তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ১৬,১৭

0
331

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৬,১৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১৬

” উনি গতকাল একজনকে মা*ডার করেছেন।আর দুইজন হসপিটালে,ওদেরও অবস্থা খারাপ ”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বাবা আমায় থামিয়ে দিলেন।সিগারেট ধরালেন।আজকের দিনে বাবা সবরকম নেশা করেন।দেশী থেকে ইংরেজ সব ধরনের নে*শা।সিগারেট হলো ৪র্থ পর্যায়ের নে শা।বাবা সিগা রেটের ধোঁয়া গিলে বললেন

” মা ডার টা কিভাবে করেছে? ”

” স্যার তদন্ত অনুযায়ী প্রথমে ধা রালো কিছু দিয়ে হাত এক কো*পে আলাদা করে ফেলা হয়েছে।তারপর ম দের বো তল দিয়ে পে টে য*খম করা হয়েছে ”

” যে মা*রা গেছে সে মা*তাল ছিলো? ”

” হ্যা স্যার ”

” মা*তাল কয়েকজন মিলে একটা মেয়ের সাথে যদি খারাপ কিছু করে,আর সেটা কেউ বাঁধা দিতে গিয়ে যদি খু ন করে, তাহলে সেটা কি অন্যায়? ”

” আইনের মতে অন্যায় হবে স্যার।বিচারের দায়িত্ব আইনের ”

” আ*ইনে আমার মন কখনো ছিলো না।আমি আ*ইন বিরোধী।মেয়েটার লা*শ যদি কাল সকালে ড্রেনের কাছে পেতেন তাহলে আ*ইনের কিচ্ছু করার থাকতো না, কি থাকতো? ”

” না স্যার ”

বাবার কথায় আমি কিছুটা অবাক হয়ে যাচ্ছি।বাবা কিভাবে জানলেন মিষ্টির ওপর খারাপ কিছু করার ইচ্ছায় ওদের একজনকে আমি মে*রেছি?এটাতো বাবার জানার কথা নয়।বাবা আবারো একটা সিগারেট ধরালেন।গম্ভীর স্বরে বললেন

” অফিসার,এতোরাতে এসেছেন চা খেয়ে যান।কাল সকালে একবার অফিসে আসবেন।আমি ম্যানেজারকে বলে রাখবো ”

” এতোরাতে আর চা খাবো না স্যার,আজকে চলি। ভালো থাকবেন স্যার, আর আপনার যেকোনো সমস্যা হলে আমিতো আছি স্যার, আজ চলি,”

আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে বাবা ম্যানেজার কাকুর দ্বারায় অফিসারকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিবেন।বাবার ওপর একটু রাগ হলো।কেন তিনি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন? তার উচিৎ ছিলো আমায় চ*ড় থা*প্পর দেওয়া,আর কড়া গলায় পুলিশকে বলা যে ” এই কুলা*ঙ্গারকে নিয়ে যান “।কিন্তু বাবা তা কিছুই করলেন না।বাবা হিসেবে তার এই কাজটা কি ঠিক হলো?।এতে আমি আরো বড় বড় অন্যায় করতে পিছুপা হবো না, সেটা কি বাবা বুঝতে পারছেন? হয়তো পারছেন না,পারলে তিনি এতো স্বাভাবিক আচরন করতেন না।বাবা উঠে চলে গেলেন।ওপরের তলায় তাকালাম।দেখলাম মিষ্টি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আমার মতো সেও নিশ্চই খুব হকচকিয়ে গেছে।

____________

” দাদি,রুমের আলো জ্বালালাম,তোমার কা’পর কি ঠিকঠাক আছে? ”

কথাটা শুনা মাত্রই দাদি অকথ্য ভাষায় গা’লা’গা’লি করতে লাগলেন।সেই গা’লাগা’লির বিষয়বস্তু হলো তার ঘরে ঢুকায় তিনি মহা বিরক্ত হয়েছেন।তিনি কর্কষ গলায় বললেন

