তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই #পার্টঃ২২,২৩

0
305

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২২,২৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
২২

নীলুকে দেখতে এসছে জুনায়েদ ভাই। আমার সারা শরীর রাগে,ভয়ে কাঁপতে লাগলো।নীলু মাথা নীচু করে হাটছে,তাই দেখেনি।দেখলে হয়তো নিচে যেতোই না।আমিও কিছু বললাম না,যদি নীলু কোনো সিনক্রিয়েট করে বসে তাহলে আঙ্কেল আন্টির অসম্মান হবে।ওনারা চলে গেলে বিষয়টা আন্টিকে জানাতে হবে।নীলু ট্রে-তে করে চা এগিয়ে দিলো। জুনায়েদ ভাইয়ের সাথে চোখে চোখ পড়তেই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো।আমি নীলুর সাথেই বসে আছি।নীলুর হাত চেপে ধরে ইশারায় চুপ থাকতে বললাম।জুনায়েদ ভাই আর ওনার সাথে ওনার বাবা,মা এসছেন।ওনার মা বললেন

” ভাবী,মেয়েকে তো আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে, আপনাদের সম্মতি পেলে এঙ্গেইজমেন্টটা এখনি সেড়ে ফেলতে চাই ”

আঙ্কেল বললেন ” ওরা একে অপরের সাথে একটু কথা বলুক,কিছুটা সময় পেলে ওরা একে অপরকে বুঝতো! ”

” ওরা চিনবে কি? দু’জন দু’জনকে তো আগে থেকেই চেনে,আমার ছেলে সবটা আমায় বলেছে,আপনার মেয়েরও ওকে পছন্দ ”

আঙ্কেল একটু বিব্রত স্বরে বললো ” নীলু মা তুমি আগে থেকেই চিনতে নাকি? কই বলোনি তো ”

আঙ্কেলকে দুই ভাই বোন’ই খুব ভয় পায়।নীলু সত্যিটা বলতে গিয়েও ভয়ে বলতে পারলো না।নীলু একটু জীর্ণ স্বরে বললো

” চিনি বাবা ”

জুনায়েদ ভাইয়ের বাবা বললেন ” তাহলে তো হয়েই গেলো,শুভ কাজটা সেরেই ফেলি,কি বলেন বেয়াই সাহেব ”

” ওরা যদি আগে থেকেই দু’জন দু’জনকে চিনে থাকে তাহলে তাই হোক,”

নীলু করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না।সবটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।ওনারা নীলুকে আংটি পড়িয়ে চলে গেলেন।নীলুর চোখ জলে টলমল করছে।কোনোরকমে চোখ আড়াল করে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।মেয়েটার মনে না জানি কি চলছে এখন।পেছন পেছন আমিও গেলাম।

নীলু উপুড় হয়ে শুয়ে শব্দ করে কাঁদছে।ওকে কয়েকবার তোলার চেষ্টা করলাম,কিন্তু পারলাম না।ও কেঁদেই চলেছে।হাদারাম বিষন্নটাকেও কেন জানি দেখতে পাচ্ছি না,বোনকে দেখতে এসেছে অথচ ছোট ভাই বাইড়ে বাইড়ে ঘুরছে।এতোটুকুও কাণ্ডজ্ঞান নেই ছেলেটার।নীলুকে এখন বিষন্নই সামলাতে পারবে।কয়েকবার বিষন্নকে ফোন দিলাম,ফোন বন্ধ।রেগে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে নীলুর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম

” নীলু,এই নীলু ওঠ না,এভাবে কাঁদলে তো সমাধান হবে না পাগলি,আমাদের বিষয়টা টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করতে হবে।এতো ভেঙ্গে পড়েছিস কেন? আংটি পড়ালেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় নি ”

নীলু উঠে বসলো। এইটুকুতেই চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো

” তুই আমায় না আটকালে আমি সবটা বলে দিতাম।তাহলে বিষয়টা এতদূর এগুতো না ”

