তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ২০,২১

0
322

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২০,২১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
২০

থানায় যেতেই একজন ভদ্রমহিলাকে দেখলাম আগে থেকেই বসে আছে।বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।মুখ ভর্তি পান।তিনি মহা আনন্দে পান খাচ্ছেন,তার খাওয়ার ধরন দেখলে নিজের’ই পান খেতে ইচ্ছে করবে।এই মহিলাকে আমি চিনি।বোরখা পড়ে সেদিন মিষ্টির সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় যখন ইনি ছাঁদে চলে আসেন তখন ট্যাঙ্কে লুকিয়ে একপলক এই মহিলাকে একবার দেখেছিলাম।তিনি অবশ্য আমায় দেখতে পাননি।অফিসার ওনার সাথের চেয়ায়টায় বসতে বললেন।আমি বসলাম।অফিসার বললেন

” বিষন্ন,তোমার বাবার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক,সেটা আশা করি তুমি জানো,”

” হু জানি ”

” আমি চাই তুমি এই কে’ইচকে সমাধান করতে আমায় সাহায্য করবে ”

” আমি কিভাবে সাহায্য করবো? আমি তো এই বিষয়ে কিচ্ছু জানিনা ”

” তুমি না জানলে জানবে কেডায়? অফিসার আমার পরিষ্কার মনে আছে,সেদিন এই পোলাডাই হোস্টেলে ঢুকছিলো ” ফসফস করে পাশে বসে থাকা মহিলা কথাগুলি বললেন।

আমি একটু অবাক হলাম।অফিসার বললেন ” বিষন্ন ইনি হলেন সেই হোস্টেলের মালকিন।যেখানে খু*ন আর রে*পটা হয় ”

” সেটা বুঝলাম,কিন্তু উনি একটু আগে কি বোঝাতে চাইলেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ওনার কথা ”

ভদ্রমহিলা কিছু বলবেন তার আগেই অফিসার তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন ” তুমি পাঁচদিন আগে রাতের বেলা বোরখা পরে ওই হোস্টেলে গিয়েছিলে,কেন গিয়েছিলে? ”

অফিসারের কথা শুনে আমার কিছুটা অস্বস্তি হতে লাগলো।এটা ওরা কিভাবে জানলো।নিশ্চই এই মহিলা বলেছেন।কিন্তু উনি কিভাবে জানলেন? ওনার তো জানার কথা নয়।পুলিশরা এমন ভাবে কথা বলে যেন তারা সত্যিটা জানতে পেরেছে,এতে সামনে থাকা লোক বিভ্রান্ত হয়,আর সবটা বলে দেয়।আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম

” অফিসার আমি কেন ওই হোস্টেলে যাবো?প্রমাণ তো লাগবে তাই না? ”

ভদ্রমহিলা বললেন ” তোমার কালো রঙ্গের একটা বাইক আছে,আমি ছাঁদ থেকে দেখেছি,সেদিন বাইকটা চায়ের দোকানের সামনে রাখা ছিলো,”

” কালো রঙ্গের বাইক তো অনেকের কাছেই আছে,এটা থেকে তো আমায় জেরা করার কোনো মানে হয় না।”

ভদ্রমহিলা বললেন ” আমি স্পষ্ট তোমার মুখ দেখেছি। তুমি বোরখা খুলে যখন বাইকে উঠলে তখনি দেখেছি,”

অফিসার বললেন ” ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি আসুন,আমি তদন্ত করবো,দোষী শাস্তি পাবেই ”

ভদ্রমহিলা উঠে চলে গেলো।অফিসার বললো ” বিষন্ন,তুমি সত্যিটা বলো,এর পেছনে যদি তোমার কোনো হাত থাকে সেটাও বলো,না থাকলে সেটাও বলো।এমনটা নয় যে আমি তোমায় ফাঁসাবো।গতকালকেও তো তোমার একটা কে*ইচ ধামাচাপা দিয়েছি।সত্যিটা বলো ”

” অফিসার আমি এই বিষয়ে সত্যিই কিছু জানিনা ”

