শ্যামাঙ্গণা-১১,১২
১১
————
বারান্দায় দাড়িয়ে আছে হৈমন্তী। তার পরনে এখনও ঝুমুরের পড়িয়ে দেওয়া কালো শাড়িটা। ঝুমুর কিছুক্ষণ আগেই তাকে জানিয়ে বেরিয়ে গেছে। হৈমন্তীর বিয়ের বেশিক্ষণ হয়নি। এইতো ঘণ্টা খানেক আগেই তিন কবুল পড়ে বিয়েটা হয়েছে তার। ঘরে এখনও সকলে বিয়ের খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করছে। হৈমন্তীর মা মিস মারিয়াম পুরো বিল্ডিংয়ে মিষ্টি দিয়েছেন মেয়ের বিয়ের খুশিতে।
বিয়েটা করার কারণে সকলের মনে যে খুশির দমকা হাওয়া লেগেছে তাতে সন্দেহ নেই হৈমন্তীর। এই বিয়ে নিয়ে হৈমন্তীর মনে না আছে কোনো ফ্যান্টাসি না আছে কোনো অভিযোগ। সে বিয়েটা করেছে তার মায়ের খুশির জন্য। আজ পর্যন্ত মিস মারিয়াম তাদের দুই ভাই বোনের কাছে কিছুই চাননি। যতটা সম্ভব নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে দুজনের সব ইচ্ছাই পূরণ করেছেন।
তাই হৈমন্তী মিস মারিয়ামের খুশির জন্যই বিয়েটা করে নিয়েছে। তাছাড়া তার আলাদা কোনো পছন্দও ছিলনা এবং কোনওদিন প্রেমও করেনি। তাহলে আর বিয়েতে আপত্তি করে লাভ কি ? যেই মা তাদের খুশির জন্য এতকিছু করেছে তার জন্য এতটুকু তো করাই যায়। তবে হৈমন্তী এটা বুঝতে পারছে না তাদের কলেজের অতীব মাত্রায় সুদর্শন এই প্রফেসর বেছে বেছে তার মতো অমানিশাকেই কেন বিয়ে করলো ?
হৈমন্তীকে স্কুল জীবনে তার গায়ের রঙের জন্য কালাচাঁদ বলে ডাকতো। যদিও কালাচাঁদ বলে আদৌ কোনো চাঁদ আছে কিনা তার জানা নেই তবে এই ডাক যে তাকে উপহাস করতেই ডাকা হয় সেটা তার অবশ্য জানা। ঝুমুর উজ্জ্বল শ্যামলা হলেও হৈমন্তী পুরোই শ্যামলা। যার কারণে ঝুমুরকে তার গায়ের রঙের জন্য যতটা হেনস্থা হতে হয়েছে হৈমন্তীকে তার থেকে দ্বিগুণ হেনস্থা হতে হয়েছে। এখন এহেন শ্যামলা, কালো মেয়েকে যদি কোনো সুদর্শন ছেলে বিয়ে করে তাহলে ব্যাপারটা কিরকম ধরে নেওয়া উচিত ?
আসিফ কি কোনো চক্রান্ত করে বিয়ে করেছে ওকে ? ও কি বিয়ের পর হৈমন্তীর কিডনি, লিভার সব বিক্রি করে দিবে ? ওর কি তাহলে অঙ্গ পাচারের ব্যবসা আছে ? এই প্রশ্নগুলো হৈমন্তীর মনে এসেও যেন উধাও হয়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে না আসিফ এমন ধরনের লোক। আসিফ ওদের সাবজেক্ট প্রফেসর তাই সেইদিক দিয়ে ও আসিফকে চিনে। এই ধরনের কাজ করার লোক আসিফ না। সে অত্যন্ত সাধারণ গোছের মানুষ। তাহলে সুদর্শন এই আসিফ জোহানের আসল উদ্দেশ্য কি ?
