#চন্দ্ররাতের_মায়া [১১]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
– তীব্র,তোমার ভাইয়াকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যাচ্ছে।তুমি কিছু একটা করো,প্লিজ ওকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো, প্লিজ।
– পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে মানে? কেন?
– আমি জানিনা।ওর শুধু ফোন করে বললো ওকে নাকি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে।তারপর হঠাৎ ফোনটা কেটে গেলো।তারপর ফোন করলাম ফোন বন্ধ
– ভাইয়াকে পুলিশ কেন ঘিরে ধরবে,কি এমন করেছে ভাইয়া। আচ্ছা তুমি চিন্তা করিও না, আমি দেখছি
– প্লিজ কিছু একটা করো,আমার খুব টেনশন হচ্ছে। কি হয় আমায় জানাও প্লিজ,আমি অপেক্ষা করে থাকবো
তীব্র চেয়ার ছেড়ে উঠে থানা থেকে বেড় হতেই হতভম্ব হয়ে গেলো।পুলিশের জিপ এসে থানার সামনে থামলো।সেখান থেকে ভাইয়া নামছে।হাতে হাতকড়া।পড়নে শর্ট প্যান্ট।একজন পুলিশ তার গেঞ্জি ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে আসছে।তীব্র হাত তুলে বাঁধা দিলো।পুলিশ গেঞ্জি ছেড়ে দিলো।
তীব্র অফিসারের সামনে বসে আছে।একেই তো তার একটা সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছে তার মধ্যে ভাইয়া।যে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে এসেছে তিনি অফিসারকে বললো ” স্যার,আবাসিক হোটেল থেকে এনারে নিয়ে এসেছি।ব্যাটায় একটা….”।
বাকিটুকু বলতেই অফিসার হাতের ইশারায় থামতে বললো।তীব্রর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো তার ভাইয়াকে থানায় নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য করলো ভাইয়ার দিকে তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। মনে মনে লজ্জা, ভয় তাকে ঘিরে ধরেছে।তীব্রর মনে মনে ঘৃণা হতে লাগলো।
অফিসার হাতের ইশারায় তাকে লকাপে ঢুকাতে বললো।তীব্র কিছু বললো না।অফিসার ডাঃসিহাবের দিকে তাকিয়ে বললেন
– আপনি থামলেন কেন, বলুন,শুরু করুন
ডাঃসিহাব- স্যার যা বললাম সব সত্যি। আপনি চাইলে আমার ফোন চেক করে দেখতে পারেন।সেইদিনের ভিডিওটা আমি সেইভ করে রেখেছিলাম।
বলেই ফোনটা অফিসারের কাছে এগিয়ে দিলো ডাঃসিহাব।অফিসার কিছুক্ষণ ফোনে সব চেক করলো।তারপর বললো
– মানলাম আপনাকে বাধ্য করা হয়েছে।কিন্তু সে জন্য আপনি আইনের সাহায্য নিতেন।নইলে প্রয়োজনে মিথ্যে বলতেন।সে এসে তো দেখতো না যে নাড়িটা কে’টে’ছে’ন কি না!
– স্যার আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। একমাত্র মেয়ে।অনেক ভালোবাসি আমি।যদি পরে জানতে পারে আমি কাজটা করিনি,তাহলে আবার যদি আমার মেয়ের ক্ষতি করে দেয় এই ভয়ে আমি কাজটা করেছি স্যার।আমি পাপ করেছি স্যার,আমার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো।
তীব্র- অফিসার,আমি ভিডিওটা কি দেখতে পারি?