” একবার ভাবতো, তখন বললে আঙ্কেলের সম্মানটা নষ্ট হতো না? আর আমিতো জানতাম না জল এতদূর গড়াবে ”

” আমি কিছু ভাবতে পারছি না মিষ্টি,প্লিজ কিছু একটা কর।এরকম আর কিছুক্ষণ চললে আমি সুইসাইড করবো দেখে নিস! ”

” নীলু,,কিসব বলছিস তুই হ্যা? আমি আছি তো।আমি থাকতে ওই শ’য়তানটার সাথে তো বিয়ে আমি হতে দিবো নাকি ? ”

” বাবা যেমন মানুষ, একবার কথা দিলে সেটা আর খেলাপ করবেন না।বাবা তো ওনাদের কথা দিয়েছে,”

” তুই প্লিজ কান্না থামা দোস্ত, এতো ভেঙ্গে পড়িস না ”

কান্না থামাতে নীলুকে জরিয়ে ধরে বসে আছি।তখনি রুমে আসলো আঙ্কেল আর আন্টি।আঙ্কেল ভ্রু কুচকে বললেন

” কি হয়েছে? কান্না করছো কেন নীলু? ”

নীলু কিছু বললো না।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের জল মুছলো।আন্টি নীলুর পাশে বসে আঙ্কেলের উদ্দেশ্য বললেন

” আমাদের ছেড়ে চলে যাবে,সেজন্য কাঁদছে। তাই না রে মা? একদম মন খারাপ করবি না,আমরা কি একেবারে হারিয়ে যাবো নাকি? বোকা মেয়ে ”

আঙ্কেল বললেন ” নীলুর তাহলে এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।আমি একটু খুজে দেখি একটা শুভ সময় বেড় করি,”

আমি বলতে যাবো তখনি আঙ্কেলের ফোনে একটা কল আসলো।আঙ্কেল ফোন কানে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন।আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো

” কিরে মিষ্টি মা,ছেলেকে কেমন দেখলি? ”

” আন্টি আমার একটা কথা ছিলো,খুব গুরুত্বপূর্ণ ”

” কি কথা? ”

” নীলুর ওই ছেলেকে পছন্দ হয়নি, আর ছেলেটাও ভালো না।ওনাকে আমরা হারে হারে চিনি ”

” ভালো না মানে? কি দোষ আছে ছেলের? ”

” আন্টি ওই ছেলেটার আচরন একদম ঠিক নেই।উনি কি করেছেন সেটা তোমায় বলতেও লজ্জা করছে ”

আন্টি নীলুর দিকে তাকিয়ে বললো ” কিরে নীলু, তোর ছেলেকে পছন্দ হয়নি? ”

নীলু কাঁদতে কাঁদতে বললো ” মা আমায় বাঁচাও তুমি,ওই ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারবো না মা,তুমি বাবাকে বলে বিয়েটা আটকাতে বলো মা,প্লিজ ”

” তাহলে তখন কেন বললি না? তোর বাবাকে তো চিনিস নাকি? উনি তো কথা দিয়ে ফেলেছে ”

” মা তোমায় পায়ে পড়ি তুমি কিছু একটা করো,”

” আচ্ছা দারা আমি দেখি কিছু করতে পারি কিনা।তোদের নিয়ে আর পারিনা, জানিনা তোর বাবা এটা শুনে কি শুরু করে দিবে ”

আন্টি চলে গেলো।ফোনে রিং হচ্ছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এলো

” ফোন দিয়েছিলে পিচ্চি? আসলে সাইলেন্ট ছিলো তাই রিসিভ করতে পারিনি,বলো পিচ্চি ”

” বিষন্ন ফাজলামি বাদ দে,নীলুকে দেখতে আসছে জানতিস তো তুই তাই না? ”

” হ্যা, সকালেই তো বললো ”

” তুই জানিস ছেলেটা কে? ”

” হু জানি ”

” কিভাবে জানিস? তুই তো বাড়িতেই নেই ”

” একটু পর ব্যাক করছি আমি,টাটা ”

টুট টুট শব্দে কেটে গেলো ফোনটা।আরেহ, হঠাৎ কি হলো? পুরো কথাটা তো শুনবে নাকি?

