই বিয়ের আসর থেকে পালালি। তন্বি তখনও স্বাভাবিক ছিল। তোর সাথে সামিরের বিয়ে হওয়া নিয়ে তো তার মধ্যে কোনো কষ্ট দেখা যায়নি। তাহলে এখন আবার সামিরকেই সে বিয়ে করল কিভাবে? তাদের মধ্যে কি চলছে তা আমি বুঝি নাই। কিন্তু আমার এই নিয়ে অমতও নাই। সামির ভালো ছেলে৷ তাকে আমি পছন্দ করি। তুইও আমার মেয়ে। তন্বিও আমার মেয়ে। একজনের সাথে বিয়ে হলেই হলো। ঘুরে-ফিরে সামিরই আমার মেয়ের জামাই হলো। এতেই আমি খুশি।”

তুলি শান্ত কণ্ঠে বলল,” এখন কি তারা ইকবাল আঙ্কেলের বাসায়? তিনি এতো সহজে মেনে নিলেন সব?”

” মনে তো হলো মেনে নিয়েছে। তোদের আসার খবর সকালে জানাবো তাকে। তখন তন্বি এলে তার থেকে সব জেনে নিস। এখন চিন্তা করিস না এসব নিয়ে। ঘুমা।”

” ঠিকাছে মামী। তুমিও এখন ঘুমাতে যাও। তোমাকে ক্লান্ত লাগছো।”

” তোরাও শুয়ে পড়। এতোদূর থেকে এসেছিস…”

আশা চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর রাইফা বাথরুম থেকে বের হলো। চোখ ফোলা আর মুখ লাল। নাকের ডগা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে সে এতোক্ষণ। তুলি বিছানা গুছাতে গুছাতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,” তোর কি হয়েছে? আমাকে বলবি না?”

রাইফা পাশ কাটানো কণ্ঠে বলল,” অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে আমার। এখন এসব নিয়ে কথা বলার মুড নেই।”

তুলি কাছে এসে তার কাঁধে রেখে বলল,” ঠিকাছে। তাহলে পরে বলিস। শুয়ে পড়।”

” হুম।”

রাইফা লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু তার ঘুম এলো না। মনের শান্তির সাথে চোখের ঘুমও উধাও হয়ে গেছে।

গ্রামের সকাল সুন্দর হয়। নানান রকম পাখিদের কল-কাকলি শুনে ঘুম ভাঙার সৌভাগ্য হয়। ভোরে মোরগটা যেন ঠিক কানের কাছেই বসে ডাকছিল। প্রণয়ের মনে হচ্ছিল, মোরগ তার কানের ভেতর ঢুকে গেছে। বের হওয়ার জন্যই চেঁচাচ্ছে। তবুও সে চোখ খুলেনি। আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার ঘুম ভাঙল সকাল এগারোটায়। আশা তাকে নাস্তা দিয়ে গেলেন। তুলিদের ঘর থেকে হাসাহাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তন্বি এসে পড়েছে নাকি?

রাইফা আর তুলির ঠিক মাঝখানেই তন্বি বসে আছে। তার গায়ে লাল শাড়ি, হাতভর্তি চুরি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক। মাথায় যত্ন করে লম্বা বিনুনী। একদম লাজুক নববধূর মতো দেখাচ্ছে। সে গল্প করছে খোশমেজাজে। তার চেহারা উজ্জ্বল, চোখমুখে চিকচিক করছে খুশি। সে খুব আগ্রহ নিয়ে বলল,” আমার বিয়ে এইভাবে হবে তা আমি কখনও কল্পনা করিনি। কিন্তু আমি খুব খুশি।”

তুলি তার কাঁধে হাত রেখে হালকা ঝুঁকে এসে বলল,” সেটা তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এখন বলতো, কিভাবে কি হলো?”

তন্বি রাইফার দিকে তাকিয়ে হাসল। রাইফার মুখ মলিন। সে কেবল সবার কথায় সায় দিয়ে জোর করে হাসছে তা বোঝা যাচ্ছে। তন্বি সন্দেহী কণ্ঠে বলল,” এর আবার কি হয়েছে?”