হৈমন্তী তার ভাবনায় মশগুল থেকে লক্ষ্য করলো সন্ধ্যে নেমেছে। প্রকৃতি নিজেকে মুড়িয়েছে অমানিশ ঘুটঘুটে অন্ধকারে। ঘর থেকে কারোর কথাবার্তার আওয়াজও আর আসছে না। হয়তো আসিফের বাবা মা চলে গেছে। উনারা চলে গেছে ভাবতেই হৈমন্তী লজ্জায় পড়ে গেলো। উনারা চলে গেলো আর ও একবারের জন্য গিয়ে দেখার প্রয়োজনও মনে করলো না। এতটাই মশগুল ছিল সে।
হৈমন্তী বারান্দা দিয়ে লক্ষ্য করলো আসিফের বাবা মা দাড়িয়ে আছে। মিস মারিয়ামের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। তাদের বিদায় জানানো উচিত মনে করে দ্রুত বারান্দা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো হৈমন্তী। পিছন ফিরতেই হৈমন্তী একটা বড়সড় কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেল। ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে যাচ্ছিল তবে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলো। ধাক্কা খেয়ে মনে হচ্ছে কপালের দিকটাতে লেগেছে।
ব্যথায় হৈমন্তী উফ শব্দ করে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট অন করল। লাইটের আলোয় দেখলো কিয়ৎক্ষণ পূর্বে যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে সেই আসিফ জোহান তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তী খানিকটা পিছিয়ে গেলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ভ্রু কুচকে বললো ‘ আপনি এখানে ? আপনি না বেরিয়ে গেছিলেন ? ‘
হৈমন্তী আমেনা বেগমের কাছে শুনেছিল বিয়েটা করেই আসিফ বেরিয়ে যাবে কারণ তার কাজ আছে। কিন্তু এখন আসিফকে দেখে সে অবাক। সে তো জানে আসিফ বেরিয়ে গেছে। তাহলে এখানে কি করছে ? হৈমন্তীর কথায় হাসলো আসিফ। বললো ‘ হুম বেরিয়েছিলাম কিন্তু পরে মনে হলো কিছু একটা ফেলে গেছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। জিনিসটা না নিলে বাইরে বেরিয়েও যে আমার মন টিকবে না। ‘
আসিফের কথায় হৈমন্তীর কুঞ্চিত ভ্রু সোজা হলো। হৈমন্তী বলল ‘ ফেলে গেছেন ? কি ফেলে গেছেন ? ‘
পরমুহূর্তেই টের পেলো আসিফের উষ্ণ নিশ্বাস ওর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। আসিফ তার ঠোঁটের নরম স্পর্শ এঁকে দিয়েছে হৈমন্তীর ললাটে। আসিফের কাজে হৈমন্তী অসস্তিতে পড়ে গেলো। আসিফ ফিসফিসিয়ে বললো ‘ আমার হৈমকে। এইযে এখন তাকে ছুয়ে দিলাম, এখন আমার বাড়ি ফিরেও শান্তি। ‘
আসিফের কথায় হৈমন্তীর মনে হলো তার সমস্ত সত্তা জুড়ে ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত বয়ে গেছে। শরীরটা হঠাৎ করেই কাটা দিয়ে উঠছে। অথচ তার গলাটা শুকিয়ে কাঠ। মাথাটা কেমন করছে। তবে সেই সঙ্গে সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই সুদর্শন আসিফ জোহানের তাকে বিয়ে করার পিছনের কারণ সে ধরে ফেলেছে।
হৈমন্তীকে ছেড়ে পিছিয়ে গেলো আসিফ। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পা বাড়ালো তবে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলো ‘ নিচে আসুন বিবিজান। আম্মাজান তার একমাত্র ছেলের বউকে দেখার ইচ্ছে পোষণ করেছে। ‘
আসিফ বেরিয়ে গেছে। ওর পিছন পিছন হৈমন্তীও বেরিয়েছে। ওরা বর্তমানে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তীকে নামতে দেখে আমেনা বেগম খুশি হলেন। হৈমন্তীর ললাটে চুমু খেয়ে বললেন ‘ ভালো থেকো মা আর এই মায়ের কথায় কিছু মনে করো না। আসলে আমার নিজের কোনো মেয়ে নেই তো তাই মেয়ে পাওয়ার লোভে এত তাড়াতাড়ি হুট করে অনুষ্ঠানাদি না করেই বিয়ে দিয়ে দিলাম। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে অনুষ্ঠান করবো। ‘