” হারা*মজা*দি, খাপর খুইল্লা শুতুম কেন? ”

নীলু হতচকিত হয়ে আমার দিকে তাকালো।দাদির এমন কথায় নীলু আমি দুজনেই মুখে হাত চেপে হাসলাম।দু’জনে ঘরে ঢুকলাম,নীলু ঘরের লাইট অন করলো।চেষ্টা করলাম দাদির দিকে না তাকানোর।সোফা থেকে আমি একটা বালিশ নিলাম।নীলু নিলো দুইটা।নীলুর পেছন পেছন আমি। কেন জানিনা দাদিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।দেখবো একবার? নীলু যখন লাইট অফ করছিলো তার এক মুহূর্ত আগে দাদির দিকে তাকালাম।দাদির প*রনে কোনো কা*পর নেই। এটা দেখেই ছুটে পালিয়ে এলাম ঘর থেকে।দাদি চিল্লাতে চিল্লাতে বলছে

” হা*রাম*জাদি কি দেহোস? আইজ কালকার মাইয়াগো লইজ্জা সরম কিচ্চুু নাই।হক্কোল কিচু দেইক্কা ফেলাইলো রে ব*জ্জাত মাইয়াডা ”

কোনোদিকে না তাকিয়েই এক দৌড়ে নীলু আর আমি ছাদে এসে উপস্থিত হলাম।দু’জনই হাসছি।ছাঁদে আমাদের হাসি শুনে ছাদের ওই কোনটায় থেকে একটা মেয়ে কাছে এলো।নীলু বললো

” আরেহ পরী তুমি,”

” হ আপা,”

” এখানে কি করছো?”

” আমি কই থাকবো সেটাই তো জানিনা ”

” তুমি এককাজ করো,আমাদের সাথে ছাঁদেই থাকো,আমরা একসাথে থাকবো ”

” কি বলেন আপা? আপনেরা ছাঁদে ঘুমাইবেন? ”

” আরেহ না,সারারাত আমরা গল্প করবো।আমার দুই বান্ধবী আছে,ওরাও আসবে কিছুক্ষণ পর ”

” আইচ্ছা ”

ছাদে একটা চাঁদর বিছিয়ে তার ওপর আমরা পাঁচজন শু য়ে আছি।পাঁচজন না, চারজন।আমি বসে আছি,এখানে শু তে কেমন যেন লাগছে।এতোক্ষণ নীলু,ঈশা,তিশা মিলে গল্পগুজব করছিলো।পরী চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো এতোক্ষণ। এখন সেও ঘুমঘুম চোখ নিয়ে বসে আছে।পরীর সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলে কেমন হয়? ভালোই হয়।

” পরী ”

” বলেন আপা ”

” ঘুমাওনি? এতোক্ষণ তো দেখলাম ঘুমাচ্ছিলে ”

” ঘুমাচ্ছিলাম না আপা,আপনেরা গল্প করছেন,আমি জেগে থাকলে মন খুলে গল্প করতে পারতেন না ”

মেয়েটির কথায় আমি বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি।মেয়েটার চিন্তাভাবনা আলাদা।পরীকে বললাম

” আচ্ছা পরী তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে? বিষন্নের সাথে দেখা হয়েছে কোথায়? ”

” আপা আমি তো রাস্তায় থাকি,রাস্তাই আমার ঘর”

” মানে? ”

” আপা আমি খারাপ মাই”য়া।রাতে আমাদের মতো মাইয়ারা পরপুরুষের চাহিদা মেটায় ”

পরীর চোখে জল।ওকে দেখে আমারো এখন খারাপ লাগছে।এতো মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ের এই অবস্থা কেন হবে?।চোখের জল মুছে পরী বললো

” সেদিন ওই লোকগুলা আপনেরে যে গলিটায় নিয়ে গেছিলো সেই গলিতেই আমি থাকি ”

