#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#সিজনঃ২
#পার্টঃ২
#লেখকঃজয়ন্ত_কুমার_জয়
মিষ্টি লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে চেয়ারে বসে আছে।কেননা ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই মিষ্টি বুঝতে পারলো সে বিষন্নর টি-শার্টটা পড়েই চলে এসেছে।মিষ্টিকে এরুপ অবস্থায় দেখে বিষন্নর বাবা,মা বেশ স্বাভাবিক আচরণ করলেন।যেমন মিষ্টি যখন লজ্জায় টিশার্ট টা টেনে লম্বা করছিলো তখন বিষন্নর মা একটা প্লেটে রাখা রুটিতে কিছু একটা দিতে দিতে বললেন
” ওমা দাড়িয়ে আছিস কেনো? আয় বস,বিষন্ন আসলো না? “।মিষ্টি খুব অবাক হলো।সে মনে করেছিলো তাকে কিছুটা বকা খেতে হবে।যতোই হোক,নতুন বউকে তো এইভাবে কোনো শাশুড়ি দেখতে চায় না।এইসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টি বিষন্নর মায়ের কাছে গিয়ে বললো
” আন্টি রুটিগুলা আমায় দাও,আমি বাটার লাগিয়ে দিচ্ছি “।বিষন্নর মা বললো ” এইসব আবার কি ধরনের কথা? ”
মিষ্টিজাতীয় অনেকটা ঘাবড়ে গেলো।মুহুর্তেই বিষন্নর মা মিষ্টির গালে আদর করে দিয়ে বললেন
” এখন থেকে মা বলে ডাকবি, বুঝেছিস?পাগলি মেয়ে একটা,বিয়ের পর কেউ আন্টি বলে ডারে? ”
বিষন্নর মায়ের এরুপ ভালোবাসায় মিষ্টি চোখের জল আঁটকে রাখতে পারলো না।মায়ের ভালোবাসা সে কখনো পায়নি।মিষ্টি চোখ মুছতে মুছতে বিষন্নর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো ” মা! “। প্রথমবারের মতো মা বলতে পেরে মিষ্টির যেন কান্না থামছেই না।বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে একপর্যায়ে বিষন্নর মা বললো
” হু অনেক হইছে কান্না,বিষন্নকে ডেকে নিয়ে আয় যা।অনেক বেলা হয়েছে তো।আমি ততক্ষণে রুটিগুলাতে বাটার লাগিয়ে ফেলি ”
মিষ্টি চোখের জল মুছে বললো ” আমায় দাও,আমি লাগিয়ে দিচ্ছি “।একথা বলে মিষ্টি রুটির স্লাইসে বাটার লাগাতে শুরু করলো।বিষন্নর মা গেলেন চা বানাতে।বাটার লাগা শেষে মিষ্টিও গেলো রান্নাঘরে। মিষ্টিকে দেখে বিষন্নর মা বললো
” বিলু খেতে এসছে? ”
মিষ্টি ইতস্তত করে বললো ” ইয়ে মানে,এখনো যাইনি ”
” এতো ভুলো মন হলে চলবে? ”
কথা শেষ না হতেই মিষ্টি এক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।মিষ্টির এরকম ছোটাছুটি কান্ড দেখে বিষন্নর মা মুচকি হাসলেন।
মিষ্টি রুমে এসে দেখলো বিষন্ন গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে।বিষন্নকে এভাবে বাচ্চাদের মতে ঘুমাতে দেখে মিষ্টি বিষন্নর কাছে বসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে কয়েকবার ডাকলো।ডাকে বিষন্ন শুধু হু,হা করছে,কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার কোনো নাম’ই নেই।মিষ্টি আবারো ডাকলো
” এই, উঠো,আন্টি খেতে ডাকছে তো!ওহহ সরি,বারবার শুধু আন্টি বলে ফেলতেছি।মা খেতে ডাকছে। এই ছোট গাধা,উঠো না কেন? কথা কানে যায় না? “।এতটুকু বলে মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলে ঘুমন্ত বিষন্নর দিকে।ঘুম থেকে তোলার জন্য মিষ্টির মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
*
হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্য করলাম একটা বিশাল পার্টির মধ্যে আমি চলে এসছি।আশপাশের সবাই কালো ব্লেজার পড়ে হাতে কাঁচের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।একটু সামনে ছোট পোশাক পড়ে কয়েকজন মেয়ে নাচছে,যদিও তাদের নাচ কেউ দেখছে বলে মনে হচ্ছে না।আমি পাশের টেবিল থেকে একটা আপেল হাতে নিয়ে একটা কামড় দিতে দিতে প্রচন্ড লজ্জায় পড়ে গেলাম।নিজরে এই অবস্থায় জন্য রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছি।এতো বড় পার্টিতে,এতো লোকজনের মধ্যে আমি দাড়িয়ে আছি,অথচ আমার শরীরে একটা সুতো পর্যন্ত নেই।নিজেকে পুরোটাই নেং’টু অবস্থায় দেখে আপেলটা ছুঁড়ে ফেলে দুইহাতে লজ্জা ঢাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম।তবে সেই চেষ্টা বেশিক্ষন করতে হলো না,কেননা আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার নেং’টু অবস্থাটা কারের’ই চোখে পড়ছে না।সবাই সবার মতো ব্যস্ত,আমি যে এই অবস্থায় দাড়িয়ে আছি সেটা কেউ লক্ষ্যই করছে না।বিষয়টা কি ঘটছে সেটা বোঝায় আগেই কোত্থেকে যেন একটা মাকড়সা এসে আমার নাকে কাম’ড় দিলো।সেই কাম’ড় দেওয়াটাও আমার কাছে অন্যরকম মনে হলো।কেননা মাকড়সাটা তার পা’ছা দিয়ে কাম’ড় দিয়েছে।প্রাণপণে চিৎকার দিলাম।চোখ মেলে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি।তার মানে এতোক্ষণের পুরে বিষয়টা আমার স্বপ্ন ছিলো?।ঠিকমতো চোখ মেলতেই দেখলাম আমার মুখের ওপর মিষ্টি ঝুঁকে আছে।মিষ্টিকে এভাবে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে উঠে বসলাম।মিষ্টি মাথা নিচু করে বললো
” একটু কাম’ড় দিছি জন্য এতো জোড়ে চ’ড় দিতে হবে? “।মিষ্টির কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।জিগ্যেস করলাম
” আমি কখন চ’ড় মা’রলাম? ”
মিষ্টি গাল ফুলিয়ে বললো ” এখন তো বলবাই ইচ্ছে করে মা’রোনি,”
মাথা চুলকে বললাম ” আমি একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।একটা পার্টিতে নে…… “।এতটুকু বলেই থেমে গেলাম।এই লজ্জার বিষয়টা বললে নিশ্চিত এটা নিয়ে সারাদিন মজা নিবে।প্রসঙ্গ পালটে বললাম
” আমি সত্যিই ইচ্ছে করে মা’রিনি,বিশ্বাস করো।স্বপ্নের একটা মাকড়সা নাকে কাম’ড় দিছিলো,ওইটাকে সরাতে গিয়ে তোমার গা’লে লে’গে গেছে হয়তো ”
মিষ্টি চোখ বড়বড় করে বললো ” তুমি আমায় মাকড়সা বললে? ”
” আরে কি মুশকিল,তোমায় মাকড়সা কেন বলবো? আমি তো মাকড়সাকে মাকড়সা বলছি,”
” কিন্তু কা’মড়টা তো আমি দিছি তাই না। সেদিক থেকে মাকড়সাটা তো আমিই হয়ে গেলাম ”
” হু, তাই তো ”
” তাই তো আবার কি হ্যা?গালে যে এতো জো’ড়ে চ’ড় মা’রলি,এই দেখ গাল টসটসে টমেটো হয়ে গেছে ”
আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে দেখলাম।ফর্সা গালে তিনটা ন’খের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম
” সরি গো,ব্যাথা পাইছো খুব,তাই না? দাড়াও আমি বরফ নিয়ে আসি “। বরফ আনতে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামতেই মিষ্টি আমার হাত ধরে জোড়ে একটা টান দিলো।ঘুমের ঘোর থাকায় সামলাতে না পেরে মিষ্টি উপরেই ধপ করে পড়ে গেলাম।আকষ্মিক পড়ে যাওয়ায় মিষ্টি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।মেয়েটাকে আজ অন্যরকম লাগছে।ওর ঠোঁ’টের কাছ থেকে লাল লাল চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললাম
” তোমায় আজ অন্যরকম লাগছে ”
মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে বললো ” কিরকম? ”
” বলতে পারবো না,তবে এতো আদুরে আগে লাগেনি, আজকেই প্রথম ”
” যত্তসব ঢং ”
” রোমান্টিক কথা ঢং মনে হচ্ছে তাই না? এখন তাহলে সিরিয়াস কথায় আসি ”
” কি সিরিয়াস কথা? ”
” নাকে কা’মড় দিছো কেন? ”
” এতোবার ডাকার পর না উঠলে কি কিস করবো নাকি?”