আমেনা বেগমের কথায় সিরাজ সিকদার হাসলেন। বললেন ‘ আমার মেয়েকে তোমার এরকম মনে হয় নাকি ? ও এরকম কিছু মনেই করেনি বাজি লাগাতে পারি। সন্দেহ হলে হৈমন্তীকে জিজ্ঞেস করো। ‘
সিরাজ সিকদারের কথায় হৈমন্তী হাসলো। মাথা নেড়ে বললো ‘ আব্বা ঠিক কথা বলেছেন আম্মা। আমি আসলেই কিছু মনে করিনি। আপনার মতো মা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। আপনাদের পেয়ে আমি ধন্য। ‘
হৈমন্তীর কথা শুনে আমেনা বেগম তার চোখের কোণে লুকিয়ে থাকা অশ্রুগুলো মুছলেন। নিজের একটা মেয়ে না থাকার এতকালের হাহাকারের আজ যেন অবসান ঘটেছে। মেয়ের অভাবে খা খা রোদ্দুরে শুকিয়ে যাওয়া বুকে বৃষ্টি নেমেছে। উনি মিস মারিয়ামের দিকে তাকিয়ে হৈমন্তীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ‘ আমার মেয়েকে দেখে রাখবেন আপা। মেয়ে বেশি জ্বালালে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। তারপর আমি আবার ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু আপনি রাগ করবেন না। আপনি রাগ করলে আমার মা যে অনেক কষ্ট পাবে। ‘
মিস মারিয়াম হাসলেন আমেনা বেগমের কথায়। আমেনা বেগম আরেকবার একমাত্র পুত্রবধূর ললাটে চুমু খেয়ে স্বামী,পুত্র নিয়ে এগিয়ে গেলেন। আমেনা বেগমদের এগিয়ে দিতে মিস মারিয়াম,হৈমন্তী এবং ফাহমানও এগিয়ে এলো। আসিফ গাড়িতে উঠতেই ফাহমান তাকে বিদায় জানিয়ে ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ফোনে ফ্লেক্সিলোড করা দরকার।
আসিফ গাড়িতে উঠে বসেছে। এখন গাড়ি স্টার্ট দিবে সে। গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে স্টার্ট দিলো সে। তবে ধুলো উড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে এক পলক হৈমন্তীকে দেখলো। ঠোঁট নাড়িয়ে নিঃশব্দে কিছু একটা বললো। তারপর সন্ধ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে মস্ত বড় গাড়িটা নিয়ে হারিয়ে গেলো। হৈমন্তী শুধু একমনে চেয়ে রইলো সেদিকে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এসেছে।
নিজের কাজে নিজেই হতবাক হৈমন্তী। ও কাদঁছে নাকি ? কার জন্য ? যার সঙ্গে মাত্র বিয়ে হলো সেই আসিফ জোহানের জন্য ? এও সম্ভব ? কয়েক মুহূর্তেই সে কিনা ওই অপরিচিত লোকটার প্রেমে পরে গেলো। হৈমন্তীর বিশ্বাস হতে চাইলো না তবে ও বুঝলো এ যে সে প্রেম নয়। কঠিন প্রেম এটা। নাহলে লোকটার প্রস্থানে তার হৃদয় কেন কাদবে ? তার মনটা কেন বলবে যে লোকটা ফিরে আসুক ?
প্রেম বুঝি কয়েক মুহূর্তেও ঘটে যায় ? হ্যাঁ ঘটে তো। প্রেম কখনোই ঘটা করে আয়োজন করে হয় না। প্রেম বরাবরই হুট করে অপ্রত্যাশিতভাবে হয়ে যায়। যেমনটা লাভ এট ফার্স্ট সাইটের ক্ষেত্রে ঘটে। প্রেমের সমস্তটাই লাভ এট ফার্স্ট সাইট। এর কোনো লং কিংবা সেকেন্ড সাইট নেই। প্রেম এমনই ভাবে হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে কোনো এক মহেন্দ্র ক্ষণে ঘটে যায় সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরভাবে।
—-
কলেজের জন্য তৈরি হয়ে সিড়িতে নেমেছে ঝুমুর। রোজকার মতোই ফাহমান তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। ফাহমানকে দেখামাত্র ঝুমুরের চোখে মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়লো। ও কেটস পড়ে বড় রাস্তায় উঠে এলো। বড় রাস্তায় উঠতেই ফাহমান বললো ‘ হৈমন্তীর বরকে তোমার কেমন লেগেছে ? ‘