_________

বিষন্ন আর ওর দুই বন্ধু রাস্তার পাশে বসে চা খাচ্ছে। চা’য়ের লিকার গাঢ় না হওয়ায় বিষন্নের মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে।শুধু লিকারের জন্যই যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে তা না।এক হাতে স্টিক নিয়ে আরেক হাতে চায়ের কাপ ধরে বসে আছে ওরা তিনজন।অপেক্ষা করে আছে সময়ের।এলজন বলে উঠলো

” এই বিষন্ন, ওইযে এসে গেছে,কালো গাড়ি ”

বিষন্ন গম্ভীর স্বরে পাশের বন্ধুকে বললো ” ফোন কর ”

বিষন্নের কথা মতো জুনায়েদের বাবার ফোনে ছেলেটা ফোন করলো।বিষন্নের দিকে তাকিয়ে বললো

” দোস্ত ধরছে না,রিং বেজেই চলেছে ”

বিষন্ন বললো ” সময় নিচ্ছে,কতো সময় নেয় আমিও দেখবো ”

ছেলেটা একটু চিল্লিয়ে বললো ” দোস্ত ফোন ধরেছে ”

বিষন্ন ফিসফিস করে বললো ” যা শিখিয়ে দিয়েছি সেটা বল ”

ছেলেটা ফোন কানে ধরে বললো ” স্যার আপনার অফিসের সিকিউরিটি গার্ড বলছি,”

ওপাশ থেকে জুনায়েদের বাবা বললেন ” হ্যা বলো, কি হয়েছে? ”

” স্যার অফিসে রেট শুরু হয়েছে,হঠাৎ করেই,আপনি এক্ষুনি চলে আসুন ”

” হোয়াট? কি বলছো তুমি,আ..আমি এক্ষুনি আসছি, তুমি ওই ধান্দার বিষয়ে একদম মুখ খুলবে না, ”

ফোনটা কেটে দিয়েই ছেলেটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে হাসলো।বিষন্ন তাকিয়ে আছে কখন চলন্ত গাড়িটা থাকবে।সাথে সাথেই গাড়ি থামলো।সেখান থেকে জুনায়েদের বাবা, মা দু’জনই একটা টেক্সি নিয়ে বিপরীত রাস্তায় অফিসের দিকে চলে গেলেন।বিষন্ন আর ওর সাথের দুইজন পকেট থেকে রুমাল বেড় করে সেটা মুখে বাঁধলো। এমন ভাবে বাঁধলো যেনো মুখ চেনা না যায়।ছেলে দু’জন হকস্টিক হাতে নিয়ে দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়লো গাড়িটার ওপর।ড্রাইভার ভয়ে পালিয়ে গেলো।রাস্তার পাশের সবাই ভয়ে ছুটে পালাচ্ছে। বিষন্ন একপা একপা করে হেঁটে সামনে দারালো।এক হাতে হকস্টিক,অন্য হাতে চায়ের কাপ।ইতোমধ্যে বিষন্নর দুই বন্ধুর হাতে অনেকটা মার খেয়েছে জুনায়েদ।কিছু বোঝার আগেই একজন হকস্টিক দিয়ে ওর কপালে মারতেই জুনায়েদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।বিষন্নের দুই বন্ধু জুনায়েদের দুইহাত ধরে দার করিয়ে রেখেছে।বিষন্ন ওর হাতপ থাকা গরম চা পুরোটাই ছুঁড়ে মারলো জুনায়েদের মুখে।পু’ড়ে যাওয়ার যন্ত্রনায় ব্যা*থায় প্রচন্ড জোড়ে চিৎকার দিতেই বিষন্ন হকস্টিকটা হাতে তুলে সজোড়ে জুনায়েদের চ*রু বরাবর আঃঘাত করতেই সে চিৎকার যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠলো।মাটিতে লু*টিয়ে পড়েছে জুনায়েদ। বিষন্ন শুধু বললো

