#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪১,৪২
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
৪১
বিষন্ন কপালের চামড়া ভাজ করে বললো ” মনে মনে যে এতো জোড়ে কথা বলা যায় আগে জানতাম না “।মিষ্টি লজ্জায় ঠোঁ’ট কা’মড়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো।একটু পর ঠোঁ’টের কাছে গরম কিছুর স্পর্শ পেতেই মিষ্টি চোখ মেলে তাকালো।দেখলো বিষন্ন ঠোঁ’টে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মিষ্টি আরো অবাক হলো এটা দেখে যে বিষন্ন কাঁদছে।অশ্রুতে চোখ টলমল করছে।মিষ্টি কাতর স্বরে বললো
” তুমি কান্না করছো?”
বিষন্ন হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো
” খুব ব্যাথা দিয়ে ফেলছি,তাই না? ”
মিষ্টি ঠোঁ’টের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে বললো
” তা পেয়েছিলাম একটু,তবে বিশ্বাস করো এখন আর একটুও ব্যাথা করছে না।ইচ্ছে হচ্ছে এরকম ব্যাথা যেন রোজ পাই,আর সেই ব্যাথার সাথে তুমি ”
” কাল রাতে তো ঠোঁ’ট কে’টে গেছিলো,র’ক্ত বেড় হয়েছিলো।এখনো কি ঠোঁ’টে ব্যাথা আছে? ”
” আরে বাবা তুমি এতো ভেবো না তো।আমার একটুও ব্যাথা করছে না ”
মিষ্টির কথায় বিষন্নর গম্ভীর মুখেও একটু হাসির আভা দেখা গেলো।এরপর দু’জনই চুপ।মৌনতা ভেঙ্গে বিষন্ন বললো
” আমার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে জানো,আমি এখন কেন জানি কিছুতেই রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।রাগের মাথায় তোমা….”
মিষ্টি বিষন্নর মুখে হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো।তারা দু’জন একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিষ্টি বিষন্নর চোখে চোখ রেখে বললো
” তোমার এই চোখে আজ থেকে চার বছর আগে যে ভালোবাসা দেখেছিলাম,আজও ঠিক সেই ভালোবাসা আবার দেখতে পাচ্ছি। চলোনা সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলি?শুধু শুধু এতো রাগ অভিমান করে কি হবে?সব ভুলে চলোনা আবার সেই কড়া রোদে রিকশায় হুড তুলে দুজনে মুগ্ধ হয়ে একে অপরকে দেখি ”
বিষন্নর হঠাৎ মনে হলো সকালের ঘটনাটা।তার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠছে মিষ্টি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।মুহুর্তেই বিষন্ন যেন কেমন পাল্টে গেলো।চোখ মুখ শক্ত করে উঠে দাড়ালো।মিষ্টির দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আকষ্মিক বিষন্নর এভাবে চলে যাওয়ায় মিষ্টি হতভম্ব হয়ে বসে রইলো।তার চোখে জল।মনে মনে ভাবছে,” আমি কি এমন করছি? বিষন্নর আমার প্রতি কিসের এতো রাগ? একটু আগেই ওর চোখে ভালোবাসার অশ্রু দেখলাম,এইমধ্যেই কি এমন হলো? “।মিষ্টি হাটু ভাজ করে কান্না করছে আর এইসব ভাবতে।এমন সময় মিষ্টির কাঁধে কেউ হাত রাখলো। মিষ্টি মুখ তুললো না।তার খুব কান্না পাচ্ছে।
” মিষ্টি কি হয়েছে রে?বিষন্ন এতো রেগে বেড়িয়ে গেলো কেন? ”
কন্ঠ শুনে মিষ্টি বুঝতে পারলো নীলু এসছে।মিষ্টির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা দেখে নীলুর খুব মন খারাপ হলো।নীলু সেখান থেকে উঠে বিষন্নর রুমে গেলো।গিয়ে দেখলো বিষন্ন বিছানার পায়ার কাছে বসে সিগারেট মুখে বসে আছে।আরেক হাতে লাইটার জ্বলছে, কিন্তু সিগারেটে আগুন ধরাচ্ছে না।ওকে কেমন যেন উষ্কখুষ্ক লাগছে।চুলগুলো পুরোমুখে আছড়ে পড়েছে।বিষন্নর এরুপ ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে নীলু বিষন্নর পাশে বসলো।ঠোঁ’ট থেকে সিগারেটটা সরিয়ে নিলো।সিগারেট সরিয়ে নেওয়ায় বিষন্নর ভাবান্তর হলো না।নীলু বিষন্নর হাত স্পর্শ করে বললো
” কি হয়েছে ভাই তোর? ”
এটুকু বলতেই বিষন্ন ছোট্ট বাচ্চার মতো নীলুকে জড়িয়ে ধরে ধরলো।নীলু বুঝতে পারছে বিষন্ন কান্না করছে।কি এমন হয়েছে ওদের মাঝে?কিসের এতো কষ্ট? এতো হাসিখুশি চঞ্চল ছেলেটাও এভাবে কান্না কেন করছে?, এইসব ভেবে নীলুর চোখে জল চলে এলো।বিষন্নর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো
” এই বিষন্ন,এভাবে কাঁদিস না ভাই আমার।তোদের এতো কিসের মান অভিমান বলতো?কই এর আগে কখনো তোকে এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি ”
বিষন্ন কান্না করতে করতে বললো ” আমার সাথে মিষ্টি কেনো এরকম করলো বলতে পারবি? আমাকে কেন এভাবে দিনের পর দিন ঠকিয়ে গেলো?”