” তাহলে সে রাতে হোস্টেলে কেনো গিয়েছিলে? আমি চায়ের দোকানে আর দারোয়ানের কাছেও খোঁজ নিয়েছি,তারাও একই কথা বলেছে।দারোয়ানকে টাকাও দেওয়া হয়েছে ”

” কিন্তু খু*ন তো হয়েছে কাল রাতে, আমি যদি পাঁচদিন আগে যেয়েও থাকি,এতে আমায় সন্দেহর কি আছে ”

” সন্দেহ কিছু না বিষন্ন,এটা সাধারণ লজিক।হোস্টেলটা মেয়েদের, এখানে ছেলেদের যাওয়াটা অসম্ভব,কেননা এটা ৪তলা বিল্ডিং।যেহেতু তুমি একবার গিয়েছো সেখানে,এখান থেকে আমাদের ধারনাটা কি খুব ভুল? যে কাল রাতে যারা ঢুকেছে তাদের তুমি সাহায্য করোনি, এটা ভাবা কি খুব ভুল? ”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।অফিসার চায়ের অফার করলেন।চা শেষ করে বললেন,” তুমি বাড়িতে যাও,সময় নাও,আমার কাছে ভয়ের কিছু নেই।তোমার বাবার টাকা আছে,টাকা থাকলে সব চুপ থাকে।টাকাই সবকিছু করে দেয়।তোমায় কি গাড়ি দিবো? ”

” গাড়ি লাগবে না,আমি যেতে পারবো ”

থানা থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছি।বিষয়টা কেমন যেন জালের মধ্যে আটকে পড়লো।কিন্তু আমি তো কাল রাতের ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানিনা।এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছি তখনি মা খাওয়ার জন্য ডাকলো।

_______

ডিনার টেবিলে সবাই বসে আছি।আমার পাশে নীলু বসেছে।বিষন্ন আমার সামনের চেয়ারটায় বসলো।ওকে দেখে একদম স্বাভাবিক লাগছে।থানায় যে গেলো সেখানে কি হলো সেটা শুনতে হবে।এসব ভাবছি তখনি আঙ্কেল বললো

” তা মিষ্টি মা,তুমি বরং নীলুর সাথেই থাকো।বলা তো যায় না,হোস্টেলে মেয়েরা থাকো,কখন কি হয়ে যায়,তাছাড়া তুমি আমার মেয়ের মতো।ছোট থেকে তো তুমি আর নীলু একসাথে পড়েছো ”

” আঙ্কেল আসলে,”

আমায় থামিয়ে দিয়ে আন্টি বললো ” আসলে কি হ্যা? তুই তো ছোট থেকে এখানেই ছিলি।ক্লাস নাইনে ওঠার পর যে কি ভূত মাথায় চাপলো,বললি যে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবি।টিউশনির টাকায় পড়ালেখা, নিজের সবকিছু চালাস।এখন দেখলি হোস্টেলে কি ঘটনা ঘটে গেলো? ”

” কিন্তু আন্টি ”

আমার কথা থামিয়ে দিয়ে আন্টি আমার কাছে আসলো।পরম যত্নে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো ” হ্যা রে মা,আমরা কি তোকে নিজের মেয়ের মতো আদর করি না? তোকে আমি,নীলুর বাবা কতোটা ভালোবাসি তুই সেটা নিজেও জানিস না,”

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।চোখে জল চলে আসলো।আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, এই মানুষ দুইটা যদি আমার বাবা, মা হতো তাহলে কি খুব দোষের কিছু হতো?। নীলু চিৎকার দিয়ে বললো ” ইয়েএএএএ,মিষ্টি এখন থেকে আমার সাথে থাকবে ”

ওর চিৎকারে আঙ্কেল রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। সরি মুখ ফসকে জোরে বলে ফেলছি,কথাটা বলে মাথা নিচু করে রইলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে নীলুর সাথে ঘুমাতে গেলাম।নীলু বললো