” পরী শোনো,তুমি এখন থেকে এই বাড়িতেই থাকবে।এই বাড়ির লোকগুলি খুব ভালো মনের।দেখবে তোমার জীবনটাই পাল্টে যাবে।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,আমায় সঙ্গ দিতে হবে না তোমার।চোখ দেখে মনে হচ্ছে তোমার ঘুম পেয়েছে খুব ”

পরী কিছু বললো না।চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো।এখন কেন জানি আমারো খুব ঘুম পাচ্ছে।দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলাম।চোখ কিছুতেই খোলা রাখতে পারছিনা।

ক’পালে কিছু একটার স্পর্শ বুঝতে পারছি। সেই স্পর্শ কখনো ক’পালে কখনো গা’লে নেমে আসছে।চোখ মেলতেই কেউ একজন আমার মুখে হাত রেখে চেপে ধরলো।ফিসফিস করে বললো

” এই আমি বিষন্ন,ভয় পেও না ”

কথাটা বলে বিষন্ন আমার ঠোঁ*টের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো।আমি হকচকিয়ে নীলু,তিশা,ঈশার দিকে তাকালাম।ওরা দিব্যি ঘুমাচ্ছে। বিষন্ন আমার হাত ধরে ছাঁদের এক কোনে নিয়ে গেলো।নিয়ে গিয়ে আমার কো*মড়ে দুই হাত রাখলো।হাত রাখতেই পুরো শরীর কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে।আমি হাত সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।বিষন্ন ওর আরো কাছে আমায় টেনে নিলো।ফিসফিস করে বললো

” তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো ”

” মানে কি? এতো রাতে তুই এখানে কেন এসেছিস,কেউ দেখলে তো ”

” ধুর,তুমি এতো ভয় কেন করো বলোতো,কেউ দেখবে না ”

” দেখা তো হয়েছে,এখন যা ”

” না যাবো না, তোমায় খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে ”

বিষন্নের কথা শুনে আমার মাথা ভনভন করছে।আদর করতে ইচ্ছে করছে মানে কি? কিছুটা চেচিয়ে বললাম

” কিসব বলছিস তুই বিষন্ন,!”

বিষন্ন আমার মুখ চেপে ধরে চাপা স্বরে বললো,”

“আস্তে কথা বলো,কেউ জেগে যাবে,”

” না বলবো না।এক্ষুনি না গেলে আমি চেঁচামিচি শুরু করে দিবো ”

” তুমি চেঁচামিচি আর যাই করো না কেন,আমি আজকে ভয়ঙ্কর কিছু একটা করে ফেলবো ”

বলেই বিষন্ন আমার কপালের চুলগুলি সরিয়ে দিতে লাগলো।বিষন্নের প্রতিটি স্পর্শে আমার শ রীরের ভেতর উথালপাতাল হচ্ছে। বিষন্ন ওর ঠোঁ*ট আমার আরো কাছে আনছে,আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম।এরমধ্যে বিষন্নের একটা হাত কোম*ড় ছাড়িয়ে আমার গালে রেখেছে।আমিও নিজেকে আর সামলাতে পারছি না।উত্তপ্ত শরী রে একটা ছেলের স্পর্শ আমিও আর উপেক্ষা করতে পারছি না।মূহূর্তেই ঠোঁ*টে উষ্ণ একটা ছোঁয়া পেলাম।

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

উত্তপ্ত শরী*রে একটা ছেলের স্পর্শ আমিও আর উপেক্ষা করতে পারছি না।মূহূর্তেই ঠোঁ*টে উষ্ণ একটা ছোঁয়া পেলাম।

আমার সারা শরীরে মনে হচ্ছে কারেন্ট বয়ে যাচ্ছে।কি এক অনুভূতি।আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বিষন্ন একমনে আমার ঠোঁ*ট নিজের দখলে নিয়ে আছে।লজ্জায়,ভয়ে আমি পাথরের মতো দারিয়ে রইলাম।