নীলু বুঝতে পারলো বিষন্নর মনের চাপা কষ্টের পরিমাণ পাহাড় সমান।নীলু চুলে বিলি কে’টে দিতে দিতে বললো ” তোদের একটা ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে বিষন্ন।তোদের উচিত সেটা মিটিয়ে নেওয়া।এভাবে নিরবে দুজনই কষ্ট পাচ্ছিস, এটা কি ঠিক হচ্ছে? এভাবে তো কেউ ভালো থাকবি না ”
বিষন্ন নিজেকে নীলুর থেকে সরিয়ে নিলো।চোখের জল মুছে শান্ত স্বরে বললো ” মিষ্টি খুব ভালোই আছে নীলুপু।”
নীলু আবেগ মিশ্রিত স্বরে বললো ” না বিষন্ন,তুই ভুল জানিস।মিষ্টিও খুব কষ্ট পাচ্ছে,তুই হয়তো জানিস না মি…..”
নীলুকে থামিয়ে দিয়ে বিষন্ন বললো ” সেটা আমি জানি, ওর হয়ে তোকে বলতে হবে না।ও আমায় ছাড়া ভালোই আছে,শুধু ভালো না,বেশ ভালো আছে।অন্য ছেলের সাথে হাসি,মজা নিয়ে বেশ আছে ”
নীলু ভ্রু কুচকে বললো ” অন্য ছেলে মানে? কিসব বলছিস তুই? অন্য কোন ছেলে? ”
বিষন্নর চোখ ভর্তি হয়ে গেলো অশ্রুতে।চোখের জল মুছতে মুছতে বললো ” আমার এখন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না নীলুপু,তুই যা এখান থেকে ”
নীলু আর কিছু বলতে চাইলো,কিন্তু বলতে পারলো না।বিষন্ন তার ভয়ঙ্কর চোখে নীলুকে যেতে বললো।নীলুও সেখান থেকে ফিরে এলো মিষ্টির কাছে।মিষ্টি এখনো কাঁদছে।নীলু মিষ্টির মুখ ওপরো তুলে বললো
” তুই সকালে কার সাথে দেখা করতে গেছিলি? ”
মিষ্টি কান্নার বেগ সামলিয়ে বললো ” অভ্রর সাথে।উনি হঠাৎ বাড়ির সামনে এসে আমায় ফোন করে বললো নিচে যেতে।আমি প্রথমে যেতে রাজি হইনি,বলেছি চলে যেতে।কিন্তু অনেক রিকুয়েষ্ট করলো তাই গিয়েছিলাম ”
” বাড়ির নিচে মানে কি? আমাদের বাড়ির নিচে এসছিলো? ”
” হু ”
” আর তুইও গেলি নিচে কথা বলতে?”