” জানিস দোস্ত, তুই আমার সাথে থাকবি,এটা ভেবে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে, ”

” এতো আনন্দের কি আছে ”

” আনন্দ নেই মানে? কি বলিস তুই? তুই থাকতে একসাথে শপিং করেছি,ঘুরেছি কত্তোমজা করেছি।তারপর তো হোস্টেলে গেলি,যখনি ডাকি তখনি বলিস টিউশনি আছে,এটা আছে ওটা আছে।শোন কালকে শপিং এ জাবো, ”

” আচ্ছা যাবি ঠিক আছে,,এখন ঘুমাবি তো নাকি? ”

” না ঘুমাবো না,আজকে আমরা মুভি দেখবো ”

” কি মুভি ”

নীলু বাকা হেসে বললো ” বড়দের মুভি,ঈশা দিয়েছে ”

” বড়দের মুভি? সেটা কেমন মুভি? ”

” দারা দিচ্ছি,দেখলেই বুঝতে পারবি। এসব মুভি দেখে শিখে রাখ বুঝলি,ভবিষ্যতে কাজে দিবে ”

বড়দের মুভি কি সেটা বেশ বুঝতে পারছি।ঈশার সাথে থাকতে থাকতে নীলুও গোল্লায় চলে যাচ্ছে।এই ঈশাকে এখন কেন জানি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।দশমিনিট টিভিতে চোখ রাখতেই নীলু ঘুমিয়ে পড়লো।আমি ফোন টিপছি।নীলু ঘুমিয়ে যাওয়া দেখে টিভিটা বন্ধ করতে রিমুটটা হাতে নিলাম।মুভিতে কি*স সিন দেখাচ্ছে। লাল বোতামটায় চাপতে চেয়েও পারলাম না।মুভির সিনটা দেখে মনে পড়ে গেলো সেই মুহূর্তের কথা।যখন বিষন্ন, আমার ঠোঁ*ট মিলেমিশে একাকার হয়েছিলো।মুভিটা দেখতে বেশ লাগছে।মুভির কিছু সিন দেখে সারা শরীর কেমন যেন হিম হয়ে আসে।রাত ২ টা অব্দি পুরো মুভিটা দেখলাম।সারা শরীর কেমন যেন করছে।এমন কেন হচ্ছে? এ যেন এক ভয়ঙ্কর অনুভুতি।

লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।চোখটা একটু লেগেছে তখনি ফোনে একটা মেসেজ আসলো।ঘুমঘুম চোখে স্ক্রিনে তাকালাম।বিষন্ন এতোরাতে মেসেজ দিয়েছে?। মেসেজ ওপেন করতেই সেখানে লেখা

” এতো সুন্দর চাঁদ রেখে ঘুমাচ্ছো? ছাঁদে চলে আসো, কুইক! ”

পাগল নাকি? এতোরাতে ছাঁদে ডাকলো আর আমি গেলাম?। যে দুষ্টুর দুষ্টু, ওর ওপর কোনো বিশ্বাস নেই।কিছুক্ষণ পর আবারো মেসেজ আসলো

” কি হলো?ছাঁদে আসতে এতোক্ষণ লাগে? ”

রিপ্লাই করলাম ” ভূতের মতো এতোরাতে জেগে আছিস কেন? যা ঘুমা,আমি ছাদে যাবো না ”

সাথেসাথেই রিপ্লাই আসলো ” এখন বাজে দুইটা আট।দুইটা দশ এর মধ্যে যদি তুমি ছাঁদে না আসো তাহলে কিন্তু আমি ছাঁদ থেকে লা’ফিয়ে নিয়ে পড়ে যাবো৷আমি কিন্তু ছাঁদের রেলিংয়ের ওপরে দারিয়ে আছি ”