বিষন্ন একটু সরে দারালো।আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি।মনে হচ্ছে কেন থেমে গেলো সব?এই মুহূর্ত জন্মজন্মান্তর চলতে থাকুক।বিষন্ন আমার কপালে আলতো করে চু’মু একে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে আমার সারা শ রীর শিউড়ে উঠলো।জীবনের প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শে আমি যেন মোমের মতো গলে যাচ্ছি।এবার লজ্জার মা’থা খেয়ে আমি নিজেই বিষন্নকে জরিয়ে ধরলাম।আমার ন’খ বসে গেলো বিষন্নের পি*ঠে।পায়ের পাতায় ভর করে বিষন্নের ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট মিলিয়ে দিলাম।বিষন্ন ওর দুই হাত আমার গালে রেখেছে।বেশ কিছুক্ষণ পর বিষন্নকে ছেড়ে একটু দূরে সরে গেলাম।

এটা কি করলাম আমি? কি হলো এটা?।আমি নিজেই কিনা বিষন্নের ! এতোটা লজ্জা এবং নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে যে ইচ্ছে করছে ছাঁদের ওপর থেকে লা’ফিয়ে পড়ি।বিষন্ন এক পা এক পা করে আমার কাছে এলো।এক হাত আমার থুতনিতে রেখে মুখ তুলে ধরলো।বিষন্নের চোখের দিকে তাকালাম।এতো মায়াবি চোখ।চোখ বেয়ে ঠোঁ’টে নজর পড়তেই দেখলাম ওর ঠোঁ’টে লাল লিপস্টিকের স্পর্শ ভরে আছে।চোখ সরিয়ে নিলাম।বু’ক প্রচন্ড গতিতে ওঠানামা করছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ফে’টে যাবে।বিষন্ন মুচকি হাসলো,আমার কপালে আবারো আলতো একটা চুমু খেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আমি সেখানেই ঠাঁই দারিয়ে রইলাম।আমার বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই।

____________

” স্যার পুলিশ এসেছিলো, আপনার কথা মতো ওনারে টাকা দিয়ে দিছি ”

” ভালো করেছো।বিষন্ন অফিসে এসেছে? ”

” ছোট সাহেব তো এখনো আসেননি,একটু আগে ফোন দিয়েছিলাম,বললো আর দশ মিনিট লাগবে, ”

” আচ্ছা, ”

” স্যার একটা কথা ছিলো ”

” নিজের ছেলের অপরাধ ঢাকতে কেন টাকা খাওয়ালাম সেটাই তো? ”

ম্যানেজার হাত কচলাতে কচলাতে বললো ” জি স্যার,আমার দেখা মতে কোনো বাবা এমনটা করে না,অন্তত নিজের ছেলেকে রাগ হয়,,আপনি সেটাও করলেন না ”

” আমার মতে আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি।এইসব মা*তালদের জন্য দেশে এতো মেয়ে ধ*র্ষনের শিকার হচ্ছে।আইনে যদি এদের তুলে দেওয়া হতো তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড হতো,কি হতো না?!”

” জি স্যার হতো ”

” আইন অব্দি না গিয়েই যদি কাজটা হয়ে যায় তাতে মন্দ কি?! ”

” স্যার এতে তো ছোট সাহেব অপরাধে জড়িয়ে পড়বে ”

” আমার ছেলেকে আমি চিনি,সে কখনোই তার বাবার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এরকম কাজ আর কখনোই করবে না ”

” তবুও স্যার বিষয়টা কেমন যেন লাগছে ”

” এখানে ভালোর স্থান নেই, আমি নিজেও অনেক ভালো ছিলাম।বিনিময়ে সবাই আমায় ঠকিয়েছে।আমি চাইনা আমার ছেলের ক্ষেত্রেও সেটা হোক। যদি আমার কাছে ওর কাজটা অপরাধ মনে হতো তাহলে আমি নিজেই ওকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিতাম ”