” এটা কি এমন ব্যাপার? অভ্র আমার অফিসে জব করে,অফিসিয়াল কথা তো থাকেই তাই না? ”
নীলু মাথায় হাত রেখে বললো ” তোদের কথা বলার আর যায়গাও পেলি না, বাড়ির সামনেই বলতে হলো? ”
মিষ্টি হতবিহ্বল হয়ে বললো “, এখানে মাইন্ড করার কি আছে? ”
” আমরা তো জানি ছেলেটা কে,কিন্তু বিষন্ন তো জানেনা ছেলেটা কে ”
” মানে? ”
” মানে হলো তোরা যখন নিচে কথা বলছিলি তখন হয়তো বিষন্ন তোদের একসাথে কথা বলতে দেখে ফেলেছে।ভেবেছে ওর সাথে তোর কোনো সম্পর্ক আছে,এজন্য দেখা করতে বাড়ি অব্ধি চলে এসছে।বেচারা এখন কান্নাকাটি করে একাকার ”
” তুই বুঝিয়ে বলতে পারলি না? ”
” আমি কি বুঝাবো?যেভাবে তাকিয়েছিলো, আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে ”
মিষ্টি করুন স্বরে বললো ” একসাথে বসে চা খেতেও দেখে ফেলছে নাকি? ”
নীলু ভ্রু কুচকে তাকালো মিষ্টির দিকে।মিষ্টির মুখ ভোতা করে বসে আছে।নীলু বললো ” একসাথে বসে চাও খেয়েছিস? ”
মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” আমি খেতে চাইনি,জোর করেছে জন্য বাধ্য হয়ে খেয়েছি ”
নীলু বিছানা থেকে উঠে যেতে যেতে বললো ” তুমি মহাভারত উদ্ধার করেছো। আমি এসবে নাই,কি করবে করো বাপু ”
মিষ্টি নীলুর হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো ” প্লিজ আমায় একা রেখে যাস না,আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি করবো।কিছু একটা বুদ্ধি দিয়ে যা ”
____________________
সিগারেট মুখে দিতেই একটা ফোন এলো।বিষন্ন আড় চোখে স্ক্রিনে তাকালো।সাকিব ফোন করেছে।হাত বাড়িয়ে রিসিভ করতেই সাকিব বললো
” কিরে কই তুই? ”
বিষন্ন চোখে হাত রেখে বললো ” বাড়িতে,”
” কলেজের দিকে আয় ”
” এখন যেতে পারবো না,ভালোলাগছে না ”
” আরে ব্যাটা চলে আয়,অনেকদিন থেকে আড্ডা হয় না।আয় তাড়াতাড়ি,”
” দোস্ত আমার ইচ্ছে করছে না যেতে,সন্ধার দিক যাবো ”
” না,তোকে এখনি আসতে হবে।সবাই এসছি,অনেকদিন পর সবাই একটু চিল করবো,চলে আয় ”
বিষন্ন জানে এরা নাছোরবান্দা।যতোই না বলুক কিছুতেই ছাড়বে না।বিষন্ন সিগারেট মুখে নিয়েই বাইকের চাবিটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে নিচে নেমে গেলো।বিষন্নকে এরকম এলোমেলো অবস্থায় দেখে বিষন্নর মা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলের দিকে।বিষন্ন বাইকে উঠে আরেকটা সিগারেট ধরালো।
________________________
সমুদ্র অফিসের কয়েকটা ফাইলে চোখ বুঝাচ্ছে এমন সময় একজন ক্লার্ক এসে বললো তাকে অফিসের এডমিন প্যানেলে ডাকা হয়েছে।সমুদ্র হাতের কফিটায় শেষ চুমুক দিয়ে চলে গেলো এডমিন প্যানেল রুমে।সেখানে ম্যানেজার বসে আছেন,তার সাথে বসে আছে একটা ছেলে।সমুদ্র রুমে ঢুকতেই ম্যানেজার আনন্দিত গলায় বললো
” মিঃ সমুদ্র,কি অবস্থা, গোছগাছ কেমন চলছে?”