এ তো দেখি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে।সত্যিই রেলিংয়ের ওপরে উঠেছে নাকি আমায় ভয় দেখানোর জন্য বলেছে?। ভয় দেখানোর জন্যই বলেছে হয়তো।কোনো রিপ্লাই না দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।একটু পর আরেকটা মেসেজ,ওপেন করতেই দেখলাম একটা পিক।পিকে রেলিঙের ওপর বিষন্ন দারিয়ে আছে।ধরপর করে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ছাঁদে গেলাম।গিয়ে দেখি মিস্টার দুই হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে দারিয়ে দারিয়ে হাসছে।ওর হাসি দেখে আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।রুমে ফিরে যাবো তাতেই বিষন্ন আমার হা’ত ধরে বলল

” ছাঁদে আসতে এতোবার মেসেজ দেওয়া লাগে কেন হ্যা? আমারে কি ভয় পাও না নাকি? ”

” তোরে ভয় পাওয়ার কি আছে? তুই ভূত নাকি? ওহহ হ্যা,তুই সত্যিই মন হয় ভূত,নইলে রাত দুই টায় ছাঁদে কি করিস তুই? ”

” আমি ভূত তাই না? ”

কথাটা বলেই বিষন্ন আমায় নিজের কাছে টেনে নেয়।এক হাত দিয়ে আমার সামনের চুলগুলি কানে গুজিয়ে দিয়ে বললো

” ভূতেরা খুব রোমান্টিক হয় জানো? ”

” ছাই রোমান্টিক,ছাড় আমায়, ”

” না ছাড়বো না,তোমার ওই ঠোঁ*ট জোড়ার মায়া আমায় পাগল করে দিচ্ছে! ”

” বিষন্ন, এইবার কিন্তু মা’র খাবি বলে দিলাম ”

বিষন্ন আমায় ছেড়ে দিলো।আমি ইতস্তত হয়ে নিজেকে সামলালাম।স”র্বনাশ আমি তো ওড়না নিতেই ভুলে গেছি।তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে পড়নাটাই পড়তে মনে নেই।কি লজ্জার বিষয়!। বিষন্ন আমার হাত ধরে দোলনায় কাছে নিয়ে গেলো।

দোলনায় দু’জন বসে আছি।জোৎত্নার আলো বিষন্নের মুখে পড়ছে।আমি একপলকে তাকিয়ে রইলাম।ইসস ছেলেটাকে কতো মায়াবী লাগছে।মনে হচ্ছে সারারাত এভাবেই তাকিয়ে থাকি।বিষন্ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো

” মেয়েরা এভাবে তাকালে আমার ভালোলাগে না।”

ফোঁড়ন কেটে বললাম ” তোরে কে দেখে,ভূত একটা ”

” এই ভূতটার প্রেমেই তো হাবুডুবু খাচ্ছো ”

“এহহহ আমার বয়েই গেছে,ওর মতো পিচ্চির প্রেমে নাকি হাবুডুবু খাচ্ছি,বললেই হলো নাকি?”

” পার্টির রাতে যখন মেয়েরা আমার সাথে কথা বলছিলো তখন তুমি জেলাস ফিল করোনি? ”

” আমি কেন জেলাস ফিল করবো? ”

” ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে কথা বলতে দেখলে সব মেয়েরই জেলাস ফিল হয় ”

” জি মহারাজ চআপনি ঠিক বলেছেন।কিন্তু আপনি তো আমার ভালোবাসার মানুষ নন,তাই এটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,বুঝলেন? ”

” তাহলে সেদিন ঈশাপুকে চ*ড় কেন মারলে? ”

” আ..আব..আমি ইচ্ছে করে মেরেছি নাকি? ও কি যেন করেছিলো,তাই মে’রেছি।কি করেছে সেটা এখন মনে পড়ছে না ”

” ও যেটা করেছে সেটা হলো তোমার ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করেছিলো,ঠিক বললাম? ”

আমি কিছু বললাম না।বিষন্ন যা বলছে সেগুলি তো সত্যিই।আমি শেষমেশ কি না এই পিচ্চি ছেলেটার! না না, এখনি এসব কিচ্ছু বলা যাবে না।সামনে ওর পরিক্ষা,এখন এসবে একদম সায় দিলে চলবে না।কড়া গলায় বললাম