__________

বাবার অফিসে এই নিয়ে আমার পাঁচবার কি ছ’বার হলো আসার।নিতান্তই প্রয়োজন না হলে বাবা তার অফিসে আমায় ডাকেন না।লাস্ট এসেছিলাম দুই বছর আগে।বাবার সামনে বসতেই বাবা গম্ভীর স্বরে বললেন

” এতো দেরি হলো যে ”

বাবাকে আমি এমনিতেই ভয় পাই।আর যখন আমি নিশ্চিত যে বাবা ওই খু*নের বিষয়টা নিয়ে বলবেন তখন থেকে ভয়টা আরো প্রবল হচ্ছে। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম

” বাবা রাস্তায় জ্যাম ছিলো,”

” জ্যাম থাকলেও এতোক্ষণ লাগার কথা না।শুনলাম গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছো? ”

” হ্যা বাবা।হেঁটে হেঁটে এসছি,”

” দেখো বিষন্ন।আমার আবেগ নেই,তুমি আমার ছেলে,তোমারও আবেগ বলতে কিচ্ছু থাকবে না।তুমি গাড়ি রেখে হেটে হেটে চলে এলে।এরকম প্রকৃতির প্রতি আবেগ রাখা যাবে না,বুঝতে পারছো? ”

” পারছি বাবা ”

” তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে? কলেজে টেস্ট পরিক্ষা কি হয়েছে? ”

আমি বুঝতে পারলাম না বাবা অন্য প্রসঙ্গে কেনো কথা বলছেন।তিনি কি অন্য কোনো বিষয়ে বলার জন্য ডেকেছেন?। স্বাভাবিক ভাবেই বললাম

” এখনো হয়নি,সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু ”

” আচ্ছা।তুমি যে কাজটা করেছো সেটা ভুল ছিলো।তবে পরেরবার থেকে এরকম ভুল করবে না। যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছো সেসব মেয়েদের বাঁচানোর কোনো মানে হয়না।তাদের কাজটাই ওইটা।তুমি ছোট,তাই বুঝতে পারোনি।এইসব মেয়েদের কাছে ওরকম মা*তালরা কাস্টমার ”

” বাবা আমি ওই মেয়েটার জন্য এসব করিনি।ওরা মিষ্টির সাথে অসভ্যতামি করেছিলো ”

” মিষ্টি মানে? ও তোমার সিনিয়র, নাম ধরে ডাকছো কেন ”

কি বলবো বুঝতে পারলাম না।চুপ করে রইলাম।বাবা বললেন

” ওই মেয়েটা কি আমার বাড়িতেই থাকবে? ”

” যদি তুমি না চাও তাহলে থাকবে না ”

বাবা আর কিছু বললো না।ল্যাপটপের কিবোর্ডে কি যেন টাইপ করতে লাগলো।আমি ওখান থেকে চলে আসলাম।বাড়িতে আসতেই মা ডাইনিং টেবিল থেকে ডাকলেন

” কিরে বিলু,সকাল সকাল কোথায় চলে গিয়েছিলি? ”

আমি কিছু না বলে চেয়ার টেনে বসলাম।আমার সামনের চেয়ারে মিষ্টি বসে আছে।পদ্মকে কোথাও দেখতে পেলাম না।আশেপাশে তাকাতেই দেখলাম ও চুপটি করে কিচেনে দারিয়ে আছে।ওকে ডাকলাম।পদ্ম কাছে এলো।বললাম

” খেয়েছো? ”

” না খাইনি,আপনি বাইরে ছিলেন তো তাই,, ”

” বসো খেয়ে নাও।আর আমি বাইরে থাকার সাথে তোমার খাওয়ার কি সম্পর্ক। ”

মা বললো ” ওকে কতোবার বললাম বসতে,কিছুতেই রাজি হলো না।”

নীলুপু বললো ” তুই ওকে পদ্ম ডাকছিস কেন? ওর নাম তো পরী ”

আমি পদ্মর দিকে তাকালাম। ওর মুখে অপরাধবোধের চাহনি।পদ্ম বললো

” আপনে আগে খান।আমি পড়ে খেয়ে নিবো,”