সমুদ্র জবাব দিলো ” এখনো গোছগাছ শুরু করিনি স্যার।অনেক সময়,একমাস আছে এখনো ”
” শুরু করে দাও,আমেরিকার মতো যায়গায় যাচ্ছো,সবাই তো যেতে পারে না।তোমার সৌভাগ্য তুমি যেতে পারছো।ভেবে নাও ওখানে গেলে তোমার লাইফ সেট।দু হাতে টাকা উড়াতে পারবে বুঝলে ”
” জি স্যার ”
” সকালে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলে, বিয়ে কি ঠিক হয়েছে? ”
” এখনো স্যার সময় ফিক্সড হয়নি ”
” বেশ ভালো।হানিমুন করবে আমেরিকায়।অহহ বলতে ভুলে গেছি,ইনি হলেন আমাদের কোম্পানির মালিকের একমাত্র ছেলে জুনায়েদ।”
ম্যানেজারের কথায় ছেলেটা সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দু’জনই হ্যান্ডসেক করলো।জুনায়েদ বললো
” আরেহ আপনি এখনো দাড়িয়ে কেন,বসুন ”
সমুদ্র ধন্যবাদ দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।ম্যানেজারের মুখটা এবার শক্ত হয়ে গেলো। তিনি কিছুটা সামনে ঝুঁকে এসে বললেন
” সমুদ্র, ”
” জি স্যার ”
” আমি তোমায় অনেক স্নেহ করি,তোমার সর্বদা মঙ্গল চাই,এটা তুমি বিশ্বাস করো? ”
সমুদ্রও এই বিষয়টা মানে।তার প্রতি ম্যানেজারের স্নেহ বরাবরই একটু বেশি।বলতে গেলে তার কারনেই জবটা পেয়েছে।ম্যানেজার বেল টিপে তিন কাপ কফির অর্ডার দিলেন।কফি চলে এলো।তিনি একটা কাপ সমুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলেন।সমুদ্রের জুনায়েদ নামের ছেলেটিকে কেমন যেন লাগছে।শুরু তাকেই নয়,ম্যানেজারকেও কেমন কেমন লাগছে।সমুদ্র বললো
” স্যর আমায় কি জন্য ডেকেছেন? ”
” দেখো সমুদ্র,আমেরিকায় যাওয়ার সাথে সাথে তোমার বেতন বেড়ে তিনগুণ হয়ে যাবে।তখন তোমার লাইফস্টাইল,ব্যাংক ব্যালেন্স থাকবে আকাশ ছোঁয়া।বলতে গেলে তোমার স্বর্ণযুগের শুরু ”
” এসব হঠাৎ কেন বলছেন ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার ”
” বলছি কারণ তোমার হাতে এখন দুইটা সুতো আছে।একহাতের সুতোয় তোমার ক্যারিয়ার, আরেক হাতের সুতোয় ফাঁকা। তোমায় একটি বেছে নিতে হবে ”
সমুদ্রর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো।বললো ” বেছে নিতে হবে মানে? ”
” সোজা কথা বলতে গেলে তোমায় একটা কাজ করতে হবে ”
” কি কাজ? ”
________________________
বিষন্নর চোখ,মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা।কলেজে আসার পথে হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তার বাইকে।ছিটকে পড়ে যায় নিচে।তারপ যখন জ্ঞান ফিরলো তখন থেকে একটা চেয়ার জাতীয় কিছুর ওপর বসে আছে।তার হাত পেছন থেকে বাঁধা।চোখে কালো কাপড়।বিষন্ন বেশ কয়েকবার কে কে বলে ডাকলো,কিন্তু কোনো উত্তর ভেসে এসো না।
কিছুক্ষণ পর বিষন্ন কারোর পায়ের শব্দ পেলো।কেউ একজন তার সামনে চেয়ার টেনে বসলো এমনটা বোঝা যাচ্ছে। এরপর ধীরে ধীরে চোখের কাপড়টার বাঁধন হালকা হচ্ছে।এক পর্যায়ে চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে নিলে বিষন্ন দেখলো তার সামনের চেয়ারে একজন বসে আছে।বিষন্ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে সামনে বসে থাকা………
চলবে?
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪২
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে নিলে বিষন্ন দেখলো তার সামনের চেয়ারে একজন বসে আছে।বিষন্ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে সামনে বসে থাকা মেয়েটির দিকে।মুখের টেপ সরিয়ে নিতেই বিষন্ন ভ্রু কুঁচকে হতবাক হয়ে বললো
” তুমি? ”
সামনে বসে থাকা মেয়েটা হাসলো।বিষন্ন মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার দিকে।মেয়েটা দেখতে আগের থেকেও আরো সুন্দর হয়েছে।ব্লাক হুডির পড়ায় মনে হচ্ছে কালো জলের মধ্যে একটা পদ্ম ফুল ফুটে আছে।মেয়েটি সামনে একটু ঝুঁকে এসে বললো
” কি মিঃ, এভাবে কি দেখো?নতুন করে প্রেমে পড়লা মনে হচ্ছে? ”
কথাটা বলেই মিষ্টি হাসলো।বিষন্ন মুখের মধ্যে একটা গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা করে বললো
” এসব কি হচ্ছে? ”
মেয়েটা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে বিষন্নর কোলে বসলো।হাত দিয়ে বিষন্নর নাক,ঠোঁ’ট স্পর্শ করে বললো
” কিছুই তো হয়নি,এখন হবে ”
” কি হবে?”
