#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৮,১৯
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
১৮
মিষ্টি হঠাৎ ফোন দিয়ে দেখা করার কথা বলছে? আমার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না।ফোনটা রেখে একটা পাঞ্জাবি পড়লাম।ঘড়িটা হাতে পড়তে পড়তে বেড় হচ্ছি তখন’ই মা এসে উপস্থিত।মা বললো
” কিরে বিলু,কোথায় যাচ্ছিস? ”
” ব..বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ”
” বন্ধুর সাথে? এই ভরদুপুরে পাঞ্জাবি পড়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবি? ”
” হ্যা মা,এতে সমস্যা কি? ”
” সমস্যা আছে,,সেই বন্ধুটা নিশ্চই মেয়ে, তাই না? ”
” মা তুমি কি যে বলো না,মেয়ে আসবে কোত্থেকে ”
” বন্ধুর সাথে দেখা করতে পাঞ্জাবি পরবি,আর আমি সেটা মেনে নিবো? সত্যি করে বল মেয়েটা কে ”
” মা আমি সত্যি বলছি, আমি এখন আসি।পরে বলবো ”
বলেই চলে এলাম।একটা রিক্সা নিলাম।রিক্সায় বসে বসে ভাবছি,আচ্ছা মা কিভাবে বুঝলো? এর আগেও তো পাঞ্জাবি পড়ে বেড় হয়েছি,তখন তো কিছু বলেনি।রিক্সা থামলো।ভাড়া দিয়ে পার্কে চলে আসলাম।
পার্কের একটা বেঞ্চে মিষ্টি বসে আছে।ওর হাতে দুইটা বেলুন।একটা কালো,অন্যটা সাদা।ওর পাশেই বসে আছি আমি।মিষ্টি ওর হাত আমার হাতের ওপর রাখলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।মিষ্টি বললো
” এতোক্ষণ লাগলো আসতে? ”
” কই এতোক্ষণ, ২০ মিনিট লেগেছে শুধু ”
” চল ”
বলেই আমার হাত ধরে টেনে তুলে হাঁটতে লাগলো।আমি বললাম
” কোথায় যাচ্ছো? ”
” গেলেই বুঝতে পারবি,হাত ধরেছি জন্য রাগ করিস নি তো? রাগ করলেও বা কি, তোর রাগের পরোয়া আমি করি নাকি? ”
আমি কিছু বললাম না।কি হয়েছে মিষ্টির? এমন তো কখনো করে না।ব্যাস্ত শহরে দু’জন পাশাপাশি হাটছি।মিষ্টি আমার হাত ধরে হাটছে।ওর হাতে সাদা বেলুন,আর আমার হাতে কালো বেলুন।মিষ্টি একটা রিকশা থামালো।রিকশায় উঠে এক হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে।আমি হাত ধরে রিকশায় উঠলাম।রিকশার হুট তুলে দিলো।যেমন চলছে চলুক না, ভালোই তো লাগছে।
মিষ্টি আমার বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো চোখ বন্ধ করে আছে।এখনো আমার হাত ধরে আছে। এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়লো না।মিষ্টি বললো
” এই একটা গান বলতো ”
” গা…গান?.কি বলছো, রিকশায় বসে গান বলবো?!
” হ্যা বলবি,আমি বলেছি তাই বলবি ”
” তুমি বললেই বলতে হবে নাকি? ”
” হ্যা বলতে হবে।তুই শুধু আমার কথা শুনবি।এখন একটা গান বল ”
” এখন গান বললে লোকে দেখলে হাসবে ”
” হাসুক,আমি তো হাসবো না।অন্যদের হাসিতে আমাদের কি আসে যায়?নে শুরু কর, ”
বেশ কিছুক্ষণ মাথা চুলকে একটা গান বললাম।রিকশাওয়ালা মামা বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন।রাস্তার কি মানুষও আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলো।
মিষ্টি হঠাৎ কেমন নড়েচড়ে বসলো।আমায় দেখে এমন একটা ভাব করলো যেন সে ভীত দেখে ফেলেছে।রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বললো। রিকশা থামতেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি নেমে গেলো।আমি বললাম
” মিষ্টি কি হয়েছে? নেমে যাচ্ছো কেন? ”
মিষ্টি কিছু বললো না।রিকশা থেকে নেমে আরেকটা রিকশা নিলো।আমিও ওর পিছু নিলাম।মিষ্টি ওর হোস্টেলের সামনে রিকশা দার করালো।ছুটে চলে গেলো হোস্টেলে।লক্ষ্য করলাম যখন যাচ্ছিল তখন ওর চোখে জল ছিলো।হাতের উল্টে পিঠ দিয়ে জল মুছতে মুছতে ভেতরে চলে গেলো।কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।বিষয়টা কিছুতেই বুঝতে পারছি না,মিষ্টির হঠাৎ কি হলো?
