চন্দ্ররাতের_মায়া [৬]

0
254

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৬]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল’পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।

অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করছে।তীব্র মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।চাঁদের আলোয় আবছা আবছা তার মুখ দৃশ্যমান হতেই তীব্র হতভম্ব হয়ে যায়।মেয়েটি আর কেউ নয়,তার নিজের ভাবী।তীব্র রেগেমেগে বলে

– এটা কিরকম অসভ্যতামি ভাবী?

– তীব্র,আমি নিরুপায় হয়ে এটা করতে বাধ্য হচ্ছি।

– বাধ্য মানে,কি বলতে চাচ্ছো?

– হুম,কি করবো বলো,তোমার ভাইয়ার আমার জন্য সময় কোথায়,সেতো সারাদিন পড়ে থাকে শুটিং নিয়ে।আমার নিজেরও তো চাহিদা আছে,তাই না

– ভাবী চুপ করো,এাব বলার মানে কি, তুমি কিন্তু ভুলে গেছো আমি তোমার দেবর

– দেবরের আগে, আমি তোমার প্রেমিকা,কি ছিলাম না প্রেমিকা?

ভাবীর মুখে এরুপ কথা শুনে তীব্র চুপ করে রইলো।ভাবী বলতে লাগলো

– মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা? যখন আমরা হাতে হাত রেখে রিক্সায় ঘুরেছি,রাস্তায় রাস্তায় হেটেছি,তুমি আদর করে চুলে বেলী ফুলের মালা দিয়ে দিতে?

– এসব কথা এখন কেনো তুলছো?

– তুলছি কারন তোমার জন্য আমি আজ ভালো নেই,আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তুমি,

– আমি কি করেছি?

– কি করেছো? হাহহাহা,ভুলে গেছো সব তাইনা? বউ বানাবে বলে ছিলে,সেখানে…

– ভাবী চুপ করো প্লিজ।এখন এগুলো বলে কি বুঝাতে চাইছো?

– তীব্র, আমার আবদার তুমি আমাকে একটা সন্তানের সুখ দেবে

কথাটা শুনে তীব্রর সারা শরীর হিরহির করতে লাগলো।মনে হতে লাগলো কষে কয়েকটা চড় মারতে।তীব্র কখনো তাকে খারাপ নজরে দেখেনি।হ্যা হতে পারে একসময় সে তার প্রেমিকা ছিলো,কথার ছলে হাতটুকু ধরতে ইতস্ততবোধ হতো তীব্রর।সে নন্দিতাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কখনো এসব স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা

– আমার ইচ্ছে করছে তোমার গালে ঠাসঠাস করে কষে চড় মারতে, শুধু বড় ভাবী হও এজন্য কিছু বলতে পারছি না

– তুমি যাই করো,প্লিজ আমার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখো।তোমার যেমন বাবা না হতে পারার কষ্ট হয়,তেমনি তো আমারো ইচ্ছে করে মা হতে,মা ডাক শুনতে।আমি কথা দিচ্ছি এসব আমাদের নিজেদের মধ্যেই থাকবে।কেউ কিচ্ছু জানবে না।

তীব্র এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ঠাস করে একটা চড় মেরে স্টোর রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো।বেড় হয়ে সামনে নন্দিতাকে দেখতে পেয়ে তীব্র চরমভাবে একটা ধাক্কা খেলো।মনে হচ্ছে সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র তলিয়ে যাচ্ছে তলন সমুদ্রে।নন্দিতা চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে চোখ লাল করে কাঠ দারিয়ে আছে।তীব্র আমতা আমতা করতে বললো

– নন..নন..নন্দিতা,তু..তু..তুমি এখানে

– এসেতো অন্যায় করে ফেলছি বোধহয়।তাই না মিঃতীব্র

– নন্দিতা তেমন কিছুই নয়,যেমনটা তুমি ভাবছো

– আমার ভাবার কিছু বাকি নেই।বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়,সেটার এই মূল্য? বাহ্

– নন্দিতা আমার কথা শুনো (নন্দিতার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে)

– আমার কাছে আসবে না, একদম আসবে না।চরিত্রহীন পুরুষ। লজ্জা করলো না এসব করতে? তাও বড় ভাবীর সাথে,,ওহহ সরি উনিতো তোমার ভাবী না,পুরোনো প্রেমিক। প্রেম জেগেছে মনে,তা যাও না যা করছিলো তা করো না

– আমার কথা একটু শু..