অফিসার- সিওর
তীব্র ভিতিওটা ওপেন করতেই চমকে উঠলো।আরেহ্ এই ভিডিওটা তো ভাইয়ার সেই পেনড্রাইভে দেখেছিলাম যখন নন্দিতার অপারেশন হয় তখন।তার মানে এসবের পেছনে ভাইয়ার হাত আছে? কেনোই বা সে এসব করতে যাবে?।
তীব্রর নিজের ভাই যে তার এতো বড় ক্ষতি সে করতে পারে এটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।বোবটের মতো ফোনটা টেবিলে রাখলো।লকাপের দিকে তাকাতেই তীব্রকে দেখে ওর ভাইয়া চোখ সরিয়ে নেয়।তীব্রর ইচ্ছে করছে তার ভাইয়াকে উচিৎ শিক্ষা দিতে।কিন্তু সে সেটা পারবে না।মনে মনে ভাইয়ার মুখে থুথু দিলো।
তখনি ফোনটা আবার বেজে উঠলো। তীব্র রিসিভ করলো না।পরপর কয়েকবার বাজতেই তীব্র রিসিভ করে রাগি কন্ঠে বললো
– কি হয়েছে? রিসিভ করছি না দেখেও বারবার ফোন দেওয়ার কি আছে
– তীব্র কি হয়েছে,রেগে আছো কেন?
– তো কি আনন্দে থাকবো?আনন্দে থাকতে দিচ্ছে কেউ?
– কি হলো তোমার,আচ্ছা তোমার ভাইয়ার কি কোনো খবর পেলে?
– আমার সামনেই লকাপে দারিয়ে আছে। চোরের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে তামাশা দেখছে।
– লকাপে মানে? কি করেছে ও?
– এখন রাখছি,
বলেই ফোন বন্ধ করে রাখলো তীব্র। অফিসার বললো” মিঃতীব্র আপনি কি এনাকে চেনেন? “।উত্তরে তীব্র কিছু বললো না।রাগি চোখে একবার ওই কালপ্রিটটার দিকে তাকালো।অফিসার তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললো
– মিঃতীব্র, আমরা এর তদন্ত শুরু করে দিয়েছি,খুব শীঘ্রই আমরা অপরাধীকে খুজে বেড় করবো।
– অপরাধীকে খুজতে হবে না।সে সামনেই আছে।তাই না ভাইয়া?
তীব্রর কথা শুনে ওর ভাইয়া গায়ের গেঞ্জি খুলে ফেললো।মাথার চুল টানতে লাগলো।বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে লকাপের ফ্লোরেই পড়ে গেলো।বিষয়টি দেখে তীব্র কোনো রিয়েকশন করলো না।তার মনের যে ঘৃনা তা ক্রমশ বাড়তেই থাকলো।
লকাপ খুলে তীব্রর ভাইয়াকে বেড় করা হলো।ডাক্তার এসে প্রেশার চেক করে বললো সব ঠিক আছে।তীব্র অট্টহাসি দিতে দিতে বললো ” হাহাহা,অভিনয়ে তুমি বরাবরই সেরা ছিলে ভাইয়া। না হলে আমার ঘরেই আমার বিশ্ব শত্রু, সেটা জানতেই পারলাম না”।অফিসার তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললো
অফিসার- মিঃ তীব্র আপনি একটু আগে বললেন যে অপরাধী আপনার সামনে।কে সে?
তীব্র- এই যে সামনে বসে আছে,নাটল জগতের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।
– একটু পরিষ্কার করে বলবেন?
– অফিসার আমার স্ত্রীর অপারেশনের পরের দিন আমি বাড়িতে আসি।ওর জন্য স্যুপ করে আর একটু বিশ্রামের জন্য।তখন কোনো কারনে ওর ঘরের লকারে একটা পেনড্রাইভ পাই।সেখানে এই ভিডিওটা পেয়েছিলাম।যখন এই কালপ্রিটটাকে বললাম এটা কিসের ভিডিও, তখন বললো এটা নাকি তার নতুন একটা সিরিজের কনসেপ্ট।
তীব্র ওর ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
– ভাইয়া, তোমায় আমার অভিভাবক মানতাম।ভাবতাম তুমিই তো আমার আপন মানুষগুলির মধ্যে একজন।আর সেই তুমিই আমার সাথে এরকম একটা জঘন্য কাজ করতে পারলে?