‘ সোজা কথায় বলতে গেলে আমার ভালই লেগেছে। যদিও ভাইয়ার সাথে আমার তেমন কথা হয়নি কিন্তু যতটুকু কথা হয়েছে আমার তাতেই মনে হলো উনি হয়তো আপুকে ভালোবাসেন। এজ ইউ নো আপু আর আমার গায়ের রং শ্যামলা কাজেই আমাদেরকে কেউই বিয়ে করতে রাজি হবে না। ভাইয়া হয়তো ভালোবাসেন বলেই বিয়ে করেছেন আপুকে। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমানের ভ্রু কুচকে গেলো। ও বিরক্তি গলায় বললো ‘ গায়ের রং শ্যামলা বলে বিয়ে হয়না কে বলেছে তোমাকে ? তাহলে আমি কিসের জন্য রোজ তোমার সঙ্গে টাইম পাস করি ? তোমার কি আমাকে ওইসব ফাউল ছেলে মনে হয় যারা ফুর্তি করতে মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটায় ? ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুর প্রথমে থমকে গেলো, পরমুহূর্তে চমকে গেলো এবং সবশেষে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো। হাসতে হাসতে বললো ‘ ডাক্তার সাহেব দেখি রেগে যাচ্ছেন। আমি কখন বললাম আমি আপনাকে ওই ধরনের মানুষ মনে করি ? আরে বাবা আপনার ব্যাপার তো আলাদা। আপনি আর অন্য ছেলেরা কি এক ? ‘
ঝুমুরের কথায় শান্ত হলো ফাহমান। এতক্ষণ তার ভিতরে বিরক্তির যে উদ্রেগ ছিল তা কমে এসেছে। ও শান্ত ও ধীর কণ্ঠে অপরাধী গলায় বললো ‘ দুঃখিত, তোমার সাথে ওভাবে আমার কথা বলা ঠিক হয়নি। ‘
ঝুমুর হাসলো ফাহমানের কথায়। বললো ‘ আপনি একটু স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়ান, নড়বেন না। ‘
ঝুমুরের কথায় হতবাক হলেও ফাহমান সটান দাড়িয়ে রইলো। ঝুমুর ফাহমানের চোখের নিচ থেকে ঝরে যাওয়া পাপড়ি হাতের মুঠোয় তুলে নিলো। তারপর সেই পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো ‘ এই চোখের পাপড়ি আপনার হলেও এটা বাতাসে উড়িয়ে আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করব। আপনার আপত্তি আছে ? থাকলেও কিছু করার নেই। যা আপনার তাই আমার আর যা আমার তাও আপনার। ‘
ফাহমান হাসলো ঝুমুরের কথায়। প্রতি উত্তর করলো না তবে নীরবে ঝুমুরের কান্ড দেখছে সে। ঝুমুর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো তারপর ফুঁ দিয়ে পাঁপড়ি উড়িয়ে দিল। পাপড়ি উড়িয়ে ঝুমুর আবারও পথ চলতে শুরু করল। ফাহমান বললো ‘ তোমার উইশ কি বললে না যে ? ‘
‘ যদিও নিজের উইশ কাউকে বলতে নেই তবুও বলছি। আমার ইচ্ছা আপনি চিরকাল এমনই থাকুন। সবসময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন তারপর হুট করে রেগে আমাকে বকাবকি করবেন। আপনি কিন্তু টক ঝাল মিষ্টি ধরনের মানুষ ডাক্তার সাহেব। আমি আবার বুঝদার মানুষ তাই আপনার কথায় রাগ করিনা। ‘
ঝুমুরের কথায় ফাহমানের হাসি চওড়া হলো। সে বলল ‘ হ্যাঁ এতই বুঝদার যে ওইদিন ছাদে না আসাতে রাগে কেঁদে ফেলেছিলে। ‘
ঝুমুর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ফাহমানের দিকে। বিস্ময় ঝরা কণ্ঠে বলল ‘ ও মা আপনি এখনও ঐদিনের কথা নিয়ে বসে আছেন ? আপনি কি আমাকে কথায় কথায় কান্না করা মেয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন ? ‘
শেষের কথাটা গম্ভীর মুখে বললো ঝুমুর। ঝুমুরের মুখভঙ্গি দেখে হাসলো ফাহমান। বললো ‘ মোটেই না। তুমি ওরকম মানুষ না। তুমি তো ছিচকাদুনে। আমি তোমাকে ওরকম পিচ্ছি মেয়ে ভাবি। ‘
কথাটা বলেই ফাহমান দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেলো কারণ এখন যেরকম পরিস্থিতি তাতে ঝুমুর তাকে মারতেও পারে। ঝুমুর রাগে, দুঃখে পা দিয়ে জোরে আঘাত করলো পিচঢালা রাস্তায়। ভাগ্যিস ঝুমুর তার কলেজের গলিতে এসে গেছে নাহলে ফাহমানকে দেখিয়ে দিত ও। ঝুমুর রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে গলিতে ঢুকে গেলো আর ফাহমান ঝুমুরের হাত পা ছোড়াছুড়ি দেখে হাসতে হাসতে তার গন্তব্যের পথে এগিয়ে গেলো।
চলবে….