” কতো মেয়ের জীবন ন*ষ্ট করেছিস তুই,মৃত্যুর যন্ত্রণা কি সেটা তুই আজ বুঝবি।তার থেকে বড় কথা,তুই মিষ্টির দিকে তাকাস,খুব সাহস তোর তাই না? ”

ব্যাস এইটুকু বলতেই বিষন্নর দুই বন্ধু হকিস্টিক দিয়ে জুনায়েদের কপালে এক ঘা ব*সিয়ে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে মা*থা ফে*টে গল*গল করে র*ক্তে ভিজে গেলো সেখানকার রাস্তা।দুজনার মধ্যে থেকে একজন বললো

” দোস্ত তুই যা,আমরা দেখছি বিষয়টা ”

” এমন যায়গায় মারবি যেন বিয়ের পরেরদিন’ই বউ ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়,বুঝলি? ”

________

” ওগো শুনছো,একটা কথা বলার ছিলো ”

” সেজাসাপ্টা বলে বিদেয় হও ”

” নীলু এই বিয়েতে রাজি না,ও ডেকে বলছে বিয়েটা করতে পারবে না ”

” পারবে না মানে? তাহলে তখন কেন বলেনি? তুমি জানেনা আমি কথা দিলে সেটা রাখতে কতদূর অব্দি যেতে পারি? আমি যখন কথা দিয়েছি,এই বিয়ে হবে,তখন হবেই ”

” নিজের মেয়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিবে? ”

” হ্যা দিবো।আমিও তে তেমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছি।জোর করে পালিয়ে নিয়ে গেছি।তাই বলে কি তুমি সুখী হওনি? তুমি নিজেও জানে স্বামী হিসেবে আমি কেমন ”

” কিন্তু ”

” কোনো কিন্তু নয়,আমি এক কথার মানুষ।বিয়ে হবে মানে হবে। আমার কথার নড়চড় হবে না।প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে,তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে ”

চলবে?

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” বিষন্ন দারা ”

মায়ের ডাকে পেছন ফিরলাম।মা রাগী স্বরে বললো কোথায় গিয়েছিলি? ”
” বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম মা।এতো রেগে কথা বলছো যে ”

” রেগে বলবো না তো কি তোকে নিয়ে নাচবো? ”

” নাচতে চাও? চলো তাহলে আজ মা ছেলে খুব নাচবো ”

মায়ের হাত ধরে দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছি।মা রেগে বলছে ” ছাড় আমায়,এমনিতেই কো*মড়ে ব্যাথা,এভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচলে আর উঠতে পারবো না “।আমি মায়ের কোনো কথাই শুনলাম না।আমাদের নাচ দেখে রহিমের মা’ও এসে যোগ দিলো। দোতলায় দেখলাম নীলুপু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে টেনে নিচে নিয়ে আসলাম।মা,নীলুপু দু’জনই এখন নাচছে।ইতোমধ্যে একটা গান ও প্লে করা হয়েছে।সেই তালে বাড়ির সবাই নাচছে।এমনকি মামা আর বাবাও এসেছেন।তারাও নাচছে।বাবা মায়ের হাত ধরে কো*মড় দুলিশে নাচছে।মামা দুই হাত মাথায় রেখে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছে।দোতলায় মিষ্টি দারিয়ে আছে।ওর মুখ মলিন।আড়ালে ওর কাছে গেলাম।

” মন খারাপ করে দারিয়ে আছো কেন? চলো আমরা কাপল ডান্স করবো ”

” তুই এরকম কেন বলতো? কি সুন্দর পরিবারের সবাইকে হঠাৎ হঠাৎ আনন্দে মেতে তুলতে পারিস,”

” পরিবারের মানুষের খুশিটুকুর চেয়ে বড় আর কিছু আছে? চলো নিচে চলো, আমরা একসাথে নাচবো ”

” না আমি যাবো না,লজ্জা করে! ”

