বধুয়া পর্ব-৪

0
1858

বধুয়া
পর্ব-৪

এবার আমি বুঝেছি গন্ডগোল কিছুই না, সব উনার কারসাজি!
রাগে- দুঃখে দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে। সব শেষ আমার। এই লোকটার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে!
জানি না আব্বু- আম্মুর কি অবস্থা!
সারাটা রাস্তা কেঁদে ছিলাম। উনাদের বাসায় এসে গাড়ি থামে। আমাকে টেনে বের করে গাড়ি থেকে।তারপর কোলে তুলে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়। আমি হাত-পা ছুড়াছুঁড়ি করছি দেখে বলে – একদম ফেলে দিবো! ভয়ে আর নড়াচড়াও করিনি।

ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি, সামনে রাহেলা খালা দাঁড়িয়ে আছেন।রাহেলা খালা এই বাড়িতে কাজ করেন। মাহির উনাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে আমাকে পাহাড়া দেবার জন্য। আর উনি বিয়ের পোশাক চেঞ্জ করে নিচে আসেন।
কলিং বেল বাজছে।রাহেলা খালা দরজা খুলে দিলেন। সবাই প্রায় দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে – আব্বু-আম্মু,ফুপ্পি,ছোট মামা, মাহিরের বাবা-মা,নীরা,কাকলি,দিয়া ভাবি – মোটামুটি সবাই হাজির। উনারা বুঝতে পেরেছেন এই কাজ মাহির ছাড়া কেউ করেনি।

আব্বু আমার পাশে বসেছে গম্ভীর মুখে। আমি আম্মুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি। আম্মুও কান্না করছে।
আন্টি এসে মাহিরের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন।
– তুই এই কাজটা করতে পারলি?
নীরা এসে আন্টিকে আটকায়।
– ভাইয়াকে মারলে কি এখন সমাধান হবে? এখন কি করা যায় সেটা ভাবো।

আমি চোখ মুছে উঠে দাঁড়াই।
আম্মুর হাত ধরে বলি – আম্মু, চল আমি বাসায় যাবো, এক মিনিটও আর থাকবো না এখানে।মাহির সবার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল।এবার সে আমার সামনে আসে।
মাহির আব্বুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আব্বুর হাত ধরে বলে – আঙ্কেল, আমাকে ক্ষমা করে দিন। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। আমি তো সব ভালো ভাবে করতে চেয়েছিলাম,কুহুই তো রাজি হয়নি।আমি তখন কি করবো আপনি বলেন?

আব্বু কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালেন
– আপা, মাহির যা করেছে তার শাস্তি কি আমি জানি না। আমি কুহুকে নিয়ে যাচ্ছি, আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে থাকতে দিবোনা। চল মা।’
আব্বু আমার হাত ধরলেন।
– ভাই সাহেব, আমাদের অবস্থা তো বুঝতে পারছেন আমরা কতটা লজ্জিত। কিন্তু এখন যদি কুহুকে নিয়ে যান তবে পাড়াপ্রতিবেশি কি বলবে? তারা তো জানে বিয়ে হয়ে গেছে।বিয়ের পর মেয়ে বাড়িতে ফিরে গেলে মানুষজন কত কথা তুলবে।
– মাহিরের বাবা ঠিক বলেছে।ভাইজান, আমাদের ছেলের হয়ে আমরা ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে।
আন্টি হাত জোড় করে আছেন।
– আপা, এভাবে বলবেন না, আপনারা তো অন্যায় করেন নি। মেয়ের বাবা আমি।আমার মেয়ের সুখ সব কিছুর আগে। মানুষজন যে যাই বলুক আমি গায়ে মাখবো না। তাদের কাছে মাথা হেট হয়ে যাবে, তারা আমার পিছনে সমালোচনা করবে।আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।যে যাই বলুক সব মাথা পেতে নিবো,সহ্য করবো।আমার মেয়ে সবকিছুর আগে। চল মা।

তখন ফুপি বললেন, ‘ ভাইজান, মুনিরা আপা ( মাহিরের মা) , জামান ভাই( মাহিরের বাবা) ঠিক কথাই তো বলছেন। যা হবার হয়ে গেছে। এখন আবার লোক হাসাতে চাও?’
ছোট মামা বললেন, ‘ দুলাভাই, কুহুকে নিয়ে গেলেই তো হবে না। সবকিছু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। ওকে নিয়ে গেলে মানুষ তো কথা বলবে, ডিভোর্স দিলেও যে মাহির অর পিছন ছেড়ে দেবে তার গ্যারান্টি কি?’
আমি বুঝতে পারছি না মামা,ফুপি কি আব্বুকে সমাধান দিচ্ছেন নাকি মাহিরের মাথায় আরও কুবুদ্ধি দিচ্ছেন!!

চলবে…

# Munni #

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here