পরেরদিন সকালে খাবার টেবিলে সবাই বসেছি ব্রেকফাস্ট করবো এমন সময় বাবা খবরের কাগজে মুখ গুজিয়ে রেখেই বললেন
” নীলু,”
নীলুপু বললো ” হ্যা বাবা ”
” মিষ্টির হোস্টেলে নাকি কাল রাতে একটা খু*ন হয়েছে।ফোন দিয়ে শুনো তো ”
বাবার কথায় যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।মিষ্টিরও তো কাল থেকে ফোন বন্ধ। রাতে ফোন দিয়েছি তখনও ফোন বন্ধ।আজ সকালেও কয়েকবার দিলাম, তখনও বন্ধ।
টেবিল থেকে উঠে বাইকের চাবিটা নিয়ে বেড় হলাম মিষ্টির হোস্টেলের দিকে।দশ মিনিটের মধ্যে হোস্টেলের সামনে পৌঁছালাম।হোস্টেলের সামনে বড় বড় দুটি পুলিশের গাড়ি দার করানো।হোস্টেলের সামনে বেশ কয়েকজন পুলিশ জটলা বেঁধে দারিয়ে আছে।বাইক স্টান্ড করে হোস্টেলের গেইের সামনে যেতেই দেখলাম তিনজন কনস্টেবল দারিয়ে চা খাচ্ছেন আর নিজেদের মধ্যে গল্প করছে।ওদের কাছে যেতেই ওদের একজন বললো
” এইহানে কি চাই? ”
” শুনলাম এই হোস্টেলে একটা খু*ন হয়েছে,আমি সেই বিষয়ে জানতে এসেছি,আপনারা যা জানেন সাফ সাফ বলুন ”
আমার কথা শুনে ওরা একে অপররের দিকে তাকাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার কথায় তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে।ওদের মধ্যে একজন বললো
” আপনেরে কেন বলবো? কে আপনে? ”
” আমি গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসেছি তদন্ত করতে।পুলিশ ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটা দেখতে হবে।খু*ন বিষয়ে যা জানো বলো ”
ওরা বিষয়টা সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছে।তিনজন একসাথে স্যালুট করলো।একজন একটু নীচু স্বরে বললো
” ঘটনা এখনে তেমন জানা হয়নাই স্যার,ওসি স্যার তদন্ত করছেন। আপাতত জানতে পারছি দুইটা মেয়েরে রে*প করা হইছে।তাদের একজনকে রে*প করে ফ্যানের সাথে আ*টকে দিছে,আরেকটা মেয়ে এখন হসপিটালে।অবস্থা খুন খারাপ ”
” মেয়ে দুইটার নাম কি?”
” নামটা যেন কি,,ও হ্যা মনে পড়ছে।মাইয়া দুইটার নাম সিনথিয়া আর ইভা ”
” পো’স্টম’র্টেমের রিপোর্ট এসেছে? ”
” অহনো আসে নাই স্যার।গ্যাং রে*প স্যার,কয়েককন মিইললা একসাথে…..”