তুলি পাশ কাটানো কণ্ঠে বলল,” ওর কথা বাদ দে। তুই আগে তোর কথা বল।”

তন্বি মাথা নিচু করে গতকালকের ঘটনা বলতে লাগল। থানা থেকে তারা রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিল। সামিরের খুব জ্বর এসেছিল। তন্বি তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার কথা বলেছিল। যথারীতি একটি হাসপাতালের সামনে রিকশা থামানো হলো। কিন্তু সামির ভেতর ঢোকার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার এই অবস্থা দেখে তন্বি কেঁদে অস্থির হয়ে যায়। সে ভেবেছিল সামিরের কিছু একটা হয়ে যাবে। মনে ভয় ঢুকে গেল। তন্বির এমন কান্না-কাটি দেখে ডাক্তার ধরে নিলেন তারা স্বামী-স্ত্রী। সামিরের জ্ঞান ফেরার পর ডাক্তার বলল,” আপনার স্ত্রী কিন্তু আপনাকে খুব ভালোবাসে। সামান্য শরীর দূর্বল হয়েছে আপনার। এতোবার করে বুঝালাম। তাও তিনি কান্না থামাচ্ছেন না। স্ত্রীর এমন ভালোবাসা সবাই পায় না। আপনি ভাগ্যবান মানুষ।”

তন্বি এটা শুনে লজ্জায় জড়সড় হয়ে পড়ল। সামির অস্বস্তি মেশানো হাসি দিয়ে বলল,” আরে কি বলেন.. ও তো আমার বউ না, বোন হয়। ছোটবোন।”

ডাক্তার বললেন,” স্যরি, স্যরি, আপনবোন নাকি?”

” না। এমনি পাড়ার বোন।”

” তাহলে আমি যা ভাবছি তা সত্যি হতেও পারেন।”

মহিলা ডাক্তার তো, সুযোগ পেয়েই মজা করছিলেন। সামির সঙ্গে সঙ্গেই বলল,” সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

তন্বির মনখারাপ হয়ে গেল। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর তারা সিএনজিতে উঠল। তন্বি ব্যথিত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” আপনি ডাক্তারের সামনে যেটা বলেছেন সেটা কি সত্যি সামির ভাই?”

” কোনটা?”

” এইযে, আমাদের মধ্যে কখনও কিছু সম্ভব না?”

” আসলেই কি সম্ভব? ছোটবেলা থেকে তুমি আমাকে ভাইয়া বলেই তো ডাকো। তাই আমিও তোমাকে বোনের নজরে দেখেছি ।”

” তুলিও আপনাকে ছোটবেলা থেকে ভাইয়া বলে ডাকে। কিন্তু আপনি তাকে কখনও বোন ভাবেননি।”

সামির মৃদু লজ্জায় আরক্ত হয়ে বলল,” তা ঠিক। তুলির কথা ভিন্ন।”

” কেন? সে খুব সুন্দরী বলে?”

সামির অবাক হয়ে বলল,” না, না, তুমিও সুন্দরী।”

তন্বি কথাটা বিশ্বাস করেনি এমনভাবেই হাসল। সামির অপ্রস্তুতবোধ নিয়ে বলল,” সত্যি।”

তন্বি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা, বাবা যদি তুলির জায়গায় আমার সাথে বিয়ের কথা বলতো তাহলে কি আপনি এতো সহজে রাজি হতেন?”

সামির হকচকিয়ে বলল,” হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”

” এমনি। মনে হলো তাই।”

” তন্বি, তোমার কি হয়েছে?”

” তেমন কিছু না।”

” তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?”

” আপনি শুনতে চান?”

সামির একটু ভেবে বলল,” হ্যাঁ চাই শুনতে। বলো।”

” নাহ, কিছু না।”

তারপর এই নিয়ে আর সামির কিছু বলেনি। বাড়ি পৌঁছানোর পর দেখা গেল বাড়ি ফাঁকা। সূচি মার্কেটে গেছেন। সম্পূর্ণ বাড়িতে দু’জন একা থাকা ভালো দেখায় না ভেবে সামির নিচে চলে গেল। তন্বি তারপর সামিরকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করল,” আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নটার উত্তর দেননি সামির ভাই।”

” কোন প্রশ্ন?”

” যদি বাবা আমার সাথে বিয়ে ঠিক করতো তাহলে কি রাজি হতেন?”

” যদি তুমি রাজি হতে তাহলে অবশ্যই হতাম।”

” কেন? আপনার নিজের কোনো মত নেই?”