মিফতা তিমু
শ্যামাঙ্গণা-১২
————-
কলেজে এসে এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ভাবতে পারেনি ঝুমুর। এই যাবৎকালে এমন অদ্ভুত ভুতুড়ে কান্ড কখনও ঘটেনি তার সঙ্গে। সে আশপাশে নজর বুলিয়ে দেখলো যারা উপস্থিত তারা সকলেই হা করে তাকিয়ে আছে। ঝুমুর নিজেও এরকম একটা ঘটনা দেখলে হুশ হারাতো।
ঝুমুর একবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে পরখ করে নিলো। একি আসলেই সে ? নাহলে তার মতো শ্যামলা দেহী একটা মেয়েকে কোনো ছেলে কি করে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারে ? চূড়ান্ত বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে নিজেকে সামলে নিলো ঝুমুর। এতক্ষণে সামনে নিল ডাউন করে বসে থাকা ছেলেটার চোখে চোখ রাখলো। অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলল ‘ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে জনাব। আপনি যাকে প্রস্তাব দিতে চাচ্ছেন আমি সে নই। প্রথমবার তাই কিছু মনে করিনি কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম কিছু করার আগে দেখে শুনে নিবেন। ‘
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো। সে বর্তমানে কলেজের চত্বরে দাড়িয়ে আছে। রোজ এই চত্বর পেরিয়েই সে ক্লাসে ঢুকে। কোনওদিন এরকম অস্বাভাবিক কিছু হয়না। কিন্তু আজ যে কলেজ ঢুকতেই এরকম অসস্তিকর ঘটনার সাক্ষী হবে কে জানত ? নিজেকে সামলে নিয়ে ঝুমুর ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া ছেলেটির গলা পেলো।
‘ আমার কোনো ভুল হয়নি। আমি জানি আমি কাকে প্রস্তাব দিয়েছি। আমার যাকে দেওয়ার ছিল সে তুমিই। ‘
এবার একটু বিরক্তই হলো ঝুমুর। পিছন ফিরে এখন ও সেই হাঁটু মুড়ে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখলো। পরনে আউট ড্রেস। তারমানে ছেলেটা অনার্সের স্টুডেন্ট। কিন্তু অনার্সের ক্লাস তো এখন হয়না। সেটা তো হয় ইন্টার কলেজ টাইমের পরে। তাহলে ছেলেটা ওকে এমন ধারার প্রস্তাব দিচ্ছে কেন ?
ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার জন্য ছেলেটাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখলো ঝুমুর। ছেলেটার পরনে কালো রংয়ের প্লেইন শার্ট আর ব্লু জিন্স। কাধে কফি কালারের ব্যাগ আর বাম হাতে কালো পাথর দেওয়া জেন্টস ব্রেসলেট। চুলগুলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো আর চেহারায়ও খানিকটা স্বভাবসুলভ গম্ভীর ভঙ্গিমা। সুরত আহামরি কিছু নয়। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষদের মতোই। দেখে বখাটে কিংবা নেতা গোছের মানুষও মনে হচ্ছে না। তাহলে এই ছেলে ওর পিছনে পড়েছে কেন ?