– আমায় মাফ করে দে তীব্র। আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।তোর প্রতি প্রতিশোধ নিতেই আমি এরকম একটা কাজ করেছি।একটা অপরাধ ঢাকতে গিয়ে অনেক অপরাধে জরিয়ে গেছি
– কি? আমার ওপর প্রতিশোধ মানে?
– হ্যা তোর ওপর প্রতিশোধ। মিহিতা যে তোর প্রেমিকা ছিলো সেটা আমায় আগে বলেছিলি?
– হঠাৎ এসব বিষয়ে কেন?
– বিয়ের পর থেকেই মিহিতা আমার থেকে দুরে দুরে থাকতো।আমি কারনটা জানতাম না।আর যখন জানলাম যে তুই আমার জীবন নিয়ে ছেলে ফেলা করেছিস তখন আমি এরকমটা করি।
– এই সামান্য কারনে তুমি এতো বড় পাপ করেছো আমার সাথে?
– আমার ক্ষমা করে দে তীব্র,আমার মাফ করে দে
বলেই তীব্রর পা জরিয়ে ধরলো।তীব্র ঝটকা দিয়ে পা ছাড়িয়ে নিলো।কর্কষ স্বরে বললো
– যে মেয়েকে নিয়ে হোটেলে গেলে,সেটা কে? রাস্তায় যারা রংচং মেখে থাকে তারা নিশ্চই?
– ও একজন কো-আর্টিস্ট।একসাথে আমরা কাজ করি।কাজ করতে করতে আমাদের মধ্যে ভালোলাগার সম্পর্ক তৈরী হয়।তারপর
– চুপ,একদম চুপ।লজ্জা লাগছে না এসব বলতে? মুখে একটুও বাঁধছে না? ভাবীকে রেখে এসব করে বেড়াচ্ছো, চরিত্রহীন
– আর তুই কি? দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা? মিহিতার সাথে তুই শারীরিক সম্পর্ক করিস নি? ওহহ,,,তাতে কোনো দোষ নেই তাই না?
– কি বললে? কে বলেছে তোমায় এসব কথা? বলো কে বলেছে ( শার্টের কলার ধরে চেচিয়ে বললো)
– আমি নিজ চোক্ষে দেখেছি।তোরা ওই পুরোনো আসবাব পত্র রাখায় ঘরটায় সময় কাটাচ্ছিলি। সে ভিডিও আছে আমার কাছে
এটা যে মিহিতা করেছে তাকে ফাসানোর জন্য এটা বুঝতে পারলো তীব্র।তবে কিছু বললো না,কারন একসময় মিহিতা তার বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্র করলেও এখন সে শুধরেছে।সত্যিটা সবার সামনে আসবেই।ওর সাথে যে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়নি এটা মিহিতা নিজের মুখেই শিকার করবে,এটা ভেবে চুপ করে রইলো।
তবে বেশিক্ষন থাকতে পারলো না।ঘৃনায় থানা থেকে বেড় হয়ে বাহিরের বট গাছটায় বসে রইলো।একটা সিগারেট ধরালো।বেড়িয়ে না আসলে হয়তো সে নিজেকে সামলে নিতে পারতো না। নিজের ভাইয়াকেই রক্তাক্ত করে দিতো।সিগারেট খেতে খেতে হঠাৎ একটা কথা মনে হয়।সিগারেটটা ফেলে দিয়ে দৌড়ে ভেতরে যায়।ওর ভাইয়ার শার্টের কলার ধরে গম্ভীর স্বরে বললো
– আমার দুই সন্তানকে তুমিই শেষ করেছো তাই না?
তীব্রর কন্ঠটা গম্ভীর হলেও সেখানে যে ওর ভাইয়াকে ভষ্ম বানিয়ে দেওয়ার মতো এতো পরিমান তেজ আছে সেটা ওর ভাইয়া বুঝতে পারলো।নিচু স্বরে বললো
– প্রথম সন্তানটা মৃত জন্ম দিয়েছিলো।তারপরের সন্তানটা
– তারপরের টা কি?
চলবে?