” ইশশ রে, লজ্জাবতী বউটা ”

” কি বললি? ”

” আ…কি..কিছু বলিনি,কি..কিছু না, আচ্ছা নিচে না গিয়ে বরং এখানে নাচবো চলো,এখানপ তো কেউ দেখছে না। তোমার একটা হাত আমার কাঁ*ধে রাখো,আরেকটা হাত আমার হাতে রাখবে।”

কো*মড়ে হাত রাখতেই মিষ্টি কেমন যেন কেঁপে উঠলো।দু’জন দুজনার চোখে তাকিয়ে আছি।চোখের যেন পলক পড়ছে না।মিষ্টি বলল

” ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন!”

” মায়ায় ভরা দুটি চোখ দেখছি,তাতে তোমার কি? ”

” ওভাবে তাকাতে পারবি না,আমার বু*কে কেমন কেমন করে ”

” কই দেখি কেমন করে ”

” ওই শ*য়তান,হাত উঠাচ্ছিস কেন,”

” তুমিই তো বললে কেমন কেমন করে,একটু ছুঁয়ে দেখি কেমন করে ”

” ছুঁয়ে দেখতে হবে না,ফাজিল ছেলে কোথাকার ”

” লজ্জা পেলে তোমার চোখ আরো সুন্দর হয়ে ওঠে,ইচ্ছে করে চোখে সারাদিন চু*মু খাই ”

” এই যে মিষ্টার,চোখটা কিন্তু আমার ঠিক আছে? ”

” তোমার ঠিক আছে,কিন্তু অধিকার তো আমার ”

” মানে? ”

” এখানে মানে বুঝতে পারবে না তো,”

” খুব পাজি হয়েছিস তুই।আচ্ছা সকাল থেকে কোথায় ছিলি? ফোন দিলাম ধরলি না কেন? ”

” একটা কাজ করছিলাম ”

” কি কাজ? ”

” ধূর ওসব বাদ দাও,তোমায় খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে ”

বলার সাথে সাথে মিষ্টি আমার পেটে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো।ব্যাথায় “আউউ ” করে শব্দ করলাম।নিচে নাচতে থাকা সবাই ওপরে আমার দিকে তাকালো।ওরাও শুনতে পেয়েছে ?খুব জোরে চিল্লিয়েছি নাকি?।নিচ থেকে মা দৌড়ে এসে বলল

” কি হয়েছে রে? এতো জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলি কেন? ”

পাশ ফিরতেই দেখি মিষ্টি নেই।নীলুর ঘরে আগেই পালিয়ে গেছে।মা’কে বললাম,

” কিছু হয়নি,এমনিই চিল্লাতে ইচ্ছে করছিলো।তোমরা নাচ বন্ধ করলে কেন ”

” এই বয়সে এসে এসব ঢং করার সময় আছে নাকি?।তুই ফ্রেশ হয়ে নে,আমি তোর জন্য খাবার রেডি করছি ”

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালেতে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামন৯ দারালাম।আয়নায় দেখলাম আমার পেছনে নীলুপু দারিয়ে আছে।পেছন না ফিরেই বললাম

” কিরে নীলুপু,কিছু বলবি? ”

” কোথায় ছিলি তুই? ”

” একটা কাজে ছিলাম,শুনলাম ছেলে নাকি খুব পছন্দ হয়েছে তোর? এক্কেবারে বিয়ে ঠিক করতে বলেছিস বাবাকে, সত্যি? ”

ব্যাস এইটুকু কথা শেষ না হতেই নীলুপু ঝা*পিয়ে পড়লো আমার ওপর।দুই হাত দিয়ে কিল ঘু*সি মারছে,সাথে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবে এমন অবস্থা। অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিলাম।নীলুপু বিছানায় বসলো,চোখে জল, কান্না করছে।ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম

” কান্না করছিস কেন পাগলি? ”

” তুই জানিস? বাবা আমার বিয়ের সময় দেখছেন ”