” ভালোবাসা হবে,আদর হবে, অন্নেক কিছু হবে বুঝছো ”
বিষন্ন বিরক্তির স্বরে বললো ” হাতের বাঁধন খুলে দাও,”
” ওমা!বাবুটার আদর করার এত্তো সখ?বলতে না বলতেই হাত খুলতে বলছো? ”
বিষন্ন মুখ ভোতা করে বললো ” আদর করতে আমার বয়েই গেছে।হাত ব্যাথা করছে ”
” ইশশশ, পিচ্চিটার হাতে ব্যাথা করছে? আগে বলবা তো,”
বলেই মিষ্টি চেয়ারের পেছনে গিয়ে হাতের বাঁধন খুলে দিলো।বিষন্ন উঠতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।ব্যাথায় মুখ থেকে অস্ফুটে স্বর ভেসে এলো।বিষন্নর এই অবস্থা দেখে মিষ্টি হো হো করে হাসছে।বিষন্নর পুরো মুখ ধুলোয় মাখামাখি। মুখের ভেতর গুড়গুড়ির মতো কিছু একটা ঢুকে গেছে।বিষন্ন থু থু করে সেগুলো মুখ থেকে বেড় করে দিচ্ছে, এই দৃশ্য দেখে মিষ্টি মেঝেতে পা ছড়ে বসে এক হাতে পে’ট চেপে ধরে হাসছে।বিষন্নর খুব রাগ লাগছে।কিন্তু মিষ্টির খিলখিল হাসি দেখে রাগটা মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেলো।
মিষ্টি বিষন্নকে ধরে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো।নিজের অবস্থায় এখন বিষন্নর নিজেরও হাসি পাচ্ছে।কপালের চামড়া কুঁচকে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো
” এতো হাসির কি আছে।কোমড়ের দড়ি খুলে দাও নি সেটা আমি জানি নাকি ”
মিষ্টি হাসতে হাসতে বললো ” হ্যা ঠিকি তো,তা দেখবা কিভাবে,আদর করতে বলছি জন্য তো একেবারে মন আনচান করছে ”
বিষন্ন বিরক্তির স্বরে বললো ” খেয়ে দেয়ে আরো ম্যালা কাজ আছে আমার ”
এটুকু বলে বিষন্নর মুখ বিকৃত হয়ে গেলো।মুখের মধ্যে এখনো কি যেন একটা গুড়গুড় করে এদিক,সেদিন যাচ্ছে। থুথু দিয়ে সেটাকে ফেলে বললো
” ইয়াক,এইসব কি ”
মিষ্টি ঠোঁ’ট বাকিয়ে বললো ” কি আর হবে, এখানে তো ইদুর,তেলাপোকা,টিকটিকির অভাব নাই,সেগুলোরই হবে ”
বিষন্ন চোখ বড়বড় করে বললো ” তুমি কি বলতে চাচ্ছো এগুলা…… ”
এটুকু বলতেই শুধু যে সময় লাগলো,কিন্তু ইয়াক শব্দে ব’মি করতে সময় লাগলো না।মুহুর্তেই পুরো ঘর ভাসিয়ে ফেললো।মিষ্টি হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।বিষন্নর অবস্থা দেখে দৌড়ে বাইরের দোকান থেকে একটা জলের বোতল নিয়ে আসলো।কোমড়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বিষন্নকে ধরে পাশের ঘরে আরেকটা চেয়ারে গিয়ে বসালো।ব’মি করতে করতে বিষন্নর নাজেহাল অবস্থা।এরমধ্যেই চারবার ওয়াক ওয়াক করে ঘর ভাসিয়ে ফেলেছে।
গোডাউন পরপর তিনটা নোংরা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে মিষ্টিরও যা তা অবস্থা। বিষন্নকে যতবারই অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় ততবারই সে ওয়াক ওয়াক শব্দে ঘর ভাসিয়ে ফেলে।বেচারা মিষ্টি করুন চোখে তাকায়,আবার অন্য একটা ধুলো ময়লার ঘরকে পরিষ্কার করতে হবে ভেবে বু’কটা হু হু করে ওঠে। পাশের ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে সেখানে বিষন্নকে নিয়ে গিয়ে বসালো ।বসানোর খানিক্ষন পর বিষন্ন মুখ সামনে নিতেই মিষ্টি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো
” প্লিজ প্লিজ প্লিজ আর না,এবার থামো,আর মেঝে পরিষ্কার করতে পারবো না আমি ”
এটকু বলেই মিষ্টি চুল টানতে টানতে মেঝেতে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলো।বিষন্ন আড় চোখে একবার তাকালো।অনেক চেষ্টার পরেও আর ব’মি আসছে না,মনে হয় স্ট্রোক শেষ।নইলে আবারো ব’মি করতো,আর মিষ্টিকে বাধ্য হয়ে অন্য আরেকটা ঘর পরিষ্কার করতে হতো।কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না।বিষন্ন তবুও কয়েকবার ওয়াক ওয়াক করলো,কিন্তু লাভ হলো না,প্রত্যেকবার ওয়াক শব্দ করার সাথে সাথে মিষ্টি ড্যাবড্যাব করে তাকায়।হয়তো সে মনে প্রাণে চাচ্ছে বিষন্ন যেন আর ব’মি না করে।
বমি করায় একটা সুবিধা হয়েছে।মিষ্টির দারা মাথা টিপে নিতে পারছে।যখন আর ওয়াক ওয়াক করার পরেও কাজ হলো না তখন বিষন্ন বললো
” মাথাটা কেমন ঘুরাচ্ছে।মাথা টিপে দিলে আর ঘুরাবে না।যদি মাথা টিপে না দেয় তাহলে আবারো হতে পারে ”
কথা শেষেই বিষন্ন আবারো মুখ থেকে ওয়াক শব্দ বেড় করলো।মিষ্টি ধরপর করে কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো
” এই না না, আমি মাথা টিপে দিচ্ছি, তবুও তোমায় পায়ে পড়ি আর করিও না ”
তারপর থেকেই মিষ্টি তার দূর্বল,নরম হাতে বিষন্নর মাথা টিপে দিচ্ছে। বিষন্ন অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে মিষ্টির কোলে মাথা রেখেছে।এই মুহুর্তে বিষন্নর মনে হচ্ছে ব’মি জিনিসটা ততটাও খারাপ না।বেচারি মিষ্টি প্রায় দুই ঘন্টা ধরে মাথা টিপে দিচ্ছে। হাত প্রচন্ড ব্যাথাও করছে,অবশ হয়ে আসছে বারবার।মিষ্টি করুন স্বরে বললো
” এখনো মাথা ঘুরাচ্ছে? দশ মিনিট পর আবার শুরু করি?আমার হাত লেগে গেছে ”
মিষ্টির কথা বলা শেষ হতে না হতেই বিষন্ন বললো “ওরে বাবারে মাথা কি ঘুরছে রে,কেমন ব’মি ব’মি পাচ্ছে “। নিরুপায় হয়ে মিষ্টি বিরতিহীন মাথা টিপেই যাচ্ছে। এতটাই বিরক্ত লাগছে যে ইচ্ছে করছে গলা টিপে ধরি।
বিষন্ন মিষ্টির কোলে শুয়ে মাঝে মাঝে চোখ হালকা মেলে মিষ্টির দিকে তাকায়।প্রত্যকবারই দেখে মিষ্টি গাল,মুখ ফুলিয়ে আছে।এইবার তাকালে দেখলো মিষ্টি রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে।বিষন্ন সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করলো।মিষ্টি বুঝতে পারছে, বিষন্ন এতোক্ষণ ধরে ঢং করছে।কেননা বিষন্ন তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছিলো।মিষ্টির ভিষণ রাগ হচ্ছে।রাগ কন্ট্রোল করতে কিছু একটার ওপর রাগটা ঢালতে হবে।মিষ্টি রাগ ঢালার পাত্র হিসেবে বিষন্নর গাল বেছে নিলো।
একটু পরপর মিষ্টি রুমাল জলে ভিজিয়ে বিষন্নর হাতে দিচ্ছে, আর বিষন্ন ভেজা রুমাল নিজের গালে ধরে রাখছে।মিষ্টি লাজুক ভঙ্গিতে বললো
” সরি বললাম তো,আমি তো আর ইচ্ছে করে কাম’ড় দিই নি বলো? ”
বিষন্ন ভেজা রুমাল গালে মালিশ করতে করতে বললো ” ইচ্ছে করে দাও নি তো কি এমনি এমনিই ভূতে এসে কা’মড়ে দিয়েছে? ”
মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো ” রেগে গেছিলাম,কন্ট্রোল করতে পারিনি,তাই তো ”
” সেজন্য গালে?আর একটু হলে ম’রেই যেতাম ”