অচেনা এই ছেলের এমন করার কারণ খুঁজে না পেয়ে চিরচেনা নরম, কোমলমতি ঝুমুর রাগে,দুঃখে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো ‘ আপনি তাহলে আমাকেই প্রস্তাব দিচ্ছেন তাইতো ? তা আমার কি দেখে আমাকে মনে ধরলো ? মেয়ে দেখলেই মন গলে যায় নাকি ? ‘
ঝুমুরের কথায় তার পরিচিত ক্লাসমেট যারা উপস্থিত ছিল তারা সকলেই হতবাক। ঝুমুরকে এরকম ভাষার ব্যবহার করতে কখনোই দেখেনি তারা। এমনকি ঝুমুরের সামনে দাড়িয়ে থাকা জাকিরও অবাক। যেই মেয়েটাকে সে রোজ নিয়ম করে দ্বিপ্রহরে দেখে আজ তার সঙ্গে কোনো মিলই খুঁজে পাচ্ছে না এই ঝুমুরের। কোথায় সেই হাস্যরত, কোমলমতি,আপন খেয়ালে ব্যস্ত থাকা ঝুমুর আর কোথায় এই আত্ম গরিমায় চেয়ে থাকা ঝুমুর।
তবে জাকির নিজেকে সামলে নিলো। স্বাভাবিক গলায় বললো ‘ আর পাঁচটা ছেলে যা দেখে প্রেমে পড়ে আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমি তোমার মায়ায় পড়েছি। প্রবাদ শুনেছ তো ? পুরুষ মানুষ রুপে না মায়ায় আটকায়। ‘
জাকিরের কথায় ঝুমুরের হাসিতে চিড় ধরলো না। বরং সময়ের সাথে সাথে তা আরও বিস্তৃত হলো। ঝুমুর বললো ‘ আপনি আমার মায়ায় পড়েছেন ? কথাটা বিশ্বাস হলো না। যেখানে আর পাঁচজন ছেলে মানুষ এমনকী আমার ক্লাসমেটরাও আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সেখানে বাইরের একজন মানুষ হুট করে আমার মায়ায় পড়বে সেটা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য তো জনাব ? মায়ায় পড়ার হলে আমার ক্লাসমেটরাই পড়তো। ‘
আত্ম বিশ্বাসী ঝুমুরের কথা শুনে জাকির হোচট খেলো। এতটা অহংকারী এবং দেমাগী মেয়ে সে কখনও দেখেনি। কিন্তু ঝুমুরের এই দেমাগই তার ভালো লাগার অন্যতম কারণ। প্রচন্ড আত্ম বিশ্বাসে ঝুমুরের চোখে মুখে যেই দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে তা দেখে যেন জাকির আরও খানিকটা বিবশ হলো। নিজেকে সামলে বললো ‘ আর পাঁচজন ছেলে এবং আমার মধ্যে তফাৎ আছে। আমি, জাকারিয়া জাকির, আমাকে তুমি বাকিদের সাথে তুলনা করলে সেটা তোমার সবথেকে বড় ভুল হবে। আমাকে বাকিদের মতো ভেবো না। ‘
ঝুমুর রাগে ফোঁস করে উঠলো। এই ছেলেকে যতই কথার জালে পেঁচাতে চাচ্ছে ততই নিজে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। তার এখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছে। ঝুমুর গম্ভীর মুখে বললো ‘ আপনি হয়তো খুবই আনপ্রেডিকটেবল মানুষ কিন্তু এই ধরনের উইয়ার্ড মানুষজন আমি পছন্দ করিনা। আমি সাধারন মানুষ, সমাজে বাস করি কাজেই আমিও বাকিদের মতো সমাজের নিয়ম কানুন মেনে চলি। আমার লাইফ পার্টনার বা লাভ পার্টনার যাই বলুন না কেন, সে একদমই সাধারণ মানুষ হবে। আপনার মতো এক্সট্রাওর্ডিনারি মানুষজন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য নয়। ইউ ডিজার্ভস সামওয়ান বেটার। ‘
কথাগুলো বলে ক্লাসে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে গেলো ঝুমুর। আর জাকির!! সে তো হতবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো ঝুমুরের ধুলো উড়িয়ে চলে যাওয়া পথে। একটা কথাই মনে হলো তার। ঝুমুর কি ইন্ডিরেক্টলি তাকে রিজেক্ট করলো ? যদিও ঘটনাটা খুবই হৃদয় বিদারক কারণ আগে কখনো এরকম প্রত্যাখ্যানের অভিজ্ঞতা তার হয়নি কারণ সে বরাবরই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষ। প্রেম,ভালোবাসা সামাজিক এসব ব্যাপার স্যাপার সে আমলে নেয় না।