” আমি আছি তো নাকি? প্যারা নিচ্ছিস কেন? চিল কর, ”

” তুই কি করছিস দেখতেই পাচ্ছি তো,”

” এখনো পাসনি,তবে খুব শীঘ্রই দেখতে পাবি।আপু এক কাজ করতো,আমার মাথা ব্যাথা করছে,একটু টিপে দে ”

” পারবো না যাহ ”

” জুনায়েদ এখন হসপিটালে,কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবি বাবা বলবে এই বিয়ে হবে না ”

” সত্যি? তুই সত্যি বলছিস বিলু? ”

” কতবার বলবো? ওই ফালতু নাম ধরে ডাকবি না ”

” আমার পুচু ভাই,ইশশ কত্তো মার*লাম।লেগেছে খুব? ”

” হু, এখন মাথা টিপে দে ”

উপুড় হয়ে শুয়ে আছি।নীলুপু মাথা টিপে দিতে দিতে বললো

” এই বিলু শোন না ”

” শুনছি বল ”

” সমুদ্র ভাই কয়েকদিন থেকে বাড়িতে আসছে না কেনো রে? ”

” উনি জব ইন্টারভিউ দিতে গেছে।চট্টগ্রামে ”

” আসবে কবে জানিস কিছু? ”

” আমি কিভাবে জানবো? কবে আসবে আমায় বলে গেছে নাকি? ”

” রেগে কি কথা বললি আমার সাথে? যাহ,আর মাথা টিপে দিবো না।”

হনহন করে উঠে চলে গেলো নীলুপু।সমুদ্র ভাই আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে।একসময় আমাকে টিউশনি করাতো।নীলুপুর সাথে ওনার সম্পর্ক আছে সেটা বেশ বুঝতে পারি।কিন্তু নীলুপুকে সেটা বুঝতে দিই না।প্রেমিকরা স্বামী হিসেবে তেমন ভালো হয় না,তবে সমুদ্র ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। তার মতো ছেলে খুব ভাগ্য করে পায় মেয়েরা।নীলুপু পেয়েছে।

_________

” মিষ্টি,শপিং এ যাবো চল ”

” আমি যেতে পারবো না রে,সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা সামনে ”

” আমারও তো পরিক্ষা,এতো পড়ে কি হবে? তুই না পড়লে এমনিতেও টপ করবি ”

” যেতেই হবে? ”

” আচ্ছা থাক,তুই পড়।”

হঠাৎ কেন জানি সমুদ্র ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে।লোকটার সাথে বেশ কয়েকদিন থেকে দেখা হয়না।শাড়ি পড়লাম,কপালে টিপ দিয়ে নিচে যেতেই দেখলাম বাবা গম্ভীর হয়ে পেপার পড়ছেন।বাবার কাছে গিয়ে বললাম

” বাবা, কিছু টাকা লাগবে,শপিং করতে যাবো ”

” বাবা পলেট থেকে কার্ডটা বেড় করে টেবিলে রেখে দিলেন।আমি কার্ডটা নিয়ে দরজার কাছে যেতেই চরম একটা ধাক্কা খেলাম।মিষ্টি হাতে সমুদ্র ভাই দারিয়ে আছে।একপলক পেছনে তাকিয়েই সমু্দ্র ভাইয়ার হাত ধরে টেনে বাড়ির সাইডে নিয়ে এলাম।বললাম

” আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? একবারও খোঁজ নেননি,বাড়িতেও আসেননি ”

সমুদ্র ভাইয়া হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন ” ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম,বিষন্নকে বলে গিয়েছি,তোমায় বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ”

” তা চাকরি কি হলো? নাকি এবারেও রিজেক্ট ”

” এইবার হয়েছে।ভাবলাম তোমাদের মিষ্টি খাইয়ে আসি ”

” বাহ্,খুব ভালো সংবাদ।চলুন শপিং এ যাবো ”

” মিষ্টিটা দিয়ে আসি? ”

” আপনার দিতে হবে না ”