মিষ্টি অন্যদিকে তাকিয়ে বললো ” গালে কাম’ড় দিলে কেউ ম’রে না,হুহ ”
বিষন্ন কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবে মিষ্টির ভয়ে মাখা মুখটা দেখতে বেশ লাগছে।এরমধ্যেই বেশ শব্দ করে কারো আওয়াজ শোনা গেলো।কেউ একজন জোরে জোরে বলছে
” সাবধান,পুলিশ তোদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে,একদম পালানোর চেষ্টা করলে বা যাকে কিডনাফ করেছিস তার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ক্রশ ফা’য়ার করবো ”
এটুকু শুনেই বিষন্ন, মিষ্টি তাকালো একে অপরের দিকে।ভয়ে মিষ্টির চোখ কপালে উঠে গেলো।বৈদ্যুতিক বেগে বিষন্নকে ঝাপটে ধরে মিষ্টি তোতলানো স্বরে বললো
” পু..পুলিশ কেন এখানে? আ..আমি তোমায় কখন কি..কি’ডনাফ করলাম? ”
বিষন্ন বেশ বুঝতে পারলো মিষ্টি ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে।মিষ্টির ভয় দ্বিগুণ করার জন্য বিষন্ন বললো
” আজকাল রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগা থাকে।একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে আসবে,আর পুলিশ খোঁজ করবে না? ”
মিষ্টি কাঁপতে কাঁপতে বললো ” আমি তো তোমাকে নিয়ে এসছি,অন্য কাউকে তো নিয়ে আসিনি,”
” পুলিশ তো জানে না তুমি আমাকে চিনো,”
” তাহলে এখন?তুমি ওদের বলে দাও তুমি আমাকে চিনো ”
বিষন্ন হাসতে হাসতে বললো ” এহহহ,আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নাই নাকি?”
মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” এই এইসব কি বলছো তুমি? তুমি স্বীকার না করলে তো পুলিশ আমায় ধরে নিয়ে যাবে ”
” যাক! তাতে আমার কি? উল্টে তোমার নামে আমি কিডনাফের দায় চাপিয়ে দিবো ”
মিষ্টি ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো ” তুমি মজা করছো আমার সাথে তাই না? ”
বিষন্ন দাঁত বেড় করে হেসে বললো ” জি না,আমি সত্যি বলছি “।
এরমধ্যেই আবার বাইরে থেকে আওয়াজ এলো।আওয়াজটা হয়তো অফিসারের।তিনি মনে হয় অন্যদের বলছেন ” এই তোমারা ভেতরে যাও,”।
অপরাধ ভঙ্গিতে গোডাউনের বাহিরে মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে।তাদের ঘিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।মিষ্টি আড় চোখে বিষন্নর দিকে তাকালো।বিষন্নর মুখ হাসিহাসি।পুলিশ অফিসার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো
” মেয়ে কি’ডনাপার? বাহ্ আজকাল দেখছি মেয়েরাও মা’ফিয়া দলে যোগ দিচ্ছে ”
মিষ্টি টলমল চোখে অফিসারকে বললো ” স্যার আমি কিড’নাপার না,ওনাকে জিগ্যেস করুন,আমরা একে অপরকে চিনি,বিশ্বাস করুন ”
মিষ্টি বিষন্নর দিকে হাত দেখিয়ে কথাটা বললো।অফিসার বিষন্নর দিকে তাকিয়ে বললো ” উনি কি ঠিক বলছে? আপনারা একে অপরকে চেনেন? ”
বিষন্ন পকেটে হাত গুঁজে স্বাভাবিক ভাবেই বললো ” অসম্ভব,আমি এইসব মাফিয়া মেয়েকে কিভাবে চিনবো ”
বিষন্নর কথায় মিষ্টি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো বিষন্নর দিকে।বিষন্নও মিষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো।রাগে মিষ্টির গা জ্বলতে লাগলো।
চলবে?