” আমি গেলাম,আর কখনো আমায় রাতে ছাঁদে আসতে বলবি না, আর আমার কাছাকাছিও আসবি না,”

বলপই ওখান থেকে চলে আসলাম।রুমে এসে বিছানায় বসে আছি।ভিষণ রাগ হচ্ছে। চলে আসলাম অথচ ও আটকালো না কেন? আটকালেও তো পারতো।আমার হাতটা ধরে যদি বলতো, ” ওসব বাদ দাও চলো দুজন একসাথে বসে চাঁদ দেখি ” তাহলে কি আমি মানা করতাম নাকি? কি আজব ছেলে। ধূর,হুদাই রাগ দেখায় চলে আসলাম।ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিঁ’ড়ে ফেলি।এই পিচ্চি, কি এমন করলি তুই বলতো? তোর আশেপাশে থাকলে এতো কেন ভালোলাগে হুম? মনে হয় এভাবেই সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো চেঁচামিচিতে।বাড়িতে যেন হুলস্থুল কান্ড বেঁধে গেছে।নীচ থেকে নীলুর চিৎকার ভেসে আসছে।কি বলছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় আসলাম।নীলুর ঘরটা দোতলায়।দোতলা থেকে নীচে তাকাতেই দেখলাম নীলু সর্বশক্তি দিয়ে একটা কাঁচের টপ মেঝেতে আছাড় দিলো।মেঝেতে খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে রইলো ভা’ঙ্গা কাঁচ।পরিস্থিতি বুঝতে দৌড়ে নিচে গিয়ে নীলুকে ধরলাম।ও হাতে আরেকটা টপ নিয়েছে,না ধরলে সেটাও এতোক্ষণে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলতো।আন্টি কিচেনে ব্যস্ত হয়ে রান্না করছে।তার কোনো রেসপন্স নেই।নীলু আমার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো

” মিষ্টি,মিষ্টি ছাড়,আমায় আটকাবি না একদম,আজ সবকিছু শেষ করে ফেলবো,ছাড় আমায় ”

” নীলু কি হয়েছে? এরকম কেন করছিস? বলবি তো কি হয়েছে? ”

” আমার মাথা ঠিক নেই,আমি সব ভেঙে ফেলবো,তুই আটকাবি না,নইলে তোকেও ভেঙ্গে ফেলবো ”

” আমি কাঁচের টপ নাকি যে আছাড় মারলি আর ভেঙে যাবো? তুই রাগ থামা,আমায় বল না কি হয়েছে,”

নীলু শান্ত হয়ে সোফায় বসলো।আমি ওর মাথায়ফু দিচ্ছি। এতে যদি রাগ কমে।নীলু ঠোঁ’ট উল্টে কাঁদতে কাঁদতে বললো

” আমায় নাকি আজ দেখতে আসছে, আমি বললাম যে আগে পড়ালেখা কমপ্লিট হোক তারপর বিয়ে,সেটা ওনারা শুনবে না।আচ্ছা মিষ্টি তুই বল তো,আমার বিয়ের বয়স হয়েছে এখনো? ”

নীলুর কথায় হাসবো না শান্তনা দিবো সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না।নীলু রেগে রেগে বললো

” মাথায় ফু দিচ্ছিস কেন,কালকেই চুল স্ট্রেইট করে নিছি,আউলায় যাচ্ছে,ফু দিবি না ”

” তোর মাথা গরম,তাই ফু দিয়ে মাথা ঠান্ডা করছিলাম ”

” আমার মাথা কি চায়ের কাপ নাকি? ফু দিলি আর ঠান্ডা হয়ে গেলো? শোন মিষ্টি আমি বলে দিচ্ছি,মা তুমিও শুনে রাখো,যদি আজ ছেলে পক্ষ আমায় দেখতে আসে তাহলে কিন্তু যা তা অবস্থা হয়ে যাবে ”

আন্টি নীলুর কাছে বসে বললেন ” নীলু,এরকম কেন করছিস? বিয়ে তো করতেই হবে একদিন তাই না? আর ছেলেকে দেখ,পছন্দ না হলে করবি না তাহলেই তো হলো ”