তবে এই প্রথম কোনো এক অজানা, অচেনা মেয়ের মায়ায় পড়ল সে। আর তার মায়ায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে টের পেলো এই মায়ার বাঁধন যেই সেই বাঁধন নয়। একে বলে নিজের পায়ে কুড়াল মেরে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা। সে ছিল আর পাঁচজন মানুষের মতোই পড়ালেখা, ক্যারিয়ারের যাঁতাকলে পিষে যাওয়া মানুষ। অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ুয়া জাকারিয়া জাকির বরাবরই নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন।এসবের বাইরে বিন্দু মাত্র নজর দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যেদিন এসবের বাইরে একটু বাইরের দুনিয়ায় নজর বুলালো সেদিনই কাজল কালো সেই চোখে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলো। শ্যাম দেহী এই ঝুমুরের মায়ায় পড়ে তার বহু আকাঙ্ক্ষিত রাতের ঘুমটা যেন হারামই হয়ে গেছে।
জাকারিয়া জাকির হলো মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী আশরাফ আলীর একমাত্র ছেলে। তার আর কোনো ভাই বোন নেই। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় জাকিরের কোনো কিছুরই অভাব নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারে সে বেশ আড়ম্বরেই বেড়ে উঠেছে। একমাত্র ছেলে হওয়ায় আশরাফ আলী এবং মজিদা খানম নিজেদের সাধ্যের ভিতরে থেকে ছেলের সব চাওয়াই পূরণ করেছেন যার কারণে এই জীবনে অন্তত এতকাল জাকিরের অন্য কোনো চাওয়া ছিল না।
তবে যেদিন থেকে এই শ্যামাঙ্গিণী ঝুমুরকে এক পলক দেখেছে সেদিন থেকেই প্রতি মুহূর্তে প্রেম বিমুখ এই জাকারিয়া জাকিরের মনে হচ্ছে তার চাওয়া পাওয়াহীন এই জীবনে একমাত্র চাওয়া ওই ঝুমুর। শ্যামলা দেহী এই ঝুমুরকে না পেলে যে তার বেচেঁ থাকাটাই ব্যর্থ।
যদিও জাকিরের কাছে তার রাতের ঘুম খুবই সর্বাধিক প্রিয় ও আকাঙ্ক্ষিত বস্তু কিন্তু প্রেমে পড়ে ঘুমের প্রতি এই প্রেম সে বিসর্জন দিয়েছে। তার এখন একমাত্র চাওয়া শ্যামা দেহী ঝুমুর। ঝুমুরকে পেতে সে নিরন্তর চেষ্টা করবে এবং একসময় তার মন ঠিকই জয় করে নেবে। প্রয়োজন পড়লে অপেক্ষা করবে বহু জনম তবুও মায়ামোহিনীকে তার এই জীবনে চাই।
—-
ক্লাসে বসে খাতায় লিখছে ঝুমুর। হোয়াইট বোর্ডে আনিস স্যার হায়ার ম্যাথের অঙ্ক করাচ্ছেন। সেগুলোই তুলছে ঝুমুর। কিন্তু আজ অন্যদিনের মতো ক্লাসে মন নেই তার। সকালের কলেজ ইয়ার্ডে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনায় তার মনটা খারাপ। এমন আগে কখনো হয়নি তার সাথে। সে শ্যামলা দেহী, ফাহমানের ভাষায় শ্যামাঙ্গণা কাজেই তার এই শ্যাম দেহী রূপের জন্য কখনও সে প্রেমের প্রস্তাব পায়নি।
কোনওদিন এরকম প্রস্তাব না পাওয়ায় এসব নিয়ে ঝুমুরের কোনো অনুভূতিও ছিল না। ফাহমানই তার প্রথম প্রেম এবং অনুভূতি। অথচ ভাগ্যের ফেরে আজ কেমন অসস্তিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সকালের ওই ঘটনার কথা ভাবলেই মনটা বিষিয়ে উঠে, ক্লাস করতে ইচ্ছা করেনা। তবুও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্লাস করছে সে। নিজের জ্ঞানত ঝুমুর কখনও ক্লাস বাঙ্ক করে পড়াশুনায় ক্ষতি করেনি। পড়াশোনা নিয়ে সে বরাবরই সচেতন। কোনোকিছুর বিনিময়ে সে তার সেরা ছাত্রীর খেতাব হারাতে রাজি নয়।
হায়ার ম্যাথের মতো এহেন গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাসে ঝুমুরকে অমনযোগী দেখে অবাক হলেন আনিস সাহেব। ভরাট গলায় ডাক দিলেন ঝুমুর বলে। আনিস সাহেবের ডাকে হকচকিয়ে উঠলো ঝুমুর। দ্রুত দাড়িয়ে বললো ‘ জি…জি স্যার। ‘
‘ এত আনমাইন্ডফুল কেন ? ব্যাপার কি ? ‘