– স্টোপ।আই সে স্টপ।ভূল ভেবেছিলাম আমি,ভেবেছিলাম কেউ আমার পাশে থাকুক না থাকুক তুমি থাকবে,কিন্তু এই সময়টাও যে দেখতে হবে,,,আমি আর থাকবো না,এল মূহুর্ত থাকবো না বাড়িতে

– নন্দিতা আমায় একটা সুযোগ দাও বলার

কথাটা বলতেই ভাবী মিহি সুরে কান্না করতে করতে ঘর থেকে বেড় হলো।তীব্র তাকালে যা দেখতে পায় সেটা সে কখনো ভাবতে পারেনি।

ভাবীর শরীরে শাড়ীটা নেই।পরনে ব্লাউজ আর পেডিকোট।ব্লাউজটাও বুকের অংশে ছেঁড়া।চোখের কাজল লেপ্টে সারা গাল হয়ে আছে।তীব্র এমন অবস্থা দেখে নিজের চোখ ভাবীর ওপর থেকে সরিয়ে নিলো।নন্দিতা রেগেমেগে নিজের রুমে চলে গেলো।তীব্রর বলার মতো কিছুই রইলো না।ভাবীকে শুধু বললো ” কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করোনি,এর মাশুল তোমায় গুলতেই হবে”। উত্তরে ভাবী বললো ” সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি উঠলোই না তখন না হয় আঙুল বাঁকালাম,দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়,আমার জীবনতো এমনিতেও নরক হয়ে গেছে।তুমি শান্তিতে থাকো কিভাবে সেটাও দেখবো।”

তীব্র রুমে এসে দেখলো নন্দিতা শুধু ফোনটা,আর ছোট্ট একটা ব্যাগে নিয়ে রুম থেকে বেড় হচ্ছে। তীব্র আটকাতে গেলে নন্দিতা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্রর ওপর।যে দৃষ্টিতে রয়েছে এক সাগর ঘৃনা,রাগ,অভিমানে ভর্তি।তীব্র কিছু বলতে পারলো না।

নিচে শেখর চৌধুরী খবরের কাগজ পড়ছে আর চা খাচ্ছে। নন্দিতার হাতে ব্যাগ নিয়ে নামতে দেখে তিনি বললেন

– কোথাও যাচ্ছো বউমা?

– জ্বি বাবা ( ব্যাগটা ফ্লোরে ধপাস করে রেখে দিয়ে সালাম করতে করতে বললো)

– আরে থাক থাক, সুখী হও।কিন্তু এতো রাত্রে কোথায় যাচ্ছো?

– এ বাড়িতে আমার দিন শেষ বাবা।এই বাড়ির কাউকে তো কোনোদিন আপন করতে পারিনি। রাত জাগবেন না বাবা।আসি

– বউমা এসবের মানে কি?দারাও আ….

– প্লিজ বাবা আমায় আটকাবেন না।আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না।

শেখর চৌধুরী আর আটকালেন না।স্বামী,স্ত্রীর ঝগড়া হয়,তাদের মাঝেও হয়।নন্দিতা রেগে বাবার বাড়িতে গেলে তীব্র নিয়ে আসে।বরাবর এমনটাই হয়।তাই শেখর চৌধুরী তেমন জোর করলেন না।

সারারাত তীব্র নেশায় কাটালো। একটার পর একটা সিগারেটের প্যাকেট শেষ করে।ঘরের মেঝেতে প্যাকেটগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।নন্দিতার প্রতি তার ভালোবাসার কমতি ছিলো না কখনো,তবুও নন্দিতা তার কথা না শুনেই এরকম করবে এটা তীব্র কখনো ভাবে নি।পরোক্ষণে নিজেই নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,নন্দিতাতো ঠিকি করেছে। নিজের স্বামীকে এরুপ অবস্থায় দেখলে কোনো স্ত্রীই ভালোভাবে নিবে না সেটা।কাল সকালে ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে নিয়ে আসবে,এসব ভাবতে ভাবতেইফ্লোরেই ভোর রাতে ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুম ভাঙ্গলো চেচামেচিতে।বাইরে বেড় হয়ে দেখতে পেলো সারা বাড়ি সাজানো হচ্ছে। মুহূর্তেই তীব্রর সারা শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো।মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা।ভাবী কি আবার কোনো ফাঁদ পেতেছে তাকে বিপদে ফেলার জন্য?এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নামলো তীব্র।

পেছন ফিরতেই ভাবী তীব্রকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় চোখ টিপে মুচকি হাসলো।তীব্র শক্ত করে তার হাত ধরে সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো

– কি হচ্ছে বাড়িতে? সাজানো হচ্ছে কেন?তুমি কোনো ঝামেলা করলে কিন্তু

– আরেহ কুল, কুল।আমি কি করতে পারি সেটাতো এখনো দেখাইনি তোমায়,এখন দেখাবো।রেডি থাকো।আমার ওপর দেওয়া প্রতিটি কষ্টের হিসেব আমি নিবো।

– এখন বুঝেছি, আমার আগের দুই সন্তান নষ্ট হওয়ার পেছনে তোমার কারসাজি আছে।তোমায় আমি ছাড়বো না, (কটকটে গলায় বললো)

– ছিহ্, এতোটা নিচ ভাবনা তোমার?কিভাবে ভাবলে তুমি?যে কিনা পৃথিবীর আলোই দেখেনি তার ওপর আমি প্রতিশোধ নিবো?

– সেটা তুমিই ভালো জানো

নিচ থেকে রাবেয়া চৌধুরী চেচিয়ে ডাকতে লাগলেন ” তীব্র, এই তীব্র, দেখে যা কে এসেছে।বড় বউমা দেখে যাও কে এসেছে,আমার ঘরের লক্ষী এসছে”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here