ওখান থেকে একটু সরে আসলাম।হোস্টেলে কিভাবে এটা হতে পারে?।আশেপাশের রুমের কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারলো না?। মিষ্টিকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন বের করলাম।ফোন দিতেই মিষ্টি ফোন রিসিভ করলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
” হ্যা..হ্যালো ”
” কোথায় তুমি? কাল রাত থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেন? ”
ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে এলো।মিষ্টি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আচমকা এমন কান্নার শব্দে বু’কটা কেমন কেঁপে উঠলো।হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু মিষ্টি কিচ্ছু বলছে না,শুধু কেদেই চলেছে।এক পর্যায়ে ফোন কেটে গেলো।একটুপর মিষ্টি আবারে ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করতেই
” হ্যালো বিষন্ন ”
কন্ঠ শুনে মনে হলো এটা তিশাপু।বললাম ” হ্যা,তওশা আপু,তোমরা ঠিক আছো? ”
” হ্যা ঠিক আছি।কিন্তু মিষ্টি ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে ”
” আমি হোস্টেলের নিচে দারিয়ে আছি,মিষ্টিকে নিয়ে নিচে এসো ”
” আচ্ছা তুমি দারাও, আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি ”
ফোনটা পকেটে রাখতেই কেউ একজন তার হাত আমার কাঁধে রাখলো। পেছন ফিরতেই দেখলাম ওসি।ওসি হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো
” কি ব্যাপার বিষন্ন,তুমি এখানে? ”
” এখানে আমার কাজিন আছে,ওকে নিতে এসেছি ”
” এখন তো কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না,ইনভেস্টিগেশন চলবে ”
” স্যার ও এই বিষয়টায় খুব ঘাবড়ে গেছে।একটু সময় দিন আমাদের ”
” আচ্ছা তুমি বলছো যখন তখন যাও,,তবে জিগ্যাসাবাদ করতে হবে ”
” ধন্যবাদ স্যার ”
তিশা মিষ্টিকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে।মিষ্টিকে দেখে আমার কেমন যেন লাগছে।এইটুকু সময়কই কি অবস্থা হয়েছে।কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলে গেছে।দূর থেকে আমায় দেখেই মিষ্টি আবারে কান্না শুরু করলো।ওর কাছে যেতেই জরিয়ে ধরে সে কি কান্না!।
পার্কের বেঞ্চে বসে আছি।বু’কে মাথা রেখে মিষ্টি সমানতালে কেদেই চলেছে, এতো শান্তনা দিচ্ছি কিছুতেই কান্না থামছে না।এমনকি কান্নার সাথে সাথে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।তিশা বলল
” বিষন্ন জানো, কাল রাত থেকে এভাবে কেঁদেই চলেছে। কিছুতেই কান্না থামছে না।তুমি দেখো কান্না থামাতে পারো কি না,আমি কিছি খাবার নিয়ে আসি,কাল থেকে কিচ্ছু খায়নি মেয়েটা ”
তিশাপু চলে গেলো।মিষ্টির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললাম
” এই মিষ্টি, আমার কথা একটু শুনো? ভয়ের কিছু নেই,আমি আছি তো,চোখ তোলো,তাকাও আমার দিকে,”
মিষ্টি তাকালো।চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম
” এখনো ভয় পেয়ে আছো? ”
মিষ্টি মাথা নাড়লো।অর্থ এখনো ভয় পাচ্ছে।ওর হাতে হাত রেখে বললাম
” আমি আছি তোমার সাথে,,কোনে ভয় নেই, মনে করো কাল রাতে কিচ্ছু হয়নি।মানুষ জীবনে অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনার সম্মুখীন হয় কি হয় না? আবার তো সেটা কাটিয়েও ওঠে তাই না? ”
মিষ্টি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। একটু আগে এক স্লাইস রুচি আর এক কাপ চা খেয়েছে।তিশাপু বললো
” এই ঘটনা শোনার পর বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে আমায় বাইরে রাখবে না ”
” মানে কি? তাহলে কোথায় রাখবে? ”
” বাড়িতেই রাখবে,শুধু পরিক্ষা দিতে আসবো।সম্ভবত বাবা কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে আমায় নিয়ে যাবে।তখন মিষ্টি একা একা কিভাবে থাকবে সেটাই ভাবছি ”
” তুমি চিন্তা করো না তিশাপু,,মিষ্টি আমাদের বাড়িতে থাকবে।নীলুপুর সাথে থাকবে ”
” তাহলে তো ভালোই হলো।তুমি ওকে একটু স্বাভাবিক করে তোলো।আমি হোস্টেলের দিকে যাই,দেখি কি হচ্ছে ”
তিশাপু চলে গেলো।মিষ্টি চুপ করে বসে আছে,দৃষ্টি স্থির।ওকে বললাম
” চলো ”
মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো ” কোথায়? ”
” আহা চলোই না,গেলেই দেখতে পাবে ”
মিষ্টিকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম।একটু ঘোরাঘুরি করলে যদি মনের ভয় ভাবটা একটু কেটে যায়।পাশেই একটা দোকান থেকে ফুসকা খেলাম।সেখান থেকে চলে আসলাম নদীতে।নৌকা ভাড়া করলাম।নৌকায় শুধু মিষ্টি আর আমি।আমি বৈঠা দিয়ে নৌকা নিয়ে যাচ্ছি। মিষ্টি এখন বেশ স্বাভাবিক। টুকটাক কথা বলছে।কিছুক্ষণ আগে বললো
” তুই নৌকা চালাতে পারিস? ”
” না পারিনা,আজকেই প্রথম ”
” মানে কি? তাহলে একা একা মাঝ নদীতে নিয়ে এলি যে? ”
” কিভাবে যে চলে এলাম বুঝতে পারছি না।মনে হচ্ছে নৌকাটা উল্টে যাবে,তুমি সাঁতার পারো তো?!”
