বধুয়া
পর্ব – ৮
আজ মাহির নেই।অনেক দিন পর নিজের মতো করে শান্তিতে ঘুমাবো।আচ্ছা,আমি কেন মাহিরকে মেনে নিতে পারছিনা? এমন নয় যে আমি চেষ্টা করিনি। কিন্তু সেই একই যায়গায় এসে থমকে গেছি বারবার।
সবার সাথে কত সুন্দর ব্যবহার করে ছেলেটা, অথচ আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।ছোট বেলায় রাগ উঠলে কান্না করতাম, তখন মাহির আমার সামনে এসে বলতো-
হুহু… হুহু..
আমি কান্না থামিয়ে বলতাম – আম্মু দেখো মাহির ভাইয়া ভেঙ্গাচ্ছে !
আবার কান্না শুরু করতাম।
তখন মাহির বলতো – ভেঙ্গালাম কখন! কুহু,কুহু বলে ডাকছি, কিন্তু তোর কান্নায় আমারো সুর পাল্টে হুহু – হুহু আসছে!
তখন আমার কান্না দ্বিগুণ বেড়ে যেত!
সেসব কথা মনে পড়লে নিজেরই হাসি পায়!
বিয়ের পর এই প্রথম মাহিরকে ছাড়া ঘুমাচ্ছি।ভেবেছিলাম শান্তিতে ঘুমাবো, কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। মাহির কি ঘুমিয়ে পড়েছে?একটা ফোন ও তো দেয়নি! মোবাইলটা হাতে নিয়েও রেখে দিলাম।
এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম আসছে না। আমি কেন মাহিরকে নিয়ে ভাবছি এতো!
ওকে মিস করছি কেন?
হয়তো একটা অভ্যাস হয়ে গেছে তাই ওর কথা মনে পড়ছে – নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর মেলাচ্ছি।
এমন সময় মাহিরের ফোন-
– হ্যালো।
– কিরে ঘুমাসনি?
– হা ঘুমেই ছিলাম, ফোনে ঘুম ভেঙে গেছে।
– মিথ্যে বলছিস কেন?
আমি অবাক হয়ে – কি মিথ্যে বললাম??!
– তুই তো ঘুমাসনি,তুই আমাকে মিস করছিলি।চিন্তা করিস না দুদিন পরে চলে আসবো।
– তোমাকে আমি মিস করতে যাবো কেন?সত্যিই ঘুমাচ্ছিলাম।
– মিথ্যে বলা আগে ভালো করে শিখে নে।
– মানে কি?
– মানে হচ্ছে তুই আমার কাছে মিথ্যে বললে ধরা পরে যাস। মনে করে দেখ আজ পর্যন্ত যতবার মিথ্যা বলার চেষ্টা করেছিস ঠিক ধরা পড়েছিস।
তুই যে এখন মিথ্যা বলেছিস তার একটা প্রমাণ দেই?
– কি প্রমাণ?
– তোর ফোনে রিং হবার সাথে সাথেই রিসিভ করলি।এর মানে জানিস?
– কি?
– তুই ঘুমাসনি বরং আমার ফোনের আশা করছিলি । ঠিক বলিনি?
– তোমার তো দুনিয়ায় সবই ঠিক মনে হয়। আমি মোটেই অপেক্ষা করিনি, তবে পুরোপুরি ঘুমিয়েও পড়িনি।
রাখো এখন ঘুমাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে, ঘুমা।
মাহির ফোন রেখে দেয়।
এই লোকটা দেখি মানুষের ভেতরের খবরও জানে! অদ্ভুত!
পরদিন বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম।
নীরাকে নাস্তা করার সময় জিজ্ঞেস করলাম – আজকে কি আছে বলতো?
– উফফ! একটু ধৈর্য ধরো,দেখতে পাবে।
– সকাল হয়ে গেছে কখন দেখবো?
– তুমিতো বাচ্চাদের মতো শুরু করলে। আমি বিকালে বের হবো, তখন ফিরলেই দেখতে পাবা।
– বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আসবি নাকি? দেখ, মামণি যদি জানতে পারে মেরেই ফেলবে!
– মামণি জানবে কেন? আর যদি জেনেও যায় তবে তুমি ম্যানেজ করবে।
আল্লাহ! বলে কি মেয়ে! – সোনা বোন আমার এই ভুল টা করিস না। তোর ভাইয়া মেরে ফেলবে।
নীরা আমার কথায় পাত্তাও দেয়নি।বিকেলবেলা এসে বললো – ভাবি পাঁচ হাজার টাকা দাও।
– পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কি করবি?