” হু,করবাই তো।জামাই বলে কথা ”
” এহহ,কে এলেন রে,এইটুকু পিচ্চি আবার জামাই ”
বলেই মিষ্টি বিদ্রুপ করে হাডতে লাগলো।ওর হাসিটাও আজ অন্যরকম লাগছে।বিয়ের পর হয়তো চেনা জিনিসগুলিও অচেনা হয়ে যাচ্ছে,তাই বোধহয় সব অন্যরকম লাগছে।মিষ্টির স্নিগ্ধতা আমায় প্রবলভাবে আকর্ষন করতে লাগলো।ধীরে ধীরে মিষ্টির মুখের কাছে ঝুঁকে এলাম।মিষ্টি হাসি থামিয়ে থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে,ঠোঁ’ট শুধু ক্ষণেক্ষণে কেঁপে উঠছে।ওর কাঁপতে থাকা ঠোঁ’ট দেখে আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলাম না।হারিয়ে গেলাম এক সুখের স্বর্গে।
খাবার টেবিলে বসে মা’কে ব্রেকফাস্ট দিতে বললাম।এমন সময় সাকিবের ফোন এলো।রিসিভ করতেই সাকিব বললো
” কই তুই? ”
” বাড়িতে,কেনো? ”
” আজ থেকে নাকি তুই ক্লাবে সবাইকে গান শিখাবি? সবাই অপেক্ষা করছে ”
” ওহহ শিট!তুই একটু ম্যানেজ করে নে,আমি ব্রেকফাস্টটা করেই বেড় হচ্ছি “।
ফোন কেটে দিতে দিতে মা ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসলো।খাবার দেখে মা’কে বললাম
” মা!এগুলা কি? তুমি জানেনা আমি সকালে ভাত খেতে পারিনা? ”
মা চোখ রাঙ্গিয়ে বললো ” আহারে আমার নবাবজাদা ছেলে রে,দুপুর দুইটা বাজতে চললো,আর ওনার কাছে এখনো সকাল আছে ”
ফোনে সময়টা চেক করে দেখলাম সত্যি সত্যিই দুইটা বাজে।এতোটা সময় পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।ঝুঁড়ি থেকে একটা কলা নিয়ে খেতে খেতে মা’কে বললাম ” মা আমি বাইরে খেয়ে নিবো।সকাল সকাল ভাত খেতে ইচ্ছে করেনা ”
” আবার বলতেছিস সকাল? ”
” আরে দুইটা বাজে তো কি হইছে,ঘুম থেকে যখন উঠবো তখনই সকাল,এটা তোমার বুঝা উচিত মা। আমি গেলাম ”
” এই দারা,বস এখানে,আমার কিছু কথা আছে ”
” তাড়াতাড়ি বলো,ক্লাবে আজকেই নতুন,সময় নেই আমার হাতে ”
” কিসব পাগলামি শুরু করছিস তুই? ”
” আমি কি করলাম? ”
” এইসব ক্লাব ফ্লাবে কি সময় পার করবি নাকি? তোর বাবার কি এই বয়সে এসেও ব্যাবসা সামলাতে হবে? ”
মায়ের কথায় আমার মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো।কঠিন স্বরে বললাম ” তুমি কি এখন আমায় ব্যাবসা সামলাতে বলছো?”