” উল্টে যাবে মানে? আমি একদম সাঁতার পারিনা,প্লিজ পাড়ে নিয়ে চল, আমার খুব ভয় করছে ”
” আমিও সাঁতার পারিনা, ভালোই হলো, ”
মিষ্টি তখন হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ওর মুখটা দেখে খুব হাসি পাচ্ছিলো।বাচ্চাদের মতো ভয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলো।ওকে ভয় দেখানোর কারন হলো একটা ভয়কে কাটানের জন্য মস্তিষ্ককে অন্য বিষয়ে ব্যাস্ত রাখতে হয়।এতে প্রথমের ভয়টা কেটে যায়।মিষ্টির ক্ষেত্রে বিষয়টা কাজে দিয়েছে।নৌকা ডুবে যাওয়ার বিষয়টা ও সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করেছে।তাই বর্তমানের ভয়ের চাপে হোস্টেলে ঘটে যাওয়া ভয়টা এখন তার ম’স্তিষ্কে আর নেই।পাড়ে আসতেই হন্তদন্ত হয়ে মিষ্টি নামলো
চলবে?
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৯
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
বালির ওপর চিকন চিকন লম্বা কোমল ঘাস।ঘাসের ওপর মিষ্টি আর আমি পাশাপাশি বসে আছি।মিষ্টিকে বললাম
” এখন কেমন লাগছে? ”
” ভালো, ”
” ভয়টা কেটেছে?”
” হু ”
” বাড়িতে চলো,বিকেল হয়ে আসছে ”
” কার বাড়ি? ”
” আমার বাড়িতে।তুমি হোস্টেলে থাকবে না।নীলুপুর সাথে আমাদের বাড়িতেই থাকবে। বাবাকে বলেছি,বাবা বলেছেন তোমায় বাড়িতে নিয়ে আসতে ”
” আমি ওই বাড়িতে থাকবো না ”
” এবার কিন্তু আমার হাতে মা’ইর খাবা বুঝছো? ছোট হইছি তো কি হইছে? প্রেমিক সবচেয়ে প্রেমিকার চেয়ে বড়ই হয়,অধিকারটাও বেশী হয় ”
মিষ্টি ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকালো।কিছু বললো না।দু’জনে চুপচাপ বালির ওপর বসে আছি।বাতাসে মিষ্টির চুলগুলো উড়ছে।খোলা চুলে কি সুন্দর’ই না লাগছে।আমি একপলকে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি। মিষ্টি আমার চোখে চোখ রেখে বললো
” তোকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ বিষন্ন, আমি এমন একটা ব্লোকের মধ্যে ছিলাম যে মাথা কাজ করছিলো না,বারবার সেই দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো ”
” সেই দৃশ্য মানে?কোন দৃশ্য? ”
এই প্রশ্নে মনে হলো মিষ্টি বিভ্রান্তিতে পড়লো।হঠাৎ উঠে দারিয়ে বললো
” চল এখন যাওয়া যাক ”
আমিও কিছু বললাম না।মিষ্টির পেছন পেছন হাটছি।ইচ্ছে করছে এই বালুময় বিস্তৃত ভূমিতে ওর হাতটা ধরে হাটলে কি সুন্দর’ই না হতো।এই ভেবে পর পাশাপাশি গেলাম।আলতো করে মিষ্টির হাতে হাত রাখলাম।মিষ্টির হাত একটু কেঁপে উঠলো,কিন্তু কিছু বললো না।কিছুদুর যাওয়ার পর মিষ্টি বললো
” বিষন্ন একটা কথা বলবো,”
” হু বলো,”
” তুই কি সত্যিই আমায় ভালোবাসিস? ”
আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম।মিষ্টি দারিয়ে পড়লো।ওর কাছে গিয়ে দুই হাত ওর গালে রাখলাম।চোখে চোখ রেখে বললাম
” প্রশ্নটা আমার চোখে চোখ রেখে করো,দেখবে উত্তর পেয়ে যাবে ”