দারোয়ানকে ডেকে তার হাত দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়ে দিলাম।সমুদ্র ভাইকে নিয়ে হাটছি।রিলশা পাওয়া যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা দার করিয়ে উঠলাম।সমুদ্র ভাই ঠাই দারিয়ে রইলো।ওনাকে বললাম

” কি হলো দারিয়ে আছেন কেন? উঠুন,”

উনি হাত কচলাতে কচলাতে বললেন ” একি রিকশায় উঠবো? ”

” হ্যা উঠবেন,আপনার লজ্জা এখনো কাটাতে পারলাম না,আফসোস ”

রিকশায় সমুদ্র ভাইয়া পুরো সিটটা আমায় ছেড়ে দিয়ে এক কোনে চেপে বসে আছে।এমন আচরনে খুব অস্বস্তি লাগছে।এই লোকটার এতো লজ্জা কেন? ওনাকে বললাম

” আপনার অসুবিধা হচ্ছে, আমি বরং নেমে যাই ”

” না না,একদম অসুবিধা হচ্ছে না ”

” তাহলে সিটের কোনে এতো চেপে বসে আছেন কেন? স্বাভাবিক হয়ে বসুন।গায়ে গা লাগলে আপনার এমন কোনো পাপ হবে না ”

উনি লজ্জা পেলেন। স্বাভাবিক হয়ে বসলেন,তবুও সে বসায় আছে জরতা।শপিং শেষে পার্কের বেঞ্চে দু’জন বসে আছি।সমুদ্র ভাই কোনো কথা বলছেন না,উপায় না পেয়ে বললাম

” আমার আজ মনে হচ্ছিল আপনার সাথে দেখা হবে,সত্যি সত্যিই ূেখা হয়ে গেলো ”

” ও আচ্ছা ”

” ও আচ্ছা কেন, আপনি আমায় দেখে খুশি হননি? ”

” তা হয়েছি ”

” তাহলে সেটা বলেন না কেন? মেয়েরা তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে চায়,বুঝলেন? ”

সমুদ্র ভাই বেকা বোকা মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো।হাসি আটকে রেখে বললাম

” বিয়ে কবে করছেন? ”

” কেবল চাকরিটা পেলাম,দেখি কিছুদিন যাক।বেতন বেশি না বুঝলে,বিশ হাজার টাকা ”

” এটাকে বেশি না বলছেন?এটা দিয়ে দিব্যি দুইটা পরিবার চলতে পারবে।আর বিয়ের বয়স তো চলে যাচ্ছে, এরপর তো মেয়েই খুজে পাবেন না ”

উনি হাসলেন।ওনার হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।কি সহজ হাসি।উনি বললেন

” নীলু,তোমার পড়ালেখার কেমন চলছে? ”

” চলছে মোটামুটি।আচ্ছা আপনি আমার চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারেন? ”

” চোখ দেখে কিছু বোঝা যায় নাকি? আগে জানতাম না তো ”

” হু যায়,অনেক কিছু বোঝা যায়।যেমন আমি আপনার চোখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম ”

সমুদ্র ভাই ভ্রু কুচকে বললেন ” মা…মানে? ”

” মানে হলো, এই যে আপনি আমাদের বাড়িতে আসতেন, লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখতেন।যখন আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেড় হতাম তার আগেই আপনি রিকশা আমাদের গেইটে দার করিয়ে রেখে আড়াল থেকে আমায় দেখতেন। কি দেখতেন না? ”

সমুদ্র ভাইয়ের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মনে হচ্ছে আমার কথায় খুব লজ্জা পেয়েছে। বেঞ্চ থেকে উঠে বললাম

” আজ আসি, জানি আপনি কখনোই কিছু বলতে পারবেন না ”

” কিছু বলার নেই,থাকলে বলতাম ”

” অবশ্যই আছে,আপনি আমায় ভালোবাসেন,বিয়ে করতে চান এটা অনেকবার বলতে চেয়েছেন,কিন্তু পারেননি।এটা কি বলার মতো কথা না? ”