” তা না তো কি? ক্লাবও করবি,তবে ব্যাবসার ফাঁকে ফাঁকে, সমস্যা নাই তো ”
” দেখো মা,এইসব কথা আমায় আর কখনো বলবে না।আমি নিজে কিছু করতে চাই।আর এইসব ব্যাবসা আমার দাড়ায় হবে না,টাটা”
একপ্রকার রাগ দেখিয়ে বেড় হতে যাবো তখনি মিষ্টি বললো ” আমি রেডি “। পেছন ফিরে দেখলাম মিষ্টি শাড়ি পড়ে একটা স্যুটকেচ হাতে দাড়িয়ে আছে।বললাম
” রেডি তো আমি কি করবো? ”
আমায় কথায় মিষ্টি মুখ ভোতা করে দাঁড়িয়ে রইলো।মা ধমক দিয়ে বললো
” এইসব কি ধরনের কথা? বেয়াদবি কিন্তু বেশি হয়ে গেছে তোর ”
মায়ের রাগের কারণটা ঠিক বুঝলাম না।মাকে বললাম ” আমায় রাগ হচ্ছো কেন? ”
” ও তোর সাথে যাবে জন্যই তো রেডি হয়ে এসছে নাকি ”
মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম ” তুমি আমার সাথে কোথায় যাবে? ”
মিষ্টি কিছু বললো না।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।ওর মতলবটা ঠিক কি সেটা বুঝতে পারছি না।আমি ঘড়ি দেখলাম,অনেকটা সময় লেট হয়ে গেছে।মা বললো
” মিষ্টি যেখানে যাবে সেখানে নেমে দিয়ে তুই যা ”
বেশি কথা না বাড়িয়ে মিষ্টিকে আসতে বাইরে আসতে বলে বাইকের কাছে যেতেই মিষ্টি বললো ” এই স্যুটকেসটাও নিতে হবে ”
” স্যুটকেস নিয়ে বাইক কিভাবে চালাবো? ”
” আমি কি জানি,আমি তো চালাতে পারি না,পারলে বলতাম ”
এখন কোনো তর্কে গেলে আরো সময় নষ্ট হবে।উপর থেকে স্যুটকেসটা তুলতে গিয়ে আমার পিলে চমকে গেলো।মিষ্টিকে বললাম
” কি এর ভিতর? এতো ওজন কেন? ”
” তোমার সব জামাকাপড় এখানে ”
” এগুলা কোথায় নিয়ে যাবে? ”
” লন্ড্রিতে দিতে হবে।ওখানে দিয়ে একটু শপিএ যাবো ”
” এই হয়েছে! এইটার’ই দরকার ছিলো।আমি লন্ড্রি অব্দি রিক্সা ঠিক করে দিচ্ছি।তুমি শপিং করে এসো যাও ”
মা বললো ” সে কি কথা,ও একাই কেনাকাটা করতে যাবে নাকি? ”
মিষ্টি বললো ” থাক না মা,আমি একাই পারবো।তুমি যাও,ক্লাবের দেরি হয়ে যাচ্ছে ”
” আচ্ছা ঠিক আছে ”
স্যুটকেসটা নিয়ে টেনেটুনে যাচ্ছি তখনি মা আমার কান টে’নে ধরে বললো ” কোনো ক্লাবে যাওয়া নেই তোর।ওর সাথে কেনাকাটা করে তারপর যাবি।এর অন্যথা হলে দেখিস কি করি তোর।বিয়ে করার শখ টের পাবি ”
মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুখ চেপে হাসছে।আমার হেনস্তা হতে দেখে খুব মজা লাগছে তাই না?তোমাকেও মজা বুঝাবো আমি দাড়াও…..
চলবে?