দুজন দুজনার চোখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি।তখনি কেউ একজনার ডাকে সেই ঘোরটা কেটে গেলো।পাশ ফিরে তাকালাম।দেখলাম একজন মাঝি।নৌকার ভাড়া এখনো দেইনি,ভুলেই গিয়েছিলাম।ভাড়ার টাকাটা দিয়ে মিষ্টির দিকে তাকালাম।দু’জনই হাসছি! এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে সুখী।
________
” এই মেয়ে এই, শোনো,এদিকে এসো ”
পরী ভ্রু কুচকে তাকালো।কিছু না বলে ঘরের দরজার কাছে দারিয়ে বললো
” আমারে ডাকেন? ”
” হ্যা তোমাকেই ডাকছি,ভেতরে এসো। এই চেয়ারটায় বসো”
পরী ভেতরে আসলো।সামনের চেয়ারে বসলো।স্বাভাবিক ভাবেই বললো
” বলেন কি বলবেন ”
” কে তুমি? এই বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছো, পরিচয় কি?! ”
” আমার নাম পরী ”
” পরী? বাহ বেশ সুন্দর নাম তো। পরী,ইংরেজিতে যাকে বলে এঞ্জেল ”
” আফনে কে? ”
” আমাকে চেনো না? আমি হলাম বিষন্নের নিজের মামা,এই বাড়িতেই থাকি। ”
” আমারে ক্যান ডাকলেন? ”
” আমি লেখালেখি করি বুঝলে।একটা উপন্যাস লিখছি,চোখের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন,তাই তোমাকে ডাকলাম ”
” আমারে ডেকে কি লাভ? ”
” লাভ ছিলো না,এখন আছে।তুমি বেশ রুপবতী।তোমার চোখটাও সুন্দর। একদম নড়াচড়া করবে না।আমার উপন্যাসে তোমার চোখের বিবরন লিখব ”
পরী চুপ করে বসে আছে।মামা বারবার তার চোখে তাকাচ্ছে আর খাতায় লিখছে।আবার মাঝে মাঝে ভ্রু কুচকে লেখার দিকে তাকিয়ে কেটে দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর মামা বললো
” হয়েছে,তুমি এখন যাও ”
” আফনে কি শুধু চোখ নিয়েই লেখেন? ”
” না তেমনটা নয়।আসলে লিখতে গেলে চোখের,মুখের,শ*রীরের বর্ণনা করতে হয়।এতে পাঠকগন কল্পনা করতে পারে চরিত্রটা দেখতে কেমন ”
” যদি কখনো শ*রীর নিয়ে লেখেন তাইলে আমারে বলবেন।আমার শ*রীর খুব সুন্দর।আমি আপনার সামনে শা*ড়ি খুলে বসে থাকবো আর আপনি আমায় দেখে দেখে লিখবেন।আচ্ছা এখন আসি ”
বলেই পরী উঠে চলে গেলো।মামা চশমা খুলে হাতে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।মেয়েটার কথা বুঝতে তার হয়তো অনেকটা সময় লাগবে।
_________
বাইকটা এখনো হোস্টেলের সামনেই পার্ক করা।ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাইক নিয়ে এসছি।নদী থেকে রিকশা করে সোজা হোস্টেলের সামনে আসলাম। বাইক স্টান্ড করা। মিষ্টিকে নিয়ে বাইকে বসতেই ওসি সামনে আসলেন,বললেন
” ভালোই হয়েছে তুমি এসে গেছো,,আমি তোমায় খোঁজ করছিলাম ”
” কেন অফিসার? ”
” তোমায় আমার সাথে থানায় যেতে হবে। খু*নের বিষয়টার সাথে তোমার যোগসূত্র আছে বলে আমরা মনে করছি ”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকালাম।খু*নের সাথে আমার সম্পর্ক কিভাবে থাকবে? অফিসারকে বললাম
” আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানিনা ”
” আমার মনে হয় তুমি সব জানো,থানায় চলো, তারপর সব বুঝতে পারবে ”
মিষ্টি ভয়ে আমার কাঁধে শক্ত করে হাত রাখলো।অফিসারকে বললাম
” আমি যাবো,তবে মিষ্টিকে আপনারা আমার বাড়িতে রেখে আসবেন প্লিজ ”
” আমি বলে দিচ্ছি,গাড়িতে করে রেখে আসবে,তুমি চলো ”
চলবে?