বধুয়া
পর্ব- ৯
উমহহহ! আপ্পি তর ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে সদ্য আসমান থেকে নেমে আসছিস!
– ঠিক বলেছিস! আমরা মনে হয় সব ভুলে গেছি!!
নীরাও তানহার কথায় সুর মেলায়।
চোখ বড় বড় করে বললাম – কি করেছি আমি ?
তানহা বললো- আব্বুর সিগারেট চুরি করেছিলি মনে নাই? নিজেও খেয়েছিস আর আমাদেরও খায়িয়েছিস জোর করে!
তোর কথা তো কেউ জানেনি কিন্তু মধ্যে পড়ে আমি আর নীরা কি মাইরটাই না খেলাম!
নীরা বললো- এই জীবনে কোনো দিন এমন মাইর খায়নি।মামা দরজা বন্ধ করে কি পিটানি দিলো! মনে পড়লে চোখ দিয়ে পানি আসে।
আর তুমি ভালো মানুষের মতো আমাদের কি উপদেশ! আবার মামার কথায়ও তাল মেলাচ্ছিলে।সব মনে আছে।
– এতো মাইর খেয়েও তোদের হায়া হয়নি।এবার যদি জানতে পারে তবে জবাই করবে! জবাই!
– আগে পড়তাম ক্লাস সেভেনে,বোকাসোকা ছিলাম তাই ধরা পড়ে গেছি।এখন তো সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি।অনেক দিনের শখ!এর জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার সুযোগটা ছেড়ে দিয়েছি। কেউতো নেই ধরা পড়বো কিভাবে?- নীরা ভ্রু নাচাতে থাকে।
– দেখ আমি তোদের সাথে নেই। আগের কথা আগেই শেষ, এখন যদি আমি এমন করি আর কেউ জানতে পারে কি কেলেঙ্কারি হবে বুঝতে পারছিস?
তানহা বিরক্ত হয়ে বললো – আচ্ছা তোর খেতে হবে না। আমি আর নীরা খাবো তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি।
রাত দশটায় নীরার রুমে আয়োজন। আমি অবশ্য তাদের সাথে গ্রীল খাবো, অন্য কিছুতে হাতও দিবোনা।
রাহেলা খালা কোনো কাজ না থাকায় খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছেন।
প্লেট, গ্লাস সব নিয়ে আসে তানহা আর নীরা।আমি প্লেট সাজিয়ে দিলাম। নীরা দরজা বন্ধ করে এসে ফ্লোরে বসে পড়ে।
আমরা গোল হয়ে ফ্লোরে বসলাম।
নীরা ওয়াইনের বোতল টা বের করলো। দুইটা গ্লাসে অল্প অল্প ঢেলে কিছু পানি মিশিয়ে নিলো, সাথে এক টুকরো বরফ ছেড়ে দেয়!
নীরার সাজানো দেখে বললাম –
‘বাহবা! যেভাবে রেডি করছিস মনে হচ্ছে আগে অনেক খেয়ে অভ্যস্ত!’
– আরে এটা এভাবেই খেতে হয়।
– এটার নাম কি?
– রেড ওয়াইন। Imported!
তানহা বললো – সাত হাজার খসে গেলো!
আমি চোখ বড় করে বললাম – এটার দাম সাত হাজার!!
– আরে সাত না পাঁচ! অন্যান্য সব মিলিয়ে সাত হাজার।
– একটা বোতল ওয়াইন পাঁচ হাজার দিয়ে নিয়ে আসছিস !! আমার কাছ থেকে এজন্য টাকা নিয়েছিস?
তানহা বলে উঠে – জীবনে একবারই খাবো তাই অবশ্যই ভালো, দামিটাই এনেছি। আর তুই একা দিয়েছিস নাকি! তোর তিন আর আমরা দুজনে দুই+দুই, চার দিয়েছি।
– তোদের দুইজনে কান্ড দেখে আমি টাস্কিত হতেও ভুলে গেছি!
– ভাবি, তুমি গ্রীল আর চিপস খাও আর টাস্কিত হতে চেষ্টা করো। তোমার এটার স্বাদ নিতে হবে না।ভয়ে ভয়ে আফসোস নিয়ে বসে থেকো সারাজীবন!