” পড়ে কেন? এখন খেতে সমস্যা কি? ”

পদ্ম মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো” খালা,সাহেবরে একটু বলেন যে আমি পড়ে খাবো, এখন আমার খিদা নাই ”

মা বললো ” ও পড়ে খেয়ে নিবে বিলু,তুই খেয়ে নে ”

সবার খাওয়া শেষ। বিষন্ন নিজের ঘরে চলে গেছে।তিশা আর ঈশা চলে গেছে।মিষ্টি যেতে চেয়েছিলো কিন্তু নীলু আটকে রেখেছে।কাজের বুয়া যখন সবার এঁটো প্লেট সরাচ্ছে তখন পদ্ম গিয়ে বিষন্নের প্লেটটা হাতে নিয়ে ওনাকে বললো

” এইটা রেখে যান,এখানে আমি খাবো ”

বুয়া রহিমের মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।তিনি বললেন

” কি কও ছেরি,এইডা তো ছোট বাবু খাইছে,এঁটো থালে কেন খাইবা, ছাপ পেলেট দিতাছি ”

পদ্ম বললো ” লাগবে না,আমি এখানেই খাবো,অন্য প্লেট মাখানোর কি দরকার? আমি এখানেই খেয়ে নিবো।আমার কোনো অসুবিধা হবে না৷ ”

রহিমের মা আশ্চর্য হয়ে পদ্মর খাওয়া দেখছেন।পদ্ম কতো আত্নরিকভাবে বিষন্ন যে প্লেটে খেয়েছে সেখানেই খাচ্ছে। রহিমের মায়ের বিষয়টা সুবিধার মনে হলো না।

__________

” কিরে মিষ্টি, কি হয়েছে তোর? এভাবে চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? ”

” কই তেমন কিছু না।নীলু আমি হোস্টেলে যাবো,প্লিজ আমায় আটকাস না ”

” আরেকটু থাক না দোস্ত ”

” প্লিজ নীলু,এরকম করলে কিন্তু আমি আর এই বাড়িতে আসবো না”

” আচ্ছা ঠিক আছে যাবি,এতো রাগের কি আছে।”

ছোট্ট ব্যাগটা নিয়ে নিচে নামলাম।আন্টি কয়েকবার থেকে যাওয়ার জন্য বললো,আমি পরিক্ষার অযুহাত দিয়ে বাসা থেকে বেড় হলাম।একটা রিকশাকে ডাকলাম।রিকশাওয়ালা এলেন।চুল ধবধবে সাদা। সামনে রিকশা দার করিয়ে বললেন

” আফা কই যাইবেন? ”

” ফার্মগেটে যাবেন? ”

কথাটা বলার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন।কারনটা কি? বুঝলাম না।ওনাকে বললাম

” কি হলো মামা? এমনে কি দেখেন? যাবেন কি না সেটা বলেন”

” আফা এইটাই তো ফার্মগেট ”

মাথা চুলকাতে লাগলাম।আরেহ সত্যিই তো।আমিতো ফার্মগেটেই আছি।সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে।কিছু না বলে রিকশায় উঠলাম।কোথায় যাবো সেটাই মনে করতে পারছি না।রিকশা মামা কয়েকবার বললেন ” আফা কই যাইবেন?”। উত্তরে বললাম আপনি যান,আমি থাকতে বললে থামবেন।গন্তব্যহীন যাত্রা।