– দাও না।
– বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করবি তো আমার টাকায় কেন?
– ভাবির টাকায় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং এর অন্যরকম অনুভূতি নিতে চাইছি,তাই।
– আমার কাছে এতো টাকা নেই।
– কত আছে?
– তিন হাজারের মতো।
– তাহলে দুই হাজার দাও।
আমি নীরাকে তিন হাজার টাকাই দিলাম।
টাকা নিয়ে নীরা চলে গেছে।
কি আছে কপালে আল্লাহ ই জানেন!
আমি একা একা কি করবো ভেবে রাহেলা খালার সাথে রাতের রান্নাটা সেরে ফেলি।এই বাড়িতে আজ প্রথম রান্না করলাম।মামণি একদিনও আমাকে রান্না করতে দেয়নি।কিছু বললে উনার সেই এক কথা- যতদিন সুস্থ আছি রান্নাবান্না করি,বুড়ো হয়ে গেলে তখন তুই রান্না করে খাওয়াবি।।
সন্ধ্যার আগে নীরা তানহাকে নিয়ে ফিরে। দরজা খুলে ওদের দেখে আমি পেছনে উঁকি দিচ্ছিলাম,সেটা দেখে তানহা বললো –
‘আপ্পি, তোর আমাদের দেখে পোষায়নি? পিছনে কাকে খুঁজছিস?’
নীরা বললো – আমার বয়ফ্রেন্ড! ভাবি ধরে নাও এটাই আমার বয়ফ্রেন্ড!
– মানে কি? তুই না বললি..
– বলেছিলাম তো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আসবো, কিন্তু রাস্তায় এত্তো এত্তো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে কাকে ফেলে কাকে নিয়ে আসবো! আই মিন বয়ফ্রেন্ড করবো বুঝতে পারছিলাম না।তখন তানহার সাথে দেখা তাই ওরেই নিয়া আসছি।
ভালো হইছে না?
– হুম বুঝেছি। খুব ভালো হয়েছে। তা প্ল্যান টা কি শুনি? তোরা দুইটা একসাথে, নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে।
হাতের ব্যাগগুলো সামনে রেখে ওরা সোফায় বসে।
– ছিঃ ভাবি! অবশেষে তুমিও ভাইয়ার মতো আমাকে মতলব বাজ বললে! বলবেই তো!
বলবেই তো –
” যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি,
এখন তুমি জামাই পেয়েছো; পর হয়েছি আমি!!”
বুঝলি তানহা কপাল কপাল! সবই কপাল!
– হইছে হইছে ড্রামা কুইন! আর নাটক করতে হবে না, এবার ঝেড়ে কাশো।
– ‘এহহয়ো এহহয়ো!’ইচ্ছে করে কয়েকটি কাশি দিয়ে বলে – কাশলাম।
– যা শুনবো না তোদের কথা।আমি চললাম।
আমাকে চলে যেতে দেখে নীরা হাত ধরে টেনে বলে- রুমে চলো কথা আছে।
তার আগে খালাকে ডাকো
– খালা…খালা…
– খালাকে ডাকছিস ক্যান?
– রাতে রান্না করতে মানা করো।খাবার নিয়ে আসছি।
– খুব ভালো করেছো।তা সেটা যদি আমাকে আগে বলতে তাহলে এতো খাবার গুলো নষ্ট হতো না।
– নষ্ট হবে মানে? রান্না করে ফেলেছো নাকি?
– জি!!
– নীরা ডাকছো আমারে?
– হা।এই নাও এটা তোমার বিরিয়ানি। আর রাতের খাবার টা ফ্রিজে রেখে দাও তাহলে নষ্ট হবে না।
– তোমরা খাইবা না?
– আমরা আমার রুমেই খাবো,তুমি চিন্তা করো না। এখন খুব খিদা লাগছে নাস্তা দাও।
– আচ্ছা দিতাছি।
নীরা, তানহা ব্যাগগুলো সযত্নে তুলে রুমের দিকে চললো।আমিও গেলাম।
নীরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে ব্যাগ খুলে বলে –
দেখো!
দেখে আমার চোখ কপালে।
শুধু এটা না আরও দেখো- গ্রীল, চিলি পরটা, চিপস! সব বের সামনে রাখলো।
– তোরা পাগল হইছিস?? কেউ যদি জানে মেরে ফেলবে।
চলবে…..
# Munni