বধুয়া
পর্ব-৩
Writer#Munni
বিয়ের দিন সকালে পার্লারে গেলাম, সাথে আমার ছোট বোন কাকলি, ফুফাতো বোন সোহা, তানহা, অবনী (ছোট মামার মেয়ে) আর মাহিরের বোন নীরা। আমাদের পরিবারে আমরা এই কয়েকজন মেয়েই।আমার বিয়ে উপলক্ষে সবাই একসাথে, নীরাও এসেছে। সবাই ভেবেছিলো মাহিরের সাথে বিয়ে দিবে, কিন্তু শেষটায় যে আমি রাজি হবো না, সেটা কেউ ভাবতে পারেনি।।
সাজগোজ শেষে সবাই ঠিক সময়ে সেন্টারে উপস্থিত হলাম।
সবাই খুব খুশি। সব আয়োজন ঠিকঠাক চলছিলো।
গেস্টদের আপ্যায়ন পর্ব শেষ। হুজুর,কাজী আরও কয়েকজন এসে … কাবিননামা পড়ে শুনাচ্ছিলেন – তখন একটা গোলমাল বেঁধে যায়।
খুব চেঁচামেচি হচ্ছে বাইরে। কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। ভয় হচ্ছিলো আমার। মাহির কোনো গন্ডগোল করেনিতো!?
এসব ভাবছিলাম – তখন দিয়া ভাবির ধাক্কায় চমকে উঠি।দিয়া ভাবি ফুফাতো ভাই, তানভীর ভাইয়ের বউ।ভাবি ফিসফিস করে কবুল বলতে বললেন। এতোক্ষন কি পড়ছিলো আমি কিছুই শুনিনি। তবুও ভাবি কবুল বলার জন্য তাগদা দিচ্ছেন।
তিনটি অক্ষরে একটা শব্দ ” কবুল”, কিন্তু আমার মুখ থেকে যেন বের হচ্ছে না। বুকফেটে কান্না আসছে। এই কবুল বলার পর আমি অন্যকারো হয়ে যাবো,নিজের বলতে কিছুই থাকবে না। এটা বলার পর আমার ঠিকানা বদলে যাবে। মা-বাবা, ভাই-বোন সবার কাছ থেকে দূরে চলে যাবো ভাবতেই দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে।অজানা এক কারণে বুকের মধ্যে চিনচিন করছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে – ভাবি আবার তাগিদ দিচ্ছেন, এইরুমে সবাই চুপ,বাইরে কোনো গোলমাল শোনা যাচ্ছে না,সবাই যেন অপেক্ষা করছে – আস্তে করে ‘ কবুল ‘ বলার
সাথে সাথে ‘ আলহামদুলিল্লাহ! ‘ বলে উঠলো সবাই।
রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করার সময় একই অবস্থা হাত কাঁপছিলো, বুকফাটা কান্না চোখ বেয়ে বেরিয়ে আসে। কারো জন্য ভেতরে পুড়ছিলো।
আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ, বিদায় দিবে আমাকে।
আমি তখনও আমার বরের মুখ দেখতে পাইনি,ফুল দিয়ে ঢাকা।ছবিতে দেখেছিলাম।
বিদায় নিয়ে আমি গাড়িতে উঠবো তখন আনিস সবার মাঝে ছুটে আসে। তার পরনে বরের পোশাক।
আরে! এ তো আনিস। ছবিতে দেখেছিলাম আনিসকে। ওর সাথেই তো আমার বিয়ে!!
ও এখানে! আমার সাথে কে(!)???
এই ঘটনায় গুঞ্জন শুরু হয়। আনিস তখন জানায়, সেন্টারে আসার পর তাকে বরণ করা হয়,সে তার আসনে বসার একটু পরেই কেউ একটা চিরকুট দিয়ে যায়। চিরকুটে বিয়ে না করার অনুরোধ করে, জরুরি কিছু কথা বলার জন্য স্টোর রুমে যেতে বলে,সেখানে কুহুর নাম লেখা ছিলো। স্টোররুমে যাওয়ার পর কেউ পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে মুখ বেঁধে ফেলে তারপর হাতপা বেঁধে স্টোর রুমে তালা দিয়ে চলে গেছে।
এখন কে জানি চাবি খুঁজে না পেয়ে তালা ভেঙে তাকে এই অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে!
।
তাহলে বিয়ে হলো কার সাথে? সবার মুখে গুঞ্জন। কেউ একজন এগিয়ে আসে বরের মুখ দেখতে। অমনি আমার বিয়ে করা বর আমাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে। সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করে।
খুব দ্রুত গাড়ি গেইট থেকে বেরিয়ে ছুটছে।
গাড়ি অনেকটা দূর চলে আসছে,তখন মাথার পাগড়িটা সরাতেই চাঁদ মুখখানি দেখলাম,
যা আশঙ্কা করেছিলাম তা-ই।।
– তুমি?!!
৩২খানা দাঁত বের করে বলে,
-কেমন দিলাম??
ইচ্ছে করছিলো সবকটা দাঁত ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেই।
খুবতো চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বলেছিলি,এখন দেখ আমারই বউ হতে হলো!
– তুমি নিয়ে আসলেই হলো? বিয়ে তো তোমার সাথে হয়নি আমার।
– কাবিননামায় আমারই নাম ছিলো আর কালেমা পড়ে আমাকেই কবুল করেছিস।
ওহহ! তখন গন্ডগোলের মাঝে নামটাও বোধ শুনতে পারিসনি!
ভেরি স্যাড!’
চলবে…..
# Munni#