” আমি জানি তোমরা আমায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে,আমার এখন কোনো ছেলেই পছন্দ হবে না।আমায় যদি জোর করে বিয়ে দাও তাহলে কিন্তু আমি বিয়ের রাতেই জামাইয়ের ভু*ড়ি ফু’টো করে দিবো ”

বলেই নীলু দুমদুম শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।সম্ভবত সে বিষন্নের ঘরে যাবে,ওকে ডেকে তুলে সবটা বলবে।ভাই বোনের মধ্যে কিছুক্ষণ খুনসুটি হবে।আন্টি কিচেনে গেলেন।আমিও গেলাম ওনার পেছন পেছন।

” আন্টি এটা কি?পেঁপে? ”

” হাহাহা,,ওইটা পেঁপে না রে পাগলি,মিষ্টি কুমড়া। পেপে আর মিষ্টি কুমড়ার পার্থক্য বুঝিস না এখনো? বড়া করবো ওইটা দিয়ে ”

আন্টির কথায় খুব লজ্জা পেলাম।আন্টির হাতে হাতে এটাওটা এগিয়ে দিচ্ছি।যদিও এতে আন্টির সময় অপচয় বেশিই হচ্ছে। লবণ চাইলে চিনি এনে দিই,যদি বলে দারুচিনিটা দে আমি গিয়ে খুজতে থাকি দারুচিনি জিনিসটা কি ! এসব কান্ড দেখে আন্টি হাসতে হাসতে বললো

” দুদিন পর জামাইয়ের বাড়িতে যাবি,আর এখনো রান্না করতে পারিস না,দারুচিনি কি সেটাও চিনিস না, ”

” কি করবো বলো,আমি তো কখনো রান্না করিনি।হোস্টেলে দু,একদিন রান্না করা লাগতো,তখন তিশাই করতো,আমায় যেতে হয়নি ”

” তুই যাসনি ভালোই হয়েছে,গেলে একটা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতিস ”

” আন্টি,তুমি কিন্তু আমায় লজ্জা দিচ্ছো ”

” ইস,আমার লজ্জাবতী মেয়েটা রে,,”

” আচ্ছা আন্টি,তোমরা কি সত্যিই নীলুর বিয়ের কথা ভাবছো? ”

” তেমন ভাবছি না,তবে ছেলেটা ভালো বুঝলি,ঢাকায় ৪টা বাড়ি আছে,নীলু খুব সুখী হবে ”

” বাড়ি,টাকা এসব দেখে তোমরা মেয়ের বিয়ে দিবে? ”

” টাকা দেখে কেন,ছেলেও তো ভালো,হ্যান্ডসাম।বিদেশ থেকে পড়ালেখা করেছে এখন দেশে ব্যবসা করছে।তুই দেখলেই বলবি যে নীলুর সাথে এই ছেলেকেই মানাবে ”

” নীলু মনপ হচ্ছে রাজি হবে না,খুব রেগে গেছে ”

” ওই ছেলেকে দেখলে দেখবি নিজেই বিয়ের জন্য লাফালাফি করবে ”

” হাহাহা,আন্টি তুমিও না,”

” সত্যিই তো বলছি,মাঝে মাঝে ঘরে গিয়ে দেখি আয়নার সামনে ঘোমটা মাথায় দিয়ে কিসব ঢং করতে থাকে।তুই ঢং করবি কর,দরজা তো বন্ধ করবি নাকি? দরজা খোলা রেখেই উনি ঢংয়ে ব্যাস্ত।নিজের মেয়েকে তো আমি চিনি নাকি? ”

” ওরা কখন আসবে? ”

” এই আসবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই।নীলুর বিয়েটা হলে তোকেও বিয়ে দিয়ে দিবো,”

” আন্টি আমি যাই,”

” এই মিষ্টি দারা,নীলু কোথায় গেলো? ওকে একটু সাজিয়ে দে মা,তুই ই পারবি ওকে রাজি করাতে,শাড়ি পড়াবি ”