” নীলু, আমি যে চাকরিটা পেয়েছি তা দিয়ে তোমায় সুখে রাখতে পারবো না,তাই ভয়ে কিছু বলিনি ”

” সমুদ্র ভাই,আপনার যখন দুবেলা খাওয়ার টাকা ছিলো না তখন থেকেই আমি আপনাকে পছন্দ করি।আর আমার ভালোবাসাটা প্লিজ টাকার সঙ্গে তুলনা করে ফেলনা করে দিবেন না ”

” আমি তা বলতে চাইনি।তোমার লাইফস্টাইল আর আমার তো এক না,তুমি একটু আগে শপিং করলে তেইশ হাজার টাকা দিয়ে।আর আমি মাস শেষে বেতন পাবো বিশ হাজার ”

” আপনি যদি ভালোবেসে আমায় দুই হাজার টাকা দিয়ে একটা শাড়ি আর চুড়ি কিনে দেন,তাহলে এই তেইশ হাজার টাকার শপিং এর থেকেও বেশি খুশি হবো।ভালোবাসার মানুষটার সস্তা উপহারও অনেক দামি মনে হয়।দুই হাজার টাকা তো দিতে পারবেন, কি পারবেন না? ”

” হু পারবো ”

” তাহলে উঠুন, একটা রিক্সা ঠিক করে দেন,বাড়িতে যাবো ”

সমুদ্র ভাই রিক্সা ঠিক করে দিলেন।রিক্সায় বসতেই উনি বললেন

” নীলু একটা কথা ”

” হু বলেন ”

” আমার স্যালারি পঞ্চান্ন হাজার টাকা।দুই বছর পর সত্তর হাজারে পৌঁছাবে ”

” কিহ? তাহলে মিথ্যে বলেছিলেন কেন? ”

” দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি মনে করো।”

” তো কি দেখলেন? ”

” ২৪ ক্যারেট গোল্ড চিনতে ভুল হয়নি আমার।আমি জানি,ভুল মানুষকে আমি ভালোবাসিনি ”

রিকশা চলতে শুরু করলো।বোকা লোকটার মাথায় এই ছিলো?মনের অজান্তেই ঠো*টে হাসি ফুটে উঠলো,চোখে অশ্রু।এ অশ্রু আনন্দের,ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার।

__________

দরজায় বিষন্ন দারিয়ে আছে।কয়েকবার টোকা দিয়েছে।আমি কিছু বলিনি।সেও চুপ করে দারিয়ে আছে।আজ মনপ হচ্ছে ছেলেটা ভদ্র হয়েছ।অন্যদিন হলে হুট করেই ঘরে ঢুকে পড়তো।

” দারিয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয় ”

বিষন্ন আমার সামনের চেয়ারে বসলো।আমি টেবিলে বসে ম্যাথ করছি।বিষন্ন বলল

” কি এতো ভাবছো? চিন্তিত মনে হচ্ছে ”

” একটা টপিক বুঝতেছি না,নোটটা তিশার কাছে ”

” কই দেখি আমায় দেখাও,আমি সলভ করে দিচ্ছি ”

পিচ্চিটা এমন গম্ভীরভাবে বললো যেন সত্যি সত্যিই ও সলভ করতে পারবে। ইন্টারের স্টুডেন্ট হয়ে অনার্সের টপিক সলভ করা এতো সহজ নাকি? অথচ কত স্বাভাবিক ভাবেই বললো।আমিও খাতাটা এগিয়ে দিলাম।দেখি কেমন সলভ করতে পারে।

বিষন্ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ও যে এই টপিকটার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না সেটা বেশ বুখতে পারছি। অথচ পিচ্চিটা এমন ভাব নিয়ে দেখছে যে মনে হবে এখনি তুড়ি মেরে সলভ করে ফেলবে।আমায় অবাক করে দিয়ে পিচ্চিটা খাতায় গজগজ করে কি যেন লিখলো।ওর লেখা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।ও কিভাবে এই বিষয়ে জানে? ওর তো জানার কথা না।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here