আনিস সাহেবের কথায় ক্লাসের এক দল ছাত্র ছাত্রী হেসে দিলো আর যারা ঝুমুরের প্রতি সহানুভূতি বরাবরই প্রকাশ করে থাকে তারা মন খারাপ করলো। হাসাহাসি করতে থাকা স্টুডেন্টদের মধ্যে একজন স্টুডেন্ট বললো ‘ ও তো আনমাইন্ডফুল হবেই স্যার। এতকাল পড়াশোনা করে সিঙ্গেল থেকেছে। এখন হুট করে প্রেমের প্রস্তাব পেলে মন তো উড়ু উড়ু করবেই। ‘
ছেলেটার কথায় তাকে কড়া ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলেন আনিস সাহেব। ঝুমুর ছেলেটার কথায় মন খারাপ করে মুখ নামিয়ে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটার কথায় যারা হাসাহাসি করছিলো আনিস সাহেব তাদেরও সাইলেন্স বলে ধমক দিলেন। তারপর ঝুমুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন ‘ জীবনে সাফল্যের পথে হাঁটতে গেলে এমন অনেক কাটাই তোমার পথ আগলে দাড়িয়ে থাকবে। কিন্তু তাই বলে দমে গেলে হবে না ? নিজের পথ থেকে কাঁটাগুলো উপরে ফেলে হাঁটতে শিখো। ইনশাল্লাহ সুখ হাতে ধরা দিবেই। ‘
আনিস সাহেবের কথায় ঝুমুরের মনের মেঘ মেদুর ভাবটা কেটে গেলো। তার কৃষ্ণ কায়া জড়ানো মুখে হাসি ফুটলো। মাথা নেড়ে আনিস সাহেবের কথায় সায় দিয়ে বুঝলো সে এখন থেকে আর মন খারাপ করে দমে যাবে না। প্রিয় শিক্ষার্থীর মন ভালো করতে পেরে শান্তি পেলেন আনিস সাহেব। তিনি আবারও পড়ানোর কাজে ফিরে গেলেন।
—-
ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে ঝুমুর কিয়ৎক্ষণ আগেই। এখন সে ফ্রেশ হয়ে, খাওয়া দাওয়া করে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য রেডি। শুধু ফারুক রেডি হলেই দুজনে বেরিয়ে পড়বে। মন মেজাজ এখন ফুরফুরে ঝুমুরের। যদিও কলেজ থেকে ফিরতে সময় সকালের ওই জাকির নামক ছেলেটার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিন্তু আনিস স্যারের কথা মতো তাকে পথের কাঁটা ভেবে বিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এড়িয়ে পথ চলেছে সে। তাই এখন তার মন মেজাজ এত ভালো।
ফারুক রেডি হয়ে বেরোতেই ঝুমুর বেরিয়ে পড়লো। প্রথমে রিক্সা দিয়ে হোসেইন মার্কেট নামলো দুজনে। তারপর সেখানে রাস্তা পার হয়ে বাস ধরলো এয়ারপোর্টের। পরিকল্পনা করা আছে ফিরতে সময় উবারে আসবে কারণ শাওমির সঙ্গে তার লাগেজ আছে যা ক্যাবে করে আনলে সুবিধা হবে।
অবশেষে এক ঘণ্টার জ্যাম থেকে রেহাই পেল ঝুমুর। এত গরমে জ্যামে বসে থেকে থেকে তার নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তবে এয়ারপোর্ট এসেও তাদের আরও তিরিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। শাওমির ফ্লাইট ল্যান্ড করে গেছে তবে ফর্মালিটিজ মিটিয়ে আসতে আসতে সময় লাগবে।
চৈত্রের দুপুরের ধোঁয়া ওঠা গরমে এয়ারপোর্টে বিরশ মুখে অপেক্ষা করছে ঝুমুর। গরমে তার ঘাম ঝরছে। কৃষ্ণ কালো মুখটা আরও কালো হয়ে গেছে। বারবার হাতে থাকা টিসু দিয়ে মুখ মুছছে সে। আগেও এরকম অপেক্ষা করেছে ঝুমুর। তবুও মনে হচ্ছে আজ যেন অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কখন আসবে শাওমি ? আর যে তর সইছে না ঝুমুরের।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হাজির হলো শাওমি। তার পরনে থাকা ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেটটা সে ফ্লাইট ল্যান্ড করতেই খুলে হাতে নিয়ে নিয়েছে। কোরিয়ায় যা শীত তার সিকি ভাগের এক ভাগ শীতও বাংলাদেশে নেই। উল্টো গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা সবার। বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতেই শাওমির মনে হলো সে মরুভূমিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রিয় সখীর খাতিরে এতটুকু কষ্ট করে নিলো সে।
চলবে….
মিফতা তিমু