উপায়ান্তর না পেয়ে নীলুর ঘরে গেলাম।কিন্তু ঘরে নীলু নেই, তারমানে আমার ভাবনাই ঠিক, ও বিষন্নের ঘরে গেছে।ওই পিচ্চিটার কাছে গিয়ে কি হবে? ও কিছু করতে পারবে বলে তো মনে হয় না।ওখান থেকে বিষন্নর ঘরে গেলাম।দরজার কাঢ়ে গিয়ে গলা খাঁকারি দিতেই ভেতর থেকে নীলু বললো ” ভেতরে আয়,বিলুর ঘরে আসতে আবার শব্দ করা লাগে নাকি “।ঘরে ঢুকে নীলুর অবস্থা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।বিষন্ন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,আর নীলু ওর পা টিপে দিচ্ছে। দুঃখিত ভঙ্গিতে নীলু বললো

” কপাল গুনে একটা ভাই পাইছি,একটা হেল্প চাইলাম,আর ও বড় বোনের থেকে পা টিপে নিচ্ছে , বাহ্ চমৎকার। এমন ভাই ঘরে ঘরে থাকা দরকার”

বিষন্ন ঘুমঘুম স্বরে বললো ” এতো কথা না বলে কাজটা মন দিয়ে কর,আমি যখন বলছি বিয়ে হবে না, তখন হবে না!”

নীলু বললো ” এই না হলে আমার ভাই, ”

তারমানে এই ব্যাপার।দুই ভাই বোন মিলে এইসব ফন্দি করা হচ্ছে। টিটকিরি মেরে বললাম

” হায়রে নীলু,কার ওপর কি দায়িত্ব দিচ্ছিস।যার এখনো দুধের দাঁত পড়েনি,সে ভাঙবে বিয়ে? হাহাহা! ”

বিষন্ন উঠে বসলো।কিছু বলবে তখনি ওকে আটকে দিয়ে নীলুর হাত ধরে টেনে ওর ঘরে নিয়ে আসলাম।ওকে খানিকটা রাগিয়ে দিতে।

______________

” সামান্য একটা রুমের নম্বরও ঠিকমতো জানতে পারোনি? ”

রাগে গিজগিজ করতে করতে জুনায়েদ কথাটা ঈশাকে বললো।কথা শুনে ঈশা ওর সামনে থাকা মেয়েটার গালে সজোরে একটা চ*ড় বসিয়ে দিলো।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো

” আমি তো জানতাম না যে কাল রাতেই মিষ্টি পাশের ঘরে ঘুমাবে ”

ঈশা রেগে মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে বললো ” পাশের ঘরে কেনো ঘুমিয়েছিলো? বল কেন ঘুমিয়েছিলো? ”

” রাতে জানতে পারি ওর পাশের রুমে থাকা মেয়েটার নাকি জন্মদিন ছিলো।তাই ওরা কয়েকজন মিলে ওই ঘরেই ঘুমিয়েছে। ”

জুনায়েদ গম্ভির স্বরে বললো ” তাহলে মিষ্টির ঘরে যে মেয়ে দুটো ছিলো ওরা কারা? ”

” যে মেয়ের জন্মদিন ওই মেয়ের রুমমেট ছিলো ওই দুজন।ওরা তিন সিটের রুমে তিনজন থাকতো।ওদের সেমিষ্টার পরিক্ষা তাই দু’জনে মিষ্টির ঘরে পড়ছিলো,”

ঈশা মেয়েটিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।জুনায়েদের সামনে এসে বললো

” ভাইয়া আমার একটা কথা,আপনি যখন দেখলেন মেয়ে দুইটা তিশা আর মিষ্টি না তখন চলে আসলেন না কেন? ”

” আরে আমি কিভাবে জানবো,ঘরের লাইট তো অফ ছিলো,আবছা আলোয় ওদের মুখের ওপর স্প্রে করে দিয়ে অজ্ঞান করে লাইট জ্বালিয়ে দেখি ওরা অন্য কেউ ”