অন্য সময় হলে পার্কে বসে থাকা ছেলেমেয়েদের দেখলে বিরক্ত লাগতো,রিকশায় পাশাপাশি দুটো ছেলেমেয়ে গা ঘেঁ’ষে বসলে সেটা দেখে বিরক্ত লাগতো।কিন্তু এখন কেন জানি সেগুলি দেখতে ভিষন ভালোলাগছে।চোখ পড়লো একটা রিকশায়,হুট তুলে দিয়ে প্রেমিক প্রেমিকা যাচ্ছে।প্রেমিকার হাত প্রেমিকের কোলে।সেটা দেখে আমারো মনে হতে লাগলো,আচ্ছা আমার সাথে যদি এখন বিষন্ন থাকতো তাহলে কেমন হতো? ও কি যত্ন করে আমার হাতে হাত রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো? নাকি পার্কে বসে থাকা প্রেমিক প্রেমিকার হাত ধরে যেমন করে হাটছে তেমনি করে হাটবে? ।হুট করে যদি আবদার করে বসি যে,ওই গাছটা থেকে কৃষ্ণচূড়া ফুলটা এনে দিবা?। তখন কি বিষন্ন ছুটে গিয়ে ফুল পেরে আমার চুলে গুঁজে দিবে?। রিকশা হঠাৎ থেমে গেলো।রিকশার সামনে একটা ছেলে।ছেলেটা চেক শার্ট পড়েছে,হাতা ফোল্ডিং করে কনুই পর্যন্ত গোটানো।ছেলেটা বললো

” পরী শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? ”

ছেলেটার দিকে ভালোভাবে তাকালাম।ছেলেটাকে একটু চেনা চেনা লাগছে কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না।ছেলেটা আবারো বললো

” কি হলো চিনতে পারছেন না? ”

” না পারছি না ”

” ওই যে কাল রাতে পার্টিতে দেখা হলো,আেনি সিঁড়ি থেকে পড়তেই আমি ধরে ফেলি,”

” ওহহ হ্যা মনে পড়েছে ”

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি? ”

” কোথাও না,এমনিই ঘুরছি,কোথায় যাবো মনে করতে পারছি না,তাই ঘোরা ”

” ওহ আচ্ছা। কফি খাবেন? ”

” না খাবো না।”

” প্লিজ চলুন, এখানকার একটা দোকানের কফি খুব সুন্দর হয় ”

অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর ওনার সঙ্গে যেতে রাজি হলাম।কেন জানি আজকে কাউকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে না।অন্যদিন হলে এই ছেলেকে কড়া গলায় কথা বলতাম কিন্তু আজ বলতে পারছি না।কেন পারছি না? কি হয়েছে আমার? কালকের বিষন্নের স্পর্শের পর থেকে এমন কেন হচ্ছে আমার?।

” পরী, পরী ”

লোকটা আমার সামনে চেয়ারে বসা।হাত ইশারা করে ডাকছে।আমি বুঝতে পারছি না ছেলেটা কেন বারবার পরী পরী বলে ডাকছে।আমি বললাম

” বারবার পরী পরী করছেন কেন? আমার নাম মিষ্টি ”

” আপনার নাম মিষ্টি? তবে কাল যে বললেন পরী? ”

” পরী নাম বলেছি? ”

” হ্যা ”

” ভুলে বলেছি ”

” ভুল করে অন্য নাম বলেছেন? আচ্ছা বাদ দিন।আপনাকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে ”

” কখনো প্রেমে পড়েছেন? ”

ছেলেটা লজ্জার ভঙ্গিতে বললো ” প্র…প্রেমে? হ্যা পড়েছি,কেন বলুন তো ”

” আমিও প্রেমে পড়েছি।পিচ্চি একটা ছেলের কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রেমে পড়লে কি এমন হয়? এই যে আপনি বসে আছেন, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আপনিই সেই পিচ্চিটা।এমনকি রিকশা মামা যখন বারবার পেছন তাকাচ্ছিলো তখনও মনে হচ্ছিল পিচ্চিটা রিকশা চালাচ্ছে। ”

ওখান থেকে উঠে আসলাম।আজকের দিনটা একদম অন্যরকম।কফি হাউজ থেকে বেড় হয়ে বিষন্নকে ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে বললো

” তুমি নাকি চলে গেছো?আমায় বলে যাওনি কেন? ”

” বলবো সব বলবো,তুই কি এখন আসতে পারবি? ঠিকানা মেসেজে বলছি, চলে আয় ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here