নীরার খোঁচা আমার খুব লাগলো! আসলেই তো, কত শখ ছিলো একবার এটার স্বাদ নেয়ার অথচ সামনে পেয়েও সুযোগ হারাচ্ছি?? আসলে আগে একটু ভাব নিলাম, আমি তো ওদের বড়।সরাসরি তো রাজি হতে পারিনা। তাছাড়া ধরা পড়লেও বাঁচার একটা স্কোপ রাখতে হবে না?
তাই মিনমিনিয়ে বললাম –
– আমিও খাবো!
– সত্যি খাবে?
– হুমম।
– দাঁড়াও রেডি করে দিচ্ছি।
নীরা আমার গ্লাস রেডি করতে যায়,অকে বাধা দিয়ে আমি নিজেই ঢেলে নিই।সাথে এক টুকরো বরফ।
– ভাবি একটু পানি মেশাও।
– পানি মেশাতে হবে না বরফ গলেই পানি হবে।
মুখে দেবার সাথে সাথে যেন গলা জ্বলে যাচ্ছে।ঝাজালো এই তরলটা পেটে পড়ার সাথে সাথে মনে হলো সব উল্টে আসছে! তানহা তো ফেলেই দিলো।নীরা আমাদের দেখে ভয়ে ভয়ে মুখে দিয়ে বললো – ওয়াক!
এটা মানুষ খায়!
কিছুক্ষণ পরেই সামলে উঠে বলি –
ধীরে ধীরে খেতে হবে, প্রথম অভিজ্ঞতা বলে কথা!
– ঠিক! মনে রেখো এটার স্বাদ ই এমন। এতো দাম দিয়ে এনে ফেলা যাবে না।
নীরা টিভি অন করে দিলো।
‘রাজা হিন্দুস্থানি’ ছবি চলছে।গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছি আর এদিকে গ্রীল,চিলি-পরটা খাওয়া প্রায় শেষ, ফাঁকে ফাঁকে চিপস খাচ্ছি।দু-একবার গ্লাসেও বিকৃত মুখে চুমুক দিলাম।আমার গ্লাসটা খালি হয়ে গেছে।
– নীরা, একটা বিষয় খেয়াল করেছিস? জিনিসটা কড়া কিন্তু নেশা হচ্ছে না। আমার কথা শুনে তানহা বললো – ঠিক! চারজনে এক বোতল খেলে নেশা হবে কিভাবে?
নীরা বললো – নেশার জন্য তো খাইনি।
ভাবি, মাথা ঝিমঝিম করে ক্যান?
– নেশা হইলে ঝিমঝিম করতো না। তানহা উত্তর দেয়।
– ভাবি তোমার ঝিমঝিম করে না?
-হিহিহি…. নেশা কেমনে অইবো? আমরা তো ভেজাল খাইছি! পিওর ভেজাল।
– ‘এটা ভেজাল? ‘ওয়াইনের বোতল দেখিয়ে।
– এটা ভেজাল হবে ক্যান? পানিতে ভেজাল! পানি মিশিয়ে এটাকে ভেজাল করেছি।
– সত্য কথা বললে তুমি ভাবি… !এই দেশের পানিতে ভেজাল। এই ভেজাল পানি খেয়েই যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দিকে! ডায়রিয়া হচ্ছে, আমাশয়, নিউমোনিয়া, হুপিং কাশি,এইডস হচ্ছে! অথচ কেউ নজর দেয় না! ‘
– নীরা, তোর কথায় মারাত্মক যুক্তি আছে! আমি ভেবে দেখলাম। এখনই সময়, আমাদেরই কিছু করতে হবে!
– কি করতে হবে?
-আন্দোলন হবে, যুদ্ধ হবে। ভেজাল পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ! ভেজাল পানি ঘুড়িয়ে দিবো,ভেঙে দিবো।
– তাইতো! কিন্তু যুদ্ধ করলে যুদ্ধ বিমান লাগবে! মেশিনগান, কামান লাগবে …বোমা.
বুমমম…
– অনেক খরচ লাগবে, বুঝছিস নীরা।
নীরা বললো -‘ দুইশত নয় যোগ ১, মোট তিনশো উনিশ টাকা আছে। ‘
-অনেক টাকা! যুদ্ধ বিমান কিনবো-কামান কিনবো। উঠ।
আমি টলতে টলতে দাঁড়িয়ে নীরার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করছি।ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছি না।
নীরাও উঠে দাঁড়ায় সামনে পেছনে দুলছে!
তানহা কই.. উঠ! চল…
আমাদের যুদ্ধ চলবেই, চলবে… নীরা গান ধরে।।
চলবে….
# Munni