” তো তখন চলে আসা উচিৎ ছিলো তাই না? ”

” মেয়ে দুইটার এতো হ*ট ফি*গার যে কন্ট্রোল করতে পারলাম না ”

” এই ছেলেদের নিয়ে হয়েছে এক জ্বালা।মেয়ে দেখলেই আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারে না।কিন্তু মে*রে ফেললেন কেন? এতে তো পুলিশ ও কেইচটায় ইনভলব হয়ে গেলো ”

” প্রথম মেয়েটার সাথে যখন অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ছিলাম তখনি ওই মেয়েটার জ্ঞান ফিরে, কিছু বুঝার আগেই ওর ওড়না দিয়েই ওকে পেঁচিয়ে ধরলাম,কে জানতে এইটুকুতেই মরে যাবে।তারপর ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছি ”

” ওহহ গড, এখন আমাদের যদি পুলিশ খুজে বেড় করে তখন? আমি সোজা বলে দিবো আপনি করেছেন এসব,আমি এসবে নেই ”

বলেই ঈশা হনহন করে পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে বেড় হয়ে গেলো।জুনায়েদ ওর কাছের ছেলেটাকে ডেকে বললো

” এই মেয়েকে আমার আগে থেকেই সুবিধার মনে হয়নি।ও যখন তখন পুলিশকে সবটা বলে দিতে পারে,আজ রাতের মধ্যেই ওকে আমার চাই বুঝলি? আজ রাতের বাসরটা হবে ওর সাথে,দেখবো কত তেজ ওর ”

__________

” ভাইজান চা আনছি ”

বিছানা থেকে উঠে বসলাম। একটা কাপ হাতে পরী দারিয়ে আছে।কাপটা হাতে নিয়ে বললাম

” কেমন আছো পরী ”

” ভালো আছি ভাইজান ”

আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি।লক্ষ্য করলাম পরী এখনো দারিয়েই আছে।হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে।দ্বিতীয়বার চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম

” কিছু বলবে? ”

” না ভাইজান ”

” আচ্ছা ”

না বললেও বেশ বুঝতে পারছি পরী কিছু একটা বলবে,কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না।অভয় দিয়ে বললাম

” তুমি বলো কি বলবে,ভয়ের কিছু নেই ”

” ভাইজান,বাড়ির সামনে কয়েকজন পুলিশ ঘুরাফেরা করতাছে,সকাল থাইকা দেখতাছি ”

” পুলিশ ঘুরাফেরা করছে? ”

” হ ভাইজান,”

” আচ্ছা তুমি এখন যাও,আরেকখান কথা ভাইজান ”

” হ্যা বলো ”

” আপনের বাড়ির যে দারোয়ান ওর স্বভাব চরিত্র একদম ঠিক নাই ”

” কেন কি করছে? ”

” আমারে আজেবাজে কিসব বলে,আমার বু*কের তিলডা নাকি উনি একান্তে দেখবে। ”

বলেই পরী শাড়ির আচল ফেলে বু*কের তিলটা দেখাতে চেষ্টা করতেই ওকে বললা ” আমি বিষয়টা দেখবো,তুমি এখন যাও ”

পরী চলে গেলো।এই বাড়ির দারোয়ান চাচা অতি ভালোমানুষ।তিনি এরকম কোনো কাজ কখনোই করবে না।পরী মেয়েটার চালচলন আমার কেমন যেন লাগছে।সে নিজের শ*রীর দারা আমায় প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।একটু সুযোগ পেলেই আ’চল নামিয়ে নিচ্ছে,তার ধারনা ওর শরীর দ্বারা আমায় আকৃষ্ট করতে পারবে।

____________

নীলুকে দেখতে ছেলেপক্ষ এসেছে।নীলুকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে গেলাম।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ছেলের দিকে নজর পড়লো।নজর পড়তেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।নীলুকে দেখতে এসছে জুনায়েদ ভাই। আমার সারা শরীর রাগে,ভয়ে কাঁপতে লাগলো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here