” আমি কখনও কারো সাথে প্রেম করিনি। বিয়ের ক্ষেত্রে আমার নিজের দিক থেকে কোনো বাঁধা নেই। আমি তো ভালো মেয়ে পেলেই বিয়ে করতাম। আর তোমার মতো মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।”

তন্বি গাঢ় স্বরে বলল,” সত্যি?”

” হুম।”

তন্বির চোখে পানি ছলছল করছিল। সে জানালা থেকে সামিরকে দেখছিল। নিচে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সামির পা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে আর ফোনে কথা বলছে। তাকে কি সরল দেখাচ্ছে! এতো মায়া লাগছিল তন্বির। সে প্রায় বিবশের মতো বলে ফেলল,” আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, সামির ভাই।”

” কি?”

তন্বি দ্রুত ফোন কেটে দিল৷ সামির আবার ফোন করল। তারপর করতেই থাকল। কিন্তু তন্বি ফোন রিসিভ করল না। সে মোবাইল বন্ধ করে দিল। একটু পর সামির উপরে উঠে এলো। কলিংবেল চাপল। তন্বি দরজা খুলে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। সামির হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল,” কখনও বলোনি কেন?”

তন্বি মাথা নিচু করে বলল,” আপনি তো তুলিকে পছন্দ করতেন।”

” পছন্দ আর ভালোবাসা এক জিনিস না। তুলি যখন আমাকে বিয়ের ব্যাপারে নিষেধ করে দিল তখন আমার একদমই কষ্ট হয়নি। এর চেয়েও বেশি কষ্ট হয়েছিল কারণ তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে।”

তন্বি অবাক হয়ে তাকাল।

” এর মানে কি?”

সামির মাথা নেড়ে বলল,” জানি না।”

এরপর দু’জনেই চুপ। একটু পর সামির নিজেই বলল,” আমাকে বিয়ে করবে?”

তন্বি অবজ্ঞার স্বরে বলল,” ধূর, কি বলছেন? কেউ রাজি হবে না। আমার বাবা, আপনার বাবা, কেউ মানবে না।”

” তুমি নিজে রাজি কি-না বলো। বাকি সবাইকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

তন্বি থেমে গেল। রাইফা আর তুলি অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল,” তারপর?”

তন্বি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” তারপর আর কি? জীবনের চূড়ান্ত পাগলামিটা করেই ফেললাম।”

তুলি হাতে তালি বাজি বলল,” সো সুইট। তোর জন্য আমি অনেক হ্যাপি বিশ্বাস কর!”

রাইফার কান্না পাচ্ছে রীতিমতো। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছে। তন্বি সেটা খেয়াল করেই বলে উঠল,” আরে, তোর আবার কি হয়েছে?”

জানালা থেকে কেউ পাথর ছুঁড়ল। ঠিক তুলির গায়ে এসে লাগল। সে আৎকে উঠে জানালায় চাইতেই দেখল প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে। সে চোখ টিপে বলল,” গুড মর্ণিং।”

” এইভাবে গুড মর্ণিং জানাতে আমি কাউকে দেখিনি।”

” জানি আমি ইউনিক। বের হও।”

” আপনি পাগল।”

প্রণয় হেসে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে নিয়েছিল কিন্তু তুলি জানালা আটকে দিল। তারপর সে বিছানায় বসতে বসতে সিরিয়াস কণ্ঠে বলল,” রাইফা তোর কি হয়েছে? এখন সব সত্যি কথা বল প্লিজ।”

রাইফা দুই হাতে চোখ মুছে তন্বিকে অভিবাদন জানাল,” কংগ্রাচুলেশনস। তুই অনেক লাকি তন্বি। ভালোবাসার কথা একবার স্বীকার করলি আর উনি তোকে বিয়েই করে ফেলল। এমনটা সবাই পারে না।”

তন্বি তৃপ্ত কণ্ঠে বলল,” সামির ভাই আসলে খুব সরল।”

রাইফা ভাবলেশহীন হয়ে বলল, ” তাহলে তো বুদ্ধিমানের চেয়ে সহজ-সরল মানুষদেরই বেশি ভালোবাসা উচিৎ। অন্তত মন ভাঙার চান্স থাকে না।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here